বিভিন্ন ধরনের মেঘ




মেঘ, খোলা চোখে মাথার ওপর আকাশের দিকে তাকালে যাদের পুরো আকাশ জুড়ে দেখা যায় কখনো কি ভেবেছেন এই মেঘ কত ধরনের হতে পারে! বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) এর আন্তর্জাতিক মেঘ মানচিত্র (International Cloud Atlas) অনুসারে ১০০ টির বেশি মেঘ আমাদের পৃথিবীর আকাশে দেখা যায়।


আকার ও আকৃতি উপর ভিত্তি করে প্রধান ১০ ধরনের মেঘকে নিয়ে নিচে আলোচনা করা হল। 


★ বায়ুমন্ডলে অধিক উচ্চতার মেঘ (গড় উচ্চতা ২০,০০০ ফুট বা তার বেশি) ★

(১) সিরাস মেঘঃ- সাধারণ ধরনের মেঘ হল সিরাস মেঘ। এই মেঘের অপর নাম হল অলক মেঘ। সাদা রঙের পাতলা স্বচ্ছ এই মেঘ দেখতে অনেকটা পাখির পালকের মত হয়, যা বায়ুমন্ডলের ১৬,৫০০-৪৫,০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়। সারা আকাশ জুড়ে এই মেঘ ঢাকা থাকলেও তার মধ্য দিয়ে সূর্যকে দেখা যায়। সিরাস মেঘগুলো সাধারণত পরিষ্কার আবহাওয়াকে নির্দেশ করে তবে এই মেঘগুলো যখন একে অপরের সাথে বন্ধনী তৈরি করে, তখন আবহাওয়া খারাপ হয়ে পড়ে। সিরাস মেঘগুলো গ্রীষ্মকালীন ঘূর্ণিঝড়ের মতো বৃহৎ আকারের ঝড়গুলির পূর্বাভাস দেয়।

(২) সিরো স্ট্র্যাটাস মেঘঃ- সিরো স্ট্র্যাটাস মেঘগুলো পাতলা সাদা চাদরের মতো দেখতে হয়। এই মেঘে ঢাকা আকাশ দুধের মতো সাদা দেখায়। এই মেঘ চেনার উপায় হল সূর্যের চারপাশে এরা বলয়ের আকারে অবস্থান করে। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা উপস্থিত থাকলে এই মেঘগুলির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই মেঘ বায়ুমন্ডলের ২০,০০০-৪৩,০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়।

(৩) সিরো কিউমুলাস মেঘঃ- ছোট ছোট সাদা বল অথবা পেঁজা তুলোর মতো দেখতে হয় এই মেঘগুলোকে। এই মেঘে ঢাকা আকাশ দেখতে অনেকটা ম্যাকারেল মাছের পিঠের মত হয়। তাই এই মেঘে আকাশ ছেয়ে গেলে তাকে ম্যাকারেল আকাশ বলে। এই মেঘগুলো পরিষ্কার তবে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার নির্দেশ করে। মেঘলা দিনে মেঘগুলো মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যায়। এই মেঘ বায়ুমন্ডলের ১৬,০০০-৪৯,০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়।


★ বায়ুমন্ডলের মাঝারি উচ্চতার মেঘ (গড় উচ্চতা ৬৫০০ ফুট - ২০,০০০ ফুট) ★


(১) অল্টো স্ট্র্যাটাস মেঘঃ- এই মেঘগুলি ধূসর থেকে নীল রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত মেঘগুলি অনেকটা জায়গা নিয়ে অবস্থান করে। মাঝ আকাশে ম্লান আলোকিত ডেস্কের মত সূর্যের দিক বরাবর এগুলো দেখতে পাওয়া যায়। এই মেঘ বায়ুমন্ডলের ৭০০০-২৩,০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়। এই মেঘের মধ্যে দিয়ে সূর্যকে অনুজ্জ্বল দেখায়। সাধারণত এই মেঘে একটানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়। ঝড় কিংবা তুষারপাতের আগে এইরূপ মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। 

(২) অল্টো কিউমুলাস মেঘঃ- বায়ুমণ্ডলের মাঝারি উচ্চতার মেঘগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ও সাধারণ মেঘ হল অল্টো কিউমুলাস। এই মেঘগুলো সাদা থেকে ধূসর রঙের হয়ে থাকে। এই মেঘের আকৃতি চ্যাপ্টা, গোলাকার হয়ে থাকে। আবার অনেকটা ভেড়ার পশমের মতো দেখতে হয়ে থাকে। এই মেঘের ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশ দেখতে পাওয়া যায়। অল্টো কিউমুলাস মেঘ প্রায়শই গ্রীষ্মের সকালে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। তবে যেদিন বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে, এই মেঘ সেদিন সকালে দেখতে পাওয়া যায়। এই মেঘ অনেক ক্ষেত্রে শীতল তাপমাত্রা সূচনা সংকেত দেয়। এই মেঘ বায়ুমন্ডলের ৭০০০-২৩,০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়।


★ বায়ুমণ্ডলের নিম্ন উচ্চতায় মেঘ (গড় উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০০ ফুট) ★

