ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী

🔲ব্যাংক সমন্বয় বিবরণীর ধারণাঃ

নগদ অর্থের নিরাপত্তা বিধান ও জালিয়াতি রোধে আমানতকারী (নগদান বই) ও ব্যাংক (ব্যাংক বিবরণী) আলাদাভাবে হিসাব সংরক্ষণ করে। "সময়ের পার্থক্য ও যেকোন পক্ষের ভুলের কারণে" দুই পক্ষের সংরক্ষিত হিসাবের মাঝে পার্থক্য দেখা দেয়। আর, এই নগদান বই ও ব্যাংক বিবরণীর মধ্যাকার গরমিল দূর করার জন্য যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাই ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী।

🔲নগদান বই ও ব্যাংক বিবরণীর উদ্বৃত্তের গরমিলের কারণঃ

সময়ের ব্যবধানঃ
কোন একটি নির্দিষ্ট তারিখে আমানতকারী কতৃক নগদান বইতে একটি লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের ফলে উদ্বৃত্ত/জের বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। অন্যদিকে ব্যাংক নির্দিষ্ট তারিখে ঐ লেনদেনটি না করার কারণে ব্যাংক বিবরণীতে পূর্বের জেরই থাকে।এই কারণে গরমিল দেখা দেয়।

ভুলঃ
আমানতকারী বা ব্যাংক যেকোন পক্ষের ভুলের কারনে নির্দিষ্ট সময়ে উভয় পক্ষের জেরের মাঝে গরমিল দেখা দেয়।

ভুলগুলো নিচে দেখো,

ব্যাংকে জমাকৃত চেক আদায় হয়নি/ট্রানজিটে জমা চেক/ পরিবহনাধীন চেকঃ

"আমানতকারী কোন চেকের টাকা ব্যাংকে আদায়ের জন্য জমা দিল। কিন্তু, ব্যাংক কতৃক তা এখনো আদায় হয়নি।" এর ফলে আমানতকারী তো তার নগদান বইয়ে জের বৃদ্ধি করে নিয়েছে। কিন্তু ব্যাংক বিবরণীর জের,চেকের টাকা এখনো আদায় না হওয়ায় কম দেখানো হবে।

>ব্যাংক বিবরণীর সাথে "যোগ" করতে হয়।

ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী



বকেয়া চেক/ইস্যুকৃত চেক ব্যাংকে উপস্থাপিত হয়নিঃ

আমানতকারী তার কোন পাওনাদারকে চেক ইস্যু করলো। সাথে সাথে আমানতকারী তার নগদান হিসাবের জের হ্রাস করে নিল। কিন্তু পাওনাদার এখনো ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়নি। তাই ব্যাংকের জের এখনো বেশি আছি। তাই গরমিল হয়। যে চেক এখনো ব্যাংকে উপস্থাপিত হয়নি তাই বকেয়া চেক।

> ব্যাংক বিবরণী থেকে "বিয়োগ" করতে হয়।

ডেবিট মেমোরেন্ডামঃ

আমানতকারীর অজান্তেই ব্যাংক কর্তৃক যদি কোন পাওনাদারকে পরিশোধ করা হয় বা ব্যাংক তার চার্জ কেটে রাখে তাহলে আমানতকারীকে জানানোর জন্য যে মেমো পাঠায় তাই ডেবিট মেমোরেন্ডাম। এই ডেবিট মেমোরেন্ডাম না আসা পর্যন্ত ব্যাংক বিবরণীর জের কম থাকে কিন্তু নগদান হিসাবের জের থেকে এখনো টাকা না কমানোয় জের বেশি থাকে। এখানেই গরমিল হয়।

> নগদান বই থেকে "বিয়োগ" করতে হয়।

ক্রেডিট মেমোরেন্ডামঃ

আমানতকারীর অজান্তেই "ব্যাংক যদি কোন দেনাদারের নিকট থেকে টাকা আদায় করে নেয়, কোন দেনাদার যদি সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দেয় এবং ব্যাংক যদি সুদ প্রদান করে" তাহলে ব্যাংকের জের বৃদ্ধি পায়। এটা জানানোর জন্য ব্যাংক আমানতকারীকে যে মেমো পাঠায় তাই ক্রেডিট মেমোরেন্ডাম। এই মেমো না আসা পর্যন্ত নগদান হিসাবের জের কম থাকে কারণ আমানতকারী তো জানেনা। এজন্য গরমিল দেখা দেয়।

> নগদান বইয়ের সাথে "যোগ" করতে হয়।

NSF (Not Sufficient Fund):

