একুশ
প্রান্তর অবস্থা দিনকে দিন অবনতি ঘটছে গু'লি'টা ডান বক্ষে লেগেছে, প্রান্তর এহেন অবস্থায় আরো উ'গ্র রুপ নিয়েছে দলের বাকি সদস্যরা বিপক্ষ দল আপাদত একটু দমেছে তদন্ত চলছে এ নিয়ে৷
মাঝে দু দিন এক দু' বার আঁখি যুগল খুললেও খুব একটা শারীরিক উন্নতি দেখেনি৷
বিক্ষিপ্ত, ক্ষ'ত'বিক্ষ'ত দেহ আর কৌতুহল পূর্ণ শীর্ণ নেত্র যেন অধীর হয়ে কাউকে খুঁজছিলো ক্ষ'ত'বিক্ষ'ত শরীর আর অতৃপ্ত আঁখি যুগল কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষ টি কে না পেয়ে যখন ক্লান্ত তখন ফের হতাশ হয়ে নেত্র যুগল বন্ধ করে ফেলছে ছেলেটা৷
বক্ষ ক্ষ'ততে বিক্ষত হওয়া ছেলেটা প্রতিটা নিশ্বাসে বাংবার বেহায়া হয়ে উঠছে কাউকে দেখার আশায়৷ সামনে তার প্রাণ প্রিয় ভাই থাকা শর্তেও সে যেন আশা পাচ্ছে না৷ তার অন্তঃকরণে বি'ধ'স্ত অনুভূতিতে যে জুরে আছে তার যে তাকে প্রয়োজন কিন্তু সে নেই৷ কোথাও নেই৷
মেয়েটা আসেনি? মেয়েটি তবে সত্যি পাষাণ? সে দিন যে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার পর ভয় দেখেছিলো অন্য রকম? তা কি তবে ক্ষনিকের ছিলো? মানুষ বুঝি এতই পাষাণ হয়? মানুষ বুঝি এতই কঠিন হয়? ভালোবাসা তবে পরাজয়? হাজার ভাবনার যখন উত্তর মেলাতে পারেনা মানুষটি ফের নিজের জ্ঞান হারায় অবস্থার আরো অবনতি ঘটে৷ সব কিছু উলটে পালটে যাক৷ মানুষটির যে সেই পাষাণ মেয়েটিকেই চাই প্রতিক্ষণ , কঠিন হোক সে ওই কঠিন মানুষটাকেই চায়৷
,,
"আশা মেয়েটাকে পাওয়া যাচ্ছে না কাল সকাল থেকে৷আর সাথে বাড়ির দেখা শোনার দায়িত্বে যে আছে ওই কাজের লোকটাকেও পাওয়া যাচ্ছে না৷"
আয়াশের কথায় মেহরাব চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো৷ আশাকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? চা এর কাপটায় আর চুমুক বসালো না মেহরাব৷ টেবিলের উপর রেখে ক্ষানিকটা বিস্ময় কন্ঠে বললো,
"পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কোথায় যাবে ? খোঁজ নিয়েছিস তোরা?"
আয়াশ ক্ষানিকটা গম্ভীর চিত্তে জবাব দিলো,
"আজ রাত হতে চললো তোর মনে হয় আমরা না খোঁজ নিয়ে বসে আছি? কাল রাতে ব্যপারটি আমাদের ওর স্বামী রিয়ান জানিয়েছে৷ সারাদিন ও খুঁজেছে লোকটা বেশ ভে'ঙে পরেছে ঝড়বৃষ্টির মাঝেই আমাদের টিম খুঁজতে বের হয়৷ কাল রাতেই আমরা প্রতিটি থানায় খবর দিয়ে দিয়েছি খোঁজার জন্য প্রতিটা স্টপেজ সহ রেলস্টেশনেও খবর লাগিয়েছি মেয়েটা পাসপোর্ট জাতীয় পরিচয়পত্র কিছু নিয়েই বের হয়নি৷ তবে এখন অব্দি পাওয়া কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি৷আর ওই বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে যে ছিলো তার কথা জানতে পেরেছি ও বাড়িতে আশাকে খুঁজতে যাওয়ার পর৷"
এইটুকু বলে থামলো আয়াশ৷ আয়াশ থামতেই মেহরাব ফের বললো,
"কাজের লোকটা কোথাও উধাও হবে? আর কেন? গ্রামে গিয়েছে নাকি জেনেছিস কিছু?"
আয়াশ ভাবুক কন্ঠে উত্তর দিলো,
"তার পরিবার এখানে থাকে না শুনেছি যে নাম্বার টা পেয়েছি নাম্বার টাও বন্ধ ওই কাজের লোকের গ্রামের লোকাল থানায় আমরা জানিয়েছি তারা খোঁজ নিয়ে জানিয়েছে নেই সেখানেও কেউ তবে তারা নজরদারি করছে ওখানে৷ "
মেহরাব প্রশ্ন করলো ফের,
"মহিলা মা'রা গেছে কি করে বললি না তো?শুনেছি ময়না তদন্ত হয়েছে তাহলে কি খু'ন ছিলো এটা?"
আয়াশ তপ্ত শ্বাস টানলো, মেহরাব কে এখনো কিছুই বলা হয়নি ছেলেটা তাই কাজ ফাজ ফেলে অন্যের ব্যপারে জানতে এসেছে৷ অদ্ভুত ছেলে এ পরিবারের সাথে ওর র'ক্তের সম্পর্ক নেই কিন্তু শুধু মাত্র ওই মেয়েটার জন্যই এত কৌতুহল৷ নয়তো ছোট থেকে একদিনো অন্যের ব্যপারে কৌতুহল দেখেনি মেহরাবের৷ অনেক অনেক কেসের কথাও মেহরাব কে শুনিয়েছে আয়াশ কিন্তু মুখ ফুটে কখনো বলেনি 'কিভাবে হলো' 'কেন হলো'
মেয়েটা দারুণ ভাবেই রপ্ত করেছে ছেলেটাকে৷
আয়াশ এবার নিরবতা কাটিয়ে মুখ খুললো,
"লা'শ পাওয়া যাওয়ার দু-দিন আগে মহিলাকে খু'ন করা হয়েছে, তবে খু'নি বেশি মাথা ঘামিয়ে খু'ন করেনি সহজ ভাবেই খু'ন করেছে৷ ঘুমের মাঝে শ্বাসরো'ধ করে মে'রে'ছে৷ হয়তো বালিশ চা'পা দিয়েছে কারণ গলা টিপে মা'র'লে গলায় দাগ থাকতো৷"
বলেই থামলো আয়াশ৷ মেহরাব শুনলো বললো না কিছু ফের নিরবতা বয়ে গেলো৷ দুজনেই চুপ রইলো কিছুক্ষণ৷
মেহরাব অবাক না হয়ে পারে না লোকটা শুরুতে নিজেই লা'শ দেখে পুলিশ কে ফোন করলো নিজেই আবার উধাও হয়ে গেলো? অদ্ভুত বেশ ব্যপারটি৷ আর আশা মেয়েটা নিজের প্রতি সন্দেহ প্রতিনিয়ত তীব্র করছে আগেই৷ আর এখন নিশ্চয়ই কোথাও পালিয়েছে? নয়তো কোথায় যাবে?
সেই দিনই সন্দেহ হয়েছিলো প্রথমত সেই দিন মৃ'ত মা কে দেখেও তার ভাবমূর্তি একই ছিলো আর এখন এই পালানোর ব্যপারটি৷ পালানোর ব্যপারটি শুনে যে কেউ বলবে মেয়েই তাহলে মা কে খু'ন করেছে৷ আর বাড়ির কাজের লোকটা পালালো কেন? ও কি জড়িত ছিলো? নাকি খু'ন টা সেই করেছে আশা কিছু জেনেছে আশাকেও গায়েব করে দিয়েছে? নয়তো মাকে মেয়ে খু'ন করার কারণ কি? মেয়ে মা কে কি অপরাধে খু'ন করলো? আশার স্বামী কে মেহরাব পছন্দ করতো না ভাবতো লোকটার মাঝেই কিছু গ'ন্ড'গো'ল আছে কিন্তু এখন দেখছে ব্যাপারটা পুরো ভিন্ন৷
দুজনে ভাবনায় মত্ত্ব হলো৷ নিরব রইলো চারোপাশ কিছুক্ষণ৷ মেহরাবের মাঝে মাঝে মনে হয় এসব ব্যপারে তো তার কৌতুহল দেখিয়ে লাভ নেই সে তো মায়ার ব্যাপাটি দেখতে চায় শুধু পরক্ষণেই মনের কোথায় যেন উঁকি দেয় খু'ন আর নিখোঁজ এর পিছনে একটাই কারণ৷ এটা ভাবনা ভিত্তিহীন মাঝে মাঝে মনে হয় আর কখনো মনে হয় হতেও তো পারে? মেহরাব বেশ বুঝতে পারে তার এই কান্ডে তার আপা আয়াশ বেশ বিরক্ত সে যা করছে একটু বাড়াবাড়ি হয়তো? শুরু থেকেই ব্যপারটি যদি অন্যরকম হতো? যে যাই ভাবুক তার মন তো মানে না৷
মন যখন এক জনের প্রতি আকৃষ্ট হয় তখন কি আর চারোদিকে খেয়াল থাকে?তখন তো মনে হয় করি না আরেকটু পাগলামি৷ চুড়ান্ত পর্যায় না হয় পৌঁছাই? তার সাথে বেইমানি হোক বা কোন অজানা রহস্য জানতে তো পারবে? বয়স বাড়ুক! তার সাথে না থাকবে বলেও না থাকা মানুষ টার জন্য অগাধ ভালোবাসাটাও না হয় বাড়ুক? ক্ষতি কি? প্রেয়সী যদি বেইমানি করে থাকে কথা দিয়েও কথা না রাখে তা না হয় দেখা হলে বোঝা পরা করে নিবে?
আর যদি ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়? অজানা কোন রহস্যের সাথে পরিচয় ঘটে? ভাবতে পারলো না আর বেশি মেহরাব থমকালো কিছুক্ষণ৷
বেশ কিছুক্ষণ পর মেহরাব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো৷ বললো,
"মায়ার ব্যপারে কিছু জেনেছিস?"
এই মূহুর্তে এমন একটা প্রশ্ন কখনোই আশা করেনি আয়াশ৷ প্রশ্ন টা তার কাছে ভিত্তিহীন লাগছে কেমন যেন৷ এ কেস টার সুরাহা মিলছে না আবার মায়ার কথা জানবে কি করে?
ছেলেটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে আজকাল এত বছর পরেও ছেকেটার মাথা থেকে এই নামটা যায় না৷ করবে কি ও?
আয়াশ যথেষ্ট শান্ত রইলো গম্ভীর্য নিয়ে বললো,
"তুই কি বলছিস মা'র্ডা'র কেস রেখে মি'সিং কেস রি ওপেন করতে?"
আয়াশের এমন কথায় ভরকালো মেহরাব, সে শুধু প্রশ্ন করেছে মাত্র৷ সে কি বলেছে এমন কিছু? তা ছাড়া মেহরাবের মনে হচ্ছে মায়ার মায়ের মৃ'ত্যু আর মায়ার আঠারো বছর আগে নিখোঁজ হওয়া দুইটার সাথে কিছু কানেকশন আছে৷
মেহরাব ক্ষানিকটা ঠিক হয়ে বসে উত্তর দিলো,
"আমি কি তেমন কিছু বলেছি?"
"তোর প্রশ্নের ধরণতো তাই বলছে৷"
মেহরাব হাসলো কিছুটা৷ এ হাসিতে যেন সুখ নেই কোন বেরস হাসি তার৷ মেহরাব ভাবুক হয়ে তার ভাবনা গুলো আয়াশ কে বললো,
"আচ্ছা তোর কি মনে হচ্ছে না মায়ার নিখোঁজ হওয়া আর ওর মায়ের এমন হঠাৎ মৃ'ত্যুর দুটোই ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে?"
আয়াশ এ ছেলের ভাবনা দেখে অভিভূত হয়৷ আঠারো বছরের আগে নিখোঁজ হওয়ার আর আঠারো বছর পর খু'ন হওয়া কিভাবে জরিত থাকে? আর ওটা নিখোঁজ ছিলো নাকি নিজ থেকে চলে যাওয়া ছিলো কেউ জানে না৷
আয়াশ মেহরাবের দিকে তাকিয়ে ক্ষানিকটা হেসে বললো,
"তোর কি মনে হচ্ছে না তোর ভাবনা টা বেড়েছে? এসব নিয়ে সময় নষ্ট করছিস? জীবন আছে তোর মেহরাব আর কত? চুয়াল্লিশ এ পা রাখতে চলেছিস এবারতো একটু নিজেকে নিয়ে ভাব?"
মেহরাব ও হাসলো চেয়ার ছেড়ে উঠলো পকেটে নিজের ফোন ঢুকাতে ঢুকাতে বললো,
"নিজের কথাইতো ভাবছি৷ ভালো থাকার কারণ খুঁজছি৷ আমার কথা ছাড় তুই ও তো বিয়ে করলি না, কেন? এটা আমার কাছে চিরকাল রহস্যের মতই রইলো৷"
আয়াশ এবার উত্তর দিলো না চুপ রইলো৷ এ উত্তর তারো জানা নেই৷
বাইশ
নভেম্বর মাসের শুরু তীর্যক রোদের আলো আর শীতের হাওয়া দুটো মিলিয়ে অদ্ভুত এক মিষ্টি প্রভাতের আগমন৷ রোদ টা চোখে লাগলেও উত্তাপ হীন যেন আজ রোদ শীতের সকাল শুরু হয় কুয়াশা দিয়ে রোদ আর কুয়াশা যখন মিলেমিশে একাকার হয় মনোরম এক পরিবেশের দেখা মেলে৷
দুদিন আগে মুষলধারে বৃষ্টির আমন্ত্রণে শীতের আগমন হলেও কুয়াশাচ্ছন্ন প্রভাতের এখনো দেখা মেলেনি৷
ছাদের মধ্যখানে মেহরাবের ঘড়ের পাশে যে ঘড়টা রয়েছে সে ঘড়টা ফাঁকা দু দিন যাবত৷ দিন পনেরো আগেও ছাদে এলে সকালবেলা ঘড়টা থেকে কেউ বাঁকা কন্ঠে হাজারো কথা বলতো সে কথার প্রেক্ষিতে কুয়াশাও দু-চারটা বাঁকা কথা শুনিয়ে দিতো৷
চুপচাপ ঘড়কুনে অন্তর্মুখী মেয়েটা বাহানা ছাড়াই অকারণে ছাদে এসে বসে থাকতো৷
কারণ তাঁর সবসময়ই অজানা ছিলো যদি কখনো নিজের অন্তঃকরণ নিজের বি'রো'ধীতা করতো তখন নিজেই নিজের উত্তর খুঁজতো মন মস্তিষ্ক যখন দুটোই উত্তরহীন থাকতো তখন নিজেই নিজের উপর ক'ঠো'রতা জারী করে ছাদ থেকে নেমে যেতো৷
রুদ্র কাউকে বলে যায়নি৷ উহু কাউকে বলে যায়নি বললে হয়তো ভুল হবে? বলে গেছে কিনা তা কুয়াশার অজানা তবে তাকে কিছু বলে যায়নি কখন কবে কোথায় গেছে তাও জানে না৷
কাউকে কিছু জিগ্যেস ও করে এ নিয়ে, জিগ্যেস করার প্রয়োজন ও মনে করেনি৷ কেউ কিছু বলেওনি৷ তবে হুট করে আজ জানতে ইচ্ছে করছে সে কোথায় গেছে৷ অনুভূতি বুঝি তার এইটুকু ছিলো?
এইটুকুই ছিলো বুঝি তাকে চাওয়ার ইচ্ছা? কুয়াশার মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেরা অদ্ভুত ধাঁচের তারা ভালোবাসতে জানে কিনা এ নিয়ে তার সন্দেহ হয় ব্যাপক, তাদের আদৌ কোন সত্য অনুভূতি আছে কিনা তা নিয়েও কুয়াশাকে ভাবায় পরক্ষণেই অদৃশ্য কেউ যেন ইঙ্গিত করে তার মামা মেহরাবের দিকে৷ মানুষ টা একটা মানুষের আশায় এখনো বসে আছে৷
উহু সবাই এক না তবে সবাই তার মামার মত ও না৷ মেহরাব ভিন্ন প্রেমিক যার সংজ্ঞা দিতে গেলে প্রথমেই উপাধি দিতে হবে সে 'ভ'য়ং'কর প্রেমিক'৷ সবাই তো আর এমন হতে পারে না৷
তার মামা তার দেখা শ্রেষ্ঠ প্রেমিক পুরুষ যার ভালোবাসা নিয়ে কথা বলতে গেলে তার শব্দ ভান্ডারে শব্দ ফুরিয়ে যাবে তবুও কথা ঠিক মত গুছিয়ে বলা হবে না৷
তার দেখা সবচেয়ে নি'কৃ'ষ্টতর পুরুষ তার বাবা, যে কিনা তার মা কে কথা দিয়েও কথা রাখেনি৷ ভালোবাসি বলেও অন্য নারীতে আসক্ত হয়েছে৷
আচ্ছা সে মানুষ টার কি হৃদয় বলে কিছু নেই? ভালোবেসে একজন কে বিয়ে করে কি করে আবার অন্য নারীতে আসক্ত হয় কি করে?
তাদের কি মনে হয় না আমি আরেকজন কে কথা দিয়েছি? তখন তাদের ভালোবাসা কি হয়? একবারো কি একা ভাবে না আমি ভুল করেছি?
মানুষটা এত দিন আছে কি করে? ছেলে মেয়ের কথা মনে পরে না? মনে হয় না আদৌ আমার ছেলে মেয়ে গুলো কেমন আছে? বা বেঁচে আছে কি না খোঁজ নেই একবার?
এমন পুরুষ মানুষ গুলো আদৌ মানুষ তো? সে কি জানে না মন ভাঙা ভ'য়ং'কর পাপ?
"ঢাকা যাবি না আপু? এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস?"
হিমের কন্ঠে ধ্যান ভাঙে কুয়াশার ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায় হাত ঘরীটা পরখ করতেই দেখলো সময় পেরিয়ে যাচ্ছে সে খেয়ালই করেনি ভিত্তিহীন চিন্তায় মত্ত ছিলো৷
কুয়াশা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ে ভর্তি চায়ের কাপটা হাতে নিলো চা টা এনেছিলো ঠান্ডা হয়ে গেলো ভাবতে ভাবতে৷ খাওয়াই হলো না৷ কুয়াশা এগোতে এগোতে তাড়াহুড়ো কন্ঠে বললো,
"তাড়াতাড়ি নিচে আয় ভাই তোকে নাস্তা দিয়ে আমি রেডি হবো৷মা সেই কখন বেরিয়ে গেছে৷ দেরি হয়ে গেলো আগে ডাকবিনা আমায়?"
বোনের এমন কথায় অবাক না হয়ে পারলো না হিম, কুয়াশা বেশ সময় সচেতন সে কখনই অন্যের বলা পর্যন্ত বসে থাকে না৷ কি হয়েছে তার কে জানে? চা নিয়ে আসলো উপরে খাবে বলে খেলো না চা? তার বোন কে বোঝার সাধ্য তার মায়েরো নেই সে তো দুরের কথা৷ তপ্ত শ্বাস টেনে বোনের পিছু পিছু ছুটলো হিম৷
..
নিভু নিভু করে আঁখি যুগল খুললো প্রান্ত৷ রোদের তীর্যক আলো চোখে পরতেই কপাল কুচকে ফেললো৷ জ্ঞান তার কাল মধ্য রাতেই ফিরেছে এখন কিছুটা আ'শং'কা মুক্ত বলেছে ডাক্তার৷ বেশ র'ক্তক্ষরণ হয়েছে সে দিন৷
প্রান্তর প্রান প্রিয় ভায়ই র'ক্ত দিয়েছে তাকে৷ প্রান্ত কুঁচকানো কপালেই আশপাশ দৃষ্টি বুলালো৷ ফের আশাহত হলো কাঙ্ক্ষিত কাউকে খুঁজলো কিন্তু পেলো না৷ সে তৃষ্ণার্ত প্রেমিক পুরুষ কিন্তু তবুও তার তৃষ্ণা মেটাতে পারলো না আজ৷
"কাউকে খুঁজছিস ভাই?"
চেনা গুরগম্ভীর কন্ঠে তটস্থ নেত্রযুগল শান্ত, ধাতস্থ হলো যেন৷ প্রান্তর চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানলো শান্ত কন্ঠে শুধালো,
"আসেনি কেউ?"
"কাকে খুঁজছিস তুই? কাকে আর আসতে বলছিস?"
সামনের মানুষটির কাছে এমন প্রশ্ন আশা করেনি প্রান্ত৷ মানুষটি ভালো করে যানে ও কাকে খুঁজছে৷
এটা তো তাকে বলে দেওয়ার ও কথা না সে তো জানে তার ভাই এর ভাব ভঙ্গি ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা৷ ইনিই একমাত্র মানুষ যে কিনা প্রান্ত কিছু বলার আগেই সব টা বুঝে যায় তবে আজ এমন প্রশ্ন কেন? তাচ্ছিল্য স্বর তার, তাচ্ছিল্য করলো কি? তাহলে কি এত দিনের এক দিনো আসেনি মেয়েটা?
প্রান্ত থমথমে কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো ফের,
"আসেনি বেলি?"
প্রান্তর প্রশ্নে সামনে থাকা মানুষটি তাচ্ছিল্য হাসলো কটাক্ষ দৃষ্টিতে তাকালো প্রান্তর প্রশ্ন ভিত্তিহীন তাই দিয়ে সময় নষ্ট করলো না৷ সে প্রশ্ন ছুড়লো,
"তোকে গু'লিটা কে মেরেছে প্রান্ত?"
গু'লির কথা মনে পড়তেই চোখমুখ শক্ত করলো প্রান্ত, মাথায় রাগ চাড়া দিয়ে উঠলো৷ সাংঘাতিক সাহস বেরেছে ছেলেটার কিছু বলেনি বলে পার পেয়ে গেছে৷
প্রান্ত চোখমুখ শক্ত করে ভাবলো কিছুক্ষণ মিনমিনিয়ে জিগ্যেস করলো,
"সে দিন কখন এসেছিস তুই ভাইয়া?"
লোকটি বুঝলো না কিছু এমন প্রশ্নের মানে তবুও উত্তর দিলো,
"তোর গু'লি লাগার কথা শুনেই এসেছি আমি৷"
প্রান্ত তপ্ত শ্বাস টানলো তারমানে সে দিন মিথ্যা বলে ডাকা হয়েছিলো৷ পিছন থেকে বলেছিলো ভাই এসেছে কিন্তু সে দিন তখন ছিলো না ওখানে ওর ভাই৷ সে দিন এ কথা শোনার সাথে সাথেই খটকা লেগেছিলো ভাইতো ঝা'মে'লায় আসবে না বলেছিলো ওকে কথা দিয়েছিলো আসবে না ও নিজেও বলেছিলো দলের ঝা'মে'লায় ওরা আসবে না৷।
"কি হলো বলছিস না যে? আর সে দিন বলেছিলাম তো দলের ঝা'মে'লায় তুই থাকবি না তাহলে?গু'লিটা করেছে কে? দেখেছিস তুই?"
প্রান্ত তপ্ত শ্বাস টানলো চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলো,
"বেলির বাবা করিয়েছে৷ রনি! রনিকে দিয়ে৷ "
..
শনিবার থেকে ক্লাস শুরু হবে কুয়াশার, যদিও সে খুব একটা ক্লাস করে না গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস গুলো ছাড়া৷ পরিক্ষার প্রায় মাস খানেক বাকি এখনো৷ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস হবে এখন৷ আজ কিছু প্রয়োজনীয় নোটস কালেক্ট করতেই যাবে ঢাকা শুধু নোটসই নয় হোস্টেলে নিজের থাকার জায়গাটা একটা গোছগাছ করতে যাবে মাঝে আছেই আর দু দিন৷
মা কে ছেড়ে বাড়ি ছেড়ে তার কোথাও থাকতে ভালো লাগে না, আগে যদিও থাকতে হয়েছে পড়াশোনার জন্য৷ হিম ও ঢাকা থাকতো এখন হিম বাড়ি থেকে যাতায়াত করেই পড়াশোনা করে৷
মামা আর মা মিলে আগের মাসেই একটা বাইক কিনে দিয়েছে হিম কে৷ হিমের বড় একটা স্বপ্ন ছিলো বাইক৷ বাবার ইচ্ছা গুলো মামাই পূর্ণ করছে সেই আসার পর থেকে, মুখ ফুটে চাইতেও হয় না কেমন যেন বুঝে যায়৷
যে মানুষ টা ওদের জন্য এত্ত কিছু করছে অথচ মানুষটাকে খুশি করার মত কিছুই করতে পারেনি কখনো৷
মায়া নামক মেয়েটাকে যদি পেতো কুয়াশা নির্ঘাত জিগ্যেস করতো,
"আপনি আছেন কি করে এ লোকটাকে ছাড়া? কেমন মানুষ আপনি? একদিন তো ঠিক বলেছিলন ভালোবাসেন তাহলে ভালোবাসি বলে হারিয়ে গেলেন কেন? এই বুঝি আপনার ভালোবাসা?"
মেয়েটা নিজে তাকে পাগল করলো নিজেই হারিয়ে গেলো৷ সব ভাকোবাসা এমন কেন? ভালোবাসা কষ্ট ছাড়া কখনো সুখ দেয় না কেন? নাকি ভালোবাসাটাই ঠিক না?
কুয়াশা ব্যাগ কাধে ঝুলাতে ঝুলাতে বের হলো নিজের কক্ষ থেকে৷ হিম তখন সোফায় বসে নিশ্চিন্তে মুঠোফোন ঘাটছে৷ ছেলেটার দুনিয়া এক দিকে এই মুঠোফোন নামক যন্ত্রটা এক দিকে সারাদিন কি যে করে কে জানে?
কুয়াশা তপ্ত শ্বাস টানলো৷ কালই বলে রেখেছিলো আজ দিয়ে আসতে একটু৷ কুয়াশা দরজার দিকে এগোতে এগোতে বললো,
"ভাই আমি নিচে দাঁড়াচ্ছি দরজা লক করে বাইকের চাবি নিয়ে তাড়াতাড়ি আয় দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার৷"
হিমের মাঝে তেমন ভাবান্তর দেখা গেলো না সেভাবেই বসে আছে৷ কুয়াশা দরজার সামনে গিয়েও পিছে মুড়ে তাকালো রাগী কন্ঠে বললো,
"বসে আছিস যে?"
হিম ফোন টা সাইডে রেখে এক রাশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
"আপু নিচে যা তুই আসছি আমি৷"
মাঝে মাঝে ওর আচ্ছা করে মা'র'তে ইচ্ছা করে ছেলেটাকে একদম অকেজো হয়েছে৷ কখনো কখনো ভাবে এটা ওর ভাইতো? এমন কি করে হতে পারে ওর সাথে কিছুই মিলে না ও যা যা অপছন্দ করে ছেলেটা তাই করে৷
কুয়াশা ধীর পায়ে নিচে নামতেই মেইন গেটের সামনে আকস্মিক কাউকে দেখে চমকালো সে কিছুটা থমকালো৷ ও এখানে কি করছে হঠাৎ এত দিন পর? কেন এসেছে?
তেইশ
কুয়াশা ধীর পায়ে নিচে নামতেই মেইন গেটের সামনে আকস্মিক কাউকে দেখে চমকালো সে কিছুটা থমকালো৷ ও এখানে কি করছে হঠাৎ এত দিন পর? কেন এসেছে?
কুয়াশার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ কিছুটা এগিয়ে গেলো ব্যাক্তিটির সামনে ব্যাক্তিটি রেদোয়ান৷ রুদ্রর এসিস্ট্যান্ট ও এখানে কেন বুঝলো না কিছু৷ রুদ্র ও তো নেই তাহলে? কুয়াশা ক্ষানিকটা গম্ভীর কন্ঠে সুধালো,
"আপনি এখানে?"
রেদোয়ান ঠিকঠাক হয়ে দাড়ালো৷ চোখ থেকে সানগ্লাস খানা খুলিয়ে হাতে নিলো, রেদোওয়ান বুঝে পায় না রুদ্র কিভাবে এমন একটা কঠিন কাটখোট্টা মেয়ের প্রেমে পরলো৷ এ মেয়েকে সহজ ভাবে কখনোই যে নিজের বসে আনা যাবে না তা কি বুঝেনি? দেখলেই কেমন স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যামের কথা মনে পরে নিরস একদম৷ ওর স্যার যে খুব বাজে ভাবে ফেসেছে ঠিক বুঝতে পারছে রেদোয়ান৷
রেদোয়ান নিজের ভাবনা গুলো এক দিকে রেখে গলা খাকারি দিয়ে হাসি হাসি কন্ঠে বললো,
"ম্যাম স্যার পাঠিয়েছে আপনি নাকি ঢাকা যাবেন নিয়ে যেতে বললো৷"
কুয়াশা ক্ষানিকটা ভরকালো৷ এতদিন পর কোথ্যেকে উদয় হয়ে এমন অধিকার ফলাচ্ছে লোকটা? নিজেতো আসেনি তাহলে এত নাটকের কি মানে? আর লোকটা জানলো কি করে ও ঢাকা যাবে? আর গেলেই বা ও কেন গাড়ি পাঠাবে? ওর গাড়ি দিয়ে কেন যেতে হবে?
কুয়াশা গম্ভীর চিত্তে ভাবলো কিছু অতঃপর বাড়ির কিছুটা ভিতরে গিয়ে রাগী কন্ঠে হাক ছেড়ে ডাকলো হিমকে৷ দু বারের বার ডাকতেই নেমে এলো হিম৷ ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিলো তাই তখন নামেনি৷ হিম নামতে কুয়াশা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো হিমের পানে,
"আমি ঢাকা যাচ্ছি ওই লোকটা কি করে জানে?"
হিম না জানার ভান করলো প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
"কোন লোকটা?"
