অলৌকিক তাবিজ (Magic Of Science)

(এক)
হুকা মিয়া টাইম মেশিন আবিষ্কার করতে গিয়ে বিফল হয়ে এখন সাংবাদিকদের কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত। গ্রামের বাড়িতে চলে এসেও এসব থেকে রেহাই পাননি।
কিন্তু কিছুদিন ধরে তার মাথায় অন্য চিন্তা। এই গ্রামে এক অদ্ভুত লোক থাকে। নাম তাবিজ বাবা। সেই ব্যাপারে আজকেই প্রথম জানলেন।
সবাইকে তাবিজ দেয় আর টাকা নেয়। এই তাবিজ নাকি অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন। আশেপাশে অশুভ শক্তি থাকলেই এই তাবিজ জ্বলে ওঠে,সাথে সাথেই নাকি অশুভ শক্তি পালায় যায়।
হুকা মিয়া একজন বিজ্ঞানী। এইসব সে বিশ্বাস করে না। তার কাছে এগুলো চিটিংবাজি।
কিন্তু ভাবনা একটাই তাবিজ হুট করে জ্বলে উঠে কিভাবে। ব্যাটারি আছে? কিন্তু ব্যাটারি তো একসময় শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ব্যাটারি শেষ হলে তাবিজের বুজরুকি শেষ। কিত্তু তা হয় না কেন? কি এমন ব্যাটারি আছে?
তাছাড়াও ঝড়বৃষ্টির সময় এই তাবিজ বারবার জ্বলে। তাবিজ কিভাবে বোঝে আজকে ঝড়বৃষ্টি? কিভাবে বুঝলো মানুষ ঝড়বৃষ্টিকে বিপদ মনে করে?
সন্ধ্যার সময় ভুতের উপদ্রব নাকি বেশি। সেজন্য তাবিজ প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় আলো দেয়। তাবিজ কিভাবে বোঝে এখন সন্ধ্যা? এপ্রিল মাসে সন্ধ্যা এক সময় আবার ডিসেম্বর মাসে সন্ধ্যা অন্য সময় হয়। তাবিজ ঠিক সন্ধ্যা বোঝে কিভাবে?
তাহলে কি তাবিজ বাবার সত্যি সত্যি অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে? কিন্তু বিজ্ঞান এসব অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করে না।

(দুই)
হুকা মিয়ার চিন্তা আরও বেরে গেছে। কিছুদিন পর কুকার গণিত অলিম্পিয়াড। সেই জন্য হুকার ছোট ভাই তাবিজ বাবার কাছ থেকে তাবিজ নিয়ে আসছে।
এই তাবিজ ব্যাবহার করলে নাকি কুকাকে আর কেউ হারাতে পারবেনা। কুকাকে যেসব অশুভ শক্তি হারানোর চেষ্টা করবে তাদের এই তাবিজ ভাগাই দেবে। তাবিজের বদলে ১৫০০০ টাকা দিতে হয়েছে।
অনেক হয়ে গেছে আর না,এইবার হুকা মিয়াকে কিছু করতেই হবে। নাহলে এই তাবিজ বাবা গ্রামের সকলকে বলদ বানিয়ে ফকির করে দেবে।
তাবিজ দিয়ে গণিত অলিম্পিয়াড জেতা যায়,এই বিশ্বাস ছোট ভাইয়ের মন থেকে বের করতেই হবে। নাহলে কুকা আর ছোট ভাই সবার কপালে বিপদ।
কি করা যায় এসব ভাবতে ভাবতে হুকার মনে হলো, একদিন তাবিজ অপারেশন করে দেখতে হবে ভেতরে কি আছে। কোন অলৌকিক মন্ত্র আছে? কিভাবে এই তাবিজ হতাৎ করে জ্বলে ওঠে?
ঝড়বৃষ্টি শনাক্ত করার সেন্সর আছে নাকি? তাবিজে কি ব্যাটারি আছে? থাকলে সেটা শেষ হয় না,নাকি? এত ছোট জিনিশে এত কিছু থাকতে পারে!

