হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি



হিসাববিজ্ঞান তোমাদের সবার আছে। কিন্তু কয়জন আছো যারা প্রতি অধ্যায়ের থিওরি গুলো পড়েছো..? সবাই ম্যাথ করে কিন্তু থিওরি পড়ো না। তোমরা জানো, এডমিশনে থিওরি থেকেই প্রশ্ন বেশি আসে। এডমিশনে তোমাদের MCQ থাকবে ১২ টা। আর এই ১২ টা MCQ থেকে প্রায় ৭/৮ টা থাকে থিওরি আর ৪/৫ টা থাকে ম্যাথ থেকে। থিওরি ও ম্যাথ দুটো নিয়েই এখন থেকে অধ্যায়ভিত্তিক পোস্ট হবে রুটিন অনুযায়ী। আশা করি সবাই সাথেই থাকবে আর শুরু করে দিবে তোমার এডমিশন প্রস্তুতি!!

চলো তাহলে শুরু করা যাক,

হিসাববিজ্ঞানের ধারণাঃ

"লেনদেনসমূহ শনাক্তকরণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের নিকট তথ্য সরবরাহকরণ সংক্রান্ত কার্যাবলী বা প্রক্রিয়াকে হিসাববিজ্ঞান বলা হয়"। হিসাববিজ্ঞানকে তথ্যব্যবস্থা নামে অভিহিত করা হয়।

★হিসাববিজ্ঞানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য— আর্থিক ঘটনাসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলোকে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা।

★হিসাববিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য— সংশ্লিষ্ট পক্ষের/ব্যবহারকারীদের নিকট তথ্য সরবরাহ করা

হিসাববিজ্ঞান ও হিসাবরক্ষণের মাঝে পার্থক্যঃ

হিসাববিজ্ঞান বলতে লেনদেনসমূহ শনাক্তকরণ, লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত সামগ্রিক কাজকে বুঝায় কিন্তু হিসাবরক্ষণ বলতে শুধু "লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরণ" ধাপকে বোঝায়।

এই লিপিবদ্ধকরণ ধাপে তিনটি কাজ থাকে।যথাঃ লেনদেনসমূহ বিশ্লেষণ, লেনদেনসমূহ জাবেদাভূক্তকরণ ও লেনদেনসমূহ খতিয়ানে স্থানান্তর। সুতরাং এই লিপিবদ্ধকরণ ধাপকেই হিসাবরক্ষণ বলা হয়। কিন্তু হিসাববিজ্ঞান হলো সামগ্রিক প্রক্রিয়া।

Introduction Accounting



হিসাববিজ্ঞানের শাখাসমূহঃ

হিসাববিজ্ঞানের সাধারণত ৩টি শাখা রয়েছে,
★আর্থিক হিসাববিজ্ঞান
★ব্যবস্থাপকীয় হিসাববিজ্ঞান
★উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান

যদি প্রধান ২টি শাখা জানতে চাওয়া হয় তাহলে—আর্থিক ও ব্যবস্থাপকীয় হিসাববিজ্ঞান।

প্রধান ৩টি শাখা জানতে চাওয়া হলে — আর্থিক, ব্যবস্থাপকীয় ও উৎপাদন ব্যয় হিসাববিজ্ঞান।

এছাড়াও রয়েছে কর শাস্ত্র হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষা শাস্ত্র হিসাববিজ্ঞান।

হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীঃ

আর্থিক বিবরণী ৫ প্রকারঃ-
১. বিশদ আয় বিবরণী
২. আর্থিক অবস্থার বিবরণী
৩. মালিকানাস্বত্ত্ব বিবরনী
৪. নগদ প্রবাহ বিবরনী
৫. টীকা ও ব্যাখ্যা।

এসব আর্থিক বিবরণীর তথ্য বিভিন্ন ব্যবহারকারী ব্যবহার করে থাকে।তাদের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারীদের ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারী ও বাহ্যিক ব্যবহারকারী।

অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারীঃ
ব্যবস্থাপকগণ, অর্থ পরিচালকগণ, উৎপাদন পরিদর্শকগন ও কোম্পানির কর্মকর্তাগণ।

বাহ্যিক ব্যবহারকারীঃ
শেয়ারহোল্ডার গণ, সরবরাহকারীগণ, ক্রেতাগণ, সরকার, পাওনাদার, নিরীক্ষকগণ, কর কতৃপক্ষ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারীগণ, গবেষকগণ, প্রতিযোগী ইত্যাদি।

হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তিঃ

১৪৯৪ সালে ইতালিয় ধর্মযাজক ও গনিত শাস্ত্রবিদ Luca Pacioli তার লিখিত "summa de Arithmetica, Geometria, Proportionate et Proportonalita" ৫ অংশে বিভক্ত এই গ্রন্থের একটি অংশে "দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি" সম্পর্কে আলোচনা করেন।সেখানে জাবেদা ও খতিয়ান সংরক্ষণের উপায়ও উল্লেখ ছিল।ঐ গ্রন্থে হিসাবরক্ষণের উপর ৩৬ টি অধ্যায় ছিল যার নাম "de computes et scriptus"।

Luca Pacioli র পুরো নাম "Fra Luca Bartolomeo de Pacioli"। তিনি ইতালির ভ্যানিস নগরের অধিবাসী ছিলেন। তার জন্মস্থানের নাম Brogo Santo Sepolcro। তিনি " লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি"র ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও শিক্ষক ছিলেন এবং "ক্রিস্টোফার কলোম্বাস" এর সমসাময়িক ব্যক্তি ছিলেন।

লেনদেনঃ

অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য সকল ঘটনাকেই লেনদেন বলে। হিসাববিজ্ঞানের মূল উপাদান— লেনদেন। লেনদেনের প্রধান ৩টি বৈশিষ্ট্য হলোঃ ১. অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য। ২. আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করবে। ৩. কমপক্ষে দুটি পক্ষ জড়িত থাকবে।

★সকল লেনদেন ঘটনা কিন্তু সকল ঘটনা লেনদেন নয়।(ঘটনা আর্থিক বা অনার্থিক হতে পারে কিন্তু লেনদেন শুধু আর্থিক ঘটনাগুলো)

লেনদেনকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়।
১. আন্তঃলেনদেন—
স্থায়ী সম্পত্তির অবচয়, মনিহারি ব্যবহার, অস্পর্শনীয় সম্পত্তির অবলোপন, মুনাফা জাতীয় সঞ্চিতি সৃষ্টি, খুচরা নগদ তহবিলে টাকা প্রদান ইত্যাদি।

২. বহিঃলেনদেন—
পন্য ক্রয়, সম্পত্তি ক্রয়, পন্য বিক্রয়, সেবা প্রদান, সেবা গ্রহন, প্রাপ্য হিসাব থেকে আদায়, দায় পরিশোধ, বেতন ও ভাড়া প্রদান ইত্যাদি।

হিসাবনিকাশের ভিত্তিঃ

হিসাবনিকাশের ২ টি ভিত্তি রয়েছে। যথাঃ বকেয়া ভিত্তি ও নগদান ভিত্তি।
এই ভিত্তির উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর্থিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করে থাকে।

বকেয়া ভিত্তিঃ
সেবা প্রদান করে আয় হলে নগদ টাকা অর্জিত হোক বা না হোক সাথে সাথেই তা আয় হিসাবে দেখানো হয়। একই ভাবে ব্যয় সংঘটিত হলে নগদে পরিশোধ করা হোক বা বকেয়া থাকুক সাথে সাথেই তা ব্যয় হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হয়।

নগদান ভিত্তিঃ
আয় তখনই লিপিবদ্ধ করা হবে যখন আয় বাবদ নগদ অর্থ পাওয়া যাবে। আর, ব্যয় তখনই লিপিবদ্ধ করা হয় যখন নগদ অর্থ পরিশোধ করা হয়।

হিসাবঃ

সাধারণত লেনদেনের শ্রেনিবদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত বিবরনীকে হিসাব বলে। হিসাব হলো একটি নির্দিষ্ট সম্পদ, দায় কিংবা মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি বা হ্রাস দেখানোর জন্য স্বতন্ত্র হিসাবনিকাশ রেকর্ড। আর যে বইতে এই রেকর্ড রাখা হয় তাই "খতিয়ান"।

হিসাবের শ্রেনিবিভাগঃ

হিসাব সাধারণত ৫ প্রকার।যথা— সম্পত্তি হিসাব, দায় হিসাব, মালিকানাস্বত্ব হিসাব, আয় হিসাব ও ব্যয় হিসাব।

১। সম্পত্তি হিসাবঃ
"প্রতিষ্ঠানের অধিকারভুক্ত যেকোন বিষয়, যা থেকে প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে সুবিধা পাবে তাকে সম্পত্তি বলে"। যেমনঃ নগদ হিসাব, ব্যাংক হিসাব, দেনাদার, প্রাপ্য বিল, মজুদ পন্য, যন্ত্রপাতি, দালানকোঠা, ভূমি, সুনাম, ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট ইত্যাদি।

