যখন কোন রোগ ওষুধ সেবন করার পর ও ভালো হয়না রোগী, তখন আমরা রোগীর ব্লাড, ইউরিন অথবা পুজ সংগ্রহ করে ল্যাব এ পাঠাই।
কারন, অতি সামান্য রোগ তাও কেন ভালো হচ্ছেনা রোগী!
তখন ল্যাব এ মাইক্রোবায়োলজিস্ট রা সেই রক্ত, ইউরিন, পুজ কে চাষ করে কিছুদিন।
সেখানকার ব্যাকটেরিয়ার উপর বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে দেখেন ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায় কিনা!
যদি রেজাল্ট আসে রিপোর্টে "S - সেনসিটিভ" আর যদি "R - রেজিস্ট্যান্ট"
এখন সেনসিটিভ মানে হলো এন্টিবায়োটিক গুলো ব্যাকটেরিয়া মারতে সক্ষম আর যদি রেজিস্ট্যান্ট আসে তবে ব্যাকটেরিয়া মারতে এন্টিবায়োটিক যা প্রয়োগ করা হয়েছে তা অক্ষম!
"এন্টিবায়োটিক"
আমাদের কাছে পরিচিত একটি নাম। কোন রোগ হলেই ফার্মেসি থেকে আমরা এন্টিবায়োটিক সেবন করি। তা রোগ সামান্য ই হোক আর অসামান্য ই হোক।
অতি সামান্য ব্যাপারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা মোটেও ঠিক না।
আর যদিও এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় তবে আমরা সেটা ফিলাপ করিনা।
এই মনে করেন ৭টা জি-ম্যাক্স দিলো জ্বর ঠান্ডার জন্য।
২-৩ টা খেয়েই আপনি সুস্থ। আর খেয়ে কি হবে?
এতো পাওয়ারফুল ট্যাবলেট!
ফেলে দিলেন বা খেলেন না আর।
কিন্তু আমরা নিজের অজান্তেই নিজেকে খুন করার এক হাতিয়ার 'ব্যাকটেরিয়া' আমাদের দেহের ভিতরে তার ভবিষ্যৎ জানান দিয়ে আসতেছি!
বিস্তারিত পড়ুন বুঝবেন...
মনে করেন আপনাকে ৭টা ট্যাবলেট দেয়া হলো, জ্বর ঠান্ডার এন্টিবায়োটিক হিসেবে। আপনি খেলেন ৩টা!
আর খেলেন না, কমেই তো গেছে জ্বর। কিন্তু এই কোর্স ফিলাপ না করার কারনে আপনার শরীরের সব ব্যাকটেরিয়া মারা যায়না।
কিছু ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরে থেকেই যায়।
তারা আপনার প্রতিরোধ ব্যবস্থা (এন্টিবায়োটিক) সম্পর্কে জেনে যায়।
তখনই তারা (ব্যাকটেরিয়া) তাদের DNA চেঞ্জ করে ফেলে।
ব্যাকটেরিয়া জেনে গেলো আপনার সেবন করা জি-ম্যাক্স কে।
সকল প্রকার স্থায়ী ব্যবস্থা নিয়ে নিবে তখন ব্যাকটেরিয়া।
কারন ব্যাকটেরিয়া আপনার ব্যবহার করা জি-ম্যাক্স কে চিনে ফেলেছে।
অথচ আপনি / আমরা কি জানি এটা যে নিজের অজান্তেই আমরা রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া নিজের শরীরে বাসা বাধিয়ে ফেলছি!
এখন রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া গুলো আপনার মাধ্যমে আপনার ফ্যামিলি তে ছড়াবে।
ধরা ছোয়ার মাধ্যমে ছড়াবে। এটা এইডস / ক্যান্সার এর থেকেও ভয়ংকর আকার ধারন করবে!
কারন কোন এন্টিবায়োটিক ই ব্যাকটেরিয়ার এগেইন্সট এ একশন নিতে পারবেনা কারন আমরা তা শেষ করে দিছি অনেক আগেই!