কুয়াশা সন্দিহান চোখে তাকালো৷ এর প্রেক্ষিতে বললো না কিছু কোন লোকটা মানে? ও জানেই না তাহলে জানালো কে? সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা নিয়ে ঢাকা থকে এসে দেখবে ভাবলো৷
রেদোয়ান এর সামনে গিয়ে গর্ম্ভীর্য নিয়ে বললো,
"আমি ওনার গাড়িতে কেন যাবো?আপনি চলে যান আমি একাই যাবো৷"
কুয়াশার প্রশ্নে থতমত খেলো রেদোয়ান উত্তর দিবেকি?অন্য কেউ হলে বলা যেতো স্যার বলেছে যেতে আপনাকে হবেই৷ দরকার পরলে ধরে বেঁধে নিয়ে যেতো কিন্তু এ তো স্যারের প্রিয় ব্যাক্তি৷
রেদোয়ান শান্ত কন্ঠেই উত্তর দিলো,
"স্যারের সাথে আপনার মায়ের কথা হয়েছে তিনি সম্মতি দিয়েছে৷"
রেদোয়ানের উত্তরে কুয়াশা ক্ষানিকটা চমকালো৷ মা জানে মানে? লোকটা সাং'ঘা'তিক শুরু থেকে৷ ওর মাকেও কিছু বলেছে নাকি? অদ্ভুত তো৷
কুয়াশা তবুও উঠলো না শক্ত কন্ঠে বললো,
"এসব নেকামো আমার একদম পছন্দ না৷ এই গাড়িটা সরান বাড়ির সামনে থেকে লোকে দেখলে অন্য কিছু ভাববে৷ আমি আপনাদের গাড়ি দিয়ে যাচ্ছি না আমার ভাই আমাকে পৌঁছে দিবে৷আর মায়ের সাথে আমিই কথা বলে নিবো৷"
বলে হিম কে আসার জন্য ইশারা করে সামনে হাটা ধরলো কুয়াশা৷ রেদোয়ান যানতো এমন কিছুই হবে তপ্ত শ্বাস টেনে মুঠোফোন টা বের করে গাড়িতে উঠতে উঠতে ফোন করলো রুদ্রকে৷
,,
নিরবে নিভৃতে বসে আছে বেলি৷ বাইরে কি ঘটছে তার জানা নেই বেলি এ বাড়িতে আছে সাত দিন হলো, এটা ওর বাড়ি নয় রনি নিয়ে এসেছে৷ রনি ছেলেটা একটু বেশি যেন অধিকার ফলাচ্ছে আজকাল৷ সেই এখানে নিয়ে এসেছে৷ কেউ কোন উত্তর দিচ্ছে না কেন নিয়ে এসেছে এখানে৷এক প্রকার বন্দী করেই রেখেছে ওকে৷ সে এমন বন্দিনী থাকতে চায় না৷ কেন এমন করছে বেলির বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই৷ তবে তার বাবা আর রনির মাথায় কিছু একটা চলছে বেশ বুঝতে পারছে৷ সে দিন প্রান্তর গাড়ি বাড়ির সামনে আসতেই তার বাবা টেনে হিঁচড়ে নামায় গাড়ি থেকে তারপর বেশ কিছুক্ষন পর রনি আসে৷ তাদের মাঝে কিছু কথা ও হয় কিছু নিয়ে আ'তং'কে ছিলো৷ রনি ওর কোনো উত্তর না দিয়েই এক প্রকার জোর করে নিজের গাড়িতে করে এখানে নিয়ে আসে৷ ওর বাবা সামনে ছিলো এত্ত বললো সে দিন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় উত্তর দেয় নি সে দিন অনেক বার বলে ছিলোও রনি আমার এসব পছন্দ না, কেন এমন করছেন সে দিন যেন অন্য রনিকে দেখেছে ছেলেটা উ'গ্র মেজাজি, আর সে মে'জা'জ ওর উপর দেখিয়েছে৷
তারপর ঢাকা থেকে কিছুটা দূর এখানে একা রেখে চলে যায়৷ বেলির মোবাইল ও সাথে ছিলো না যে কাউকে ফোন করবে৷ হঠাৎ কেন এমন করছে সবাই সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷সে দিন একাই ছিলো এই মস্ত বড় বাড়িটিতে, পরের সকালে একটা মেয়ে আসে জানতে পারে মেয়েটা রনির বোন ইয়ানা৷ মেয়েটা সুশ্রী ভাষী তবে কিছু বলে না বেশি কথা জিগ্যেস করলে বলে,
"দুঃখিত ভাবি আমি কিছু জানি না৷"
মেয়েটার মুখ দেখলে বোঝা যায় মেয়েটা কিছু লুকাচ্ছে কিন্তু কি? সে দিন মধ্য রাতে রনি আসে সে দিন ও জিগ্যেস করেছে কেন এমন করছে কেন এখানে আটকে রেখেছেন রনি শুধু ক্রু'দ্ধ কন্ঠে বলেছিলো,
"আপনার অপরাধ আপনাকে না করা শর্তেও প্রান্তর সাথে ছিলেন৷"
বেলির রাগ হয় বেশ৷এক তো এখানে আ'ট'কে রেখেছে দ্বিতীয়ত কিছু বলছেই না৷
আর প্রান্তর সাথেতো ইচ্ছা করে ছিলো না? লোকটা ওকে বাঁচিয়েছে৷
বেলির কেমন খটকা লাগে শুধু প্রান্তর সাথে ছিলো বলে? তা না হলে কারণ টা কি? আর এ সাত দিন কি প্রান্ত ওকে একবারো খুঁজেনি? ছেলেটা ঠিক আছে তো? এ বাড়িতে থাকে বলে রনিও সব সময় এ বাড়িতে থাকে তেমন নয়৷ রনি নামক লোকটা কে পাওয়া যাচ্ছেই না বলা যায়৷ মধ্যরাতে এসেছে সাত দিনে মাত্র দু-দিন৷ দু দিনে অনেক বার ইয়ানা ফোন করেছিলো কিন্তু ধরেনি৷ নাম্বার অফ কিন্তু কেন? সব কিছু কেমন গো'লমে'লে লাগে৷
মধ্যাহ্ন চলছে ইয়ানা মেয়েটা বই পড়ছে৷ বাড়ির সামনে দু-জন গার্ড রয়েছে আর বাড়িতে দু-জন মেয়ে গার্ড ইয়ানা আর ও আর কেউই না পালানোর সুযোগ নেই বললেই চলে এখানে দম বন্ধ লাগছে৷ ইয়ানা মেয়েটা একেবারেই চুপচাপ৷
বেলি মাঝে মাঝে ভাবে বাবা না হয় অন্য রকম কিন্তু ওর মা? সে দিন মায়ের সাথে কথা বলেছে মা ভীত কন্ঠে শুধু বলেছিলো ' কিছুদিন ওখানে থাক পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে তোকে এখানে নিয়ে আসবে রনি৷' কি হয়েছে ওখানে? কোনো ঝামেলা কি?
মন বেজায় খারাপ প্রান্ত নামক ছেলেটা আজকাল মনে জেঁকে বসেছে৷ মস্তিষ্ক চায় প্রান্তর কথা না ভাবতে মন মানে না ব্যাপক ঝা'মে'লায় ফেঁসেছে৷ এ থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় নেই৷
হঠাৎই কারো শব্দে পাশ ফিরে তাকায় বেলি রনি ঢুকলো বাড়িতে৷ মুখে মাস্ক পরা চোখে কালো চশমা আর মাথায় ক্যাপ কেমন মনে হয় লুকিয়ে এসেছে৷
বেলি এগিয়ে গেলো না ঠায় বসে রইলো রনি এগিয়ে এসেই কিয়ৎ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"চলুন বেলি৷"
হঠাৎ আসার পরই এমন কথা বলায় অবাক হলো বেলি৷ আবার কোথায় নিয়ে যাবে ছেলেটা? বেলি কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন ছুড়লো,
"কোথায় যাবো?"
"আপনি কি বাড়িতে যেতে চান না মেয়ে? এখানে থাকলে আমার সমস্যা নেই৷"
আকস্মিক এমন কথায় অবাক হলো বেলি৷ লোকটার উদ্দেশ্য কি? নিজে টেনে হিচড়ে নিয়ে এলো নিজেই আবার বলছে বাড়িতে দিয়ে আসবে৷ কেমন যেন খটকা লাগলো তবে এ নিয়ে মাথা ঘামালোনা খুব একটা এদের বোঝা ওর কর্ম নয় মুক্ত পেলো যে এই অনেক৷
..
আশার স্বামী রিয়ান যেন একটু বেশি ভে'ঙে পরেছে, লোকটার এসব কেন যেন লোক দেখানো মনে হচ্ছে আয়াশের৷
"আপিনারা কি কিছু করছেন না? এত দিন হলো তবুও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷"
আয়াশ সবে এসে বসেছিলো৷ থানায় এসেই রিয়ান কে দেখতে পায়৷ থানায় এসেই তুলকালাম বাধিয়েছে লোকটার ভাষ্যমতে মায়া কিছু করেছে৷ তবে সব কিছুর মাঝে নতুন এক খবর হলো সে নাকি মায়াকে দেখেছে তারপরই থানায় ছুটে আসে৷
মায়াকে দেখেছে রিয়ান শোনার পরই আসার পথে ফোনে মেহরাব কে জানিয়েছিলো ব্যপারটা৷ মায়ার খবর পেয়ে এতদিন পর মেহরাবের মন ক্ষানিকটা আশার আলোতে আলোকিত হলেও আয়াশের ব্যপাটা খটকা লাগে৷ পরক্ষণে মেহরাবো শোর পাল্টে বলে,
"মায়া এত দিন পর কোথা থেকে আসবে? আর কেনই বা আসবে?"
প্রশ্নটা ফেলনা নয়৷ ঘটনা গুলো যোজন বিয়োজন করতে থাকে মস্তিষ্ক৷ এত দিন পর মায়া হঠাৎ কোথ্যেকে এলো? আর এত দিনই বা কোথায় ছিলো?
আশা কে অ'প'হ'র'ণ এর মানে কি? আদৌ আশা অ'পহ'র'ণ হয়েছে কি? আশার সাথে কাজের লোকটাকে অ'প'হ'র'ণ করলো কেন? আর সব থেকে বড় প্রশ্ন এত বছর পর এসে মা কে খু'ন করে বোন কে অ'প'হ'রণে'র কারণ কি? রিয়ান ঘটনায় উল্টো মোর কেন আনছে হঠাৎ?
অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর মিলবে কবে?
আয়াশ রিয়ানের উত্তরে শুধু বললো,
"খোঁজ চলছে তাড়াহুড়োতে কিছুই হয় না৷একটু ধৈর্য ধরুন৷"
লোকটাকে বেশি ঘাটেনি আজ, ইচ্ছে ছিলো কিছু শুনিয়ে দিবে কিন্তু কিছু বললো না৷ লোকটাকে অগোচরে নজর রাখতে হবে৷
আশার বাড়িতে যেতে হবে একটু ভাবলো আয়াশ তবে তা রিয়ানকে আগে যানাবে না হঠাৎ যাবে কাল৷
চব্বিশ
কুয়াশা বেশ অভিমানী মেয়ে তবে নিজের অভিমানের কারণ সে খুঁজে পায় না৷ কাউকে ভালোবাসলে তো তার জন্য অভিমান চওড়া হয়৷ এ অভিমান কি ভিত্তিহীন নয় কি? অযথা কারো উপর অভিমান করছে কেন সে? যে লোকটার পরিচয় তার কাছে এখনো কুয়াশার মত অসচ্ছ, লোকটা ওদের বাড়িতে কেন ছিলো কে ও কি ওর পরিচয়?
কুয়াশাকে হিমই ঢাকা দিয়ে গেছে তবে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে যখন কলেজ থেকে বের হলো তখন বাইরে হিম কে দেখতে পেলো না৷ বলেছিলো এখানেই থাকতে এক সাথে যাবে৷
ছেলেটাকে ফোন করতে যাবে ঠিক তখনই মোবাইলে ম্যাসেজ দেখতে পায়,
"আপু আমার কাজ পরে গেছে আমি চলে যাচ্ছি৷"
এরপর ফোন দেওয়ার পরেও ফোন পেলো না বন্ধ৷ অদ্ভুত ছেলেটা একটু দাঁড়িয়ে নিয়ে গেলে কি আহামরি দেরি হয়ে যেতো? তপ্ত শ্বাস টানলো আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো৷ ব্যাস্ত শহর৷ এ শহরে গুটি কয়েকজন মানুষ ছাড়া সবাই অচেনা কুয়াশার৷ তবে শহরটা চেনা৷ ঢাকা নামক শহরটা ওর জন্মস্থান৷ এখানকার মানুষ গুলো বড়ই স্বার্থপর৷ এখানে নিশ্বাস নেওয়াও যেন কুয়াশার জন্য কষ্ট সাধ্য৷
বন্ধু মহলের সবাই বেরিয়েছে ঘুরতে ওকে বেশ জোরাজোরি করেছে বরাবরের মতই নাকোচ করেছে সে তার কোলাহল পছন্দ না৷
তবে ওদের সাথে সময় কাটাতে খুব একটা খারাপ লাগে না৷
"আপনি তখন রেদোয়ানের সাথে আসেননি কেন মেয়ে?"
হঠাৎ চিরোচেনা কন্ঠে খানিকটা অবাক হয় কুয়াশা, পিছে মুড়তেই সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির দেখা মেলে থমকায় কুয়াশা চমকায় ক্ষানিকটা৷ রুদ্র এসেছে, মুখে মাস্ক চোখে সানগ্লাস পরা৷ মুখে মাস্ক থাকলেও চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না কুয়াশার৷ এত দিন পর ব্যাক্তিটির মুখোমুখি৷ অভিমান গুলো যেন কড়া নাড়ে অন্তঃস্থলে হঠাৎই আবেগ প্রবন হয় মন তীব্র অভিমান গুলো প্রতিবাদ জানায়৷ নিজের অন্তঃস্থল যেন মস্তিষ্ককে শিখিয়ে দেয় এ লোকের সাথে কোনো প্রকার কথা না বলার৷ কেন বলবে কথা?
কুয়াশা দেখেও না দেখার ভান করে সামনে ঘুরলো ফের চোখ খিঁচে বন্ধ করলো ইচ্ছে করলো কিন্তু পারলো না কেন যেন৷ শরীর যেন খেই হারালো, মস্তিষ্ক আজ বড়ই দূর্বল প্রমান করতে ব্যস্ত হলো৷ নিষিদ্ধ এই অনুভূতি কি করবে কুয়াশা?
লোকটা বেপরোয়া আসার সময় জানিয়েছে ওকে একবারো? কেন কথা বলবে এই লোকের সাথে?
রুদ্র এগিয়ে এলো৷ তবে সাথে দাঁড়ালো না বেশ দূরত্ব বজায় রেখে সামনে তাকিয়ে দাঁড়ালো অচেনা পথচারীর মত৷
"সামনে একটা ক্যাফে আছে চলুন ওখানে৷ এখানে দাঁড়িয়ে কথা ঠিক হবে না৷"
কুয়াশা এবারো চুপ করে রইলো৷ কথাই বলবে না কিসের আবার ঠিক বেঠিক?
কুয়াশা দাঁড়িয়ে রইলো৷ রুদ্র ফের বললো,
"চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন যে? আপনার ঘাড় বাকামো কমলো না বুঝি?কথা বলুন মেয়ে আপনার কন্ঠ শোনার জন্য আমি কাতর হয়ে আছি৷"
কুয়াশা এবারো নড়লো না চলে যেতেও পারলো না৷ রুদ্র তপ্ত শ্বাস টানলো৷ এ মেয়ে যাবে না ওকেও বুঝবে না৷
আড়ষ্ট হয়ে তাকালো যন্ত্রমানবের মত দাঁড়িয়ে আছে৷ চশমার আড়ালে চোখ টা দেখতে পেলো না এভাবে দাঁড়িয়ে৷ ক্ষানিকটা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ মেয়েটা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভিতরে ভিতরে ভাঙবে তবু তা দেখাবে না৷
বেশ কিছুক্ষণ নিজের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ চালিয়ে মুখ খুললো কুয়াশা রুদ্রর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দাতেদাত পিষে বললো,
"আপনি গাড়িয়ে পাঠিয়েছিলেন কেন?"
রুদ্র ঘুরলো না কুয়াশার পানে ওভাবে থেকেই আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"আগে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন সেভাবেই দাঁড়ান মেয়ে৷ চলুন আমার সাথে কথা বাড়াবেন না এ নিয়ে৷"
কুয়াশা বুঝলো না কিছু, ভরকালো কিছুটা! মানে লাগলো কেমন কি হলো ব্যপারটা? ইচ্ছে করলো দু- চারটা কটু কথা শুনিয়ে দিতে৷ ইচ্ছা টা পূর্ণ করার জন্য কুয়াশা ঘুরলো না শক্ত কন্ঠে ফের কিছু বলবে ঠিক তখনই মুঠোফোন টা বেজে উঠলো রুদ্রর৷ ফোনটা রিসিভ করতেই তড়িৎ গতিতে "আসছি" বললো৷ বলার সাথে সাথেই দাঁড়ালো না কয়েক কদম এগিয়েও গেলো পরক্ষণেই কিছু মনে পরতে থামলো৷ ব্যাপার গুলো এতটা তাড়াতাড়ি ঘটলো সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো কুয়াশার৷ রুদ্র ফের এসে কুয়াশার সামনে দাঁড়ালো খোলা রাস্তার মাঝেই কুয়াশার হাত ধরে ক্ষানিকটা তাড়াহুড়ো নিয়ে বললো,
"দুঃখিত! আমি চেয়েও তোমায় দিয়ে আসতে পারলাম না, একা যাবে না গাড়িতে রেদোয়ান আছে৷ রেদোয়ান তোমায় দিয়ে আসবে৷ দয়া করে বাহানা করো না পরে কথা হবে৷"
বলে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেলো৷ গাড়ি নিলোনা নিজের৷ কুয়াশা অবুঝের মত দাঁড়িয়ে রইলো কেমন৷ সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো৷ অযথাই এসেছে কেন? আর এ নাটকের মানে কি? কই ও তো আসতে বলেনি৷ কি এমন কাজ পরে গেলো? কাজ টা বুঝি ওর থেকে বেশি দরকারি? হঠাৎ নিজের ভাবনায় বিস্মিত না হয়ে পারলো না কুয়াশা৷ আজকাল নিজে যা ঘটাচ্ছে বিস্মিত না হয়ে থাকা যায়?
মন মস্তিষ্ক হঠাৎ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো লোকটা ওকে উপেক্ষা করলো? নাই আসতো এমন উপেক্ষা করার মানে ছিলো না কোন৷
চোখ ভরে এলো কুয়াশার এ আবেগ বড়ই অবাধ্য ধরে রাখা দায় হয়ে পরলো বেশ৷ আহ্লাদী হলো নিজের কাছে নিজেই লোকটার সাথে আর কখনো কথাই বলবে না পন করলো৷ অভিমান গুলো যেন বাড়লো আরো৷
"চলুন ম্যাম আপনাকে পৌঁছে দেই৷"
রেদোয়ান এর কন্ঠে ভাবনার সুতো কাটে কুয়াশার৷ চোখে পানি টইটম্বুর পরবে পরবে ভাব৷ অবাক না হয়ে পারলো না রেদোয়ান৷
কুয়াশা নিজেকে সামলে নিলো যেন হঠাৎই আবেগী মেয়েটা কঠোরতা জারি করলো ফের কঠিন মুখে জবাব দিলো,
"আমি একাই চলাফেরা করি কাউকেতো বলিনি আসতে৷"
দাঁড়ালো না কুয়াশা এক মিনিটো পা চালিয়ে হাটা ধরলো রেদোয়ান ডাকলো পিছন থেকে শুনলো না৷
রেদোয়ান বেশ আশাহত এ মেয়ে আর ওর স্যার কে নিয়ে কাউকে বোঝানো ওর কাম্য নয়৷
..
"সে আমার হওয়া শর্তেও আমার নয়, তার নিকৃষ্টতাকে আমি ভালোবেসেছি৷ আমার ভালোবাসার মূল্য বরাবরই তার কাছে আবর্জনার ন্যায়৷"
হঠাৎ ডাইরির মাঝে এমন একটা লেখা দেখে ব্রু কুচকায় আয়াশ৷ কৌতুহলতা বাড়ে৷ কার লেখা এটা? ডায়েরির উপরিভাগ দেখে তো মনে হলো আশার৷ হাতের লেখা গুলো বেশ চেনা কোথায় যেন দেখেছে৷ আর ডায়রিটা যদি আশারই হয়ে থাকে এমন কিছু কেন লিখবে? কাকে ভালোবাসে ও? বোধগম্য হলোনা কিছু কৌতুহল নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টালো৷ এর পরের পৃষ্ঠা গুলোতে লেখা নেই৷
ডায়েরির মধ্যভাগের পৃষ্ঠা গুলোতে যেতে আরেকটা লেখা পৃষ্ঠা নজরে এলো কৌতুহল টা কিঞ্চিৎ দমিয়ে পড়া শুরু করলো,
"আমি তার নিকৃষ্ট রুপ দেখেও ভালোবাসলেও সে আমায় ভালোবাসেনি কখনোই৷ একজন স্ত্রীর কাছে সব থেকে কষ্টের আর বিস্ময়ের ব্যপার হলো স্বামী যখন স্ত্রীর ছোট বোনকে উন্মাদের মত ভালোবাসে৷ মায়া সব দিক থেকেই সার্থক৷"
থমকালো আয়াশ কি লেখা এতে? মায়াকে রিয়ান ভালোবাসে মানে? কি বলছে এসব?তাহলে আশাকে বিয়ে করেছিলো কেন? আশাকে ভালোবাসে না? তাহলে এত নাটক কিসের?
বহুরূপী ছেলেটা!
নিজের ভালোবাসা মিথ্যা বহিঃপ্রকাশ করা যদি কেউ ভালো পারদর্শী হয়ে থাকে তাহলে সবচেয়ে উত্তম হলো রিয়ান৷ নিজের অর্ধাঙ্গিনীর প্রতি ভালোবাসা তার অগাধ তবে তা শুধু লোক সমাজের চোখেই৷ নিজের স্ত্রীর প্রতি মিথ্যা ভালোবাসার এমন উৎকৃষ্ট অভিনয় একজন নি'কৃ'ষ্ট মানুষই বোধহয় পারে?
আজ হুট করেই বিকেলে আয়াশ আর একজন কনস্টেবল, রিয়ানের বাড়িতে আসে বাড়িতে এসে বাড়ি তালা পায় ওরা যেন এটাই চাইছিলো এমন মুখ্য সময়৷ বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো পায় এক একটা রুম অগোছালো যেন কেউ কিছু খুঁজেছে৷ এ কক্ষে আসতেই একি অবস্থা পায় ব্যপারটি ওদের কাছে বেশ খটকা লাগে৷
নিজেদের মত খোজাখুজি শুরু করতেই আলমারির নিচে এই ডাইরিটা খুঁজে পায়৷ যে ছেলে নিজের বোনকে ভালোবাসে সে ছেলের সাথে আছে কেন? আর কি নি'কৃ'ষ্ট রুপ?
হঠাৎ আয়াশ কিছু মনে পড়তেই নিজের মুঠোফোনে থাকা মেহরাবের বাড়ির চিঠি বাক্স থেকে পাওয়া চিঠির ছবিটা বের করে৷ বেশ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখলো লেখাটি৷ আয়াশের বিস্ময় ভাব বাড়িয়ে দিলো লেখাটি৷ লেখাটা হুবহু মিলে গেছে৷
লেখাটা তবে আশার? তবুও শিউর হওয়ার জন্য একজন হাতেরলেখা বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে৷ এ লেখাটা একই রকম কিন্তু চিঠিরটা একটু নড়বড়ে৷ আশা এমন একটা চিঠি দিবে কেন? আশা কোথায় এখন? রিয়ান কিছু করেনিতো? আর রিয়ানই কোথায় গেছে? রিয়ানের উপর নজর রাখতে বলেছিলো৷ খোজ নিতে হবে রিয়ান কোথায় গেছে৷
পঁচিশ
আজ সকাল টা একটু অন্যরকম, কুয়াশাচ্ছন্ন শীতল আবার মেঘ গুলো ও হাক তুলে গ'র্জ'ন দিচ্ছে৷ মেঘের গ'র্জ'নে মনে হচ্ছে বৃষ্টি বুঝি নামলো বলে৷ আশপাশ কুয়াশায় ঢাকা দুরের সব অস্পষ্ট৷ নদীর কাছে বাড়ি হওয়ায় উত্তরের হাওয়া আরো বেশি শীতল বানিয়ে দেয় পরিবেশ৷
কুয়াশা কুয়াশার পছন্দ তবে বৃষ্টি নয়৷ কুয়াশার সাথে কুয়াশার সন্ধি হবে এতো জানা কথাই কিন্তু মেঘের সাথে এত কি তার অভিমান সে তা জানে না৷ ব্যপারটি কেমন হাস্যকর না? কুয়াশার কুয়াশা পছন্দ, অস্বচ্ছ জিনিস গুলো রহস্যের মত হয়৷ শুরু থেকেই সে অস্বচ্ছ অস্পষ্ট মনে হয় নিজেদের কাছে তা কুয়াশা কা'টা'র পর সব ঝলমলে,যে জিনিস গুলো শুরু থেকে অন্যরকম লাগে তার শেষ টা ঝলমলে সুন্দর হয়৷ আর যে জিনস গুলো শুরু থেকেই স্বচ্ছ হয় সে জিনিস গুলোর স্বচ্ছতা কা'টা'র পর তিক্ততা বেশি থাকে৷
আজ শুক্রবার আজ কালই চলে যাবে অচেনা মুখের ভিরে চেনা নানের অচেনা শহরে৷ কাল যাওয়ার পর ফের সেই মাস তিন এক পর পরিক্ষা শেষ হলে আসতে পারবে৷ নিজ বাড়িতে শান্তি অন্যরকম হোস্টেলে গিয়ে আদৌ থাকতে পারবে কি না এ নিয়ে কুয়াশার সন্দেহ ব্যাপক৷ যদিও কাল কলেজ বন্ধ রবিবার থেকে ক্লাস তবুও কালই যেতে হবে গোছগাছের জন্য, শনিবার সরকারি নতুন নিয়মে সব কিছু বন্ধ হওয়ায় কলেজটাও বন্ধ৷ নয়তো আজই রওনা হতে হতো৷
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে নদীর কাছাকাছি এগিয়ে এলো কুয়াশা, শরীরে ওর মায়ের একটা শাল জরানো শালের ভিতর সোয়েটার৷ কুয়াশা বেশ শীতকাতুরে মেয়ে ছোট থেকেই৷
শীতে নদীর পানি বেশ কমে যায়৷ সব দিক থেকেই কুয়াশার শীত কাল বেশ প্রিয়৷
সবুজ ঘাস গুলো শিশির ফোটায় মোরানো৷ মুক্তার ন্যায় হয়ে আছে কেমন৷ নদীর আরো কাছাকাছি যেতেই ঘাটের সিড়িতে মামা মেহরাব কে বসে থাকতে দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো কুয়াশা৷
মামার যখন খুব বেশি মন খারাপ করে তখন এখানে এসে বসে থাকে৷ এ ঘাটে খুব একটা মানুষ থাকে না সকালে এ ঘাটটা মূলত মহিলাদের কাপড় ধোঁয়া যাবতীয় কাজের জন্য বানানো৷
কুয়াশা ক্ষানিকটা এগিয়ে গিয়েও থেমে গেলো কেমন যেন জরতা আষ্টেপৃষ্টে ধরলো৷ কুয়াশার এ এক সমস্যা ইচ্ছা করলে কেন যেন মানুষের সাথে খুব একটা মিশতে পারেনা নিজের মানুষদের সাথেও না জরতায় যেন আটকে আসে৷ থামিয়ে দেয় এ জন্য কিছু ভালো বন্ধুদের সাথেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে৷
কিন্তু যারা ওকে বুঝে তারা কখনোই ওর সাথে দূরত্ব তৈরি করে না৷ ওর বাবা নেই ওর উচিত ছিলো পায়ের বন্ধু হওয়ার মা ও হয়তো চায় নিজের কষ্ট গুলো মেয়েকে বলুক? কিন্তু কুয়াশা কখনো সেভাবে কারো সাথে মিশতে পারেনি৷
হঠাৎই কুয়াশার জরতা গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেলো হঠাৎই মনে হলে হলো যে মানুষটা ওদের জন্য এত কিছু করছে সে মানুষটার মন খারাপের কারণ গুলো ক্ষানিকটা নিজের মাঝে ভাগ করে নেওয়ার? আজ যেন ফুরফুরে হলো মন টা এগিয়ে গেলো মামার দিকে৷ শুধু তাই নয় পাশে বসলো৷
নিজের সাথে কাউকে অনুভব করতেই পাশ ঘুরে তাকালো মেহরাব আকস্মিক যেন ভুত দেখার মত চমকালো৷ কুয়াশা তার বিস্ময়ের পরিমান টা বাড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠেই জিগ্যেস করলো,
"মন খারাপ বুঝি?"
মেহরাবের মন খারাপ গুলো যেন নিমেষে কেঁটে গেলো৷
মেয়েটা হুটহাট আজকাল সবার সাথে সেধে কথা বলছে, কাল হিম ও বলেছে হিমের সাথেও আজকাল নিজে সেধে কথা বলে এটা ওটা জিগ্যেস করে, নয়তো ওদের বাড়িতে যে কোন মেয়ে আছে কেউ বুঝতেই পারে না৷
মেয়েটার এমন পরিবর্তন মেহরাবের ভালো লাগছে৷ মেহরাব হাসলো কিঞ্চিত মাথায় হাত বুলালো কুয়াশার বললো,
"না মা! মন খারাপ না৷"
কুয়াশা কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকালো৷ লোকটা সূক্ষ্মভাবে অভিনয় করতে জানে!
"অপেক্ষা তোমার তিক্ত লাগে না? নিজেকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছা করে না তোমার? আর কত অপেক্ষা করবে মামা?"
মেহরাব হাসলো, এত দিন তার আপা তাকে প্রশ্ন গুলো করতো৷ মেয়েটা বড় হয়ে গেছে সত্যি৷
মেহরাব নিজের দৃষ্টি নদীর পানিতে নিক্ষেপ করলো ক্ষানিকটা শব্দ করে নিশ্বাস নিলো, সে ভারী নিশ্বাসের সাথে যেন লুকায়িত কষ্ট গুলো বহিঃপ্রকাশ ঘটলো৷ ভেতরের না বলা আর্তনাদ গুলো যেন বুক চাড়া দিলো৷ মেহরাব মিনমিনিয়ে বললো,
"অপেক্ষা তিক্ত তখনই লাগে যখন অনুভুতি টা মস্তিষ্কের হয়৷ মন থেকে যখন অনুভুতিটা প্রকাশ ঘটে তখন অপেক্ষা গুলো অন্যরকম হয়৷
তবে আমার অপেক্ষা যে ভিন্ন বুকভরা আশা নিয়ে আছি আমি মাঝে মাঝে সাংঘাতিক সাংঘাতিক ভাবনা গুলো আষ্টেপৃষ্টে ধরে নিজেকে তখন যেন বিষাদের ছায়া নামে৷"
এইটুকু বলে থামলো মেহরাব৷ কুয়াশা শুনলো সবটা৷ মেহরাব ফের বললো,
"তাকে অন্যকারো দেখার পূর্বে মৃ'ত্যু হোক আমার৷"
কথাটা বলার সময় স্বর কা'প'লো মেহরাবের৷ তবে মুখশ্রী জুরে তার কঠিনত্ব অদ্ভুত এই মানুষটি৷
..
প্রেমিক মন বড়ই বেহায়া চাইলেও যেন রাগ অভিমান আসে না৷ ভালোবাসার মানুষটির মুখশ্রী দেখলেই অন্তঃকরণ বেহায়া হয়ে উঠে৷
প্রান্ত জ্ঞান ফেরার চার দিন পার হওয়ার পরো যখন মানুষটিকে দেখলো না একবারো আসতে তখন প্রান্ত ভেনেই নিয়েছিলো মরিচিকার পিছু ছুটছে, মেয়েটাকি একবারো খোঁজ নেয়নি ওর?
যে ছেলেটা এত দিন ওর না করা শর্তেও পিছু পিছু ঘুরেছে বেহায়ার মত সে ছেলেটার আজ এত্ত দিন যাবত দেখা নেই তার মনে প্রশ্ন আসেনি? 'কোথায় প্রান্ত?' একবারো মনে হয়নি একটা বার খবর নিয়ে দেখি আমি? তাহলে ক সত্যি তার মনে ওর জন্য কোন ভালোবাসা ছিলো না?
প্রান্ত এত দিন অপাত্রে ভালোবাসা ঢেলেছে? একটা কুকুরো যদি এমন পিছু পিছু ঘুরে তার প্রতিওতো মায়া জন্মে যায় ওর প্রতি এত দিনেও মায়া জন্মায়নি?
চোখে পরেনি পাগলামো গুলো?
নিজের এক রাশ অভিমান নিয়েই হসপিটালের এই যান্ত্রিক ঘরটাতে ছিলো প্রান্ত ক্ষত বিক্ষত দেহটা আর শীর্ণ মন নিয়ে৷
হঠাৎ এত দিন পর আজ কাঙ্ক্ষি মানুষটির মুখোমুখি প্রান্ত৷ কান্নায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ খানা দেখে যেন নিমেষে অভিমান গুলো পানি হয়ে গেলো৷
অশ্রুসিক্ত নয়নে বসে আছে বেলি! প্রান্ত শূন্য নয়নে তাকিয়ে আছে এখনো৷
আগ বাড়িয়ে ইচ্ছে করলো না কিছু জিগ্যেস করতে বরং বলতে ইচ্ছে করলো, 'আরো কাঁদ বেলি৷ তোর ক্রন্দন দেখে আমার শান্তি লাগছে আজ৷'
মেয়েটা নিশ্চয়ই ওকে পাষাণ উপাধি দিবে? সে না হয় মেনেই নিলো৷ প্রেয়সীর তোখে নিজের জন্য প্রগাঢ় মায়া কার না ভালো লাগে?
বেলি ক্ষানিকটা কান্নাজরিত কন্ঠে নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
"আপনাকে সে দিন বলে ছিলাম আমার সাথে চলুন, শুনলেন না কেন প্রান্ত? আমার কথা শুনলে আজ এ অবস্থা হতো না আপনার৷"
প্রান্ত হাসলো ক্ষানিকটা, এতক্ষণ হেলান দিয়ে বসে ছিলো বক্ষ এখনো ব্যা'ন্ডেজ করা হাতে সেলাইনের ক্যানোলা লাগানো৷
"সে দিন তোর কথা শুনলে আজ তোকে নিজের এত টা কাছে আদৌ কি দেখতে পেতাম বেলি?"
বেলি বিস্মিত চোখে তাকালো প্রান্তর দিকে৷ ছেলেটা এই অবস্থায় ও এসব বলছে৷ মানুষ কি করে একটা মানুষ কে এত ভালোবাসতে পারে?
"এত দিন আসিসনি কেন?"
বেলি কিছুটা অপরাধী ভঙ্গীতে বললো সবটা৷ প্রান্ত শুনলো শুধু তার ভাবনা একেবারেই ভুল বেলিকে নিয়েই তবে এত দিন রনি গা ঢাকা দিয়েছিলো৷ কিন্তু এখন কোথায় ও?
"আপনার এ অবস্থা কে করলো?"
বেলির কথায় ধ্যান ভাংলো প্রান্তর৷ শক্ত কন্ঠে কিছু বলবে এর আগেই প্রবেশ করলো প্রান্তর ভাই৷ বেলিকে দেখে ক্ষানিকটা রাগী দৃষ্টিতে প্রান্তর দিকে তাকালো প্রান্ত কিছু বলবে এর আগেই সে বললো,
"ও এখানে কি করে?"
