" প্রেমিকার হাতে পুলিশ প্রেমিকের খু'ন৷"
এইটুকু পড়ে থামলো মেহেরাব সাহেব৷ দৃষ্টি তার এলোমেলো৷ অধর কোলে ঝুলে আছে এক চিলতে হাসি৷ সামনের টেবিলটায় খবরের কাগজ টা রেখে, চায়ের কাপটা নিলো! চায়ের কাপে চুমুক বসালো শরীর মন আরো বেশি ফুরফুরে হয়ে উঠলো৷ সারাদিন সময় থাকলেও সন্ধ্যায় তার খবরের কাগজ পড়তে একটু বেশি ভালো লাগে৷ এ বার্তা গুলো তার সাং'ঘাতিক প্রিয়৷
চায়ের কাপটা সামনের টি টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো সেলফের সামনে গিয়ে কে'চি টা নিয়ে আবার এগিয়ে এলো৷ সোফায় বসে খবরের কাগজ টা নিয়ে সেই লেখা টুকু কাটতে কাটতে পাশে থাকা বড় বোন কে বললো,
"জানিসতো আপা প্রেমিকাকে হা'রা'নো থেকে প্রেমিকার হাতে খু'ন হওয়া অনেক সুখকর৷"
মেহনাজ বি'র'ক্ত দৃষ্টিতে তাকালো ভাইয়ের দিকে৷ সারাদিন এত প্রেম প্রেম করতে করতে মাথা গেছে ভাইয়ের মেহনাজ এর ধারণা৷ তার সামনে বসে থাকা লোকটা তার চিরোকুমার ভাই গুনে গুনে দুই বছরের ছোট তার বয়স পয়তাল্লিশ তার ভাইয়ের তেতাল্লিশ৷ চিরকুমার হওয়ার কারণ, সে ভালোবাসার কাঙাল প্রথম প্রেম তার পূর্ণতা পায়নি৷ মেয়েটা হঠাৎই না বলে নি'খোঁ'জ হয়ে যায়৷ মেয়েটার নি'খোঁ'জ হওয়া বড়ই র'হ'স্যজনক ব্যাপার আপনজন ও জানে না কোথায় গেছেন৷ নাকি জেনেও বলে না তা সে জানে না৷ মেয়েটাকে বলাও হয়নি ভালোবাসার কথা৷ হুট করে তার জীবনে এসে লু'ট করে নিয়ে যাওয়ার মত মেহরাব সাহেবের ধারণা৷
এরপর কিছুদিন দেবদাসের মত বেকার ঘুরে ফিরে খেয়েছে তারপর হঠাৎই তার মনে হয় জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না৷ তার ধারণা মেয়েটির সাথে ফের দেখা হবে ফের আগের মত তার ডাকবাক্সে চিঠি আসবে৷ লেখালেখি ভিষণ রকমের প্রিয় ভদ্রলোকের৷ তবে প্রকাশ করেনি কখনো প্রেয়সীকে নিয়ে হাজার পান্ডুলিপি এখনো জমে আছে ওই মোটা ডায়েরিটায়৷
..
"পাশের সীটটা কি খালি আছে ম্যাডাম"
অচেনা পুরুষালী কন্ঠে ধ্যানভ'ঙ্গ হলো কুয়াশার,বই পড়ার সময় তার কোন রকমের কথা পছন্দ না৷ ক্ষানিকটা বি'র'ক্ত হলো! চোখে মুখে বি'র'ক্তির রেশ ফুটলো৷ তবে কে ডাকলো সে দিকে পাত্তা দিলোনা, এ বাসে তার কোন কারো সাথেতো গুরুত্বপূর্ণ কথা নেই তাই পাত্তা দেওয়ার ও কিছু নেই ভাবলো সে৷ নির্বাক চিত্তে সে ফের মগ্ন হলো বইয়ের পাতায়৷ মেয়েটা বড়ই অন্তর্মুখী লোক কোলাহল পছন্দ না তার৷ ওপাশ থেকে ফের ভেসে এলো পুরুষালী সেই কন্ঠ
"আপনার পাশের সীটটায় কি বসতে পারি আমি?"
এবার মেজাজ উগ্র হলো মেয়েটার, তীব্র বি'র'ক্ত আষ্টেপৃষ্টে নিলো৷ বই থেকে মুখ সরিয়ে ক'ঠো'র কন্ঠে শুধালো ,
"বাস টা কি আমার পার্সোনাল? "
সামনে থাকা যুবকটি যেন এমন প্রশ্নের মানে বুঝলোনা তবুও অবুঝ ভাবে উত্তর দিলো,
"হতেও পারে বলাতো যায়না৷ কেন বলুন তো?"
ছেলেটির এমন সহজ স্বীকারোক্তি শুনে বি'র'ক্ত হলো আরো কুয়াশা৷ মানুষ এমন ভিত্তিহীন কথা বার্তা বলে কি করে? কুয়াশা ফের থমথমে কন্ঠে উত্তর দিলো,
" জিগ্যেস করছেন কেন? খালি আছে ইচ্ছে হলে বসবেন নয়তো দাঁড়িয়ে থাকবেন অন্যদের বি'র'ক্ত করছেন কেন?"
বলেই কুয়াশা একরাশ বি'র'ক্ত নিয়ে বইতে মগ্ন হলো৷ ছেলেটি যেন এবারো বোকাবনে গেলো৷ ও না সরলে বসবে কি করে?মেয়েটা মানুষের সাথে কথা বলতে জানে না নাকি? এভাবে কেউ কথা বলে? জানালার পাশের সীটটা ফাঁ'কা মেয়েটা ওখানে না বসে সামনের সীটে বসেছে তাহলে বসবে কি করে?
"আপনি না সরলে বসবো কি করে? সরে উইন্ডো সীটে যান আমি এখানটায় বসি?"
কুয়াশার হুস ফিরলো যেন!সে তো সামনের সীটে বসেছে৷ তবুও দমলো না থমথমে কন্ঠে বললো,
" জানালার পাশের সীট আমার পছন্দ নয়৷ আর প্রথমেই বললে পারতেন আমি সরে যেতাম৷"
বলে উঠে দাঁড়ালো কুয়াশা, ছেলেটি অবাক না হয়ে পারলো না৷ দুনিয়ায় এমন মেয়ে হয়তো নেই যে জানালার পাশের সীট পছন্দ না কিন্তু এ মেয়ে বলছে জানালার পাশের সীট তার পছন্দ না? কি অদ্ভুত মেয়ে৷ ছেলেটি কথা বাড়ালোনা ধপ করে বসে পরলো জানালার পাশে, নরে উঠলো পুরো সীট টা৷ কুয়াশাও বসলো৷ ফের বইতেই মুখ গুজলো৷ যখন কুয়াশা বইতে পূর্ণ বিভোর সেই ছেলেটির কন্ঠ ভেসে এলো কর্ণকুহরে ছেলেটি মৃদু কন্ঠে বললো,
" মেয়ে মানুষ বড়ই বিচিত্র সহজ কথাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বললে চিত্তে শান্তি মিলে না৷ "
কুয়াশা এবার পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ছেলেটির পানে, ছেলেটি তখন তার ব্যাগে কিছু খুঁজতে ব্যস্ত৷ হাতে মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে নতুন ব্যা'ন্ডেজ র'ক্তে'র ছিপছিপ দাগ স্পষ্ট৷ এলোমেলো চুল মুখে মাস্ক ভালো ঠেকলোনা ছেলেটাকে কুয়াশার কাছে৷ গুন্ডা টুন্ডা নয়তো আবার? ছেলের কথায় রা'গ হলেও কথা বাড়ালো না বইয়ের পাতায় থমথমে দৃষ্টি ফেললো নিজের৷
আজকের আবহাওয়া বেশ শীতল মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঝাপটা আসছে বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে৷ ঘড়ির কা'টা তখন বারোটা বিশ এর ঘরে৷ টাঙ্গাইল নামক শহরে বান্ধবীর বিয়ে উপলক্ষে গিয়েছিলো আজ সকালেই বন্ধু মহলের সকলের সাথে কিন্তু শো'র'গো'ল বরাবরের মতই অপছন্দ কুয়াশার৷ তাই মন টিকলো না সন্ধ্যে বেলাই সবার বা'র'ণ না শুনেই ফের রওনা হয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্যে৷
কুয়াশার গন্তব্য নারায়ণগঞ্জ যেখানে সব থেকে স্বস্থি মিলে তার৷
বৃষ্টির পরিমান বাড়ছে পাল্লা দিয়ে বাতাসের বেগে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে কুয়াশাকেও৷ বইয়ের পাতাটা নিমিষেই ফোটা ফোটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলো৷ কুয়াশা ক'ঠি'ন চোখে কাধ বাকিয়ে তাকালো ছেলেটির দিকে ছেলেটির দৃষ্টি তখন বাইরে৷ কুয়াশা কথা বললো না ক্ষানিকটা উঠে হাত বাড়িয়ে কিছু না বলেই জানালাটা বন্ধ করে দিলো৷ এতে যেন ছেলেটি অবাক হলো! আরেকটু হলে তার হাতেই লেগে যেতো৷ মেয়েটার কি জ্ঞান নেই? সে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"জানালা টা এভাবে লাগালেন কেন?"
কুয়াশা বই বন্ধ করে বেপরোয়া ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,
"বৃষ্টির পানির ফোটা গুলো আমায় জ্বা'লা'চ্ছিলো৷ আপনিতো বোধহীন হয়ে বসেছিলেন আর বৃষ্টি আমার মোটেও পছন্দ না তাই লাগিয়ে দিলাম৷ "
ছেলেটি ফের অবাক হলো, মেয়েদের বৃষ্টি পছন্দ না? মেয়েটা একেবারেই অদ্ভুত৷ ছেলেটিকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভুরু কুঁ'চকে প্রশ্ন ছু'ড়'লো কুয়াশা,
" এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? "
কুয়াশার প্রশ্ন শুনে থতমত খেলো যেন সে একটু নড়েচড়ে বসলো অতঃপর কাউকে ফোন করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷
" হ্যালো! রুদ্র বলছি৷ "
চোখ বন্ধই ছিলো কুয়াশার হঠাৎ কর্ণকুহরে ভেসে এলো ছেলেটির কন্ঠ৷ চোখ মেলে তাকালো সে৷
ওপাশে কি বললো শোনা গেলো না তবে কুয়াশার পাশে বসা রুদ্র নামক ছেলেটি ফের শ'ক্ত কন্ঠে বললো,
"মে'রে দিবো হাতে পেলে বলে দিস৷"
এইটুকু বলে উষ্ঠ কোণে কুটিল হাসি ফুটলো৷ যা কুয়াশার নেত্র এড়ালো না৷ ছেলেটি ভালো না? একটুও ভালো না চোখ কান খোলা রেখে থাকতে হবে যতক্ষণ না নারায়নগঞ্জ গিয়ে পৌঁছাছাচ্ছে৷
দেরটা বাজে বাড়িতে এসে পৌঁছালো কুয়াশা ক্লান্ত দেহ নিয়ে৷ মেয়েকে এত রাতে দেখে বেশ চমকেছিলো কুয়াশার মা মেহনাজ৷ সকালে গেলো বন্ধুদের সাথে তিনদিন থাকার কথা ছিলো আজই চলে এলো? এত রাতে কেন এলো, কেন একা এলো, ফোন কেন করেনি এ নিয়ে কত প্রশ্ন করলো কিন্তু মেয়েকি আর উত্তর দিলো? দিলো না৷ ক্লান্ত শরীরে লাগেজ টেনে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আ'ট'কে দিলো৷ মেহনাজ অবাক হলো না মেয়েটা এমনই৷ এক রু'খে, যখন ইচ্ছে হবে নিজ থেকেই এসে বলবে বেশি কথা জিগ্যেস করলে রে'গে যাবে৷ তাই বেশি কথা বাড়ালো না দরজা আ'ট'কে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি কেউ দরজার বেলটা পূনরায় বাজালো৷ মেহনাজ বি'র'ক্ত হলো ঘুম টা ছুটেই যাচ্ছে মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে ঘুম হয় নাকি আর? এমনি সারা রাত মেয়েটার চিন্তা ঘুরবে মাথায়৷ সে জানে এখন কে এসেছে৷ আবার গিয়ে খুলে দিলো কপাটটা হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো তার চিরকুমার ছোট ভাই মেহরাব৷ হাতে তার কলম আর চশমাখানা! আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,
"হে রে আপা, তোর র'স'কষহী'ন কা'ঠখো'ট্টা মেয়েটা এসেছে নাকি এত রাতে?"
মেহনাজ হঠাৎই হাসি পেলো তবে হাসলোনা৷ বিদ্রুপ কন্ঠে বললো,
"হ্যাঁ এসেছে৷ আমার মেয়েকে এসব বলছিস কেন? তোর মতইতো৷"
মেহরাব সাহেব ভ্রু কুচকে বোনের দিকে তাকালো! বললো,
"আমায় দোষ দিচ্ছিস এখন? তা এত রাতে আসলো কেন? গিয়েছিলোতো বিয়ে খেতে৷ আগেই বলেছিলাম পাঠাস না তোর মেয়ে এসব আনন্দের পরিবেশে থাকার মেয়ে না৷ কিন্তু আজ একেবারে বা'ড়াবা'ড়ি করেছে একজন মেয়ে একা এত রাতে আসা ঠিক হয়েছে?"
মেহনাজ এবার বি'র'ক্ত হলো৷ এত রাতেকি খাজুরেআলাপ করতে এসেছে? ঘুর হারাম করার জন্য মামা ভাগ্নের জুরি মেলা ভার৷ মেহনাজ বি'র'ক্ত নিয়ে বললো,
"আজ আবোহাওয়া দেখেছিস? তোর লেখালেখির মোক্ষম সময় যা গিয়ে লিখতে বোস আমায় শান্তি দে৷"
বলে ঠেলে ঠুলে ভাইকে বিদায় করলো মেহনাজ৷ মুখের উপর দুয়ার লাগিয়ে দিলো৷ একরাশ অনিদ্রা আর বিরক্ত নিয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো৷ মেহরাব সাহেব বোকাবনে গেলো৷
.
কাক ভোরে নিজের বাড়ির সদর দরজার সামনে অ'চে'তন অচেনা এক পুরুষ কে পরে থাকতে দেখে থমকালো কুয়াশা৷ বি'স্মিত মুখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে কেমন দাঁড়িয়ে রইলো৷ হঠাৎই হুস ফিরতে ক'ম্পি'ত কন্ঠে 'মা' বলে ডেকে উঠলো৷ বুক যেন ধুরু ধুরু করছে ভয়ে
মেয়ের কন্ঠ শুনে হুড়মুড়িয়ে উঠলো কুয়াশার মা মেহনাজ সদর দরজার সামনে এগিয়ে এলো৷ সাথে কুয়াশার ছোট ভাই হীম ও কুয়াশা এগিয়ে গেলো যুবকটির দিকে ততক্ষণে অন্ধকার এখানে ঠিকমত মুখটা দেখা যাচ্ছে না কুয়াশার ভাই হীম লাইট জ্বা'লাতেই যুবকটিকে দেখে চ'ম'কালো কুয়াশা৷
দুই
কাক ভোরে নিজের বাড়ির সদর দরজার সামনে অচেতন অচেনা এক পুরুষ কে পরে থাকতে দেখে থমকালো কুয়াশা৷ বিস্মিত মুখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে কেমন দাঁড়িয়ে রইলো৷ হঠাৎই হুস ফিরতে ক'ম্পি'ত কন্ঠে 'মা' বলে ডেকে উঠলো৷ বুক যেন ধুরু ধুরু করছে ভয়ে
মেয়ের কন্ঠ শুনে হুড়মুড়িয়ে উঠলো কুয়াশার মা মেহনাজ সদর দরজার সামনে এগিয়ে এলো৷ সাথে কুয়াশার ছোট ভাই হীম ও কুয়াশা এগিয়ে গেলো যুবকটির দিকে ততক্ষণে অন্ধকার এখানে ঠিকমত মুখটা দেখা যাচ্ছে না কুয়াশার ভাই হীম লাইট জ্বা'লাতেই যুবকটিকে দেখে চ'ম'কালো কুয়াশা৷ সামনে পরে থাকা লোকটি কালকের সেই রুদ্র৷ কিন্তু এই ছেলে এখানে কি করছে? গুন্ডা ছেলেটা ওর পিছন পিছন আসেনিতো? ম'রে টরে যায়নি তো ছেলেটা?
কুয়াশা সচকিত কন্ঠে বললো,
"ভাই একে ভিতরে নিয়ে আয় দেখ বে'চে আছে কি না৷"
হীমের মুখেও বিস্ময়ের ভাব, এ তো রুদ্র সেই আসতে বলেছিলো কিন্তু এত সকালে এখানে? তার তো বিকেলে আসার কথা ছিলো?
হীম রুদ্রকে ঘরে নিয়ে এসে পানি দিলো৷ সবাইকে জানালো এই ছেলেটাই সে যাকে সেই আসতে বলেছে৷ হীম এ ছেলেকে আসতে বলেছে শুনে তখন বেশ চটে ছিলো কুয়াশা৷
চিলেকোঠায় দুটো ঘর একটায় ওর মামা থাকে আরেকটা খালি পরে ছিলো৷ উহু খালি বললে ভুল হবে সেটা কুয়াশার আঁকার ঘর ছিলো এখন ওর ঘরের অলিন্দ বড় করেছে পাশ বাড়িয়ে৷ অলিন্দেই এখন থেকে আঁকার জিনিস পত্র রাখবে, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপরের ঘরটা ভারা দিবে৷ তখনি তার ভাই হীম বলেছিলো ঢাকা থেকে কে তার চেনা জানা একজন আসবেন৷ ব্যাচেলর ভারা দিতে প্রথম থেকেই বা'র'ণ করেছিলো কুয়াশা কিন্তু কেউ শুনেনি৷ হীমের চেনা জানা তাই ওর মা ও রাজি হয়ে গেলো ছেলেটার অনেক প্রশংসাও করেছে বটে হীম৷
"ভাইয়া তোমার আসার কথা ছিলো আজ বিকেলে তুমি ভোরের দিকে এলে যে? কোনো সমস্যা হয়েছে কি? আর এত চো'ট পেয়েছো কি করে?এভাবে পরে ছিলে কেন?"
হীমের কন্ঠে ধ্যান ভা'ঙে কুয়াশার! রুদ্র ও চেনা কন্ঠে ফিরে তাকায়৷ হীম কে দেখে যেন স্বস্তি পায় হুড়মুড়িয়ে উঠে বলে,
"আরে হীম এটা তোমার বাড়ি? সারা রাত তোমার দেওয়া ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে হাপিয়ে উঠেছিলাম৷ 'সুখকুঞ্জ' নামের কোন বাড়ি খুঁজে পাইনি৷ তোমার নাম্বারো বন্ধ ছিলো৷ এ বাড়ির বাইরে টূ লেট ঝুলানো ছিলো তাই ভাবলাম তোমায় না হয় পরে খুঁজবো অসুস্থ থাকায় শরীর একেবারে ক্লান্ত হয়ে পরেছিলো কখন জ্ঞান হা'রি'য়েছি খেয়ালই নেই৷"
রুদ্রের কথায় লজ্জিত হলো হীম৷ তার খবর রাখা উচিত ছিলো ফোনটা খা'রা'প হয় কালই হুট করে৷ তাদের বাড়ির নাম সুখকুঞ্জ আর নামের নিচেই বাড়ির নাম্বার দেওয়া রয়েছে৷ বড় কাঠ দিয়ে খো'দাই করে বানানো হয়েছিলো সেটাই খুলে পরে গেছে কিছু দিন আগে৷ ব্যস্ততার কারণে আর ঠিক করাও হয়নি৷
রুদ্রের সাথে তার পরিচয় কলেজ থেকে রুদ্র তার সিনিয়র৷ সিনিয়র হলেও রুদ্রের বন্ধুদের সাথেই হীমের উঠা বসা৷
হীম বললো রুদ্রিকে সবটা, রুদ্র নামের ছেলেটিও যেন স্বস্থি পেলো৷ ভুল করে সঠিক ঠিকানায়ই এসেছে৷
এ শহরটায় তার থাকতে হবে কিছু মাস তার সময় খা'রাপ যাচ্ছে তাইতো তার প্রিয় শহর ছেড়ে এখানে আসতে হলো৷
ট'গ'ব'গিয়ে আসা দুধে চায়ের পাতা দিলো কুয়াশা সাথে সাথেই দুধটা লালচে রঙ ধারণ করলো৷ চায়ের সতেজ গন্ধ্যে ম ম করে উঠলো রান্না ঘর৷ চা পাতা গুলো তার মামার বন্ধু দার্জিলিং থেকে এনেছে সেখান থেকেই দুই প্যাকেট এবাড়িতে দিয়ে গেছে৷ তার মামার বেশ প্রিয় এ চা টা৷ চায়ের রঙ আরো ঘন হতেই চায়ের পাত্রে চা টা ঢেলে কাপ আর চা নিয়ে হাটা ধরলো ছাদের উদ্দেশ্যে৷ তার নিত্যদিনের কাজ এটা৷ পছন্দের কাজ বলা চলে,আরো ভোরে তারা চা খায় ছাদে বসে তবে আজ কুয়াশা ছাদে খাবে না দিয়ে চলে আসবে৷ রুদ্র নামের ছেলেটা সেখানেই আছে৷ ওই ছেলেকে তার একটুও পছন্দ নয় কোথাকার কোন ছেলে বাড়িতে ঢুকালো তার মা ভাই কে জানে?
মেহরাব সাহেব আজ মহা খুশি ছেলেটাকে তার ভিষণ পছন্দ হয়েছে৷ তার লেখা কবিতা গুলো এখন শোনাতে পারবে কাউকে৷
ছাদের মধ্য বরাবর টেবিল বিছানো সেখানে নিত্যদিনকার মত বসে আছে হীম, মেহরাব আর মেহনাজ৷ রুদ্র নামক ছেলেটাও আছে আজ তবে সে কুয়াশার চেয়ারে বসেছে এ নিয়ে সবার মনে আ'তং'কের শেষ নেই৷ ও মেয়ে যা নিজের জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করুক তা কুয়াশার পছন্দ না৷ আর মেয়ে বড়ই স্পষ্টভাষী কখন কি বলে দেয় বোঝা বড় দায়৷ আর ছেলেটা ভাড়াটিয়া হয়ে এলেও হীমের অতিথি তো? অতিথি কে কি কিছু বলা যায়? কুয়াশা ছাদে পা রাখতেই তেলে বেগুনে জ্ব'লে উঠলো৷ তার বসার জায়গাটায় ছেলেটা বসেছে তা দেখে তার রা'গ কয়েকগুন বাড়লো৷ তার পছন্দের জিনিস কেউ ব্যাবহার করুক তা একদম পছন্দ না কুয়াশার৷
থপ করে কায়ের ট্রে টা টেবিলের মাঝ বরাবর রেখে শক্ত কন্ঠে শুধালো রুদ্রকে,
"আপনি আমায় জায়গায় বসেছেন কেন?"
আকস্মিক এমন প্রশ্নে ভরকালো রুদ্র৷ সবার দিকে তাকালো সবাই ভরকেছে তা বোঝাই যাচ্ছে৷ এ মেয়ে যে এমন তা রুদ্র ভালো করেই জেনেছে কাল চেয়ার থেকে উঠলো সে! তবে জায়গা ছাড়লো না৷ চেয়ারে কিছু একটা খুঁজলো অতঃপর ফের বসে মেহনাজ এর দিকে তাকিয়ে বললো,
"কই চেয়ারে তো কারো নাম নেই৷ আন্টি চেয়ার বানানোর সময় কি দলীল দস্তগীর করে বানিয়েছিলেন? যার জন্য চেয়ার সে ছাড়া আর কেউ বসতে পারবে না?"
রুদ্রের এমন কথা মেহরাব সাহেব হো হো করে হেসে উঠলো হঠাৎই মেহনাজ ঠোঁট টিপে হাসলো৷ ছেলেটা চমৎকার এইটুকু সময়েই কেমন সহজ হয়ে গেছে সবার সাথে৷ মায়ের দিকে রাগী রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই মা চোখের ইশারায় বললো 'থাক'৷ কুয়াশা কিছু বললো না ক'টম'ট করতে করতেই এসে চা ঢেলে দিলো সবাইকে৷ রুদ্র ছেলেটার অধরেও দুষ্টু হাসি৷ হাত আর মাথায় এখিনো সেই ব্যা'ন্ডে'জ৷ তার চা টা হাতে দিলো না টেবিলের উপর রেখে দিলো আওয়াজ করে৷ রুদ্রর সাথে চোখাচোখি হলো কুয়াশার৷ ছেলেটা দৃষ্টি বদল করলো না দু'ষ্টু হাসিটা প্রগাঢ় হলো৷ যার কারণে কুয়াশা আরো রেগে গেলো৷
কুয়াশাকে এবাড়িতে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলো পরে জানতে পারে এ অদ্ভুত মেয়েটা হীমের বোন৷ এমন একটা প্রানবন্ত ছেলের এমন খরখরে মে'জা'জি বোন কি করে হয়?
"হ্যারে আপা চিঠি বাক্সে কোন চিঠি এসেছে?"
চায়ে চুমুক দিয়ে নিত্যদিনের মত প্রশ্ন ছু'ড়ে দিলো মেহরাব সাহেব৷ তার নিত্যদিনের প্রশ্ন এটা সে প্রতিদিন অপেক্ষা করে তার প্রিয় তাকে ফের চিঠি দিবে৷ তার জীবনে ফের মায়া আসবে পরিপূর্ণ প্রণয় নিয়ে৷ কিন্তু তার অপেক্ষার অবসান ঘটেই না৷ সেই মায়া কন্যার জন্যইতো বিয়ে টা করলো না সে নাকি অপেক্ষা করবে তার জীবন ইতি ঘটার আগ পর্যন্ত৷
প্রতিদিনের মত তার মন ক্ষুন্ন করে মেহনাজ স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
"কোন চিঠি আসেনি৷ ভাই তোর এই প্রশ্ন টা আমার ভালো লাগে না আর৷ এখন কি চিঠির যুগ? কে চিঠি দিবে?"
মেহনাজ একই প্রশ্নে এখন আর বি'র'ক্ত হয় না তবে কথা শুনাতেও ভুলে না৷
রুদ্র কেমন কৌতুহলী হলো৷ মেহরাব সাহেব এ প্রশ্ন প্রতিদিন করে? কিন্তু কেন?
রুদ্র এবার মুখ খুললো,
"কে চিঠি দিবে?"
মেহরাব সাহেব চায়ে শেষ চুমুক দিলো তপ্ত শ্বাস টানলো৷ তার মুখ চোখ চকচক করে উঠলো আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত হলো উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
"মায়াকন্যা৷"
মেহরাব সাহেবের চোখে মুখে শান্তির চিহ্ন সে যেন নামটা বলেই শান্তি পাচ্ছে, হৃদয়ের শান্তি৷ রুদ্র আরো কৌতুহলী হলো কে এই 'মায়াকন্যা' জানার জন্য৷ সেই নব্বই দশকের মত সে কি এখনো চিঠি দেয়?
রুদ্র অবাক হয়ে বললো,
"কে এই মায়া কন্যা?"
মেহরাব সাহেব হাসলেন তৃপ্তিকর হাসি৷ অতঃপর হুমায়ুন আহমেদ এর অপেক্ষা বইটা টেবিলের উপর থেকে নিয়ে চশমা পরতে পরতে উত্তর দিলেন,
"আমার অন্দরের মালকিন৷"
বেশ অবাক হলো রুদ্র৷ কি বলছে ভদ্রলোক? রুদ্র এ বাড়ির সবার কথাই শুনেছে আগে৷ কুয়াশার একরুখের কথা শুনেছে৷ হীমের মা মেহনাজের প্রানবন্ত বন্ধুত্তপূর্ণ স্বভাবের কথা শুনেছে মেহরাব সাহেব চিরকুমার এ ও শুনেছে কিন্তু সে কেন চিরকুমার তা জানা হয়নি৷
রুদ্র কৌতুহল নিয়ে কিছু বলবে এর আগেই কুয়াশা কা'ট'কাট কন্ঠে প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"গুন্ডামী গুন্ডামী করে এখানে উঠে এসেছেন নাকি? শুনুন ছেলে এখানে ওসব চলবে না৷"
রুদ্রর এবার রাগ হলো৷ মেহনাজ অস্বস্তিতে পরলো৷ মেয়েটা না জেনে মানুষ কে এমন কি করে বলে? একরোখা স্বভাব হয়ই মানুষের তাই বলে এমন? অদ্ভুত বড়ই অদ্ভুত৷
..
"প্রতিদিন এমন বখাটেদের মত বাইক নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ কি প্রান্ত ভাই?"
বলেই বেলি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রান্তর দিকে৷ প্রান্ত নামক ছেলেটি একেবারে বেপরোয়া প্রতিদিন কলেজ থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে এই গলিতে বন্ধুদের নিয়ে বসে থাকে, মাঝে মাঝে অসভ্য বন্ধু গুলো ও ভাবি ভাবি বলের রাস্তার মাঝে জ্বালাতন করে৷ প্রান্ত বাইকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো৷ বেলির কথা যেন পাত্তাই দিলো না বাইকের উপর উঠে বসলো মুখে সিগারেট ঢুকিয়ে লাইটার জ্বালালো অতঃপর কালো চশমা খানা চোখ থেকে শরীয়ে অদ্ভুত হেসে উত্তর দিলো,
"তোর চোখে আমার জন্য বি'র'ক্ত, আমার যে ভিষণ প্রিয়৷ কি করবো বল? এমন বি'র'ক্ত চাওনি আমায় বার বার পা'গ'ল করে রে বেলি রানী৷ তাইতো যেচে পা'গ'ল হতে আসি৷"
তিন
বাড়িটির নাম 'সুখকুঞ্জ' পুরোনো দোতলা বাড়ি৷ উহু দোতলা বললে ভুল হবে মেহরাব সাহেবের ভাষ্যমতে আড়াইতলা, ছাদের উপরেও দুটো রুম আছে যেটাকে তারা চিলেকোঠার ঘর বলে৷ এ বাড়ির নিচ তলার অর্ধেকটা জুরে বই আর বই! লাইব্রেরী মত৷ মেহরাব সাহেব পনেরো বছর বয়স থেকে তেতাল্লিশ বছর জীবনের সংগ্রহ নিচ তলার কাঠের সেলফ গুলোর বই৷ দেখলে মনে হয় কলেজের বিশাল একটা পাঠাগার কিন্তু না এগুলো একান্ত তার৷কুয়াশাও বই পড়তে ভিষণ পছন্দ সেখানে তার সংগ্রহ বই ও রয়েছে৷বাড়ির নিচতলার ওই লাইব্রেরি টা মেহরাব সাহেব আর কুয়াশার কাছে শান্তির স্থান আর লাইব্রেরির পাশেই ছোট্ট একটা কক্ষ রয়েছে সে কক্ষটা মেহরাব সাহেবের একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস রয়েছে কেও তাতে হাত ও দেয় না, সে কক্ষে যায় ও না৷
বাড়ির সামনেই কিছুটা খালি জায়গা রয়েছে সেখানে কুয়াশার লাগানো বিভিন্ন ফুলের গাছ৷ আর তার পছন্দের টকটকে র'ক্ত জবা গাছটা৷ বাড়ির মেইন গেটটা জুরে আছে বাগানবিলাশ ফুলের গাছ গোলাপি রঙের গাছটা বাড়িটাকে ফুঁটিয়ে তোলে এর পাশেই দশ ইঞ্চি কৃত্রিম ইট পাথরের বাউন্ডারির দেওয়া দেয়ালটায় জ্বল জ্বল করছে বাড়ির নামটা৷ কাল বিকেলে মিস্ত্রি দিয়ে লাগিয়েছে মেহরাব সাহেব৷ বাড়ির নামটা এতদিন ছিলোনা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো৷ মেইন গেট এর ভিতরের দিকে দেয়ালে চিঠি বাক্স খানা লাল রঙ করা এ বাড়িটা তার বাবার কালের তখন থেকেই এ চিঠি বাক্সটা লাল রঙ কালচে হয়ে গেছে এর উপরই মেহরাব সাহেব রঙ করেছে৷ বুক ভরা আশা নিয়ে আজ নিজেই চিঠি বাক্সটা খুললো কিন্তু বরাবরের মত ক্ষুন্ন হলো হৃদয়, তবে সে আশাহত হলো না৷নেই চিঠি! আঠারো বছর আগে এ চিঠি বাক্সখানায় নিত্যদিন একটা করে চিঠি আসতো৷ প্রেয়সীর লেখা চিঠি সে চিঠি জুরে থাকতো অনুভূতি আর অনুভুতি৷
আজ আসেনি তো কি হয়েছে? আসবে একদিন সে জানে আঠারো টা বছরি এ অপেক্ষায় আছে মৃ'ত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবে ক্ষ'তি'কি? মায়া কন্যা কি লিখতে ভুলে গেছে? নাকি বাড়ির ঠিকানা ভুলে গেছে? আর কোথায় খুঁজবে? কম তো খোঁজেনি৷ আবার কি নতুন করে খোঁজ চালাবে?