(৩)
কুকার ঘরের টেবিলের ওপর রাখা তাবিজটা নিয়ে হুকা নিজের ঘরে চলে আসল। এবার তাবিজের ময়না তদন্ত করতে হবে।
তাবিজের চেইন ধাতুর তৈরি। তাবিজের কিছুটা অংশ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল লাগানো। বাকি অংশে একটা বিশেষ পেইন্ট। ফয়েল খুলতেই একটা কাচের লকেটের মত কিছু।
ফয়েলের সাথে একটা সরু তারের এক প্রান্ত যুক্ত। অন্য প্রান্ত কাচের ভেতরে কিছুর সাথে যুক্ত। কাচের লকেট খুলতেই দেখা পেলেন কিছু রোধ,সিরামিক ক্যাপাসিটর আর বাল্ব।
হুকা মিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই,তাবিজের আসল খেলা কই।
কুকাকে ডেকে হুকা বলল কাল সন্ধায় গ্রামের সবাইকে নিয়ে বড় বট গাছের নিচে আসতে। তাবিজ বাবার জারিজুরি ধরা পরছে।


(৪)
আজকে তাবিজ বাবার রহস্য বের হবে। গ্রামের সবাই হাজির। এবার হুকা মিয়া বলা শুরু করল,
হুকা : এই তাবিজ যে ভুয়া, সেটা আগেই ধারণা করেছিলাম। কালকে প্রমাণও পাইছি।
ভুকা : কি প্রমাণ?
হুকা : হুকা সবাইকে একটা তাবিজ খুলে সব দেখালো।তাবিজ অলৌকিক হলে ভেতরে ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম আসলো কেন? এই তাবিজ মুলত বাতাস থেকে আয়ন সংগ্রহ করে আলো দেয়। বাতাস থেকে আয়ন সংগ্রহের মূল কাজ করে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল। এটাই এন্টিনা হিসেবে কাজ করে। তারপর ক্যাপাসিটর এই চার্জ সংগ্রহ করতে থাকে। এরপর যখন বাল্ব জ্বালানোর মত ভোল্টেজ ক্যাপাসিটরে সংগ্রহ হয়ে যায় তখন বাল্ব জ্বলে ওঠে। তারপর সেই আলো শোষণ করে জিঙ্ক সালফাইড পেইন্ট। যেটা তাবিজের বাকি অংশে লাগানো ছিল। এটাকে Luminous paint বলে। এই যৌগ আলো শোষণ করার পর ধীরে ধীরে বিকিরণ করা শুরু করে।
মুকা : তাহলে ঝড়বৃষ্টির দিন ঘন ঘন জ্বলা নেভা করে কেন?
হুকা : আসলে সেদিন আকাশে অনেক মেঘ থাকে। মেঘ বাতাসের সাথে সংঘর্ষ করে আয়নিত হয়,তাই ঝড়বৃষ্টির দিন বায়ুতে আয়নের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে দ্রুত ক্যাপাসিটর চার্জ হয়,আবার সাথে সাথে বাল্ব জ্বালিয়ে ডিসচার্জ হয়ে যায়। এজন্য ঘন ঘন জ্বলা নেভা করে।

ফুকা : প্রতিদিন সন্ধ্যায় জ্বলে কেন? প্রতিদিন সন্ধ্যায় কি আয়ন থাকে?
হুকা : আসলো তাবিজের জিঙ্ক সালফাইড এ যখনি আলো শোষণ করে, সাথে সাথে ধীরেধীরে বিকিরণ করা শুরু করে। অধিক আলোয় এটা ধরা পরে না। সন্ধ্যায় আলো কমার সাথে সাথে জিঙ্ক সালফাইড এর আলো বিকিরণ চোখে ধরা পরে।
টুকা : তাইতো বলি,রাতে ঘরের আলো বন্ধ করার সাথে সাথে তাবিজ আলো দেয় কেন। আমিতো মনে করতাম, আলো বন্ধ করার সাথে সাথে ঘরে ভুত ঢোকে।
হুকা : হা হা হা। ভুত বলে কিছু নাই।
সবাই বুজরুকি বুঝতে পেরে তাবিজ বাবাকে খুজতেছে হাতের ব্যায়াম করবার জন্য। কিন্তু তাবিজ বাবা তো আগেই হাওয়া।

Writer: Zaved Noor

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form