বৈশাখী রম্য

আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। শাড়ি পাঞ্জাবির হিড়িক লেগেছে ফেইসবুকে। অনেকেই আগামীকাল প্রিয়জনের সাথে পাঞ্জাবি শাড়ি পড়ে ঘুরতে যাবে। অনেক মেয়েই শাড়ি পড়ে ট্রায়াল দিচ্ছে। অনেকে নিজের টাইমলাইনে দিচ্ছে, আবার অনেকেই মাই ডে তে ছবি দিচ্ছে। আগামীকাল কলেজ বন্ধ। পড়াশোনার তেমন প্রেসার নেই। তাই বসে বসে সবার শাড়ি পড়া ছবি দেখছি। আর ভাবছি নারীর আসল সৈন্দর্য্য শাড়িতে কথাটা মিথ্যে নয়। শাড়ি পড়ার পর কোথা থেকে যেনো অপরুপ সৈন্দর্য্য ভর করে প্রতিটা মেয়ের ওপর। তেমনি এক শাড়ি পড়া কমবয়সী এক সুন্দরী মেয়ের মাইডে দেখে ম্যাসেজ করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
আমিঃ কি সুন্দর লাগছে তোমায়!
মেয়েঃ ভাইয়া, আপনি শুধু শুধু পাম দিচ্ছেন। আমি মোটেই সুন্দরী নই।
প্রত্যেক সুন্দরী মেয়েই এমন করে। আপনি যতই তার রুপের প্রশংসা করেন সে বলবে সে তত সুন্দরী না। আসলে কিন্তু তা না। তারা চায় এই কথার পরেও আপনি আবার তার প্রশংসা করুন। মূলত আরও প্রশংসা শোনার জন্যেই এমন করে। আমিও তার আরও প্রশংসা করলাম।
--"শাড়িতেই নারী "কথাটা মনে হয় তোমার জন্যেই বলা হয়েছে। দুধে আলতা গায়ের রঙের সাথে শাড়িটা!!পারফেক্ট ম্যাচিং।
--আপনি কিন্তু বাড়িয়ে বলছেন।
--না না আমি মোটেও বাড়িয়ে বলছিনা। একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করবো?
--হ্যা নিশ্চয়ই। আপনি আমাকে নক দিবেন ভাবিও নি।!
--তোমার বাবা কি চোর নাকি?
--হাহা ভাইয়া। এই প্রশ্ন কেন? আমার বাবা চোর হতে যাবে কেন?
--না মানে একজন চোরের পক্ষেই তো সম্ভব আকাশের তারা চুরি করে তোমার গায়ে তার অপার সৌন্দর্য ঢেলে দেওয়া। আমি শিউর তোমার আব্বু চোর!!
--হাহা। আপনি কিন্তু ফ্লার্ট করছেন।
--সুন্দরকে সুন্দর বলা যদি ফ্লার্ট করা হয় তাহলে আমি তাই করছি। তবুও সুন্দরের প্রশংসা করতে পিছপা হবো না।
--ভাইয়া একটা ছবি দেখাই। দেখেন তো ডিপি দেওয়া যায় কিনা।
--হ্যা নিশ্চয়ই।
তারপর চোখে কাজল দেওয়া, নাকে নোলক পড়া একটা ছবি দিলো। ছবিটি দেখার সাথে সাথেই আমার একটা কবিতার লাইন মনে পড়ে গেলো।
--চোখে কাজল,নাকে নোলক
চুলে লম্বা বেণী
ঢিলেঢালা পোশাক পড়া
সারা অঙ্গখানি!!
--বাহবা। আপনার সাথে দেখি কথাই বলা যাবে না। কিসব কবিতা বলে বেড়ান। আমি বুঝিই না।
--তুমি কেন সুন্দরী হলে
এমন ছবি কেন দিলে
দেখে তো আমি মুগ্ধ হবোই!!
--সুন্দর কবিতা তো। এত কবিতা জানেন?
--would you like to have a cup of coffee with me?
--আপনি খাওয়াবেন? আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনি নক দিছেন।
--অবাক হওয়ার কিছু নেই। অবাক তো আমি হচ্ছি। এত সুন্দর কি করে হয় মানুষ!!
--কিন্তু ভাইয়া একটা সমস্যা আছে।
--হ্যা বলো।