সবে নিদ্রা থেকে উঠলো রুদ্র শরীর টা আজ তার ঠিক লাগছে৷ কাল সারা দিন তো এখানেই খেলো আজ রান্না বান্না করবে কে? সে তো রান্নার 'র' ও জানে না৷ ঘড়ির কা'টা সাতের ঘরে সে আরো সকালে উঠে আজই দেরি হয়ে গেলো৷ কাল বেশ রাত পর্যন্ত হীমের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়েছে৷ নিজের কক্ষের দরজার সামনে থেকে সরে রেলিং এর কাছে এলো এখানে গাছ লাগানো পাঁচ ইঞ্চি করে দুরত্ব রেখে এক একটা গাছ লাগানো রেলিং এর উপরেই টবের মত বানানো৷ সে যে জায়গাটায় দাঁড়িয়েছে সেখানে একটা সুন্দর সাদা গোলাপের গাছ বড় বড় গোলাপ ফুঁটেছে গোলাপের দিকে হাত বাড়াবে ঠিক তখনি পিছন থেকে মেয়েলি ক'র্ক'শ কন্ঠ ভেসে এলো,
"খবরদার হাত দিবেন না গাছে৷"
রুদ্র ফুলে স্পর্শ করলো না হাত গুটিয়ে পিছনে ফিরলো মেহনাজ আর কুয়াশা৷ কুয়াশার হাতে চায়ের ট্রে টা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে তড়িৎ গতীতে এগিয়ে এলো রুদ্রের দিকে থমথমে কন্ঠে বললো,
"এটা ধরছেন কেন? আমার জিনিসে হাত দিবেন না আপনি৷ খবরদার!"
মেহনাজ মেয়ের এহেন ব্যাবহারে হ'তা'শ মেয়েটাকে এখনো কিছু শেখাতে পারলো না৷ কুয়াশার কথায় রুদ্র হাসলো তীর্যক সেই হাসি এবার কুয়াশাকে উপেক্ষা করে সাং'ঘা'তিক এক কান্ড করে বসলো৷ গাছ থেকে ফুলটা ছি'ড়'লো সে কুয়াশা বিস্মিত নয়নে সে দিকে তাকালো৷ তার পছন্দের ছিলো সাদা গোলাপ টা৷ মেহনাজ ভীত চোখে তাকিয়ে আছে না জানি কি করবে এখন এ মেয়ে৷ কুয়াশা কিছু বলবে এর আগেই রুদ্র বললো,
"দুঃখিত আন্টি! আপনার মেয়ে সব বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে৷ আমি ফুলটা ছি'ড়'তাম না যদি সে না বারণ করতো৷আমি মেয়ে মানুষ নই যে ফুল নিয়ে খেলবো৷"
এইটুকু বলে ফুলটা নিয়ে পাশ কা'টিয়ে বেপরোয়া হয়ে ঘরের দিকে যেতে যেতে বললো,
"তাকে বলে দিবেন আমি কারো নি'ষে'ধ মানি না৷ যেটা করা নিষিদ্ধ হয়ে যায় তা করতে আমি ভিষণ পছন্দ করি৷"
মেহনাজ অবাক হলো৷ কুয়াশার দিকে পরখ করলো কটমটে হয়ে তাকিয়ে আছে আজ চেচাচ্ছে না৷ কুয়াশা দাঁড়ালো না এখানে নেমে গেলো ছাদ থেকে তখনি এলো মেহরাব সাহেব৷
কুয়াশাকে এমন নেমে যেতে দেখে বোনের দিকে প্রশ্ন ছু'ড়'লো মেহরাব,
"হ্যারে আপা তোর মেয়ের আবার কি হলো?"
মেহনাজ বললো সবটা তা শুনে হাসলো মেহরাব সাহেব৷ রসিকতা কন্ঠে বললো,
"বেশ হয়েছে, তোর এ মেয়েকে জব্দ করার জন্য হলেও রুদ্রকে আমি রেখে দিবো৷"
মেহনাজ মেয়ে কি করছে দেখতে বেরিয়ে গেলো৷ মেহরাব সাহেবের আজ সকালের চা টা মনে হচ্ছে একাই খেতে হবে তখনই রুদ্রের কথা মাথায় এলো গলা বাড়িয়ে ডাকলো দু'বার৷ রুদ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে চেয়ারে গিয়ে বসলো চা ঢালতে ঢালিতে মিনমিনিয়ে বললো,
"এ বাড়িতে ফের নতুন হৃদয় গড়ার আভাস পাচ্ছি৷ প্রেম প্রেম আভাস৷"
..
অপরাহ্নের শুরু তখন৷ বেলার আশেপাশে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ তার বোনের আজ আকদ ঘরোয়া ভাবে রাতে৷ আজই নিয়ে যাবে তারা বোনকে৷ ছোটখাটো ভাবে আকদ করার কারণ বেলির বোন ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ে করতে চায়৷ বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হলেও কোনো কিছুর কমতি রাখেনি বেলির বাবা মা৷
সাদা জামদানি গায়ে জড়িয়েছে বেলি আজ৷ মাথায় বেলি ফুলের গাজরা৷ছোট ছোট চোখ জোরায় কালো কাজল৷ বেলির বেলিফুল প্রিয়, নাম বেলি হওয়ায় কি বেলিফুল পছন্দ বেলির? সে জানে না তা৷
তার নাম বেলি আর তার বোনের নাম বেলা৷ দুবোনের নাম মিলিয়ে রেখেছে তার বাবা৷
নিচে সবাই ব্যাস্ত বেলাকে তার বান্ধুবিরা সাজাচ্ছে, বেলার সাথে বেলির সম্পর্ক খুব একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ নয় বোন সুলভই৷ আর পাঁচটা বোনেরা যেমন হয়, বড় বোনকে ভয় পায় তেমনো নয়৷ দুজনের মাঝে ঝ'গ'ড়াই বেশি হয়৷ অন্য দেশেতো বোনেরা হয় বন্ধুদের মত তেমন নয়৷ আপাকে নিয়ে বেলির ভালো কিছু বলতেও বেলির জ'র'তা কাজ করে৷ ওইযে ঝ'গ'ড়া করেই কা'ট'তো সব সময়৷ বেলি তার বয়সী খালাতো বোনকে নিয়ে ছাদে এলো সবে৷ ছাদে আসে না সচারাচর আর যাকে নিয়ে এসেছে তার সারা দিন ফোনে কথা বলেই পার হয়৷ মানুষের সামনে দেখায় ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না কিন্তু লোক সমাজের বাইরে প্রেম করে বেরায়৷ বেলির কোলাহল ভিষণ পছন্দ কিন্তু তা বাইরে নিজের বাড়িতে এসব কেমন যেন ঝা'মে'লা মনে হয়৷ তাইতো এ কনকনে রোদে ছাদে এলো৷
হঠাৎ চুড়ির রুনঝুন শব্দে ধ্যান ভ'ঙ্গ হলো প্রান্তর৷ সে ছাদে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো৷ পিছন মুড়ে তাকাতেই হীম ধরে গেলো শরীর৷ থমকালো,হৃদ স্ফন্দন যেন কমছে বাড়ছে তার৷ ঘোর লেগে আসছে বারবার৷ বন্ধুদের সেখানে বসিয়ে রেখেই উঠে দাঁড়ালো অতঃপর কি যেন ভেবে নিচে নেমে গেলো৷ বেশ কিছুক্ষণ পর ফের এলো এ ছাদে দাঁড়ালো না হনহনিয়ে ছাদ ট'প'কে পাশের ছাদে চলে গেলো৷
হঠাৎ নিজের সামনে বা'উ'ন্ডুলে ছেলেটাকে দেখে চমকালো বেলি৷ অবাক হয়নি চমকেছে৷ প্রান্ত আর ওদের বাড়ির ছাদ পাশাপাশি মাঝে কয়েক ইঞ্চি ফাঁ'ক সে ফাঁ'কা দিয়ে তাকালে বেলির আ'ত্মা কাঁ'পলেও প্রান্তর জন্য খুব একটা বড় ব্যাপার নয়৷ বেলি কিছু বলবে এর আগেই বেলিকে আরো চমকে দিয়ে পায়ের কাছে বসে পরলো প্রান্ত৷ পায়ে কিছু পরিয়ে দিলো তখনি বেলি ক্ষানিকটা দূরে সরে গিয়ে থমথমে কন্ঠে বললো,
"কি করছেন কি প্রান্ত ভাই?"
"জ্বা'লা'স না বেলি৷ আয় এদিকে৷ আমার কাছে আয়? বসে আছি তো নিচে আমি৷"
বেলি পা উচিয়ে দেখলো নুপুর পড়িয়ে দিয়েছে রুপালি রঙ এর চওড়া নুপুর৷ প্রান্তর হাতে আলতার কৌটো টা৷ গেলো না বেলি কাছে তাতে প্রন্ত বি'র'ক্ত হলো৷ মেয়েটা এমন কেন? সেই নিজে উঠে কাছে গেলো হাত ধরে টেনে একটা উচু কাঠের উপর বসিয়ে দিলো৷ বেলি আশে পাশে এলোমেলো দৃষ্টি বুলিয়ে ফের বললো,
"প্রান্ত ভাই বেশি হয়ে যাচ্ছে৷ আমার বোন ছাদেই আছে ওপাশে আছে এদিকে এসে দেখে ফেললে কে'লেং'কারী হয়ে যাবে৷ আপনি যান এখান থেকে৷ "
"প্রান্ত এগিয়ে গিয়ে ছাদের দরজাটা আ'ট'কে দিলো ওই মেয়ে এখনো ফোনে মগ্ন মনে হচ্ছে না আসবে এদিকে৷ বেলির কাছে গিয়ে বসতে বসতে বললো,
" সব সময় পালাই পালাই করিস কেন বেলি? আমি তো তোকে জ্বালাচ্ছি না৷ চুপ করে বোস আমায় আমার কাজ করতে দে৷ কাজ শেষ হলে চলে যাবো৷"
বেলির এসব জিনিস পছন্দ না সে তার বাবাকে ভয় পায় ভিষণ৷ ওর বাবাও প্রান্তকে পছন্দ করে না একটুও, ঘুরে ফিরে খায় তাই৷ আজ একটু বাড়াবাড়ি করছে৷
বেলি আবার উঠে যেতে নিলেই খপ করে ধরলো হাত শান্ত চাহনিতে দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলালো শান্ত কন্ঠেই বললো,
"চুপ করে বোস না বেলি? আমার কাজ শেষ হলে আমি চলে যাবো৷ "
বেলি ভিত হয়ে বসলো ও জানে প্রান্ত যা বলে তাই করে ও ওর কাজ না করে যাবে না৷ এখন মনে হচ্ছে ছাদে এসেই ভুল করেছে৷ বেলি মিনমিনিয়ে বললো,
"ছাদে আসাটাই ভুল হয়েছে৷"
বেলির কথা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই হাসলো প্রান্ত৷ সে ও আলতা দিতে দিতে বললো,
"অন্য সময় হলে বলতাম হ্যাঁ ভুল করেছিস৷ আজ বলবো যা করেছিস ঠিক করেছিস নয়তো তোর ভয়ংকর রুপ দেখতাম কি করে?"
বেলি কিছু বললো না বলতে ইচ্ছা করলো না তার৷ প্রান্ত দক্ষতার সাথে আলতা পরালো সাদা শাড়িতে যেন দাগ না লাগে৷ প্রান্ত উঠতেই শাড়ি ধরে উঠলো বেলি৷ এদিক ওদিক তাকিয়ে বি'র'ক্ত নিয়ে বললো,
"এবার যান প্রান্ত ভাই৷"
প্রান্ত মুগ্ধ চোখে তাকালো! প্রেয়সীর চোখের বি'র'ক্ত দৃষ্টি অসম্ভব প্রিয় তার৷ সে গেলো না দাঁড়িয়ে রইলো তা দেখে কুয়াশা কিছু বলবে এর আগেই প্রান্ত বললো,
"সব সময় দূর দূর করিস কেন মেয়ে?"
কুয়াশা থমকালো এমন প্রশ্নে অস্বস্তি তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরলো তবুও মিনমিনিয়ে বললো,
"কিছু মানুষ থেকে দূরে থাকা শ্রেয় প্রান্ত ভাই৷"
প্রান্ত হাসলো ফের তাচ্ছিল্য হাসি৷ অতঃপর কালকের মত ফের পকেট থেকে সি'গা'রেট বের করে লাইটার দিয়ে জ্বা'লা'লো৷ দু একটা টান দিয়ে কুয়াশার মুখে ধোঁয়া উরিয়ে উত্তর দিলো,
"আমার দূরত্ব বরই অপ্রিয় বেলি রানী৷ তুই যত দূরে যাবি আমি তত তো সান্নিধ্যে যাবোরে বেলি৷"
চার
উ'ত্তা'পে ছেয়ে আছে ধরনি, প্র'কা'ন্ড বিভাবসু আর ক্ষি'প্ত হয়ে আছে৷ রোদের উত্তাপে পায়ের তলা পর্যন্ত গরম হয়ে যাচ্ছে কনকনে রোদের ঝিলিক চোখে এসে বি'ধ'ছে যেন,তাকানো দায় হয়ে পরছে৷ নেত্র পল্লব বার বার নিভু নিভু হচ্ছে৷ এক ঘন্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছে বেলি, রিক্সা ওয়ালা গুলো এক সাথে বসে আছে তবুও যাবে না৷ এটা কোন কথা? আজ ওই বেলি ফুল নিয়ে আসা বাচ্চাটাও আসেনি৷ হয়তো এই রোদের কারণেই? মন তার বেজায় খা'রা'প আজ৷ পা আসার হয়ে আসছে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে৷ আর দাঁড়ালো না হাটা ধরলো৷ কিছুটা দূর বড় একটা বট গাছের ছাউনি আছে এখানে এসে বসলো সামনের চায়ের টংয়েই বসে আছে প্রান্ত৷ বেলির কান্ড দেখছে মেয়েটা সাং'ঘা'তিক জে'দি সে বললেও তার সাথে যাবে না তাই বলছেও না৷
বেলি এদিক ওদিক তাকালো তখনি প্রান্তর সাথে চোখে চোখ পরলো৷ একটু জরতা একটু বি'র'ক্ত ভর করলো বেলির নেত্রে৷ ছেলেটার চোখে অদ্ভুত মায়া রয়েছে যদি ফে'সে যায়? দেখতে শুনতেতো খা'রা'প নয় তাহলে
ছেলেটা এমন কেন? চলা ফেরা উ'গ্র, মা'রা'মা'রি, বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি ছাড়া কি কাজ নেই? এমন করে মানুষের জীবন চলে? এমন বাউন্ডুলে ছেলেকে আদৌ কেউ পছন্দ করে?
আর ওসবের সাথে তো ওকে জ্বা'লা'নো আছেই, উপহার পাঠানো, মাঝে মাঝে অ'দ্ভু'ত অ'দ্ভু'ত পা'গ'লামো৷ একা ওর সামনে করলে একটা কথা ছিলো বেলির পরিবারের সামনেও ছেলেটা পা'গ'লামি করে৷ বেলির মা ভালো চোখে দেখলেও বেলির বাবা পছন্দ করেন না একটুও ছেলেটাকে৷ এত বেপরোয়া হলে হয়? মাঝে মাঝে এমন পা'গ'লাটে ভালোবাসা দেখে মনে হয় ছেলেটাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত আবার কখনো মনে হয় না এমন ছেলেকে প্রশ্রয় দেয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কু'ড়া'ল মা'রা৷
"এটা খা বেলি৷"
হঠাৎ প্রান্তের কন্ঠে ধ্যান ভা'ঙে বেলির৷ কপাল কুঁ'চ'কে উপরে তাকাতেই প্রান্তর চেহারা খানা দেখতে পায় এ'লো'মে'লো চুল ফর্সা মুখ লালচে হয়ে গেছে৷ হাতে ঠান্ডা পানির একটা বোতল ওর দিকে এগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ বেলি নিলোনা বোতলটা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো৷ প্রান্তর এবার রা'গ হলো সব ব্যাপারে এমন না করলেই না? প্রান্ত বসলো বেলির পাশে বোতলটা খুললো অতঃপর এগিয়ে দিয়ে দাতেদাত চেপে বললো,
"বেলি বাচ্চামো করবিনা এটা খা৷ তোর নিশ্চয়ই আমার হাতে খাওয়ার ইচ্ছে নেই? এখন না নিলে আমি খাইয়ে দিবো৷"
বেলি তপ্ত শ্বাস টানলো পানিটা খেলো৷ প্রান্তর দিকে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অদ্ভুত এক প্রশ্ন ছুড়লো আকস্মিক,
"কেন আমার পিছে পরে আছেন প্রান্ত ভাই? কি চাইছেন আপনি?"
"তোকে৷"
দ্বি'ধা'হীন স্বী'কা'রো'ক্তি প্রান্তর, কিন্তু পছন্দ হলো না বেলির৷ ছেলেটা কেন বুঝেনা ওকে বেলির পছন্দ না? বার বার একই কাজ৷ বেলি এবার উ'গ্র কন্ঠে উত্তর দিলো,
"বার বার বে'হা'য়া'র মত কেন করছেন? বুঝেন না আমি আপনাকে পছন্দ করি না?"
বেলির কথায় হাসলো প্রান্ত৷ মুগ্ধকর হাসি যেন এই মাত্র তার প্রিয় তাকে নিয়ে কোন প্রেমময় বাক্য বলেছে৷
"তাইতো তোকে ভালোবাসি, আমায় অপছন্দ করিস বলেই তোকে এত চাই৷ বেহায়া না হলে প্রেমিক পুরুষ হবো কি করে? তোকে পাওয়ার জন্য আমি শতবার বেহায়া হতে রাজিরে বেলি রানী৷"
বলে আর বসলো না উঠে রিক্সা ওয়ালার কাছে গেলো প্রান্ত৷ সে বলতেই রিক্সা ওয়ালা রাজি হয়ে গেলো৷ বেলিকে ইশারা করে উঠতে বললো রিক্সায়৷ এ নিয়ে সে ও দ্বিমত করলো না৷ বেলির রিক্সা ছাড়তেই নিত্যদিনের মত বাইক নিয়ে ছু'ট'লো পিছু পিছু৷
..
"এত রাতে বাড়িতে ঢুকলে আজ থেকে বাড়ির মেইন কপাট খোলা হবে না, হীম তোর আনা ভাড়াটিয়া কে বলে দিস৷"
সবে চায়ে চুমুক দিয়ে ছিলো হীম বোনের এমন কথা শুনে মুখ থেকে চা বেরিয়ে আসার উপক্রম৷ এত্ত রাতে কুয়াশা দেখলো কি করে? মধ্য রাতে কাল রুদ্র এসেছে প্রায়৷ ও কুয়াশার দিকে নজর রেখেই নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলো৷ তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলো, কুয়াশা দেখলো কি করে?
রুদ্রর দিকে আড় চোখে তাকালো হীম, রুদ্র হাসছে আর চা খাচ্ছে অদ্ভুত তো হাসছে কেন?
হাত থেকে চায়ের কাপটা রেখে মেহরাব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,
"মামা আপনার ভাগ্নি ভু'লে গেছে আমি সে দিন বলেছি, যে জিনিস করতে নি'ষি'দ্ধ করা হবে সে জিনিস আমি বেশি বেশি করে করবো৷"
রুদ্রর কথায় তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো কুয়াশা৷ কটমট করে উঠলো৷
মেহরাব সাহেব ঠোঁট টিপে হাসলো৷ আজ অনেক দিন বাদ বাড়িটা একটু আমেজি হয়েছে শেষ কবে সুখকুঞ্জ এমন আড্ডা জমতো মনে নেই তার৷ থমথমে পরিবেশে চা খেতো সবাই বসে৷
কাল এত্ত রোদের পর আজ ভোর থেকে আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন৷ গরমে সারা রাত ঘুমাতে পারেনি সে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছে তাই মেহরাব সাহেব আজ নিচে যায়নি আর চিঠি বাক্সটা ও দেখা হয়নি কালকের খবরের কাগজটা কাল পড়া হয়নি তার বন্ধুদের সাথে চায়ের টং এ আড্ডা দিয়েছে৷ কালকের খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে নিত্যকার প্রশ্নটা করেই দিলো,
"আপা চিঠি এসেছে কোন?"
প্রশ্নটা শুনে রুদ্র আজো কৌতুহলী হলো সে দিনের পর আর জানা হয়নি কিছু৷ কে সেই মায়া কন্যা যার চিঠির অপেক্ষায় থাকে মেহরাব সাহেব৷
মেহনাজ আজ একটু বেশি বি'র'ক্ত হলো ক্ষানিকটা রাগী কন্ঠে বললো,
"প্রতিদিন তোর একই প্রশ্ন আর ভালো লাগেনা ভাই৷ কোনো চিঠি আসেনি বুঝিসনা কেন আসবে না? কার অপেক্ষায় নিজের আনন্দ তুই মাটি দিচ্ছিস৷"
বোনের হঠাৎ রেগে যাওয়ার অবাক নয়নে তাকালো মেহরাব সাহেব৷ সে সবাইকে অ'তি'ষ্ঠ করছে?
সে ক্ষানিকটা গুরুগম্ভীর হয়ে উঠলো থমথমে কন্ঠে বললো,
"আমি আমার সমাপ্তিকাল পর্যন্ত তার অপেক্ষা করবো আপা৷ আর আনন্দ? আমার আনন্দ তাতে সীমাবদ্ধ৷"
মেহনাজ একই কন্ঠে উত্তর দিলো,
"এ অপেক্ষা তোকে কষ্ট দেয়না ভাই?একাকীত্ব তোকে পো'ড়া'য় না?তোর নতুন করে বাঁ'চতে ইচ্ছা করে না?"
মেহরাব সাহেব হাসলেন তৃপ্তিকর হাসি৷ মলিন কন্ঠে বললেন,
"ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা বরই তৃপ্তিকর৷"
এইটুকু বলে থামলো সে তারপর ফের বললো,
"একাকীত্ব? এ তো বাহ্যিক৷ একাকীত্ব নিজেকে চিনতে সাহায্য করে৷ আর আমি তো একা নেই, আমাদের স্মৃতি গুলো রয়েছে আমার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে৷
সে আমার প্রথম অনুভূতি, প্রথম আবেগ আর আমার সমাপ্তি পর্যন্ত সেই থাকবে পুরো আমিটা জুরে৷
আমি যদি তার অপেক্ষাই না করতে পারি তাহলে এটা কিসের ভালোবাসা আপা?
মেহনাজ কিছু বললো না৷ কিছু বলা বেকার রাগে গজগজ করতে করতে উঠে গেলো৷ মায়ের পিছু পিছু ছুটে গেলো হীম, কুয়াশার এসব ঝা'মে'লা পছন্দ না মা আর মামার মাঝে ঝা'মে'লা হলে এসব নিয়েই হয় ছোট থেকে দেখে আসছে তাই আর মাথা ঘামায় না সে৷ মেহরাব সাহেব ক্ষুন্ন মনে উঠলেন চেয়ার ছেড়ে নিজের কক্ষের দিকে এগোবে ঠিক তখনি প্রশ্ন ছু'ড়'লো
"কোথায় আপনার মায়াকন্যা? "
মেহরাব সাহেব দাঁড়ালেন পিছনে ফিরলেন মলিন হেসে উত্তর দিলেন,
"জানি না৷"
দাঁড়ালেন না সে আর, নিজের কক্ষে গিয়ে আ'ট'কে দিলেন দরজা৷
দ্বিপ্রহর চলছে তখন আকাশ কিছুক্ষণ পর পর গ'র্জ'ন তুলছে৷ তার মা সকালে রাগ করেই স্কুলে গেছেন৷ বেসরকারি একটা স্কুলের অংক শিক্ষিক সে৷ সাথে ছোট খাটো একটা বুটিকস এর ব্যাবসা করে তার এক বান্ধুবির সাথে৷ কুয়াশার বাবা নেই৷ জীবিত নেই তা না মানুষ টা তাদের সাথেই নেই৷ সে মানুষকে কুয়াশার পছন্দ না একটুও পছন্দ না৷
হীম আজ ঢাকা গেছেন কলেজে, কুয়াশা এ বছর অনার্স তৃতীয় বর্ষে সবেই পরিক্ষা শেষ হলো তাই বাড়িতেই দিন কা'ট'ছে৷
বাইরে তুমুল বেগে বাতাস বইছে৷ কুয়াশা নিজের অলিন্দে রঙ মেশাতে ব্যস্ত তখন হলুদ আর নীল মিশিয়ে সবুজ রঙ বানাচ্ছে৷ তার সবুজ রঙ রয়েছে তবে এ রংটা একটু বেশি সুন্দর হয়৷ বাইরে মাঝে মাঝে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ রঙ রাখার টেবিলটার উপরে কালো একটা কফির কাপ এমনিতে সে দুপুরে কফি খেতে পছন্দ করে না কিন্তু আজ ঠান্ডা ঠান্ডা ছবি আঁকতে আঁকতে খাওয়ায়ই যায়৷ কফির কাপটার পাশেই চশমাটা৷ চশমার ফ্রেমে রঙ ভরেছে তাই খুলে রেখেছে৷ চশমা ছাড়া তার খুব একটা সমস্যা না হলেও পরতে পরতে অভ্যাস হয়ে গেছে৷
বৃষ্টি তার অকারণেই অ'প'ছন্দ তবে বৃষ্টি আসার পূর্বমুহূর্ত টা তার বেশ প্রিয়৷ বাতাসে অদ্ভুত এক মাটির গন্ধ, আঁধার মিশেল আকাশ তারপর ওই গর্জন৷ সম্মোহনী মূহুর্ত৷ সৃষ্টি কর্তা তার সৃষ্টির প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করছে যেন৷
অলিন্দের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কিভাবে আঁকবে তা ভাবছে কুয়াশা ঠিক তখনি টুংটাং শব্দে সে ভাবনায় ব্যা'ঘা'ত ঘটালো, তার কাজ করার সময় বি'র'ক্ত মোটেও পছন্দ না৷ আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো৷ গিটারের শব্দ আসছে৷ এ বাড়িতে গিটার কে বাজাচ্ছে? হীমের তো নেই৷ ছাদের লোকটা নাতো? রঙ এর ব্রাশ টা রেখে হনহনিয়ে ছাদে দিকে হাটা দিলো৷
যা ভেবেছে তাই ছাদে ওর দোলনাটায় বসেই লোকটা গিটার বাজাচ্ছে৷
এ লোকটা কে দেখলে কুয়াশার অকারণে রাগ হয়৷ তেলের মাঝে পেয়াজ ছাড়লে যেমন জ্ব'লে উঠে তেল তেমন কুয়াশার শরীর জ্বলে উঠে৷ কেন তাও কুয়াশা জানে না৷
বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো কুয়াশা রুদ্রর দিকে মেহরাব সাহেবের আজ বাইরে কোনো কাজ নেই তাই বাড়িতেই ছিলো৷ একটু দূর টেবিলেই বসে বই পরছিলো পায়ের শব্দ সামনে তাকাতেই কা'ট'খো'ট্টা ভাগ্নিকে বাঘিনীর মত এগিয়ে যেতে দেখলো রুদ্রর দিকে৷ সে বুঝে না এ মেয়েটা কার মত হয়েছে? মেয়েরা এমন হয় নাকি? মেয়েরা তো মলিন হয় লাজুক হয় মায়ার মত মায়া কন্যা হয়৷ ছেলেটা এসেছে পর থেকে লেগেই থাকে৷
রুদ্রর সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা, ছেলেটার কি বোধ নেই? কেউ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝছে না? রুদ্র হঠাৎই সামনে তাকালো কুয়াশাকে দেখলো কিন্তু কিছু বললো না তার ভাবান্তর হলো না স্বাভাবিক ভাবেই টুংটাং শব্দে গিটারে সুর তুলতে ব্যাস্ত৷ ও যেন জানতো এ মেয়ে আসবেই৷ কুয়াশার রাগ এবার মাত্রা ছা'ড়া'লো ক'ঠো'র কন্ঠে বললো,
"আপিনার কি মানুষকে জ্বা'লা'নো ছাড়া কোন কাজ নেই?"
রুদ্র এবার থামালো হাত! উপরে দিকে তাকালো বাঁ'কা হেসে গিটারটা সাইডে রেখে হেলান দিয়ে বসলো৷ বললো,
"না!"
এমন উত্তরে বি'স্মি'ত হলো কুয়াশা৷ মেহরাব সাহেব দূর থেকে হো হো করে হেসে উঠলো৷ কুয়াশা দাত কটমট করে মামার দিকে তাকালো মেহরাব সাহেব চুপসে গেলো! কুয়াশা ফের রুদ্রের দিকে তাকালো বললো,
"আপনি জানেন আপনি একটা অ'স'ভ্য?"
রুদ্র আবারো কুটিল হেসে উত্তর দিলো,
"জানি!নতুন কিছু বলুন৷"
কুয়াশা ফস করে উঠলো৷ এ ছেলেকে কিছু বলাই বেকার শান্ত করলো নিজেকে অল্পতেই তার রাগ চওড়া হয়ে যায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিছুদুর গিয়েও থেমে গেলো রুদ্রর ডাকে,
"শুনুন মেয়ে৷"
কুয়াশা থামলো কি হলো কে জানে? পিছন ফিরলো রুদ্র তার নেত্রে নেত্র মিলিয়ে বললো,
"চশমা ছাড়া আমার সামনে আসবেন না মেয়ে৷ চশমা ছাড়া আপনাকে সাং'ঘা'তিক সুন্দর লাগে৷"
পাঁচ
"মায়া কন্যাকে ভালোবাসেন এখনো?"
এইটুকু প্রশ্নে হঠাৎই থমথমে হলো চারপাশ কেমন নিরবতা ছেয়ে গেলো৷ মেহরাব সাহেব কেমন যেন হয়ে গেলো সে যেন উত্তর খুঁজছে! তা দেখে রুদ্র কিছুটা অবাক হলো৷ এমন তো হওয়ার কথা না উত্তর কেন খুঁজবে? সে তো অপেক্ষায় আছে সে নারীটির! নির্দ্বিধায় বলতে পারে বাসি ভালো৷ দিচ্ছে না কেন?
"জানি না৷"
মেহরাব সাহেবের উত্তরে বিস্ময় চোখে তাকালো রুদ্র৷ এ কেমন উত্তর জানে না মানে? তাহলে অপেক্ষা কিসের? রুদ্র অবাক কন্ঠেই প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"তাহলে অপেক্ষা কিসের?"
মেহরাব সাহেব হাসলেন৷ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির মাঝে বাইরে এসে টেবিলটায় বসলেন পিছু পিছু এলো রুদ্র৷,
"ভালোবাসা একটা অনুভুতির নাম ভালোবাসার উর্ধ্বে যা থাকে তা হলো মায়া, অভ্যাস৷ আর নিজের মাঝে সকল অনুভুতিকে রপ্ত করে মায়া৷"
এইটুকু বলে থামলো অতঃপর আয়েশ করে বসলো৷ রুদ্রর দৃষ্টিতে কৌতুহলতা৷ মেহরাব সাহেব ফের বললেন,
"ভালোবাসা অনায়েসে মন থেকে চলে যায়, ভালোবাসা যে কারো প্রতি চলে আসে৷ কিন্তু, মায়া? এ মায়া কা'টা'নো বড়ই দায়৷ মায়া হচ্ছে এমন একটা জিনিস যা মানুষের মন থেকে উপড়ে ফেলা যায় না ছেলে৷
ভালোবাসা শুধু মনে থাকে আর মায়া মন মস্তিষ্কে জায়গা দখল করে থাকে৷ছাড়ার প্রশ্ন আসলেও ছাড়া যায় না৷সে কথা মাথাতেই আনা যায় না৷"
ফের থামলো কণ্ঠনালী কাঁ'প'ছে তার৷ একটু শ্বাস নিলো ফের বললো,
"মায়া পৃথিবীর সবচাইতে নি'কৃ'ষ্ট'তম অনুভূতি যে এ মায়ায় পরে যায় সেই বা'জে ভাবে ফেসে যায়৷
আমি যদি ভালোবাসার কথা বলি তবে আমার আনন্দ হারায়, হারিয়ে যায় সুখ৷
আমার রঙহীন জীবনে সুখ সত্যি বিলাসিতা৷
আমি ভালোবাসি কিনা জানি না, জানতে চাই না৷ খুঁজতে চাই না৷ ভালোবাসা সুখ দেয় না আমি শুধু জানি আমি মায়ার মায়ায় পরেছি আর এ মায়া যেন অনন্তকাল থাকে৷
আমি আমার মনে ভালোবাসা খুঁজতে গেলে এক রাশ শ্বাসরুদ্ধকর অনুভুতির মুখোমুখি হয়ে পরবো৷ ভালোবাসা কাউকে সুখে রাখেনি৷ রাখতে পারেনা৷ আর মায়ার, মায়ার কথা যদি আসে তবে আমি তখন দুনিয়ার সব চাইতে সুখি ব্যাক্তি৷আমি সুখি প্রেমিক৷"
থামলো মেহরাব তার মুখে তৃপ্তিদায়ক হাসি প্রান যেন জুরালো তার সুখের কথা বলে৷ লোকটা চমৎকার মায়ার সংঙ্গা কি সুন্দর করে দিলো? লোকটা ফের বলা শুরু করলো,
" নব্বই দশকে যেমন প্রেম ছিলো আমার জীবনের প্রণয় সেভাবেই শুরু হয়েছিলো৷
হঠাৎ এক ভাড়াটিয়র আগমন চিলেকোঠার এই ঘর দুটোয় বাবা মা আর বড় বোনের সাথে আমার মায়া কন্যার৷ তার এলোমেলো চাওনি আমাকে জ্বালানো, আমার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া দুষ্টুমি৷ মেতে থাকতো তখন সুখকুঞ্জ৷ তারা নারায়নগঞ্জে নতুন ছিলো আমদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূর একটা দোতলা বাড়ি কিনেছিলো ভদ্রলোক৷ সে বাড়ি মেরামতের কাজ চলছিলো তাই এ বাড়িতে উঠেছে৷"
বলে উঠে দাঁড়ালো মেহরাব বাড়িটি হাত বাড়িয়ে দেখালো সে বাড়িটি এখন পাঁচ তলা এখন বাড়িটি৷ সে বাড়িটিতে এখনো মায়ার পরিবার আছে? তাহলে মায়া কোথায়?রুদ্রর কৌতুহলতা বাড়ছে৷ মেহরাব সাহেব ফের বলা শুরু করলো,
" মায়ার সব কাজে বিরক্ত লাগলেও তার অনুভূতি পূর্ণ চাওনি আমায় তার মায়ায় ফেলেছে৷ তার টানা চোখ, লালচে ফর্সা মুখাবরণ৷ বিড়াল চোখি মেয়ে৷ চোখ দুটো এখনো আমায় টানে৷
মায়া এ বাড়িতে ছিলো পাঁচ মাস ভদ্রলোকের আর্থিক সমস্যা হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে ছিলো৷ মায়া আসার মাস ক্ষানেক পর থেকে শুরু হয় আমার প্রতি তার পাগলামো আঠারো বছরের তরুণী সে তখন৷ আবেগ ভেবে ভ্রুক্ষেপ করিনি কখনো৷ আর আমি ছিলাম ওর থেকে গুনে গুনে সাত বছরের বড়৷ মস্তিষ্ক পাত্তা না দিলেও কিন্তু মন যে বেপরোয়া শুনে কার কথা? একটু একটু করে অনুভুতি গড়তে ব্যাস্ত তখন৷ মাঝে মাঝেই মাঝ রাতে আমাদের মিষ্টি ঝগড়া জমতো এই ছাদের টেবিলটায় বসে৷
এ বাড়ি থেকে যখন মায়া নিজের বাড়িতে শিফট হলো হঠাৎ আগের দিন রাতে আমায় জরিয়ে সে কি কান্না আর পাগলাটে আবদার,
'আমায় রেখে দিন না মেহরাব সাহেব৷'
কান্নারত কন্ঠে তার এমন আবদার শুনে সে দিন রাগ হয়েছিলো কিন্তু সে দিন যদি আবদার টা পূর্ণ করতাম আজ বোধহয় আর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো না?