এতে কর সামান্য জ্বরের কবলে পড়েই আমাদের মৃত্যু হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক।
একদিন এই বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির যোগেও ছোট্ট অসুখেই মারা যেতে হবে আমাদের।
পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়ার রাজত্ব চলবে। অথচ আমাদের কিছুই করার থাকবেনা।
আর এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়া রাজত্ব করবে, আমাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে কনফার্ম।
একটা বাস্তব ঘটনা শুনুন,
গতমাসের ০৭ তারিখ। একজন ইয়ং পেশেন্ট এডমিট হয়েছেন আমাদের হসপিটালে (নর্থ ইস্ট)
রোগ ছিলো শুধু জ্বর। আর কিছুইনা। কোন ওষুধেই কমেনা। শেষে ব্লাডের কালচার এন্ড সেনসিটিভিটি টেস্ট এ রেজাল্ট আসে ম্যাক্সিমাম এন্টিবায়োটিক এর এগেইন্সট এ ব্যবস্থা নিয়ে নিছে ব্যাকটেরিয়া।
৮৫% এন্টিবায়োটিক ই ব্যাকটেরিয়া মারতে অক্ষম (রেজিস্ট্যান্ট)
মাত্র কয়েকটা এন্টিবায়োটিক হলো (সেনসিটিভ)
ভেবে দেখেন,
ঐ কয়টা এন্টিবায়োটিকের এগেইন্সট এ ব্যাকটেরিয়া পদক্ষেপ নিতে পারলে মেয়েটার লাইফ শেষ হয়ে যেত অকালেই।
যদি সব এন্টিবায়োটিক ই ফেইল করে তাহলে আপনার আমার বা যে কারো ই মৃত্যুর জন্য সময় কাউন্টডাউন শুরু...
এভাবেই ব্যাকটেরিয়া তার রাজত্ব চালিয়ে যাবে, আর আমাদের দেখতে হবে সামান্য, অতি সামান্য রোগে মানুষের অকাল মৃত্যু!
বাবা মা দেখবে তার ছোট বাচ্চাটার অকাল মৃত্যু, কিছুই থাকবেনা আমাদের হাতে।
অথচ আমাদের আছে হাজার হাজার এন্টিবায়োটিক
আর একজন রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া বহনকারী আরো ১০০ জনের দেহে তা প্রবেশ করাতে পারে। অলরেডি প্রবেশ হয়ে গেছে তার ফ্যামিলিতেও। এভাবে পুরো দেশে ছড়াবে মহামারী আকারে।
কিছুই করার থাকবেনা!
যখন একটি ছোট বাচ্চা রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে, সে কী আমাদের ভুলের জন্য আমাদের ছাড় দিবে?
নাহ!
তার শরীরের ব্যাকটেরিয়া গুলো অলরেডি তার বাবা মায়ের শরীরে এবং আরো বহুদূর বিস্তৃত হয়ে গেছে। সুতরাং তাদেরও নিস্তার হবেনা।
এজন্যই এইডস, ক্যান্সার থেকে অনেক ভয়াবহ এই ব্যাকটেরিয়া।
অনেকে বলে ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে রাজত্ব করবে। আসলে তা জানা নেই। তবে এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকবেনা। থাকবে শুধু ব্যাকটেরিয়া। আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে কয়েকশো বছরের মধ্যেই
কমেন্টে কয়েকটা রিপোর্ট দিবো দেখে নিবেন। আর দয়া করে সামান্য রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না প্লিজ। ফার্মেসির দেয়া এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। ডাক্তার যদিও দেয় তবে কোর্স ফিলাপ করুন। পুনরায় ডাক্তার দেখান। মনে রাখবেন রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া একবার কোন এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে তা একবারে স্থায়ী হয়ে যাবে।
সেই এন্টিবায়োটিক এর বাবারও ক্ষমতা নাই তাকে মারার কারন ব্যাকটেরিয়া তার DNA পরিবর্তন করে ফেলবে।
নিজে বাচুন, সচেতন হোন।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাচান।
যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না।
কিছুদিন আগে একটা নিউজ হয়েছিলো ব্যাকটেরিয়া রাজত্ব করবে পৃথিবীতে। তা সত্যি হবে আমাদের অসাবধানতা আর অসচেতনতার কারনে।
আমি নিজে এন্টিবায়োটিক সেবন করিনা। আর করলে কোর্স ফিলাপ করি৷ বাচতে চাইলে নিজের প্রজন্ম কে বাচাতে চাইলে এইটুকো করে যেতে হবে আমাদের।
নাহলে কিচ্ছু করার থাকবেনা।