প্রান্ত চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বললো, ও জানে ওর ভাই মুখ খুললে অনেক কিছু বলে ফেলবে ওর রাগের মাত্রা একটু বেশি৷ ও নিজেও না যেনে অভিমান করে ছিলো৷
বেলি সামনে থাকা মানুষ টিকে দেখে অবাক হলো বললো,
"রুদ্র ভাইয়া তুমি? এত দিন কোথায় ছিলে?"
রুদ্র উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না৷ গম্ভীর কন্ঠে প্রান্তর উদ্দেশ্যে বললো,
"রনিকে পাওয়া গেছে৷ পুলিশ রনিকে এরেস্ট করেছে৷"
লোকটির কথা শুনে ক্ষানিকটা বিস্মিত হলো বেলি৷ রনি কি গু'লি করেছে? কি ঘটছে এসব?বেলি উঠে দাঁড়ালো রুদ্রর দিকে এগিয়ে কিছু বলবে এর আগেই প্রান্ত বললো,
"রনিকে ছেড়ে দিতে বলো ভাইয়া, ওকে আমি দেখে নিবো৷"
ছাব্বিশ
সামনে নির্বাচন এখন চুল পরিমানেও নিজের উপর দাগ লাগাতে চায় না কোন নেতাকর্মী৷ তার মানুষের উপর প্রবল বিশ্বাস রয়েছে এবারের নমিনেশন টা যে কাইফ পাবে এটা সে নিশ্চিত৷ কাইফ বেশ রাগচটা লোক রাজনীতি তার র'ক্তে বলা চলে৷ বড় বড় গন্য মান্য ব্যক্তিদের সাথে তার উঠাবসা৷ তিনি একজন শ্রেষ্ঠ সমাজ সেবক দাবি করেন নিজেকে৷ তবে ক্ষানিকটা আশংকায় রয়েছে সে রুদ্র নামক ছেলেটার জন্য৷ ভেবে ছিলো কোন না কোন কিছুতে জরিয়ে এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মা'মলা ঠু'কে দিবে কিন্তু তা আর হলো কই? ছেলেটা একটু বেশি চালাক৷ শুধু রুদ্র নয় প্রান্ত ও দুর্দান্ত ধূর্ত কিছু মাস আগেই মারামারির একটা ঘটনায় প্রায় ফাসিয়ে দিয়ে ছিলোই এর মাঝে প্রান্ত ছেলেটা যেন ঢাল হয়ে দাঁড়ায় ভাইয়ের সামনে দলের আরেকজন ছেলে নিজের ঘাড়ে দোষ নিয়ে মাস খানেকের জন্য রুদ্রকে এলাকা থেকে দূরে পাঠায়৷ বেশ খোজা খুজিও করেছিলো বটে তবে কোন কাজ হয়নি পায়নি রুদ্রকে৷
মেয়েদের নিয়ে বেশ কঠোর সে৷ বড় মেয়ে বেলার ক্ষেত্রে সব তার কথা মতো চললেও ছোট মেয়েটাকে তার কিছু বলতে হয়না সে না বলতেই তার মনের মত চলতো বেলি নিজেই বলেছিলো 'আমি তোমার মানসম্মান কখনোই নষ্ট করবো না বাবা৷' সেই থেকে বেলিকে বেলির মনের মত চলতে দিয়েছে তার কথা ছিলো তার সম্মানে যেন কোন দা'গ না আসে কখনো৷ কাইফের ধারণা মেয়েদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই৷ তবুও এ মেয়েকে সে বেশ নিজের মত চলতে দিয়েছে৷
কাইফ সাহেব আওয়ামিলীগ এর সাধারণ সম্পাদক সে বেশ কষ্টে নাম ডাক করেছে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করেছে যেন অনায়েসে বছর ঘুরতেই এমপি পথটায় আসতে পারে৷ এ জায়গাটা তিনি পনেরো বছরে করেছে! সাধারণ সম্পাদক তো শুধু রাজপথে নিজের ইমেজটা পাকাপোক্ত করার পথ মাত্র নয়তো তার স্বপ্ন তো সংসদ সদস্য হওয়া৷
রুদ্র বেশ বিচক্ষণ ছেলে ভাইয়ের গুনটা পেয়েছে প্রান্ত৷ প্রান্ত রুদ্র চাচাতো ভাই প্রান্তর বাবা ঠান্ডা মাথার মানুষ রাজনীতি তার মোটেও পছন্দ না কিন্তু ছেলে দুটো ভিন্ন৷ রুদ্র দের নাম ডাক কাইফের থেকে বেশি৷ সাবেক সাধারণ সম্পাদক এর ছেলে রুদ্রর বাবাও বেশ বিচক্ষণ বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলো তার প্রশংসা সবার মুখে মুখে এখনো থাকে প্রায়৷ তার নাম ডাক করার জন্য এত বছর লাগেনি মানুষ শুরু থেকে ভক্ত ছিলো বেশ৷ বেচারা অকালেই ছিটকে পরলো, সরক দূর্ঘটনায় নির্মম মৃ'ত্যু হলো৷
রুদ্রর সাথে কাইফের রে'শা'রে'শি নেই৷ সে রে'শা'রে'শিতে যেতে চায় না ঝামেলা তার এক্কেবারে পছন্দ না কিন্তু ছেলেটা ঝামেলা বোধহয় পছন্দ করে তাইতো তার সাথে লাগতে এসেছে৷
কাইফ সাহেব কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন কখনো তার একটা পথ বন্ধ তো আরেকটা পথ খোলা৷
রনি নেহাত তার সোনার ডিম পারা হাস নয়তো ওই ছেলের সাথে মেয়েকে কে বিয়ে দিতে চায়? রনির তার মেয়ের প্রতি আলাদা টান আছে সবার ভাষায় যা ভালোবাসা৷
ভালোবাসা বলতে কিছু হয় নাকি? স্বার্থ ছাড়া আজকাল কিছু চলে না৷ দু বেলা না খেয়ে পরে থাকলেও কেউ খবর নিবে না তখন কি ভালোবাসা খাওয়া যায় নাকি? ভালোবাসায় পেট ভরে কি? কখনোই না৷ ভালোবাসায় পেট ভরায় না ভালোবাসায় দায়বদ্ধতা ব্যপক৷ ভালোবাসা কথাটা কাইফের বেশ অপছন্দ যা মনে পরলেই ঝলঝল হয়ে ভেসে উঠে কিছু মুখ৷ সে তিক্ততার সাথে সন্ধি আটতে চায় না৷ তার সুখ বড়ই প্রিয় সব কিছুর বিনিময়ে সুখ পাওয়া যায়৷ ভালোবাসা ফিকে একটা জিনিস চাহিদা পূর্ণ মানে নিজে সুখি৷ ভালোবাসা কি চাহিদা পূর্ণ করে নাকি?
"এখানে দাঁড়িয়ে ভাবছো কি?"
হঠাৎ নিজের স্ত্রীর কন্ঠে ধ্যান ভাঙে কাইফের ঘুরে দাঁড়ায় না তাকালো না৷
সে পাশে এসে দাঁড়ালো কাইফ বললো,
"কিছু দরকার তোমার?"
তার স্ত্রী মলিন হাসলো ছোট্ট করে 'না' বললো বেলির মায়ের সেই ছোট উত্তর শেষ হতেই কাইফ ক্ষানিকটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"মনিরা এখন যাও আমার কাজ আছে, কাজের সময় কাউকে পছন্দ না আমার তুমিতো ভালো করেই জানো৷"
বেলির ক্ষুন্ন মন নিয়ে বের হলো৷ লোকটার সাথে আছে ছাব্বিশ বছর হলো৷ লোকটার আচরণ পাল্টালো না, অনুভূতিহীন মানুষ মাঝে মাঝে মনে হয় তার৷
ডিসেম্বরের শেষ প্রায়, বছরের সমাপ্তি আজই এর মাঝে সময় পেরিয়েছে অর্ধ মাস৷ হোস্টেল টা তার ভালো লাগছে না আজ বের হবে রুম দেখার উদ্দেশ্য ঘর ভাড়া নিবে কুয়াশা এখানের পরিবেশ একেবারে ভালো না৷ সাথে সিনিয়র দের আচরণ ও অশোভনী৷
একা থাকা নিয়ে কুয়াশার মায়ের কোনো সম্মতি ছিলো না পরক্ষণে হীম আর মেহরাব মানায় কুয়াশার মা কে৷ যদিও একা থাকছে না কুয়াশার একটা বান্ধুবি ও থাকছে ওর সাথে৷
রুদ্রর সাথে দেখা হয় নি এত দিনে একবারো মানুষ টার প্রতি অভিমান আর অনুভূতি যেন বাড়ছে দিন দিন বেশি বেশি৷ কুয়াশা নিজেকে সংযত করতে পারে না আটকে যায়ই৷ অথচ লোকটা দিব্যি আছে ওর মনে অনুভূতির বিচরণ করিয়ে দিয়ে৷ রুদ্র না আসলেও রেদোয়ান কে কলেজের সামনে মাঝে মাঝেই দেখা যায় কুয়াশা বুঝে লোকটাই পাঠায় ওকে৷
দু দিন যাবত মা আর মামার কথা বেশ মনে পরে কুয়াশার হীমের সাথে দেখা হয়ই কলেজে কিন্তু মা আর মামার সাথেতো কথা ছাড়া দেখা হয় না৷
কুয়াশা সবেই বের হলো, আশে পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে খুঁজলো কাউকে৷ আজ ভার্সিটিতে যায়নি আজ ইচ্ছে করছিলো না যেতে৷
"আমায় খুঁজছিস?"
মিষ্টি কন্ঠে পাশ ফিরে তাকায় কুয়াশা, মেয়েটার নাম আরোহী, আরোহী মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে হাসি লেপ্টেই থাকে ঠোঁট জুরে৷ পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রাফান, রাফানো কুয়াশার বন্ধু৷ কলেজে আসার পর ওরা দুজন ছাড়াও আরো তিন জন সাথে ছিলো ওর মোট পাঁচ জন শুরু থেকে ওর পাশে ছিলো৷ ওদের সাথেই টাঙ্গাইল গিয়ে ফিরে আসে৷ কুয়াশার দেখা সব চেয়ে ভালো বন্ধু ওরাই৷ কুয়াশা জরতায় কখনো নিজ থেকে কারো সাথে তেমন মিশেনি তবুও সবসময় পাশে ছিলো৷
কুয়াশা রাফানের দিকে তাকালো ছেলেটাকে আরোহী পছন্দ করে কিন্তু গাধা টা বুঝেইনা৷ মাঝে মাঝে কুয়াশার ইচ্ছা করে মাথায় চাটি দিয়ে বলতে৷ তুই এত গাধা কেন? মেয়েটা যে তোকে ভালোবাসে তো কি নজরে আসে না? পরক্ষণেই কুয়াশা ভাবে এটা ও জীবনেও বলতে পারবে না৷ ওর মত ঘরকুনো চুপচাপ মেয়েদের যে বন্ধু এই কি বড় ব্যপার না? কুয়াশা ভ্রু কুচকে রাফানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
"ও এসেছে কেন? আমরাতো বাড়ি খুঁজতে বের হবো৷"
রাফান চমৎকার হাসলো আরোহী এগিয়ে এসে বললো,
"রাফান আমাদের জন্য বাড়ি দেখে এসেছে ওখানে ওর বন্ধুর বাড়ি৷ বাড়িটা নাকি তোর জন্য পার্ফেক্ট৷"
কুয়াশা ভ্রু কুচকে বললো,
"আমার জন্য মানে?"
আরোহী বলার আগে রাফান বললো,
"তোর জন্য তো তোর মতই চুপচাপ একটা বাড়ি লাগবে বল? বাড়িটায় ভাড়াটিয়া নেই কিন্তু আমার জোরাজোরিতে চিলেকোঠার রুমটা তারা দিতে রাজি হয়েছে৷ বাড়িটা আমার বন্ধুর আর ওরা অনেক ভালো৷"
কুয়াশা বললো না কিছু আগে দেখে আসুক ওর মিনের মত হলেতো ভালোই৷
বাড়িটা কলেজ থেকে রিক্সায় বিশ মিনিটের পথ বাড়ির সামনে আসতেই বড় বড় অক্ষরে লেখা দেখা গেলো ' সৌহার্দ্য' নিবাস বাড়িটার নাম দেখতেই তার বাড়ি সুখ কুঞ্জের কথা মনে পড়লো৷ বাড়িতে মেইন গেইট দিয়ে ঢুকার পথে হটাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলো কুয়াশা৷
সাতাশ
'সৌহার্দ্য নিবাস' বাড়ির নামটা যেমন চমৎকার বাড়িটাও চমৎকার৷ বাড়িটি তিনতলা, বাড়িটা ঢোকার সময়ই কুয়াশার বাড়ির মত বাগান বিলাস গাছ দেখা যায়৷ যার ছোট ছোট গোলাপি ফুল গুলো বিছিয়ে থাকে রাস্তার ধারে নিচতলাটা গাড়ি রাখার জন্য পুরো ফাকা এক কোনায় একটা দারোয়ানের রুম রয়েছে আরেকটা ওয়াশরুম৷
রিক্সা থেকে নেমেই বাড়ির বাইরেটা পরখ করেছিলো কুয়াশা ভিতরে আসতেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক ব্যাক্তির সাথে দেখা হয়ে গেলো৷
দারোয়ান গোসল সেরে বেরিয়ে অচেনা ব্যাক্তিদের দেখে এগিয়ে এলো৷ এবার বোধহয় তার কপালে দুঃখ আছে দারুন৷ সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মালিক এ বাড়িতে অচেনা কারো অনুমতি বিহীন ঢোকা বারণ৷ সামনে নির্বাচন এখন ঝামেলা বেশি৷ মানুষ ওত পেতে আছে প্রান্ত, রুদ্রর ক্ষতি করার৷
বাড়িটিতে সে ছাড়া অন্য নিরাপত্তা কর্মীও নেই, এ বাড়ির ছোট ছেলের দূর্ঘটনার পর আরো হুশিয়ারি করে দিয়েছে তার মা যেন অচেনা কেউ বাড়িতে না আসে৷
দু-জন মেয়ে একজন ছেলে, ছেলেটাকে দারোয়ান চিনে মেয়েদের চিনে না৷ ছেলেটা এ বাড়ির ছোট ছেলের বন্ধু সে লুঙ্গি ঠিক ঠাক ধরে হাতে থাকা ধোয়া ভেজা লুঙ্গিখানা শরীরে পেচিয়ে এগিয়ে এলো৷ খানিকটা ভীত কন্ঠে বললো,
"বড় বাবা মাফ করবেন আমি গোসলে গিয়েছিলাম মেইন দরজা খুলে রেখেই৷ ওই ছেলে প্রান্ত বাবার বন্ধুই অচেনা কেউ না তবে মেয়ে দুটোকে চিনি না৷"
কুয়াশার সামনে থাকা লোকটা ক্ষানিকটা ভাবুক কন্ঠে বললো,
"চাচা তুমি যাও এদের আমি চিনি৷"
লোকটির কন্ঠে ধ্যান ভঙ্গ হলো কুয়াশার৷ খানিকটা বিস্ময় ভাব নিয়ে রাফানের দিকে ঘুরে তাকালো৷ সামনের লোকটিও তখন আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে৷
কুয়াশা থমথমে কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,
"তুই ওনাকে চিনিস রাফান?"
রাফান সব সময়ের মত হাসলো দাত পাটি বের করে বললো,
"চিনবো না কেন? ইনি রুদ্র ভাইয়া, আমার বন্ধু প্রান্তর বড় ভাই৷ কেন? কি হয়েছে? তুই এনাকে চিনিস?"
কুয়াশা তপ্ত শ্বাস টানলো যাক কুয়াশা ভেবেছে হয়তো রুদ্র বলে ওকে এখানে এনেছে৷ লোকটার উপর অভিমান অনেক কুয়াশার এত দিন একবারো নিজ থেকে খোঁজ নেয়নি৷
কুয়াশা খানিকটা ক্রুদ্ধ চোখে তাকালো রুদ্রর দিকে অতঃপর রাফানের দিকে তাকিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
"এ বাড়ি আমি দেখবো না অন্য বাড়ি দেখা আমায়৷"
রাফান ক্ষানিকটা ভরকালো৷ এ মেয়ের হুটহাট কি হয়? আরোহীর বাইরে থেকেই বাড়িটা ভালো লেগেছে বাড়িটা দেখতে নাচক করছে কেন মেয়েটা? আরোহী পথ আগলে দাঁড়ালো কুয়াশার৷ হতাশ কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,
"দেখেতো নে একবার? এমন করছিস কেন? কি হয়েছে?"
কুয়াশা ফের রুদ্রর দিকে তাকালো৷ রুদ্র এখনো নিরব শ্রোতা৷ রুদ্র সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে কি দেখার কথা বলছে বুঝতে পারছে না কিছু৷ আর কুয়াশা এখানে কি করে এলো?
রুদ্র এবার এগিয়ে গেলো কুয়াশার দিকে আরোহী থেকে ক্ষানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে মুখোমুখি দাঁড়ালো কুয়াশার কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
"আপনি এখানে?"
"ভাইয়া আপনি ওকে চিনেন?"
রাফানের প্রশ্নে রুদ্র উত্তর দেওয়ার আগেই কুয়াশা তড়িৎ গতীতে বললো,
"না! একদম না৷ উনি আমায় চিনবে কেন? বহুরূপী মানুষ৷"
রাফান সন্দিহান চোখে তাকালো৷ রুদ্র এখনো ব্যাপারটি বুঝলো না রফানের কাছে শুধালো,
"তোমরা এখানে? কিছু প্রয়োজন ছিলো? প্রান্তকে দেখতে এসেছো?"
রাফান বললো,
"আমি প্রান্তকে দেখতে এসেছি আর ওরা আপনাদের চিলেকোঠার ঘরটা৷ ওরা হোস্টেলে থাকতো কিন্তু ওখানকার পরিবেশ ভালোনা আগে থেকেও খারাপ তাই বাড়ি খুঁজছিলো৷ আন্টিকে প্রান্তকে বলেছি ওনারা রাজি হয়েছেন৷"
রুদ্র আরেকটু অবাক হলো কুয়াশার দিকে তকালো, মেয়েটা বেশ ঘাড় বাকা রেদোয়ান কে দিয়ে একশবার বলিয়েছে হোস্টেলে সমস্যা হলে রেদোয়ান কে জানাতে৷ এখন যদি এখানে না আসতো, না জানিয়েই অন্য বাড়িতে উঠতো ও জানতো ও না৷
সাংঘাতিক মেয়ে একটা মানুষ এতটা অবাধ্য হয় কি করে? এ নিয়ে ওকে কেউ কিছু জানায়নিও কথা বলতে হবে হীমের সাথে৷
রুদ্র কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বললো,
"রেদোয়ান কে কিছু জানালেন না কেন?"
রুদ্রের কথায় রাফান আরোহী বুঝলো না কিছু৷ কুয়াশা রাগে ফুসছে রেদোয়ান কে কেন জানাবে? দেখলেই অধিকার জন্মায় তার নতুবা খবোরো নেয় না৷
কুয়াশা চুপ দেখে রাফানের দিকে তাকালো রুদ্র গম্ভীর মুখ খানায় জোর পূর্বক হাসি ফুটালো বললো,
"উপরে চলো রাফান, উপরে গিয়ে কথা হবে৷"
রাফান এগোতে নিলেই কুয়াশা কাটকাট কন্ঠে বললো,
"আমি হোস্টেলে যাবো আরোহী, যাবি তুই? নয়তো একাই যাচ্ছি আমি৷"
আরোহী রাগের কারণ বুঝলো না রাফানো বুঝলো না তবে এটা বেশ ভালো করে বুঝলো এরা একে অপরকে খুব ভালো করে চিনে৷
রাফান কিছু বলবে এর আগেই রুদ্র বললো,
"উপরে চলো রাফান কুয়াশাও যাবে৷"
রাফানের বুক টা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে রইলো ঠিক তখনি সবার বিস্ময় বাড়িয়ে দিয়ে কুয়াশার হাত ধরে ওদের সামনে দিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো রুদ্র৷
..
সৌহার্দ্য নিবাসের চারোপাশ যেন সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি নতুনত্বের ছাপ৷ কুয়াশাদের মত পুরোনো দিনের বাড়ির মত কোন ছোয়া নেই৷ এ বাড়ি রেখে রুদ্র ওদের বাড়িতে ওখানে কেন ভাড়া ছিলো কুয়াশা তা ভেবে পায় না৷
উপরে আসার সময় কয়েকবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি৷
সুঠাম দেহের অধিকারী কোনো লোকের সাথে কি পেরে উঠা যায় আদৌ?
রাফাত আরোহী নিরব দর্শক শুধু মাত্র৷ তারা অপেক্ষায় রয়েছে কখন এ বাড়ি থেকে বের হবে কখন চেপে ধরবে কুয়াশাকে৷
বেশ জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো কুয়াশা সামনের মানুষ গুলো তার অচেনা৷ কুয়াশা এমন বিব্রত কখনো হয়নি হঠাৎ একটা মহিলা কুয়াশার সামনে এসে দাঁড়ালো বললো,
"তুমি কুয়াশা?"
কুয়াশা ভরকালো, এক তো এই লোকের জন্য এমন অপ্রস্তুত হতে হচ্ছে৷সব দোষ রাফানের ও এখানে না নিয়ে এলে এমন মূহুর্তের মুখোমুখি হতে হতই না৷ মহিলাটা ওকে কি করে চিনে তা কুয়াশার বোধগম্য হয় না৷
কুয়াশা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললো,
"জ জ্বি৷"
মহিলাটি হাসলো৷ প্রান্ত রাফানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
"তুই কি এনাদের কথাই বলেছিলি? ভাড়ার জন্য!"
রাফান অবুঝের মত মাথা নাড়ালো৷ প্রান্ত হাসলো প্রকৃতির নিয়ম বড়ই অদ্ভুত সৃষ্টি কর্তার নিয়ম বুঝা বড় দায়৷
তোমাকে সে যার জন্য সৃষ্টি করবে তার সাথে তোমার না চাইতেও এমন কাকতালীয় ভাবে দেখা হবেই৷ প্রান্ত পূর্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কুয়াশার পানে৷
এ মেয়েটি নাকি গম্ভীর? তার রাগচটা ভাই কেও নাকি হার মানায় অথচ চেহারা দেখলে মনে হয় উনি এমন হতেই পারে না৷
মহিলাটির কথায় বসলো সবাই৷ মহিলাটি প্রান্তর মা নাম তার 'মাধুবিলতা'
"তোরা কি চিনিস কুয়াশাকে?"
প্রান্ত মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললো৷ রাফান আরোহীর মনে প্রশ্ন রয়েই গেলো কি করে চিনে? রাফান ভাবলো এতো প্রশ্ন সবার সামনে করা ঠিক হবে না আগে ঘরটা দেখুক কুয়াশা পরে না হয় ওকে জিগ্যেস করা যাবে৷
"তাহলে তো হলোই ঘরটা ওকে দেখিয়ে দে জানুয়ারিতেই শিফট করবে৷"
রাফানের কথা শেষ হতে না হতেই রুদ্র বললো,
"কুয়াশা এ বাড়িতে থাকছেনা৷"
কুয়াশা মাত্রই বলতো ও এবাড়িতে থাকবে না, রুদ্রর কথা শুনে বেশ অবাক হলো৷ রুদ্র না করছে? কিন্তু কেন? ও এমনিও এ বাড়িতে আসতো না তবুও অভিমান টা চওরা হলো চোখ পানিতে টইটম্বুর হলো৷ লোকটা ভালো না একটুও ভালো না৷ বহুরূপী!
আটাশ
ঘণ কুয়াশাময় নতুন এক প্রভাতের আগমন৷ কেলেন্ডার অনুযায়ী আজ বছর এবং ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন, শীতের তীব্রতা আজকাল হুহু করে বেড়েছে৷
দেখতে দেখতে যেন বছরটা কে'টে গেলো৷ বছরটা কুয়াশার র অদ্ভুত গেছেন, শুরুর দিকে সব ঠিকঠাক তার নিয়মে চললেও বছরের শেষ দিকটা অদ্ভুত কে'টেছে৷ অল্প সময়ের ব্যবধানে অচেনা একটা মানুষ তার জীবনের নানান সিদ্ধান্তে মানুষ টার নিজ ইচ্ছা গুলো চাপিয়ে দিচ্ছে ওর উপর৷
ও ঘুনাক্ষরেও টের পাচ্ছে না কি হচ্ছে এসব? না কেউ এর জবাব দিচ্ছে৷ রুদ্র নামক লোকটা বেশ দুরন্ত তা কুয়াশা ভালো করে জানে কিন্তু তার মাথায় কখন কি চলে তা কুয়াশা বুঝে না৷
আর সে লোকটারি মায়ায় আটকেছে কুয়াশা!শক্ত-পোক্ত কঠিন তাকে দিনে দিনে মিহিয়ে যেতে দেখছে কুয়াশা, অনুভূতিতে কাঁচা মেয়েটাও বিব্রতকর অনুভূতিতে জরিয়ে পরছে৷ এ কেমন বিড়ম্বনা তা কুয়াশা জানে না৷ অন্তঃমুখি তাকে চটপটে মস্তিষ্কের করে দিচ্ছে কেমন? সে এসব করতে চায় না তবুও হয়ে যাচ্ছে৷
মাঝে মাঝে কুয়াশা ভাবে নিমন্ত্রণ করে লোকটাকে সামনে বসিয়ে নিজের মন মতো কিছু কঠিন বাক্য শোনাতে পারতো?
পরক্ষণেই দমে যায় কুয়াশা ভাবে এসব করলে সে ছেলেই ফের প্রেক্ষিতে শোনাবে কিছু ভয়ংকর কঠিন অনুভূতি পূর্ণ কথা৷ হয়তো বললে,
"কুয়াশা আপনি কি আমার প্রেমে পরে যাচ্ছেন?"
এসব ভেবে দমে যায় সে৷ লোকটার উপর অভিমান প্রগাঢ়, মা বলে অনুভুতি থেকে অভিমান আসে৷ তাহলে কি তাই? এমন অনুভূতি যে কুয়াশা চায় না, এ অনুভূতির পরিনতি যে ভয়ংকর৷ এ অনুভূতি দুঃখ ছাড়া সুখ দেয় না৷
হঠাৎই ফোনের শব্দে ধ্যান ভা'ঙে কুয়াশার এতক্ষণ বিছানায় বসে ভাবছিলো এসব৷ মোবাইলের ভেসে ওঠা আননোন নাম্বার টা দেখে ভ্রু কুচকায় কুয়াশা আননোন নাম্বার ধরে 'হ্যালো' বলাও কুয়াশার জন্য কষ্ট সাধ্য৷ গলা দিয়েও শব্দ বের হবে না এখন৷
ফোনটা ধরলো না কুয়াশা৷ ফোনটা কে'টে যেতেই ফের কল এলো বেজেই গেলো কর্কশ শব্দে উঠালো না এবারো কে'টে গেলো৷
আরেকবার কল্টা বেজে উঠতে দরজা দিয়ে একজন উকি মেরে কর্কশ কন্ঠে বললো,
"হয়তো ধরো নয়তো কাটো আমাদের ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছো কেন?"
কুয়াশা তপ্ত শ্বাস টানলো কে'টে যাওয়ার আগেই ধরলো ফোনটা৷
জরতা কাটিয়ে কষ্ট করে আর কুয়াশার 'হ্যালো' বলতে হলো না ওপাশের পুরুষালী কন্ঠ ভেসে এলো,
"ভাবি আমি প্রান্ত, নিচে দাঁড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে নেমে এসো৷"
কুয়াশা বললো না কিছু ফোনটা কা'টলো৷ এ নিয়ে কুয়াশা মহা দোটানায় আছে, সে দিন রুদ্র নিজের বাড়িতে থাকতে নাচক করলেও পরক্ষণে গম্ভীর কন্ঠে বলেছিলো,
"আমি চাই না বিয়ের আগে কুয়াশা এ বাড়িতে থাকুক বড় মা৷ ও আমার ফ্লাটে থাকবে৷"
এতে কুয়াশা রাগে না করলে ও মা আর মামার কথায় রাজি হতে হয়েছিলো৷ সবার সামনে হঠাৎ বিয়ের কথায় বেশ চমকেছিলো কুয়াশা৷ পরক্ষনে ওর মা যখন নিজেই ফোন করে বললো বিনা বাক্যে যেন রুদ্রর ফ্লাটে গিয়ে থাকা হয় তখন আরো বেশি চমকেছিলো কুয়াশা৷
নিজের বাড়িতে সবার মাথায় রুদ্র কি ঢুকিয়েছে তা জানে না কুয়াশা সব টা বলেও নি কেউ৷ শুনেছে আজ মেহরাব মানে তার মামা ঢাকা আসতে পারে৷ কুয়াশা এখন নিরব দর্শক মাত্র সেই বাড়িতে থাকার সময় থেকে চমক আর চমক পেয়েই যাচ্ছে৷
আরোহী আর রাফানো চেপে ধরেছিলো ওকে ও উত্তর দিতে পারেনি কিছুই৷ আজ কুয়াশার সাথে আরোহীও যাচ্ছে আরোহী ওর সাথেই থাকবে৷
রুদ্র চরিত্রটা কুয়াশার কাছে এখনো আবছায়া, অস্পষ্ট৷ লোকটা নিজেকে খুলে ধরছে না ওর কাছে এখনো৷ রাফানের কাছে শুনেছে রুদ্রর বাবা রাজনীতিতে বেশ নাম ডাক রয়েছে৷
রাজনীতি কুয়াশার অপছন্দ৷ বড়ই অপছন্দ! রাজনীতির কথা ভাবলেই মাথায় আসে নিকৃষ্টতর এক মানুষের কথা৷
"বসে আছিস যে?যাবিনা কুয়াশা?"
আরোহীর কন্ঠে ভাবনার সুতো কা'টে কুয়াশার৷ ওর যাওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই এর থেকে এ হোস্টেলই অনেক ভালো৷
কুয়াশা নিজের চশমাটা ঠিক করে দাঁড়ায় উরনা ঠিকঠাক করে নিজের লাগেজ টেনে হাটা দেয়৷ আরো এ মেয়ের মতিগতি বুঝে না কত্ত প্রশ্ন করলো কোন উত্তর দিলো না সে দিন৷ রুদ্র নামক লোকটা আরোহীর চমৎকার লেগেছে কি সুন্দর অধিকার ফলিয়ে কথা বলে?
রাফান যদি ওর অনুভূতিটা একটু বুঝতো তা ভেবে দীর্ঘশ্বাস টানে৷
কর্তৃপক্ষ কে আগেই জানিয়ে রেখেছিলো রেদোয়ান৷ আজ রেদোয়ানের আসার কথা ছিলো কিন্তু এসেছে প্রান্ত৷ লোকটার উপর অভিমান, রাগ হবে না তো কার উপর হবে? নিজে আসলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো? হঠাৎই নিজের এমন আপত্তিকর ইচ্ছায় নিজেই স্তম্ভিত হয় কুয়াশা৷ সামলে নেয় ফের একবার নিজের নিঙরানো অনুভূতি গুলো৷ বাইরে আসতেই প্রান্তর দেখা মেলে ভাইয়ের মত সব সময় উষ্ঠ জুরে হাসি লেগেই থাকে ছেলেটার৷ ছেলেটা ওকে 'ভাবি' ডাকে এমন সাংঘাতিক ডাক কুয়াশার ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়৷ অদ্ভুত ও ওর ভাবি হলো কি করে? নিশ্চয়ই ওই বদ লোকটা শিখিয়ে দিয়েছে?
প্রান্ত কুয়াশাকে দেখে এগিয়ে এলো সাথে আরেকজন ছেলে একে কুয়াশা চিনে না৷
প্রান্ত এগিয়ে এসে ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,
"ব্যাগ নে ভাবির থেকে৷"
কুয়াশা আর আরোহীর প্রয়োজনীয় জিনিস ছেলেটা গাড়িতে উঠালো৷
কুয়াশা গাড়িতে উঠবে ঠিক তখনই প্রান্তর উদ্দেশ্যে গম্ভীর স্বরে বললো,
"ভাবি বলবেন না৷ "
প্রান্ত থতমত খেলো৷ মাথা চুলকালো কিছু বললো না৷ প্রান্ত তো ভাবতো বেলি বুঝি হৃদয়হীনা কিন্তু না বেলি পাষাণ হলেও সে পা'ষাণীর মন গলাতে সক্ষম হয়েছে সে কিন্তু কুয়াশা হলো বেলির থেকেও কঠিন হৃদয়হীনা এর মন গলাবে কি করে রুদ্র?
..
রনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে আজকাল তবে শুধু তা মানুষের সামনে৷ সে সবাইকে দেখাচ্ছে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছে সে, কিন্তু তাকে পুলিশ এরেস্ট করার পরেও ছেড়ে দেওয়ার কারণ খুঁজে পায় না৷
তার নিজেকে নিয়ে ভয় নেই সে তো অনুভুতে জর্জরিত একজন মানুষ তার ভয় ওই বেলি নামক মেয়েটাকে নিয়ে৷ মেয়েটা তার যেমন জেদ তেমন নতুন এক অনুভূতির নাম৷
মেয়ে আজকাল দেখা দেয় না চোখ তুলেও তাকায় না, রনির যদিও কোন সমস্যা নেই তার কথা সে দেখতে পারলেই হলো৷
কিন্তু কোথাও যেন 'তবুও' কথাটায় গিয়ে আটকে যায় সব বক্ষটা তিরতির করে কম্পন ধরে৷ মেয়েটার চোখে প্রান্তকে নিয়ে মায়া আকাশ চুম্ব বুঝে তা রনি, সে দিন যখন মুখোমুখি হলো বেলির সাথে মেয়েটা অশ্রুসিক্ত নয়নে জিগ্যেস করে বসলো,
" প্রান্তকে আপনি গু'লি করেছেন তাই না?"
রনি সে দিন রেগেও কিছু বলতে পারেনি কথা যেন গলায় আটকে পরেছিলো৷ সে দিন ইচ্ছে ছিলো বলার ' হ্যাঁ আমি করেছি শেষ করে দিবো আমি ওই ছেলেকে৷' পারেনি রনি সে দিন বলতে৷
মেয়েটার ক্রুদ্ধ রুপ জানান দিচ্ছিলো মেয়েটার অনুভূতির কথা৷ ও তো সে দিকে পাত্তা দিতে চায় না ও তো শুধু বেলিকে চায়৷ বেলি যাকে খুশি তাকে ভালোবাসুক তাতে ওর কিছু আসে যায় না ও শুধু চায় দুনিয়ে উলটে যাক বেলি ওর হোক৷
আজ বেশ কিছুদিন পর বেলির বাড়িতে এলো৷ বেলির ঘৃণার দৃষ্টি রনির বক্ষে আ'ঘা'ত করে তাই আসে না৷ ওপাশ থেকে দরজা খোলার পরই বেলির মায়ের বিরক্ত দৃষ্টির সম্মুখীন হলো রনির তা নিয়ে রনির মাথা ব্যাথা না মহিলাকে উপেক্ষা করে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো বেলির কক্ষের দিকে ঠিক তখনই মহিলা বাধ সেধে বললো,
"তুমিত আর অবুঝ নও ওর বাবার মত তুমি কি বুঝো না মেয়েটা কি চায়?"
রনি পিছনে তাকালো ক্ষানিকটা হাসলো শালীন কন্ঠেই বললো,
"আমি যে বুঝতে চাই না আন্টি, আমি বেলিকে চাই৷"
দীর্ঘশ্বাস টানলো বেলির মা যেন প্রান্তর চোখ পড়তে পারলো৷চমকালো! মন ভাঙার সময় চলছে বুঝি এটা? ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন?
রনি নেলির কক্ষের সামনে যেতেই অভিমানী কন্ঠ শুনতে পারলো বেলির,
"আমি এখনই আপনার সাথে দেখা করতে চাই প্রান্ত ভাই৷"
রনির রাগ হলো ভয়ংকর রাগ৷ কিছু একটা ভাবলো দাঁড়ালো না আর এখানে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ফুকতে ফুকতে গম্ভীর্য নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে৷
ঊনত্রিশ
মধ্যাহ্ন টা বুঝি আজ প্রান্তরই হুট করেই আজ বেলি জরুরি তলবে ভার্সিটির পাশের রেস্টুরেন্টে আসতে বললো৷ প্রেমিক বুঝি প্রেমিকার কথা ফেলতে পারে? কুয়াশাকে ফ্লাটে পৌঁছে দিয়ে বাবার অফিসে সবে একটু ঢুকেছিলো সাথে সাথেই বেরিয়ে যেতে হলো৷
আজ বুঝি পাষানী মুখ তুলে তাকিয়েছে৷
আজ যখন বেলি বললো 'প্রান্ত ভাই আপনার সাথে দেখা করতে চাই৷" বেশ উৎফুল্ল হয়েছিলো প্রান্ত৷ যেন কতকাল পর দেখা করবে মেয়েটার সাথে৷ কিন্তু এখানে আসতেই বেলির শক্ত কঠিন মুখ খানা দেখে চমকেছিলো৷
এসে বসতে না বসতেই প্রশ্ন ছুড়লো মেয়েটা,
"মেয়েটা কে প্রান্ত?"
হঠাৎ নিজের নাম বেলির মুখে শুনে থমকায় প্রান্ত৷ শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম৷ মেয়েদের মত যেন অপ্রস্তুত হলো কিছুটা৷ আকস্মিক মনে প্রশ্ন জাগলো মেয়েটা কি রেগে আছে?
কোন মেয়ের কথা বলছে? প্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পেলো না নিরুত্তর রইলো৷
কুয়াশা আকস্মিক এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলো, নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে প্রান্তর শার্ট এর কলার চেপে ধরলো হাত পা মেয়েটার কাপছে৷ এমন আক্রমণের মোটেও প্রস্তুত ছিলো না প্রান্তর৷ প্রান্তর বিস্ময় টা বাড়িয়ে দিয়ে বেলি উগ্র কন্ঠে বললো,
"উত্তর দিচ্ছিস না কেন? খুব তো বলতি ভালোবাসিস এই তোর ভালোবাসা? সব টা বুঝি তাহলে নাটক ছিলো?"
প্রান্ত ভরকালো চোখ বড় বড় করে তাকালো৷ সবটা এত তাড়াতাড়ি ঘটছে সব ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷
"কি হচ্ছে বেলি? আশেপাশে মানুষ তাকিয়ে আছে৷ কি করছিস? কার কথা বলছিস তা তো আগে বল৷"
বেলি কলার ধরেই ফুপিয়ে উঠলো একই কন্ঠে বললো,
"এখন বুঝবিও না৷ সকালে থেকে এ পর্যন্ত কার সাথে ছিলি?"
প্রান্তর মাথা যেন খুললো৷ হাসলো প্রান্ত মেয়েটা আজকাল অধিকার দেখাচ্ছে৷ প্রান্তর হাসি দেখে কষ্টটা যেন বাড়লো বেলির৷ লোকটা কি তবে ওকে আর ভালোবাসে না?
বেলির ভাবনার সুতো কাটিয়ে স্ব-শব্দে হাসলো প্রান্ত উঠলো চেয়ার ছেড়ে বেলিকে ছাড়ালো চেয়ার টেনে নিজের কাছাকাছি চেয়ার টা রেখে বসালো সে ও বসলো মিনমিনিয়ে বললো,
"সে মেয়ে আমার ভাবি হয় বেলি৷ তোকে রেখে কার সাথে ঘুরে বেড়াবো আমি বলতো? তোর অবহেলায় ও যে আমি তোর ছায়ার মত ছিলাম৷"
বেলি ব্রু কুঁচকে তাকালো৷ বুঝলো না কিছু ভাবি? ওর জানামতে রুদ্র তো বিয়ে হয়নি৷
বেলি হাত দিয়ে নেত্রকোন থেকে পানি মুছলো সন্দিহান কন্ঠে বললো,
"ভাবি?"
প্রান্ত জবাব দিলো,
"হ্যাঁ রুদ্র ভাইয়ার হবু বউ৷ তোর মতই পাষান আমার ভাইয়ার মত মানুষ কে মেয়েটা উপেক্ষা করে চলে৷"
বেলি ধাতস্থ হলো হঠাৎই লজ্জা আষ্টেপৃষ্টে ধরলো আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো৷ বেলির অপ্রস্তুত দৃষ্টি প্রান্তর চোখ এড়ালো না৷ প্রান্ত ঠোট এলিয়ে হাসলো বললো,
"আমায় ভালোবাসিস এত তবুও দূরে থাকতি?কেন?"
বেলি চোখ খিঁচে বন্ধ করলো লজ্জায় মিনমিনিয়ে বললো,
"ভালোবাসিনা আমি আপনাকে৷ একটুও না৷"
,,
সন্ধ্যা তখন শীত ঢাকা শহর বেশ করেই কাবু করেছে সন্ধ্যা বেলা ও ঘণ কুয়াশার দেখা৷ প্রকৃতি শুধু বর্ষন দিয়েই নিজের উগ্র রুপ উপস্থাপন করে না শীত কালেও প্রকৃতি নিজের ক্রুদ্ধ রুপ দেখায়৷ হার কাঁপানো শীতে রাস্তার মানুষ গুলোর বেহাল দশা৷ কি অদ্ভুত মানুষের জীবন বৈচিত্র্য? এ কুয়াশার মাঝেও ফুটপাতে শুধু একটা বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে৷
নিশ্চিন্তায় বোধহয় ঘুমিয়ে আছে৷ শূন্য মানুষ নাকি চিন্তাহীন জীবন যাপন করেন৷ আদৌ কি তাই?
কুয়াশা সবেই গোছগাছ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো, এ বাড়িটি রাস্তার পাশে৷ পঞ্চম তলায় তার ফ্লাট৷ বাড়িটা তেরো তলার এ ফ্লাটটা রুদ্রর৷ ফ্লাটটিতে যে মানুষ থাকে না বোঝাই যায় না৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, প্রান্ত বলেছিলো মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে রুদ্র এখানে আসে ফ্লাটে দুটো রুম মাঝে একটা ড্রইংরুম বড়সড়৷
প্রান্ত ছেলেটাকে বেশ ভালো লেগেছে অন্তত ভাইয়ের মত খোঁচা মেরে কথা বলে না, যদিও প্রান্তর সাথে আগে কথা হয়নি৷ এক দিনের পরিচয়েতো মানুষ চেনা যায় না?
হুট করেই মামা এলো কুয়াশার৷ সুঠাম দেহের অধিকারী মানুষ টা কেমন শুকিয়ে গেছে মুখে বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট৷ সাথে ছিলো রুদ্র আর প্রান্ত লোকটার দেখা মিললো তবে৷ কুয়াশা রুদ্রকে দেখেও না দেখার ভান করে রইলো৷ মেহরাব ছুটি নিয়ে এসেছে এখানে থাকবে দু-দিন৷ তার ঢাকায় কি যেন কাজ আছে৷ রাফানো এলো , কুয়াশা এখনো থমথমে হয়ে আছে৷ তার বেশ আত্মসম্মাবোধ তার মামা মা যেনেও এ বাড়িতে আসতে বলেছে৷
আরোহী চা বানিয়ে দিলো সবাইকে রাগানের সামনে যেতেই চা দিতে দিতে প্রশ্ন ছুড়লো,
"ভালো আছিস? কোথায় থাকিস এখন? আসিস না যে?"
রাফান মলিন হাসলো আড় চোখে কুয়াশাকে একবার দেখলো অতঃপর আরোহীর দিয়ে তাকিয়ে বললো,
"ভালো আছি৷ তোরা?"
কুয়াশা জোরপূর্বক হাসলো শুধু আরোহীর আজ মন ফুরফুরে৷ রাফান এসেছে যে, ছেলেটাকে এত দিন কতবার ফোন করলো ধরলো না? ভেবেছিলো অভিমান করবে কিন্তু পারলো কইছেলেটার চুপ থাকাটা কেমন যেন লাগলো কুয়াশার৷ এমন থমকে যাওয়ার মানে কি?
কুয়াশা সবাইকে এখানে রেখেই কক্ষে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো যাওয়ার আগে কঠিন কন্ঠে বললো,
"মামা তোমার সাথে কথা আছে আমার৷"
মেহরাব তপ্ত শ্বাস টানলেন আপা শেষে কিনা এমন একটা কাজের জন্য পাঠালেন? বাঘিনীর মত রেগে আছে মেয়েটা মনে হচ্ছে এখনি যাবে আর এখনি কলিজাটায় থাবা মা'রবে৷
এ মেয়েকে বোঝাবে কি করে ও? চেচিয়ে বাড়ি এক না করলেই হয়৷ রুদ্র চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো সে আছে এখানেই৷
থমথমে হয়ে আছে চারোপাশ যেন ঝড়ের পূর্বাভাস৷ ঝড়ের আগে সব কিছু এমন থমথমে হয়ে থাকে না? মেহরাবের কথায় বেশ বিস্মিত হয়েছিলো কুয়াশা৷ নিরবতা বিচ্ছিন্ন করে মেহরাব কে শান্ত কন্ঠেই বললো কুয়াশা,
"আমার অগোচরেই আমার বিয়ে ঠিক করা হলো আর আমি জানিও না? আমার মতামতের প্রয়োজন মনে করলে না তোমরা?"
মেহরাব শান্ত কন্ঠ শুনেও স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারলো না৷ রুদ্র ও বাড়ি থেকে আসার আগে প্রায় জোরপূর্বক কুয়াশার মাকে জানায় ও কুয়াশাকে বিয়ে করতে চায় মেহরাব ভেবেছিলো রাজি হবে না তার আপা৷রুদ্র রাজনীতি করে আর রাজনীতি পছন্দ না কুয়াশার৷ কিন্তু নিমেষে রাজি হয়ে যায় কুয়াশার মা এমন কি সে নিজেই না করেন কুয়াশাকে জানাতে৷
রুদ্রকে বেশ মজে ধরেছিলো মেহরাব আর কুয়াশার মায়ের, ছেলেটা কুয়াশা বলতে পাগল৷ কুয়াশার মা চায় তার মেয়েকে খুব করে ভালোবাসুক কেউ৷ সে ঠকেছে বলে তার মেয়েও ঠকবে এমন তো নয়? রুদ্রর সম্বন্ধে কুয়াশার মা আগেই জানতো হীম তাকে জানিয়েছিলো৷
"আমি বিয়ে করবো না মামা৷"
কুয়াশার কথায় ক্ষানিকটা অবাক হয় মেহরাব৷ তার ভাবনা কি ভুল? সে তো স্পষ্ট দেখে মেয়েটা অনুভূতি৷ মেহরাব কিছু বলার আগেই কুয়াশা ফের শক্ত কন্ঠে বলে,
"এমন একজন কে বিয়ে করতে চাই না যে নিজের পরিচয় লুকায় আমাদের থেকে৷ এমন একজন কে আমি চাই না যে এখনো আমার কাছে অস্পষ্ট৷ এমন একজন কে চাই না আমি যার আমার জন্য সময় নেই৷ চাই না তাকে আমি৷"
শেষের কথা গুলো জরিয়ে আসলো কুয়াশার মেহরাব আবারো টের পেলো সূক্ষ্ম লুকায়িত্ব অনুভূতি মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে না৷
মেহরাব ভাগ্নির অভিমান বুঝলো৷ আগের মত হলে এতক্ষনে চেচিয়ে বাড়ি নিশ্চয়ই মাথায় তুলতো? তাও মেয়েটা বলে বিয়ে করবে না৷ মেহরাব এগিয়ে গেলো মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
"বিয়ে করবি কি না তুই তা রুদ্রকে জানিয়ে দিস বরং? তবে ভুল বুঝিস না ওকে৷ ছেলেতা উন্মাদ জানিসতো? এত ব্যাস্ততার মাঝেও তোর খবর নিতে ভুলেনি কখনো৷ আর ওর পরিচয় লুকিয়েছে কোথায়? আমরাতো জানতাম,কিছু জিনিস শুরুতে কিছুটা অস্পষ্ট হয়ই আর সময়? তুই তো ওকে পছন্দ করিস না তাহলে ওর সময় দিয়ে তুই কি করবি?"
কুয়াশা এবার ভরকালো ইতস্তত হলো৷ বলার মতো খুঁজে পেলো না কিছু৷
ত্রিশ
কাইফ যেন আরো হিংস্র হয়ে উঠছে ভিতরে ভিতরে দিন দিন৷ নমিনেশনের দিন যত এগিয়ে আসছে তত ভিতর ভিতরে উৎকন্ঠা হয়ে উঠছে৷ রুদ্রর দল টা ভারি সে টাকা দিয়ে যত মানুষ নিজের দলে আনুকনা কেন তবুও যেন রুদ্রর সমান হয়ে উঠছে না৷ ওই আটাশ বছরের ছেলেটা নাকি তাকে টেক্কা দিতে এসেছে?
ছোট মেয়েটাকেও আজকাল ছোট ভাইটা নিজের দিকে টেনে নিয়েছে মেয়ে তার মুখে মুখে কথা বলছে৷ যেখানে মেয়েরা ওনার মুখের উপর কথা বলতো না৷
রনি ছেলেটাকে আজকাল পাওয়া যাচ্ছে না সবাই যেন দিন দিন অকেজো হয়ে পরছে৷
এমন হলে চলবে না শুনেছে দোশরা জানুয়ারি রুদ্র মিটিং রেখেছে ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান শীত জুরে মানুষ কে বস্ত্র বিতরন সহ নানান সাহায্য করে যাচ্ছে৷
দোশরা জানুয়ারি রুদ্রর বাবা মৃ'ত্যু বার্ষিকী সে উপলক্ষে রুদ্র বেশ আয়োজন ও করেছে৷
রনিকে ফোন করলো কাইফ ছেলেটার মাথায় বড়সড় কিছু চলছে তাই এমন নিরব আছে৷ বেলি আজ প্রান্তর সাথে দেখা করেছে তা শুনেও নিরব আছে৷
মানুষ বলে নিজের ভালো পাগলেও বুঝে কিন্তু তার মেয়েটা বড়ই বোকা৷ মেয়েটা নিজের ভালো বুঝছেই না, যদিও প্রান্ত কোন দিক দিয়ে কম নয় তবুও শত্রুর সাথে কি সম্পর্ক হয়? কখনো না৷
কাইফের আপাতত মেয়েকে নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না তা রনির উপর ছেড়ে দিয়েছে৷ মেয়ে যা ইচ্ছা করুক তার কার্যসিদ্ধি হলেই হলো আর মান থাকলেই হলো৷
সম্মান হলো বড় এক সম্পদ যা না থাকলে মানুষ ফিকে৷
কাইফের রুদ্রর কথা ভাবলেই ওর বাবার কথা মাথায় আসে বেচারা অকালে না ঝড়ে পরলে ছেলেটার এমন কষ্ট হতো না৷
কাইফ ভেবেছিলো জঞ্জাল দূর হয়েছে কিন্তু ছেলে বড় হতে না হতে আরেক উটকো ঝামেলা ঘাড়ে এসে চেপেছে৷
কাইফ তবুও চুপ ছিলো এই ভেবে রাজপথে জায়গাটা পাকাপোক্ত হোক ততদিনে এ ছেলের নিশ্চয়ই রাজনীতির ঝামেলা মাথা থেকে সরে যাবে? পরক্ষনে যেন ছেলে উলটো রুপ নিলো সময়ের ব্যাবধানে খুটি গেড়ে যেন বসলো রাজপথে অতঃপর নিজের জায়গাটা মানুষ ধারা আরো শক্ত পোক্ত করলো৷
কাইফ সিগারেট ফুকতে ফুকতে ফাইলের ডেস্ক থেকে কিছু খুঁজলো৷ হঠাৎই অগোছালো ডেস্ক থেকে সব গুলো ফাইল পর পর করে পরলো৷ কিঞ্চিত রাগ হলো৷ মেয়ে মানুষ বড়ই অপদার্থ তার মতে, কিছু ঠিক মত করে না কতদিন বলেছে ডেস্ক টা গুছিয়ে রাখতে মহিলার যেন কথা কানেই যায় না৷
সিগারেট টা ছোট কৌটায় নিভিয়ে রেখে হাটু গেড়ে বসলো৷ হাটু গেড়ে বসতেও কষ্ট হলো বয়স বেড়েছে শরীরের জোর যেন কমছে৷ শরীরের জোর কমলেও মনের জোর তার ব্যাপক৷
ফাইল গুলো ঠিক ঠাক মত ঘুছিয়ে রাখলো৷ হঠাৎই হাত লেগে কিছু একটা ঝুন ঝুন আওয়াজ হলো৷ শব্দটা অনুসরণ করে ডেস্কের দিকে তাকাতেই চাবি পেলো একটা৷ চাবিটা দেখে ক্ষানিকটা খুশি হলো, চাবিটা এখানে ছিলো? এত সামনে ছিলো অথচ খুঁজে পাচ্ছিলো না কি অদ্ভুত৷ চাবিটা বছর খানেক ধরে পাচ্ছিলো না৷
চাবিটা নিয়ে কাঙ্ক্ষিত একটা ড্রয়ের খুললো সাথে সাথেই ঝলঝল করে উঠলো কিছু ছবি৷ চমকালো কাইফ সাথে সাথে ড্রয়ের টা বন্ধ করলো বড় বড় নিশ্বাস নিলো৷ অদ্ভুত ঘাম ঝরছে তার কনকনে এই শীতে৷
সে কি করে ভুলে বসে ছিলো সব? আকষ্মিক মনে হলো সে কি বাড়াবাড়ি করছে একটু? ভুললেই বা কি?
ড্রয়েরটা ফের খুললো জিনিস গুলো ঠিকঠাক আছে কি না দেখে বন্ধ করলো আবার৷ এবার চাবিটা নিজের কাছেই রাখলো৷
..
আজকের রাতটা ঝলমলে সুন্দর৷ কালো অন্তরিক্ষটা ঝলমলে করে আছে ধবধবে রুপালি থালার ন্যায় এক খানা চন্দ্র৷
থমথমে পরিবেশ হলে চাঁদটা দেখে মন ভরতো কিন্তু আশেপাশে একটু বেশি কোলাহল শোরগোল৷ গানের শব্দ৷ গান বাজনা করে নাকি মানুষজন বছরের শেষ দিন স্মরনীয় করে রাখে৷ শহর নয় শুধু আজকাল গ্রামের মানুষ গুলো ও এমন বাজনা বাজিয়ে বছরের শেষ দিন স্বরনীর, সুন্দর করে রাখছে৷ আদৌ কি হয় এমন? গান বাজনা করে কি এমন স্মরণীয় হয় সব?
মাঝে মাঝে আতশবাজির শব্দ কান জুরে বারি খাচ্ছে চোখ মুখ খিঁচে তেরো তালায় এই ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা৷ এই প্রথম এত উপর থেকে শহর দেখছে চারোদিকে উৎসব মুখর সব৷ পুরোটা শহর ঝলমলে আলোয় আলোকিত মাঝে মাঝে ফানুস উড়ছে৷
আজ অনেক টা ধকল গেছে ভেবেছে মামার সাথে কথা বলে ঘুমাবে এ বাড়িতো ছাড়তে পারবে না খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে৷
কিন্তু তা আর পারলো কই? আরোহী টেনে টুনে ছাদে নিয়ে এলো৷ আজ ওর বন্ধুমহলের সবাই এখানে উপস্থিত আছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তারা নাকি সবাই প্রান্তকে চিনে প্রান্ত লাস্ট দু-বছর ওদের সাথেই পড়াশোনা করেছে অথচ কুয়াশা চিনেই না৷
একটা ব্যাপার বেশ অদ্ভুত লাগছে কুয়াশার অন্য ব্যাপার হলে তো সবাই মিলে আকড়ে ধরে জিগ্যেস করে৷ কিন্তু রুদ্রর ব্যপারটি কেউ ওকে জেরা করছে না৷ হাফ ছেড়ে যেন বাঁচে কুয়াশা৷
সবে সারে এগারোটা বাজে ছাদেই তোরজোর চলছে বার্বিকিউ এর৷ সবাই যে আসবে কুয়াশা জানতোই না৷
হঠাৎই মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ মা বলতো মেয়েদের দু-চোখ বাদেও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জেগে থাকে সব সময় কে তাদের পরখ করে কে তাদের নিয়ে কি ভাবে তা বুঝতে পারে৷
কুয়াশা আড়ষ্ট হয়ে রুদ্রর দিকে তাকালো, ও তাকাতেই রুদ্র ও তাকালো ক্ষানিকটা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো৷ নাহ! রুদ্র ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো না রুদ্র অন্য কাউকে দেখছিলো৷
কুয়াশা দেখলো রুদ্র ওর দিকে তাকিয়েই এগিয়ে আসছে৷ চোখ মুখ কালো করলো কুয়াশা৷ কিন্তু কে তাকিয়ে ছিলো তা দেখার জন্য আশেপাশে দৃষ্টি বুলাতেই হঠাৎ রাফানের দিকে চোখ গেলো রাফান যেন বিব্রত হলো৷ রাফানো তাকিয়ে ছিলো৷ কেমন যেন মনে হলো ব্যাপারটা ততক্ষণে রুদ্র ওর পাষ ঘেঁষে দাঁড়ালো৷ কুয়াশার চোখে মুখে এখনো আঁধার, কুয়াশা সরে যেতে নিলেই হাত চেপে ধরলো রুদ্র৷ হঠাৎই মেয়েটা তটস্থ হয়ে পরলো হাত ছাড়ানোর জন্য উঠে পরে লাগলো৷ ছাড়লো না রুদ্র চেঁপে নিজের দিকে নিয়ে এলো৷ মিনমিনিয়ে বললো,
"এত কিসের অভিমান আপনার?"
কুয়াশা যেন এমন কন্ঠে শান্ত হয়ে গেলো৷ চোখেমুখে বিষন্নতা পরিপূর্ণ হলো চোখ টলমলে হলো৷ অদ্ভুত তো ও কবে এতো কোমল হৃদয়ের হলো? ও তো এমন নেকা স্বভাবের ছিলো না৷
আমাদের অভিমান যখন গভীর হয় প্রিয় মানুষ তখন যদি একটু আহ্লাদী হয়ে কথা বলে শক্ত পোক্ত মানুষ টাও তখন কোমল হয়ে উঠে৷
"আমি প্রচন্ড শক্ত একটা মানুষ ছিলাম কুয়াশা ঠিক আপনার মত, কিন্তু আপনার কাছে আসলেই যেন সেই কঠিনত্ত্ব হারিয়ে যায় নরম হয়ে যাই৷"
কুয়াশা নিরব রইলো ক্ষানিকটা ঘুরে তাকালো৷ রুদ্র আবার বললো,
"আমি সব জায়গায় কঠিন হলেও আপনাতে আমি প্রচন্ড ভীতু৷ মেয়ে আপনি আমায় পুরোপুরি রপ্ত করেছেন৷ এখন কারণে অকারণেই আপনাকে আমার প্রয়োজন৷"
এইটুকু বলে থামলো রুদ্র৷ কুয়াশা এখনো নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে৷
"আপনার কাছে লুকানোর কিছুই নেই সব প্রশ্নের উত্তর আস্তে আস্তে পেয়ে যাবেন আপনি৷ আপনি চান বা না চান৷ আপনাকে আমার প্রয়োজন ভিষণ প্রয়োজন৷"
কুয়াশার কি হলো কে যানে? রুদ্রের আকড়ে ধরা হাতটা নিজ থেকে ধরলো ক্ষানিকটা মাথা এলিয়ে দিলো রুদ্রর বলিষ্ঠ বাহুতে৷ সাথে সাথেই এক সাথে চারোদিকে আতশবা'জি ফুটে উঠলো শ ক্ষানেক৷ নতুন বছরের নতুন সূচনা৷ এত কোলাহল পূর্ণ পরিবেশে পাশের মানুষ টির কন্ঠ পাওয়া ভেলো যেন ব্যাকুল কন্ঠে মিনিমিনিয়ে বললো,
"আমার হৃদয়ে আপনার স্বাগত কুয়াশা৷"
একত্রিশ
পৃথিবীর সবচাইতে তৃপ্তি ময় মূহুর্ত হচ্ছে নিজের অর্থে হাজারো এতিমের মুখে খাবার দেওয়া৷ ছেলে মেয়ে থাকতেও যে মানুষ গুলোর শেষ ভরসা বৃদ্ধাশ্রম সেই বাবা মায়ের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, এর থেকে শান্তিপূর্ণ দৃশ্য বোধহয় অন্য টি নেই তাই না?
রুদ্র আজ বেজায় ব্যস্ত আজ ওর বাবার মৃ'ত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এ আয়োজন৷ এ দিনে বাবা মা দুজনকে একসাথে হারিয়েছে৷
এ দিনটি রহস্যের মত রুদ্রের কাছে৷ সে জানে ওটা এক্সি'ডেন্ট ছিলো না নমিনেশন নিয়ে আসার পথে এক্সি'ডেন্ট হয়৷ মানুষ যখন রুদ্রের বাবাকে নিয়ে ব্যাস্ত তখনি ওর মা নিখোঁজ হয়৷
সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর বাগানে পরের দিন সকালে মায়ের ঝুলন্ত লা'শ পায়৷ সবাই বলে তার বাবার শোঁকে নাকি মা আত্ম'হ'ত্যা করেছে, তবে রুদ্রের কাছে সব ধোয়াশার মত৷ রুদ্রের জন্য সময় গুলো ছিলো দুঃস্বপ্নের মত৷
এসব ভাবলে রুদ্রর শরীরের রক্ত টগবগ করে উঠে৷ পূর্বপরিকল্পনা করে কেউ সব কিছু করেছে৷ সঠিক সময় আর প্রমাণের অপেক্ষা শুধু৷
আজ এ উপলক্ষে মিটিং ও ডেকেছে রুদ্র, নির্বাচনের আগে যেন তার দলের কেউ কোনো প্রকার ঝা'মে'লা না করে কিছু নিয়ে তা বলার জন্য৷
এখন অনেকেই চাইবে যে রুদ্র বা তার দলের সদস্যরা ঝা'মে'লায় জরায়৷ কোনো কিছু নিয়ে কিঞ্চিৎ দাগ পরলেও বড় সমস্যা হয়ে যাবে৷
আজ কুয়াশাকে জোর করেই ওদের বাড়িতে আনিয়েছে রুদ্রের চাচি৷ এ নিয়ে বেশ ভয়ে আছে রুদ্র কুয়াশা একটুও যদি আঁচ করতে পারে তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে৷ মেয়েটা রাজনীতি এত ঘৃণা করে কেন তা রুদ্রর অজানা৷ রুদ্র চায় কুয়াশা সব তার মুখে শুনুক৷ আজকের দিনের ঝামেলা মিটে গেলেই রুদ্র কুয়াশাকে জানাবে সবটা৷
দুপুরের আয়োজনের জন্য রান্না চলছে রুদ্র এতক্ষণ এখানেই ছিলো৷ কুয়াশা কি করছে তা দেখার জন্য উপরে এলো৷ আজ রুদ্রের চাচা বাড়িতেই আছে লোকটা বেশ অভিমানী রুদ্র বেশ ভালো করেই বুঝে ওর এমন রাজনীতিতে জড়ানো পছন্দ হচ্ছে না তার৷
বাড়িতে আসতেই কুয়াশাকে দেখতে পেলো৷ চুপচাপ সোফায় বসে আছে মুখটা চুপসে আছে কেমন পাশে রাফান, আরোহী, প্রান্ত৷ প্রান্ত বেশ ক্ষানিক্ষণ আগে এসেছে৷ কুয়াশার এমন কোলাহল পছন্দ হচ্ছে না বুঝেলো রুদ্র৷
কুয়াশার সামনে গিয়ে সবার সামনে বললো,
"উপরে আসুন কুয়াশা কথা আছে৷"
কুয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকালো৷ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো প্রান্ত, আরোহী হাসছে৷ রাফান কেমন করে তাকিয়ে আছে৷
রুদ্র দাঁড়ালো না আর, কুয়াশাও যেন এখান থেকে যাওয়ার পথ পেলো৷ বাড়িতে অচেনা কেউ নেই তবুও কেন যেন ভালো লাগছিলো না কুয়াশার৷ লোকটা বড়ই নির্লজ্জ!
গুটি গুটি পায়ে অজস্র সাহস নিয়ে ঢুকলো রুদ্রের ঘরে৷ জরতা তার পিছু ছাড়ছেই না, কালই মা ফোন দিয়ে বললো ও যেন রুদ্রর সাথে খারাপ ব্যাবহার না করে ছেলেটাকে তার বেজায় ভালো লেগেছে৷ সে বিয়ে দিলে রুদ্রের সাথেই দিবে৷
এখানে এসে রুদ্রকে পেলো না৷ ঘরটা মোটামুটি অনেক বড় অন্যের ঘরে নিজের একটা তৈলচিত্র ও পেলো নিচে তার মামার সাইন বুঝলো এটা তার মামাই দিয়েছে৷ বারান্দায় গিয়ে দাড়াতেই রৌদ্রের তীর্যকতা চোখে লাগলো৷ রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে এখানেই অন্য দিকে মুখ করা৷ এই শীতেও লোকটা ঘেমে একাকার সাদা পাঞ্জাবিটা পিঠের সাথে লেপ্টে আছে৷
নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করেই ঘুরে তাকালো রুদ্র৷ মেয়েটা এসেছে তাহলে৷ কুয়াশা একবার রুদ্রকে পরখ করলো স্বাভাবিক কন্ঠেই প্রশ্ন ছুড়লো,
"ডেকেছিলেন আমায়?"