সে দিন আমি দূরে সরিয়ে থমথমে কন্ঠে উত্তর দিয়েছিলাম,
"আমি তোমার আবেগ৷ আমায় ভুলে যাও মেয়ে৷"
সে দিন দেখেছিলাম তার অভিমানি মুখ অভিমান নিয়ে বলেছিলো,
"আমি ভুলবো না আপনায়, আমার পাগলামো আপনার প্রতি থাকবেই৷ তবে আপনি সময় মতো আগলে না নিলে খুঁজবেন আমায় মেহরাব সাহেব৷"
হ্যাঁ! আমি খুঁজছি আজ৷ সত্যি খুঁজছি৷
সে বাড়িতে যাওয়ার পর তার বাবা একদিন আমায় তাকে পড়ানোর জন্য বলে তার বাবার কথায় পড়ানো শুরু করি তাকে৷ সে উছিলায় বেশ ভাব জমেছিলো আমাদের৷ আর জমেছিলো রঙিন স্মৃতি৷ ওইযে একজনের অনুভূতি যদি আকাশ তুল্য হয় আর হৃদয় ছোঁয়ার মত হয় অন্য জনকে একটু হলেও বদলে দিতে পারে সে অনুভূতি৷ মাঝে মাঝে স্কুল থেকে নিয়ে আসা, হুট তোলা রিক্সায় বৃষ্টি বিলাশ তখন সে আবেগী হয়ে আমার প্রতি তার সব অনুভূতি নিঙরে দিতো আমায়৷
আমি ছিলাম ভ্রমণ প্রিয় মাঝে মাঝেই ভ্রমনের জন্য বেরিয়ে পরতাম নানান জায়গায় বন্ধুদের সাথে এ জন্য মায়াকে পড়ানোটাও বাদ দিয়ে দিলাম৷ এতে যেন তার পাগলামো বাড়লো বেশি৷
তার ছাদ থেকে আমাদের ছাদ স্পষ্ট দেখা যেতো সে দাঁড়িয়ে থাকতো আমার জন্য৷ মাঝে মাঝে মনে হতো মন ভরে দেখি তাকে৷ পরে ভাবতাম, 'না ঠিক হবে না৷' মাঝে মাঝে নিজেকে সংযত করতাম কখনো বেপরোয়া হতো মন৷ দেখেই যেতাম৷
দু দিন তার বোনের কাছে নালিশ করেছি আমি সামলাতে তার বোনকে৷
হঠাৎ একদিনি তার বোন জানালো মায়া পড়া লেখা ঠিকমতো করছে না৷ সে দিন থেকেই ঠিক করলাম এ মেয়েকে উপেক্ষা করেই চলতে হবে এসব দু-দিনের আবেগ মাস খানেক পর ঠিক হয়ে যাবে৷ তারপর দিন থেকে একেবারেই এরিয়ে চলা শুরু করি,একদিন অপমানো করি এরপর থেকে সে হঠাৎই চুপ চাপ হয়ে যায়, আমি ভেবেছিলাম হয়তো এবার সত্যি আবেগটা কে'টে গেছে৷ সে দিন অজানা কারণে ক্ষুন্ন হয়েছিলো মন!কিছুতে যেন প্রসন্ন হতে পারছিলাম না৷
কিন্তু না ভুল ছিলাম আমি কিছু দিন পর থেকে শুরু হয় অন্য নতুন পাগলামো একেবারে ভিন্ন যা ওর প্রতি আমার অনুভূতি গুলো প্রগাঢ় করতে বাধ্য ছিলো৷ আমাদের ডাকবাক্সে চিঠি আসা শুরু হয়৷ নতুন নতুন অনুভূতিতে মোড়ানো চিঠি!পুরো এক বছর এমন কোন দিন নেই যে চিঠি আসতো না কিন্তু চিঠি দাতার নাম থাকতো না৷ ওর হাতের লেখা আমার চেনা ছিলো৷ একটু একটু করে প্রেম বাড়লো! মায়ার মায়া আমায় রপ্ত করলো৷ আমি মায়াতে বিভোর হোলাম৷ হঠাৎই ভাবলাম বলা উচিত আমার অনুভূতির কথা আমি সর্বদা গম্ভীর ধর্মী ছিলাম কি করে করবো বুঝতেই পারছিলাম না৷ আপাকে সবটা জানাই আপা ছিলো আমার বন্ধুর মত কিন্তু আমার চিঠি তার ডাকবাক্সে পৌঁছানোর আগেই তার চিঠি আসা বন্ধ হয়৷ সে দিন চিঠি আসেনি আমি অপেক্ষায় ছিলাম সে দিনের চিঠি আসার পর আমার চিঠি তার কাছে পৌঁছাবো কিন্তু সে দিন পর আর চিঠি আসেনি৷ আজো সেই চিঠির অপেক্ষায় আমি৷ মায়া ছিলো না কোথাও ছিলো না সে দিন আমি খুঁজেছি ওর বাড়িতে গিয়ে ওর বাবার লাশ দেখতে পাই৷ এর বাবা নাকি সে দিন মেয়ের শোকে আত্মহত্যা করে৷ পরেও আমি খোঁজ নিয়েছি, সব জায়গায় খুঁজেছি৷ ওর দুলাভাই বলেছে ও নাকি পালিয়েছে৷ আমি বিশ্বাস করিনি, আমার মায়া আমায় ভালোবাসে আমি জানি তো৷ অনেক জায়গা খুঁজেছি এরপর কিন্তু পাইনি৷ মায়াকে আমি পাইনি৷ সে নেই কোথাও নেই৷ মেয়েটা হুট করে আমার জীবনে এসে লুট করে নিয়ে গেলো৷ গম্ভীর চিত্তের আমিটাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো৷"
থামলো মেহরাব সাহেব, রুদ্ধশ্বাসকর এক প্রেম কাহিনী৷ রুদ্র পূর্নদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেহরাব সাহেবের দিকে৷ তার মুখ লাল বর্নের হয়ে আছে চোখ ছলছলে, লোকটার তেতাল্লিশ বছর কেউ বলবেই না এখনো সুঠাম দেহের অধিকারী চুল একটা দুটো পাক ধরেছে৷ শুধু লোকটাকে যত দেখছে অভিভূত হচ্ছে রুদ্র৷ চমৎকার চরিত্রের প্রেমিক৷ ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষগুলো বুঝি এমনই হয়?
..
শরতের আকাশ শোভনীয়!নীল আকাশে সাদা পেজা তুলোর মত মেঘ মেঘের ভেলা৷ সোনালী রঙের মিষ্টি রোদ৷ প্রকৃতির আরো কয়েক গুন অধিক সুন্দর রুপ প্রতিস্থাপন হয় শরতে, সবুজের মাঝে সাদার বাহার কাশ ফুলে ছেয়ে থাকা মাঠ৷
শরতের সকাল যেন একটু বেশি সুন্দর শীতল হাওয়া চারো দিকে৷ আজ নামাজ পরেই বেইরে বের হলো কুয়াশা তার সকাল টা বেশ প্রিয়, কমলাটে হচ্ছে সবে ধরনী৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলো অতঃপর চিত্তের দৃঢ়তা কিঞ্চিত বাড়িয়ে দিতে নদীর ধারে এসে বসলো৷
এ নদীর নাম শীতলক্ষ্যা, এখানে আসলে মনে হয় সকল মন খারাপ নদীর পানি নিঙরে নেয় নিজের অতলে৷
মাথার কাপড়টা টেনে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলো পানিতে পা ভিজিয়ে বসলো৷ সাতার সে পারে না তবে ভয় ও করে না, ঘটা করে কখনো সাতার শেখা হয়নি নারায়নগঞ্জে আশা হয় সেই পাঁচ বছর থাকা কালীন, মামা বাড়িতেই উঠা হয়৷ মেহনাজ আর মেহরাব দুই ভাই বোনই৷ কুয়াশার বাবা মায়ের বনিবনা কখনোই ছিলো না তাদের মধ্যে ঝগড়াটাই হতো বেশি হীম আসার পর থেকে ঝগড়া যেন আরো বারতে থাকে৷ অতঃপর একদিন জানতে পারে তার বাবা নাকি আরেকটা বিয়ে করেছে বিয়ে করে যেন লোকটা হঠাৎই শান্ত হয়ে যায়৷ মেহনাজ কে বলে সে সব দায়িত্ব নিবে হীম আর কুয়াশার সে যেন ছেলে মেয়েদের নিয়ে চলে আসে৷ মেহনাজ আর কুয়াশার বাবার বিয়ে ছিলো প্রেমের, ভালোবাসা মানুষকে সত্যি ভালো রাখে না৷ কুয়াশার বাবা তার কথা রাখেনি মাঝ পথেই ছেড়ে দিয়েছে কুয়াশার মায়ের হাত৷ তখনই নারায়নগঞ্জ শহরে আসা৷ এ মাটির সাথে পরিচিত হওয়া, আজ মনে হয় কুয়াশার এ শহরটাই তার সব৷
"পরে গেলে উঠতে পারবেন তো মেয়ে?"
হঠাৎ কারো কন্ঠে ধ্যান ভা'ঙে কুয়াশার৷ টলটলে পানি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো৷ রুদ্রকে দেখলো৷ উত্তর দিলো না তাই! রুদ্র ফের বললো,
"উঠে আসুন কুয়াশা৷ পড়ে যাবেন তো?"
কুয়াশা এবার ক্ষানিকটা ভরকালো কপালে বি'র'ক্তি'র সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো৷ কি হলো হঠাৎ লোকটার? আজ এত দরদ দেখাচ্ছে? ব্যাপার কি?
কুয়াশা উঠলো না নিরুত্তর বসে রইলো রুদ্র তপ্ত শ্বাস টানলো যা কার্ণে পৌঁছালো কুয়াশার৷ হঠাৎই মনে পরলো লোকটা কাল বিকেলে বেরিয়েছে রাতে আসেনি বাড়িতে কোথায় ছিলো? কুয়াশা এবার উঠলো তীর্যক দৃষ্টিতে আপাদমস্তক অবলোকন করলো! জিমের পোষাকে আছে লোকটা৷ কাল তো অন্য পোষাকে বেরিয়েছিলো রাতে আসেনি সকালেও ঘরে তালা ঝুলছে দেখে এসেছে তাহলে? কুয়াশা এবার বললো ,
" প্রথমত আমি পরবো না, এত নেকামো আমার সাথে করবেন না আমার পছন্দ না৷"
এইটুকু বলে থামলো৷ আশেপাশে দৃষ্টিপাত করে নিজের মাথার কাপরটা আরেকটু টানলো আবারো বললো,
"সারা রাত কোথায় ছিলেন? এসব কিন্তু আমাদের বাড়িতে চলবে না বলে দিলাম৷"
রুদ্র যেন কুয়াশার কথা শুনলো না৷ উহু পাত্তা দিলো না কুয়াশাকে পাশ কাটিয়ে কুয়াশা যেখানে বসে ছিলো সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো কুয়াশা একে ব্রু কুচকে তাকালো৷ ছেলেটা ওকে উপেক্ষা করলো?
বেশ কিছুক্ষণ পর নিরবতা কাটিয়ে রুদ্র বললো,
"আপনার নিষিদ্ধ করা জিনিস গুলো আমার ভিষণ প্রিয় মেয়ে৷"
ছয়
রাত আড়াইটা তখন মুঠো ফোনটা কর্কশ শব্দে সাইরেন বাজিয়ে উঠলো৷ ভাইব্রেশনে যেন পুরো বিছানাটাই কেঁপে উঠলো বেলির৷ তবে ঘুম ছুটলো না হাত দিয়ে বালিশের নিচে ফোন টা রেখে ওপাশ ফিরে ফের নিদ্রাচ্ছন্ন হলো ফের কর্কশ শব্দে ভাইব্রেশন হলো ঘুম ঘুম চোখেই ফোনটা ধরলো কানেও নিলো কিন্তু কথা বললো না ঘুমিয়ে পরলো৷
ওপাশের মানুষ টি ডাকলো বেলি সারা দিলো না৷ সে তো ঘুমে বিভোর৷কেঁ'টে দিলো ফোনটা৷ ফের ভাইব্রেশন হলো এবার বেলি ধরফরিয়ে উঠলো ফোনটা তার কানের উপরই ছিলো৷ কানটা বোধহয় আজ ফেটেই গেলো৷ কানের উপর মুঠোফোন টা রেখে ঘুমিয়ে পরেছিলো বেলি৷ বিরক্ত হলো বেশ ঘুম তার বড়ই প্রিয় ঘুম আর সবে তৃপ্তিকর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়েছিলো মাঝ রাতে কে এমন ফোন করে? মুখে বির'ক্তি'র রেশ রেখেই ফোনটা ধরলো কর্কশ কন্ঠে বললো,
"কেন এত রাতে মানুষ কে জ্বা'লা'চ্ছে'ন?
নাম্বার টা খেয়াল করেনি বেলি৷ ওপাশের মানুষটি হাসলো বেলির কঠিন কন্ঠে৷ মেয়েটার ঘুমকাতর কন্ঠে ভিন্ন মা'দ'কতা রয়েছে৷
" আমার ঘুম আসছেনা বেলি রানী! তোকে কি করে ঘুমাতে দেই?"
চেনা কন্ঠে হঠাৎই চ'ম'কে উঠলো বেলি৷ ব্যাকুল কন্ঠ কেমন তার৷
কান থেকে মুঠো ফোন টা সরিয়ে সামনে এনে ধরলো৷ প্রান্ত ফোন করেছে এত রাতে?
হঠাৎ ঘুম ভা'ঙা'য় এমনি চটে আছে প্রান্তর কন্ঠে আরো রাগ বারলো৷ ক্রুদ্ধ কন্ঠেই বললো,
"এ কেমন ভদ্রতা প্রান্ত ভাই? এত রাতে কেউ কাউকে ফোন করে?"
"হ্যাঁ আমি করি৷"
বিরক্তের মাত্রা ছাড়ালো৷ ছেলেটা অবুঝ কেন এত? সব সময় উল্টো পালটা কাজ৷
বেলিকে নিরুত্তর দেখে প্রান্ত বললো,
"এমন অদ্ভুত ভাবে আমায় বিভোর না করলেও পারতি৷ তুই নামক অসুখ আমায় বাজে ভাবে রপ্ত করেছে৷"
প্রান্তর এমন কন্ঠে নির্বাক হয়ে রইলো বেলি৷ প্রশ্ন পাচ্ছে না, না পাচ্ছে উত্তর৷ আর না ভালো খারাপ কিছু বলতে পারছে৷ শব্দ ভান্ডার যেন ফুড়ালো বেলির হাত ও যেন ফোন টা কাঁ'টার জন্য সায় দিচ্ছে না৷
প্রান্ত ফের বললো,
" একবার ছাদে আসবি বেলি? আয় না৷"
অধীর আগ্রহে আছে বেলিকে দেখার৷
প্রান্ত বেলির কথার উত্তর দিলো না একই কন্ঠে বললো,
"আয় না বেলি? আজ অন্তত আমায় ফিরিয়ে দিস না৷"
ব্যাকুল কন্ঠে আকস্মিক যেন নড়েচড়ে উঠলো বেলির অন্তস্তল৷ গলে গেলো যেন রাগ টা! উরে গেলো ঘুম টা৷ এ কেমন অনুভূতি? হঠাৎ এমন হলো কেন? মিনমিনিয়ে বললো,
"কেউ দেখে ফেলবে প্রান্ত ভাই৷ বাবা দেখলে কেলেংকারী হবে৷"
প্রান্ত কিছুক্ষণ কিছু সময় চুপ রইলো প্রগাঢ় শ্বাস টানলো বললো,
"কাল দেখা করবি?"
"দেখাতো রোজি হয়৷"
বেলির উত্তরে হাসলো প্রান্ত! সে জানে এমন উত্তর আসবে ফের বললো,
"উহু দেখা হয় ভাব বিনিময় নয়৷ কাল কিছু সময় আমার জন্য বরাদ্ধ কর না? কথা দিচ্ছি আর চাইবো না৷"
বেলি নিরুত্তর রইলো৷ ভাবলো কিয়ৎ সময়, ভয় হয় বেলির! প্রচন্ড ভয় হয়৷ নিজেকে হারাবার ভয়! এ ছেলের দৃষ্টি তী'ক্ষ্ণ খুব যে কেউ ফেসে যাবে সে দৃষ্টিতে৷
বেলি কে নিরুত্তর দেখে শব্দ করে হাসলো এবার প্রান্ত রসিকতা কন্ঠে বললো,
"ভয় পাচ্ছিস বেলি রানী?"
বেলি ভরকালো! ছেলেটা হৃদয় পড়তে জানে নাকি? এবার বেলি গলা ঝাড়লো থমথমে কন্ঠে বললো,
"ভয়? কিসের ভয়?"
"হৃদয় খোয়ানোর৷"
এ কথাটা প্রান্তর যেন ছিলোনা৷ ভিন্ন একেবারে কন্ঠ অনুভুতি মিশেল এমন কন্ঠ যে কাউকে নাড়িয়ে দিতে বাধ্য৷
"কাল কলেজের বাইরে থাকবেন৷ রাখছি!"
বলে সাথে সাথে লাইনটা কে'টে দিলো৷ থম মেরে বসে রইলো বেলি অনুভূতি গুলো ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে যেমনটা প্রথম হতো৷ আজ ঘুম হবে না বেলির, একটুও ঘুম হবে না৷
..
পায়েশের উপর কাজু কিশমিশ ছড়িয়ে মাঝারো সাইজের একটা বাড়িতে পায়েশ তুলে নিলো মেহনাজ৷ সে বাটিতেও আলাদা ভাবে বেশি বেশি কাজু কিশমিশ ছড়িয়ে দিয়ে বসার ঘরের দিকে হাটা ধরলো৷ কুয়াশা বসার ঘরে সোফার উপর আয়েশি ভঙ্গিতে বসে পেয়াজ কু'চি করছিলো তখন৷ সে মায়ের কথা অনুযায়ী ঘরের কাজ করেনা কখনোই৷ তার নিজের যখন ইচ্ছে করে তখন না বলতেই করে দেয়৷ আজ মায়ের স্কুলে ফাংশন তাড়াতাড়ি যেতে হবে তাই সাহায্য করছে৷
উগ্র মেজাজি মেয়েকে মেহনাজ বলেও না কাজের কথা৷ কিন্তু মেয়ে আজ নিজ থেকে কাজ করতে বসেছে তাও নবাবী কায়দায়৷ সোফায় বসে ছু'ড়ি দিয়ে পেয়াজ কুঁচি করছে৷ তবুও যে করছে এইতো অনেক৷ মেহনাজের ধারণা মেয়েটা একেবারে বাবার মত হয়েছে লোকটাও এমন উগ্র ছিলো৷
মেহনাজ পায়েশের বাটিটা নিয়ে মেয়ের সামবে দাঁড়াতেই মেয়ের ভেজা চোখ দেখলো নাখ মুখ পেয়াজের ঝা'ঝে লাল হয়ে গেছে সে ছু'ড়ি'টা হাতে থেকে নিয়ে পায়েশের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
"কা'ট'তে হবে না তোকে পেয়াজ৷ তুই বরং হাত মুখ ধুয়ে পায়েশ টা উপরে রুদ্র কে দিয়ে আয়৷"
রুদ্রের কথা শুনে কপাল কুঁ'চকে তাকালো কুয়াশা৷ কিছু দিন যাবত মনে হচ্ছে ওর রুদ্র নামক ছেলেটা এ বাড়ির আর ও ভাড়াটিয়া৷ মা মামা ছেলেটাকে নিয়ে বেশি আদিখ্যেতা করছে৷ না করতে গিয়েও করলো না হাতের পেয়াজটা রেখে উঠে দাঁড়ালো৷ মুখে পানির ছিঁটে দিয় এসে থমথমে মুখ পায়েশটা মায়ের কাছ থেকে নিলো৷
ছেলেটা এখন সাং'ঘা'তিক হয়ে গেছে যখন যা ইচ্ছা বলে কুয়াশা মাঝে মাঝে অস্বস্তিতে পরে যায় মাঝে মাঝে জবাব দিয়ে আসে৷
ছাদে আসতেই দেখা গেলো ছাদের মাঝ বরাবর পুশআপ দিচ্ছে রুদ্র৷ কিছু বললো না এখানে দাঁড়ালোও না রুদ্রের ঘরেই সোজা ঢুকলো এ প্রথম এলো রুদ্র আসার পর এ ঘরে৷ ছোট্ট টি টেবিলটার উপর পায়েশের বাটিটা রাখলো আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো৷ ঘর টা অগোছালো নয় বেশ সুন্দর গোছালো৷ রুদ্র যেদিন এসেছিলো শুধু একটা ব্যাগ নিয়ে এসেছিলো এখানে আসার পর হীম কে নিয়ে খাট আর আলমারি কিনে এনেছে আর এ সেলফ টা এখানেই ছিলো এটাচট সেলফ এখানে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে বিভিন্ন ভাষার বই আর রাজনৈতিক সম্পর্কিত বই আর এলএলবি স্টাডিএ কিছু বই৷ ছেলেটা এসব বই পরে?
কিন্তু কেন?হঠাৎই মনে হলো কি করে রুদ্র? জানা হয়নি কখনো ওকে বেশিরভাগ রাতেই বের হতে দেখা যায়৷ রাতে কোথায় যায় ছেলেটা? অনেক সময় রাতে বাড়িতেও আসেনা কোথায় থাকে কি করে?
কুয়াশা বের হতে যাবে ঠিক তখনি ধাক্কা খেলো সুঠাম বক্ষে৷ না সিনেমাটিক ভাবে ধরেনি রুদ্র, ধপাশ করে বাড়ি খেলো সেলফের সাথে কুয়াশা৷ হাতে ব্যথা পেয়ে আর্তনাদ করে উঠলো ক্ষানিকটা চিৎকার করে৷
আকস্মিক এমিন কিছু ঘটবে কেউ বুঝেনি রুদ্র ও না কুয়াশাও না৷ রুদ্রর মাঝে ভাবান্তর না দেখা গেলেও তেঁতে উঠলো কুয়াশা৷
ছেলেটার সাথে যতবার দেখা হয় ততবারি কিছুনা কিছু করে ওকে বি'র'ক্ত করে৷
"এই ছেলে চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরেন?? দেখে চলতে পারেন না?"
ফস ফস করতে করতে প্রশ্ন ছু'ড়লো কুয়াশা৷ রুদ্রর ভরকালো৷ ঘর থেকে সে বের হচ্ছে দেখে চলার কথা ছিলো তার এখন ওর উপরই চেচাচ্ছে৷
"আমারটা না হয় পকেটে আপনারটা কোথায় নিয়ে ঘুরেন? আপনি দেখে চলতে পারেন না?"
কুয়াশা তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে৷ যেন চোখ দিয়েই ঝলসে দিবে রুদ্রকে৷
"আপনি একটা অসহ্যকর?"
"ঝগড়া না পারলে মানুষ এসবই বলে৷"
বলে হো হো করে হেসে উঠলো রুদ্র৷ রুদ্রর হাসি কুয়াশার রাগের মাত্রা বাড়াতে সক্ষম ছিলো৷ তবে সে রাগ প্রকাশ করলো না! এ ছেলের সাথে কিছু বলাই বেকার সময় নষ্ট রুদ্র কে পাশ কাটিয়ে প্রস্থান করবে ঠিক তখনই ডাকলো রুদ্র,
"শুনুন মেয়ে৷"
কুয়াশা থামলো এ ডাকটা কেমন রাগটা কে উব দেয় বরফের ন্যায় গলিয়ে দেয় বাধ্য করে থমকে যেতে! থেমে যেতে৷
"আপনার রাগী দৃষ্টি মারাত্মক সুন্দর৷ উহু শুধু রাগ না!পুরো আপনিটাই সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা৷"
..
কালো জামা পরেছে বেলি কালো উরনা কাধের নিচে টায় টায় চুল গুলো ছাড়া কপালের মাঝ বরাবর ছোট্ট একটা কালো টিপ৷ কলেজ থেকে বেরিয়ে এগিয়ে এলো প্রান্তর দিকে আজ 'মেঘ না চাইতেই জল' দেখে প্রান্তর বন্ধুরা অবাক হলো৷ তারা কিছুই জানে না প্রান্ত ও জানায়নি৷ বেলিকে এগিয়ে আসতে দেখেই হাতে সিগারেট ফেলে দোকান থেকে সেন্টারফ্রেশ নিয়ে মুখে পুরলো নিজের অতঃপর বাইকে উঠে বসলো সানগ্লাস টা ঠিক করে পরলো৷ বেলি এগিয়ে এলো বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে আজ নিজ থেকেই বললো,
" বসবো?"
প্রান্ত যেন এইটুকু কথাতেই ঘা'য়ে'ল হলো আবার৷ হৃদ স্ফন্দন তার মাত্রা ছাড়ালো যেন শ্বাস টানলো জোরে জোরে মুখে কিছু বললো না মাথা ঝাকালো৷
বেলি উঠতেই বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললো,
"তোরা থাক আমি আসছি মহারানীকে নিয়ে৷"
বেলি দুরত্ব নিয়েই বসেছে তবে এক হাত প্রান্তর কাধে৷ কম্পিত হাত জোরার আভাস পাচ্ছে প্রান্ত৷ মিশ্র অনুভূতি রপ্ত করছে যেন৷
হঠাৎ প্রান্ত এক অদ্ভুত কথা বললো যাতে থমকালো বেলি,
"শুনতে পারছিস বেলি?"
"কি?"
"আমার হৃদয় স্ফন্দন? প্রতিটা স্ফন্দন জানান দিচ্ছে তুই আজ থেকে পরিসমাপ্তি পর্যন্ত আমারি হলি৷শুধু আমার৷"
সাত
"আপনি এমন কেন প্রান্ত ভাই?"
বেলির এমন প্রশ্নে ভরকালো প্রান্ত! দৃষ্টি বদল করে বেলির নেত্রে নেত্র মিলালো বেলি নিজের দৃষ্টি নত করে ফেললো৷ প্রান্ত বোধগম্যহীন কন্ঠে শুধালো,
"কেমন?"
"বেপরোয়া!কারো কথা শুনেন না৷ বাউন্ডুলে টাইপ, সারাদিন পারার মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা বাজি করেন৷ এসব আমার পছন্দ না৷ পুরো আপনি টাকেই আমার পছন্দ না তা কি আপনি বুঝেন না? আপনাকে আমি কত কথা বলি আপনার আমাকে অসহ্য লাগে না?"
বেলির এহেন কথায় হাসলো প্রান্ত৷ তার দৃষ্টি বেলির মুখেই বিচরণ করছে, মেয়েটা বলছে ওকে পছন্দ করে না কিন্তু চোখে কোন বি'র'ক্তি'র ছাপ নেই৷ মুখের কথা কেন বিশ্বাস করবে প্রান্ত? সে তো জানে আজ থেকে বেলি ওরই হলো৷
প্রান্তকে হাসতে দেখে হকচকিয়ে গেলো বেলি, ছেলেটা কি মজার মানসিকতায় থাকে সব সময়? বেলির মুখের দিকে তাকিয়েই প্রান্ত সেই দাম্ভীকতা নিয়ে বললো,
"না অসহ্য লাগে না৷ তুই আমায় অপছন্দ করলেও তুই আমার পছন্দ করলেও তুই আমার৷অসহ্য কেন লাগবে?"
বেলি দমে গেলো এ ছেলের কথায় পারা মুশকিল৷ নিষিদ্ধ অনুভূতি গুলো আজ বড়ই জ্বা'লা'চ্ছে এখানে থাকা যাবে না আর৷নিষিদ্ধ কিছু ঘটে গেলে কেলেংকারী হয়ে যাবে৷ প্রেম ভালোবাসা ওর জন্য নয়৷
বেলি কিছু বলবে এর আগেই প্রান্ত বললো,
"আমি যদি সব ছে'ড়ে দেই তাহলে আমায় পছন্দ করবি বেলি?"
এমন অতল স্পর্শী কন্ঠে কে'পে উঠলো বেলি৷ কি উত্তর দিবে? কোনো উত্তর নেই৷ না এখানে থাকা যাবে না আর উঠলো বেলি সামনে এগোতে এগোতে বললো,
"আমাদের যাওয়া উচিত প্রান্ত ভাই৷ বাবা টের পেলে র'ক্ষে নেই৷"
ক্ষুন্ন হলো প্রান্তর মন তবে আশাহত হলো না৷ বেলি তার হবে শুধু তারই৷ এ মেয়ে ওকে মানুক বা না মানুক৷
বাবার সামনে শিরদাঁড়া নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে বেলি, চোখে মুখে আ'ত'ঙ্কের ছাঁপ ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ শেষ রক্ষে আর হলো না কলেজের সামনে আসতেই মুখোমুখি হলো বাবার৷ ভেবে ছিলো প্রান্ত এখানে নামিয়ে দিলে একা বাড়ি যাবে এখান থেকে৷
পাশেই দাঁড়িয়ে আছে প্রান্ত তার মুখে কোন চিন্তার ছাঁপ নেই না আছে ভয়ের চিহ্ন বেপরোয়া ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে৷
বেলির বাবা কাইফ সাহেব তীক্ষ্ণ চোখে একবার প্রান্তকে পরখ করে বেলির উদ্দেশ্যে বললো,
"তুমি ওর সাথে ছিলে এতোক্ষণ?"
প্রান্ত শির উচু করলো না নিরুত্তর রইলো৷ বেলির উত্তর না পেয়ে কাইফ সাহেব আরো রেগে গেলো গম্ভীরমুখে বললো,
"বেলি তুমি কি এই লা'ফা'ঙ্গা ছেলের সাথে ছিলে এতক্ষণ?"
এমন গম্ভীর কন্ঠে চমকে উঠলো বেলি৷ ক'ম্প'ন ধরলো শরীরে! আড়ষ্ট চোখে প্রান্তকে পরখ করলো একবার৷ মাথা দুলালো মানে 'হ্যাঁ' মুখে কোন উত্তর দিলো না৷ ঠিক তখনি থাপ্পড় পরলো বেলির গালে চোখ খিঁচে বন্ধ করেলো৷ ক্ষে'পে গেলো প্রান্ত৷ কাইফ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"গাড়িতে যা আসছি আমি৷"
প্রান্ত কাইফ সাহেবের দিকে এগিয়ে গিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
"কি করলেন এটা?"
কাইফ সাহেব ক্রু'দ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো প্রান্তর দিকে৷ বেলি তখনো দাঁড়িয়েই আছে ৷ প্রান্ত ফের কিছু বলবে বেলি আ'হ'ত দৃষ্টিতে তাকালো প্রান্তর দিকে না করলো কিছু বলতে৷ কাইফ সাহেব এবার ক্ষানিকটা চেচিয়ে বললো,
"বেলি গাড়িতে যাও৷ আমি চাই না কেও জানুক৷ "
বেলি আর দাঁড়ালো না দৌড়ে গাড়ির দিকে ছুটে গেলো৷
বেলি যেতেই প্রান্ত দাতে দাত চেপে কাইফ সাহেব কে বললো
"এটা ঠিক করলেন না৷"
"আমার মেয়ের সাথে কি করবো তা নিশ্চয়ই তোমার কাছ থেকে শিখে নিবো না আমি?ওর পিছন ঘুর ঘুর করা বন্ধ করো নয়তো আমি অন্য ব্যাবস্থা করবো৷"
প্রান্তর রাগের মাত্রা বাড়ছে বেলির বাবা বলে কিছু বলছে না৷ এবার রাগ দেখালো না হাসলো প্রান্ত, কু'টি'ল হাসি৷ ভদ্রলোক ভরকালেন প্রান্তের এমন কান্ডে! প্রান্ত সি'গা'রেট নিয়ে মুখে পুরলো লাইটার বের করতে করতে বললো,
"যা করার করেনিন আংকেল উপস না শশুর আংকেল৷ আমিও দেখবো কি করতে পারেন৷ বেলা শেষে আপনার মেয়ে কিন্তু আমারি হবে! মাথায় ঢুকিয়ে রাখুন কথাটা৷"
..