আমানতকারী কোন চেক ব্যাংকে জমা দিল আদায় করার জন্য এবং সাথে সাথে নগদান বইয়ে জের বাড়িয়ে নিল। কিন্তু যে দেনাদার থেলে চেক পেয়েছে তার একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা না থাকায় ব্যাংক তা আদায় করতে পারেনি। এজন্য ব্যাংকের জের কমই থাকবে। এজন্য দুই পক্ষের সংরক্ষিত হিসাবে গরমিল দেখা দেয়।

> নগদান বই থেকে "বিয়োগ" করতে হয়।

আমানতকারীর ভুলঃ

আমানতকারী যদি নগদান বইতে কম লিখে। যেমনঃ ব্যাংকে ৩৫,০০০ টাকার চেক জমা দিয়ে যদি নগদান বইতে ভুলে ২০,০০০ টাকা লিখে।

>বাকী টাকা (১৫,০০০) নগদান বইয়ের সাথে "যোগ" করতে হয়।

ব্যাংকের ভুলঃ

ব্যাংক যদি হিসাবরক্ষণে ভুল করে। যেমনঃ ৪০,০০ টাকার একটি চেক আদায় করে ব্যাংক বিবরণীতে ৪,০০০ টাকা লিখলে। নগদান বইতে তো আমানতকারী ৪০,০০০ টাকাই লিখে নিয়েছে। তাই,

> ব্যাংক বিবরণীর সাথে বাকী (৩৬,০০০) টাকা "যোগ" করে দিতে হবে।

🔲ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী নির্ণয় পদ্ধতিঃ

সাধারণত ২ টি পদ্ধতিতে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।

একক জের পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে যেকোন একটি হিসাবের জের দেয়া থাকে এবং কিছু গরমিল বা লেনদেন দেয়া থাকে। ঐ জেরের সাথে এই লেনদেনগুলো যোগ/বিয়োগ করলে যে জের বের হয় তাই অন্য হিসাবের জেরের সমান মনে করা হয়। যেমনঃ নগদান বইয়ের জের দেয়া হলো। এর সাথে লেনদেন গুলো যোগ/বিয়োগ করে যে চূড়ান্ত জের পাওয়া যায় এটাই ব্যাংক বিবরণীর জের মনে করা হয়।

>এই পদ্ধতিতে অপর হিসাবের সঠিক জের না জানায় এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ্ধতি নয়।

দ্বৈত জের পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে নগদান হিসাব ও ব্যাংক হিসাবের জের পাশাপাশি নিয়ে কিছু লেনদেন সমন্বয় করা হয়। মানে যেই জেরের সাথে যে লেনদেনটি যোগ/বিয়োগ হওয়ার কথা ছিল তা করা হয়। এবং, শেষে উভয় হিসাবের জের সমান হয়।

> উভয় হিসাবের জের নিয়ে কাজ করা হয় বলে এটি একটি সঠিক ও গ্রহনযোগ্য পদ্ধতি। এতে সহজেই বুঝা যায় উভয় জেরের সম্পর্ক ও গরমিল গুলো।

🔲সুপার টিপসঃ

🔹ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুত করা হয়— "পূর্ণ প্রকাশ নীতি" অনুযায়ী।

🔹ব্যাংক শব্দের অর্থ— নদীর তীর।

🔹কোন হিসাবখাত হিসেবে বিবেচিত হয় না— ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী।

🔹আমানতকারীর ব্যাংকে জমাকৃত টাকা হ্রাস করে — ডেবিট মেমোরেন্ডাম।

🔹ব্যাংক বিবরণীতে ডেবিট মেমোরেন্ডাম চার্জের জন্য ব্যবহার করা হয় — DM।

🔹পাস বই ও নগদান বইয়ের সম্পর্ক — বিপরীতধর্মী।

🔹 ব্যাংক হিসাব — ৩ প্রকার ( চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী)।

🔹ব্যাংক তহবিলের প্রধান উৎস — আমানত গ্রহন।

🔹আমানতকারীর হিসাব বই হলো — নগদান বই।

🔹STD এর পূর্ণরূপ — Short Term Deposit .

🔹DPS এর পূর্ণরূপ — Deposit Pension Scheme.

এই ছিল ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী সংক্রান্ত বিস্তারিত ও সাজানো একটি পোস্ট। আশা করি এর বাহিরে আর কিছু না পড়লেও হবে। ভালো করে বুঝে নাও। বুঝতে সমস্যা হলে কমেন্টে জিজ্ঞেস করো।


Whatever you don't have the ability but you should have a bright Dream. And, It's enough for your success which can never seen by all.


Maruf Hossain Munna
Instructor of Accounting
Executive of Team Event Management
Central Wing, SILSWA

Department of Marketing
University of Dhaka

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form