হিসাবের বইসমূহ

হিসাব সমীকরণঃ

ব্যবসায়ের দুইটি মৌলিক উপাদান হলোঃ যা কিছু নিজের এবং যা কিছুর নিকট দায়ী। যা কিছু নিজের তা হলো সম্পদ/সম্পত্তি/পরিসম্পদ। আর যা কিছুর নিকট দায়ী তা হলো দায় ও মালিকানাস্বত্ব। সম্পদ, দায় ও মালিকানাস্বত্ব এই ৩ টি উপাদানকে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার উপাদান বলে। আর যে সমীকরণের মাধ্যমে এই আর্থিক অবস্থার উপাদানগুলোর মধ্যাকার সম্পর্ক প্রকাশ করা হয় তাকে হিসাব সমীকরণ বলে।

এক মালিকানা ব্যবসায়ের হিসাব সমীকরণ— A=L+OE (Owner's Equity)
মালিকানাস্বত্বের প্রসারিত রূপঃ মালিকের মূলধন–মালিকের উত্তোলন+আয়–ব্যয়

অংশীদারি ব্যবসায়ের হিসাব সমীকরণ— A=L+PE (Partners' Equity)
মালিকানাস্বত্বের প্রসারিত রূপঃ অংশীদারদের মূলধন–অংশীদারদের উত্তোলন+আয়–ব্যয়

কোম্পানি ব্যবসায়ের হিসাব সমীকরণ— A=L+SE (Shareholders' Equity)
মালিকানাস্বত্বের প্রসারিত রূপঃ পরিশোধিত মূলধন+জমাকৃত মুনাফা–ট্রেজারি স্টক–লভ্যাংশ+আয়–ব্যয়

লেনদেন বিশ্লেষণঃ
আমেরিকান হিসাববিজ্ঞানে "লেনদেন বিশ্লেষণ" হলো হিসাব চক্রের প্রথম ধাপ। প্রতিটি দেনদেন হিসাব সমীকরণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হয়।

উদাহরণ–১,
জনাব কমল কতৃক ৫০,০০০ টাকা মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসায় শুরু করা হলো।

বিশ্লেষণ,
নগদ নামক সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় A বৃদ্ধি ৫০,০০০ টাকা অপরদিকে মূলধন নামক মালিকানাস্বত্ব E বৃদ্ধি পায়।মানে, A বৃদ্ধি ও E বৃদ্ধি।

উদাহরণ–২,
ধারে পন্য ক্রয় করা হলো ১০,০০০ টাকা।

বিশ্লেষণ,
পাওনাদার নামক দায় হিসাব বৃদ্ধি পাওয়ায় হিসাব সমীকরণের L বৃদ্ধি অপরদিকে ক্রয় বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মালিকানাস্বত্ব হ্রাস / E হ্রাস পেয়েছে। মানে, L বৃদ্ধি এবং E হ্রাস।

🔹যারা বিবরণী ছক ভালো পারো তাদের হিসাব সমীকরণে সমস্যা হবে না।

হিসাবের বইসমূহ



দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিঃ


প্রতিটি আর্থিক ঘটনা বা লেনদেন নূন্যতম দুটি পক্ষকে প্রভাবিত করে। তাই, লেনদেন লিপিবদ্ধ করার সময় এই দুটি পক্ষে লিপিবদ্ধ করা হলে তাই দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি। এটি হিসাববিজ্ঞানের একমাত্র গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিকে হিসাববিজ্ঞানের ভিত্তি বলা হয়। এটি উদ্ভব হয় ১৪৯৪ সালে।

হিসাবচক্রঃ

লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ ও আর্থিক বিবরণীসমূহ প্রস্তুতকরণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু পর্যায় অতিক্রম করে এগুলো প্রত্যেকটি কে এক একটি ধাপ বলে। আবশ্যিক ধাপগুলো নিন্মরূপ,

১। লেনদেনসমূহ বিশ্লেষণ
২। লেনদেনসমূহ জাবেদাভুক্তকরণ
৩। খতিয়ানে স্থানান্তর
৪। রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ
৫। সমন্বয় দাখিলা
৬। সমন্বিত রেওয়ামিল
৭। আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ
৮। সমাপনী দাখিলা
৯। সমাপন পরবর্তী রেওয়ামিল

🔸১,২ ও ৩ — দৈনন্দিন সম্পন্ন করা হয়।
🔸৪,৫,৬, ও ৭ — হিসাবকালের ভিত্তিতে(প্রতি মাসে/প্রতি তিন মাসে/প্রতি বছরে) সম্পন্ন হয়।
🔸৮ ও ৯ — সাধারণত শুধু বার্ষিক হিসাবকাল শেষে সম্পন্ন করা হয়।

"কার্যপত্র" হিসাব চক্রের একটি ঐচ্ছিক ধাপ।

"সংশোধনী দাখিনা জাবেদাভুক্তকরণ ও স্থানান্তরকরণ" হিসাব চক্রের একটি পরিত্যাজ্য ধাপ।

জাবেদাঃ

"জাবেদা হলো একটি হিসাবনিকাশ রেকর্ড, যাতে লেনদেনসমূহ প্রাথমিকভাবে সময়ানুক্রমিক বিন্যাসে লিপিবদ্ধ করা হয়"।

জাবেদাকে — মূল/মৌলিক/প্রথম দাখিলার বই, লেনদেনের সময়ানুক্রমিক রেকর্ড, দৈনন্দিন দাখিলার বই, প্রাথমিক দাখিলার বই, সহকারী বই ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।

আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে জাবেদা ২ প্রকারঃ বিশেষ জাবেদা ও সাধারণ জাবেদা।


বিশেষ জাবেদা সমূহঃ
১) ক্রয় জাবেদা— সকল প্রকার বাকীতে ক্রয় লিপিবদ্ধ হয়।
২) ক্রয় ফেরত জাবেদা— সকল প্রকার ক্রয় ফেরত লিপিবদ্ধ হয়।
৩) বিক্রয় জাবেদা— সকল প্রকার বাকীতে বিক্রয় লিপিবদ্ধ হয়।
৪) বিক্রয় ফেরত জাবেদা— সকল প্রকার বিক্রয় ফেরত জাবেদা লিপিবদ্ধ হয়।
৫) প্রাপ্য বিল জাবেদা— দেনাদারের নিকট থেকে বিলের স্বীকৃতি পেলে এখানে লিপিবদ্ধ হয়।
৬) প্রদেয় বিল জাবেদা— পাওনাদারদের বিলে স্বীকৃতি প্রদান করলে।
৭) নগদ প্রাপ্তি জাবেদা— সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তিসমূহ লিপিবদ্ধ হয়।
৮) নগদ প্রদান জাবেদা— সকল প্রকার নগদে পরিশোধ লিপিবদ্ধ হয়।

সাধারণ জাবেদাঃ
দৈনন্দিন সংঘটিত সকল লেনদেন এবং যেসব লেনদেনের দাখিলা কোন বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় না তাই সাধারণ জাবেদায় লিপিবদ্ধ হয়।

আমরা সাধারণ জাবেদা যেভাবে করি তাই। তারিখ, সংশ্লিষ্ট হিসাব, খ.পৃ., ডেবিট ও ক্রেডিট আর আওতায়।

নগদান বইঃ
নগদান বইকে "জাবেদায়িত খতিয়ান" বা "জাবেদা ও খতিয়ান উভয়" ই বলে।

🔹 নগদান বইয়ের —ডেবিট দিকে প্রদত্ত বাট্টা এবং ক্রেডিট দিকে প্রাপ্ত বাট্টা লিপিবদ্ধ হয়।

🔹খুচরা নগদান বই সংরক্ষণের জন্য অন্য একজন ক্যাশিয়ারকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয় যাকে খুচরা ক্যাশিয়ার / ছোট ক্যাশিয়ার বলে।

🔹বর্তমানে প্রায় সকল বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান "অগ্র প্রদত্ত" পদ্ধতিতে খুচরা নগদান বই সংরক্ষণ করে।

🔹প্রতি হিসাবকালের খুচরা নগদান হিসাবের প্রারম্ভিক জের ও সমাপনী জের সমান হয়— "অগ্র প্রদত্ত" পদ্ধতিতে।

বাট্টাঃ

পন্য ক্রয় ও বিক্রয়ের সময় লিখিত মূল্য থেকে এবং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির সময় যে পরিমান ছাড় বা বাদ দেয়া হয় তাকেই বাট্টা বলে।বাট্টা ২ প্রকারঃ কারবারি বাট্টা ও নগদ বাট্টা।

১. কারবারি বাট্টাঃ ধারে বা নগদে পন্য ক্রয় ও বিক্রয়ের সময় লিখিত মূল্য থেকে যে ছাড় দেয়া হয় তাই কারবারি বাট্টা। এটাকে ব্যবসায়িক বাট্টা/বানিজ্যিক বাট্টা/বিনিময় বাট্টা/ট্রেড বাট্টা ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়। এই বাট্টার ফলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না তাই এটি হিসাবভুক্ত করা হয় না।

২. নগদ বাট্টাঃ দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির সময় যে পরিমান টাকা ছাড় দেয়া হয় তাই নগদ বাট্টা।এটাকে "প্রাপ্ত ও প্রদত্ত বাট্টা" বলা হয়। এই বাট্টার ফলে আর্থিক অবস্থার হ্রাস/বৃদ্ধি ঘটে। তাই এটি হিসাবভুক্ত করে হয়।

খতিয়ানঃ


খতিয়ান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Ledger, যা Ledge থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হলো, "তাক/সেলফ"।

লেনদেনসমূহকে সুন্দরভাবে শ্রেণীবদ্ধকরণের কাজ করে খতিয়ান।

হিসাবের পাকা বই—খতিয়ান।

সাধারণ খতিয়ানে সংরক্ষিত হিসাবসমূহের নাম ও জের নিয়ে—রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়।

সাধারণ খতিয়ানে "হিসাব নম্বর" থাকে কিন্তু সহকারী খতিয়ানে "হিসাব নম্বর" থাকে না।

আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ — খতিয়ান।

হিসাবের যাবতীয় তথ্যের প্রাণকেন্দ্র—খতিয়ান।

খতিয়ানের T ছকে ঘর থাকে — ৮ টি।

চলমান জের ছকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়— জের টানা।

খতিয়ান প্রস্তুতকরণের দ্বিতীয় ধাপ— ব্যালেন্সিং বা উদ্বৃত্ত নির্ণয়।

হিসাবের ভুলত্রুটি ও জালিয়াতি রোধে সহায়ক — খতিয়ান।

এই ছিল ২য় অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সব টপিকের আলোচনা ও টিপস।



সবার জন্য শুভকামনা রইলো

Maruf Hossain Munna
Instructor of Accounting
Executive of SILSWA

Department of Marketing
University of Dhaka

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form