গধুলি প্রস্থান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আঁ'ধা'র ক্ষানিকটা ঘন হচ্ছে লালচে আভা ক্ষীণ রয়েছে অম্বরে, এক কাপ কড়া করে চাফি বানিয়ে ছাদে নিয়ে এলো কুয়াশা৷ চাফি হলো চায়ের সাথে কফি মিক্স করে বানানো৷ একে কুয়াশা চাফি বলে, চায়ের আর কফির কড়া সু-গন্ধটি এক সাথে হয়ে অন্যরকম সুভাস তৈরি করে৷
ওর একাকিত্ব সময় কা'টা'নো বেশ প্রিয় অন্য কারো সাথে কুয়াশার জমে না৷ সে জমাতে পারেনা অন্তর্মুখী বেশ৷ সবার চোখে উ'গ্র মে'জা'জী সে কিন্তু তার মনে হয় এটা তার উ'গ্র মে'জা'জ নয় তার ধারনা এটা তার স্বাভাবিক মে'জা'জ৷
নিজের প্রিয় মেটালের দোলনা খানায় বসতে দোলনাটা ক'র্ক'শ ধ্বনিতে ক্যাঁ'চ ক্যাঁ'চ শব্দ তুললো শব্দটা বেশ বি'র'ক্ত হওয়ার মত তবুও অভ্যাস হয়ে গেছে৷
এখানে বসতেই হাসনা হেনা ফুলের তীব্র ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে পৌঁছালো৷ অদ্ভুত তো হাসনা হেনা ফুল তো এবাড়িতে নেই গন্ধ আসছে কোথ্যেকে?
হাতে কফি মেশানো চায়ের কাপটা নিয়ে উঠলো কুয়াশা৷ ছাদের রুদ্রর ঘরের পাশে আসতেই দেখা গেলো রুদ্র ফুল সহ একটা গাছের টব ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে রাখলো৷ হাসনা হেনা ফুলের গাছ খুঁজছিলো কুয়াশা৷ গাছটা দেখেই মন টা ভালো হয়ে গেলো! ক্ষীণ হাসলো আপন মনে৷ না ছেলেটা একেবারেই মন্দ নয়৷কিছু কিছু ভালো কাজ ও করে৷ কিছু বললো না আর নির্বাক চিত্তে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো কুয়াশা ভেবেছিলো ছেলেটাকে বলবে গাছটা আনার জন্য ধন্যবাদ৷ কিন্তু না পারলো না সে কখনো অন্যের প্রতি নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারে না৷
"আরে মিস বাড়িয়ালি যে? কখন এলেন৷"
রুদ্রের কথায় ক্ষানিকটা পিছন ঘুরে তাকালো৷ চোখাচোখি হলো! কিছু বললো না কুয়াশা, কাপে চুমুক বসালো৷ রুদ্র মাঝে বেশ ক্ষানেক জায়গা রেখে দাঁড়ালো সন্তপর্ণে৷ হঠাৎ এক অদ্ভুত প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"আপনি আমায় অপছন্দ করেন কেন?"
রুদ্রের এহেন প্রশ্নে থাতমত খেলো কুয়াশা৷ ঠোঁট কামড়ে ভাবলো কিছু সময়! 'অপছন্দ' ঠিক অপছন্দ কথা আসে কি এখানে? হয়তো না? রুদ্রর কাজ কর্ম গুলো বি'র'ক্ত লাগে শুধু৷ তবে সব নয় ছেলেটা মন্দ নয় কিন্তু একটু বেশি স্পষ্টভাষী৷
কুয়াশা তাকালো রুদ্রের দিকে এই প্রথম তার মুখে কোনো বি'র'ক্ত'র আভা দেখলো না৷ মলিন, শান্ত চাওনি কিঞ্চিৎ ইতস্ত কন্ঠে বললো মিনমিনিয়ে,
"অপছন্দ? কই না তেমন কিছু না৷ আপনার কিছু কিছু কাজ আমার পছন্দ নয় যা আমার সাথেই করে থাকেন৷"
কুয়াশার উত্তরে হাসলো রুদ্র৷ কুয়াশাও হাসলো মেয়ের হাসিটা খোলামেলা নয় মুখ টিপে হাসে তবে অসুন্দর নয় বা গালে কিঞ্চিৎ টোল পরে বেশি নয় একটু৷
"মেয়ে আপনার হাসি সুন্দর৷"
হঠাৎই কুয়াশার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো নাকটা লাল হলো লজ্জার আভা মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে? এ মেয়েকে রাগতেই দেখেছে মাত্র৷
এলোমেলো নেত্র পল্লব ফেললো কুয়াশা কপালের চুল কানে গুজলো৷ ভাবা যায় উ'গ্র'চ'ন্ডী মেয়ে নিভে গেছে এভাবে? ধাতস্থ হলো কুয়াশা জরতা আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে তাকে৷ ক্ষীণ থমথমে কন্ঠে বললো,
"ছেলে আপনার কথা গুলো ভয়ংকর৷"
বলে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়ালো কুয়াশা৷ বিব্রত বোধ করছে যেতেও পারছে না নিচে৷
মেহরাব সাহেব খবরের কাগজ নিয়ে এসে বসলেন ছাদের টেবিলটায়৷ বসতেই নজর গেলো রুদ্র আর কুয়াশার দিকে দু-জন দু দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ কাটখোট্টা মেয়েটা ছেলেটার সাথে আজ ঝ'গ'ড়া করেনি আজ? কি অদ্ভুত কান্ড না? মেয়ের তো ঝ'গ'ড়া না করলে পেটের ভাত হজম হয় না৷
খবরের কাগজের কাগজ টা টেবিলের উপর রাখলো চশমাটা ঠিক মতো পরে পৃষ্ঠা উল্টালো ঠিক তখন রুদ্র এসে বসলো মেহরাব সাহেবের পাশের চেয়ারে৷ তখনি মেহরাব সাহেবের দৃষ্টিতে এলো কালো মার্ক করা খবরটা 'প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা খু'ন৷' আজকাল খবর গুলো কমন হয়ে গেছে কেমন৷ হয় খু'ন করছে নয় ধ'র্ষ'ন করছে৷ কি করে পারে তারা? আ'ত্মা নেই তাদের? অন্তর আত্মা ক'ম্প'ন ধরে না? প্রেমিকার হাতে খু'ন হওয়া পরম সুখের কিন্তু তাকেই খু'ন করে দেওয়া? সে কি এক দিনো ভালোবাসি বলেনি?
আজকালকের ভালোবাসা মস্তিষ্কের তৈরি, যখন ইচ্ছা হয় কাছে টেনে নেয় যখন ইচ্ছা হয় ছু'ড়ে ফেলে দেয়৷ খবরের কাগজে দৃষ্টি রেখে বললো,
"আজকাল দেশে প্রেমিকের বড়ই অভাব৷"
মেহরাব সাহেবের কথায় ভ্রু কুচকে তাকালো রুদ্র৷ মেহরাব সাহেব ফের বললেন,
"নয়তো প্রেমিকাকে কেউ মে'রে ফেলতে পারে? আজকাল ভালোবাসার বড়ই অভাব৷"
রুদ্র হাসলো অতঃপর বললো,
"কেন পারে না মামা?সে মেয়ে যদি অন্য কারো সাথে নতুন সম্পর্ক তৈরি করে তাহলে খু'নই শ্রেয়৷ ভালোবাসা জোর করে হয় না আর প্রেমিকাকে অন্য কারো সাথে দেখার সাধ্য কোনো প্রেমিকের নেই৷ ভালোবাসার জন্য সব করা যায়৷ সে আমার হোক নয়তো কারো না৷ সে প্রেমিকাকে মে'রে ফেলাই শ্রেয়৷"
হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকালো মেহরাব সাহেব৷ আকস্মিক এমন কথায় কুয়াশাও বেশ চমকালো৷
"সে আমার হোক নয়তো কারো না৷" কথাটা কেমন বি'ধ'লো মেহরাব সাহেবের৷ মায়া কার? সত্যি প্রেমিকাকে কারো সাথে দেখার শক্তি কোনো প্রেমিকের নেই৷ মায়া কোথায়? হঠাৎই প্রশ্ন টা মাথায় এলো৷ কম তো খুঁজলো না মায়া কোথায় আছে? কার সাথে? অন্য কারো সাথে না তো?
আট
শুভ্র প্রভাত চলছে৷ আজ রোদ টা ঝলমলে নয় সূর্য যেন পাংশুটে করে আছে মুখ সূর্য উঠেছে তবে উ'ত্ত'প্ত রোদ নেই৷ অর্ধ আকাশ ধুসর মেঘে ঢাকা অর্ধ আকাশ পাংশুটে রোদ৷ সাদা আর আসমানি সংমিশ্রণ রঙের একটা জামা পরে বের হলো কুয়াশা মাথায় আসমানি রঙের হিজাব দোতলা থেকে নিচে নামতেই মুখোমুখি হলো রুদ্রর সাথে সে সবে ফিরছে লোকটা কাল রাতেও বাড়িতে ছিলো না৷ কোথায় থাকে? কি করে কে জানে?
পাশ কা'টি'য়ে যাবে ঠিক তখনি রুদ্র প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"কোথায় যাচ্ছেন কুয়াশা?"
কুয়াশা দাঁড়ালো ক্ষানিকটা হাসলো অতঃপর উত্তর দিলো,
"ঢাকা যাচ্ছি হোস্টেল সংক্রান্ত কিছু কারণে৷ এখন থেকে ঠিক ঠাক করে রাখতে হবে পরে সিট পাওয়া মুশকিল হয়ে পরবে৷"
রুদ্র অবাক হলো ভ্রু কুচকে কিছু ভাবলো প্রশ্নাত্মক কন্ঠে শুধালো,
"আপনি হোস্টেলে থাকবেন?"
কুয়াশা হাত ঘড়িটি দেখলো একবার অতঃপর মাথা দুলিয়ে ক্ষীন কন্ঠে বললো,
"হ্যাঁ থাকবো!
আমি আগেও থাকতাম মাঝে পরিক্ষার আগে এসে পরেছিলাম৷ এখান থেকে গিয়ে পরিক্ষা দিয়েছি৷ ভেবেছিলাম এ বছর ভর্তি হবো না ফোর্থ ইয়ারে কিন্তু মা হীমের জোরাজোরিতে রাজি হতেই হলো৷"
কুয়াশার উত্তরে রুদ্র কিছু নিয়ে ভাবনায় মত্ব হলো, কুয়াশা তা দেখে দাঁড়ালো না৷ তার আজ তাড়াহুড়ো অনেক৷ পাশ কা'টি'য়ে সদর দরজার দিকে এগোবে ঠিক তখনি থামিয়ে দিলো রুদ্র ফের! বললো,
"আমি আসছি আপনি দাঁড়ান৷"
রুদ্রের এহেন কথায় ভরকালো কুয়াশা৷ কোথায় যাবে ছেলে টা? ইতস্তত কন্ঠে বললো,
"আপনি কেন?আমি কারো সাথে যাবো না৷ আমি একাই যেতে পারবো৷"
রুদ্র হাসলো ঠোঁট এলিয়ে বললো,
"আমি আপনার অনুমতি চাইনি কুয়াশা৷ আপনি দাঁড়ান আমি আসছি৷"
কুয়াশা পরলো বিপাকে, এ ছেলে ওর সাথে যাবে কেন? মা মামা জানলে কি ভাববে? ছেলেটা এমন অদ্ভুত আচরণ করে কেন মাঝে মাঝে?
বেশ কিছুক্ষণ পর নেমে এলো রুদ্র৷ একদম অন্যরকম লাগছে পাঞ্জাবিতে আগে কখনোই দেখেনি রুদ্রকে কুয়াশা৷ সাদা পাঞ্জাবি পাজামা কালো সানগ্লাস কারো সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে৷ কুয়াশার কাছে এসে দাঁড়ালো অতঃপর মুঠোফোন কানে রেখেই বললো,
"পাঁচ মিনিট দাঁড়ান কুয়াশা৷ আমি ডাকলে বাইরে আসবেন৷"
বলে বাইরে হাটা দিলো৷ কিছুই বুঝতে পারছে না কুয়াশা কি করছে ছেলেটা দাড়াতে কেন বলছে? এখন না বের হলে সাইনবোর্ড যেতে সময় লাহবে ওখানে পৌঁছাতে দেরি হলে বাস পাওয়া মু'শ'কি'ল হয়ে যাবে৷ চাশারা থেকে ডিরেক্ট ঢাকার বাস পাওয়াও মু'শ'কি'ল তাই এখান থেকে সাইনবোর্ড যেতে হয় আগে৷
এখন তো রাগ হচ্ছে তার, ছেলেটা সব কাজে বাড়াবাড়ি! রাগ নিয়ে বের হলো সদর দরজা পার হতে আজো বারি খেলো রুদ্রর বক্ষের সাথে সে ও ভিতরে ঢুকছিলো৷ তটস্থ চোখে তাকালো কুয়াশা৷ মেয়েটা রেগে গেছে কুয়াশা কিছু বলবে ঠিক তখনি রুদ্র বললো,
"দুঃখিত দেখিনি আমি৷"
রাগ গুলো কেমন গলে গেলো৷ নিজ থেকে ধাতস্থ হয়ে গেলো মেয়েটা চাহনি শীতল হলো৷ রুদ্র ফের বললো,
"চলুন গাড়ি চলে এসেছে৷"
ভেবেছে হয়তো সিএনজি টিএনজি৷ যাক ছেলেটার সুবুদ্ধি আছে কিন্তু পরক্ষণে আরেক চিন্তা মাথায় প্রবেশ করলো৷ এখান থেকে যদি সাইনবোর্ড সিএনজি দিয়ে যায় তাহলে অবশিষ্ট বেশি টাকা আর থাকবে না আর যদি ঢাকা যায় তাহলে ভাড়া হবেও না৷ কি করবে এখন? বাস দিয়ে গেলে খুব একটা ভাড়া লাগে না৷ বি'ব্র'ত বোধ করছে কুয়াশা ও জানে রুদ্র ভাড়া দিতে চাইবে কিন্তু ওর এসব পছন্দ না৷ এ ছেলে যাচ্ছে তাই পছন্দ হচ্ছে না৷ ওর কি হয়েছে আজ বুঝতে পারছে না কেন না করতে পারলো না ছেলেটাকে?
কুয়াশা কিছু বলবে ঠিক তখনি ওদের সামনে কালো একটা গাড়ি এসে থামে৷ তখনি রুদ্র গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে বলে,
"গাড়িতে উঠুন কুয়াশা৷"
কুয়াশা এক রাশ বিস্ময় নিয়ে তাকায় সে দিকে৷ তার বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই গাড়িটা কার? এ গাড়ি এখানে কেন? রুদ্রই বা এ গাড়িতে উঠতে বলছে কেন?
কুয়াশা ফের কিছু বলার জন্য উদ্যত হবে তখনি রুদ্র বললো,
"উঠুন কুয়াশা এখন না বের হলে বেলা গড়ালে জ্যাম পড়বে রাস্তায়৷ গাড়িতে উঠুন তখন সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে৷"
কুয়াশা উঠলো না দাঁড়িয়ে রইলো থমথমে কন্ঠে বললো,
"এ গাড়ি কার?"
"আমার৷ উঠুন এখন৷"
বলে এক প্রকার হাত ধরে গাড়িতে উঠালো৷ আকষ্মিক এমন ঘটনায় থতমত খেলো কুয়াশা ৷ সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ এ গাড়ি এই ছেলের? এত বড় গাড়ির মালিক ভাড়া থাকে? কেন? সব কেমন গোলক ধাঁধায় পরিনত হচ্ছে৷ যা দেখছে তা সঠিক নয়৷
গাড়ির ব্যাক সিটে বসে আছে রুদ্র আর কুয়াশা৷ ফ্রন্ট সিটে রুদ্রের বয়সি একটা ছেলে৷ কুয়াশা আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে থমথমে কন্ঠে বললো,
"কে আপনি?"
এহেন প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেলো রুদ্র৷ মেয়েটার স্মৃতি শক্তি লোপ পেলো নাকি? মাথায় চো'ট তো পায় নি৷
চোখে পড়া কালো সানগ্লাস নামক চশমাটা সরালো কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলো,
"আপনি কি মাথায় চোট পেয়েছেন কুয়াশা?"
কুয়াশা পাত্তা দিলো না রুদ্রের কথায় ছেলেটা সব সময় বাজে কথা বলে সে জানে৷ আপাদত এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো ইচ্ছে নেই৷
"আপনি কে? হেয়ালি করবেন না রুদ্র! আপনার পরিচয় আমি জানতে চাই৷ কি করেন আপনি? কি আপনার পরিচয়? যার এত বড় গাড়ি আছে তারা নিশ্চই মধ্যবিত্ত নয়? তবুও আমাদের বাড়িতে কেন ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছেন?"
নিজের প্রতি এই মেয়ের এত কৌতুহল দেখে হাসলো রুদ্র৷ তীর্যক সেই হাসি যেন কিছু লুকিয়ে আছে৷
"যদি বলি আপনার জন্য?"
বি'র'ক্ত হলো এবার কুয়াশা৷ অতি মাত্রায় বি'র'ক্ত ছেলেটা ফেতুক কথার মা'রপ্যাঁ'চে ফেলার চেষ্টা করছে৷
তপ্ত শ্বাস টানলো কুয়াশা দৃষ্টি শীতল হলো বললো,
"হেয়ালি করবেন না রুদ্র৷ আপনি আমার উপর দোষ একদম চাপাবেন না৷ আমার জন্য কেন থাকবেন? আমার সাথে আপনার প্রথম দেখা বাসে আমি জানি এর আগে হয়তো আমায় দেখেনোনি তাহলে মিথ্যা কেন বলছেন? আমি শুরু থেকেই লক্ষ্য করছি আপনার হাবভাব, আপনি রাতে বাড়িতে থাকেন না প্রায়ই মাঝে মাঝে বেশ রাত করে আসেন হয়তো আমার এসব জিগ্যেস করা ঠিক হচ্ছে না আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার তবুও আমাদের বাড়িতে একটা মানুষ থাকছে আমাদের খোঁজ নিতেই হবে সে কেমন৷"
রুদ্রর মুখশ্রী থমথমে হয়ে উঠলো নিরুত্তর বসে রইলো কুয়াশা ভেবেছিলো বলবে কিন্তু বললো না৷ কুয়াশা আবার বললো,
"উত্তর দিন রুদ্র৷"
"আমার ব্যাপারে ঘাটতে আসবেন না মেয়ে৷ আমি রুদ্র এটাই আমার পরিচয় আমার এত উত্তর দেওয়া পছন্দ না৷ সময় হোক যখন মনে হবে বলা যাবে আমি নিজ থেকেই বলবো৷ আপাদত আমায় নিয়ে না ভাবলেও চলবে আপনার৷"
চমকালো কুয়াশা, থমকালো আকস্মিক এমন উত্তরে কেমন অপমান বোধ করলো৷ রাগ বারলো জেদ ও চোখ ভরে এলো ছাড়া ছাড়া কন্ঠে চেচিয়ে বললো,
"গাড়ি থামান৷"
ড্রাইভারো না বুঝে থামিয়ে দিলো লুখিং গ্লাস দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো৷ রুদ্রের চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো কুয়াশা নামতে যাবে ঠিক তখনি হাত ধরলো৷ ড্রাইভার কে শক্ত কন্ঠে বললো,
"গাড়ি স্টার্ট দাও৷ গাড়ি যেন না থামে৷ "
..
"পথ কেন আ'ট'কে'ছেন প্রান্ত ভাই?"
শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছু'ড়'লো বেলি৷ দৃষ্টি তার অন্য দিকে আজ চোখে বিরক্ত নেই কঠোর দৃষ্টি তবে চোখে চোখ রেখে কথা বলছে না আজ মেয়েটা৷
প্রান্তর মন জুড়ালো হৃদয় শান্ত হলো চার-দিন পর দেখা হলো মেয়েটার সাথে৷ এ চার দিন যাবত মেয়েটাকে ঠিক মত দেখেনি আগে গাড়ি দিয়ে আসতো না এখন বাড়ির গাড়ি দিয়ে আসে৷ আজ ও মেয়েটা ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে৷
প্রান্ত শীতল কন্ঠে বললো,
"এমন করছিস কেন বেলি? তোর জন্য আমি সব ছেড়ে দিতে রাজি আছি এমন ভাবে আমায় এড়িয়ে চলিস না বেলি৷"
বেলি এবার আরো ক্ষী'প্ত হলো বেলি কা'ট'কা'ট কন্ঠে বললো,
"আমার পথ ছাড়ুন প্রান্ত ভালো লাগছে না আমার আপনার এসব নাটক৷"
নয়
রুদ্র নামের ছেলেটা অদ্ভুত! মুখ দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না কিন্তু আস্ত একটা রহস্যের ভান্ডার৷ অদ্ভুত ধাঁচের ছেলে৷
কুয়াশার সাথে কেউ শক্ত কন্ঠে কথা বলুক তা সে একদম পছন্দ করেন না৷ রাগে শরীর রি রি করছে চোখমুখে কঠিনত্ব বজায় রেখে বসে আছে কুয়াশা৷
রুদ্র বেপরোয়া ভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে আছে, মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে কুয়াশার দিকে মেয়েটা বেশ বাজে ভাবে ফেসেছে না পারছে বের হতে না পারছে বসতে এমন অবস্থা প্রায়৷
আর কুয়াশার কাছে? রুদ্র নামক ছেলেটার চরিত্র খোলাসা হচ্ছে না আবছা অস্পস্ট৷ কে ছেলেটা কি তার পরিচয় মাথায় এই কথাগুলোই ঘুরছে৷
যদিও তার কোন জানার প্রয়োজন নেই তবুও তাদের বাড়িতে থাকে তো? জানতে তো হবেই, কে থাকছে? কেমন সে? কি করে৷ হীমকি জানে সব? ছেলেটা তার পরিচয় দিচ্ছে না কেন?
হঠাৎ গাড়ি থামতেই হুঁশ ফিরল কুয়াশা ধ্যান ভঙ্গ হলো৷
আশেপাশের দৃষ্টি বুলালো কলেজের সামনে গাড়ি থেমেছে৷ কলেজে তার কাজ আছে কিছু৷ গাড়ি থামতেই সামনের সিটে বসার লোকটা নেমে এগিয়ে এলো, কুয়াশার সাইডের দরজাটা খুলে দিল কুয়াশা যেন স্বস্তি পেল বন্দী কোন জায়গা থেকে মুক্তি পেল৷ সহ্য হচ্ছিল না তার এই ছেলেটাকে৷ প্রথমে ভেবেছিলো কোন গন্ডগোল আছে সেদিনের পর ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটে নি৷ ছেলেটা প্রথম দিনই কাউকে মা'রা'র কথা বলছিল সে ব্যপার গুলো মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল প্রায়৷ আজ বাড়ি গেলে হীমকে জিগ্যেস করতে হবে৷
কুয়াশা গাড়ি নামার জন্য উদ্যত হতেই থামিয়ে দিল রুদ্র! থমথমে কন্ঠে বলল,
"আমি আশে পাশেই থাকবো, ভুলেও একা যাওয়ার চেষ্টা করবেন না তখন কিন্তু ফল ভালো হবে না মেয়ে৷"
কুয়াশা ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এই বুঝি চোখ দিয়ে গিলে খাবে ছেলেটাকে নাশ করে দিবে৷ খিটখিটে কন্ঠে উত্তর দিল,
"আমি আপনার সাথে যাব না৷"
রুদ্র হাসলো ঠোঁটে এলিয়ে৷ মেয়েটা বড্ড জেদি ও জানে এমন কথাই বলবে৷ কালো চশমা টা খুললো শান্ত কন্ঠে বলল,
"আমি আপনার মতামত জানতে চাইনি৷"
বলে কুয়াশার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা তার লোকটিকে কিছু ইশারা করলো৷ লোকটি সম্মতি জানিয়ে বললো,
"আপনি একা যাবেন?"
রুদ্র যেন চোখে চোখে উত্তর দিলো লোকটিকে বাকা হাসলো৷ কুয়াশার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ সে দিকে ওর পাত্তা না দিলেও চলবে, আপাদত এ অসভ্য ছেলেটাকে সহ্য হচ্ছে না যাওয়ার সময় দেখা যাবে কে কার সাথে যায় নাকি না যায়৷
বড় বড় পা ফেলে কলেজের ভিতরে ঢুকে গেল কুয়াশা৷ পেছন পেছন সে লোকটাও৷ কুয়াশা যাওয়ার সাথে সাথেই রুদ্রের কালো গাড়িটা ছাড়লো৷ রুদ্র দৃষ্টি বুলালো আশেপাশে সেই চেনা শহর প্রশান্তিময় পরিবেশ নিজের শহর টা সত্যি প্রশান্ত ময় কিন্তু এই শহরটা স্বার্থপর৷ উহু সময় খারাপ৷
..
দ্বিপ্রহর চলছে রোদ নেই আকাশে, মেঘে ঢাকা অম্বর৷ আকাশের মন ক্ষুণ্ণ বুঝি আজ? অম্বরের মন ক্ষুণ্ণ হলে নিকষ কালো হয় পুরো ধরণী যেন অম্বরের মন খারাপের জন্য তাদেরও মন ক্ষুন্ন ৷ আঁধার আচ্ছন্ন ধরণী ও ভ'য়ঙ্ক'র সুন্দর৷ দেখলেই হৃদয় জুড়ে যায়, এ যেন চোখের শান্তি৷
প্রকৃতি কত স্নিগ্ধ? কিন্তু মানুষগুলো স্বার্থপর, সব সময় নিজের স্বার্থ নিয়েই থাকে৷ আপন মানুষগুলো ও এমন৷ অম্বর এর মত বেলির মন ও আজ ক্ষুণ্ণ৷ তারমন ক্ষুণ্ন হওয়ার কারণ সে নিজেও জানে না জানতেও চায় না৷ মন বড় বেপরোয়া শুনতেই চায় না মস্তিষ্কের কথা৷ মন আর মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করা বড়ই কঠিন ৷ মাঝে মাঝে মস্তিষ্ক নিজের সব ভাবনাকে পরাজিত করে দেয় ৷ নিজের কাছে নিজে পরাজিত হওয়া খুব কষ্টদায়ক৷
শরীর আজ সায় দিচ্ছে না একাকিত্ব টা বেশ বাজে ভাবে রপ্ত করেছে৷
হঠাৎ হ্যাচকা টানে ধ্যান ভা'ঙ'লো বেলির৷ মুখ চেপে ধরলো কেউ আকস্মিক এমন কান্ডে ঘা'ব'ড়ে গেলো বেলি চোখ বাঁ'ধা হলো তার৷ কে? কাউকে দেখতে পেলো না৷ আগেই চোখ বেঁ'ধে দিলো লোকটা৷ বেলি ছোটাছুটি শুরু করলো অন্তর আ'ত্মা কাঁপছে তার৷ কিছু বলতেও পারছে না মুখের উপর হাত রেখেছে তাই৷ কিন্তু কে লোকটা? কেন এমন করছে?ছোটাছুটি করেও যখন কাজ হচ্ছে না তখন কর্ণপাত হলো চিরোচেনা সেই কন্ঠ,
"ছোটাছুটি করবিনা বেলি! আমিই প্রান্ত৷"
প্রান্তের নামটা কর্ণপাত হতেই স্থীর হয়ে গেলো বেলি৷ তপ্ত শ্বাস টানলো৷ ছেলেটা হুটহাট এমন কেন কান্ড করে? কাল এত্ত কথা শুনালো ওকে তবুও আজ চলে এলো৷ ছেলেটা প্রচন্ড ঘাড় বাঁকা৷ কেন মরীচিকার পিছে ছুটছে? ও যা চাইছে তা হওয়ার নয়৷ ভালোবাসা সবার জন্য না, তার জন্য তো একদমই না৷
ফের ছোটাছুটি শুরু করলো ছাড়া পাওয়ার জন্য বেলি৷ কিন্তু প্রান্তর জোরের সাথে কখনোই পেরে উঠবে না সে জানে৷ ভার্সিটির ফোর্থ ফ্লোরে লাইব্রেরি সে সিড়ি দিয়ে নামছিলো তখনি হঠাৎ এ কান্ড কিছু করার সময় টুকু পায়নি৷ প্রান্ত কে কলেজে দেখে চমকায়নি বেলি, কলেজে প্রান্তর ঢুকা কোন বড় ব্যাপার না কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে বেশ খাতির প্রান্তর বাবার৷
যখন চোখের বা'ধ'ণ খুললো তখন কলেজের লাইব্রেরি কক্ষে নিজেকে পেলো হাত পা বাঁধা অবস্থায়৷ সামনেই দাঁড়ানো প্রান্ত৷
চোখে মুখে কঠিনত্ব৷ বেলির মাথায় র'ক্ত চড়ে বসলো চিৎ'কা'র করে বললো,
"এসব বাচ্চামির মানে কি প্রান্ত৷"
এই প্রথম প্রান্ত কে শুধু নাম ধরে ডাকলো বেলি৷ প্রান্ত বেশ অবাক হলো৷ বেলি আবার বললো,
"আপনার এই অসভ্যতামো আমার পছন্দ হচ্ছে না আমি চিৎকার করবো এখন৷"
বেলির কথায় হাসলো প্রান্ত, কু'টি'ল হাসি৷ বললো,
"কর চি'ৎ'কা'র দেখি তোর গলায় কত জোর৷ তুই নিজেও জানিস এখানে চি'ৎ'কা'র করলে কোনো লাভ হবে না৷"
বেলি তীক্ষ্ণ চাওনিতে তাকালো প্রান্তর দিকে৷ লাইব্রেরি কক্ষ সাউন্ড প্রুফ সত্যি কেউ শুনবে না৷ তার অসহ্য লাগছে সব৷
"জোর করে কখনোই ভালোবাসা হয় না আপনি অযথা বাড়াবাড়ি করছেন প্রান্ত ভাই৷ দয়া করে আমায় ছাড়ুন অসহ্য লাগছে আমার সব৷ আপনাকে আমার সহ্য হয় না কেন বুঝেন না?"
বেলির কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ ঘটলো মনে হলো না৷ "তোর হাত কিসের দাগ এসব বেলি?"
প্রান্তর হঠাৎ এমন প্রশ্নে কেঁ'পে উঠলো বেলি থতমত খেলো৷ প্রান্ত ফের বললো,
"উত্তর দে বেলি৷"
বেলি এলোমেলো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রান্তর দিকে৷ নিরুত্তর রইলো৷ প্রান্ত যেন কিছু বুঝলো চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো নিজ থেকেই খুলে দিলো বেলিকে বললো,
"তোর বাবা অনেক বেড়েছে বেলি, তোর বাবা বলে বেঁ'চে গেছে নয়তো ওই হাত আমি কে'টে দিতাম৷ ভেবেছিলাম আজ তোকে নিয়ে যাবো আমার সাথে কিন্তু না৷ তোর বাবা কে গিয়ে বলিস তার কাছ থেকেই তার মেয়েকে আমি আসবো৷"
এইটুকু বলে থামলো প্রান্ত উঠে দাঁড়ালো দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
"তোর প্রতি আমার ভালোবাসা দিন দিন যেমন প্রগাঢ় হচ্ছে তেমন জেদ টাও বাড়ছে৷ তুই আমারি হবি বেলি শুধু আমারই৷"
..
চারোদিকে কেমন আহাজারি আপনজন হা'রা'নো'র বেদনা, হাহাকার৷ সেই চিরচেনা বাড়িটিতে ফের কান্নার গুঞ্জন৷ সেই বাড়িটিতে ফের প্রবেশ মেহরাবের৷
তবে প্রিয় মানুষটির গন্ধ নেই কেন? কেন নেই?
মায়াদের বাড়িতে দশ বারো দিন আগেই একটা মেয়ে হুট করে নিখোঁজ হয়েছে আজ সে মেয়ের লা'শ পাওয়া গেছে নগ্ন অবস্থায় বস্তা বন্ধি বাড়ির পাশেই পুকুর থেকে৷
এ বাড়ির একটু দুর চায়ের টং টায় একবার হলেও আসে প্রতিদিন মেহরাব আজ এসে হঠাৎই সে বাড়িটি থেকে কান্নার গুঞ্জন পায় ছুটে আসে সাথে সাথেই এখানে৷
এ কেসের ত'দ'ন্তে আছে মেহরাবেরই প্রিয় বন্ধু আয়াশ৷ মেহরাবের সুখ দুঃখের সাথী৷
কিন্তু এত বছর পর এ এখানে এসেই হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেলো মেহরাবের৷ অবাক হলো ক্ষানিকটা মেহরাব৷ এত বছর পর যে দেখতে পাবে ভাবতেই পারেনি৷ মনে কেমন আশার আলো গুলো যেমন জ্বলজ্বল করে উঠলো৷
দশ
এত বছর পর এ এখানে এসেই হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেলো মেহরাবের৷ অবাক হলো ক্ষানিকটা মেহরাব৷ এত বছর পর যে দেখতে পাবে ভাবতেই পারেনি৷ মনে কেমন আশার আলো গুলো যেমন জ্বলজ্বল করে উঠলো৷ এত বছর পর দেখা হলো মায়ার প্রিয় মানুষটির সাথে৷ মায়ার বড় বোন৷
মায়ার বড় বোনের সাথে সে যেন মেহরাব কে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে প্রায়৷
এ বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে মায়ার বাবা মা'রা যাওয়ার পর মায়ার মা কে মায়ার বড় বোন নিজের কাছে নিয়ে রেখেছে৷ কিন্তু মায়া? সে কোথায়? এখন কি কোনো খোঁজ জানে তারা? যদি জানে?
