আর্থিক বিবরণী, একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

এডমিশন এক্সামের জন্য এই দুইটি টপিক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ২টা টপিক আলোচনা করবো তাই কথা না বাড়িয়ে চলো শুরু করা যাক।

➡️৯ম অধ্যায়ঃ আর্থিক বিবরণী⬅️

প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথেই বাহ্যিক কিছু পক্ষ জড়িত থাকে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান টি তাদের নিকট হতে কোন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রতিবেদন, আর্থিক ফলাফল, আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি তুলে ধরতে হয়। আর এই বিষয়গুলো প্রস্তুত করাই হলো আর্থিক বিবরণী।

আমেরিকান হিসাববিজ্ঞানে যেকোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ৪ টি আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করে(প্রথম ৪টি)। কিন্তু IAS-1 অনুযায়ী আর্থিক বিবরণীর ৫টি অংশ পাওয়া যায়। যেমনঃ
১. আয়-ব্যয় বিবরণী।
২. মালিকানাস্বত্ব বিবরণী।
৩. আর্থিক অবস্থার বিবরণী।
৪. নগদ প্রবাহ বিবরণী।
৫. নোট এবং বিভিন্ন দফার ব্যাখ্যা/টীকা।

Financial statement



♻️  আয় বিবরণীঃ
একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের শেষে প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনগুলো দ্বারা কি লাভ বা ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয় করার জন্য প্রস্তুতকৃত বিবরণীই হলো আয়-ব্যয় বিবরণী বা বিশদ আয় বিবরণী। এটি একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এই বিবরণীতে শুধু মুনাফাজাতীয় লেনদেন বা আয়-ব্যয় গুলো লিপিবদ্ধ হয়। বিশদ আয় বিবরণী প্রস্তুত করা হয় — "হিসাবকাল ধারণা অনুযায়ী"। "আর্থিক ফলাফল নির্ণয়" করাই এই বিবরণী প্রস্তুত করার উদ্দেশ্য।

🔸নীট বিক্রয়= বিক্রয়+অলিখিত বিক্রয়–বিক্রয় বাট্টা–বিক্রয় ফেরত–মুনাফাবিহীন পন্য বিক্রয়।

🔸বিক্রিত পন্যের ব্যয় = প্রারম্ভিক মজুদ পন্যে + নীট ক্রয় + প্রত্যক্ষ খরচ – সমাপনী মজুদ পন্য।

🔸মোট মুনাফা= নীট বিক্রয় – বিক্রিত পন্যের ব্যয়।

🔸পরিচালন মুনাফা = মোট মুনাফা + পরিচালন আয় – পরিচালন ব্যয়।

🔸নীট মুনাফা = পরিচালন মুনাফা + অপরিচালন আয় – অপরিচালন ব্যয়।

♻️ মালিকানাস্বত্ব বিবরণী/সংরক্ষিত আয় বিবরণীঃ

একমালিকানা ব্যবসায়ে প্রস্তুত করা হয় মালিকানাস্বত্ব বিবরণী আর কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রস্তুত করা হয় সংরক্ষিত আয় বিবরণী। একটি নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির উপর মালিকের দাবির পরিমান নির্ণয় করা হয় এই মালিকানাস্বত্ব বিবরণীর মাধ্যমে। মালিক কতৃক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ দায় হিসেবে গন্য করা হয় — ব্যবসায়িক সত্তা ধারণা অনুযায়ী। "হিসাবকাল ধারণা" অনুযায়ী এই বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

🔸সমাপনী মূলধন = প্রারম্ভিক মূলধন + অতিরিক্ত মূলধন + মূলধনের সুদ + নীট লাভ/– নীট লাভ – উত্তোলন – উত্তোলনের সুদ।

♻️আর্থিক অবস্থার বিবরণীঃ

"প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করার জন্য"একটি নির্দিষ্ট দিনে (হিসাবকালের শেষ দিন) একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দায় ও মালিকানাস্বত্ব সম্বলিত যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাই আর্থিক অবস্থার বিবরণী। এটি প্রস্তুত করা হয় কোন একটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য। "চলমান প্রতিষ্ঠান ধারণা অনুযায়ী" এই বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। যৌথ মূলধনী কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের "তফসিল-১১ তে" প্রদর্শিত ছক অনুসরণ করা হয়।

🔸মোট সম্পত্তিসমূহ = মোট চলতি সম্পদ + মোট স্থায়ী সম্পদ + বিনিয়োগ ( আলাদা শিরোনামে আসবে)

🔸মোট দায় ও মালিকানাস্বত্ব = সমাপনী মালিকানাস্বত্ব + মোট চলতি দায় + মোট দীর্ঘমেয়াদি দায়।

💠[A=L+E এই সমীকরণের প্রকাশ]

♻️নগদ প্রবাহ বিবরণীঃ

একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের সকল নগদ লেনদেনগুলো নিয়ে এই বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ের তারল্যের পরিমান জানার জন্য এবং নগদ অর্থের প্রবাহ জানার জন্যই নগদ প্রবাহ বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। এক্ষেত্রে নগদ আন্তঃপ্রবাহ গুলো থেকে নগদ বহিঃপ্রবাহ গুলো বাদ দিয়ে নীট নগদ প্রবাহ নির্ণয় করা হয়, তার সাথে আবার প্রারম্ভিক হাতে নগদ যোগ করে সমাপনী হাতে নগদ বা উদ্বৃত্ত নির্ণয় করা হয়। "হিসাবকাল ধারণা" অনুযায়ী এই বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