রুদ্র হাসলো, সাধারণ কথাটায় যেন অসাধারণতা পেলো৷ মেয়েটার সব কথাই ওর অসাধারণ মনে হয়৷ ইচ্ছে করে বলতে 'আপনি কথা বলুন আমি শুনবো৷'
"এখানে খারাপ লাগছে?"
রুদ্রের প্রশ্নে রুদ্রের দিকে তাকালো মিনমিনিয়ে বললো,
"আমার ঢাকা শহরটাই দম বন্ধ লাগে৷"
রুদ্র ভরকালো৷ মেয়েটা কখনো বানোয়াট কথা বলেই না সব সময় নিজের মনের কথায় বলে৷ একটু কি বলা যেতো না 'ভালো লাগছে?' এমন কেন?
"আমায় নিয়ে আপনি কি এখনো দ্বিধায় আছেন কুয়াশা?"
হঠাৎই রুদ্রর অসময় এমন প্রশ্নে হাসলো ক্ষানিকটা সে৷ ছেলেটা প্রেমিক মনেই থাকে নাকি সবসময়? কুয়াশা বেরস কন্ঠে উত্তর দিলো,
"আমি আপনাকে নিয়ে দ্বিধায় আছি রুদ্র৷ 'ভালোবাসা' বাক্যটায় আমার কিঞ্চিৎ ও বিশ্বাস নেই৷ ভরসা নেই! মনে হয় এই বুঝি সব ভে'ঙে গুড়িয়ে যাবে৷
নিজেকে বুঝতে পারছিনা আমার সাথে যে সত্যি 'মায়া' নামক অঘটন টা ঘটে গেলো৷ মায়াযে ভয়ংকর বড়ই ভয়ংকর৷"
শেষের কথা গুলো কুয়াশা মিনমিনিয়ে বললো৷ রুদ্র খুশি হবে নাকি ভয় পাবে, নাকি কষ্ট পাবে বুঝলো না৷ আত্মা কম্পন ধরলো কেমন৷ কুয়াশা ফের বললো,
"ভালোবাসা, মায়া, অনুভূতি বড়ই বিশ্রি শব্দ৷ মানুষকে ভে'ঙে দেয়৷"
এইটুকু বলে থামলো ভারি নিশ্বাস নিলো বললো,
"ভালোবাসার সাথে কখনো 'সুখ' শব্দটা আসে না৷ ভালোবাসা কখনো কষ্ট ছাড়া কিছু দিতেই জানে না৷"
কুয়াশার শেষ বাক্য শেষ হতে না হতেই সামনে থাকা দাম্ভিক পুরুষটি চেপে ধরলো তার হাত৷ মৃধু টানে নিয়ে গেলো সন্তপর্ণে তার কাছে৷ দুরত্ব ঘুচলো অনেকটা তবে সীমা অতিক্রম করলো না সামনের মানুষটি তার৷ কিঞ্চিৎ ফাঁকা রেখেই নিজের কাছে টেনে নিলো৷ শক্ত হয়ে আছে তার মুখশ্রী শান্ত কন্ঠে বললো,
"সবার ভালোবাসা এক ভাববেন না কুয়াশা৷ আমায় তো কারো সাথে মেলাবেনি না৷ আপনার মনে ভালোবাসা নিয়ে কি খারাপ ভাবনা আছে তা আমার দেখার বিষয় না, আপনি চাইলেও না চাইলেও এখন আমার হতে হবে আপনাকে৷"
এইটুকু বলে থামলো, ক্ষানিকটা ভারী শ্বাস নিলো৷ কুয়াশা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তৎক্ষণাৎ রুদ্র এক অদ্ভুত উপাধী দিয়ে বসলো মনে মনে মেয়েটা বড়ই নির্লজ্জ এভাবে তাকিয়ে আছে কিভাবে? রুদ্র ক্ষানিকটা ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো,
"আমি নিজের ক্ষেত্রে বরই স্বার্থপর কুয়াশা৷ আমাকে ভোলাবালা প্রেমিক ভাববেন না যে প্রেমিকা যা চায় তাই হবে৷ এ ক্ষেত্রে আমি নিজের দিকটা বেশি দেখি৷ আপনি না চাইলেও আপনাকে আমারই হতে হবে৷ মানুষ সবসময় সব কিছুতে নিজের সুখ খুঁজে এটা তো জানেন? আমার সুখ আপনিটা জুরে আর আপনাকে আমার লাগবেই৷ মানুষের এ ক্ষেত্রে স্বার্থপরই হওয়া উচিত নিজেকে যা সুখ দেয় তার পেছনেই ছোটা উচিত তাতে যদি সুখটা নিজ থেকে ধরা না ও দিতে চায় জোর করেই সুখি হওয়া উচিত৷জীবনে সুখি হওয়াটা জরুরী কে কি চায় কে কি ভাবে তার দিকে নজর দিলে ক্ষতি ব্যাপক৷আর হ্যাঁ আমার ভাবনা টা নিজের দিকে নিতে যাবেন না আপনি আমার কাছেই ভালো থাকবেন এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন আপনার জন্যই ভালো৷"
বলে ছাড়লো কুয়াশার হাত কুয়াশা এখনো দাঁড়িয়ে আছে এক ধ্যানে৷ নিজ থেকে সরলো না৷ রুদ্র এবার নিজ থেকে পা বাড়ালো বাইরের দিকে৷
..
রনি আজকাল চুপচাপ হয়ে আছে বেশ তার মাথায় কি চলে কেউ জানে না৷ তিনদিন যাবত ঘরে বসে সারাদিন বি'ষা'ক্ত সিগারেটটা ফুকছে না ঘরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না নিজে বাইরে যাচ্ছে৷ ঘরের আশেপাশে সিগারেট ছড়ানো ঘরে ধোঁয়ার গন্ধ চারো দিকে৷ বিছানার পাশের টেবিলটায় খাবারের প্লেট পরে আছে তিন দিন আগের বাসি খাবার গন্ধ ছুটেছে৷
ছেলেটা তিনদিন যাবত এলকহল মিশ্রিত এই পানিয় খেয়ে আছে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটে তাঁর৷ নির্বাচন এগিয়ে আসছে তাও কোন ভাবনা নেই তার মাঝে৷ কাইফ এ পর্যন্ত বোধহয় হাজারটা ফোন দিয়েছে একটাও ধরেনি৷ এমন করলে কি করে হবে বুঝতে পারছে না সে ও৷ ওপাশ থেকে দরজা নক করতেই প্রান্ত বিরক্ত নিয়ে দরজার দিকে পরখ করলো তেজী কন্ঠে বললো,
"কি হয়েছে মা? জ্বা'লাচ্ছো কেন? বললাম না আমি না বের হওয়া পর্যন্ত ডাকবে না?"
ওপাশ থেকে রিনরিনিয়ে মলিন স্বর পাওয়া গেলো যেন অনিচ্ছাকৃত কেউ বললো,
"আমি রনি, দরজা খুলুন৷"
রনি হুড়মুড়িয়ে উঠলো৷ কান কে বিশ্বাস করলো না অবিশ্বাস্য কন্ঠে ফের বললো রনি,
"কে?"
"বেলি৷"
খানিকটা অবাক হলো বিস্ময় নিয়ে জ্ঞান শূন্য হয়ে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে খুললো তিনদিন পর দরজা টা৷ সাথে সাথে নাক কুঁচকে ফেললো সবাই৷
সামনে থাকা ব্যাক্তি টিকে দেখে ভ্রম মনে করলো এখনো রনি৷
তার আগেই তার ভ্রম কে সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে মেয়েটি বললো,
"আন্টি এবার যাই আমি? আমার এখানে ভালো লাগছে না আপনার অনুরাধা রেখেছি আমি৷ দয়াকরে আর থাকতে বলবেন না৷"
ব্যাপার টা বুঝলো রনি৷ ওর মা জোর করে আনয়েছে বেলি কে? নয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি বেলি আসবে৷ এসেছেতো মেয়েটা?
রনি তীর্যক কন্ঠে বললো,
"বেলি ঘরে আসুন আমার? কথা আছে আপনার সাথে৷"
বেলি অন্য দিকে তাকিয়েই নাক ছিটকে বললো,
"আপনার ঘরটা আর মানুষের যাওয়ার মত আছে? আর আমার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন৷ আপনার মত খু'নির কাছে কখনো আমি যাবো না৷ আন্টির অনুরোধে এসেছি এখানে আমি৷"
বলেই বেলি যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো৷ রনির রাগ রি রি করলো৷ মা-বোনের সামনেই কর্কশ কন্ঠে বললো,
"খু'নি উপাধি তো দিয়েই দিয়েছেন, প্রান্তকে একেবারে মে'রে দিলে আসবেন তো আমার কাছে বেলি? ওই প্রান্তর জন্যইতো আসছেন না মে'রে দেই ওকে আমি? একেবারে!"
বত্রিশ
চারো দিকে অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে আসছে, প্রকৃতি জানান দিচ্ছে সাঝের আগমন৷ গোধুলির অন্তিম সময় চলছে৷ রুদ্রের দেওয়া কড়া আদেশ ছিলো ও আসার আগে যেন না বের হয় কুয়াশা৷ ও এসে তারপর কুয়াশা আর আরোহী কে বাড়িতে দিয়ে আসবে৷ কিন্তু কুয়াশা এখনই যেতে হবে সামনে পরিক্ষা এমনি আজ সারাটা দিন এখানেই চলে গেলো৷ লোকটা কোন কালে বুঝেই না কিছু৷ প্রান্তর মা পরেছে মহা বিপাকে প্রান্ত ও নেই রুদ্র ও নেই রেদোয়ান ও নেই যে কুয়াশা কে দিয়ে আসবে৷ কুয়াশার কথাও ফেলা যাচ্ছে না সত্যিতো পরিক্ষার আগে কি এত রাত অব্দি কোথাও থাকা যায়? পড়া লেখার বিষয়ে সে খুব কড়া৷ রুদ্র তার ছেলে না হলেও সে রুদ্রকে প্রান্তর মত করেই বড় করেছে রুদ্রকে টেনে টুনে যদিও মাস্টার্স কমপ্লিট করিয়েছে কিন্তু ছোট ছেলেটাকে? অনার্সের গন্ডিই পার করাতে পারেনি৷ বাউন্ডুলে হয়ে গেছে রাজনীতিতে নেমেছে৷ দুটো ছেলের একটাও তার কথা শুনে না অন্তত ছেলের বউ গুলো যেন পড়ায় মনোযোগী হয় তা সে চায়৷ তার বান্ধুবিদের ছেলে গুলো পড়ায় বেশ মনোযোগী ছেলের বউ গুলো ও তেমন পেয়েছে৷
সে ছেলেদের দিক দিয়ে বলতে পারেনি তো কি হয়েছে ছেলের বউ দের কথাতো বলতে পারবে?
সে প্রথমে যেতে নাচক করলেও পড়ার কথা শুনে বলেছে, 'দেখছি কি করা যায়৷'
মাধুবিলতা যখন রুদ্রকে ফোন করার জন্য ডায়াল করবে ঠিক তখনি রাফান পিছন থেকে মলিন কন্ঠে বলে,
"আন্টি আমিতো আছি, আমি দিয়ে আসতে পারবো চিন্তার কারণ নেই৷"
মাধুবিলতাও ভাবছিলো রাফানকে দিয়ে পাঠালেই হয় কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো তাও একবার ছেলের অনুমতি নিয়ে নিক৷ ছেলেটা এ মেয়েকে নিয়ে বেশ ভীত আজ অনেকেই আবার কুয়াশাকে দেখেছে জেনেছে রুদ্রর হবু বউ তাই তার ভয়৷
যেখানে বাড়ির পাশেই শত্রু ভয় তো পাওয়ারি কথা৷ কোন দিকের রাগ কোথায় দেখায় বলা বড় দায়৷
মাধুবিলতা ক্ষানিকটা হাসলো বললো,
"রুদ্রকে একটু ফোন করে জানিয়ে তারপর বের হও তোমরা বাবা৷"
রাফানের কি হলো কে জানে? ফেকাসে হলো মুখ খানা মলিন হেসে সম্মতি জানালো৷ আরোহী ব্যাপারটা লক্ষ করলো হঠাৎই কেমন কম্পন সৃষ্টি হলো বক্ষে৷ অজানা আতঙ্ক আষ্টেপৃষ্টে ধরলো হৃদ ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম৷
রাফানের কিসের এত বিষন্নতা? কেন এমন নিকষ আঁধারে আচ্ছন্ন হলো মুখশ্রী? মস্তিষ্কে হানা দিলো অন্য এক কথা৷
মাধুবিলতা ফোন করলো ছেলেকে ওপাশ থেকে ধরলো না কেউ৷
এক বার না পাঁচ বার ফোন লাগালো ধরলো না এদিকে কুয়াশাও বলছে বাড়ি গিয়ে এসাইনমেন্ট করতে হবে৷ কুয়াশা বেশ বিরক্ত নিয়ে আছে৷ লোকটা সব ব্যাপারে নিজের মতামত ঠিক রাখে, বাড়াবাড়ি করে৷ একা গেলে কি হবে? একা যখন যেতে দিবে না নিজে কোথায় গিয়ে বসে আছে?
মাধুবিলতা না পেরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েই দিলো৷ ছেলে গুলো কান্ডজ্ঞানহীন কাজ করে৷ মেয়েটা যদি বাড়িতে থাকতো এত ঝামেলা হতো? না গেলে পড়ারো ক্ষতি হয়ে যাবে৷ চিন্তিত হয়েই কুয়াশাকে যাওয়ার অনুমতি দিলো এদিকে তার স্বামী ও বাড়িতে নেই যে ওনাকে দিয়ে পাঠাবে বাপ ছেলে গুলো তাকে জ্বালিয়ে মা'র'লো চিরকাল৷
রুদ্রর বাড়ি থেকে বের হতেই থমকে দাঁড়ালো কাউকে দেখে কুয়াশা৷ এত বছর পর অনাকাঙ্ক্ষিত কারো মুখোমুখি হতেই চমকালো কুয়াশা৷ অতী বিস্ময় নিয়ে স্থীর হয়ে দাঁড়ালো৷ তিরতির করে কম্পিত হলো শরীর বি'ষা'ক্ত কিছু সময়ের কথা স্মৃতিচারণ হলো৷ শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম৷ সামনের লোকটি বুঝলো না কিছু৷ কুয়াশা এখনো দাঁড়িয়ে আছে
"দাঁড়লি কেন কুয়াশা? চল যাবি না?"
আরোহীর কথা যেন কর্ণকুহরে পৌঁছালোই না৷ রাফান লক্ষ করলো মেয়েটা কাঁপছে এ শীতেও ঘাম ঝরছে৷ কুয়াশার দিকে এগিয়ে যেতেই জ্ঞান হারিয়ে নিচে পরলো৷ অস্পষ্ট কন্ঠে আওরালো,
" বাবা৷ "
ব্যাপারগুলো এত তাড়াতাড়ি ঘটলো রাফান ধরতে পারলো না৷ মাথাটা ফুটপাতের উচু ইটের মধ্যে পরেছে৷ আরোহী এগিয়ে এসে মাথায় হাত দিতেই ছিপছিপে কিছু অনুভব করলো হাত সামনে আনতেই র'ক্ত দেখে থমকালো৷ রাফান এখনো থম মেরে দাঁড়িয়েই আছে৷
আরোহী কম্পিত কন্ঠে বললো,
"র রাফান ওকে ধর হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে৷"
..
রিয়ান আশা নিখোঁজ মাস পার হলো৷ রিয়ানের খোঁজ পেয়েছেশহর থেকে কিছু দূর গ্রামের দিকে দেখা গেছে৷ দু-দিন যাবত দেখা যাচ্ছে সেখানে আয়াশের লোক নজর রাখছে আপাদত৷ নিয়মিত একটা গোডাউনে যাতায়াত করতে দেখা যায় ওকে৷ গোডাউনটা কাল ও গিয়ে দেখবে৷ সঠিক সময়ের অপেক্ষা শুধু সাথে সাথে দেখার পর ধরলে আশার খোঁজ পাওয়া যেতো না৷ তবে এত বছর পর এক অদ্ভুত জিনিসের মুখোমুখি হতে হলো৷ জ্ঞানশূন্য হয়ে পরলো যেন দাম্ভিক, শক্তিশালী, কঠোর পুলিশ অফিসার আয়াশ৷ এত দিন এত এত কেসে কত কিছুর সম্মুখীন হয়েছে তবুও এমন হয়নি আজ তাহলে প্রিয় বন্ধুর জীবনের ব্যপার বলে?
ওই মানুষ টা কে বলবে কি করে? যে কি না এত এত বছর ধরে অপেক্ষা করছে প্রেয়সীর ফেরার? সে মানুষ টা আদৌ ঠিক থাকতে পারবেতো?
আয়াশ নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে পায়চারী করলো কিছুক্ষণ সে বুঝতে পারছে না করবে কি? দীর্ঘ শ্বাস টেনে মুঠোফোন নিয়ে ফোন করলো৷ ফোনে কিছু বলতে পারবে না তাই আসতে বললো মেহরাব কে৷
রাতসারে নয়টায় দেখা মিললো মেহরাবের৷ নেতিয়ে যাচ্ছে দিন দিন সুঠাম দেহটা দাম্ভিক মানুষ টা হারিয়ে যাচ্ছে৷ প্রেম বড়ই তিক্ত মানুষ কে মিহিয়ে দেয়৷ অভ্যন্তর ক্ষ'ত বি'ক্ষ'ত করে দেয়৷
মেহরাব আসতেই মলিন মুখেও মনকাড়া হাসি দিলো৷ যা বলবে যা দেখাবে তা দেখে আদৌ এ হাসিটা থাকবে কি? দেখাবে কি করে ও?
"তা বল কেমন আছিস? আজ হঠাৎ জরুরী তলব?"
ভাবনার সুতো কা'ট'লো আয়াশ কিছুটা নড়েচড়ে বসলো বললো,
"আছি ভালো তুই কেমন আছিস? ঢাকা গিয়েছিলি শুনলাম?"
"আমিও ভালো আছি৷ হ্যাঁ এক দিনের জন্য গিয়েছিলাম, মেয়েটা তো কেমন জানিস? অন্যের কাজ করি না এলে চাকরিটা থাকতো? ওসব পরে বললো অনেক কথা৷ তুই ডেকেছিস কেন বললি না?"
আয়াশ থমথমে হয়ে রইলো কিছুক্ষন শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিবেশ তৈরি হলো৷ গুমোট, নিরবতা চারোদিকে ভর করলো গলা আটকে এলো৷
জীবনের প্রথম এমন মূহুর্তের সম্মুখীন হতে হলো গর্জে ওঠা পুলিশ অফিসারও নেতিয়ে গেলো থমকে গেলো৷ এত দিন যে তারা এক ভুল ভাবনা নিয়ে ছিলো বুঝাবে কি করে ছেলেটাকে? বলবে কি করে সব? কথা যেন বের হতেই চাইছে না আয়াশে৷
এত দিনের সব ভাবনা বিফলে, ওরা ভুল, সব ভুল৷ এত বড় একটা ভুলের মাঝে এত দিন কা'টি'য়েছে মেহরাব৷ ওর সব অপেক্ষা শেষ, মাটিতে মিশে গেলো অনুভূতি৷ ছেলেটা নিজেকে সামলাবে কিভাবে? অমানিশার ন্যায় বন্ধুর জীবনটাও ঘুরঘুটে অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো৷ ওই আকাশে তো তাও অমানিশা চিরস্থায়ী রয় না কিন্তু এই মানুষটার জীবনটা কি হবে? মিথ্যে আশায় দিন কা'টা'লো? এমন একটা পরিস্থিতির কেন সম্মুখীন হতে হলো? অন্যের দুঃসংবাদ দিতেতো আয়াশের কম্পন ধরে না? আজ এমন কেন?
" চুপ কেন তুই? বলছিস না যে কিছু? কার ধ্যানে হঠাৎ মগ্ন হলি বলতো?
আয়াশের ফের ধ্যান ভ'ঙ্গ হলো৷ ঠিকঠাক হয়ে উঠে ধারালো ধাতস্ত হয়ে শ্বাস নিলো ড্রয়ের থেকে একটা ফাইল বের করে মেহরাবের দিকে আগিয়ে দিলো৷ আয়াশের চোখ মুখ শক্ত৷ মেহরাব একবার আয়াশের দিকে তাকিয়ে ফাইলটা নিলো৷
ফাইলটা খুললো চোখ বুলালো ফাইলের উপর কিছুক্ষণ৷ আয়াশ খেয়াল করলো থম মে'রে বসে আছে ছেলেটা ফাইলটা হাত থেকে পরে গেলো অস্ফুট কন্ঠে বললো,
"মায়ার ডেথ সার্টিফিকেট?"
তেত্রিশ
হসপিটালের করিডরে বসে আছে আয়াশ পাশেই বসে আছে মেহরাবের বোন মেহনাজ অধীর আগ্রহে বসে আছে ভাইয়ের আশায়৷ হৃদয় আজ তার পু'ড়'ছে আ'তংক বিরাজ্জ করছে একদিকে মেয়ে আরেক দিকে ভাই৷ হীম গেছে ঢাকার উদ্দেশ্যে মেয়েও হসপিটালে ভর্তি জ্ঞান ফিরেনি এদিকে ভাই এরো অবস্থা ভালো নেই৷ মেহনাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে টলমলে আঁখি জোরায় ভাইয়ের প্রতি অজস্র অভিমান৷
ভাইটা এত পাষাণ হলো কি করে? ও কি জানে না ও ছাড়া হীম কুয়াশা আর তার কেউ নেই? ও কি জানে না ওর আপার কেউ নেই মাথায় হাত রাখার মত?
ভালোবাসাটা শুধুই কি মায়ার জন্য ছিলো? মেয়েটার মৃ'ত্যুর সংবাদ শুনে নিজেকে সামলাতে পারলো না এই ভেবে আমার কিছু হলে তিনজন মানুষ একা হয়ে যাবে?
এ শহর যে বড়ই পাষাণ পঁ'চে গলে পরে থাকলেও খবর নেওয়ার মত কেউ নেই৷
দুনিয়াটা বৃহৎ প্রিয় মানুষের কিছু হলেই বোঝা যায়৷ মেহনাজের মাথা ফাঁকা লাগছে৷ তাদের মাথায় হাত রাখার মত যে কেউ নেই মানুষ টার কিছু হলে থাকতো কি করে?
আয়াশ ধাতস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ হয়তো এই তদন্ত টা সে উনিশ বছর আগে করলে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না? পালিয়েছে ভেবে কেস টা ফেলে রেখেছিলো৷ জ্ঞানহীন লাগছে এখন, কয়েকদিন আগে যখন রিয়ানের খোঁজ পাচ্ছিলো না তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে রিয়ানের অনেক কাছের একজন বন্ধু আছে যে ফরেন্সিক ডাক্তার৷
আশার ডায়েরিটা ঘাটাঘাটি করেও এই লোকটার কথা জানতে পেরেছিলো৷ পরের দিন ডাক্তার কে অনেক জিগ্যাসাবাদ করা হয় তখন আয়াশের সন্দেহ হয় লোকটার হাবভাবে সে দিনি৷ আয়াশ লোকের মাধ্যমে সে ডাক্তারকে নজরদারি চালায়৷
দু-দিন পর পলাতক অবস্থায় ডাক্তার কে আয়াশ এরেস্ট করে তখনই ভয়ে সবটা বলে৷
উনিশ বছর আগেই মায়া মা'রা গেছেন৷ সে দিন মায়া পালায়নি মে'রে'ছে রিয়ান মায়াকে ধর্ষণ করে৷ পরবর্তীতে মায়ার বাবা দেখে নেওয়ায় মায়ার বাবাকেও বালিশ চেপে মা'রে'ন রিয়ান৷ এসব ভাবতেই আত্মা কাঁপে আয়াশের৷ আশার ডায়েরিতে লেখা প্রতিটা শব্দ, বাক্য গুলোর অর্থ বুঝতে পারে৷
মেয়েটা কত নিকৃষ্ট হলে বাবা আর বোনের খু'নির সাথে থাকতে পারে? এ মেয়েকেই কি'না আয়াশ পছন্দ করতো৷
এখন নিজের প্রতি নিজের ঘৃ'ণা হয়৷ এ মেয়ের জন্য নাকি বিয়ে করেনি সে? নিজের কাছের বন্ধুকে পর্যন্ত কখনো নিজের অনুভুতির কথা জানতে দেয়নি৷
এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি আছে আয়াশের, সে অ'ক্ষ'ত চায় আশাকে৷ কাল খোঁজে বের হতো কিন্তু মেহরাবের এ অবস্থায় আর যেতে পারলো না৷
মেহরাব কে সন্ধ্যা রাতে এখানে আনা হয় এখন প্রায় মধ্যরাত৷ মায়ার ডে'থ সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর আয়াশ ভেবেছিলো বন্ধু বন্ধু হা'ম'লে পরবে ওর উওর জিগ্যেস করবে আমার মায়াকে আমার কাছে অ'ক্ষ'ত এনে দিলি না কেন৷
কিন্তু লোকটা তখনই জ্ঞান হারায়৷ এখানে আনার পর জানতে পারে স্ট্রো'ক করেছে ছোট খাটো৷ ছেলেটা সুস্থ হওয়ার পর সামলাবে কি করে? এখনি আয়াশের বক্ষ কে'পে উঠছে৷ মেহরাব কে ঠিক হতে হবে বোনের জন্য হলেও ঠিক হতে হবে নয়তো এদের কে সামলাবে? এদের মাথায় কে হাত রাখবে? কে ছাওনি হবে?
কাজ করার ইচ্ছা শক্তি কিছুই পাচ্ছে না শরীরের জোর দিয়ে ধাতস্থ হয়ে আছে মাত্র৷ যখন মনের জোর কমে যায় তখন শরীরের জোর আর থাকে কতটুকু?
..
মধ্যরজনী চলছে ইট পাথরের বিল্ডিংটা জুরে ওষুধী তীব্র গন্ধ ভরপুর৷ এ নাকি চিকিৎসালয়? মানুষের সুস্থ থাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্র অথচ এখানে কোন সুখ নেই৷ এখানে মানুষ কে শুধু শারীরিক ভাবে সুস্থ করা হয় কিন্তু রোগীর সাথে থাকা সুস্থ মানুষ গুলো অজশ্র আশা নিয়ে মনের ব্যামো নিয়ে প্রিয় মানুষটির আশায় থাকে অপেক্ষার প্রহর গুনে৷ গুমোট বাধা পরিবেশ মাঝে মাঝে ডাক্তার নার্সকে দেখা যাচ্ছে তারা তাদের কাজে নিয়জিত৷ কেউ কেউ করিডরের শারি শারি চেয়ারে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে কেউ বা অপরেশন থিয়েটারের সামনে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে প্রিয়জনের আসার অপেক্ষায়৷
রাফান তটস্থ হৃদয় নিয়ে বসে আছে৷ রুদ্রও থমথমে হয়ে বসে আছে৷ কুয়াশাকে হসপিটালে নিয়ে আসার আধা ঘন্টা পর রুদ্র ফোন তুলেছে৷ ততক্ষণে প্রান্তর মা মাধুবিলতা এসে পৌঁছেছে৷ আসার আগে রুদ্রকে জানানো হয়নি কুয়াশার কথা সে ধুধু বলেছিলো,
"তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়৷"
বলেইবসে ফোন রেখে দিয়েছিলো৷ রুদ্র হসপিটালে আসার পর সবটা জানালে কাউকে কিছু বলেনি শুধু মাধুবিলতা কে বলেছে,
"আমি বলেছিলাম ছোটমা ওকে আমি না আসা পর্যন্ত ছেরো না৷ সুস্থ রেখে গেলাম তোমার কাছে এসে এমন অসুস্থ, অ'জ্ঞা'ন দেখতে হলো৷"
মাধুবিলতা ছেলের এমন কথায় বেশ হতা'শ হয়েছিলো৷ সে ও হয়তো তখন ভাবছিলো রাফানের ভরসায় ছাড়লাম রাফান সে প্রতিদান দিলো না? ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস নেয় রাফান৷ মেয়েটার ক্ষ'ত ওকে বিক্ষ'ত করে৷ রুদ্র রাফানকে কিছু বলেনি৷ তখন অজ্ঞান হওয়ার কারণ বুঝলো না রাফান৷ লোকটা কে দেখে কুয়াশা এমন করছিলো কেন? কুয়াশা কি চিনে?
হীম ঘন্টা ক্ষানেক হলো এসে পৌঁছেছে এখানে৷ নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার পথ এত দিন কঠিন না লাগলেও ছেলের আজ যেন কঠিন লাগছিলো সব৷ দুঃখের সময় নাকি পার হয়ই না ওদিকে মামার অবস্থা বেজায় খারাপ এদিকে বোন হসপিটালে ভর্তি৷ রাস্তা যেন ফুরাতেই চাইছিলোনা বাইক চালানোর ক্ষমতা হারিয়ে বসছিলো বার বার৷
পরে গিয়ে মাথা ফা'টিয়ে বসে আছে বোন৷ জ্ঞান ফিরেছে তবে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে আজ রাত টা এখানেই রাখবে৷ কিছু নিয়ে বেশ চিন্তিত কুয়াশা আপনমনে কিছু নাকি বিরবির করছিলো৷ ক্ষত টা গভীর ছিলো তাই আজ রাত টা রেখেছে নয়তো জ্ঞান ফেরার পর ছেড়ে দিতো৷ কি নিয়ে চিন্তিত হবে? ওর বোন কে কখনো এমন দেখেইনি হীম৷ নিজের সব কিছু নিয়ে অনেক যত্নবান তার বোন তাহলে হঠাৎ কি হলো?
পাশেই বসা রুদ্র তাকেও বেশ চিন্তিত লাগছে৷ লোকটা ওর বোনকে বেশ ভালোবাসে তা পদে পদে বুঝিয়ে দেয়৷ আরোহী প্রান্তদের বাড়িতে আছে একা তাই ফ্লাটে পাঠায়নি রুদ্র৷ রাফান, প্রান্ত, হীম আর রুদ্র আছে হসপিটালে৷ রুদ্র বলেছিলো সে একা থাকবে কিন্তু রাফান আর হীম নাচক করলো সাথে প্রান্ত ও৷ রুদ্রকে এখনো মামার ব্যাপারটা জানানো হয়নি৷ কুয়াশাকে কিছুদিন পর জানাবে ভাবলো আপাদত রুদ্রকে জানাতে বলেছে ওর মা৷
"ভাইয়া মামা স্ট্রক করেছে৷"
আকষ্মিক হীমের কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই বিস্মিত হলো রুদ্র থমথমে মুখশ্রীতে বিস্ময় ভাব ফুটলো হীমের দিকে তাকালো তটস্থ কন্ঠে বললো,
"কি বলছো? মামা স্ট্র'ক করেছে মানে? কখন? আগে জানাওনি কেন?"
হীম অশ্রুসিক্ত টইটুম্বুর আঁখি গুলো নামিয়ে নিলো তি'ক্ত শ্বাস টানলো৷ নিজেকে স্বাভাবিক করার তীব্র চেষ্টা চালালো সে যে ছেলে কাঁদলে লোকে খারাপ বলবে যে? ছেলেরা কান্না করে নাকি? শক্ত পোক্ত মনে সব সামলাতে হয় এখন যে তারই সব টা সামলাতে হবে ভে'ঙে পরলে চলবে না৷ চোখের পানি গুলোর কাছে বারংবার নিষেধাজ্ঞা জারি করলো৷ সামলাতে গিয়েও যেন পারছে না কোন দিক সে সামাল দিবে? মামা কেমন আছে? বোনটা ব্যাথায় নিশ্চয়ই ভিতর ভিতর কাতরাচ্ছে? কেন এমন অজ্ঞান হলো হঠাৎ? কি হয়েছে ওর বোনের? অসুস্থ ছিলোনা তো ওর আপু তাহলে কেন হঠাৎ অসুস্থতা এলো?শক্তপোক্ত মানুষ গুলো কষ্টে আছে সে তো নরম হৃদয়ের৷
হীম বললো সবটা রুদ্র যেন এক মূহুর্তের জন্য নিজেকে মেহরাবের জায়গায় বসালো৷ সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এমন তিক্ত খবর কেন এলো? হঠাৎ রুদ্রর স্মৃতিচারণ হয় মেহরাবের কিছু কথা, "আমি আমার সমাপ্তিকাল পর্যন্ত তার অপেক্ষা করবো৷"
কেঁপে উঠলো রুদ্রর বক্ষ৷
হীমকে জানালো আগেই যেন কুয়াশাকে এসব না জানায়৷ কুয়াশাকে রেখে কাল নারায়ণগঞ্জ যাবে একবার ভাবলো৷ লোকটা যেন সুস্থ হয়ে উঠে৷
"ভাইয়া আপু কি অসুস্থ ছিলো? হঠাৎ এমন অজ্ঞান হয়ে গেলো কিভাবে? রাফান ভাইয়া বলছিলো কাউকে দেখে আপু বেশ ভয় পেয়েছিলো?"