মেহরাব মায়ার বোন কে একা দেখে এগিয়ে গেলো৷ মেহরাব এর সামনে এসে যেন বড় ভুল করে ফেলেছে আশা, হাসফাস করছে কেমন৷ এরিয়ে যেতে নিয়েও মেহরাবের ডাকে থেমে গেলো সে প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"মায়া কোথায় আশা?"
আশা উত্তর দিলো না ফের সামনের দিকে এগোলো৷ রাগ হলো মেহরাবের৷ এমন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে কেন? সে কি করলো?
মেহরাব এবার থমথমে মুখে বললো,
"থামুন৷"
মেহরাবের মুখে সেই আগের মত ক'ঠি'ন্য'তা ভর করলো সে দাম্ভিক মেহরাব কে দেখা গেলো ফের৷ কেমন সন্দেহ লাগছে মেয়েটাকে এমন করছে কেন? এমন অপরাধী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে কেন?
"মায়া কোথায়?"
মায়ার কথা শুনে আশা নামক মেয়েটার চোখে কেমন ভরে এলো৷ পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেহরাব এর দিকে৷ লোকটা একই রকম আছে সেই আগের মতই সুঠাম দেহের অধিকারী গম্ভীর৷
আশার কাছে উত্তর নেই কোন হঠাৎই তার মুখ চোখ কঠিন হলো থমথমে কন্ঠে বললো,
"আপনার মাথা থেকে মায়া সরেনি এখনো? মায়া কোথায় আছে আমরা কি করে জানবো? ওই মেয়ের খবর আমরা জানি না৷"
ভরা চোখে এমন কঠিন কথা বললো কি করে? যেন তার থেকে বেশি কেউ ঘৃ'ণা করে না মায়াকে৷ অথচ চোখ অন্য কথা বলছে৷ আজ কেমন অন্য সন্দেহ হচ্ছে ওরা কি কিছু জানে?
মেহরাব ফের একই কন্ঠে বললো,
"আশ্চর্য! একটা মেয়ে কোথায় আছে আপনারা জানেন না? আপনাদের দায়িত্ব নেই? আপনারাই বলেছেন পা'লি'য়ে'ছে একটা মানুষ পা'লা'লে এক বছর বা দুই বছর পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখে না কিন্তু আঠারো - ঊনিশ টা বছর কি করে? কিছু লুকাচ্ছেন না তো আপনারা?"
হঠাৎই ঘাবড়ে গেলো আশা চোখ মুখে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ সত্যি ভাবনার বিষয় নয় কি? একটা মেয়ে নিজ থেকে পালালে উর্ধ্বে গেলে দু-বছর পরিবার কে কিছু জানাবে না কিন্তু এত বছর?
আশা থতমত কন্ঠে বললো,
"ক কি বলছেন? ক কি ল লুকাবো? আর আপনার এতই মাথা ব্যাথা থাকলে আপনি খুঁজুন যে মেয়ে নিজ থেকে আমাদের সম্মানের কথা ভাবেনি তার কথা আমরা কেন ভাববো?"
থামলো আশা৷ দম ছাড়ছে জোরে জোরে৷ এ যেন বানিয়ে কথা গুলো বলেছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ কথা গুলো কেমন শুনালো আশার৷ কেমন সন্দেহটা তীব্র হলো৷ মেহরাব হঠাৎই ক্ষে'পে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
"আমি না খুঁজে বসে আছি আপদের মনে হয়? আমি বুঝতে পারছি কিছু লু'কা'চ্ছেন৷ আমি ব্যপার টা ঘাটলে কিন্তু খা'রা'প হয়ে যাবে বলে রাখলাম৷"
বলে দাঁড়ালো না মেহরাব গটগট করে বেরিয়ে গেলো এ বাড়ি থেকে৷ আজ কেমন আগের মত নিজের রাগ গুলো দেখতে পেলো সে নয়তো মেয়েটা ওকে নিভিয়ে চলে গেছে প্রায়৷
মায়াকে মেহরাব নিজের সব টা দিয়ে খুঁজেছে৷ কিন্তু এবার অন্য ভাবে খুঁজতে হবে৷ মেহরাবের ধারণা মায়া অন্য কারো সাথে পা'লা'য়নি কারণ মেয়ে টা ওকে ভালোবাসতো মনে প্রাণে৷
অপরাহ্নের শেষ ভাগ আকাশ এখন পরিষ্কার, স্বচ্ছ সুন্দর৷ প্রগাঢ় আসমানীর মাঝে শুভ্র সাদা তুলোর ন্যায় মেঘের ভেলা৷ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হওয়ায় এখনো ছিপছিপে চারপাশ৷ আকাশ পরিষ্কার তবুও কিছুক্ষণ পরপর মেঘ ডাকছে স্বশব্দে৷ মেঘ নেই তবে বৃষ্টি হবে কি করে? আকাশ আজ ক্ষে'প'লো কেন? না ক্ষে'প'লে গ'র্জে উঠে কেউ? আকাশ যদি মানুষের মতো কথা বলতো তাহলে কুয়াশা নিশ্চিত গিয়ে জিগ্যেস করতো রাগী রাগী কন্ঠে,
"এমন গ'র্জে উঠছেন কেন? কি স'ম'স্যা আপনার?"
কিন্তু না আকাশ তো কথা বলে না৷
কলেজ থেকে বেড়িয়ে বাইরে একটা টং এ বন্ধু বান্ধুবিদের সাথে দাঁড়ালো কুয়াশা৷ এখন নয় সেই কখন দাঁড়িয়েছে৷ হাতে রঙ চায়ের কাল৷ সাদা কাপটায় রঙ চা টা সুন্দর দেখায়৷ এ টং এর রঙ চা টা মুখে লেগে থাকে খেলে৷ ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বন্ধু মহলের সবাই এখানে আসে চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে৷ সাথে কুয়াশাকেও নিয়ে আসে তবে আড্ডায় সামিল হয় না সে৷
কুয়াশার অ'তি'রি'ক্ত কথা একটুও পছন্দ না মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমুক বসায় আর বি'র'ক্ত দৃষ্টিতে তাকায় বন্ধু বান্ধবী গুলোর দিকে৷ ভাবে ওদের কি মুখ ব্যা'থা করে না? এত কথা আসে কোথ্যেকে? কই ওর তো ইচ্ছে করে না বলতে৷
মাঝে মাঝে ওর ইচ্ছা করে ওদের সবাইকে জিগ্যেস করতে 'তোদের কথার ঝুলি শেষ হবে কবে?" কিন্তু এটা জিগ্যেস করতেও একটা ইচ্ছার প্রয়োজন যা কুয়াশার মোটেও থাকে না কখনো৷
বন্ধু মহলের সবাই ওকে প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে আর সে ভালোবাসা সব সময় দেখতে পায়৷ ওর ভালো লাগে দেখতে ভালোবাসা ওর প্রতি৷ ও নিজেও সবাইকে ভালোবাসে কিন্তু ওদের মত প্রকাশ করতে পারে না কুয়াশা৷
এখানে এসেই হোস্টেলের খোঁজ নিয়েছে খুঁজেও কোন সিট পেল না এবার মাথায় ভর করল অন্য চিন্তা কি করবে এখন কোথায় থাকবে?ওর কাছে আজ দিনটাই বেকার৷
ওই অসভ্য রুদ্র নামের ছেলেটার জন্য শুরু থেকেই দিন টা খা'রা'প যাচ্ছে৷ ঝা'মে'লা ছাড়া ভালোই লাগে না ছেলেটার৷
ও আজ যতক্ষণ এখানে ছিলো রুদ্র নামের ছেলেটা সাথে থাকা ওই ছেলেটা ওর পিছনে ঘুর ঘুর করেছে কুয়াশা এতক্ষণ দেখেও না দেখার ভান করে ছিলো এখন ধরবে হাতেনাতে ছেলেটাকে ঠিক করেছে৷
হাতের চায়ের কাপটায় শেষ চুমুক বসিয়ে কাপটা খালি করলো৷ কাপটা টেবিলের উপর রেখে এপাশ ওপাশ তাকালো৷ না রুদ্রর গাড়ি দেখা যাচ্ছে না এটায় মোক্ষম সময়৷ এগুয়ে গেলো রাস্তার ওপার দাঁড়িয়ে ওর উপর নজর রাখা ছেলেটির দিকে৷ এগিয়ে এসে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো কুয়াশা! ছেলেটি থতমত খেয়েছে বোঝায় যাচ্ছে, ছেলেটি হয়তো ভেবেছে কুয়াশা ওকে দেখেইনি৷ কুয়াশাকে দেখে হাসলো ছেলটি দাঁত বের করে ক্যাবলাকান্তের মত! বললো,
"আসসালামু আলাইকুম ম্যাম! আমি রেদওয়ান৷"
কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে আপাদমস্তক পরখ করলো অতঃপর জিগ্যেস করলো,
"আপনি কে তা জেনে আমার কি? কথা হচ্ছে আপনি এখানে কি করছেন? ওই ছেলের সাথে যাননি?"
রেদওয়ান ফের হাসলো বললো,
"স্যারের সাথেই ছিলাম আমি, আমার বোন এ ভার্সিটিতেই পরে তাই নিতে এলাম৷ম্যাম আপনার কিছু দরকার আছে?স্যার আশে পাশেই আছেন আসছে এখন৷"
কুয়াশা এবার কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো,কি সাং'ঘা'তি'ক ছেলে! মিথ্যা বলেই চলেছে৷ কুয়াশা রাগী কন্ঠে বললো,
"খবরদার মিথ্যা বলবেন না আমি দেখাছি আপনি আমার সাথে সাথে ছিলেন৷ আপনার স্যার বলেছে আমার সাথে থাকতে? তাকে আমি বাড়ি গিয়ে দেখে নিবো৷ আপনার স্যার কে ফোন করে বলুন আমি যাবোনা তার সাথে৷"
বলে হাটা ধরলো কুয়াশা৷ বাসের জন্য দাঁড়ালো এখান থেকে ঠিকানা বাস দিয়ে ডিরেক্ট সাইনবোর্ড যাওয়া যায়৷ আজ ও একা যাবেই দেখবে কে কি বলে৷
কিন্তু তখনি সামনে এসে দাঁড়ালো রেদওয়ান৷ না মুখোমুখি দাঁড়ায়নি সে ও বাস খোঁজার মত করে দাঁড়িয়েছে তার মুখে এখানে আসার পর থেকেই মাস্ক রয়েছে৷ রুদ্র ও মাস্ক পরে বাইরে বের হলে কেন এটাই বুঝতে পারে না৷
কুয়াশা কিছু বলবে এর আগেই রেদওয়ান বলে,
"ম্যাম আমার দিকে ফিরবেন না৷ এভাবেই থাকুন প্লিজ! আর স্যার আপনাকে কল করছে ধরুন ফোন টা৷"
কুয়াশা বুঝলো না কেন ওর দিকে তাকাতে না করছে৷ বুঝার চেষ্টা করছে না আপাদত সে ওভাবে থেকেই থমথমে কন্ঠে বললো,
"আমি কারো ফোন কল ধরবো না বলে দিবেন আপনার স্যার কে৷"
বলে অন্য দিকে চলে গেলো৷ ফোনটা ব্যাগে বাজছে এখনো৷ কে'টে দিলো এবার কুয়াশা কে'টে দেওয়ার সাথে সাথে ম্যাসেজ এলো,
"আমি আপনার অপেক্ষা করছি কুয়াশা! আমার গাড়ি আপনার ডান দিকেই আছে উঠে আসুন৷ আমি নামলে ব্যাপার টা ঠিক হবে না বলে রাখলাম৷ "
কুয়াশা পাত্তা দিলো না ঠিক তখনি বাস এসে থামলো বাস টা অনেক ভরা কন্ডাক্টার বলছে সামনে গেলে খালি হবে৷ আপাদত রুদ্র থেকে বাঁ'চ'তে এ বাসেই উঠতে হবে৷
সেই ভরা বাসেই উঠলো কুয়াশা ঠিক তখনি ফোন বেজে উঠলো পাত্তা দিলো না সে দিকে শেষের দিকে গিয়ে দাঁড়ালো এ ভিরের মাঝেই৷ সাথে সাথেই বাস টা ছেড়ে দিলো হাফ ছেড়ে বাঁ'চ'লো৷
ক্ষানিকটা পথ যেতেই একেবারে শেষের দিকে সিট পেলো এক সাথে দুটো তাও৷ বসার জন্য এগোবে ঠিক তখনি জানালার পাশে সিটটায় বসলো কেউ সে দিকে তাকালো না ঠিক মত৷ তার জানালার পাশের সিট এমনিও পছন্দ না সে ও গিয়ে বসলো ভিড় ঠেলে কিন্তু বসতেই অনাকাঙ্ক্ষিত কারো কন্ঠ পেয়ে চমকে তাকালো৷ রুদ্র বসেছে জানালার পাশের সিটটায় মুখে মাস্ক সে শীতল কন্ঠে বললো,
"আপনি আমায় উঠে আসতে বাধ্য করেছেন কুয়াশা৷ এর পরের ব্যাপার গুলো মোটেও ভালো হবে না আশা করি বুঝতে পারছেন?"
বলে সন্তপর্ণে আঙুলে আঙুল ডুবিয়ে দিলো কুয়াশার৷ কুয়াশা যেন থমকালো হঠাৎই শান্ত নির্বাক হয়ে গেলো৷ সে রাগতে চাইলো৷ কিছু বলতে চাইলো, পারলো না৷ কিছু বলতে পারলো না৷
এগারো
"আমি বিয়ে করবো না বাবা৷"
এ কথা বলার সাথে সাথেই বেলির গালে ঠা'স করে সজোরে থা'প্প'ড় পরলো৷ থা'প্প'ড় টি দিয়েছে তার বাবা তাও বেলি শান্ত হলো না সেই একই ভঙ্গিতে বললো,
"তোমার কথা মতই তো চলছি৷ তবুও কেন এমন করছো? আমি বিয়ে করতে চাই না বাবা আমি কোন পাত্রপক্ষের সামনে বসতে পারবো না৷আমি পড়তে চাই৷"
বেলির কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বেলির ফুপু কিয়ারা নাক ছিটকে বললো,
"হ্যাঁ তা করবি কেন? ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি আর ন'ষ্টা'মি করে ঘুরবি৷আর এত পড়ার কি আছে? সেই তো শশুর বাড়ি গিয়েই খুন্তি নাড়াতে হবে অযথা টাকা পয়সা খরচের মানে হয় না৷"
বেলি এ মহিলা কে একটুও পছন করে না৷ নিজে একটা মেয়ে হয়ে সবসময় অন্য মেয়েকে নিয়ে কটু কথা বলে৷ বেলি মহিলার দিকে রাগী রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই মহিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো বললো,
"ভাই এখনো সময় আছে এ মেয়ের পাখনা কা'টো নয়তো এ মেয়ে তোমার নাক কা'ট'বে৷"
বলে বেরিয়ে গেলো বেলির রুম ছেড়ে৷ কাইফ সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে থথমে কন্ঠে বলে,
"বিয়ে তোমাকে এখনি করতে হবে৷আমি চাই না তুমি ওদের সামনে কোন ঝামেলা করো৷"
বলে আর দাঁড়ালো না৷ বেলি এবার আশাহত হলো৷ প্রান্তকে মে'রে ফেলতে ইচ্ছা করছে ওর সব দোষ ওই প্রান্তর৷
এ পরিবারে কখনোই কারো ইচ্ছার দাম নেই কি করে নিজের কষ্ট গুলো বোঝাবে সবাইকে? মা ও নিশ্চয়ই এখন বুঝিবে না?
হাতে দুটো চকচকে সোনার বালা মেয়ের হাতে পরালো বেলির মা৷ এ বালা দুটো দুবাই থেকে আনানো শুধু এ দুটো নয় তিন জোড়া বালা সে দুবাই থেকে আনিয়েছে তার বোন জামাইকে দিয়ে৷ বালা জোড়ায় নতুনত্বের ছাপ৷ সে বড়ই রুচিবান মানুষ তার সব কিছু খাটি হওয়া চাই৷ তার ঘর দেখলে বোঝা যায় সে কতটা গুরুত্ব দেয় নিজের পছন্দ গুলো৷ ঘরের আসবাবেও আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে৷ আধুনিকা মহিলা বলা চলে৷ তবে বড় মেয়েটা হয়েছে একেবারে বাবার মত৷ ছোট মেয়েটা চলে উন্নত সমাজে৷ প্রান্তকে তার খুব পছন্দ কিন্তু তার স্বামী প্রান্তকে পছন্দ করে না একটুও কেন করে না তার তা জানা নেই৷
তাদের পরিবারের সাথে রাজনৈতিক ব্যপার নিয়ে কিছু ঝা'মে'লা আছে শুনেছে কিন্তু সব তার কাছে অস্পষ্ট৷ কাইফ সাহেব তাকে কিছু বলে না তার কাজের ব্যপারে৷ তার স্বামী কাইফ সাহেবের নাম ডাক অনেক এ শহরে সামনে ইলেকশনে দাঁড়াবে ঠিক করেছে৷ তার এসব রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপার পছন্দ না৷
আজ বেলিকে দেখতে আসবে সে জন্যই বাড়িতে এলাহি আয়োজন ছেলে বেলিকে আগেই দেখে পছন্দ করেছে৷ বড় মেয়ের বিয়ে সে মন মত দিতে পারেনি ছোট মেয়ের বেলায় কমতি যাবেনা কিছুই৷
বেলি সটান হয়ে বসে আছে তার ভাবমূর্তি বোঝা যাচ্ছে না মেয়েটার শরীর ভালো না কাইফ সাহেব বেজায় রাগী মুখের উপর কিছুই বলা যায় না৷ মেয়েটার জন্য ছেলেটার পাগলামো দেখেছে বেলির মা বিভা কিন্তু কছু করার নেই৷ ভালোবাসা সবার জন্য না সে প্রান্তকে পছন্দ করলেও সাহস করে স্বামী কে কিছু বলেনি৷ আর কাইফ সাহেব ও তো নিশ্চয়ই মেয়েকে খারাপ জায়গায় ঠেলে দিবেন না? মেয়ের যাতে ভালো হবে তাই করবে৷
তা ছাড়া সে যতটুকু জানে বেলি প্রান্তকে একটুও পছন্দ করেন না৷
বেলির মা বালা দুটো পরাতেই ডাক পরলো তার৷ কলিং বেল চাপছে কেউ এসে পরেছে হয়তো তারা৷ ছুটে গেলো সে দিকে৷ তখনি উঠে দাঁড়ালো বেলি নিজ অলিন্দের দিকে পা বারাবে তখনি কারো ডাকে চমকে উঠলো বেলি৷ কি শুনলো? ঠিক শুনলো নাকি ভুল?
আবার প্রান্তের ডাক কানে এলো৷ প্রান্ত এসেছে? ছেলেটা শুনলো না ওর কথা? মনে ফের ভয় ঝেকে বসলো তার বাবা আজ বাড়িতেই আছে৷ হাত পা কাঁ'প'ছে বেলির কি করবে এখন? ক'ম্পিত পায়ে এগিয়ে গেলো বসার ঘরের দিকে ঠিক তখনি হাত আঁকড়ে ধরলো কেউ৷
সেই চেনা থমথমে মুখ খানা দেখতে পেলো নেত্র যুগল লাল হয়ে আছে৷ লোকটা বেজায় রেগেছে বোঝা যাচ্ছে অন্য সময় হলে একটুও ভয় পেতো না বেলি কাটকাট কন্ঠে নিজেই বলতো,
"আমার হাত ধরার অনুমতি আপনাকে দেইনি প্রান্ত ভাই৷ আপনার স্প'র্ধা দেখে আমি অবাক৷"
কিন্তু না এবার বেলি কিছু বলতে পারলো না ভয়ে গুটিয়ে রইলো তবে এখন কার ভয় টা বাবা কে না প্রান্তকে পাচ্ছে৷
কেন পাচ্ছে সে নিজেও জানে না৷ এর মাঝেই ওর বাবা কাইফ সাহেবের কন্ঠ কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো লোকটা বিচ্ছিরি একটা বকা দিয়ে বললো,
"আমার মেয়ের হাত ধরেছিস কেন প্রান্ত৷"
বেলি এবার দৃষ্টি বদল করলো বাবার দিকে তাকালো, আশেপাশে দৃষ্টি দিলো৷ বেলিকে দেখতে আসা সেই ছেলেটাও আছে৷ সে ছেলের মাথায় আ'ঘা'তের দাগ৷ প্রান্ত বেলির বাবার দিকে অ'গ্নি'দৃষ্টিতে তাকালো অতঃপর বেলির দিকে তাকিয়ে বলে,
"তুই কি ভেবেছিলি বাবার কথায় বিয়ে করে নিবি আর আমি তা দেখবো?"
বেলির কি হলো কে জানে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
"আমি বিয়ে করছি না৷"
বেলির বাবা বিস্ময় চোখে তাকালো মেয়ের দিকে৷ এ যেন বোবার মুখে বুলি ফুটেছে আজ৷ যে কিনা সব সময় তার হ্যা তে হ্যাঁ মিলায়৷ বেলি এবার প্রান্তর দিকে তাকালো শক্ত কন্ঠে অতঃপর বললো,
"আপনি এখান থেকে যান প্রান্ত ! আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে না, সব আপনার জন্য হচ্ছে এসব৷ একটু বাঁচতে দিন আমায়৷ আমি এখন বিয়ে করছি না এই বলে আপনাকে করবো ভুলেও ভাববেন না৷"
বেলির কথায় আশেপাশে গুঞ্জন বাড়লো৷ সেই গুঞ্জনের মাঝে বেলি ফের বললো,
"প্রান্ত আপনাকে যেতে বললাম তো?"
এ কথা গুলো বেশ চিৎকার করেই বললো বেলি৷ প্রান্ত এবার রেগে বললো,
"আমি যাচ্ছি বলে ভাবিস না তোকে ছেড়ে দিচ্ছি৷ তোকে তো এখন আমার যেকোনো মূল্যেই লাগবে৷"
বলে দাঁড়ালো না প্রান্ত বেড়িয়ে গেলো৷ ঠিক তখনি ঠাস করে থা'প্প'ড় পরলো বেলির গালে৷
বেলি গালে হাত দিয়ে বাবার দিকে তাকালো৷ মাঝে মাঝে বেলির মনে হয় এ লোকটি তার বাবা না৷ বাবার দায়িত্ব ছাড়া কিছুই করে নি না ভালোবেসেছে সব সময় নিজের সম্মান নিয়ে ভেবেছে৷ তাদের ইচ্ছার কখনোই মূল্য ছিলো না বড় বোনকে দেখার পর নিজের ইচ্ছার কথা কখনই বলেনি৷
বেলির বাবা কিছু বলবে এর আগেই রনি নামক ছেলেটি উঠে দাঁড়ালো শক্ত কন্ঠে বললো,
"এ ছেলেটার কথা আপনি আগে জানাননি কেন?"
বেলির বাবা কেমন থতমত খেলো৷ তবেকি বিয়ে ভেঙে দিবে? সামনে ইলেকশন আছে এখন এই ছেলে হাত ছাড়া হয়ে গেলে সব যাবে৷
তিনি উত্তর দিবে এর আগেই রনি বললো,
"ও পড়তে চায় পরুক৷ওই ছেলেকে তো আমি দেখে নিবো৷"
হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন কাইফ সাহেব সে বললো,
"না ও পরবে না৷ তুমি চিন্তা করো না বাবা তারাতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করছি আমরা৷ "
রনি বেলির দিকে তাকালো৷ মেয়েটার দৃষ্টি মলিন ভেজা চোখে দাঁড়িয়ে আছে৷ রনি একই কন্ঠে উত্তর দিলো,
"উহু ভুলেও ওকে জোর করবেন না এখন৷ ও যা চাইবে তাই হবে৷ সহজে কিছু পাওয়ার আনন্দ নেই৷ আমার বউ আমার মত ঘাড় বা'কা হবে এটাই তো হওয়া উচিৎ তাই না? দেখি আপনার মেয়ের মতিগতি৷"
এইটুকু বলে হাসলো আ'ঘা'তের জায়গায় হাত দিয়ে রনি৷ অতঃপর কি হলো কে জানে? শক্ত কন্ঠে বললো,
" এমন ওর উপর হাত তোলার সাহস দেখাবেন না ভুলেও এত দিন যা করেছেন করেছেন এর পর ব্যপার গুলো মোটেও ভালো হবে না বলে রাখলাম৷"
বলে দাঁড়ালো না রনি, বেরিয়ে গেলো৷ সে আজ একাই এসেছি ভাগ্যিস একা এসেছে নয়তো এমন উড়নচণ্ডী মেয়েকে তার ছেলের পছন্দ হয়েছে জানলে মুখের উপর না করে দিতো৷ এ মেয়েকে দেখেছে সে ছবিতে কিন্তু তাদের প্রথম দেখা এভাবে হবে ভাবতেও পারেনি
নিজের কক্ষে এলো বেলি৷ এখন তার সত্যি শান্তি দরকার৷ কিন্তু পাচ্ছে না তাও শান্তি এবার নিশ্চই আর প্রান্ত জ্বালাবে না? মন কি চায় তা নিজেই বুঝতে পারছে না সে৷ চেয়েছিলো প্রান্তকে কথা শুনাতে তা পেরেছে, বিয়েটাও এখন হচ্ছে না পরে কি হবে দেখা যাবে তখন তবে কেন পাচ্ছে না শান্তি? সব তো ওর নিয়মেই হচ্ছে? মন মস্তিষ্ক কি চাইছে? আপাদত ভাবতেও পারছে না সে অবস্থায়ই নিচে লুটিয়ে পরলো৷
বারো
মেহরাব এর চাহনি বরই অশান্ত৷ হাসফাস করছে সে৷ সে এসেছে থানায়! আঠারো বছরের পুরোনো কেস পুনরাবৃত্ত খুলতে৷ ব্যাপারটা খোলাসা করে ঘাটতে হবে ফাঁক ফোকর ছাড়া যাবে না৷ বন্ধু তার বরই ব্যস্ত৷ ব্যস্ত না থাকলেও এখানেই আসতে হতো যেহেতু অফিসিয়াল কাজ৷
আজ থানাও বরই ব্যস্ত, কত জন কত রকমের কত রিপোর্ট লেখালো ওনার সামনে কত ভিন্ন ফোন কল এলো৷ কারো প্রিয়জন হা'রি'য়ে গেছে, তো কোথাও লা'শ পাওয়া গেছে৷ অদ্ভুত এই পৃথিবীর বৈচিত্রময় মানুষ৷ আমাদের চারোপাশে ভালো মানুষি মুখি ষ'ড়'য'ন্ত্রকারীর বিচরণ৷
ব্যাস্ত থানাটা ক্ষানিকটা শান্ত হলো যেন৷ লাঞ্চ টাইম চলছে তার শান্ত পরিবেশ দরকার ছিলো এবার আশে পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে আয়াশের দিকে এগোলো বসলো৷ আয়াশ এ সময় বন্ধুকে এখানে দেখে ক্ষানিকটা অবাক হলো৷ আরো বেশি চমকালো কারণ সে যেন ভিন্ন কাউকে দেখছে, সেই আগের মেহরাব একেবারে আগের মত৷
ছেলেটা একেবারে অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলো মায়া যাওয়ার পর দাম্ভিকতা ছিলো না কিন্তু আজ সেই আগের মত দাম্ভিকতা দেখতে পাচ্ছে৷ তেতাল্লিশ বছরের মেহরাব কে যুবক মনে হচ্ছে৷ তবে কালো ফ্রেমের চশমাটা রয়েছে চোখে৷
আগের চকচকে ঝকঝকে ভাব টা কেমন পাচ্ছে৷ আয়াশের সামনের বন্ধু নামক ব্যাক্তিটি একেবারেই ভিন্ন আঠারোটা বছর যাবত এক নারীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছে সে লোকটা যেন বয়স না হতেই বুড়ো হয়ে গিয়েছিলো৷ বিয়ের কথা বললেই বলতো,
"আমি এক নারীতে আসক্ত থাকতে চাই চিরকাল৷" এসব নিতান্ত বাচ্চামোই মনে হত সবার, কিন্তু বাচ্চামো পা'গ'লা'মোর পিছনে ভালোবাসা যেন প্রগাঢ়৷ এ ভালোবাসায় কেউ ক্ষু'ত ধরতে পারবে না৷
আয়াশ যদি কখনো রেগে বলতো আর কতদিন একা থাকবি বিয়ে করেনে! মেহরাব অদ্ভুত কন্ঠে বলতো,
"আমার তাকে আমার কাছে এনে দে করে নিবো৷"
এ এক পা'গ'লাটে প্রেমিক যার ভালোবাসা দিন দিন কমার বদলে বেড়েই চলেছে পাল্লা দিয়ে৷ হয়তো মায়ার প্রতি মেহরাব এর ভালোবাসা এক পাল্লায় আর পৃথিবীর সব ভারী-ভারী জিনিস এক পাল্লায় রাখলে মেহরাবের পাল্লা খানাই ভারী হবে৷
কিছু কিছু মানুষের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপ করা যায় না৷ মায়ার মায়ায় পরে ছেলেটা সব ছেড়ে দিয়েছিলো ভালো আঁকতে যানে ছেলেটা আর্কিটেকচার ছিলো ছোট খাটো মাঝে যখন সারা পেতে শুরু করলো তখনই মায়া নামক মেয়েটা হা'রি'য়ে গেলো ছেড়ে দিলো সব৷ বছর খানেক পাগলের মত খুঁজেছে সব ছেড়ে ছুড়ে, এখন তবে বেকার নয় একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত৷
মেহরাব সেই আগের মত ভাব ভঙ্গিতে বসলো মুখে গম্ভীর্যতা স্পষ্ট৷ কি চলছে এর মনে? আজ হঠাৎ থানায় এর আগমন কেন? মায়ার বাড়ির সেই মেয়ের কথা জানতে? হয়তো তাই?
আয়াশ কিছু বলবে এর আগেই মেহরাব থমথমে কন্ঠে বললো,
"আমি মায়ার কেস টা রি ওপেন করতে চাই৷"
হঠাৎ এমন কথায় বিস্মিত হলো আয়াশ ভ্রু কুচকে তাকালো৷ আঠারো বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা কেস ফের রি-ওপেন? তাও একটা মিসিং কেস? ছেলেটার মাথা ঠিক আছে তো? যে নিজ থেকে হা'রি'য়ে যায় তাকে আদৌ পাওয়া যায়? পরিবারের লোক কি মিথ্যা বলবে?
মেয়েটা যে কি তাবিজ করেছে তার বন্ধুকে তাই আয়াশের মাথায় ঢুকেনা৷ কতবার বললো এ মেয়ের আশা ছেড়ে দিতে৷ এ মেয়ের এত দিনে কি বিয়ে হয়নি?
আয়াশ কিছুটা নড়েচড়ে বসলো বি'র'ক্ত কন্ঠে বললো,
"তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস? আঠারো বছর আগের একটা সাধারণ মিসিং কেস রি ওপেন করতে বলছিস?"
মেহরাব তীক্ষ্ণ নজরে আয়াশের দিকে তাকালো এটা সাধারণ কেস লাগছে ওর কাছে? সবাই এমন কি করে হেলাফেলা করতে পারে? আর ও একজন পুলিশ অফিসার কোন কিছুই ছোট করে দেখা উচিত নয়৷
মেহরাব এবার ঠিক ঠাক হয়ে বসলো শক্ত কন্ঠে বললো,
"আমি কেস টা রি ওপেন করাতে চাই! বন্ধু হিসাবে যাই বলিস একজন দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে আমার কথা মানতেই হবে তোর৷ নয়তো বলে দে তুই পারবি না আমি ওপর মহলে যাবো৷"
আয়াশ আশাহত হলো বন্ধুর কথায় ছেলে বোঝেনো বড়ই দায়৷ আগেও পারেনি এখনো হবে না৷ আয়াশ তপ্ত শ্বাস টানলো বললো,
"কেন রিওপেন করতে বলছিস? তুই কি কিছু পেয়েছিস সন্দেহ জনক? বা মায়াকে দেখেছিস?"
আয়াশের কথায় হাসলো মেহরাব তাচ্ছিল্য হাসি বললো,
"তোর মনে হয় ওকে দেখলে আমি থানায় আসতাম? আমি নিজেই খুঁজতাম৷"
আজকাল মেহরাবের ভাব মূর্তি বোঝা যায় না৷ ছেলেটার জীবন কা'ট'বে কি করে? সবটা খুলে বললো মেহরাব তার সন্দেহর কথা৷ আশা কিছু লুকাচ্ছে৷ কিন্তু শুধু মানুষের ভাবমূর্তি দেখে কি সবটা যাচাই করা যায় যে কিছু লুকাচ্ছে? তবে ব্যপার গুলো হেলায় ফেলে দেওয়ার মত না৷ মায়ার বাড়ির মেয়েটার লা'শ পাওয়া যাওয়ার কেসটা সামলে তারপর মায়ার মিসিং কেসটার ফাইল গুলো ফের রিচেক দিবে যদিও আগে কোনো প্রমানই নেই সবার স্বীকারোক্তি কি কি ছিলো তা৷
"আমার মায়া আদৌ আছেতো আয়াশ?"