★স্বাভাবিক জের — ডেবিট।

বিপরীত সম্পত্তি হিসাবঃ

সম্পত্তির হ্রাস দেখানোর সম্পত্তি হিসাবটির বিপরীতে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাই বিপরীত সম্পত্তি হিসাব। যেমনঃ পুঞ্জীভূত অবচয় হিসাব, কু-ঋণ সঞ্চিতি হিসাব ও দেনাদারের বাট্টা সঞ্চিতি হিসাব।

২। দায় হিসাবঃ
প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির উপর যেকোন ধরণের পাওনাদারদের দাবিকে দায় বলে।যেমনঃ পাওনাদার, প্রদেয় বিল, বন্ধকি ঋণ, বকেয়া ব্যয়, অগ্রিম আয় ইত্যাদি।

★স্বাভাবিক জের— ক্রেডিট।

বিপরীত দায় হিসাবঃ

দায়ের হ্রাস দেখানোর দায় হিসাবটির বিপরীতে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাই বিপরীত দায় হিসাব। যেমনঃ বন্ডের অবহার হিসাব, রক্ষনশীলতার নীতি না মানলে পাওনাদারের বাট্টা সঞ্চিতি হিসাব।

৩। মালিকানা স্বত্ব হিসাবঃ
প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির উপর মালিকের/মালিকদের দাবিকে মালিকানাস্বত্ব বলে।

★স্বাভাবিক জের—ক্রেডিট

🔸একমালিকানা ব্যবসায় বলা হয় মালিকানাস্বত্ব বা Owners Equity(OE)।যেমনঃ মালিকের মূলধন হিসাব।
🔸অংশীদারি ব্যবসায় বলা হয় অংশীদারদের স্বত্ব বা Partners Equity(PE)।যেমনঃ অংশীদারদের মূলধন হিসাব।
🔸কোম্পানির মালিকানাস্বত্বকে বলা হয় শেয়ারহোল্ডারদের স্বত্ব বা Shareholders Equity (SE)। যেমনঃ শেয়ার মূলধন হিসাব, সংরক্ষিত মুনাফা হিসাব।

বিপরীত মালিকানাস্বত্ব হিসাবঃ

মালিকানাস্বত্বের হ্রাস দেখানোর মালিকানাস্বত্ব হিসাবটির বিপরীতে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাই বিপরীত মালিকানাস্বত্ব হিসাব। যেমনঃ লভ্যাংশ হিসাব, ট্রেজারী স্টক হিসাব।

৪। আয় হিসাবঃ
পন্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে যা অর্জিত হয় তাকে আয় বলে। যেমনঃ বিক্রয় হিসাব, সেবা আয় হিসাব, সুদ আয় হিসাব, ভাড়া আয় হিসাব, কমিশন আয় হিসাব ইত্যাদি।

★স্বাভাবিক জের — ক্রেডিট।

বিপরীত আয় হিসাবঃ

আয় হ্রাস দেখানোর আয় হিসাবটির বিপরীতে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাই বিপরীত আয় হিসাব। যেমনঃ বিক্রয় ফেরত হিসাব, বিক্রয় বাট্টা হিসাব।

৫। ব্যয় হিসাবঃ
সেবা গ্রহনের কারণে প্রতিষ্ঠানের যা সংঘটিত হয় তাকে ব্যয় বা খরচ বলে। যেমনঃ বিজ্ঞান, মজুরি, ভাড়া, বেতন, বিক্রিত পন্যের ব্যয় ইত্যাদি।

★স্বাভাবিক জের— ডেবিট।

বিপরীত ব্যয় হিসাবঃ

ব্যয় হ্রাস দেখানোর ব্যয় হিসাবটির বিপরীতে যে হিসাব প্রস্তুত করা হয় তাই বিপরীত ব্যয় হিসাব। যেমনঃ ক্রয় ফেরত হিসাব, ক্রয় বাট্টা হিসাব।

💠বিঃদ্রঃ
এই অধ্যায়ে আরো একটি টপিক আছে “হিসাব সমীকরণ”। এটি ২য় অধ্যায়ের সাথে দেয়া হবে। পোস্টের দৈর্ঘ্য বিবেচনায় দিলাম না।


সবার জন্য শুভকামনা রইলো।

Maruf Hossain Munna
Instructor of Accounting
Executive of Team Event Management
Central Wing, SILSWA

Department of Marketing
University of Dhaka

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form