হীমের কথায় মাথা তুলে তাকালো রুদ্র একবার রাফানের দিকে তাকালো অতঃপর তপ্ত শ্বাস টেনে বললো,
"তোমার বাবাকে দেখে জ্ঞান হারিয়েই৷"
চৌত্রিশ
বিষন্নতায় মোড়ানো ভোরের আগমন, আধাঁর কাটিয়ে ভোরের আগমন অথচ এই ভোরে নেই কোন আনন্দের চিহ্ন৷ বিষন্নতা, ক্লেশ, বেদনায় জরজরিত এক প্রভাত৷ আবছা আঁধার এখনো অন্তরিক্ষে রাজ করছে৷ ঘড়ির কাটা ছয়টা পয়তাল্লিশে৷ হীম নিস্তব্ধতা নিয়ে বসে আছে রুদ্রর পাশে৷ বক্ষ কঁম্পিত, তটস্থ৷ হঠাৎ আবার সেই মানুষটির সাথে কি করে দেখা হলো তার বোনের? আর কেনই বা হলো?
লোকটার কথা তো ভুলে যেতে চায় সবাই৷ লোকটার জন্য নিজের শরীরের র'ক্তের উপর তীব্র ঘৃণা জন্মায়৷ প্রতিনিয়ত ঘিন ঘিন করে হীমের শরীর৷ ইচ্ছে হয় সব শরীরের শিরা উপশিরা কে'টে র'ক্ত গুলো বের করে ফেলে দিতে৷ লোকটার রক্ত ওদের শরীরে বইছে নিজের উপর নিজের তীব্র রাগ জন্মায়৷ কেন এ পৃথিবীতে ওই লোকটা ওর বাবা ওই পরিচয়ে আসার আগে ম'র'ণ হলো না?
রুদ্র যখন বললো, 'তোমার বাবাকে দেখে জ্ঞান হারিয়েছে৷ '
বেশ বিস্মিত হয়েছিলো হীম৷ রুদ্রকে হীম খুব ভালো করে চিনে ওই লোকটার সাথে রুদ্রের ঝা'মে'লা এ ও জানে৷ সেই ঝা'মেলার জন্যই রুদ্র ওদের বাড়িতে ছিলো এত মাস৷ প্রান্তর মাধ্যমেই রুদ্রকে চিনে হীম ভার্সিটিতে সিনিয়রদের সাথেই বেশি চলাফেরা হীমের সেই সুবাদে প্রান্তর সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক৷
বাবার কথা রুদ্রের মুখে শোনায় বেশ ভীত হয়েছিলো হীম যদি বোন কে না বিয়ে করে? পরক্ষণেই তার ভাবনাকে বিপরীত মুখী করে দিয়ে রুদ্র ধাতস্থ কন্ঠে বলে,
" ভয়ের কারণ নেই কুয়াশাকে আমি ভালোবাসি৷ ওকে আমি সকল পরিস্থিতিতে আগলে রাখবো৷বোঝাপড়াতো আমার সেই লোকটার সাথে৷"
এর পরে ওদের তেমন কোনো আলচনা হয়নি জিগ্যেস করা হয়নি ওই লোকটা রুদ্রদের বাড়ির সামনে কি করছিলো৷ ওর বোনকে ক্ষত করবে না তো আর? ওই লোকটা যে ওদের বাবা এটাইবা জানে কি করে রুদ্র? হীম আপাতত এসব কথা গুলো থেকে নিজেকে শান্তি দিতে চাইছে সব মাথার উপর দিয়ে চাচ্ছে৷ বোনকে বাড়িতে নিয়ে যাবে একবার ভাবলো পরক্ষণে আবার ভাবলো বাড়ি নিয়ে গেলে মামার কথা কি বলবে? যে অন্তর্মুখী তার বোন কষ্ট পাবে তা কারো কাছে বলবেও না কারো সামনে কাঁদবেও না একা একা হাজার কিছু ভাববে অসুস্থ হয়ে পরবে আরো৷ কিন্তু এখানে রেখে গেলে কে তেমন দেখাশোনা করবে? রুদ্র আছে বলে ক্ষানিকটা ভরসা পায় হীম৷
হোক না বড় বোন? বোন তো? দায়িত্ব তো ওরই? ও আর মামা ছাড়া কে আছে বোন আর মায়ের? রুদ্র এখন অনেকটা স্বস্তি দেয় তাদের অবশেষে বোনের ছায়া হয়ে তো কেউ আছে? মায়ের মত কষ্ট যেনো বোন না পায়৷ সব ভালোবাসা যদি বেইমানীতে পরিনত হয় তাহলে কি থাকে ভরসা ভালোবাসায়? হীম জানে ঠ'কা'বে না রুদ্র কুয়াশাকে৷ আগলে রাখবে সবটা দিয়ে৷
..
হঠাৎ প্রেমিকের বদলে যাওয়া সব প্রেমিকার হৃদয়ে ক্ষ'ত সৃষ্টি করে৷ ছোটখাটো ক্ষত নয় বিষাদ মাখা বড়সড় ক্ষ'ত৷ যে মানুষ টা কারণে অকারণে তার পিছনে পরে থাকতো সে মানুষটার অবহেলা যে কতটা হৃদয় বিদারক তা অবহেলিত মানুষটি জানে৷ তার অবহেলা বারংবার হৃদয়টায় আ'ঘা'ত করে৷ এইতো একটু একটু করে নিজের কাছে টানলো হঠাৎ কি হলো? হঠাৎ কেন পালটে গেলো? সদ্য ভালোবাসায় পুলকিত হৃদটা বিক্ষত হচ্ছে বেলির৷
এখন যে তার পাগলামি করতে ইচ্ছে করছে, এই অবহেলা শাস্তি দিবে বেলি ভয়ানক শাস্তি দিবে তবে মানুষটাকে নিজের করে৷ প্রান্তকে বেলির চাই৷
সে দিনের পর প্রান্ত ঠিক মত কথা বলছে না৷ আগের দিন থেকে ফোনই ধরছে না বেলির৷ ও জানে ওদের বাড়িতে কাল অনুষ্ঠান ছিলো কিন্তু ও কি একটা বারো দেখেনি?
বেলি ছাদে পায়চারি করছে, প্রান্তর করা পাগলামি গুলো ও করছে ভাবতেই বিস্মিত হয় বেলি৷
মধ্যাহ্ন চলছে, আজ রোদের মাত্রা তীব্র৷ রুক্ষ রোদের তীর্যক রশ্মি শীতেও যেন চামরায় জ্বলন সৃষ্টি করছে৷ রৌদ্রের উত্তাপে জ্বলছে সর্বাঙ্গ৷ প্রান্তকে একটু আগে বাড়ি ফিরতে দেখেছে বেলি৷ সকাল থেকে না খেয়ে বারান্দার কাছে ঠায় বসেছিলো ওর কক্ষের বারান্দা থেকে প্রান্তদের মেইন গেইট সরাসরি দেখা যায়৷
প্রান্তর মাকে সকালে খুব তাড়াহুড়ো করে কোথাও বের হতে দেখেছে এর পরে আর আসতে দেখেনি প্রান্তর বাবাও সকালে বেরিয়েছে তার সাথে চোখাচোখি ও হয়েছে বেলির৷
লোকটা অমায়িক ওদের সাথে এত ঝামেলা তাও দেখলে হাসি দিয়ে বলবেই 'মা ভালো আছো?' প্রান্তদের বাড়ির সবাই অনেক ভালো৷
রুদ্রের হবু বউকে দেখার ইচ্ছা ব্যাপক বেলির৷ হয়তো মেয়েটা অনেক সুন্দর? ওদের মতই প্রানবন্ত মানুষ? রুদ্র, প্রান্ত ওদের বাড়ির সবাই বেশ প্রানবন্ত৷ গম্ভীর্যতা যেন তাদের সাথে যায়ই না৷
তার বড় আপা রুদ্রকে পছন্দ করতো কিন্তু তা শুধু মনে মনেই সাহস দেখিয়ে বলতে পারেনি কখনো৷
বেলি বুঝতো আপার দৃষ্টি৷ প্রতিদিন সকালে দাঁড়িয়ে থাকতো রুদ্রর ভার্সিটিতে যাওয়ার সময়৷ আর দীর্ঘশ্বাস টানতো হয়তো হৃদয় কে শান্তনা দিতো?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ছাদের দরজাটা লাগালো এদিক সেদিক তাকিয়ে ওর বাবা নেই বাড়িতে তাই চিন্তা নেই৷ রেলিং এর উপর উঠে বসলো নির্ভিক চিত্তে! মাঝে কিছুটা ফাঁকা আছে এখান দিয়ে পরবে না পরলেও আটকে থাকবে মাঝেই৷ ছাদের বার্তি রডে ভর দিয়ে প্রান্তদের রেলিং এ উঠলো অতঃপর লাফিয়ে নামলো ছাদে৷ সাথে সাথে ধপ করে আওয়াজ হলো৷ আওয়াজ হওয়ার কিছু সময়ের মাঝেই পুরুষালী কন্ঠে ভেসে এলো, 'কে ছাদে?'
বেলি ঠোঁট কামরে আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো শিড়িতে কারো আসার শব্দ পেলো ভীত হয়ে তড়িৎ গতিতে ছুটে দরজার আড়ালে নিজেকে আড়াল করলো৷ বাড়ির কাজের লোক হলে কেলেংকারী হয়ে যাবে চেচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে৷
একদিন ওর আপার খরগোশ এ বাড়িতে এসে পরেছিলো ওর আপা ভয়ে ওকে পাঠিয়েছিলো৷ দারোয়ান আসতে দিলেও কাজের লোকটা দেখে চেচিয়ে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে ফেলেছিলো রীতিমতো ভিত্তিরহীন কথা বলা শুরু করে দিয়েছিলো ও নাকি ব'ম রাখতে এসেছিলো৷ সে দিনের কথা মনে পরলে হাসিও পাও রাগ ও হয় বেলির৷ প্রান্ত ধ'ম'কে চুপ করিয়েছিলো সেই মহিলা কে৷
কিঞ্চিৎ মাথা উচিয়ে উকি দিলো৷ আকষ্মিক চোখাচোখি ও হলো কাঙ্ক্ষিত সেই মানুষ টার সাথে৷ বিব্রত হলো বেলি৷ ইতস্ততা আষ্টেপৃষ্টে ধরলো৷ মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো দরজার আড়াল থেকে৷
তার আগেই প্রান্ত ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়িলো,
"তুই এখানে কি করছিস?"
চিকচিক করে উঠলো বেলির আঁখি যুগল, অভিমান গুলো উপচে পরলো৷ লোকটা অনেক দিন বাদ তুই সম্বোধন করলো৷ লোকটা হঠাৎ এমন করে কথা বলছে কেন? অভিমানের সাথে রাগ ও চড়া দিলো৷ প্রান্ত ব্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো হাত আঁকড়ে ধরে আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলালো কন্ঠে গম্ভীর্যতা নিয়ে বললো,
"রেলিং টপকে এসেছিস? কি সাংঘাতিক দেখি ব্যাথা পাসনিতো?"
বেলি উত্তর দিলো না এত দিন পর নাটক করছে৷ প্রেম উতলে উঠছে৷ বেলি নিজের হাত ছিটকে ছাড়িয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,
"খবরদার নাটক করবেন না৷ এত দিন যোগাযোগ না করে এখন দেখে নাটক করছেন?"
প্রান্ত বুঝলো কিন্তু অবুঝ রইলো৷ মেয়েটা ওকে ভুল বুঝছে? বুঝুক ভাঙাবে না ভুল ও৷ কিছু কথা স্মরণ হতেই প্রান্ত বললো,
"হেয়ালি করবিনা বেলি৷ এখানে কেন এসেছিস? তোর বাবা নেই বাড়িতে? কিছু বলার হলে বল নয়তো এখান থেকে বিদাই হ৷"
প্রান্তর এমন কথায় আহত হলো বেলি৷ চোখ মুখে বিষাদের ছায়া নামলো৷ কিছু কি হয়েছে? এমন করছে কেন প্রান্ত? ও কি ভুল করেছে? হঠাৎই মনে পরলো ও রনির বাড়িতে গিয়েছিলো প্রান্ত কি দেখেছে? অন্তর আত্মা কাপলো বেলির৷ সদ্য যৌবনে পা দেওয়া অষ্টাদশী মেয়েটারো ভয় জন্মালো বক্ষে হা'রা'নোর ভয়৷ প্রান্ত যে ওর পাগলামো হয়ে দাঁড়িয়েছে অভ্যাস হয়ে উঠেছে৷ হারাতে চায় না পারবে না৷
বেলি খপ করে হাত ধরলো প্রান্তর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
"কি হয়েছে প্রান্ত? এমন কেন করছেন? আমি কি কোন ভুল করেছি?"
প্রান্ত কিছু বললো না বেলি ফের বললো,
"এমন কেন করছেন? হটাৎ কেন পালটে যাচ্ছেন প্রান্ত? আমি তো জরাতে চাইনি আপনার সাথে এখন যখন আমি এসেছি কেন ফিরিয়ে দিচ্ছেন?"
প্রান্ত যেন আপন মনে হাসলো৷ মেয়েটা কত কিছু ভাবছে মেয়েটা বারংবার ওর অতল স্পর্শ করে এ মেয়েটা নিজেও জানে না ওদের সাথে কি হচ্ছে একটা মানুষ কি করে ওদের সবাইকে ঠকাচ্ছে৷ আকস্মিক প্রান্ত শূন্য মস্তিষ্কে একটা অদ্ভুতভাবে প্রস্তাব দিয়ে বসলো,
"বিয়ে করবি আমায় বেলি? তোর ওই বাবা আর মা কে ছেড়ে একেবারের জন্য আমার হবি বেলি? রাজি থাকলে এখন থেকে ও বাড়িতে আর পা দিতে পারবি না৷ এবার তোর ইচ্ছা কি করবি!ভেবে দেখ৷"
পয়ত্রিশ
অতঃপর পবিত্র পরিণয়৷ দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সে মাহেন্দ্রক্ষণ কাগজে কলমে মেয়েটা এখন তার অর্ধাঙ্গিনী৷ প্রান্ত ভাবেইনি এত সহজে রাজি হয়ে যাবে৷ দু'ঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পর ও যখন মেয়েটা কোন উত্তর দেয়নি তখন প্রান্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলো৷ হৃদয় কে ধাতস্থ করে কাটকাট কন্ঠে বলেছিলো,
"বাড়িতে যা বেলি৷ আমি ভাবির বাড়িতে যাবো ভাবি অসুস্থ৷"
কিন্তু মেয়েটা তখনো উত্তর দেয়নি কিছু, নিজের স্থান থেকে এক চুল ও সরেনি৷ প্রান্তর যেন মন ক্ষ'ত বি'ক্ষ'ত হয়েই চলেছিলো৷ বেলির উত্তর না পেয়ে প্রান্ত হাত ধরে টেনে বেলিকে উঠিয়ে বলে,
"আমার দেরি হচ্ছে বেলি, ও বাড়ি থেকে আমার অফিসেও যেতে হবে৷"
বেলি তখন বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিশুটি মেরে প্রান্তর বুকে লেপ্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলো,
"আমায় তাড়াবেন না প্রান্ত, আমি যাবো না৷ আমি আপনার কাছে থাকতে চাই৷"
প্রান্ত যেন তখন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলো না৷ খানিক্ষণের জন্য শ্বাস তন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো৷ এই কি সেই মেয়ে যে ওর আচরণে উত্যক্ত ছিলো? এ কি সেই মেয়ে যে ওকে দেখে বির'ক্ত হয়েছিলো? এ বেলি যে প্রান্তর অচেনা৷ মেয়েটার পাগলামো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকাশ পাচ্ছে৷ মেয়েটাকে যে ওর চাই প্রান্ত ভেবেই নিয়েছিলো আজই যা হওয়ার হবে এসপার উসপার করেই ছাড়বে৷ কারণ বলা যায় না পরবর্তীতে কি হবে৷ পরবর্তীর ধাক্কা সামলাবার আগে বেলিকে প্রান্তর চাই চাইই৷
অতঃপর বাড়ি থেকেই ভাইকে ফোন করলো ও জানে বাবাকে ফোন করে লাভ হবে না বাবা নাচক করবে তাই ভাই কে ফোন করে বলে,
"ভাই আমি আজ এখন বেলিকে বিয়ে করতে চাই৷"
ও জানে ওর ভাই হয়তো বুঝেছে ও কেন চাইছে এসব৷ রুদ্র এর প্রেক্ষিতে শুধু বলেছে,
"বেলিকে সব টা জানিয়েছিস? ও রাজিতো?"
প্রান্ত তপ্ত শ্বাস ফেলে উত্তর দিয়েছিলো,
"এখনো কিছু জানাইনি৷ তবে বিয়েতে ও রাজি৷ আমি ওখানে আসছি বেলিকে নিয়ে তুমি ব্যাবস্থা করো৷"
বলেই রেখে দিয়েছিলো প্রান্ত৷ আজ কুয়াশাকে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেছিলো৷ বিকেলেই রুদ্র নারায়ণগঞ্জ যাবে যাওয়ার আগে বিয়ের কাজ টা শেষ করতে চায় প্রান্ত৷ বিয়েতে বেলির মা উপস্থিত ছিলো৷ বড় ভাইয়ের আগে ছোট ভাইয়ের বিয়ে প্রশ্নটা সবার মাথায় আসলেও রুদ্রর কথায় কেউ কিছু বলেনি৷
মাধুবিলতা কুয়াশার প্রতি একটু দূর্বল হয়ে পরেছে তাই সে ক্ষানিকটা ভার ভার হয়ে আছে আপাদত এসব নিয়ে৷
মাধুবিলতার বেলিকে মন্দ লাগে না তবুও ছেলের তাড়াহুড়ো পছন্দ হলো না তার৷ মাধুবিলতা আর তার স্বামী দুজনেই ছেলের এহেন কান্ডে বেশ লজ্জিত৷ সবে মেয়েটাকে হসপিটাল থেকে আনা হলো কি ভাবছে মেয়েটা? তবে কুয়াশা ওদের ধাতস্থ করেছে এই বলে প্রান্ত হয়তো যা করছে ভেবেই করছে৷
কুয়াশাও ভেবে পায় না এসবের কারণ কি? রুদ্রর সাথেও কথা হয়নি কুয়াশার৷
মাধুবিলতা সবটা সময় কুয়াশার পাশেই রইলো৷ এ মেয়েটাকে তার দারুণ লাগে, কি সুন্দর পুতুলের ন্যায় চুপচাপ বসে থাকে মাঝে মাঝে এদিক সেদিক তাকায় প্রয়োজনে হাসে৷ তার যদি একটা মেয়ে হতো এমন? সে মাথায় তুলে রাখতো৷
বিয়ে পড়ানো শেষ হলো মাধুবিলতা এখানেই রান্না বসিয়েছে সে কিছুদিন এখানে থাকবে জানিয়েছে সবাইকে৷
বেলি লাজুক হয়ে গুটিশুটি মেরে কুয়াশার সামনে বসে আছে এতক্ষণ এখানে প্রান্ত ছিলো এখন নেই, মাঝে মাঝে একটু চোখ উঠিয়ে কুয়াশাকে দেখছে৷ এটাই রুদ্রর হবু বউ প্রান্ত আসার পর কুয়াশার সামনে এনে পরিচয় করিয়ে বলেছিলো,
"এটা আমার ভাবি, তোমার আপু৷ তুমি আপু বলেই ডাকবে৷"
কুয়াশা প্রান্তের কথায় হেসেছিলো খানিকটা সাথে বেলিও৷ বেলি কুশল বিনিময় করার পরই বুঝেছিলো মেয়েটা সল্পভাষী খুব একটা কথা বলে না৷ প্রান্তর মা কিছুক্ষণ পর পর জিগ্যেস করে ব্যাথা করছে, কিছু খাবে মেয়েটা মুচকি হেসে শুধু মাথা ধোলাচ্ছে৷
রুদ্রর পছন্দ অমায়িক হবে বোঝা যায়৷ এর মাঝেই আরোহী মেয়েটা অনেক কথা বলেছে৷ মেয়েটা একটু বেশি কথা বলে আর মানুষ কে হাসাতে জানে৷
বেলির ভাবনার মাঝেই হঠাৎ আরোহী ওসের দিকে তাকিয়ে বললো,
"কুয়াশা তোদের দুজনকে তো আমার কাছে একই দেখতে লাগেরে৷ পাশাপাশি বসলে মানুষ দুই বোনই বলবে৷"
রুদ্র সবেই এ ঘরে এসেছিলো আরোহীর কথা শুনে রুদ্রর মুখশ্রী কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পরে৷ মাধুবিলতার মুখটাও বিস্ময় ভাব৷
কুয়াশা বেলির পানে তাকালো বেলি হাসলো কিছুটা৷ রুদ্র এগিয়ে এসে আরোহীর প্রেক্ষিতে বললো,
"আল্লাহ বুঝে শুনেই সব ঠিক করে বুঝলে শালীকা? যেন আমাদের পরের প্রজন্মের চেহারা অন্যরকম না হয় তাই সবাইকে মিলিয়েই বানিয়েছে৷ ছোটমা কে দেখো একি লাগবে৷"
বলে কুয়াশার কাছে গিয়ে বললো,
"আসোতো একটু হাটাহাটি করো বসে থাকলে ভালো লাগবে না কাল সারা রাত হসপিটালে ছিলে এখন একটু হাটলে ভালো লাগবে৷"
বলে কুয়াশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে উঠালো৷
ফেকাসে রোদ আর ঠান্ডা হাওয়া শীতল করছে চারোপাশ৷ নিরবতা ছেয়ে আছে ছাদটা৷ শহুরে পরিবেশ গাড়ির হর্নের শব্দ আবছা আসছে তেরো তলার উপর খুব একটা শব্দ আসে না বললেই চলে৷ উপর থেকে নিচে তাকালে মনে হয় শূন্যে আছে ও এখনি টুপ করে নিচে পরে যাবে৷এখান থেকে নিচে পরলে শরোরের কিছুরই অস্তিত্ব থাকবেনা গুরো গুরো হয়ে যাবে হাড়গোড়৷
কুয়াশা ভাবলো এবার কিছু প্রশ্ন করা উচিত অনেক প্রশ্ন জর্জরিত হয়ে আছে যার উত্তর মেলেনি৷ কুয়াশার আ'ত্মা কম্পন ধরে লোকটির চেহারা মনে পরলেই৷
"আপনি বলেছিলেন সব টা জানাবেন আমায়৷ কেন নিজেকে লুকাচ্ছেন আমার থেকে? কে আপনি?"
রুদ্র নিজের দৃষ্টি কুয়াশার দৃষ্টির সাথে মেলালো নেত্র যুগল নামালো কুয়াশা৷ রুদ্রর হাসি প্রসস্থ হলো মিনমিনিয়ে বললো,
"আপনিতো দূর্বল না কুয়াশা তাহলে কাল এমন দূর্বল হয়ে পরলেন কেন হঠাৎ?"
কুয়াশা নেত্র যুগল আবেসে বন্ধ করলো তপ্ত শ্বাস টানলো৷ বক্ষ কেমন করে উঠলো৷ সে তো সত্যি দূর্বল নয়, 'বাবা' নামক জায়গা টা কি আসলেই এমন দূর্বল হয়? কিন্তু সে লোকটির জন্য তো কুয়াশার মনে কিঞ্চিৎ ভালোবাসা নেই? সে তো দেখেছে ওর মাকে নি'র্যা'তিত হতে৷ ফুপু আর বাবা মিলে মায়ের সাথে যা-তা আচরণ করতো৷
কুয়াশা এ উত্তর দিলো না পালটা প্রশ্ন করলো,
"আমি সে অমানুষটির কথা বলতে চাই না৷ আমি আপনার কথা জানতে চাই৷"
রুদ্র উত্তর দিলো না আজো৷ আজ দুরত্ব টা ঘোচালো নিজ থেকে বাহুটেনে নিজের কাছে আনলো হাতটা টেনে অনামিকায় চকচকে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে সি আংটির উপর প্রগাঢ় চুমু খেয়ে বললো,
"আমার পরিচয় আমারই জানা নেই কুয়াশা৷ আমার লক্ষে পৌঁছাতে আর সল্প সময় মাত্র৷ আমি যে দিন সে পরিচয়ে পরিচিত হবো সে দিন না হয় আমার পরিচয় টা দিবো? ততদিন একটু পাশে থাকুন না কুয়াশা? আমিও অব্যক্ত হয়ে আছে বলার অপেক্ষায় আছি! এখন আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন খুব বেশি প্রয়োজন৷"
..
মেহরাবের অবস্থা উন্নত বলা চলে না জ্ঞান ফিরেছে তবে ঘুমের ই'ন'জে'কশন দিয়েছে৷ ডাক্তার খারাপ কিছু দেখছে না৷ রোগী মানসিক বিধস্ত একটু মনের জোর প্রয়োজন তাহলেই সুস্থ হয়ে পরতো৷ কিন্তু এখন ওকে মনের জোর দিবে কে? কি বলে মনের জোর দিবে?
আয়াশ বের হবে রিয়ানের খোজে রায়ানের খোঁজ পেয়েছে যেখানে৷ আপাতত নজরদারি চলছে৷ রিয়ান এখনো টের পায়নি ওরা জেনেছে৷ ওই গোডাউনে আশা আছে তাও জানতে পেরেছেন৷ লোকটা বেশ ধূর্ত প্রকৃতির দেখলে মানুষ বলবে ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না৷ কিন্তু রহস্য লুকিয়ে আছে এত৷
রুদ্র এসে দেখা করে গেছে, কুয়াশার শরীর দূর্বল তাই এখানে থাকেনি৷ এর মাঝে পার হয়েছে এক দিন
কিন্তু এর মাঝেই ঘটে গেছে মহা কান্ড নির্বাচন এর জন্য যে হলফনামা জমা দিয়েছিলো সে সময় রুদ্র বেশ চিন্তিত ছিলো কারণ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি বা সমপর্যায়ের পদাধিকারী ব্যক্তিকে একটি প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে যে তাকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। যা কাইফ করতেন না কাইফ নিজেই হলফনামা পাঠিয়েছিলেন আর ঘটনাটি হলো হলফনামা অনুযায়ী যখন নির্বাচন কমিশন তদন্ত করতে চায় তখন খুটিয়ে কাইফের নানাবিধ কুকীর্তির কথা তারা জানতে পারে৷ হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে কিংবা তথ্য গোপন করলে মনোনয়নপত্র বাতিল, এমনকি পরবর্তী সময়ে নির্বাচনও বাতিল হয়৷ হলিফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়া ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৮১ ধারার অধীনে একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। পুলিশ কাইফ কে খুঁজছে কাইফ নিখোঁজ৷ এ যাত্রায় নমিনেশন টা রুদ্র পাচ্ছে সংসদ নির্বাচনে তা নিশ্চিত রুদ্র৷ আর সে জানে এখানে যেহেতু কাইফ নেই জীত তারই প্রতিপক্ষ দল একটু হাল্কাই৷ এ শহরের মানুষ রুদ্রকে ভালোবাসে৷ প্রতিপক্ষ যদি কাইফ ও হতো তাহলেও ভয় ছিলো না রুদ্রর৷
বেলিকে জানানো হয়নি প্রথমে কিছুই তবে জানতে পারে তখন বেলি যখন ওর মা অসুস্থ হলো৷ বড় এক সত্যের মুখোমুখি হলো৷ মানুষের সামনে মুখ দেখাবে কি করে ভেবে পায় না৷ এ ও ভেবে পায় না প্রান্ত, রুদ্র, ও বাড়ির সবার সামনে দাঁড়াবে কি করে?বেলি বেশ ভে'ঙে পরেছে তার এখন নিজের উপর নিজের ঘৃণা জন্মে গেছে৷ বাবা নামক মানুষ এমন হয় কি করে?
ছত্রিশ
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আয়াশ আর আশা৷ রু'দ্ধশ্বা'সকর এক মূহুর্ত৷ হৃদপি'ণ্ডটা আজ বেজায় বেহায়া হয়েছে নিজের মস্তিষ্কের কথা মানতেই চাইছে না৷ রিয়ান র'ক্তা'ক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে পরে আছে৷
ইতিমধ্যে বিরাট এক সংঘ'র্ষ হয়েছে৷ আয়াশ এসে ভেবেছিলো চারোপাশ থেকে ঘিরে ধরবে কিন্তু এর আগেই রিয়ানের লোক দেখে ফেলে ওদের প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই দু'জন কনস্টেবল আহত হয়৷
রিয়ানের খুব একটা লোক না থাকায় সহজেই ওদের কাবু করা গেছে রিয়ান না পেরে যখন পালাতে যায় হাতে গু'লি করে আয়াশ তখনই জ্ঞান হারায় রিয়ান৷ একজন মহিলা কনস্টেবল আশার হাত খুলে দিলো সাথে কাজের লোকটারো ওদের এখানে বেঁ'ধে রাখা হয়েছিলো৷ আয়াশের মনে হাজার প্রশ্ন আপাতত নিজের সব অবাধ্য অনুভূতি কে পিছনে ফেলে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি৷ আয়াশ রিয়ান কে দেখার জন্য সামনে এগোতে গেলেই আকস্মিক রিয়ান উঠে নিজের হাতের কাছে পরে থাকা ব'ন্দুক দিয়ে আশার বক্ষ বরাবর গু'লি ছু'ড়লো নিমেষে থমকে গেলো সব আয়াশ এসে রিয়ান কে ধা'ক্কা দিয়ে ব'ন্দুকটা ফেললো রিয়ান কে ধরলো৷ মহিলা কনস্টেবল এসে আশা কে ধরলো৷ আশা যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মুখে তার তৃপ্তিকর হাসি৷
এর মাঝেই আশা এক কান্ড ঘটিয়ে বসলো মহিলা কনস্টেবল কে ধা'ক্কা দিয়ে ফেলে আয়াশের ফেলা রিয়ানের সেই ব'ন্দুকটা র'ক্তা'ক্ত হাতে তুলে নিয়ে পর পর তিনটা গু'লি ছু'ড়ে দিলো রিয়ানের শরীর জুরে৷ আকস্মিক পুলিশের সামনে ঘটনা গুলো যেন সবার মাথার উপর দিয়ে গেলো৷
আশা তৃপ্তির হাসি নিয়ে নিচে লুটিয়ে পরলো মুখে এখনো তার আনন্দ খেলছে চোখ নিভু নিভু বন্ধ করেনি এখনো৷ সে অবস্থায়ই জোরে শ্বাস নিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
"আমায় বাঁ'চান অফিসার, খানিক সময়ের জন্য হলেও আমায় বাঁ'চান৷ আমার যে একজনের কাছে তার আমানত ফিরিয়ে দেওয়ার আছে৷"
এইটুকু বলে জোরে জোরে শ্বাস নিলো ফের বললো,
"আমি ম'রলেও আমার আপস নেই আমি যাকে অন্ধ ভাবে ভালোবেসেছি তার হাতে মৃ'ত্যু আমার৷ আমি চেয়েছিলাম তার হাতেই যেন মৃ'ত্যু হয় যেন আমায়৷ এ মৃ'ত্যু তৃপ্তির মৃ'ত্যু৷ তবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাঁ'চতে চাই আমি৷"
এইটুকু বলে থামলো চোখ খিঁচে বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করার তীব্র চেষ্টা চালালো আয়াশ এসে ধরলো৷ স্ট্রেচার আনা হলো৷ রিয়ানের পালস চলছে না সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে৷
আশাকে স্ট্রেচারে তোলা হলো ঘার কাত করে রিয়ানের দিকে তাকালো অতঃপর বললো,
"আমার আজ শান্তি লাগছে, বাবা-মা আর বোনের মৃ'ত্যুর প্রতিশোধ নিতে পেরেছি আমি৷অনেক কথা বলার আছে আমার মাহতাব ভাইয়ের হাতে তার প্রেয়সীর আমানত পৌঁছে দিতে হবে যে আমায়৷"
এইটুকু বলে আর কিছু বলতে পারলো না আশা নিভু নিভু আঁখি জোরা বন্ধ হয়ে আসছে গলা দিয়ে শব্দ আজ বের হচ্ছে না৷
আজ হঠাৎ নিজের করা ভুল গুলো সামনে এলো চোখের৷ সে ভুল করেছে এত বছর লোকটা হয়তো পাল্টাবে ভেবে ভুল করেছে৷ বাবা বোনের খু'নির সাথে থেকে ভুল করেছে সে শাস্তি মায়ের লা'শ দেখে মিলেছে৷ ইশ ভুল গুলো যদি শুধরানো যেতো? বোনকে যদি একটু বিশ্বাস করতো তখন? নিজের চোখের সামনে বোনের খু'ন দেখে যদি শা'স্তি দিতো লোকটাকে? আবার কি ফিরে পাওয়া যাবে না সময় গুলো? একজন ভালোবাসার মানুষের হাতে তার ভালোবাসার মানুষ টা যদি ফিরিয়ে দিতে পারতো? ভুলে ভরা জীবন ম'রেও কি শান্তি পাবে?