♻️নোট এবং বিভিন্ন দফার ব্যাখ্যা/টীকাঃ

এটি মূলত আর্থিক বিবরণীর সহায়ক একটি অংশ। এটি কোন বিবরণী না এবং এর কোন ছক বা সীমারেখা নেই। উপরে যে ৪ টি বিবরণী নিয়ে আলোচনা করা হলো সেগুলো প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সহায়তা বা বিশ্লেষণ করার জন্য যেসব আলোচনা বা খসড়ার প্রয়োজন হয় তাই হলো নোট বা ব্যাখ্যা। একে আর্থিক বিবরণীর টীকা হিসেবেও গন্য করা হয়। এই নোট বা পাদটীকা দেয়া হয় "পূর্ণপ্রকাশ নীতি অনুযায়ী"।

♻️কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

হিসাববিজ্ঞানকে বলা হয় — একটি তথ্য ব্যবস্থা।

আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের মুখ্য উদ্দেশ্য — আর্থিক ফলাফল নির্ণয় এবং প্রকৃত আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন।

হিসাবচক্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ — আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ।

পন্য ক্রয়-বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বিশদ আয় বিবরণীর পূর্বে প্রস্তুত করে — বিক্রিত পন্যের ব্যয় বিবরণী।

বিশদ আয় বিবরণী ২ প্রকার — একধাপ ও বহুধাপ বিশিষ্ট বিশদ আয় বিবরণী।

বিক্রিত পন্যের ব্যয় — যাবতীয় প্রত্যক্ষ খরচের সমষ্টি।

আর্থিক বিবরণীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান — আর্থিক অবস্থার বিবরণী।

আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে আসে — মূলধন জাতীয় হিসাবসমূহ।

আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রণয়নের নীতিমালা প্রণয়ন করে — IFRS-1

আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে চলতি সম্পদ লিপিবদ্ধ করা হয় — রক্ষণশীলতার নীতি অনুযায়ী।

আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে স্থায়ী সম্পদ লিপিবদ্ধ করা হয় — ঐতিহাসিক মূল্য নীতি অনুযায়ী।

সুনাম, ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট, কপিরাইট, লাইসেন্স, ফ্র্যানসাইজ, ট্রেডনেম ইত্যাদি এগুলো — অদৃশ্যমান স্থায়ী সম্পদ।

➡️১০ম অধ্যায়ঃ একতরফা দাখিলা পদ্ধতি⬅️

একতরফা মানে একটি পক্ষ লিপিবদ্ধ করে হিসাব রাখা। সহজে হিসাব রাখার জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। শুধু ব্যক্তির নাম লিখেই টাকার পরিমান বসিয়ে দেয়া হয়।

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণ ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই ছোট ছোট ব্যবসায়গুলো যেমনঃ পার্লার, সেলুন, মুদি দোকান, মনিহারি দোকান ইত্যাদি সহজে হিসাব রাখার জন্য একতরফা দাখিলা পদ্ধতি অবলম্বন করে। এ পদ্ধতিতে কোন লেনদেনের দুই পক্ষ, কোন লেনদেনের একপক্ষ আবার কোন লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয় না। এটি একটি অসম্পূর্ণ, অপরিপক্ব ও অবৈজ্ঞানিক হিসাব পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিবাচক হিসাব ( দেনাদার হিসাব ও পাওনাদার হিসাব) এবং নগদান হিসাব সংরক্ষণ করা হয় কিন্তু অন্য কোন সম্পত্তির হিসাব কিংবা নামিক হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না। এই পদ্ধতিতে নামিক হিসাব বা আয় ও ব্যয় হিসাবগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় না বলে "সমাপনী মূলধন থেকে প্রারম্ভিক মূলধন বিয়োগ করে লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করা হয়।

লাভ-লোকসান বিবরণীঃ

🔸লাভ/ক্ষতি = (সমাপনী মূলধন + উত্তোলন) – (প্রারম্ভিক মূলধন + অতিরিক্ত মূলধন)

🔸প্রারম্ভিক মূলধন = প্রারম্ভিক সম্পত্তি – প্রারম্ভিক দায়।

🔸সমাপনী মূলধন = সমাপনী সম্পত্তি – সমাপনী দায়।

বৈষয়িক বিবরণীঃ

একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে আর্থিক অবস্থার বিবরণীর পরিবর্তে বৈষয়িক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তুত করার পদ্ধতি একই শুধু নাম ভিন্ন।

♻️কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

GAAP সমর্থন করে না — একতরফা দাখিলা পদ্ধতি।

একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয় না — সম্পদবাচক ও নামিক হিসাবসমূহ।

◾একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা সম্ভব নয় — রেওয়ামিল।

◾একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে পূর্নাঙ্গ হিসাব রাখা হয় — ব্যক্তিবাচক হিসাবের।

◾কোন প্রকার আন্তর্জাতিক নীতিমালা নেই এবং বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না — একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে।

◾প্রতিমাসের ১ম তারিখে উত্তোলন করলে সুদ ধার্য করা হয় ৬.৫ মাসের, মাঝামাঝি উত্তোলন করলে ৬ মাসের এবং শেষ তারিখে উত্তোলন করলে ৫.৫ মাসের।

◾একতরফা দাখিলা পদ্ধতির মৌলিক বই — নগদান বই।

◾একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে জানা সম্ভব নয় — মোট লাভ।

◾হিসাববিজ্ঞানের সর্বাধুনিক পদ্ধত — দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি।

এই ছিল দুটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলোর বিস্তারিত আলোচনা। 

কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দাও।

"সবার জন্য শুভকামনা রইলো🖤"

Maruf Hossain Munna
Instructor of Accounting
Executive of SILSWA

Department of Marketing
University of Dhaka

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form