হঠাৎ মেহরাবের এ কথায় চমকালো আয়াশ সে ও জ্ঞান শূন্য হলো কি উত্তর দিবে বন্ধুকে? সে ও জানে না৷ আদৌ মেয়ে টা আছে তো? থাকলে কোথায়? ভাবনার বিষয় নয় কি? আঠারো বছর যাবত একটা মেয়ে নিখোঁজ?
..
"সামনের এক তারিখ আমি চিলেকোঠার রুম টা ছেড়ে দিচ্ছি আন্টি৷ আপনারা নতুন ভাড়াটিয়া খুঁজে নিবেন আপনার মেয়ের পছন্দ অনুযায়ী৷"
শেষের কিথা গুলো বেশ বাঁকা স্বরেই বললো রুদ্র৷ দৃষ্টিও তার ক'টা'ক্ষ কুয়াশার পানে তাকিয়ে আছে৷ ছাদে তখন মেহনাজ কাপর মেলতে এসেছে কুয়াশা ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছে৷ রুদ্রর কথা শুনে চুল ঝাড়া থামিয়ে দিলো, নিরবে তাকালো৷
সে দিন এসে বেশ চেপে ধরেছিলো ভাই কে কিন্তু পেট থেকে কিছুই বের হয় নি৷ উলটো জ্ঞান দিয়েছে ওকে৷ এ ছেলের নাক টিপ দিলে দুধ বের হবে সে কিনা বড় বোন কে বড়বড় জ্ঞান দিয়েছে? ভাবা যায় এসব? বলে কিনা,
"আপু তোর কি মনে হয় না বাড়াবাড়ি করছিস? অন্যের ব্যপারে জানতে চাওয়া উচিত নয়৷ "
আরো কত কি জ্ঞান দিলো, কুয়াশাও টু শব্দ করতে পারেনি যেমন বড় ভাই ছোট বোন কে জ্ঞান দিচ্ছে৷ ছেলেটা বেশি বড় হয়ে গেছে৷
ছেলেটা ঘর ছেড়ে দিচ্ছে? হঠাৎই যেন মন টা কেমন হয়ে গেলো৷ মন খারাপ গুলো বিনা আমন্ত্রণে হানা দিলো কেন অন্তস্থলে? এ ছেলে যাবে তো ওর কি? অদ্ভুত ছেলে যার কোন চরিত্রই খোলাসা নয় এমন মানুষ না থাকাই শ্রেয়৷
সাং'ঘা'তিক ছেলেটা সে দিন ওকে অপমান করেছিলো যেমন তেমন অপমান নয়৷
যার একটা অত দামি গাড়ি আর এসিস্ট্যান্ট আছে সে নিশ্চই যেমন তেমন মানুষ না?
যদিও এসব ব্যপারে ওর মাথা ঘামানোর কারণ নেই তবুও৷ যাই হোক ও ছেলে র'সা'ত'লে যাক তাতে কিছু আশে যায় না কুয়াশার৷ সে আবার হাত চালালো চুলে তখনি ওর মা মেহনাজের কন্ঠ ভেসে এলো,
"তুমি চলে যাবে? কিন্তু কেন? কোনো সমস্যা হচ্ছে বাবা তোমার এখানে? কুয়াশা কিছু বলেছে?"
মেহনাজের ব্যতিব্যস্ততা দেখে অবাক না হয়ে পারলো না কুয়াশা৷ তবে রুদ্রর ভালো লাগলো হাসলো সে অতঃপর শান্ত চাহনিতে আরেকবার কুয়াশাকে পরখ করে বললো,
"ব্যস্ত হবেন না আন্টি! কেউ কিছু বলেনি৷ এখানে আমার যা কাজ ছিলো শেষ আমি এক তারিখে ঢাকা ব্যাক করবো আমার বাড়িতে৷"
মেহনাজের মন কেমন ক্ষু'ন্ন হলো ছেলেটাকে তার ভারি পছন্দ হয়ে ছিলো ছেলেটা চলে যাবে? সে নিশ্চিত তার কা'টখো'ট্টা মেয়েটার জন্য ছেলেটা এ বাড়িতে টিকতে পারলো না৷
মেহনাজ নিচে দিকে পা বাড়ালো কুয়াশা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ চুলে হাত চালাচ্ছে দৃষ্টি এবার সরাসরি রুদ্রর দিকেই৷ জরতাহীন দৃষ্টি রুদ্রর চাহনিতে তীক্ষ্ণতা মেয়েটা বেশ কঠিন উহু শুধু কঠিন না পা'ষা'ণ৷
"এবার আপনি খুশিতো কুয়াশা?"
রুদ্রর এমন প্রশ্নে থমকালো কুয়াশা, বলতে ইচ্ছা করলো হ্যা খুশি অনেক খুশি৷ কিন্তু বলতে পারলো না মুখ দিয়ে 'হ্যাঁ' শব্দটা ও বের করতে পারলো না৷
কি অদ্ভুত! ছেলেটার যাওয়ার কথা শুনে সব থেকে খুশি ওর হওয়ার কথা ছিলো৷ কিন্তু হতে পারছে না কেন?
কুয়াশা উত্তর দিলো না, নিরাশ মুখে পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য৷
তা দেখে হাসলো রুদ্র যেমন তেমন হাসি নয় এ যেন বিশ্ব জয়ের হাসি অনেক কিছু জয় করে নিয়েছে৷
মেঘময় বিকালের সূচনা টিপ টিপ বৃষ্টি পরছে চারপাশে৷ গুটি গুটি পায়ে পা টিপে টিপে মামার কক্ষের সামনে এলো কুয়াশা৷ ছাদ পিচ্ছিল হয়ে আছে কিছু কিছু জায়গায় যেখানে বেশি শেওলা৷ ছাদে সহজে ছেওলা পরতে দেয় না কুয়াশা এবার মনেই ছিলো না পরিষ্কার করার কথা গাছের নিচের জায়গা গুলো পিচ্ছিল হয়ে আছে৷
তাই পা টিপে টিপে হাটতে হলো৷ কুয়াশার হাতে খাবারের প্লেট
মামা সেই কখন এসেছে প্রানবন্ত মানুষ টা হঠাৎ চুপ হয়ে গেছে কেমন৷
কোথ্যেকে এলো দুপুরে না খেয়ে উপরে চলে এলো৷ কুয়াশা বড় হওয়ার পর আজ প্রথম মামাকে এমন চুপ চাপ দেখলো নয়তো এমন ছিলো না লোকটা৷
কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে সাত পাঁচ ভাবলো৷ ঢুকবে কি ঢুকবেনা ভাবলো৷ মামার সাথে সে কখনো খোলা মেলা নয় সাপে নেউলের মতই৷ হীমের সাথে যেমন কথায় কথায় ঝগড়া হয় মামার সাথেও কুয়াশার তেমন৷ তবে মানুষ টা ওকে ভালোবাসে জানে৷ ছোট থেকে আগলে রেখেছে বাবার মত ভালোবাসা দিয়েছে৷ কি লাগবে না লাগবে চাওয়ার আগেই হাজির করেছে যেন সে বা বলতেই জেনে যেতো মনের কথা৷
কলেজের ফি কখনো চাইতে হয়নি কুয়াশার৷
"আসবো মামা?"
মেহরাব তখন রঙ তুলি গুলো দেখছিলো রঙ গুলো শুকিয়ে গেছে ব্রাশ গুলো নষ্ট হয়ে গেছে৷ হঠাৎ মিষ্টি কন্ঠে উপরের দিকে তাকালো৷ বেশ অবাকো হলো কুয়াশা এসেছে৷ মেয়েটা কবে শেষ তার কক্ষে এসেছে তার মনে নেই৷
ভাগ্নিকে নিজের কক্ষে দেখে ব্যতিব্যস্ত হলো শান্ত কন্ঠে বললো,
"মা তুমি? কিছু দরকার?"
কুয়াশা হাসলো মেহরাব তখনি তাকে তুমি বলে যখন কুয়াশা নিজ থেকে মেহরাব কে কিছু জিগ্যেস করে বা কিছু চাইতে আসে৷ কুয়াশা হসি চেপে থমথমে হয়ে বললো,
"কি হয়েছে বলোতো তোমার? আজ খাওনি কেন? আমায় বকা খাওয়ানোর জন্য উঠে পরে লেগেছো নাকি? জানো তোমার বোন আমাকেই বকবে৷ "
কুয়াশার কথায় হাসলো শুধু মেহরাব৷ অন্য দিন হলে সেও প্রতিউত্তরে বলতো, 'আমি তো চাই তুই বকা খা৷ তোকে বকা খেতে দেখলে আমার পৈশাচিক আনন্দ হয়৷" বলেই হো হো করে হাসতো৷ কিন্তু আজ নিরুত্তর রইলো৷
কুয়াশা খাবারের প্লেট টা ছোট টেবিলে রেখে বললো,
"আমি যেন প্লেট খালি পাই, এখানে রেখে দিলে রাতে আর খাবার দিবো না বলে দিলাম৷"
এবারো মেহরাব হাসলো৷ কুয়াশা ব্যাপার টা বুঝলো হয়তো মন খারাপ তার কথা বাড়ালো না৷ যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি মেহরাব বললো,
"রুদ্র চলে যাচ্ছে কুয়াশা, জানিস তো?"
কুয়াশা থামলো৷ অই অম্বরটার মত মনে ফের মেঘ গুলো জমতে শুরু করলো৷ লোকটা সত্যি যাচ্ছে তাহলে? সে ভেবেছিলো হয়তো কুয়াশাকে শুনিয়ে বলেছে৷ কুয়াশা ধাতস্থ হয়ে ফিরলো মেহরাবের দিকে শক্ত কন্ঠে বললো,
"তাতে আমার কি?"
মেহরাব অবাক হলো৷ মেয়েটার মনে মায়া নেই? তিনটা মাস ছেলেটা এক সাথে ছিলো তাহলে কি তার ভাবনা ভুল? এ মেয়েটা এমন পাষাণ কেন? কার মত হয়েছে? এবার ফের কোন প্রেমিক তাহলে খালি হাতে ফিরবে?
সে চায় প্রেম টা হোক৷ ভালোবাসা বাসি হোক অনুভুতি চওড়া হোক৷ মন ভাঙার ক্ষত টা বড়ই কষ্ট দায়ক৷
মেহরাব কুয়াশার চোখ মুখ পরখ করলো বললো,
"তুই অবুঝ কেন কুয়াশা? ছেলেটার অনুভূতি তুই দেখিস না? সে দিন তো সারাদিন ওর সাথে ছিলি তবুও বুঝিস না তোকে চোখে আঙুল দিয়ে বোঝাতে হবে?"
সে দিন এর কথা শুনে চমকালো কুয়াশা তার মানে তার মামা দেখেছে? জরতায় পরলো৷ হঠাৎই মামার কথাটা ধ্যান পরলো বলেছে ' অনুভুতি বুঝে না সে' অনুভুতি বুঝতে চায় না সে৷ সত্যি চায় না৷
কুয়াশা ফের যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেলো মামার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
"অনুভূতি গুলো নজর দিলেই ভালোবাসা হবে মামা৷ মায়া বাড়বে যে মায়ায় ফেসে তুমিও অপেক্ষার প্রহর গুনছো, জ্ব'ল'ছো৷ আর মা পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছে৷ বেইমানির শিকার হয়েছে৷ ভালোবাসা ভালো না মামা৷ কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয় না৷"
এই টুকু বলে থামলো অতঃপর ফের শক্ত কন্ঠে বললো,
"ভালোবাসা আমার না হোক, কষ্ট গুলো আমায় না ছুঁক৷"
তেরো
টিপ টিপ বৃষ্টির মাঝে পাড়ার মোড়ে বাইকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্ত হাতে জ্ব'ল'ন্ত সি'গা'রে'ট কিছুক্ষণ পর পর মুখে দিয়ে ফু'ক'ছে আর মুখ বন্ধ করে নাসারন্ধ্র দিয়ে ধোঁয়া উড়াচ্ছে৷ চোখে সবসময়ের মত কালো সানগ্লাস৷ বৃষ্টির ফোটা টুপ টাপ সানগ্লাসে পরছে তাই বি'র'ক্ত নিয়ে খোলালো সানগ্লাস টা সি'গা'রেট টা ফেলে ঠিক হয়ে পকেট থেকে রোমাল বের করে মুছলো৷ এবার আর চোখে পরলো না শার্টে ঝোলালো৷ বন্ধু থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকে লাইটার দিয়ে ফের জ্বা'লা'লো ছেলেটার সিগারেটের বড়ই নে'শা এক মিনিট ও সিগারেট ছাড়া চলে না৷
হাতের কনুয়ে সাদা একটা ব্যান্ডেজ করে একটু আগেই মারপিট করে দাঁড়ালো৷ মধ্য বয়স্ক একটা ছেলেকে বেধড়ক পেটালো৷ ছেলেটির দোষ বেলির ফোন নাম্বার খোঁজা তাও ওর বন্ধুদের থেকে
সে চায় না তার বেলিকে সে ছাড়া আর কেউ নজর দিক৷ বেলির দিকে কেউ তাকালেও ওর শরীর জ্ব'লে৷ তার বেলি শুধু তার৷ সে দিন বেলিকে দেখতে আসবে খবরটা বেলিদের কাজের লোকের থেকে পেয়েছে পারলে সে ছেলেকে ও জা'নে মে'রে দিতো৷
মেয়েটার বেশ পাখনা গজিয়েছে কিছু বলছেনা তাই বেরে গেছে৷
বেলি এই বৃষ্টির মাঝেই বের হলো বাড়ি থেকে কলেজে যেতে হবে আজ৷ পরিক্ষার জন্য কিছু নোটস দেওয়া হবে, এখানে আসতেই প্রান্তর দেখা মিললো সামনে একটা মেয়ে,প্রান্ত হেসে হেসে কথা বলছে মেয়েটার সাথে আর সি'গা'রেট ফুকছে৷ ছেলেটা যেন সিগারেট খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে,
আর মেয়েটাকে দেখে কৌতুহল বাড়লো বেলির৷ ৷ নাক ছিটকালো বেলি এ ছেলে ভালো হবার নয়৷ কেন যেন অদ্ভুত ইচ্ছা জাগলো বেলির৷ মেয়েটাকে গিয়ে জিগ্যেস করতে ইচ্ছা করলো 'এ বাউন্ডুলে ছেলেটার সাথে কিসের এত কথা আপনার?' কিন্তু না তা জীবনেও করবে না বেলি৷
মেয়ে কেন মহিলাদের সাথে কথা বলুক তাও আসে যায় না ভাবলো বেলি৷ এ যেন মন কে শান্তনা দিলো৷ তপ্ত শ্বাস টানলো বেলি আশে পাশে দৃষ্টি বুলিয়ে রিক্সার অপেক্ষা করলো৷ তার গাড়িতে যাতায়াত পছন্দ না রিক্সাই শান্তি মনে হয়৷ আজ বেলি পাড়ার মোরে আসতেই রিক্সা ওয়ালা এসে দাঁড়ালো৷ সে কিছু বলার আগেই রিক্সা ওয়ালা বললো,
"উঠেন মা আমি আপনেরে দিয়া আসি৷"
বেলি ব্রু কুচকে তাকালো লোকটার দিকে অতঃপর কাধ ঘুড়িয়ে প্রান্তর দিকে তাকালো প্রান্ত উঠার জন্য ইশারা করলো৷ মেয়েটি এখনো ওর সামনেই৷ বেলির কি হলো কে জানে? উঠলো রিক্সায়৷ আজ কথা বাড়ালো না৷ বেলির রিক্সা ছাড়বে ঠিক তখনি রিক্সা আ'ট'কে কেউ উঠে বসলো বেলির পাশে হঠাৎ এমন ঘটনায় ভরকালো৷ নিজের পাশের ব্যক্তিটির দিকে নজর যেতেই চমকে উঠলো৷
প্রান্ত না রনি বড় বড় চোখ করে তাকালো বেলি, এ ছেলে কোথ্যেকে এলো আবার? পুরান পাগলে ভাত পায় না আবার নতুন পাগলের আমদানি৷
হঠাৎই কিছু ভেবে টনক নড়ে উঠলো ভীত দৃষ্টিতে একবার রনিকে আরেকবার অদূরে ওই চায়ের টং এ প্রান্তকে দেখলো৷ প্রান্তর মুখ দেখার মত ছিলো৷
"কি বউ একা একা কোথায় যাচ্ছো?"
বেলি আরো বেশি চমকালো অগোচরে শুকনো ঢোক গিললো ভরকানো কন্ঠে বললো,
"আপনি এখানে?"
রনি নিজের হাতের ছাতাটা খুলতে খুলতে বললো,
"তাহলে কোথায় থাকার কথা ছিলো শুনি?"
বেলি এবার নড়েচড়ে বসলো ধাতস্থ চোখে প্রান্তর দিকে তাকালো৷ খুব ইচ্ছা করলো রনিকে রিক্সায় চড়িয়েই ওর সাথে নিয়ে গিয়ে প্রান্তকে একটু শাস্তি দেওয়ার হয়তো মন টাও শান্তি হত? ওই মেয়েটার সাথে দেখে গা পিত্তি জ্ব'লে যাচ্ছে ওর৷ কিন্তু কেন যেন পেরে উঠলো না মন সায় দিলো না৷ ব্যপারটি পরে ঝা'মে'লার হয়ে যাবে তাই থমথমে কন্ঠে বললো,
"আপনি নামুন রনি এসব আমার একটুও পছন্দ না৷"
রনি নামলো না ঠায় বসে রইলো৷ প্রান্তর দিকে তাকিয়ে কুটিল হাসলো তখন প্রান্ত এদিকেই এগিয়ে আসছে৷ বেলির হাত পা কম্পন শুরু হলো এবার৷ ও ঝামেলা চায় না একটুও বেলি এবার শক্ত কন্ঠে বললো,
"নামুন রনি, আমার এসব ঝা'মে'লা একটুও পছন্দ না৷ দয়া করে আমায় একা ছেড়ে দিন৷ "
রনির কি হলো কে জানে? মলিন হেসে নামলো৷ বেলি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো করুন চোখে প্রান্তর দিকে তাকালো৷ প্রান্ত যেন চোখ দিয়েই সব ঝলসে দিবে৷ বেলির আজ খুব ইচ্ছে করছিলো প্রান্তর সামনে দিয়ে রনিকে নিয়ে যেতে কিন্তু পারলো না৷ এ লোকটা আস্তে আস্তে যেন দূর্বল করে দিচ্ছে কিন্তু দূর্বল হলে চলবে না৷ দূর্বল হলেই কে'লেং'কা'রী৷
বেলি রিক্সা ওয়ালাকে রিক্সা ছাড়তে বললো ঠিক তখনি অদ্ভুত এক কথা বললো রনি,
"আমি আপনার নতুন প্রহর বেলি৷ আমিই আপনার শেষ অধ্যায় হবো কথা টা মাথায় ঢুকিয়ে রাখবেন৷"
মধ্য রাত তখন লাইব্রেরি কক্ষ থেকে বের হলো কুয়াশা৷ বই পড়তে পড়তে সময়ের খেয়ালই নেই৷ বাইরে মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে৷ বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ এর কি সম্পর্ক কে জানে? বৃষ্টির বেগ বাড়লো আর বিদ্যুৎ বি'চ্ছি'ন্ন হলো৷ মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ কে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করে কুয়াশার তোর বৃষ্টির সাথে কিসের এত রেশারেশি? কিন্তু না ইচ্ছা গুলো আর পূর্ণ হয় না৷ তবে আজ বিদ্যুৎ যাওয়ার কারনেই বই থেকে মুখ তুলেছে কুয়াশা৷
তিন বার হীম আর ওর মা এসে গেছে মেয়ের উত্তর না পেয়ে উপরে চলে এসেছে৷ সে ভেবেছিলো সেখানে বসবে কিন্তু মেয়ে যা রাগ চটা তাই বসলো না৷ সে যানে মেয়ে কোন কথাই শুনবে না৷ আর এ বয়সে একটু একা থাকতে ইচ্ছে করে সে তার মেয়ে কে যথা সাধ্য স্বাধীনতা দিয়েছে৷ আর মেয়েও কখনো তার বিশ্বাস ভাঙেনি৷
সুখ কুঞ্জে যে কোন কুয়াশা নামক মেয়ে আছে এখানে না আসলে কখনো বলতে পারবে না৷
কুয়াশা বের হতেই রুদ্রর সাথে মুখোমুখি হয়ে গেলো৷ কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলো কুয়াশা বিরক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রুদ্রর পানে৷ ছেলেটা কাকভিজে হয়ে আছে৷ শরীর বেয়ে পানি পরছে৷ এক তো এত রাতে এসেছে দ্বিতীয়ত ভেজা শরীরে পুরো বাড়িটা ভেজাবে৷ এসব কুয়াশার মোটেও পছন্দ না কুয়াশা খিটখিটে কন্ঠে বললো,
"এত্ত বড় গাড়ি থাকতে ভেজা শরীরে বাড়িতে এলেন কেন? ওখানেই থাকতে পারতেন৷"
রুদ্র যেন কথায় পাত্তা দিলো না, তাতে আরো ক্ষিপ্ত হলো কুয়াশা ছেলেটা কথার উত্তর দেয় না কেন?
কুয়াশার কথার উত্তর না দিয়ে ব্রু কুচকে পালটা প্রশ্ন ছুড়লো রুদ্র,
"এত রাতে নিচে কি করছেন কুয়াশা?"
কুয়াশার বিরক্তির মাত্রা বাড়লো৷ চোখে মুখেও তার রেশ ফুটলো৷ রুদ্র জানে মেয়েটা উত্তর দিবে না হঠাৎই তার কি হলো কে জানে? অদ্ভুত প্রশ্ন ছুড়লো,
"আমি চলে যাবো কুয়াশা, আপনি কি সত্যি আমায় একটুও সহ্য করতে পারেন না?"
কুয়াশা বাক শুন্য হলো উত্তর দেওয়ার জন্য কোনো বাক্য পেলো না৷ হঠাৎই সে দিনের কথা মনে হলো ছেলেটা ওকে অপমান করেছিলো৷ শক্ত মুখে উত্তর দিলো,
"না!"
রুদ্র এবার তপ্ত শ্বাস টানলো মেয়েটা বড্ড ঘাড় বাঁকা সহজে এ মেয়েকে গলানো যাবে না৷ বাঁকা মানুষ গুলোর সাথে বাঁকা আচরণ করতে রুদ্র সবচাইতে পারদর্শী৷
একটু এগোলো কুয়াশার দিকে তাদের মাঝে দূরত্ব ঘুচলো বললো,
"আপনার আমাকে সহ্য না করলেও চলবে কুয়াশা৷ আমি আপনাকে নিজের কাছে রাখলেই হলো৷ "
অবাক হলো কুয়াশা, চমকালো কেমন, মুখ তুলে তাকালো কিছু বলবে এর আগেই দৃষ্টি গেলো রুদ্রের হাতের দিকে৷ ব্যা'ন্ডে'জ করা হাত৷ সে দিকেই ব্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ৷ হঠাৎই কুয়াশা দিক বেদিক না ভেবে হড়বড়িয়ে জগ্যেস করেই বসলো,
"আপনার হাতে ব্যান্ডেজ কিসের?"
প্রশ্ন করার পরে নিজেই থতমত খেলো৷ কি করলো সে? এ ছেলের যা ইচ্ছা হোক ওর কি৷ রুদ্র কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো কুয়াশা অস্বস্তিতে পরলো৷ কি করবে? কি দিয়ে কথা কাটাবে ভেবে পেলো না দাঁড়ালো না আর এখানে৷ রুদ্রর উত্তরেরো অপেক্ষা করলো না পা চালিয়ে উপরে হাটা দিলো৷ যেন এখানে থাকলে তার বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতো৷ রুদ্র কুয়াশার সে ভরকানো দৃষ্টি দেখে হাসলো৷ প্রানবন্ত সেই হাসি৷ মেয়েটা নিজের কথাতেই নিজে জব্দ হয়৷
মেঘাচ্ছন্ন প্রভাত দিয়ে শুরু হলো কুয়াশার দিন ঘরির কাটা আটের ঘরে৷ আট টা বাজে নাকি মধ্যরাত বোঝাই যাচ্ছে না৷ মেঘ তার মন্দ লাগে না তবে বৃষ্টি না৷ বৃষ্টি তার বরই অপছন্দ৷ চায়ের কাপে শেষ বার চুমুক দিয়ে চায়ের কাপটা রেখে কেচিটা নিয়ে বাড়ির বাইরের দিকে এগোলো বাগান বিলাশ গাছটায় অনেক বেশি আগাছা জন্মেছে কাটতে হবে৷ কিন্তু এখানে এসে একটা আগাছা ও কাটতে পারলো না গাছটা উচু অনেক হীম হলে নিমেষে কে'টে দিতো৷
বাড়ির ভিতর ঢুকলো কুয়াশা কি মনে করে চিঠি বাক্সটা খুললো হঠাৎই একটা চিঠি দেখে চমকালো৷ কিসের চিঠি এটা? কে রেখেছে? তাহলে কি মামার কাঙ্ক্ষিত চিঠি এটা? কম্পিত হাতে চিঠিটা নিলো ঠিক তখনি মেহরাব এলো৷ কুয়াশাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ আশা নিয়েই জিগ্যেস করলো,
"কোন চিঠি এসেছে কি?"
কুয়াশা উত্তর দিলো না চিঠিটা দিলো হাতে মেহরাব কৌতুহলী হলো৷ তার বক্ষ ও কেঁ'পে উঠলো৷ মন যেন বললো, 'তবেকি অপেক্ষার অবসান ঘটলো? কাঙ্ক্ষিত সময় এলো কি?'
চৌদ্দ
"আমায় বা'চা'ন"
মিনমিনিয়ে পড়লো আয়াশ৷ বড় বড় করে এলোমেলো হাতে লেখা একটি চিঠি৷ চিঠিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ তাড়াহুড়ো করে লিখেছে৷ আয়াশের সামনেই বসে আছে মেহরাব বাইরে এখন বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরিঝিরি এ বৃষ্টিতেই অর্ধ ভিজে গেছে মেহরাব৷ এই সকাল সকাল ওর বাড়িতে চলে এসেছে চিঠিটা নিয়ে৷ কিন্তু কথা হচ্ছে চিঠিটা কে দিলো? মায়া? মায়া এত দিন পর এমন একটা চিঠি কেন দিবে? আর চিঠিটা মেহরাবের নামেই এসেছে৷ মায়া ছাড়া আর কে মেহরাব কে এমন একটা চিঠি দিবে?
"এমন একটা চিঠি কে দিবে তোকে?"
মেহরাব নিরুত্তর হয়ে ভাবলো কিছুক্ষণ৷ তারপর থমথকে মুখে বললো,
"মায়া ছাড়া আমায় আর কে এমন চিঠি দিবে? আর হাতের লেখাও বড়ই হড়বড়ে যেন তাড়াহুড়ো করে কেউ লিখেছে৷ কিন্তু কে? মায়ার হাতের লেখা আমার চেনা এ লেখা একেবারেই অচেনা৷"
থামলো মেহরাব তার মাথায় কিছুই কাজ করছে না এমন চিঠি কে দিবে? হ্যাঁ আঠারো বছরে মানুষের অনেক কিছু পালটে যায় তাই বলে হাতের লেখাও? মায়া যদি দিয়েও থাকে কোথায় আছে তাহলে? নিজের ঠিকানা কেন উল্লেখ করেনি? কোনো পিয়ন চিঠিটা দিয়ে গেলে সিল থাকতো আর চিঠিটা কোন চিঠির খামে আসেনি খালি একটা কাগজ যার উপর মেহরাবের নাম ছিলো৷ মেহরাব পায়চারি করলো কিছুক্ষণ হঠাৎ থেমে গেলো ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো,
"চিঠিটা কোন হেন্ডরাইটিং বিশেষজ্ঞর কাছে নিয়ে যা ফের তদন্ত শুরু কর আমি আসছি৷"
বলে দাঁড়ালো না মেহরাব বেরিয়ে গেলো৷ আয়াশ অবুঝের মত দাঁড়িয়ে রইলো এ মানুষ টা কখন কি করে বোঝার ক্ষমতা এখনো আয়াশের নেই৷ ত্রিশ বছরের বন্ধুত্ত তাদের কিন্তু এখনো ছেলেটাকে চিনতে পারলো না ঠিক মত আয়াশ৷
,,
চাকচিক্যময় এক রেস্টুরেন্টবসে আছে বেলি সামনেই কেবলাকান্তের মত হাসি হাসি মুখ করে বসে আছে রনি৷ এর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে আজ সে পৃথিবীর সব থেকে সুখি ব্যক্তি৷ এত খুশি হওয়ার কারণ এই মূহুর্তটায় বেলি তার সামনে বসে আছে৷
বিলাসবহুল এই রেস্টুরেন্ট টা রনির নিজের৷ রনির বাবা ব্যাবসায়ী ছিলেন এক বছর হলো গত হয়েছেন এখন ব্যাবসা রনির বড় ভাই আর রনি সামলায়৷ রনির বাবার বন্ধু ছিলেন কাইফ সাহেব সে সুবাধে বেলিকে দেখা৷ মেয়েটাকে ছবিতে যেমন সাধাসিধে দেখেছিলো বাস্তবেও তাই কিন্তু একটু রাগ চটা৷ কাইফ সাহেব বলেছিলেন বেলি বেশ চটপটে কিন্তু চঞ্চলতার কোন চিহ্ন ও দেখতে পায়নি এখন পর্যন্ত রনি৷
"আপনি কি চুপচাপই বসে থাকবেন রনি?"
বেলির কথায় ধ্যান ভা'ঙ'লো রনির৷ এমনিতে রনিও বেশ রাগী তবে মেয়েটার সামনে এলে কেন যেন খেই হারায়৷ বাক শূন্য হয়ে পরে৷ শব্দ ভান্ডারে যেন তখন রনির জন্য এক ফোটাও শব্দ থাকে না৷
মেয়েটা তার অতল কতটা স্পর্শ করেছে জানে না তবে মেয়েটাকে তার মনে ধরেছে৷ ঘার বাকা স্বভাবের মেয়ে রনির বেশ পছন্দ৷ আর মেয়েটা আজ-কাল তার জেদে পরিনত হয়েছে, কেন যেন মনে হয় মেয়েটাকে তার যে কোন মূল্যে লাগবে৷
"আপনি কি আমায় অপছন্দ করেন বেলি?"
বেলি ভ্রু কুচকে তাকালো রনির দিকে৷ এ ছেলেটাকে দেখছেই মাত্র দু-দিন হলো দু দিনে কি ভালো খারাপ নির্ধারণ করা যায়? ছেলেটা পাগলামি করলেও ওর কথা শুনে৷ প্রান্তকে কিছু বললে প্রান্ত ঘাড় বাকামো করে সে জিনিসটা বেশি করে করেন৷
বেলি ঠিক ঠাক হয়ে বসলো সামনে থাকা কফির কাপে চুমুক দিলো কফির কাপটা ফের একই স্থানে রাখলো! বললো,
"আপনার সাথে পরিচয় আমার স্বপ্ল সময় হলো এইটুকু সময়ে পছন্দ অপছন্দ কি ঠিক করা যায়?"
বেলির উত্তরে হাসলো রনি নিজেও কফি কাপটা তুললো চুমুক বসিয়ে বললো,
"পছন্দ হোক বা অপছন্দ বিয়ে তো আমাকেই করতে হবে আপনার৷"
রনির কথায় বেলি কিছু বলবে এর আগেই হঠাৎ কেউ বললো,
"সে তো সময় বলে দিবে৷"
চেনা কন্ঠ পেয়ে বিস্মিত চোখে তাকালো বেলি প্রান্ত এসেছে৷ এই ভয় টাই পাচ্ছিলো এ ছেলে যা না জানি এখানেই মারামারি শুরু করে দেয় কিন্তু এখানে সব রনির লোক৷
বেলির চোখে বিস্ময় থাকলেও রনি স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে নিজের কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর বেলি কে দেখছে৷ যেন আশে পাশে কেউ আসেই নি৷ প্রান্ত এসে তৃতীয় চেয়ার টায় বসলো ততক্ষণে রনি নিজের কফিটায় শেষ চুমুক দিয়ে খালি কাপটা টেবিলের উপর রাখলো অতঃপর ওষ্ঠকোলে বাঁকা হাসির রেশ ঝুলিয়ে বললো,
"হুম ঠিকি বলেছিস সময়ই বলে দিবে৷"
প্রান্ত হাসলো সামনে রাখা বেলির কফি কাপটা নিলো৷ কাপটা নিতেই রনি রাগী দৃষ্টিতে তাকালো প্রান্তর দিকে৷ কাপটা নিতেই হুড়মুড়িয়ে বেলি বললো,
"আরে আরে কি করছেন টা কি?এটা আমার কাপ এটা নিচ্ছেন কেন?"
বেলির কথায় পাত্তা দিলো না প্রান্ত৷ পুরো কাপটা পরখ করলো একবার অতঃপর বেলির চুমুক বসানো জায়গাতেই নিজে তৃপ্তিকর চুমুক বসালো৷ রনি এবার ফুসে উঠলো রাগ তীব্র হলো৷ প্রান্ত এবার কফির কাপটা বেপরোয়া ভঙ্গিতে রেখে চেয়ারে ঠিক মত হেলান দিয়ে বসলো৷ বেলি অবাক চাওনিতে তাকিয়ে আছে প্রান্তর দিকে৷ ছেলেটা কি করছে? কি করতে চাইছে? প্রান্ত একবার রনির দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি বদল করে বেলির চোখে চোখ রেখলো!বললো,
"তোর বলতে এখন কিছুই নেই বেলি৷ তোর যা সব এখন আমার
এইটুকু বলে থামলো ফের কফি কাপটা নিয় ঠান্ডা মাথায় চুমুক বসালো৷ রনি যেন এবার আরো ক্রদ্ধ হলো ক্ষানিকটা উচ্চ কন্ঠে বললো,
" তুই এখানে কি করছিস?"