(১) স্ট্র্যাটাস মেঘঃ- সাদা থেকে ধূসর রংয়ের এই মেঘ সারা আকাশ কুয়াশার মতো ঢেকে রাখে। স্ট্যাটাস মেঘ দেখলে মনে হয় যেন এই মেঘ দিগন্তকে আলিঙ্গন করে রেখেছে। পাহাড়ের উঁচু অংশে এই মেঘ জমলে পর্বতারোহী ও বিমান চালকদের পক্ষে খুব অসুবিধা হয়ে পড়ে। এই মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়। মেঘলা দিনে এই মেঘ দেখতে পাওয়া যায়। এই মেঘে হালকা বৃষ্টি হয়ে থাকে। 

(২) স্ট্র্যাটোকিউমুলাস মেঘঃ- এই মেঘ ধূসর রঙের, দেখলে মনে হবে অনেকটা স্তুপের মত স্তরে স্তরে সাজানো আছে। অনেক সময় দেখে মনে হয় মেঘের স্তরগুলো যেন গড়িয়ে চলেছে তাই এই মেঘের অপর নাম 'Bumpy Cloud'। বেশিরভাগ মেঘলা দিনের দেখতে পাওয়া যায়। মেঘ গুলোর মাঝে মাঝে নীল আকাশ দেখা যায় এই মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম তবে এরা নিম্বো স্ট্যাটাস মেঘে রূপান্তরিত হতে পারে। এই মেঘ বায়ুমন্ডলের ২০০০-৭০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়।

(৩) নিম্বো স্ট্র্যাটাস মেঘঃ- ঘন, পুরু ধূসর থেকে কালো রঙের হয়ে থাকে। এই মেঘ নিন্ম ও মাঝারি স্তর থেকে উপরের দিকে প্রসারিত হয়। এই মেঘ বায়ুমন্ডলের ২০০০-১৮,০০০ ফুট উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়। নিম্বো স্ট্র্যাটাস মেঘ খারাপ আবহাওয়াকে নির্দেশ করে। এই মেঘে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে একটানা বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের পূর্বাভাস দেয়।

  

★ বায়ুমন্ডলে উল্লম্ব ভাবে অবস্থানকারী মেঘ (গড় নিম্নতম উচ্চতা ১৬০০ ফুট, নিম্ন ও মাঝারি স্তর মিলে দেখা যায়) ★

(১) কিউমুলাস মেঘঃ- কিউমুলাস শব্দের অর্থ হল স্তুপ। পুরু, ঘন এই মেঘের উলম্ব বিস্তার দেখা যায়। মেঘের উপরিভাগ অনেকটা বৃত্তাকার বা ফুলকপির মতো দেখতে হয়। সূর্যোদয়ের সময় উজ্জ্বল সাদা দেখায় মেঘগুলো তবে মেঘ এর নিচের অংশ সমতল ও কালো রঙের হয়ে থাকে। এই মেঘে সাধারণত পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে। পরিষ্কার ও রৌদ্রজ্জ্বল দিনগুলোতে এই মেঘগুলোকে ভালোভাবে দেখা যায়। এই মেঘগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে হতে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি করে যা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই মেঘ বায়ুমন্ডলে ১০০০-৭০০০ ফুট উচ্চতায় দেখা যায়। 

(২) কিউমুলোনিম্বাস মেঘঃ- নিম্ন, মাঝারি ও উচ্চস্তরের মেঘগুলি মধ্যে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ অন্যতম। এই মেঘ দেখতে অনেকটা গম্বুজের মত ওপরের দিকের আকৃতি থাকে চ্যাপ্টা ও মেঘের তলদেশে আকৃতি থাকে সমতল। মেঘগুলো আবার অনেক সময় বাঁশ ঝাড়ের মতো দেখতে লাগে। এই মেঘ সাদা, ধূসর-কালো রঙের হয়ে থাকে। মেঘের নিচের অংশটা আবছা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে প্রায় ১২ হাজার ফুট পর্যন্ত এই মেঘের উলম্ব বিস্তার দেখা যায়। বাতাসের উচ্চ প্রবাহের জন্য মেঘের উপরের অংশটি নেহাই এর মত আকৃতি ধারণ করে। নেহাই এর দিক দেখে ঝড় কোনদিকে যাচ্ছে বোঝা যায়। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সাধারনত বজ্রবিদ্যুৎ মেঘ। এই মেঘে বজ্রপাত সহ ভীষণ ঝড় বৃষ্টি হয়। তাই এই মেঘের অপর নাম বজ্রমেঘ (Thunder Cloud)। শিলাবৃষ্টি, টর্নেডো সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই মেঘ এই হয়ে থাকে। এই কিউমুলোনিম্বাস মেঘ আকাশে দেখলে নিশ্চিত হয়ে যেতে হবে যে পরবর্তী আবহাওয়া খারাপ হতে চলেছে অর্থাৎ ভারী বৃষ্টিপাত, শিলাবৃষ্টি হতে পারে।


লেখিকাঃ- তিয়াশা দে (বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা)

তথ্যসূত্রঃ- উইকিপিডিয়া

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form