,,
এর মাঝে অনেক দিন পেরোলো, অনেকটা সময়৷ আশাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে শ্বাস প্রশ্বাস চলছে রোগী নিজের মনের জোরে বেঁচে আছে শুধু৷ শরীরের গতি ভালো না৷ মেহরাবের অবস্থা উন্নত আগের থেকে বলা চলে সে চোখ মেলে তাকিয়েছে মায়ার ধরণী দেখেছে৷ ধরনীটা এত মায়ার কেন? এ মায়া কাটে না কেন? সুখ গুলো এত দামি কেন? অপেক্ষা গুলো আজ সুন্দর নয় কেন? অপেক্ষা? কিসের আর অপেক্ষা? এবার তার সমাপ্তি ঘটুক না? মায়া কাটুক পৃথিবী ছাড়ুক৷ নিশ্বাস বন্ধ হোক৷ হচ্ছে না কেন?
আকস্মিক মাথায় এলো তিনটি মানুষের কথা৷ চেহারা গুলো জ্বলজ্বল করলো৷ তার কুয়াশা, তার আপা, তার হীম৷ মানুষ গুলোর ওকে ছাড়া কেউ নেইতো৷ সুস্থ হতে হবেতো? হীমের হাতে বাড়ির দায়িত্ব টা তুলে দিতে হবে সাথে তার আপারো যেন মা কে না কষ্ট দেয় বলতে হবেতো? সে কাগজপত্র করে রেখেছিলো অনেক আগে সই ও করে রেখেছে শুধু হাতে বুঝিয়ে দেবার পালা৷ উত্তরের জমিটা কুয়াশার নামে করবে ভেবেছিলো কিন্তু সে জমিটা আপার নামে করেছে৷ কুয়াশার মাথায় হাত রাখার মত শক্তপোক্ত এক মানুষ আছে তার কুয়াশা সে মানুষের কাছে ভালো থাকবে৷
কুয়াশার জন্য নিশ্চিন্ত মেহরাব৷ এখন খুব ধাতস্থ মেহরাব৷
আপা গেছে বাড়িতে হীম বাইরে আছে কুয়াশা আসবে কাল রুদ্র কথা দিয়েছে নিয়ে আসবে শুনেছে মেয়েটাও অসুস্থ৷ আজ মেহরাব বাড়িতে যাবে সুস্থ হওয়ার পর এক দন্ড এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না৷ বুকের ভেতরটার যেন পাথর জমানো ভারী ভাবটা কমেনা কেমন৷ কি অদ্ভুত এখন না বুকটা খালি লাগার কথা ছিলো? মায়াতো নেই? হঠাৎই মনে পরলো মায়ার সাথে হওয়া কিছু কথা৷ মেহরাবের বুকে লেপ্টে মিনমিনিয়ে বলেছিলো,
"আমি ভালো নেই মেহরাব৷ আপনি কেন আনছেন না আমায় আপনার কাছে?"
মেহরাব সে দিন নির্বাক ছিলো৷ ইশ সে দিন যদি রেখে দিতো? বুকের ভারী ভাবটা যেন বাড়লো ক্ষানিকটা শ্বাস নিতেও কষ্ট অনুভব হলো৷ নিজেই নিজের কাছে পরিচিত হলো মেহরাব , মেয়েটা তার কতটা জায়গা জুরে আছে৷ দীর্ঘশ্বাস টানলো৷
প্রেম বি'ষা'ক্ত এক অনুভুতি মানুষ কে একটু একটু করে নিঃশেষ করে দেয়৷ মেহরাব মিনমিনিয়ে বললো,
"অস্তিত্বটা যেখানে মাটির ঘরে নিজের জায়গা খুঁজে নিয়েছে৷ দেহটা কেন পরে আছে এ মায়ার ধরণীতে? সমাপ্তি ঘটুক এ অস্তিত্বহীন দেহটার নিঃশেষ হোক আমার৷"
..
অতঃপর সে মাহিন্দ্রক্ষন৷ দীর্ঘ প্রতিক্ষায় সে কাঙ্ক্ষিত সময়৷ নিবার্বাচনের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হলো রুদ্র৷ তুমুল বেগে শুরু হলো প্রচার সাথে উল্লাস৷ এক মাস পর নির্বাচন, নির্বাচনের সব টা সময় ব্যাস্ত থাকবে রুদ্র৷ কাল তাই বাড়ির সবাইকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ যাবে৷ ভেবেছিলো শুধু কুয়াশাকে নিয়ে যাবে পাঁচ দিন পর থেকে কুয়াশার পরিক্ষাও শুরু মেহরাবের জোরাজোরিতে নিয়ে যেতে হবেই সেই সাথে রুদ্রের ছোট মা ও যাবে বললো সাথে প্রান্ত, বেলি৷ আরোহীকেও নিবে৷
আজই নমিনেশন পেলো অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে আনন্দ উল্লাস চললো৷ বেশ রাতে বাড়ি ফিরলো প্রান্ত বেলির বাবার খোঁজ পায়নি এখনো রনি এসেছিলো এ বাড়িতে বেলির সাথে শুধু দেখা করে গেছে ছেলেটার হুট করে পালটে যাওয়া কেমন খটকা লেগেছিলোর প্রান্তর অতঃপর প্রান্তকে অবাক করে দিয়ে রনি বলেছিলো,
"আমি কখনোই বেলির কথার পাত্তা দেইনি৷ বেলির চোখের অনুভুতির পাত্তা দেইনি কখনোই আমি৷ অনুভুতি যার প্রতি থাকুক আমার দেখার বিষয় না এ মেয়েটাকে আমার যেকোনো মূল্যে চাই৷ কিন্তু হঠাৎই আমি ভালোবাসার কাঙাল হলাম৷ আমার মনে হলো আমার চাই বেলির চোখে আমায় নিয়ে অনুভূতি আমি আরো গভীর ভাবে বেলির অনুভূতি পড়ার চেষ্টা করলাম অতঃপর মিললো তোর প্রতি এক রাশ ভালোবাসা পাগলামো যা আমায় চোখে আঙুল দিয়ে বোঝালো আমি কখনো বেলিকে পাবো না৷ কখনো না৷"
এইটুকু বলে দাঁড়ায়নি রনি৷ সে নিজে পুলিশস্টেশনে গিয়ে নিজের দোষ শিকার করেছে বলেছে সে প্রান্তকে মা'রার চেষ্টা করেছিলো৷
প্রান্ত বাড়িতে প্রবেশ করতেই নিরবিচ্ছিন্ন পরিবেশ পেলো মা এ বাড়িতে নেই এখনো কুয়াশার কাছে৷ দরজা লাগিয়ে নিজের কক্ষের দিকে এগোলো৷ ঘরে এসেও বেলিকে পেলো না সে জানে বেলি বারান্দায়৷ ঘামে জুবুথুবু হয়ে যাওয়া শার্টটা নিয়েই সন্তপর্ণে তার বেলি ফুলের পিছন ঘেঁষে দাঁড়ালো চিকন দেহটা পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আবেশে কিছু সময় পার হলো মেয়েটা ফিরলো না তবুও প্রান্ত বেলির কাধে থুতনি রেখে ফিসফিসিয়ে বললো,
"দিন দিন মাথা মোটা হয়ে যাচ্ছিস জানিসনা স্বামী বাইরে থেকে আসলে তার সেবা যত্ন করতে হয়? এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন৷"
সাথে সাথেই মেয়েটা কাটকাট কন্ঠে বললো,
"স্বামী আমার রাজ্যের সব কাজ তো সেরে এসেছে তাই না? সরে দাঁড়ান তাড়াতাড়ি বি'চ্ছি'রি গন্ধ আসছে ঘামের৷"
প্রান্ত খপ করে কাধে কামর বসিয়ে দিয়ে বেলিকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
"বি'চ্ছি'রি না? এখন তো সরবোই না৷"
বেলি কিছু বললো না মিটমিটিয়ে হাসলো৷ সামনে ঘুরে বক্ষে নিজের মাথাটা মিলিয়ে দিলো৷ কিছুক্ষণ এভাবেই রইলো৷ আকস্মিক কিছু ভেবে তপ্ত শ্বাস টানলো মিনমিনিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললো,
"আপনি আমায় মে'রে ফেলবেন প্রান্ত? মে'রে ফেলুননা? আমি কিভাবে আপুর সামনে দাঁড়াবো? আপু জানলে আমার সাথে কথা বলবে প্রান্ত? আমায়ও দোষী ভাববে আপু? ভাববেকি আমি, আমরা তার বাবাকে কেরে নিয়েছি?"
সাঁইত্রিশ
নিরবতায় আচ্ছন্ন চারোপাশ, গুমোট বেঁ'ধে আছে সব এ নিরবতা যেন ভ'য়ং'কর কিছুর আভাস দিচ্ছে৷ আকস্মিক মন কারো মুখোমুখি আশাও করেনি কুয়াশা৷ চক্ষুদ্বয় বিচরণ করছে এক রাশ ঘৃ'ণা৷ এ তীব্র ঘৃ'ণা শুধু এক জনের নেত্রে নয়৷
'বাবা' দুই বাক্যের হলেও এর বিশালতা অনেক তবে এটা কুয়াশা, বেলি, হীমের ক্ষেত্রে নয়৷ বেলি নিজেকে গুটিয়ে নিলো কুয়াশার আ'ক্রো'শে ফেটে পরলো মায়ের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিলো এক কঠিন প্রশ্ন,
"এ লোক এখানে কেন মা?"
কুয়াশার মা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ মুখ জুরে ক'ঠি'নত্ব হলেও হৃদয় নিঙরানো বেদনা টা কারো নজরে এলো না৷ ক'ঠি'নত্বের আড়ালে আবডালেই রয়ে গেলো কিছু ক্ষ'ত নতুন ভাবে জাগ্রত হওয়া ব্যা'থা টা৷
হুট করে আজ মানুষ টার আগমন এত বছর পর কেন এলো? কেন?
কালই মেহরাব কে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেছে৷ কাল রাতে হুট করে মেহরাব ঠিক করলো আজ যেহেতু কুয়াশা আসবে ঘরোয়া ভাবে রেজিস্ট্রি করিয়ে রাখবে ব্যাপারটা কুয়াশাকে না জানালেও রুদ্রকে জানিয়েছিলো৷ মেয়ের শশুরবাড়ির মানুষ আসবে তাই সকাল থেকেই খাটাখাটুনি চলছে৷ হুট করে কলিং বেল বাজতে ভেবেছে তারা এসে পরেছে৷ খুলতেই অনাকাঙ্ক্ষিত এই ব্যাক্তির মুখোমুখি৷
মেহনাজ কিছু বলার আগে কিছু না বলেই অন্দরে পদচারণ ঘটে কাইফের ৷ মেহনাজ যখন কঠর কন্ঠে জিগ্যেস করলো,
"আপনি এখানে কেন?"
তখনই কাইফ পায়ে ঝা'পি'য়ে পরলো৷ ঠিক তখনই সবার আগমন৷
মেহনাজ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেই থেকে৷ হ্যাঁ এই কাইফ লোকটাই কুয়াশা আর হীমের জন্মদাতা পিতা, কাইফ সে দিন কুয়াশাকে চিনেনি৷ দীর্ঘ বছর মেয়েকে না দেখায় চিনেওনি৷
বেলির মায়ের সাথে পরিচয় হয় রাজনীতিতে আসার পরই৷ বেলির নানার অর্থসম্পদ ছিলো বিশাল এক মেয়ে থাকায় মালিকানাও ছিলো বেলির মা একাই৷ এ সুযোগ হাতছাড়া করে কে?
মেহনাজ কে সে ভালোবেসে বিয়ে করলেও বেলির মায়ের মত মেহনাজের অর্থসম্পদ ছিলো না৷
ভালোবাসা তো যাবে আসবে কিন্তু টাকা? টাকা যার থাকে তার আবার ভালোবাসার কিসের প্রয়োজন? আর রাজনীতিতে যত ঢালবে তার দ্বিগুণ পকেটে আসবে৷
সেখানে তখন তার কোন টাকাই ছিলো না৷ শূন্য পকেটে রাজনীতি হয় নাকি? রাজ পথে চলতে গেলে রাজা হওয়া প্রয়োজন৷
"এখানে কেন এসেছে মা এই লোক?"
কাইফ প্রথমে চিনতে না পারলেও এখন তার খোলাসা হলো কুয়াশা তার মেয়ে৷ আকস্মিক যেন সে আবেগে আপ্লূত হলো৷ কি অদ্ভুত এমন তো তার আগে লাগেনি এত বছর লাগেনি? জ্ব'লজ্ব'ল করে উঠলো কিছু স্মৃতি যখন সদ্য জন্ম মেওয়া কুয়াশাকে নার্স ওনার হাতে তুলে দিলো৷ কি অদ্ভুত সে তো মায়ার ধারধারে না তবে আজ এসব কেন মনে পরছে?
সে তো এখানে এসেছে পুলিশ থেকে বাঁ'চার জন্য৷ কুয়াশার কিছুটা দূর বেলিকে দেখে চমকালো কাইফ ঘাম ছুটলো৷
"মা কথা বলছো না কেন? এ লোক যাচ্ছে না কেন? আবার কি নাটক করতে এসেছে এত বছর পর?"
হীমের গম্ভীর কন্ঠে কাইফ উঠে দাঁড়ালো, এটা তার ছেলে হীম৷
তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে কত গুলো চোখ৷ এখানে তার ছেলে মেয়ে উপস্থিত অথচ সে চিনলো সবে৷ রুদ্র ও আছে তার মানে এখন সব জানাজানি হয়ে যাবে৷ কিন্তু তা নিয়ে কেন যেন তার মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছে না, কেমন ব্যা'থা অনুভব হলো বক্ষে৷ তার ছেলে মেয়ে এত বছর পর তার সামনে৷
হঠাৎ কেমন ইচ্ছে জাগলো একটু যদি পরম মমতায় ছেলে মেয়ে গুলো কে বুকে আগলে নেওয়া যেত?
কাইফ নিজের কাছে নিজের ইচ্ছা গুলোতে অবাক হয়৷ এত বছর পর এ কেমন অনুভূতি হচ্ছে তার?
মেহনাজের সাথে থাকা স্মৃতি গুলো কেন মনে পরছে? কুয়াশাকে যে ধরে ধরে সে এক পা দু পা করে চলতে শিখালো সে কেন সেগুলো আজ মনে পরছে?
সে তো এখানে বাঁ'চার জন্য ইচ্ছে করছে? এত বছর তো খবরো নেয়নি আদৌ তার ছেলে মেয়ে গুলো বেঁ'চে আছে না ম'রে গেছে?
"মেহনাজ ওরা আমার কুয়াশা, হীম?"
কাইফের এহেন কথায় তেঁ'তে উঠলো মেহনাজের মন৷ কিসের তার? কুয়াশা হীম তো তার৷
উ'গ্র কন্ঠে বললো,
"না! আপনার না৷ ওরা আমার ছেলে মেয়ে এত দিন পর খবরদার দরদ দেখাতে আসবেন না৷ কেন এসেছেন এখানে?"
মেহরাবের দাম্ভিকতা যেন হুট করে ফিরে এলো শীর্ণ দেহটা নিয়ে এগিয়ে এলো রাগে কলার চেপে বললো,
"কেন এসেছিস এখানে? মে'রে দিবো তোকে এখন এসব নাটক করলে৷ বিদাই হ এখান থেকে নয়তো পু'তে রাখবো এখনি৷ "
রুদ্র উষ্ঠ এলিয়ে বাঁকা হাসলো৷ যাক লোকটা কাজ কে সহজ করে দিলো৷ অনেক হসেব নিকাশ বাকি আছে রুদ্র বললো,
"মামা এ এমনিও পার পাবে না৷ পালিয়ে এখানে বাঁ'চতে এসেছিলো৷ আমি পুলিশকে ফোন করছি৷"
কাইফের যেন ভ্রুক্ষেপ দেখা গেলো না৷ মেহরাব থেকে নিজেকে ছাড়ালো৷ মেহনাজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো দৃঢ় পায়ে৷ তার করা পা'প গুলো তার মনে পরলো এক এক করে৷ কি অদ্ভুত যে এক ঘন্টা আগেও নিজের করা পাপ গুলোকে নিয়ে কোন অনুতপ্ত ছিলো না আজ সন্তানের মুখ দেখে সব পাপ গুলো নয়ে অনুতপ্ত? কাইফ মিনমিনিয়ে বললো,
"আমি জানি আমি ক্ষমার অযোগ্য৷ তবুও বলবো আমায় ক্ষমা না করলেও আমার ছেলে মেয়ে কে একটু আমার কাছে আসতে বলো না মেহনাজ? আমি জানিনা আমি কি করছি কেন করছি, আমি সত্যি এখানে এসেছিলাম পুলিশ থেকে বাঁ'চার জন্য কিন্তু হঠাৎই আমার ইচ্ছাগুলোতে আমিও অবাক৷ মেহনাজ তোমার পায়ে পরি দোহায় লাগে কুয়াশা আর হীমকে বলো না একটু আমায় জড়িয়ে ধরতে? একটু বলো না আমায় বাবা ডাকতে? আমি কথা দিলাম আর কখনো বলবো না৷ "
রুদ্র রাগ নিয়ে বললো,
"কি নাটক শুরু করেছেন আবার? আপনি এসব করে কি প্রমান করতে চাইছেন?"
কাইফ রুদ্রের কথায় কান দিলো না কুয়াশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কুয়াশার মাথায় হাত দিতে চাইলেই হীম আগিয়ে এসে বোন কে সরিয়ে নিলো৷ ক্ষি'প্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
"আপনি ওই পাপী হাতে আমার বোনের মাথায় হাত রাখবেন না৷ পুলিশ কে ফোন করো ভাইয়া৷"
কাইফ হাসলো৷ ছেলের ঘৃ'ণা দেখে তার প্রতি৷ আজ তবে এসপার ওসপার হোক? আর কত? হঠাৎ তার সব কিছুতে ক্লান্তি টের পেলো৷ সে আর লরতে পারবে না৷
কাইফ বেলির দিকে তাকিয়ে বললো,
"তুই ও আমায় ঘৃ'ণা করিস মা তাই না?"
বেলি ঘৃণায় দৃষ্টি সরিয়ে নিলো৷ মেহনাজ, হীম, কুয়াশা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকালো বেলির দিকে৷ কৌতুহলতা আকাশচুম্বী৷ বেলি ভীত হলো সবাই নিশ্চয়ই ওকে এখন ভুল বুঝবে?
তখনই রুদ্র সবাইকে জানালো বেলি কাইফের দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে৷ বেলির মা কিংবা বেলিরা কেউ কিছু জানতো না৷ বেলি মাথা নিচু করে তাকিয়েই রইলো৷ বেলি এ ও জেনে গেছে তার বাবা রুদ্রের বাবা মা কে খু'ন করেছে এটা বেলি আরো অনেক দিন আগেই জেনেছে প্রান্তর সাথে বিয়ে হওয়ার অনেক দিন আগে৷ রনির সাথে ফোনে কথোপকথন এর সময় একদিন রনিকে জানায় সবটা মনোয়নপত্রের জন্য এসব নিয়ে ত'দ'ন্ত হবে যদি জানাজানি হয় তখন কি হবে এ নিয়ে ভয়ে ছিলো সে৷ সে দিনই অগোচরে সব টা জানে বেলি৷
বেলি এ নিয়েও ভয়ে ছিলো সবাই জানলে কি হবে তার জন্য আরো বাবাকে নিয়ে তার ঘৃ'ণা এত ছিলো৷ নয়তো সে প্রান্ত কে যতই ভালোবাসুক বাবার বি'রো'ধিতা করতো না৷ ভেবেছিলো জানাবে প্রান্তকে কিন্তু এত ঝা'মেলার মাঝে জানানো হয়নি৷ কিন্তু এখন মনে হলো বলতে হবে৷ বেলি এবার মুখ খুললো তটস্থ হয়ে আকস্মিক সবার সামনেই বললো রুদ্রকে,
"এই মানুষটাই তোমার বাবা মা কে খু'ন করেছে রুদ্র ভাইয়া৷"
বেলি জানে না এখন কি হবে সবাই কি রিয়েক্ট করবে৷ কিন্তু প্রান্তর মুখে বিস্ময় ভাবটা দেখলেও রুদ্রর মুখে দেখলো না৷ তবে অশ্রুসিক্ত এক জোরা চক্ষু দেখলো৷ রুদ্র প্রগাঢ় শ্বাস টেনে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"আমি সব টা জানি৷ শুধু প্রমানের অভাবে গুটিয়ে ছিলাম৷ আমি সব ক্ষেত্রে জয়ী হলেও এ ক্ষেত্রে আমি হেরে ছিলাম খেটেখুটেও কোন প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাইনি৷"
ঘৃ'ণিত চোখ গুলো কাইফের দিকে তাকালো৷ কাইফ আজ যেন কমজোর হয়ে গেলো৷ হাসলো তাচ্ছিল্য হাসি অতঃপর শ্বাস টেনে বললো,
"দীর্ঘদিন রাজপথে রাজত্ব করছিলো ওর জন্য নিজের জায়গা করতে পারছিলাম না আমি রাজপথে৷ জনতাও ওর প্রতি দূর্বল ছিলো যেমনটা তোমার প্রতি এখন৷ সাধারণ সম্পাদক এর জায়গাটা আমার প্রয়োজন ছিলো এখানে থেকেই তোমার বাবা নিজেকে পাকাপোক্ত করেছে৷ তোমার বাবা সেদিন নমিনেশন পাওয়ার পর আসার সময় এক্সিডেন্ট হয়৷ এক্সিডেন্ট অবশ্য আমার কথাতেই হয় তবে বিশ্বাস করো পুরো প্ল্যান টা সাবেক সংসদ সদস্যর ছিলো৷ কিন্তু সব করার পরো তোমার মা হুট করে ছাদে থেকে শুনে ফেললো সবটা আমি ছাদেই কথা বলছিলাম সেই তাকেও আমার সরিয়ে দিতে হলো৷ এটাও বুদ্ধি ছিলো সাবেক এমপির৷ আমরা ছিলাম বন্ধু তার ডান হাত আমি বলতে পারো৷ সে জানতো তোমার বাবার মৃ'ত্যু হলে ফের মনোয়নপত্র দেওয়া হবে সেই সুযোগটাই সে পেয়েছে দীর্ঘদিন রাজ পথে তার ভরসায় ছিলাম আমি৷ ভেবেছি এ জায়গায় পাকাপোক্ত হওয়ার পর আমার আরেকটা খু'ন করতে হবে কারণ সাবেক এমপি থাকলে আমি জায়গা পাবোই না এর মাঝেই তুমি রাজপথে খুটি গেড়ে বসলে৷ তবুও চিন্তা এটা ছিলো না আমার চিন্তা আমার সাবেক এমপিই ছিলো তাকে মা'র'তে গেলে আবার পরিচ্ছন্ন পরিকল্পনার প্রয়োজন আমি যদি কোনো ভাবে ধরা পরি একুল ওকুল দুকুল যাবে৷ কিন্তু আমার মুশকিল আসান করে দিয়েছে ওপরওয়ালাই হঠাৎ একদিন শুনলাম সে হার্ট এট্যা'ক করেছে৷ পরেরদিন খবর এলো মা'রা গেছে৷ অতঃপর তার জায়গা নেওয়ার জন্য আবার এমপি নির্বাচন এর কথা উঠলো৷ তুমিও সেই নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করার জন্য উঠে পরে লাগলে৷ মাঝেই আমি চেয়েছিলাম ঝা'মেলা করে তোমার নামে মা'ম'লা ঠুকে দিতে কিন্তু তোমার দলের সদস্যরা তোমার জন্য জান প্রান দিয়ে লরলো৷
নমিনেশন পেয়ে গেছো নিশ্চয়ই? যেটার জন্য এসব করলাম এত বছর পর সে জায়গাটা আমার সত্যি হলো না৷ আমি ভেবেছি রনি সবটা সামলে নিবে এখন নয়তো আমার পালানোর প্রয়োজনই পরতো না শেষ মুহূর্তে রনি নিজেকে গুটিয়ে নিলো৷"
এইটুকু বলে দম ছাড়লো কাইফ৷ ততক্ষণে ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট এর অফিসার এসে পৌঁছেছে এখানে৷ তারাও খবর পেয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ এর আশেপাশে আছে৷ রুদ্র ম্যাসেজ করতেই আসতে দেরি হলো না তাদের৷ কাইফ কে এ'রে'স্ট করলো৷ নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা দিতেই গেলো না কাইফ শক্ত কন্ঠে বললো,
"আমি আমার ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে চাই অফিসার৷"
বেলি শক্ত কন্ঠে বললো,
"আমরা কথা বলতে চাই না এনার সাথে নিয়ে যান অফিসার৷"
কাইফ ছিটকে নিজের হাত ছাড়ালো মেহনাজের সামনে গিয়ে হাত জোর করে বললো,
"আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না জানি আমার মাফ নেই৷ আমি আজ সত্যি অনুতপ্ত প্লিজ মেহনাজ আমার ছেলে, মেয়ে কে বলো একটু আমায় জড়িয়ে ধরতে৷ দয়া করে মেহনাজ পাষাণ এর মত করো না৷ আমি ভুল করেছি আমায় একটু সুযোগ দাও মেহনাজ৷"
মেহনাজ আজ বিপাকে পরলো কি করবে? লোকটার আকাশ চুম্বী দোষ কই এত দিন তো তার ছেলে মেয়েদের খবর নিতে আসে নি? তবুও কেন তার মন অন্য কথা বলে? ভালোবাসা এমন কেন?