রনির প্রশ্নে কুটিল হাসলো প্রান্ত তাতে রনি আরো জ্ব'লে উঠলো৷ প্রান্ত বেলিকে ইশারা করে উত্তর দিলো,
"আমার বউ এখানে আছে তো আমি কোথায় থাকবো?"
বিস্মিত চোখে তাকালো বেলি! রনি যথা সম্ভব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে আশে পাশে দৃষ্টি বুলালো একবার অনেক মানুষ আছে এখানে ঝা'মে'লা করলে ওদেরি লস৷ ও ছেলেকে তো পরে দেখে নিবে৷ রনি কিছু বলবে এর আগেই বেলি কাটকাট কন্ঠে বলে,
"প্রান্ত ভাই আপনি এখন এখান থেকে যান৷"
"না"
বেপরোয়া উত্তর প্রান্তর বেলি জানে এমন একটা উত্তরই পাবে ছেলেটা কখিনোই কোন কথা শুনেনি আজ শুনবে?
"প্রান্ত এখন যান আমি আপনার সাথে দেখা করবো কথা দিলাম৷"
এবার শান্ত কন্ঠেই বললো বেলি প্রান্ত বেশ অবাক হলো তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ বেলির দিকে অতঃপর আর কথা বাড়ালো না উঠে বেরিয়ে গেলো৷ বেলি হতভম্ব হয়ে বসে রইলো৷ কি বললো? নিজেই বললো দেখা করবে? না এ কিছুতেই করবে না বেলি৷ ওই লোকটা একটুও ভালো না লোকটা মানুষকে দূর্বল করতে জানে৷
হঠাৎই ভাবনার সুতো কা'ট'লো রনির কথায়,
"আপনি এটা ঠিক করলেন না বেলি, আপনি কারো সাথে দেখা করবেন না৷ আমায় রাগাবেন না বেলি আমি রেগে গেলে আপনার স্বাধীনতা কিঞ্চিৎ পরিমাণেও থাকবেনা৷"
,,
প্রায় চারটা বাজে মেহরাব এর কক্ষে এখনো আলো জ্বলছে৷ রুদ্র আসার পর থেকেই দেখছে দরজা খোলা আলো জ্বলছে তখন শরীর ভেজা ছিলো তাই ঢোকেনি৷ আজো তুমুল বৃষ্টির কারণে ভিজে আসতে হলো৷
এ বাড়িতে আর পনেরো দিন আছে ও আজো মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হয়েছে আসার সময় মেয়েটা এত রাত পর্যন্ত জেগে বই পড়ে৷ তার জানা মতে বই পড়ুয়া নেয়ে গুলো চুপচাপ হলে প্রানবন্ত থাকে তাদের আচরণ বেশ কোমল হয় কিন্তু এ মেয়েটা এমন কেন? উগ্র মেজাজি৷
নিজের কক্ষ ছেড়ে হাতে গ্রিনটি নামক চা টা নিয়ে বের হলো রুদ্র৷ চা টা তার একটুও প্রিয় না কিন্তু ঘরে লিকার দুধ চিনি কিছুই নেই আপাদত এটাই সম্বল৷ মেহরাবের কক্ষের দিকে এগোলো ঢুকবেকি ঢুকবেনা ভাবলো৷ এমন তো না মেহরাবের বউ বাচ্চা আছে! তবুও জরতা কাজ করছে একজন মানুষের ব্যাক্তিগত অনেক কাজ থাকতেই পারে৷
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়লো দু-বার৷ ওপাশ থেকে তিন বারের বার আওয়াজ এলো,
"এসো রুদ্র৷"
কেমন যেন বেরস কন্ঠ যেন কিছু নিয়ে ভাবছে লোকটা৷ মেহরাব তো এমন নয় কি হলো লোকটার? ঢুকলো রুদ্র৷ ওর কক্ষ থেকে মেহরাবের কক্ষটা বেশ বড় আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে মেহরাব এর দিকে তাকালো বিস্মিত হলো বেশ৷ লোকটা শুনেছে আঁকে না অনেক বছর হলো আজ কি আঁকছে? এগিয়ে গেলো সে দিকে৷ তাহলে বুঝি আঁকছিলো তাই এমন উত্তর দিয়েছে? মেহরাবের হাতে রঙ দিয়ে মাখো মাখো ক্যানভাসের দিকে তাকাতেই মুগ্ধ হলো রুদ্র৷ এক জোরা চোখের ছবি মুগ্ধতায় ভরা নেত্র যুগল৷ এ নেত্রের মালিক কে জানার জন্য কৌতূহল বাড়লো রুদ্রর৷
মেহরাব ধ্যানেই আছে পাশে কেউ আছে সে দিকে তার খেয়ালই নেই৷ সে যেন ওই চোখ জোরায় ডুবেছে৷
"এটা কি আপনার মায়া?"
রুদ্রের প্রশ্নে ধ্যান ভা'ঙ'লো মেহরাবের, তাকালো রুদ্রর দিকে! উত্তরে হাসলো মেহরাব হাসার অর্থ 'হ্যাঁ' এটা মায়ার চোখ ৷ রুদ্র অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে৷ এ কেমন মানুষ এ কেমন ভালোবাসা? মনে হচ্ছে এ যেন নতুন প্রেম তার, যেন তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে যায়নি৷ পাগলাটে রকম ভালোবাসা৷ রুদ্রর দেখা শ্রেষ্ঠ প্রেমিক হলো মেহরাব নয়তো এমন ভালোবাসে কে?ভালোবাসা কমার বদলে দিন দিন যেন বেরেই চলেছে৷ মেহরাব এর এমন সূক্ষ্ম ভালোবাসার প্রশংসা যতই করা হবে কম পরে যাবে হয়তো?
"সত্যি তাহলে চলে যাচ্ছো?"
মেহরাবের কথায় ভাবনার সুতো কা'টে রুদ্রর৷ মেহরাবের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অতঃপর হাতে থাকা চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে ক্ষানিকটা দূর গিয়ে পুরো ঘর টা কে পরখ করতে করতে বললো,
"হ্যাঁ! যেতে তো হবেই৷"
মেহরাব নিজের হাতে লেগে থাকা রঙ মুছতে মুছতে ফের প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"আর তোমার অনুভূতি? কুয়াশা?সব অর্ধ রেখেই যাবে?এখানেই সব সমাপ্তি?"
মেহরাবের কথায় রুদ্র ঘুরে তাকালো, উষ্ঠ কোলে কুটিল হাসি ফুটলো ছেলেটার! বললো,
"সমাপ্তি? কে বললো? সবে তো শুরু৷"
বলে হাসলো৷ মেহরাবো হাসলো হঠাৎই মেহরাব অদ্ভুত এক প্রশ্ন ছুড়লো,
"তুমি যা করো কুয়াশা কিন্তু সে সব মোটেও কুয়াশার পছন্দ নয়৷নিজের পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছো না কেন কুয়াশাকে?"
এমন প্রশ্নে রুদ্রর নেত্র যুগলে বিস্ময় ভাব ফুটলো৷ মেহরাব প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রুদ্র কিছু ভাবলো বিস্ময় ভাব কাটলো তবে সে কথার উত্তর দিলো না তার প্রেক্ষিতে কিছু বললো না৷ কথা ঘুরালো,
"চা খাবেন মামা? গ্রীন টি?"
মেহরাবের ব্যপারটা বেশ লাগলো৷ ছেলেটা কথা ঘুরালো স্পষ্ট বুঝতে পারলো সে ব্রু কুচকে জিগ্যেস করলো,
"কথা ঘোরাচ্ছো?"
রুদ্র এবার ছোট ছোট চোখ করে তাকালো বাঁকা হাসলো৷ মাথা ধুলিয়ে না বোঝালো অতঃপর মেহরাবের আঁকা চোখটির সামনে এসে কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে উত্তর দিলো,
"আপনার ভাগ্নীর আমাকেও পছন্দ না৷ তাই বলে কি আমিও দূরে সরে যাবো মামা?"
পনেরো
মেঘ গুলো বড়ই অবাদ্ধ কারো কথাই শুনে না তার মন মর্জি অনুযায়ী চলে৷ কখনো ক্ষুন্ন মনে আঁধার আচ্ছন্ন করে থাকে ধরণি কখনো টিপ টিপ বৃষ্টির মাঝেই রোদ্দুরে ঝকমক হয়ে থাকে৷ এ শরতে আকাশ ববহুরুপী হয় যেন৷ আর তার এক এক রুপের বর্ণনা দেওয়া মানুষ এর জন্য কষ্ট সাধ্য কবিও বোধয় এই আকাশ নিয়ে লিখতে লিখতে শব্দ ভান্ডার ফুরিয়েছে তবুও এর সৌন্দর্যের বর্ণনা ঠিক মত দেয়া হয়ে উঠেনি কম পরে গেছে৷
এইতো এখন এখন অর্ধ আকাশ ঝলমলে রোদ্দুর অর্ধ আকাশে ঘন মেঘ মাঝে মাঝে ব'জ্র'পা'ত ও হচ্ছে৷ সৃষ্টি কর্তার প্রতিটি সৃষ্টি অতুলনীয়৷
রুদ্রের কক্ষের বরাবর দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা রুদ্রের কক্ষে মামা আর মা দাঁড়িয়ে আছে লোকটার নাকি মধ্যরাত থেকে হাড়কাঁপানো জ্বর৷ জ্বর হবে না? প্রতিদিন রাতে ভিজে বাড়িতে ফিরে কে জানে কি এমন কাজ করে প্রতিদিন এত রাত করে আসে৷
ভেবেছিলো যাবে সে কিন্তু না জরতা যেন আষ্টেপৃষ্টে ধরলো কুয়াশাকে৷ মন কেমন খচখচ করছে৷ বেশ খানেক্ষণ পর কুয়াশার মা বের হলো রুদ্রর কক্ষ থেকে তাড়াতাড়ি নিচে নামতে নামতে বললো,
"আয় তো মা আমার সাথে লেবুর শরবত করে দেই লেবুর শরবতে তাড়াতাড়ি জ্বর নেমে যায়৷"
কুয়াশা ভাবলো বলবে 'না আমি ওই লোকটার জন্য এত কিছু করতে পারবো না৷' কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না কুয়াশা৷ মায়ের পিছু পিছু গেলো৷
কুয়াশার মা চুলায় দুধ বসিয়ে লেবু কাটলো চিনি কম দিয়ে শরব বানিয়ে কুয়াশার হাতে দিয়ে বললো,
"না খেতে চাইলে জোর করে খাওয়াবি তোর মামাকে দিয়ে৷ হাত দেওয়া যাচ্ছে না শরীরে জ্বর পট্টি ও দিতে দিচ্ছে না৷ এটা খাওয়া আমি নরম কিছু আর হলুদ দুধ নিয়ে আসছি ডাক্তারের সাথে গেছে হীম ওষুধ আনতে৷ বল তো কি কান্ড ছেলেটা জ্বর বাধিয়ে বসলো৷"
কুয়াশা কিছু ভাবলো বললো,
"ওনার কি কেউ নেই মা? যাকে আসতে বললে ভালো হতো না?"
কুয়াশার মা বেশ অবাক হলো৷ তার মেয়ে এই প্রথম কাউকে নিয়ে মাথা ঘামালো নয়তো অন্যের ব্যপারে মেয়েকে কখনো কথা বলতেই দেখেনি৷ যাক উন্নত হচ্ছে এই অনেক নয়তো এ মেয়েকে নিয়ে বেশ ঝা'মে'লা পোহাতে হবে৷
মেহনাজের হঠাৎ রুদ্রের কথা মনে পরে মন খারাপ হলো৷ নিরাশ কন্ঠে বললো,
"নেই ওর কেউ৷ ঢাকা ওর চাচা আর ভাই আছে তারা ব্যস্ত মানুষ তারা কি আর আসতে পারবে?"
অবাকের রেশ টা বাড়লো কুয়াশার৷ রুদ্রর কেউ নেই? কই ও তো শুনেনি৷ ছেলেটার কিছুইতো ও জানে না কেন এখানে এসেছে কেন এ বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে আছে কে রুদ্র কি তার পরিচয়৷
ছেলেটাকে নিয়ে কুয়াশা নিজের কৌতূহল দেখে বেশ হাসে যদিও জানার প্রয়োজন নেই তবুও জানার ইচ্ছা টা কেন যেন প্রবল৷
মাঝে মাঝে কুয়াশার বেশ অভিমান হয় লোকটার উপর, অভিমান এর কারণ ও কুয়াশা জানে না৷ আর অভিমান তো হয় আপন মানুষের উপর৷ রুদ্র কি আপন মানুষ নাকি? না একটুও না৷ ওই বদ লোক আপন মানুষ হতেই পারে না৷
ওই লোকটাকে কুয়াশার কিঞ্চিত পরিমানেও পছন্দ না৷
"কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা দিয়ে আয়৷"
কুয়াশার ভাবনার সুতো কা'ট'লো৷ দাঁড়ালো না আর এগিয়ে গেলো ছাদের দিকে৷
ছেলেটাকে বেশ করে বকা যেতো? গিয়ে দু চারটা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলা যেতো 'ছেলে আপনি কি অন্যের ঝা'মে'লা ছাড়া আর কিছুই করতে জানেন না? এখন তো নিজেও ভুগছে৷' কিন্তু না এখন নিশ্চয়ই অতকিছু বললে মা, মামা, আর ভাই ওকে কথা শুনাবে? এ ছেলের জন্য কথা শুনার কোনো ইচ্ছেই নেই৷ এত্ত বড় গাড়ি থাকতেও ভিজেছে লোকটা৷ আবার নিজ ইচ্ছায় জ্বর বাধিয়ে নিজেও ভুগছে অন্যকে ও ভোগাচ্ছে৷
ওর মা ভাই আর মামা তো ছেলেটার জন্য পাগল প্রায়৷
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে গেলো রুদ্রর কক্ষের দিকে৷ কুয়াশা আসতেই মেহরাব বের হলো নিজের কক্ষে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি কুয়াশা থামিয়ে দিয়ে বললো,
"মামা যেও না৷ "
মেহরাব থামলো গেলো না ব্যপারটি বুঝলো সে মেয়েটা ছেলেটার কক্ষে ঢুকবে না৷ তার বোন একটা মেয়েই বানিয়েছে৷ পাষাণী! দয়া মায়া বলে কিছু নেই? ছেলেটার জন্য মায়া হয় না?
মেহরাব নিজের মোবাইল বের করতে করতে বললো,
"কিছু বলবে মা?"
কুয়াশা চৌকাঠের সামনে থেকে ক্ষানিকটা সরলো আড়ালে এলো এলোমেলো চাওনি ফেললো কক্ষের দিকে অতঃপর শরবতের গ্লাস টা মেহরাবের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
"এটা ওনাকে খাইয়ে দিতে বলেছে মা৷"
মেহরাব সাহেব হাসলো৷ সে তো এখন এখানেই থাকবে না এ মেয়েকে কি করে সোজা বানাতে হয় তা মেহরাব ভালো করেই জানে৷ মেহরাব হাসলো জেনেও অবুঝের মত বললো,
"কাকে?"
কুয়াশা ক্ষানিকটা বি'র'ক্ত হলো বুঝতে পেরেছে তবুও এমন করছে৷ কুয়াশা বি'র'ক্ত নিয়েই বললো,
"জানো না?রুদ্রকে৷"
মেহরাব হাসলো৷ হাসি লুকিয়ে তাড়াহুড়ো কন্ঠে বললো,
"মা একটু খাইয়ে দে না৷ থানা থেকে আয়াশ ফোন করছে কি যেন বলবে৷"
বলে মেহরাব দাঁড়ালো না তড়িৎ গতিতে ছুটলো৷ সে এই মেয়ে কে ঠিক করার কৌশল ঠিক মতই জানে৷ এ কাটখোট্টা মেয়েকে এখন থেকে না ঠিক করলে সারা জীবন এমন বেরসিক প্রেমহীন রয়ে যাবে৷ রুদ্র নামক প্রানবন্ত ছেলেটা যে এমন একটা মেয়ের প্রেমে কি করে পরলো তা ভাবলেই অবাক হয় মেহরাব৷
যদিও তারি ভাগ্নি কিন্তু সে চায় মেয়ে টা সঠিক কারো হাতে তুলে দিতে যে মেয়েটাকে সব সুখ দিতে পারবে৷ মেয়েটাকে কখনো কষ্ট পেতে দেয়নি মেহরাব৷ কুয়াশা হীম তার আ'ত্মা৷ রুদ্রর নয়নে কুয়াশার জন্য প্রগাঢ় ভালোবাসা দেখেছে সে, প্রেয়সীকে পাওয়ার জেদ দেখেছে৷ কুয়াশার জন্য রুদ্রই ঠিক৷ যদিও তার ভয় হয় মেয়েটা যখন রুদ্রর আসল পরিচয় জানবে আদৌ মেনে নিবে কি না যদিও এখনো পছন্দ করে না৷
এবার সব নিরব পিনপতন নীরবতার মাঝে কিছুক্ষণ মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে কুয়াশা এক পা দু পা করে রুদ্রর ঘরে ঢুকলো৷ এ ঘরে আসতে ইচ্ছে হয় না তার এ অপছন্দের মানুষের অপছন্দের একটা ঘর৷
এ ঘরটা আসলে তার দম বন্ধ হয় কেমন৷ লোকটার ঘ্রান এ ঘরে, অস্বস্তি হয় কেমন৷ ছোট টেবিলের উপর শরবত টা রাখলো৷রুদ্রর দিকে তাকায়নি এক বারো অন্য দিকে তাকিয়েই অনিচ্ছা শর্তেও বললো,
"শরবত টা দিয়ে গেলাম খেয়ে নিবেন৷"
কর্ণকুহরে কাঙ্ক্ষিত কন্ঠ পৌঁছাতে চোখ মেললো রুদ্র৷ এক দমে বললো কথা গুলো এক মিনিটো দাঁড়ালো না বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো রুদ্র দেখলো পাষাণ মেয়ের কামড একবার জিগ্যেস ও করলো না? কুয়াশা চৌকাঠ অয়ার হবে তার আগেই কর্ণপাত হলো মলিন কন্ঠ,
"দাঁড়ান কুয়াশা৷"
কুয়াশা থেমে গেলো, দাঁড়ালো পিছনে ফিরলো না৷ ওভাবেই বললো,
"কিছু প্রয়োজন আপনার?"
রুদ্রর কাতর কন্ঠ ফের কর্ণপাত হলো,
"আপনাকে প্রয়োজন কুয়াশা৷ কাছে আসুন কুয়াশা৷ অপেক্ষায় আছি আপনার৷"
কুয়াশা চোখ খিঁচে বন্ধ করলো অন্য সময় হলে মুখের উপর বলে দিতো 'আপনার নেকামো কথা আমার পছন্দ না৷' কিন্তু এবার কেন যেন পারলো না তবে আজ নীরবতার সাথে সন্ধি আটলো৷ শব্দ ভান্ডারে বুঝি আজ বলার মত কোন শব্দ নেই৷
রুদ্র আবার বললো,
"কাছে আসুন কুয়াশা৷এসব জ্বর আমায় কাবু করতে পারে না৷ এখন আমার আপনাকে প্রয়োজন৷ আজ না করবেন না দোহাই৷"
কুয়াশা তপ্ত শ্বাস টানলো এগিয়ে গেলো শরবত টা সামনে ধরে বললো,
" এটা খান ছেলে ভালো হয়ে যাবেন৷ জ্বরে আপনি ভুলভাল বকছেন৷"
জ্বরের মাঝেই বাঁকা হাসলো রুদ্র উঠার চেষ্টা করলো পারলো না ব্যা'ন্ডে'জ করা জায়গাটা তীব্র টান খেলো চোখ খিঁচে বন্ধ করলো৷ কুয়াশা দেখলো ধরলো না৷ রুদ্র বললো,
"ধরুন আমায় কুয়াশা উঠবো আমি৷"
কুয়াশা কাটকাট কন্ঠে বললো,
"এ অবস্থায় উঠার প্রয়োজন নেই শুয়েই থাকুন৷"
"সব কিছুতেই আপনার ঘাড় বাঁকামো মেয়ে আপনি এমন কেন?"
কুয়াশা এবার শরবতের গ্লাস রেখে ধরলো উঠালো রুদ্রকে৷ রুদ্র উঠে বসলো হাত ছাড়লো না৷ মেয়েটা এতক্ষণ আসেনি জ্বর রুদ্রকে ঘা'য়ে'ল করতে কখনোই পারব না জ্বর তীব্র হলেও ইচ্ছে করেই শুয়ে ছিলো রুদ্র, যেন মেয়েটা একবার হলেও আসে৷
কুয়াশা হাত ছাড়াতে চাইলো রুদ্র ধরেই রইলো কুয়াশা মিনমিনিয়ে বললো,
"ছাড়ুন রুদ্র এ কেমন অসভ্যতামো?"
রুদ্র ক্ষ'ত হাতেই কুয়াশাকে হ্যাঁচকা টান মা'র'লো৷ ধপ করে বসে পরলো কুয়াশা বিছানায়৷ রুদ্র শীতল কন্ঠে বললো,
"মেয়ে আপনি বুঝেন না আপনাকে দেখার বাহানা খুঁজি আমি? আমি থাকলে তো একবারো এখানে আসেন না৷ জ্বর আমায় সহজে দূর্বল করবে আপনার মনে হয়? তবে আপনাতে আমি দূর্বল হয়ে পরছি কুয়াশা বুঝতে পারছেন আপনি? আপনাতে আমি নিজেকে হা'রি'য়ে ফেলছি৷ আপনি অ'প'রা'ধী কুয়াশা মস্ত বড় অ'প'রা'ধী৷"
ষোল
রুদ্র ক্ষ'ত হাতেই কুয়াশাকে হ্যাঁচকা টান মা'র'লো৷ ধপ করে বসে পরলো কুয়াশা বিছানায়৷ রুদ্র শীতল কন্ঠে বললো,
"মেয়ে আপনি বুঝেন না আপনাকে দেখার বাহানা খুঁজি আমি? আমি থাকলে তো একবারো এখানে আসেন না৷ জ্বর আমায় সহজে দূর্বল করবে আপনার মনে হয়? তবে আপনাতে আমি দূর্বল হয়ে পরছি কুয়াশা বুঝতে পারছেন আপনি? আপনাতে আমি নিজেকে হা'রি'য়ে ফেলছি৷ আপনি অপরাধী কুয়াশা মস্ত বড় অপরাধী৷"
কুয়াশা যেন জ্ঞান শূন্য বসে রইলো এতক্ষণে তো ওর রেগে দু চারটে কথা শুনিয়ে দেবার কথা ছিলো কিন্তু আজ পারছে না৷ কেন? রাগ হচ্ছে না, না সরে আসতে পারছে৷ তবে ছেলেটার সাহসে অবাক হচ্ছে৷ দিন দিন ছেলেটা একটু বেশি বেপরোয়া হচ্ছে না? কুয়াশা এবার উঠার চেষ্টা করলো পারলো না৷ রুদ্র শীতল চাওনিতে তাকালো ফিসফিসিয়ে বললো,
"ছেড়ে দিবো কুয়াশা একটু বসুন না?"
অনুনয়, আকুতি ভরা কন্ঠ৷এমন করে বলতে হয়?এমন কেন ছেলেটা? বহুরূপী! বক্ষ কেমন ধক করে উঠলো কুয়াশার৷ অনুভূতি নিঙরানো কন্ঠ যেমন৷ কুয়াশা শান্ত হলো থমথমে হলো পরিবেশ অস্বস্তি কেমন বাড়লো তার৷ নিজের উপর রাগ হলো তার৷ ফেসে গেলো এখানে এসে কেমন?
"আসবো স্যার? "
হঠাৎ চেনা কন্ঠ পেয়ে ধ্যান ভা ঙ লো দুজনেরই কুয়াশা ছিটকে খানিকটা দূরে সরলো৷ কিন্তু বেশিদুর যেতে পারলো না হাত ছাড়লো না রুদ্র৷ ছেলেটার শরীর জ্বরে পুরে যাচ্ছে অথচ শরীরে শক্তি নিয়ে ওকে ধরে আছে৷ এত শক্তি পায় কোথ্যেকে ছেলেটা? মহা নাটক বাজ এখানে আসাই ভুল হয়েছে ওর৷ এখন মা আর মামা এসে দেখতে পারে না এ ছেলের কান্ড?
রুদ্র ক্ষানিকটা অবাক চাওনিতেই তাকালো দরজার দিকে রেদোয়ান এসেছে৷ কি করে এলো? ও তো আসতে বলেনি তাহলে?
ছেলেটার উপর হঠাৎই রাগ হলো এক তো ও আসতে বলেনি এখানে এসেছে বাইরের কেউ দেখলে কে'লেং'কা'রী হয়ে যাবে এ বাড়ির ঝা'মে'লা বাড়বে৷৷ ও বার বার বলেছে আমি না বললে এ বাড়িতে পা ও দিবে না যদি আমায় ফোনে না পাও ছেলেটা না জানিয়ে এলো৷ আর দ্বিতীয়ত রঙ টাইমে চলে এসেছে মেয়েটা এমনি জংলী মুরগির মত ছটফট করে একে এখন ধরা যাবে আর?
রুদ্র এবারো হাত ছাড়লো না আরো শক্ত করে ধরলো কুয়াশা দাতে দাত চেপে কঠিন কন্ঠে বললো,
"লাগছে আমার, ছাড়ুন বলছি৷"
রুদ্র পাত্তা দিলো না কুয়াশার কথা একটু আলগা করে ধরলো ছাড়লো না৷ কুয়াশার কথার উত্তর না দিয়ে রেদোয়ান কে থমথমে কন্ঠে বললো,
"তুমি এখানে? তোমায় আসতে না করেছিলাম তো৷ এসেছো কেন এখানে?"
রেদোয়ান ভীত হলো কিঞ্চিৎ৷ রুদ্র সহজে রাগে না ওর উপর তবে রাগলে হুস জ্ঞান থাকে না৷ রেদোয়ান কে নিরুত্তর দেখে ফের কিছু বলবে এর আগেই কুয়াশা বললো,
"আমি আসতে বলেছি৷ কেন, এসেছে তো কি হয়েছে?"
রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে কুয়াশার দিকে তাকালো ভ্রু কুচকে অবাক কন্ঠে বললো,
"তুমি বলেছো মানে? তুমি ওর নাম্বার পেলে কোথ্যেকে? "
কুয়াশা এবার ইতস্তত হলো৷ মিনিমিনিয়ে বললো,
"এমন করে তাকানোর কি আছে?আমি নিয়েছিলাম সে দিন৷"
রুদ্র তপ্ত শ্বাস টানলো রেদোয়ান এর দিকে তাকিয়ে বললো,
"তোমার এখানে আসা ঠিক হয়নি রেদোয়ান বুঝতে পারছোতো কেন বলছি৷ঝা'মে'লা হয়ে যেতে পারে৷"
রেদোয়ান এগিয়ে এলো অপরাধী ভঙ্গিতে বললো,
"আমি আসতে চাইনি স্যার ম্যাম বললো আপনি নাকি অনেক অসুস্থ৷ আর আমি সব দিক নজরদারি করেই এসেছি ব্যাস্ত হবেন না এত৷"
রুদ্র যেন তাও পুরোপুরি খ্যান্ত হলো না মনে খচখচানি রয়েই গেলো৷ কুয়াশা বুঝতে পারছে না রেদোয়ান এখানে এসেছে তো কি হয়েছে? কিসের এত লুকোচুরি কেন ঠিক হয়নি আসা?
কুয়াশা এবার হাত ছাড়াতে সক্ষম হলো বহু চেষ্টার পর৷ উঠে দাঁড়ালো তবে গেলো না ভ্রু কুচকে বললো,
"কেন আসা ঠিক হয়নি ওনার? কিসের কথা বলছেন আপনি?"
কুয়াশার প্রশ্নে ভরকালো রুদ্র রেদোয়ান দুজনেই৷ এ মেয়ে কে এখন কি বুঝাবে৷ রেদোয়ান রুদ্রের দিকে তাকালো রুদ্র বলার মত কিছু খুঁজে পেলো না৷ কুয়াশা জানতো ছেলেটা উত্তর দিবে না৷ কিছু গোলমেলে ব্যপার আছে হঠাৎই ব্যা'ন্ডেজের কথাটা মাথায় এলো এটাও জানা হয়নি কিসের চোট এটা৷ কুয়াশা ফের বললো,
"বলছেন না কেন? রেদোয়ান ভাইয়া এ বাড়িতে আসলে সমস্যা কি? আর আপনার হাতে এটা কিসের ব্যান্ডেজ কিসের চো'ট পেয়েছিলেন এখানে?"
রুদ্র যেন মহা ঝা'মে'লায় পরলো মেয়েটা গোয়েন্দার মত প্রশ্ন করেই যাচ্ছে৷
কি বলবে? হঠাৎই মস্তিষ্কে কিছু এলো মেয়েটাকে জব্দ করার সহজ উপায়৷ হাসলো রুদ্র৷ কুটিল হাসি,যা কুয়াশারো দৃষ্টি এড়ালো না নিশ্চয়ই মাথায় কোন সয়তানি চিন্তা ঘুরছে? বুঝলো কুয়াশা৷ কুয়াশার ভাবনার মাঝেই রুদ্র প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"আমায় নিয়ে আপনার এত মাথা ব্যাথা কেন মিস বাড়িওয়ালী?আমি তো ভাড়াটিয়া মাত্র! এত মাথা ব্যথার তো কারণ নেই? নাকি আমায় নিয়ে অন্তঃকরণের নিষিদ্ধ অসুখে ভুগছেন?"
হঠাৎ এমন প্রশ্নে স্তম্ভিত হলো, থমকালো, ভরকালো কুয়াশা৷ কথা যেন অন্য দিকে ঘুরে গেলো ছেলেটা উত্তর না দিয়ে ফা'সা'চ্ছে ওকে৷ আস্ত ধড়িবাজ লোক৷
"বলছেন না কেন মেয়ে? আমায় নিয়ে জানার আগ্রহ এত কেন? আমি যেই হই আপনার কি? মানলাম আপনার বাড়িতে থাকি আমি কেমন কাকে রেখেছেন বাড়িতে জানা প্রয়োজন কিন্তু এখন তো আমি বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি৷
আচ্ছা এসব বাদ দিলাম, আপনার কৌতুহল আমি কে, কি করি, রাত বিরাতে কেন বাড়িতে আসি এ নিয়ে হওয়া জায়েজ৷ কিন্তু, এখন দেখছি কৌতুহল অন্য দিকে যাচ্ছে৷ আমার চো'ট দেখে কি কষ্ট হচ্ছে আপনার? কি চলছে আপনার মনে বলুন তো মেয়ে?"
কুয়াশার অস্বস্তি বাড়লো৷ রেদোয়ান বেশ আনন্দ পেলো মেয়েটার মুখ দেখার মত এখন বেশ জব্দ হয়েছে৷ কুয়াশার সব কৌতূহল যেন উবে গেলো৷ আমতা আমতা করে বললো,
"এসব কিছুই না৷"
বলেই টি টেবিল থেকে শরবতের গ্লাস টা নিয়ে রেদোয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
"এটা ওনাকে খাইয়ে দিবেন ভাইয়া৷ আমি আসছি৷ "
বলে দাড়ালো না কোন মতে রুম ছেড়ে বেরোলো৷ বের হতেই কানে এলো দুজনে উচ্চ কন্ঠে হাসির শব্দ৷
"মায়ার মা মা'রা গেছে মেহরাব, লা'শটা মায়াদের বাড়িতেই আছে এখানে চলে আয়৷"
হঠাৎ ফোন তুলতেই আয়াশের এই অনাকাঙ্ক্ষিত কথা শুনে বিস্মিত হলো মেহরাব৷ সবে অফিসে ঢুকছিলো এ খবরটা শুনে আর দাড়ালো না মেহরাব এখান থেকেই উল্টো রৌওনা দিলো মায়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে৷
ফের সেই কাঙ্ক্ষিত বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা৷ ক্লেশের রেশ ছেয়ে গেছে সবার মাঝে৷থমথমে চারোপাশ কেমন যেন নিরব পরিবেশ৷ আতংকের ছাপ সবার মুখে৷ মৃ'ত্যুর খবটা শুনে এতটা অবাক হয়নি যা এখানে এসেছে শুনছে তাতে হয়েছে৷ মায়াদের এই বাড়িতে মায়ার মায়ের লা'শ পাওয়া গেছে৷
এ কথা শুনে বেশ অবাক হয়েছিলো মেহরাব,অবাক হওয়ার কারন এ বাড়িতে লা'শ অয়াওয়া গেছে তা নয় অবাক হওয়ার কারণ মহিলা এ বাড়িতে একা ছিলো আর কেউ বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে গেছে৷ মহিলা যে এ বাড়িতে আছে কেউ তা জানেই না৷
মায়াদের বাড়িতে ওদের কেউ না থাকলেও ওদের ফ্লাট টা খালি পরে থাকে মাঝে মাঝে আশার স্বামী রিয়ান আসে, তবে বেশিক্ষণ থাকে না ঘন্টা ক্ষানেক থাকে ফের চলে যায়৷ আর পরিষ্কার করার জন্য একজন লোক রাখা হয়েছে সপ্তাহে একদিন এসে পরিষ্কার করে৷
কাল রাত থেকে এ বাড়ির লোকেরা পচা গন্ধ পাচ্ছে সারা বাড়ি খুঁজেও কিছু পায়নি৷ মায়াদের ফ্লাটের সামনে গেলেই গন্ধটা তীব্র হচ্ছিলো সন্দেহ করে বাড়ির দেখা শোনার দায়িত্বে যাকে রাখা হয়েছিলো সে তালা খুলে এ মহিলার রুমের খাটের উপর মহিলা কে পরে থাকতে দেখে বেশ চমকায়৷
কারণ মহিলাকে তারা আসতে দেখেইনি, মহিলার শরীর থেকেই পঁচা গন্ধ আসছিলো ভয় পেয়ে কেউ লা'শ ধরেওনি আয়াশকে কল করে৷ আশাকেও কল করে তবে আশা এখনো এসে পৌঁছায়নি৷
লা'শ টা দেখে মনে হয় দুই দিন আগে মারা গেছে৷ দু'দিন ধরে মহিলা এখানে কেউ জানেও না?
