🔴লেখক পরিচিতিঃ
নাম- মোতাহের হোসেন চৌধুরী
জীবনকাল- (১৯০৩- ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬)
জন্মস্থান- নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর।
মৃত্যুস্থান- চট্টগ্রাম (চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনা কালে)
সাহিত্যজীবনঃ
'সংস্কৃতি কথা', ক্লাইভ বেল এর 'civilization' গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত 'সভ্যতা' এবং বারট্রান্ড রাসেলের 'Conquest of Happiness' গ্রন্থের অনুবাদ 'সুখ'
★ মোতাহের হোসেন চৌধুরী স্মরণীয় হয়ে আছেন 'বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন' নিয়ে।
🔴গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্নঃ
🔹সমাজের কাজ কেবল টিকে থাকার সুবিধা দেওয়া নয়, মানুষকে বড় করে তোলা, বিকশিত জীবনের জন্য মানুষের জীবনে আগ্রহ জাগিয়ে দেওয়া।
🔹সংসার(পৃথিবী) পরিপূর্ণ– স্বল্পপ্রাণ স্থুলবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষ দ্বারা।
🔹স্বল্পপ্রাণ স্থুলবুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষদের একমাত্র দেবতা– অহংকার।
🔹তাদের মানবপ্রেম সম্পর্কিত কথা হয়– আন্তরিকতাশূণ্য, উপলব্ধিহীন বুলি।
🔹অপরের সার্থকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা কার কাজ?– জবরদস্তিপ্রিয় মানুষের।
🔹নিষ্ঠুর ও বিকৃত বুদ্ধি মানুষের স্থানে কাদের এনে দিতে হবে?– বড় মানুষদের, যাদের কাছে জীবনাদর্শের প্রতীক সজীব বৃক্ষ।
🔹কীসের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি হয়?– বৃক্ষের দিকে।
🔹ফুল ফোটাকে রবীন্দ্রনাথ কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?– নদীর গতির সঙ্গে।
🔹রবীন্দ্রনাথ কীসের মধ্যে মনুষ্যত্বের সাদৃশ্য পেয়েছেন?– নদীর গতি।
🔹তপোবন প্রেমিক কে?– রবীন্দ্রনাথ।
🔹অনুভূতির চক্ষুকে বড় করে তুললে কী সহজে উপলব্ধি করা যায়?– বৃক্ষের বেদনা।
🔹বৃক্ষের সাধনায় কী দেখতে পাওয়া যায়?– বৃক্ষের ধীরস্থির ভাব।
🔹মানুষের সাধনা হওয়া উচিত নয়– অনবরত ধেয়ে চলা।
🔹কার সার্থকতার ছবি তত সহজে উপলব্ধি করা যায় না?– নদীর।
🔹সাধনার ব্যাপারে কি একটি বড় জিনিস?– প্রাপ্তি।
🔹বৃক্ষের প্রাপ্তি চোখের সামনে কীসের মতো ফুটে উঠে?– ছবি।
🔹কাদের প্রাপ্তি ও দানে পার্থক্য দেখা যায় না?– সৃজনশীল মানুষের।
🔹কীভাবে বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান শোনায়?– নীরব ভাষায়।
🔹জীবনের মানে– বৃদ্ধি।
🔹মানুষের কী সৃষ্টি করে নিতে হয়?– আত্মা।
🔹আত্মারূপ ফল কার উপভোগ্য?– স্রষ্টার।
🔹বৃক্ষের কাজ কি?– অপরের সেবার জন্য প্রস্তুত হওয়া।
🔹দোরের কাছে দাঁড়িয়ে বৃক্ষ কীসে বাণী প্রচার করে?– নতি, শান্তি ও সেবার।
🔹আত্মাকে কিভাবে গড়ে তুলতে হবে?– মধুর ও পুষ্ট করে।
🔹কী কখনো শিক্ষার প্রধান বিষয়বস্তু হতে পারে না?– বিজ্ঞান।
🔹কী দ্বারা জীবনবোধ ও মূল্যবোধে অন্তর পরিপূর্ণ হয়?– সাহিত্য- শিল্পকলায়।
🔹'Ripeness is all' এর মানে– পরিপক্বতাই সব।
🔴 গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন মূলক লাইনঃ
📖"যা তার প্রাপ্তি তা- ই তার দান"– নিজের জীবনের সকল অর্জন অন্যের জন্য বিলিয়ে দেয়ার মহৎ গুণটি বৃক্ষ মানুষকে শিখিয়ে দেয় নিজ কর্মগুণে।
📖" নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান শোনায়"– লেখকের কাছে সার্থকতার প্রতীক বৃক্ষ, যা নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেয় অপরের কল্যাণে। আর বৃক্ষ আমাদের এই সার্থকতার গল্প জানায় নীরব থেকে নিজ কর্মের দ্বারা।
📖"জীবনের মানে বৃদ্ধি, ধর্মের মানেও তাই।"– মানবজীবন বিকাশের ধর্ম পালন করে। জন্ম থেকে মৃত্যু নানান রকমের বিকাশের মধ্য দিয়ে এগোয় মানবজীবন।
📖" মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও।"– প্রকৃতির সকল জীব- জন্তুর প্রধান ধর্ম বিকাশ বা বৃদ্ধি। কিন্তু জীব হিসেবে মানুষের একটি আলাদা বিকাশ ঘটে যা তাকে অন্যান্য জীব থেকে বিশেষে পরিণত করে। আর সেটি হলো আত্মিক বা মনুষ্যত্বের বিকাশ।
📖"মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরীপাওয়া যায় না।"– মানুষের একটি বিশেষ দিক হলো তার আত্মিক বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধির উপকরণ কেও তাকে তৈরী করে দেয় না বরং অর্জন করে নিতে হয় জীবনদর্শন ও অভিজ্ঞতা দ্বারা।
🔴শব্দার্থঃ
স্থুলবুদ্ধি- সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধিহীন।
জবরদস্তিপ্রিয়- গায়ের জোরে কাজ হাসিলে তৎপর।
বিকৃতবুদ্ধি- বুদ্ধির বিকার ঘটেছে এমন।
বুলি- গৎ- বাঁধা কথা হিসেবে ব্যবহৃত।
মনুষ্যত্ব- মানবোচিত সদগুণাবলি।
তপোবন- অরণ্যে ঋষির আশ্রম। মুনি ঋষিরা তপস্যা করেন এমন বন।
নতি- অবনত ভাব। বিনয়, নম্রতা।
সৃষ্টিধর্ম- সৃষ্টি বা সৃজনের বৈশিষ্ট্য।
গূঢ় অর্থ- প্রচ্ছন্ন গভীর তাৎপর্য।
🔴সংকলনঃ
প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর 'সংস্কৃতি কথা' গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
🔴মুলভাবঃ
প্রবন্ধটিতে লেখক বৃক্ষের সাথে মানবজীবনের তুলনা করে মানবজীবনের সার্থকতা বর্ণনা করেছেন। লেখকের মতে, বৃক্ষ যেমন তার সমস্ত জীবনের অর্জন পরার্থে নিবেদন করেন, তেমনি মানুষের সার্থকতাও পরার্থে আত্মনিবেদনে নিহিত। পরোপকারিতা, পরার্থে আত্মনিবেদনের মাধ্যমেই একমাত্র স্বার্থপরতা, অহংকারী মনোভাব দূর করা সম্ভন বলে লেখক মনে করেন।
মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়