মেহনাজ তাকালো ছেলে মেয়েদের দিকে৷ হীম মুখ ফিরিয়ে নিলো৷ তার মা কি করে ওই লোকটার কথায় গলছে? হীম কুয়াশার হাত ধরে চলে যেতে নিলেই কাইফ পথ আগলে দাঁড়ালো ওদের ঘৃ'ণার দৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথায় হাত রাখলো দুজনের৷ ঝরঝর করে নেত্র যুগল দিয়ে পানি পরছে৷ কিছু বললো না আর এ তার শা'স্তি এত বছরের শাস্তি এর থেকে বড় কিছু হতেই পারে না এর থেকে ফা'সিও তৃপ্তির৷
আটত্রিশ
আঁধার! ঘুটঘুটে আঁধারে নিমজ্জিত ধরণী বি'ষা'দে মুখরিত চারোপাশ৷ ভারী নিশ্বাসের শব্দ আর যান্ত্রিক ঘরটার যন্ত্রগুলোর শব্দ যেন অদ্ভুত শোনাচ্ছে সব৷ অক্সিজেন মাক্সটা এক হাতে আগলে নেওয়া শীর্ণ শরীর টা নিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে আশা৷ মেয়েটার দু'একটা চুল পাঁক ধরেছে উনচল্লিশ বছরের মেয়েটাকে তার বয়স থেকে কয়েক গুন বড় লাগছে আজ৷ ভে'ঙে গেছে কেমন দেহটা৷ অন্তিমকাল ঘনিয়ে আসবে খুব শীঘ্রই বুঝি৷ খামখেয়ালি, তটস্থ আঁখি পল্লব জানান দিচ্ছে সে অনেক কথা বলতে চায়৷ কৌতুহলতায় জর্জরিত কতগুলো দৃষ্টি সেই মুখেই বিরাজমান৷
ডাক্তার পাশেই দাঁড়ানো সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টির সময় কাল সে কি আর বলে দিতে পারে? সে তবুও চেষ্টায় আছে প্রাণ ফেরানোর৷ কিন্তু এটাও তো সৃষ্টি কর্তার হাতে৷ সে আশায় আছে আশা ভালো হবে৷ আশা বিশ্বাস করে তার অন্তিম সময় খুব নিকট তার বক্ষ থেকে গু'লিটা বের করতে পারেনি৷ মনের জোরে এ পর্যন্ত আছে৷ আজ একটু সঠিক লাগছে তাই আজই সব বলতে হবে তার তাইতো ডাক্তার কে দিয়ে জরুরি তলবে আয়াশ কে ডেকে পাঠালো৷ আয়াশ আর বন্ধুকে নিয়ে এলো না ও জানে সইতে পারবে না তার বন্ধু৷
সে দিনের পর মাস কে'টেছে আশার জ্ঞান ফিরেছে অনেক আগে তবে শরীরের গতীবেগ ছিলো বেজায় খারাপ গু'লিটা বের করতে পারেনি৷ ডাক্তার বলছে তারা আরো চেষ্টা করতে চায়৷ গু'লিটা হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি হওয়ায় ভয় অনেক৷
আশা দশ দিন যাবত বলতে চাচ্ছে ডাক্তার পার্মিশন দিচ্ছে না আজ তাই জোর দেখিয়ে বললোই আজ তাকে না বলতে দিলে সে এ অবস্থায় বেরিয়ে যাবে৷
জোরে জোরে শ্বাস নিলো আশা অত:পর অপেক্ষা আর কৌতুহল এর অবসান ঘটিয়ে ভা'ঙা কন্ঠে বললো,
"আমার বাবা মা'রা যাওয়ার দু দিন আগে মায়া মা'রা গেছেন৷ আমার স্বামীর মায়ার প্রতি আকর্ষণ ছিলো শুরুতে৷ রিয়ান ছিলো আমার সিনিয়র সেই সুবাদে তার আমার সাথে বন্ধুত্ত হয়ে ওঠে বন্ধু হওয়ায় উঠাবসা এক সাথে লেগেই থাকতো মাঝে মাঝে মায়ার সাথেও দেখা হতো৷ রিয়ান মায়ার প্রতি দূর্বল ও ছিলো আর এদিকে আমি রিয়ানের প্রতি৷ তার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব ও আসে মায়ার জন্য আমি শুরুতে ভাবতাম সে বুঝি আমায় ভালোবাসে মায়ার জন্য প্রস্তাব আসায় বাবা না করে দেয় সে এত তাড়াতাড়ি মেয়ে বিয়ে দিবেন না৷ মায়ার জন্য প্রস্তাব আসার পর আমিও ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে৷ সাথে মায়ার উপর জমে আমার ক্ষোভ৷ দেই কিছু মাস পেরোতেই রিয়ান আমায় বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লাগে আমায় এটাও জানায় বাড়িতে সে আমার কথা বলেছে কিন্তু ভুল করে মায়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে তার বাবা৷ নানান কথা বলে সে আমার মন পালটে দিলো৷
আমি তাকে ভালোবাসতাম নিজের থেকে বেশি তাই বিশ্বাস ও করে নিলাম৷ একই কথা বলে ফের প্রস্তাব এলো আমার বাড়িতে আমার বাবাও বুঝলো তখন একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে৷ কিন্তু রিয়ান যে মায়াকে প্রতিনিয়ত উ'ত্য'ক্ত করতো তা আমার জানা ছিলো না আমাদের বিয়ের কথা উঠার আগেও মায়াকে অনেক জোর করেছে হু'ম'কি ধ'ম'কি দিয়েছে৷ কিন্তু মায়া আমাদের বলেনি মায়া জানতো আমি রিয়ান কে ভালোবাসি৷ কাবিনের দিন সকালেও আমায় জ্বরের ঘোরে মায়া বলেছিলো "আপু রিয়ান ভাইয়া ভালো না তুমি এ বিয়ে করো না৷"
আমি ভেবেছিলাম জ্বর তাই হয়তো৷ আমাদের ঘরোয়া ভাবে কাবিন হয় রিয়ান ডাক ঢোল পিটিয়ে বিয়ে পছন্দ করতো না আর সেকালে তো এমন অতটা ছিলো ও না৷ বিয়ের পর ও মায়া খুব বেশি আশেপাশে ঘেঁষতো না রিয়ানের৷ রিয়ানের পরিবর্তন লক্ষ করি বিয়ের এক মাস পরে থেকেই৷
মায়া কখনো আমার বাড়িতে এসে থাকতে চাইতো না৷ একদিন জোর করে রিয়ানের কথায় এ বাড়িতে নিয়ে আসি এর পরের দিনই সদ্য যৌবনে পা দেয়া মায়া আমায় কান্নারত হয়ে বললো, 'আপা দুলাভাই ভালো না৷দুলাভাই শরীরে হাত দেয় শুধু' ওর আরো বলে বিয়ের আগে কি কি করেছে এখন কেমন করে, আমি বিশ্বাস করলাম না থামিয়ে দিলাম৷ অ'গ্নিকন্ঠা হয়ে দু'চারটে কঠিন বাক্য শুনিয়ে দিলাম৷
আমি রিয়ান কে অন্ধ ভালোবাসতাম ও ছাড়া আমার পৃথিবীতে অন্য কেউ নেই এমন৷ মায়া আমার অপছন্দের তালিকায় যুক্ত হলো তখন থেকে৷হোক আমার বোন আমি ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোনো কিছুই মানতাম না ছোট থেকে৷ যা আমার তা আমারই৷ রিয়ানের ক্ষেত্রেতো একেবারেই আপোস করা চলতো না আমার৷
এরপর অনেক ঘটনা আমার নজরে এসেছে কিন্তু তখন আমার চোখে খারাপ ছিলো আমার বোন৷ পুরুষ মানুষ একটু অন্য নজরের হয়ই মেয়ে মানুষ তুই ঠিক থাকলেই হয় এ মনোভাব ছিলো আমার৷ ওদের দুজনকে আমি অনেক বার বাইরেও দেখেছি ভাবতাম কিছু চলছে ওদের মাঝে৷ আমি এ জন্য ও বাড়িতে গেলে রিয়ান কে নিয়ে যেতাম না যেতেও না করতাম মা কেও জানাই মা মায়াকে মা'রধো'র ও করে৷ মায়া তখনো মা কে অনেক কথা বলে মা বিশ্বাস করে না৷ মানুষ বলে না মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু? ঠিকই বলে৷ তারপর আমি খেয়াল করি মেহরাব ভাই এর জন্য মায়ার পাগলামি চিঠি দেওয়া৷ ভাবলাম এবার বুঝি আমার ঘর বাঁচলো৷
মেহরাব ভাই প্রশ্রয় দিতো না আমি লক্ষ করতাম কিন্তু বলে না ভালোবাসার পাগলামো গুলো এরিয়া যাওয়া যায় না? মেহরাব ভাই ও পারলো না ততদিনে মায়ার পরিবর্তন ঘটে চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দেয়৷ আমরা তখন আমাদের নতুন বাড়িতে উঠেছিলাম মেহরাব ভাই এর বাড়ি থেকে৷ রিয়ানের চলাফেরা তখন বেড়েছে ও বাড়িতে হুট করে বোনটা পালটে গেলো চুপচাপ হয়ে গেলো৷ মেহরাব ভাই তখন ওর জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ মেহরাব ভাই এর বোন আমাদের বাড়িতে মেহরাব ভাই এর অগোচরে প্রস্তাব নিয়ে আসে আমাদের জানায় মায়া আর মেহরাব কে চমকে দিবে৷ কিন্তু মায়া জানতে পেরে যায় আর হুট করে সে সিদ্ধান্ত নেয় সে মেহরাব কে বিয়ে করবে না৷ আমরা তখনো জানতাম না ওই অপদার্থ অমানুষ রিয়ান আমার ছোট্ট মায়ার সর্বনাশ করে দিয়েছে৷ আমি যে দিন জানলাম সে দিন খুব দেরি হয়ে গেছে মায়ার শেষ চিঠিতে লেখা কিছু অগোছালো বাক্য৷ যে চিঠি এখনো আমার কাছে আছে মেহরাবের কাছে পৌঁছায়নি৷ মা কেও জানাই ব্যাপারটা বাবা জানলে মেরেই ফেলতো মা বললো জোর করেই মায়াকে বিয়ে দিবে কিন্তু ততদিনে রিয়ান আরো হিংস্র হয়ে উঠে সে পাবে না তো কাউকে পেতেও দিবে না মায়াকে৷ আমি ভেবেছি মায়ার বিয়ের পর পালটে যাবে আমি ছাড়তে নারাজ ছিলাম রিয়ান কে৷ সে রাতে মায়া হয়তো পালাতে চেয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে নয়তো নিজেকে শেষ করতে বেরিয়েছিলো বাড়ি থেকে৷ চিঠিতে তো এমন কিছুই ছিলো যদিও স্পষ্ট বুঝিনি হয়তো মেহরাব ভাই বুঝতো?কিন্তু রিয়ানের হাতে সে ফের পরে রিয়ান সে রাতে হিংস্র পশুর ন্যায় অষ্টাদশী মায়াকে ধ'র্ষ'ণ করে....৷"
এইটুকু বলে থামলো আশা বড় বড় নিশ্বাস নিলো রাগে টগবগিয়ে উঠলো র'ক্ত৷ নিজের উপর রাগ৷ তীব্র ঘৃ'ণা! আয়াশের চোখ টলমলে নার্সটা স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে৷ আশা ফের বললো,
"মাঝ রাস্তা থেকে তুলে আমাদের ফ্লাটে নিয়ে যায় মায়াকে৷ চিঠিটা আমার কাছে পরায় আমি টের পেয়েছিলাম মায়া কিছু করবে হয় পালাবে নয়তো ভয়ানক কিছু বেছে নিবে হয়তো আ'ত্ম'হ'ত্যা? সে দিন নজরদারি করার জন্য আমি মা জেগে থাকলেও আমরা কিছুই করতে পারিনি৷ আমরা ব্যার্থ, আমরা পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মা, বোন ছিলাম৷ আমি নিজের সুখের জন্য মুখ বন্ধ করে ছিলাম আর মা দুই মেয়ের সুখের জন্য৷ মায়াকে না পেয়ে আমি রিয়ানকে ফোন করি কেন যেন খটকা লাগছিলো রিয়ান ফোন তুলেনি৷ আমার কেন যেন মনে হচ্ছিলো আজো ভয়ানক কিছু ঘটবে সে দিনো আমি আমার সুখের কথায় ভাবছিলাম এতটা স্বার্থপর ছিলাম কি করবো? আমি যে ভালোবাসি এখনো ভালোবাসি ওই রিয়ান কে৷ সে দিন আমাদের ফ্লাটে গিয়ে দেখলাম রিয়ানের সেই ডাক্তার বন্ধু রিয়ান ধ'র্ষ'ণ করেও শান্তি হয়নি নিজ হাতে মে'রেছে সে অবস্থায় মেহরাবের নাম নিচ্ছিলো তাই৷
সে দিন আমায় ও মে'রে দিতো যদিনা আমি বলতাম 'লা'শ টা কে সরানোর ব্যাবস্থা করো রিয়ান৷'
সে দিন হয়তো ওই লোকটাও বেশ অবাক হয়েছিলো? আমি বোনের লা'শ দেখেও সরানোর কথা বলছি? কিন্তু বলেনা মেয়েদের কই মাছের প্রাণ? মায়া তখনো তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেনি আমি আর রিয়ানের ওই বন্ধু লা'শ টা সরানোর ব্যাবস্থা করছিলাম মা বাবা এসে পরতে পারে৷ কিন্তু পরক্ষণেই সে সেখলো নিশ্বাস চলছে৷ হঠাৎ মায়া হলো রিয়ানের বন্ধুকে বললাম ভাইয়া আপনি চেষ্টা করে দেখুন না বাঁচানো যায় কিনা৷
যদি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাহলে দোহাই দিয়ে বুঝিয়ে মুখ বন্ধ করে মেহরাবের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতাম পরে কি হতো ও বুঝতো৷ কিন্তু এক দিন ওই ভাইয়ার বাড়িতে চিকিৎসারত অবস্থায় মা'রা যায় মায়া৷ আমি চেয়েও মায়ের কাছে কিছু লুকাতে পারিনি মা বুঝে যায় মা উগ্র হয়ে উঠে আমাদের উপর সে পুলিশে জানাতে চায়৷ এদিকে রিয়ানের আকুতি ভরা কন্ঠে ক্ষমা চাওয়া সে যা করেছে তা নিয়ে সে অনুতপ্ত সে ভালোবাসতো মায়াকে প্রথম নাকি মায়ার সম্মতিতে সব হয়েছে এ শুনে আমি মায়ার লেখা চিঠিকে বিশ্বাস করতে পারলাম না ফের মায়ার জন্য মনে সন্দেহ দানা বাদলো৷ বিশ্বাস করলাম মাফ করে দিলাম৷ মা কেও বুঝালাম বললাম সব৷ সত্যি তখন ভেবেছি এক হাতে তালি বাজে না৷ আমি ভালোবাসায় চিরকাল অন্ধ ছিলাম৷ কাঙাল ছিলাম রিয়ানের ভালোবাসায়৷
কেলেংকারী হয় বাবা শুনে ফেলে আমাদের সব কথা বাবাও হার্ট এ'ট্যা'ক করে৷ সব কিছুর জন্য দায়ি রিয়ান সব যদি না হিতো বাবা ভালো থাকতো৷ রিয়ানের জন্য আর আমার জন্যই বাবা মা'রা গেছে ওই রিয়ান খু'নি আমার বাবা বোনের৷ রিয়ান বললে ভুল হবে আমিও কম দোষী নই৷ সে দিন সবাইকে বললাম মায়া পালিয়েছে তাই বাবা ফাঁ'সি দিয়েছে৷ রিয়ানই শিখিয়ে দিলো৷ মা সে দিন থেকে মানতে নারাজ কিছু শুনতে নারাজ৷ কোনো রকম আটকে রাখতাম মা কে নয়তো সে যে জানিয়ে দিতো সবাইকে৷ হুট করে কি যেন হলো মায়ের পাগল পাগল হয়ে গেলো আবল তাবল বললতো পরে আস্তে আস্তে অনেক বছর পর জানলাম রিয়ান ইনজেকশন দেয় মা কে৷ যুগ পার হলো কিন্তু রিয়ানের ভালোবাসা পেলাম না আমি এমন আঁধারে আর কত দিন? যে দিন রিয়ানকে বললাম আমি সবটা জানিয়ে দিবো সবাইক রিয়ানের অ'ত্যা'চার বাড়লো৷ এদিকে মাকে সুস্থ করার জন্য উঠে পরে লাগলাম আমি৷ আমার মৃ'ত্যু হোক এই সয়তানের শাস্তির জন্য কাউকে তো জীবিত থাকতে হবে? মা সুস্থ হয়েও অভিনয় করতো একদিন একটা চিঠি লিখে মেহরাব ভাই এর কাছে পাঠালাম মা কে দিয়ে৷ মা নিখোঁজ হলো যে দিন সে দিন আমিই মা কে মেহরাব ভাই এর কাছে পাঠিয়েছি সে ছাড়া ভরসাযোগ্য কেউ ছিলো না৷ মা চিরকুট পৌঁছাতে পারলেও নিজে অক্ষত রইলো না কাজের লোকের দ্বারা রিয়ান খবর পেলো মা আমাদের বাড়িতে আছে৷ মা কে ও বালিশ চাপা দিয়ে মে'রে দিলো৷ আমি চেয়েও বলতে পারিনি কিছু আমার বেঁচে থাকা জরুরি ছিলো৷ কিন্তু আমাকেও একদিন ওখান থেকে সরিয়ে আনে তখনি বুঝলাম আর বুঝি রক্ষে নেই৷ আমার জন্য একটা নিকৃষ্ট মানুষ পার পেয়ে গেলো৷ নিজের করা ভুল গুলো নজরে এলো৷ নজরে এলো আমার অপাত্রে দান করা পাগলাটে ভালোবাসা৷ আমায় আপনারা শাস্তি দিন৷ আমাদের মত মেয়েদের জন্য মেয়েরা এগোতে পারেনা আমি নিজের সুখ খুঁজতে গিয়ে ফুলের মত বোন এর খু'নীকে এত দিন সুন্দর ভাবে বাঁচতে দিয়েছি৷"
বিভৎস মৃ'ত্যুর বর্ণনা শুনে সবাই যেন খেই হারালো৷ আশা তার কিছু বলতে পারলো না ঘন শ্বাস নিতে নিতে তার বোনের রাখা মেহরাবের দেওয়ার চিঠিটার কথা বললো৷ কণ্ঠনালী অকেজো হয়ে পরলো এবার শান্তি আশার এবার শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা৷ সে তখন শাস্তি দিতে না পারলেও বোনের ধ'র্ষ'কের শাস্তি সে নিজ হাতে দিয়েছে৷ ধ'র্ষ'কের শাস্তি মৃ'ত্যুই হওয়া উচিত৷ মায়ের খু'নি বোনের খু'নির শাস্তি সে দিয়েছে৷
উনচল্লিশ
অপরাহ্নের শেষ তখন আঁধার এখনো অন্তরিক্ষ ছোঁয়নি লালচে আলোয় আলোকিত শহর৷ বিভাবসু আজ চকমকে কিরণ ছড়াচ্ছে উত্তাপহীন কিরণ৷ লালছে আলোটা মুখশ্রী লালচে আভায় ছেয়ে আছে কুয়াশার৷ স্নিগ্ধ মুখশ্রী বেজায় চিন্তিত৷ চিন্তার কারণ সে জানে না৷ সে নিজেকেই জানে না চিনে না আজকাল৷ সে দিনের পর মাস পেরিয়েছে তার বাবার যাবতজীবন হয়েছে সে দিন মেহরাব ঠিক করেছিলো ওদের আকদ হবে তবে হয়নি৷
সে দিন কুয়াশা কারো সাথে কথা বলেনি, রুদ্রও সাহস পায়নি রুদ্র চেয়েছিলো ও রাজনীতিতে আছে কথাটা পরে জানাবে নির্বাচনে জিতলে করলে৷ কিন্তু হুট করে সব উলটপালট হয়ে গেলো৷ এক দিকে উলটপালট হলেও অন্য দিকে ভালোই হয়েছে খু'নি শাস্তি হয়েছে৷
কুয়াশাকে সে দিন কিছু বলেনি তারা সে দিন ফিরে আসলেও কুয়াশা আসেনি৷ রুদ্র তো ভেবেছিলো সব বুঝি শেষ কিন্তু পরের দিনই কুয়াশা ফিরে আসে৷ নিজ থেকে প্রান্তকে ফোন করে জানায় বেলিকে নিয়ে যেন আসে এ ফ্লাটে৷
বেলির সাথে ভাব বিনিময় হয়েছে বেশ কুয়াশার, বাবা যা করুক বেলিতো তাদেরই র'ক্তের৷ বোন তো? মা এক না হোক বাবা তো এক ছিলো৷ বাবার ভুলের শাস্তি তো এ মেয়েটাকে দেওয়া যায় না? বেলি আর বেলার বড় কুয়াশা বেলা এসেও দেখা করেছে কুয়াশার সাথে৷ বেলি বারংবার অবাক হয় মেয়ে কি অমায়িক অথচ কি গম্ভীর চিত্তে থাকে৷
প্রান্তর সাথে প্রান্তর মা, বাবার সাথে কথা বললেও রুদ্রর সাথে কথা বলে না কুয়াশা৷ রুদ্র আসার ও সময় পায় না তাতেও তার অভিমানের শেষ নেই৷ সে দিন না বলে এসেছিলো কেন? সে তো বলেনি ফিরবে না৷ না বলেই চলে এসেছিলো৷
প্রান্ত সে দিন রুদ্রর ব্যাস্ততার কথা জানাতেই কুয়াশা শক্ত কন্ঠে জবাব দেয়,
"ওই লোকের কথা মুখে আনলেও আমার সামনে আসবে না তোমরা৷ ওই লোক যেন আমার সামনে না আসে কথা কানে দিয়ে দিবে তার৷"
প্রান্ত, বেলি সে দিন হাসে৷ তীব্র অভিমানের আভাস পায়৷ প্রেমময় অভিমান৷
কুয়াশার পরিক্ষা শেষ হয়েছে কালই আজই রাতের বাসে ফিরবে চেনা গন্তব্যে৷ মাধুবিলতা বেশ ভালোবাসে কুয়াশাকে তার সাথে দেখা করে এলো সবে৷
রুদ্র আজ আরো বেশি ব্যাস্ত৷ আকাশ চুম্বি অভিমান নিয়ে সে বাড়ি থেকে এখানে এসেছে আরোহীও গ্রামে যাবে৷ হুট করে সময়ের কথা মাথায় আসতেই ধ্যান ভাঙলো কুয়াশার৷ অলিন্দ ছেড়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই চেনা কারো সম্মুখীন হলো৷ রাফান দাঁড়িয়ে আছে রাফান কে নিজের কক্ষে দেখতেই তপ্ত শ্বাস টানলো অর্ধ প্যাকিং করা প্যাকিং করতে হবে৷
কুয়াশা রাফান কে বসতে বললো৷ ছেলেটা বসলো না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো তার মুখশ্রী দেখে মনে হলো অনেক কিছু বলতে চায় ছেলেটা৷ কুয়াশা যেন বুঝে ফেললো না বলা কথা গুলো৷
প্রণয় এত কষ্ট কেন? কিজের ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস ঢুকাতে ঢুকাতে তপ্ত শ্বাস টেনে মিনমিনিয়ে বললো,
"আমি ভালোবাসার পক্ষে কখনোই ছিলাম না এখনো আছি কি না জানি না৷ তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোকে বলা দরকার৷ অপাত্রে ভালোবাসা ঢালিস না রাফান! আরোহী তোকে ভালোবাসে মেয়েটাকে কষ্ট দিস না৷"
এইটুকু বলে ক্ষানিকটা মাথা উঠিয়ে তাকালো রাফানের দিকে অত:পর ফের নিজের কাজ করতে করতে বললো,
"ভালোবাসার সংসার থেকে মায়ার সংসার টা বেশি শক্ত পোক্ত হয় জানিস তো? ভালোবাসা যেকোনো সময় হারিয়ে যায়৷ আর মায়া? সর্বকাল অটুট থাকে ছাড়তে গেলে মনে হয় আমি ওকে ছাড়া থাকবো কি করে? আমি তো ওর মায়ায় জড়িয়েছি৷
মানুষ ভুল বলে, যে ভালোবাসা না থাকলে এক সাথে থাকা যায় না৷ কিন্তু আমি বলবো মায়া না থাকলে এক সাথে পথ চলা যায় না৷ মায়া মানুষ কে আটকে রাখে৷ ভালোবাসতে যে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই ভালোবাসতে গেলে অনেক অনুভুতির প্রয়োজন হয় আর মায়া? এটা এমনি এমনি হয়ে যায়৷ চাহিদা হীন জিনিস গুলো সুন্দর হয়৷ আরোহীকে ছাড়িস না৷"
বলে নিজের কাজ শেষ হতে প্রস্থান করবে ঠিক তখনই রাফান প্রশ্ন ছুড়লো কুয়াশার পানে,
"তুই ভালোবাসিস কুয়াশা রুদ্র ভাই কে?"
কুয়াশা ক্ষানিকটা থামলো পিছনে ঘুরলো না কাটকাট কন্ঠে উত্তর দিলো,
"না!ভালোবাসি না৷"
অতঃপর সে বিষাদে জর্জরিত সময়৷ সাতটায় বের হলো বাড়ি থেক নিচে এসে আরোহী আর কুয়াশা আলিঙ্গন করলো পরম আবেশে দু'জন আরোহী ট্রেনে যাবে৷ আরোহীর মুখ ঝকঝকে কুয়াশার আজ খুশি হওয়ার কথা থাকলেও খুশি হতে পারলো না৷ আরোহী উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,
"বিয়ের এক মাস আগে আমায় না জানালে আমি তোর বিয়েতে আসবোই না৷"
বিনিময়ে কুয়াশার মুখ জুরে গম্ভীরতা ছুঁয়ে গেলো৷ সে যেন বিয়ের কথাটা শুনতে চায়নি এখন৷ রিক্সায় উঠলো কুয়াশা বিদাই নিয়ে৷ আরোহী ও সি এনজিতে উঠবে ঠিক সে সময়ই আরোহী কে অবাক করে দিয়ে রাফান আরোহীর বাহু টেনে নিজের বুকে মিশালো খানিকটা ফিসফিসিয়ে বললো,
"কুয়াশার বিয়ের আগে নিজে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও৷ এ সপ্তাহেই তোমার বাড়িতে যাচ্ছি৷"
এক গুচ্ছ অভিমান নিয়ে ইটপাথরের কৃত্রিম এ শহর থেকে বিদাই নেওয়ার পালা এবার৷ একেবারের জন্য হয়তো নয়! পড়ার সুবাদে ফের হয়তো আসতে হবে? মানুষটার সাথে দেখা নেই অভিমান এর যে পাহার জমেছে৷ এটা তার ভালোবাসা? এক বার এসে বলা যেতো না আমি ব্যাস্ত আছি? সে দিনো না বলেই ফিরেছে৷
দীর্ঘ শ্বাস টানলো কুয়াশা বাসে উঠলো হঠাৎ বাসটির নাম দেখে চমকালো কি অদ্ভুত এই বাসে করেই পাষাণ লোকটার সাথে দেখা হয়েছিলো প্রথম কুয়াশার৷ চোখ মুখ শক্ত করে নিজের সিটে বসলো৷ অপছন্দের জানালার সিটটাতেই বসলো৷ এ সিটটা পছন্দ না কুয়াশার তবুও কেন যেন আজ বসতে ইচ্ছা করলো৷ তবে জানালাটা লাগাতে ভুললো না৷
চিত্তে হাজারো ভাবনার ভিড় জমিয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর 'কিছুক্ষণ' বইটা খুলে বসলো৷ অবচেতন মন নিয়ে বইয়ে মুখ গুজলো৷ যখন অবচেতন মন থেকে ভাবনা গুলো সরিয়ে বইয়ে ডুবলো পুরোপুরি ঠিক তখনই যেন ব্যাঘাত ঘটালো কেউ ধপ করে বসলো পাশের সিটে৷ বিরক্তে ক্ষানিকটা কুঁচকে উঠলো চোখ মুখ তবে বই থেকে মুখ সরালো না৷ পাশে বসা লোকটা এবার গা ঘেঁষে বসলো একেবারে৷ সুঠাম বাহু ঘামে ভিজে কুয়াশার ঠান্ডা শীতল বাহুতে ঠেকলো কুয়াশা তখন 'কিছুক্ষণ' উপন্যাসের চিত্রার ন্যায় অতি বিরক্ত হলো৷ পাশে থাকা লোকটাকে না দেখেই মনে হলো উপন্যাসের ট্রেনের কামরার টু সিটার স্লিপা মধ্যবয়সী বুড়ো লুঙ্গি পরে বসা সেই লোকটা৷ যদি সত্যি এমন হয় কুয়াশা চিত্রার মত ট্রেনে থাকবে না৷ এটাতো ট্রেন না আর যে কোথায় নামবো বাস থেকে সোজা নেমে পরবে৷
আকাশ চুম্বী বিরক্ত নিয়ে পাশে তাকাতেই যেন বিস্মিত হলো কুয়াশা৷ এটা বুড়ো না সয়ং উপন্যাসের আশহাবের মতো রুদ্র৷
হুট করে বিস্ময়টা কাটলো চিত্তে ভিড় জমালো অভিমান জানান দিলো লোকটা অন্যায় করেছে লোকটার সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ৷
তবে কি করবে এখন বুঝলো না বাস ছাড়েনি এখনো কিমতু নামবে কি করে? ও তো লোকটার সাথে কথা বলবে না৷
কুয়াশা থমথমে হয়ে বসে রইলো পাশে থাকা রুদ্র তা দেখে হাসলো শক্ত করে চেপে ধরলো কুয়াশার হাত মিনমিনিয়ে বললো,
"আপনি সাংঘা'তিক সাহসী হয়ে গেছেন কুয়াশা৷ আমায় অনুমতি ছাড়া আপনি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছেন কি করে?"
কুয়াশা কিছু বললনা হঠাৎই অভিমান গুলো উপচে পরলো আহ্লাদী হলো৷ সে তো এমন আহ্লাদী স্বভাবের নয়৷ দৃষ্টি সরালো কুয়াশা ঠিক তখনই রুদ্র নিজের দিকে ঘোরালো কুয়াশাকে সীমানা গুলো লঙ্ঘন করলো ঝাপটে নিলো বুকে কুয়াশা যেন খেই হারালো টুপটাপ পানি পরলো চোখ থেকে বক্ষ স্পর্শ করলো সে পানি এতেই যেন শীতল হলো সামনের মানুষটির হৃদয়৷ কন্ঠে কোমলতা এনে বললো,
"এমপির স্ত্রী হওয়ার জন্য আপনি তৈরী তো কুয়াশা? আপনি তৈরী না হলেও আমি তুলে এনে আপনাকে বিয়ে করবো আপনার মামাকে বলে দিবেন৷"
কুয়াশা এবার চোখ তুলে তাকালো৷ লোকটা নিজের পরিচয় লুকিয়েছে কেন তা ওর মা বলেছে সব৷ কুয়াশা রাজনীতি পছন্দ করে না তাই কিছু বলেনি রুদ্র৷ কুয়াশা কিছু বললো না রুদ্র এবার ঠিক ঠাক হয়ে বসলো সবে বাস টা ছাড়লো সিটে হেলান দিয়ে বসলো সে আজ প্রচন্ড ক্লান্ত সারাদিন ভোট কেন্দ্রে ছিলো এখন ফলাফল পেয়ে ওখানে ফর্মালিটি শেষ করে বাড়ি ফিরেনি ছোট মায়ের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে অভিমানী মেয়েটা চলে যাচ্ছে সেই বাস স্টেন্ডে আসতে হলো সোজা৷
'ছেলেদেরর অবস্থান যেখানেই থাকুক মা আর বউ এর সামনে একটু নিচু হতেই হয়৷"
রুদ্র সিটে মাথা এলিয়ে কুয়াশার পানে তাকালো মিনমিনিয়ে বললো,
"এখান থেকেই আমাদের শুরু হয়েছিলো কুয়াশা৷ আমরা ফের এখানেই এলাম, আমার কাছে আসুন কুয়াশা আমি অধীর হয়ে আছি আপনাকে পাওয়ার জন্য আমার বক্ষয'ন্ত্রণা থেকে এবার তো মুক্তি দিন?"
কুয়াশার কি হলো কে জানে? রুদ্রর কাধে নিজের মাথা রাখলো রুদ্র যেন আকাশ পেলো৷ উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বললো,
"ভালোবাসেন আমায় কুয়াশা?"
কাটকাট কন্ঠে উত্তর এলো,
"না!"
রুদ্র অবাক নয়নে তাকালো৷ রুদ্রকে আরেকটু অবাক করে দিয়ে তার বক্ষে মাথা ঠেকিয়ে লাজুক হেসে মিনমিননিয়ে বললো,
"ভালোবাসা থেকে প্রগাঢ় অনুভুতি আমায় জড়িয়েছে৷ আমি যে মায়ায় পরেছি৷ আপনার মায়ায়৷"
ঠিক তখনই আলতো আওয়াজে শোনা গেলো সুরতোলা সেই লাইন গুলো
দুচোখে আকলো শীত
বাহারি ডাকটিকিট
আলসে রোদের চিঠি
পাঠালো পিয়ন
তুই ছুলি যখন
তোরই হল এ মন
,,
সবে ভোর হলো মধ্যরাতে কুয়াশা, রুদ্র এসেছে বাড়িতে৷ সকাল সকাল ছাদ থেকে আয়াশকে চিঠি বাক্সের ভিতরে কিছু রাখতে দেখে নেমে এসেছিলো মেহরাব তার কিন্তু এখানে এসে বন্ধুকে পেলো না৷ কোথায় গেলো ছেলেটা? এখানে কি রেখেছিলো?
কালচে কাগজের এক খানা খাম৷ চিঠির খাম খাপটা থেকে পুরোনো পুরোনো গন্ধ আসছে৷ সাদা কাগজ কেমন কালচে হয়েছে এটা কালচে বলে নাকি বোঝা যাচ্ছে না কম্পিত হস্তে খাম টা চিঠি বাক্স থেকে নিলো এত বছর পরে চিঠি? কার চিঠি দিয়ে গেলো হুট করে চিঠি দাতার নাম দেখে চমিকালো৷ মৃ'ত প্রেয়সীর চিঠি৷ অপেক্ষার অবসান ঘটলো চিঠি এলো তবে চিঠি দেওয়ার মানুষ টা রইলো না৷
চিঠিটায় না জানি কি আছে? চিঠিটা নিয়ে দৃঢ় হেটে উপরে এলো ছাদের মাঝে চেয়ার টেবিলে বসে চিঠিটা খুললো অধীর আগ্রহে খুললো চিঠিটা৷ চঞ্চল হৃদ স্ফন্দন নিয়েই পড়লো চিঠিটা হুট করে যেন দম আটকে এলো৷ হৃদ স্ফন্দন থামলো শ্বাস টা নিতে পারলো না চেয়ার থেকে ঢুলে পরলো৷ নেত্র পল্লব অতি দৃঢ় নেত্র জুরে বিরাজ করছে বে'দনা, বিষাদ আ'র্ত'নাদ, অনুতাপ৷ অতঃপর সে ভয়াবহ মূহুর্ত ধরণী টা মায়ার৷জোরে নিশ্বাস ত্যাগ করলো শেষ নিশ্বাস৷ মায়া কেটে গেলে প্রাণ তো দেহ থেকে বিশ্রাম নিবেই৷ নি'স্তেজ হয়ে পরে রইলো এক প্রেমিক৷ সমাপ্তি ঘটলো অপেক্ষার, সমাপ্তি ঘটলো দেহের সমাপ্তি ঘটলো মেহরাব নামক প্রেমিক পুরুষের৷ আর প্রণয়, মায়া? সে তো রয়েই যায় অনন্তকাল৷
মায়ার লেখা সেই চিঠিটা....
প্রিয়,
বিশেষ করে প্রিয় বলার দরকার পরে না আমার৷ তবুও আজ প্রতিবারের মতই শেষ বার প্রিয় বললাম৷ এত দিন চিঠি গুলো ছিলো আমার অন্তঃকরণের এক গুচ্ছ অনুভূতির প্রচারণা মাত্র আপনার কাছে৷ অষ্টাদশী এক মেয়ের প্রণয়ের প্রচারণা প্রিয়র কাছে৷ কিন্তু আজ? আজ এক বিষাদিনীর বিষাদের কথা বলবো৷ আমি খুব অভিমানী জানেন আপনি? তবে আমার অভিমান সহজে হয় না আমি সহজে সব মুখ বুঝে সহ্য করতে পারি৷ আমার মনের ডাকবাক্সে আপনাকে নিয়ে তোলা আছে সহস্র অভিযোগ৷
আমায় একটু আগলে নিলে কি হতো এমন? আরেকটু আগে আমায় ভালোবাসলে কি হতো এমন? আপনার প্রতি আমার অভিমান যে এবার মৃ'ত্যুর পরেও রয়ে যাবে৷ আমার বাবার ফুল ছিলাম আমি সেই ফুল হুট করে আঁধারে ডুবে গেলো সেই আঁধারে থাকা আ'গুনে ঝ'লসে গেলো৷ আমার আপনার কাছে অনেক কথা বলার ছিলো আমি আঁধারে ডুবে যাওয়ার আগে একটু যদি আগলে নিতেন হয়তো বলতে পারতাম৷ আশ্রয় খুঁজতাম তাহলে আপনার বক্ষে৷ এমন ও হয়তো হতো না? রিয়ান ভাই প্রচন্ড কষ্ট দেয় আমায়৷ আমি প্রাণপণে চেষ্টা করেছি নিজেকে রিয়ান থেকে বাঁচার কিন্তু সে দিন আমায় কলঙ্কিনী করেই দিলো৷ এ থেকে তো আমার মৃ'ত্যুই শ্রেয় ছিলো৷ আপা, মা আমায় বিশ্বাস করে না৷ একটা মেয়ে সব থেকে অসহায় যখন তার মা বোন তাকে বিশ্বাস করে না৷ আকুতি মিনতি করেও লাভ হয়নি৷ এ জীবন নিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না আমি আজ আঁধার কাটার আগেই নিজেকে আঁধার থেকে মুক্তি দিবো৷
আমার সব টা দিয়ে ভালোবেসেও আপনাকে পাইনি এখন যখন আমি বি'ষাদিনী হয়েছি আপাকে দিয়ে বিয়ের খবর পাঠালেন? এবার আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিলাম৷ এবার আপনি আমায় না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাতরাবেন চিরকাল৷ আমার মৃ'ত্যুর পর ও আপনি আমায় ভালোবাসবেন আমার স্মৃতিতে ডুবে থাকবেন কিন্তু হাত বাড়িয়ে পাবেন না আমায়৷ আপনার বক্ষ পু'ড়বে প্রতিষেধক পাবেন না আপনি৷ আমি প্রচন্ড স্বার্থপর জানেন তো ? আমি চাই না আমার মৃ'ত্যুর পর ও আপনি কারো হন৷ আমার মায়ার অতলে ডুববেন কিন্তু এই মায়াকে পাবেন না৷ আপনি আমায় পাষাণ বলবেন হয়তো? কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে সত্যি আমি স্বার্থপর৷ আমি বাঁচতে চাই না এ ক'লঙ্ক নিয়ে তবে আপনাকে ছাড়তেও চাই না৷ আমি আপনার অন্তরে রয়ে যেতে চাই আপনার সমাপ্তি পর্যন্ত৷
আমি অন্য দের মত কখনোই চাইতে পারবো না আপনি অন্যকে নিয়ে সুখে থাকেন৷ আপনি আমারি থাকুন সমাপ্তি পর্যন্ত আপনার৷ আমি এ ক্ষেত্রে একটু স্বার্থপরই থাকতে চাই৷
আমার সমাপ্তি হোক,
তোমার অন্তঃকরণে আমায় পাওয়ার তৃষ্ণা প্রগাঢ় হোক৷
আমি হারিয়েও অমরণ রয়ে যাই,
তোমার স্মৃতিতে!
ইতি
আপনার মায়া.....
সমাপ্ত৷