--আমার বয়ফ্রেন্ড আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এতক্ষন পড়ালেখা করলাম তামিম ইকবাল। আর পরীক্ষায় আসলো মুশফিকুর রহিম। এটা কিছু হইলো? এক কাপ কফি খেতে আবার বয়ফ্রেন্ডের পারমিশন নেওয়া লাগে? মাথায় কুবুদ্ধি চাপলো। দেখি তো এদের ব্রেকাপ করানো যায় কিনা!!
--আচ্ছা,তোমার বয়ফ্রেন্ড কি গে নাকি?
--গে কি? আর ও গে হতে যাবে কেন? ও তো ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।
আমার প্রথম বুদ্ধি কাজে লেগেছে। সে এসবের কিছুই বুঝেনা। সুতরাং আমি যা বলি তাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।
--না মানে আমি তোমার সাথে দেখা করতে বলছি। আর তোমার বফ আমার সাথে দেখা করতে চাইছে। তাই ভাবলাম সে গে কিনা!
--গে কি ভাইয়া?
--গে মানে হচ্ছে অনেক স্মার্ট। যাদের গিটার আছে, কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের গে বলে।
--না ভাইয়া, ওর তো গিটার নেই। তয় সাকিবের ডিএসএলআর ছিলো।
--সাকিব কে?
--আমার প্রথম বফ।
--এটা কত নাম্বার?
--তিন নাম্বার। এটাই শেষ। ওকেই বিয়ে করব।
--আপনি জানি কোন ক্লাসে পড়েন?
--ক্লাস এইটে।
--এতবড় হয়ে গেছেন। মাত্র তিনটা বফ। আমার পাশের বাসার সেভেনে পড়া এক মেয়ের ছয়টা বফ ছিলো।
--ওর বফরা কি গে ছিলো?
কি এক মুসিবতে পড়লাম। কথায় কথায় গে'র কথা তুলে। ধরা খাইলে জামিন নাই আমার।
--হ্যা, আজকাল তো সবাই গিটার নিয়ে ঘুরে। তোমার বফ তোমার কথা শুনে না? তোমাকে মানে না?
--না ভাইয়া। ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে অথচ এখনও ম্যাচিউর হতে পারে নি। আমি এত করে বুঝাই বাবু, ম্যাচিউর হও, ছোট ছোট ব্যাপারে সন্দেহ করা বাদ দাও। ও শুনেই না আমার কথা। খুব কষ্টে আছি ভাইয়া।
--বাদ দাও। সবাই কি আর এক রকম হয়? আমার মনে হয় ও তোমাকে বেশি ভালোবাসে না।
--আমারও তাই মনে হয়। ভাইয়া কোন পরীক্ষা আছে যেটা দ্বারা বুঝতে পারবো ও আমাকে ভালোবাসে কিনা?
--হ্যা আছে। তুমি এখনই তোমার বফকে বলো ও গে হতে পারবে কিনা? শুধু উত্তর শুনবা। কিছু বলার সুযোগ দিও না। উত্তর না হলে সাথে সাথে ব্লক মেরে দাও। এমন বফের কি দরকার বলো?
দুইমিনিট পর।
--ভাইয়া, ব্লক করে দিছি। দরকার নেই এমন আনস্মার্ট, ক্ষ্যাত বয়ফ্রেন্ডের। একা থাকাই ভালো।
--তুমি কি কাঁদতেছো?
--না ভাইয়া। একটু মন খারাপ হইছে।
--অহ। কান্না কইরো না। মানুষ যাবে আসবে এটাই স্বাভাবিক। একটা কবিতা শুনাই।
নয়নভরা জল গো তোমার
আঁচল ভরা ফুল।
--ভাইয়া, আপনি কাল ফ্রি আছেন?
--হ্যা নিশ্চয়ই। (খুশিতে লাফাচ্ছি আমি)
--চলেন কাল দেখা করি। আই হোপ বোর ফিল করবেন না।
--০১... আমার নাম্বার। রাতে ফোন দিও। এখন একটু পড়াশোনা করি। টাটা

লিখাঃ জহিরুল হক জাবেদ 

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form