আকস্মিক আয়াশের মাথায় অদ্ভুত ভাবনা আসে৷ চিঠিটা কি তাহলে মহিলা দিয়েছে? কারণ চিঠিটা দু-দিন আগেই পাওয়া গেছে৷ কিন্তু মহিলা চিঠি দিবে কেন? সমস্যায় পরলে মেহরাবের কাছে যাবে৷
কি হচ্ছে এসব? মহিলা কি অসুস্থ ছিলো? কারণ একে খুন বলা যাবে না রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত৷ আর শরীরেও কোন ক্ষ'ত'র চিহ্ন নেই তাহলে মা'রা গেলো কিভাবে? ঘরের কোন কিছু এলোমেলো নেই সব ঠিক ঠাক গোছালো৷
অদ্ভুত এতক্ষণ হয়ে গেলো মেয়ের আসার খবর নেই৷ আয়াশ বাধ্য হয়েই লা'শ গাড়িতে তোলার জন্য বললো৷ ঠিক তখনই এলো আশা আর রিয়ান৷ রিয়ান বেশ শান্ত প্রকৃতির মানুষ দেখেই বোঝা যায়৷ আশা এসে থমথমে হয়ে মায়ের লা'শের সামনে বসে পরলো৷ অদ্ভুত কোনো ক্লেশের চিহ্ন নেই মুখে থমথমে ভাব চোখ লাল হয়ে আছে৷
হঠাৎই মায়ার কথা মাথায় এলো মেহরাবের৷ আচ্ছা মায়া কি আসবে? মায়ের মৃ'ত্যুর কথা শুনলে অবশ্যই আসবে হয়তো? ও চায় আসুক মায়া৷ এটা একটা মোক্ষম সুযোগ না এলে সব কিছু বেশ জটিল হবে।
সতেরো
আশা মেয়েটাকে বেশ সন্দেহজনক লাগছে৷ মেয়েটার ভাব মূর্তি বোঝা বড়ই দায় মায়ের লা'শ সামনে চোখে এক ফোটা পানি নেই৷ মুখে গম্ভীরতা ছেয়ে আছে কেমন৷ আয়াশ দৃষ্টি বদল করে আশার দিকে তাকালো ব্রু কুঁচকে হাবভাব বোঝার চেষ্টা করলো না বুঝলো না কিছু৷ মেয়েটা বেশ সন্দেহ করাকি ভুল? মায়ের মৃ'ত্যুর খবর শুনে এতক্ষণে কান্নাকাটি করার কথা ছিলো সে মেয়ে চুপ করে বসে আছে৷ কখনো স্বামীর দিকে তাকাচ্ছে কখনো মায়ের লা'শের দিকে৷ অদ্ভুত ব্যপার নয়কি?
আয়াশ এবার রিয়ানের দিকে তাকালো৷ লোকটার ভাব মূর্তি বোঝার চেষ্টা করলো৷ লোকটা চোখ মুছছে বার বার৷ একবার ওর সাথে চোখাচোখি হলো, রিয়ান নামক লোকটি নিজে কিছু ইতস্তত বোধ করলো৷ লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে তারই মা কষ্টে কান্না লুকাচ্ছে বিষয়টি অদ্ভুত নয় কি? মেয়ে এমন শক্ত হয়ে আছে লোকটা কান্না লুকাচ্ছে৷ চলছে কি এখানে?
ভেবেছিলো পরিস্থিতি একটু সচ্ছল হলে জিগ্যাসা বাদ করবে যতই হোক মেয়েতো কান্নাকাটি করবেই৷ কিন্তু এখানে পরিস্থিতি তেমন হয়ইনি সবাই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে এটা আশার মা নয়ই৷ আশাকে নির্দ্বিধায় জিগ্যাসাবাদ করা যায়ই৷ বেশ সময় পার হলো আয়াশ এবার বললো,
"উনি এখানে এসেছে কবে?"
প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে আশার দিকে তাকালো৷ আশা উত্তর দিলো না নিরুত্তর হয়ে মায়ের দিয়ে তাকিয়ে আছে৷ তবে রিয়ান মুখ খুললো ক্ষানিকটা ভা ঙা গলায় উত্তর দিলো,
"উনাকে আমরা দু-দিন যাবত পাচ্ছিলাম না৷"
রিয়ানের কথায় অবাক চোখে তাকালো আয়াশ৷ দু-দিন যাবত খুজে পাচ্ছে না মানে? আয়াশ বললো,
"দু-দিন যাবত পাচ্ছেন না আর ব্যপারটা আপনারা আমাদের এখন জানাচ্ছেন?"
রিয়ান আশার মায়ের দিকে দৃষ্টি দিলো তপ্ত শ্বাস টানলো বললো,
"আমরা আমাদের ওখানকার লোকাল থানায় ব্যপারটি জানিয়েছিলাম তারা খুঁজছিলো৷ এ বাড়িতে এসেও তারা জিগ্যাসাবাদ করে গেছে আপনি এ বাড়ির ভাড়াটিয়া দের জিগ্যেস করে দেখবেন বলবে তারা৷ মাকে এর আগেও দুবার এমন পাওয়া যাচ্ছিলো না তখনো আমরা থানায় জানিয়েছিলাম কিন্তু দু-দিন পর মা নিজেই রাতে ফিরে আসে৷ আমরা অনেক জিগ্যেস করেছিলাম কোথায় গিয়েছিলো কিন্তু সে কিছু বলেনি৷"
বলতে বলতে লোকটার চোখ ভরে এলো৷ আয়াশ শুনলো সবটা৷ মহিলার কি কোন মানসিক সমস্যা ছিলো? মানসিক সমস্যা না থাকলে কোথায় যায় মহিলা?
"উনার কি মানসিক কোন সমস্যা ছিলো?"
"না৷"
এবারের উত্তরটা আশা দিলো, কাটকাট কন্ঠ তার৷
আয়াশ তাকালো আশার দিকে যাক মেয়েটার কথা বেরিয়েছে তাহলে৷ আয়াশ ফের বললো,
"মানসিক সমস্যা না থাকলে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলো?"
"আমার ধারণা মায়ার কাছে গিয়েছিলো আগে দু-বার৷ আচ্ছা মায়ায় কিছু করেনি তো?"
রিয়ানের আকস্মিক এমন কথায় বিস্মিত নয়নে তাকালো মেহরাব৷ মেহরাব এ লোকটা কে একটুও পছন্দ করে না যেদিন থেকে মায়া নি'খোঁ'জ হয়েছে লোকটা উলটা পালটা কথা ছাড়া কিছুই বলে না৷ এমনকি আজো বলছে৷
আয়াশ কিছু বলবে এর আগেই মেহরাব শক্ত কন্ঠে বললো,
"আপনার কি মাথা খা'রা'প? মায়া আঠারো বছর যাবত নিখোঁজ এত বছর খবর ছিলো না এখন এসেছে তাও ওর মা কে মা'র'তে? কেন মা'র'বে ও ওর মা কে?আর যদি আগে দু-বার মায়ার কাছেই গিয়ে থাকে তাহলে আপনার শাশুড়ী বলবে না কেন?আর তখনই বা মা'রে'নি কেন? আপনি শুরু থেকেই ওর নামে বাজে ব'কছেন কেন?"
রিয়ান এবার তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো,লোকটা আগের মত ঘাড় বাঁকাই রয়েছে৷আয়াশ থমথমে কন্ঠে বললো,
"এটা খু'ন আপনি কি করে জানলেন? আর যদি খু'ন হয়েও থাকে তা আমরা দেখে নিবো মায়া করেছে না কে করেছে৷ মায়ার কেসটা ও আমরা রি ওপেন করেছি তদন্ত হচ্ছে সত্য কি সামনে আসবেই৷"
এইটুকু বলে থামলো আয়াশ৷ অতঃপর লা'শের দিকে তাকিয়ে ফের বললো,
" একটা মানুষ এবাড়িতে এলো কেউ দেখলো না? ভিতরে একটা মানুষ ম'রে পরে আছে দু দিন পর মানুষ তা জানছে? যদিও বলা যাচ্ছে না খু'ন টা কবে হয়েছে বা আদৌ এটা খু'ন কি না৷ তবে আজ বা কালকের লা'শ এটা নয় প'চ'ন ধরেছে৷ আর সন্দেহের ব্যপার হলো পিছন থেকে দরজায় তালা লাগালো কে? আমি ধরে নিলাম বয়স্ক যেকোনো মূহুর্তে মৃ'ত্যু হতেই পারে৷ কিন্তু পিছন থেকে তালা লাগানোর ব্যপারটা? আপনাদের সার্বেন্টই বলছে সে নিজে তালা খুলেছে৷ "
আয়াশের কথা মোটেও ফেলার মত নয়৷ মেহরাব এটাই বুঝতে পারছে না যদি মে'রেই থাকে কেউ কে মা'রবে? এ মহিলার সাথে কার কি শ'ত্রুতা? আর কার কাছে এ বাড়ির চাবি আছে?
রিয়ান বললো,
"এ ফ্লাটের চাবি আমি, আশা আর সার্বেন্ট ছাড়া কারো কাছেই নেই৷ মায়ের কাছেও না৷আমি ব্যস্ততার কারণে এবার মা কেও খুঁজতে পারিনি আশা খুঁজেছে৷ এজন্য এখন আমার অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে৷ হয়তো আমি খুঁজলে এমনটা হতো না? কিন্তু আশা তো খুঁজেছে৷"
আয়াশ তাকালো আশার দিকে মেয়েটা স্বাভাবিক কি করে আছে?কোনো উত্তর ও দিচ্ছে না৷ মেয়েটাকি বুঝছে না ওর প্রতি সন্দেহ বাড়ছে? যদিও মৃদু টা স্বাভাবিক নাকি খু'ন না জানা পর্যন্ত সন্দেহ করা ভিত্তিহীন৷ তবুও আশার এমন হাবভাবে আশে পাশের গুঞ্জন বেড়েছে আরো৷ মায়ের মৃ'ত্যু'তে মেয়ের কোন কষ্ট নেই? এ কেমন মেয়ে?
"আশা আপনি কিছু না বললে কেসটা আমরা ঠিক মত এগোতে পারবো না৷ আপনার মায়ের সাথে নিশ্চয়ই সবসময় আপনি থাকেন? উনি নিখোঁজ হওয়ার আগে পরে কি হয়েছে কি করেছে, উনার তেমন কোন শ'ত্রু আছে কি না৷ বা আপনার কার উপর সন্দেহ হয় এসব না জানালে আমরা কি করে তদন্ত করবো? আপনার স্বীকারোক্তি আমাদের প্রয়োজন৷"
আশা একবার রিয়ানের দিকে তাকালো অতঃপর আয়াশের দিকে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে বললো,
"আমার মা মা'রা গেছে অফিসার আপনি আমায় এখনি জিগ্যাসাবাদ করছেন৷ একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না ব্যপারটি?"
আশার কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আয়াশ অতঃপর তাচ্ছিল্য হাসলো রসিকতা কন্ঠে বললো,
"ম্যাডাম আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না আপনার মা মা'রা গেছে৷ আপনি তো স্বাভাবিকই আছেন৷"
আয়াশের কথায় ভরকালো আশা থতমত খেলো যেন৷ নড়ে চড়ে বসলো কিছু বললো না আর৷
আয়াশ আশে পাশে দৃষ্টি বুলালো মেহরাব এখানেই দাঁড়িয়ে আছে মেহরাবের দৃষ্টি আশার দিকেই৷ আয়াশ ভাবলো এবার লা'শ টা নিয়ে যাওয়া উচিত গন্ধটা তীব্র হচ্ছে৷ আয়াশ রিয়ানের উদ্দেশ্যে বললো,
"এবার লা'শ টা নিয়ে যেতে হবে৷"
আশা এবার উঠে দাঁড়ালো শক্ত কন্ঠে বললো,
"লা'শে নিয়ে যাবেন মানে? লা'শ কোথাও নিয়ে যেতে দিবো না আমি৷"
আয়াশ এবার বি'র'ক্ত হলো বললো,
"কি আবার নতুন নাটক শুরু করলেন?নিয়ে যেতে দিবেন না মানে?"
আয়াশের কথায় রিয়ান এবার আয়াশের দিকে এগিয়ে এলো শান্ত কন্ঠেই প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"আমার কথায় কিছু মনে করবেন না৷ এটা আপনাদের কাজ আপনারা করবেন আমরা জানি কিন্তু লা'শে তো কা'টা ছেড়া নেই র'ক্তা'ক্ত নয় আপনারা বললেন খু'ন কি না জানেন না তাহলে যাত্রায় কষ্ট দেওয়া কি উচিত?"
ঠান্ডা মাথার মানুষ আয়াশের বেশ পছন্দের লোকটা বেশ মার্জিত সহজ সরল৷ তবে নিজের কথায় নিজেই খেই হা'রায় একটু আগেই বললো মায়া হয়তো মে'রে ছে এখন বলছে খু'ন না৷
আয়াশ বললো,
" আপনিও তো বলেছিলেন জনাব মায়া খু'ন করেছে৷ তদন্ত তো করতেই হবে যেহেতু ভিক্টিমের পরিবার নির্দিষ্ট কাউকে সন্দেহ করছে৷ আর খু'ন কি শুধু র'ক্তা'ক্ত লা'শ কেই বলা হয়? কা'টা ছেড়া ছাড়াও খু'ন করা যায়৷ হয়তো আমি পুরোপুরি কিছু বলতে পারবো না কিন্তু সন্দেহ জনক নয়কি ব্যপারগুলো? উনি এখানে এলো কেউ জানলো না? অথচ উনাকে রেখেই কেউ বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিলো?"
রিয়ান এবার চুপ রইলো তবে আশা একই কথা বলে যাচ্ছে,
"আমি আমার মায়ের লা'শ কাউকে দিবো না৷"
এবার চোখ থেকে এক ফোটা দুই ফোটা পানি পরলো৷ মেয়েটা রীতিমতো লা'শকে ঝাপ্টে ধরেছে৷ আয়াশ কিছু বলবে এর আগেই রিয়ান গিয়ে সামলে নিলো নিজের বক্ষে আশাকে বললো,
"তাদের কাজ তাদের করতে দাও আশা৷ "
কিন্তু আশা শুনলো না কথা পা'গ'লামি শুরু করলো সে দিবে না লা'শ৷ মেয়েটার মুখে কেমন আতংকের ছাপ ৷ আয়াশ উপেক্ষা করেই লা'শ নিয়ে যেতে বললো৷
আশার এমন কাহিনীতে বিরক্ত ছাড়া কিছুই হচ্ছে না সবার৷ সন্দেহ ও বাড়লো কেমন৷ আয়াশ কিছু বলবে থমথমে মেহরাব এবার মুখ খুললো ক্ষানিকটা সন্দিহান কন্ঠে বললো,
"আপনাকে সবাই এত বোঝাচ্ছে প্রাথমিক কিছু পরিক্ষা নিরিক্ষায় যদি দেখা হয় সাধারণ মৃ'ত্যু তাহলে ময়নাতদন্ত করবে না তাহলে আপনি এত উত্তেজিত কেন হচ্ছেন আশা? আপনার মুখে এতক্ষণ কষ্টের কোন ছাপ ও দেখা যায়নি হঠাৎ এমন ভীত হয়ে উঠলেন কেন আশা?এটা খু'ন নয়তো? আর নিজের মা কে নিজেই মারেননি তো?"
মেহরাবের এমন কথায় হঠাৎই শান্ত হয়ে গেলো আশা রিয়ান কে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো৷ নিরুত্তর রইলো কেমন৷ আয়াশো ব্যপারটি লক্ষ করলো৷
মেহরাব ফের বললো,
"চুপ হয়ে গেলেন কেন আশা? বলুন?"
আশার কি হলো কে জানে? তড়িৎগতিতে বললো,
"কি বলছেন এসব? আমি কিছু করিনি, আমি কাউকে কিছু করিনি৷"
বলে দাঁড়ালো না আর রিয়ান কে রেখেই দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো৷ সবার দৃষ্টি সে দিকেই৷অদ্ভুত তো? তাহলেকি সন্দেহ টাই সত্যি? কিন্তু একজন মেয়ে কি মা কে মারতে পারে? মারবেই বা কেন?
আঠারো
ভার্সিটির সব থেকে নিরব জায়গা হলো লাইব্রেরি যেখানে কোন শব্দ নেই বললেই চলে৷ মাঝে মাঝে দু একজন আসছে প্রয়োজনীয় বই নিয়ে নিজের মত করে পড়ছে৷ ভার্সিটির সব থেকে বিরক্তিকর জায়গা মনে হয় এই লাইব্রেরি কক্ষকে বেলির৷ তার নিস্তব্ধতা বড়ই অপ্রিয় দম ব'ন্ধ হয়ে আসার উপক্রম প্রায়৷
পড়া-লেখায় খুব যে পটু বেলি তা একদমই নয় তবে পড়া লেখা যে অপছন্দ তেমনো নয়৷ সে পড়তে চায় অনেক দূর নিজে কিছু করতে চায়৷ এ দেশে আত্মনির্ভরশীল হওয়া খুবই দরকার যদিও সমাজ বলে বিয়ের আগে বাবার টাকায় চলতে হয় মেয়ে দের বিয়ের পর স্বামীর৷ মেয়েদের নাকি কাজ করতে নেই কেন নেই? সে তো চায় নিজে ইনকাম করতে৷
একটা বই প্রয়োজন ছিলো বাবার সাথে কিছু দিন হলো কথা বলে না বেলি তাই বইয়ের কথাও বলেনি৷ বাড়িটায় থাকতে তার দম ব'ন্ধ হয়ে আসে নিজের ইচ্ছার কোন মর্যাদা নেই বাবা তার দাম্ভিকতা আর সম্মান নিয়েই ভাবে৷
সবাই স্বার্থপর স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু বুঝে না৷ নিজের কাঙ্ক্ষিত বইটি পেতেই তপ্ত শ্বাস টানলো বেলি৷ অতঃপর বইটি হাতে নিয়ে টেবিলের দিকে এগোলো পুরো বইটা নিয়ে যাবে না নির্দিষ্ট কিছু চ্যাপ্টারের ছবি তুলে নিবে ভাবলো৷
চেয়ার টেনে বসবে ঠিক তখনই ক'র্ক'শ শব্দ তুলে ফোন টা বেজে উঠলো এখানে শব্দ করা একদমই নিষেধ৷ বাইরে নোটিশ বোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে ঢুকার আগে মুঠোফোন সাইলেন্ট করে ঢুকতে৷ কিন্তু সাইলেন্ট করতেই ভুলে গেছে আশেপাশে দৃষ্টি বুলালো যাক কেউ নেই প্রশান্তির নিশ্বাস টেনে মুঠো ফোনের স্ক্রিনে তাকালো৷ রনি ফোন করেছে লোকটা নিত্য দিন এসে দাঁড়িয়ে থাকে একদিকে প্রান্ত আরেক দিকে রনি ব্যপারটি বেশ বি'র'ক্ত লাগে ওর কাছে৷ সিনেম্যাটিক হয়ে গেলো না কেমন? মায়ের কাছে কত শুনেছে রনি ছেলেটা নাকি সারা দিন ব্যস্ত থাকে কিন্তু কই? এ ছেলে ওকে সারাদিন বি'র'ক্ত করা ছাড়া কিছুই করে না বোধহয়৷
মাঝে মাঝে মনে হয় ওর বাবাকি ওকে জ্বা'লা'নোর জন্য বেতন ভুক্ত কর্মী হিসাবে রেখেছে নাকি?
রনির মাঝে জেদ ছাড়া তেমন কিছু দেখেনি বেলি কিন্তু প্রান্ত? ছেলেটার চোখ ভ'য়ং'কর তাকালেই মনে হয় দূর্বল হয়ে পরবে বেলি আজকাল মন আর নিজের কথা শুনে না বড়ই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷
বাজতে বাজতে কে'টে গেলো ফোনটা, কা'টা'র সাথে সাথে ফের বেজে উঠলো৷
এবার নিজে ইচ্ছা করেই দেরি করে ধরলো ফোনটা বেলি ওপাশ থেকে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠ ভেসে এলো,
"বেলি ফোন ধরছো না কেন? কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?"
বেলি ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কারণ খুঁজে পেলো না৷ ন্যাকামি মনে হলো তাই ধীর কন্ঠেই উত্তর দিলো,
"ফোন একটু দেরিতে ধরলেই সমস্যা হয় বুঝি?বের হতে একটু দেরি হলেই ফোন করা লাগে? দেখুন রনি আমি এমন ভাবে চলতে অভ্যস্ত নই আমি নিজের মত চলতে পছন্দ করি সব সময়৷"
বেলি থামতেই ওপাশ থেকে ক্লান্ত কন্ঠ ভেসে এলো,
"বেলি আজ আমি একটু ব্যস্ত আছি, ব্যাবসায় একটু ঝা'মে'লা চলছে এদিকে রাজনৈতিক ঝা'মে'লা৷ আপনি আজ একাই বাড়ি ফিরে যান৷ আর খবরদার প্রান্তর সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবেন না৷"
বেলি উত্তর দিলো না৷ উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না তাই লাইনটা কে'টে দিলো৷ ও আগেও একা চলাফেরা করেছে এমন নয় সব সময় রনি থাকতো তাহলে এতো ঢং কিসের জন্য বেলি বুঝতে পারে না৷
বেলি ফোন কে'টে বই থেকে নির্দিষ্ট চ্যাপ্টার গুলো ছবি তুলতেই হড়বড়িয়ে ঢুকলো প্রান্ত ঝড়ের গতিতে এসে বেলির হাত চেপে ক'র্ক'শ কন্ঠে বললো,
"তুই এখানে? তুই জানিস পুরো কলেজ খুঁজছি তোকে? তুই এখনো এখানে কি করছিস? চল আমার সাথে৷"
বলে কোন কথা শুনলো না আর বেলির ব্যাগ নিজের হাতে নিয়ে বেলির হাত চেপেই দৌড় দিলো৷ ব্যপার গুলো এত তাড়াতাড়ি ঘটলো কিছু বেলির মাথাই ঢুকলো না কিছু৷ লাইব্রেরি থেকে বের হতেই হাত ছিঁ'টকে ছাড়ালো বেলি শক্ত কন্ঠে বললো,
"কি করছেন কি প্রান্ত ভাই? ছাড়ুন হাত এটা ভার্সিটি আপনার বাড়ি না৷"
বেলির কথা শুনলো না প্রান্ত ফের হাত চেপে ধরলো দাতে দাত চেপে বললো,
"এখন একটুও নড়াচড়া করবি না বেলি চল আমার সাথে৷ ঝা'মে'লা হচ্ছে বাইরে, যেতে হবে এখনি৷"
বেলি এক পা ও নড়লো না শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
"হাত ছাড়ুন আপনি আমি একা যেতে পারি৷"
প্রান্ত দাঁড়ালো চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাস টানলো বললো,
"আমি এখানে প্রেম করতে আসিনি বেলি৷ এখানে দাঁড়ানো ঠিক হবে না নিচে ঝা'মে'লা হচ্ছে একটু পর ঝা'মে'লা আরো বাড়বে দয়া করে চল যা বলার পরে বলিস৷ প্লিজ৷"
বেলি কিছু বলবে এর আগে ফের ফোন বাজলো এবারো রনি ফোন করেছে৷ ফোনটা তুললো না বেলি প্রান্তকে পাশ কা'টি'য়ে যেতে নিলেই প্রান্ত হাত চেপে ধরলো৷ বললো,
"সব সময় তোর ঘাড় বাঁকামো আমার সাথে চলবে না৷"
এবার নিজেই হাটা ধরলো আবার ফোন বেজে উঠলো৷ রাগে মাথা ফে'টে পরছে৷ দুজন মানুষ পা'গ'ল বানিয়ে দিচ্ছে৷ এবারো দাঁড়ালো বেলি ফোন তুলে রেগে কিছু বলবে এর আগেই ওপাশ থেকে রনি বললো,
"আপনি কোথায় বেলি? আপনাদের ভার্সিটির সামনে রাজনৈতীক ঝা'মে'লা হচ্ছে একা বের হবেন না আমি আসছি,,,,৷ "
তারপর আর কিছু শুনতে পারলো না প্রান্ত ফোন ছিনিয়ে নিলো কে'টে ফোনটা নিজের কাছে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সেফ না বলছি কানে ঢুকেনি তোর? চল আমার সাথে৷"
বেলি কিছু বললো না বাইরে সত্যি ঝা'মে'লা হচ্ছে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে৷কেমন ভীত হয়ে উঠলো হঠাৎই এসব ঝা'মে'লা বেলি প্রচ'ন্ড ভয় পায় ছোট থেকেই৷ ওর বাবা রাজনীতি প্রেমিক, এসব দেখেই বড় হয়েছে৷
ভার্সিটির দ্বিতীয় সিড়ি দিয়ে হাটা ধরলো প্রান্ত এটা পিছনের দিকের গেটের সিড়ি৷ নিচে আসতেই ফের ফোন টা বেজে উঠলো প্রান্ত সাথে সাথেই কে'টে দিলো এদিকটায় মানুষ কম পিছনের দরজা দিয়ে অনায়েসে বের হতে পারবে৷ প্রান্ত নিজের লোক রেখে গেছে এখানে পিছনের দরজা দিয়ে বের হতেই মোবাইলটা আবার বেজে উঠলো এবারো কে'টে দিলো প্রান্ত রনি বার বার ফোন করছে যা প্রান্তর রাগ বাড়িয়ে দিচ্ছে বেলিকে নিজের গাড়িতে ইশারা করে উঠতে বললো, বেলি নিরব দর্শকের মত দেখছে সব৷ ছেলেটা কি যাবে না ওর সাথে? এই ঝা'মেলার মাঝে এখানে থাকবে? হঠাৎ বিকট শব্দ হলো৷ গু'লি'র শব্দ এটা৷ প্রান্ত তড়িৎগতিতে বললো,
"উঠ বেলি এখানে ঝা'মে'লা বেড়ে যাচ্ছে৷"
উঠলো নিশব্দে বেলি৷ আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে বললো,
"আপনি উঠছেন না কেন? আসুন৷ উঠুন প্রান্ত ভাই৷"
প্রান্ত অবাক চাওনিতে তাকালো বেলির দিকে, মেয়েটার মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট৷ ওর জন্য চিন্তা করছে? বেশ লাগে তো৷ প্রান্ত উঠলো না বেলি আবার বললো,
"অদ্ভুত তো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? উঠুন৷"
এখানে প্রান্তর থাকাটা জরুরি, ঝা'মে'লা টা ওদের লোকের সাথেই হচ্ছে৷ বেলি ভয় পাচ্ছে হয়তো ওকে দিয়ে এসে ফের আসবে ভাবলো৷ প্রান্ত উঠবে ঠিক তখনই পিছন থেকে কেউ ডেকে বললো,
"প্রান্ত, ভাই এসেছে৷"
প্রান্ত বিস্মিত নয়নে তাকালো পিছনের দিকে৷ থমথমে কন্ঠে বললো,
"তুই এখানে কি করছিস? যা আমি আসছি৷"
বলে বেলির দিকে ফিরলো৷ আজ ইচ্ছে হলো বেলির সাথে যাওয়ার মনে হলো আর যদি না দেখতে পায়৷ গম্ভীর চিত্তে ফোনটা দিলো বেলিকে গাড়ির দরজাটা লাগালো ঠিক তখনি বেলি উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
"লাগাচ্ছেন কেন? আপনি উঠছেন না কেন? ওখানে যাবেন না আপনি প্রান্ত ভাই৷"
মেয়েটার কন্ঠে ব্যতিব্যস্ততা স্পষ্ট তবুও মেয়েটা বলে তাকে ভালোবাসে না৷ এ ব্যতিব্যস্ততা আরেকটু না হয় বাড়ুক? প্রেয়সীর চোখে নিজেকে নিয়ে য'ন্ত্র'ণা দেখার আনন্দ প্রগাঢ়৷ এটা আরেকটু না হয় বাড়ুক৷ প্রান্ত নিরব হাসলো তবে গম্ভীর চিত্তেই ড্রাইভার কে বললো,
"ওকে দিয়ে আসুন৷"
এইটুকু বলে থামলো অতঃপর বেলির দিকে তাকিয়ে বললো,
"এখানে আমার থাকা দরকার বেলি তুই যা৷"
বলে দাঁড়ালো না হনহন করে অন্য দিকে এগিয়ে গেলো বেলির গাড়ি ছাড়লো৷ হঠাৎ মন অশান্ত হলো বেলির, ছেলেটা কখনো কোন কথা শুনে না৷
প্রান্ত কলেজের সামনের মেইন গেটের দিকে এগোতেই হঠাৎ বিকট শব্দে একটা গু'লি বুকের মধ্য বরাবর এসে লাগলো থমকে গেলো যেন সব, চোখ খিঁচে বন্ধ করলো প্রান্ত৷ শেষ তবে এখানেই সব? বেলি তবে নিস্তার পেলো বুঝি?
ঊনিশ ও বিশ
প্রকৃতি আজ ক্রু'দ্ধ রুপে আছে কিছুক্ষণ পর পর কেমন হুং'কার দিয়ে উঠচ্ছে ওই অন্তরিক্ষটা বাতাসের তা'ন্ড'বে উলট পালট হচ্ছে জানার এই পর্দা গুলো৷ নিরব চিত্তে নিজের অলিন্দে দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা আজ মন বরই অ'শা'ন্ত৷ এ অ'শা'ন্তর কারণ মেয়েটা জানে না বৃষ্টির ঝাপ্টা এসে পরছে বার বার শরীরে ভিজে গেছে প্রায় তবুও সে দিকে যেন পাত্তা নেই তার বাতাসের বেগ অনেকটা বেশি৷
ঘূ'র্ণি'ঝ'ড় এর কারণে ভাড়ি বর্ষণ এর সাথে তীব্র বাতাসো আজ নদীর আশেপাশেই বাড়ি তাই এখানে যেন হাওয়ার তা'ন্ড'ব একটু বেশি৷
নিরব চিত্তে দাঁড়িয়ে রইলেও চোখ যেন মনের মতই অশান্ত৷ মস্তিষ্ক নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মন যেন নিয়ন্ত্রণ হা'রি'য়েছে৷ এমন ভ'য়ং'কর কিছু হোক সে কখনো চায়নি মন যদি এমন নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তাহলে আরো ভ'য়ংক'র কিছু ঘটে যাবে অন্তঃকরণে বিতর বাহিরে কিছু ঘটছে কুয়াশার যা ও চায় না৷ একদমই চায় না৷
"হায় আল্লাহ এ বৃষ্টিতে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন কুয়াশা? ভিজে যাচ্ছিস তো৷"
হঠাৎ মায়ের কন্ঠে ধ্যান ভা'ঙে কুয়াশার৷ মেহনাজ মেয়ের ঘরে জানালা লাগাতে এসেছিলো৷ মেয়েটা তার অদ্ভুত যে কাজ করতে ইচ্ছা করবে সে কাজ করবে যা করতে ইচ্ছা করবে না সে জিনিস ন'ষ্ট হয়ে গেলেও চোখের সামনে ধরবে না৷
বৃষ্টি মেয়ের পছন্দ না সে ভালো করে জানে নিজের জানালা নিজে কখনো লাগায় না তাই সে শুয়েছিলো আর তখনি মনে পরলো মেয়ের জানালা আর বারান্দার দরজার কথা৷ কিন্তু এখানে এসে সে অবাক প্রায়৷ যে মেয়ে বৃষ্টি পছন্দই করে না সে নাকি বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে৷
মেহনাজ দক্ষিন দিকের জানালাটা তাড়াতাড়ি লাগিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো মেয়ের কি মন খারাপ? মন না খারাপ হলে এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন?মেহনাজ উৎকন্ঠা হয়ে প্রশ্ন ছু`ড়'লো,
"কি হয়েছে মা? মন খারাপ?"
কুয়াশার কি হলো কে জানে? ঝাপটে ধরলো মা কে৷ মা যেন একটা চির-প্রশান্তির জায়গা৷ কুয়াশা মায়ের সাথে মিশুক হলেও মা কে জরিয়ে ধরাতে আর পাঁচটা মেয়ের মত তারো জরতা কাজ করে, কিন্তু আজ যেন এটা প্রয়োজন ছিলো মন কে শান্তি দেওয়ার জন্য হলেও এইটুকু জরতা কা'টা'নো যায়৷
কঠিন মেয়েকে এমন দেখে মেহনাজের যেন বুক কে'পে উঠলো৷ কি হলো তার মেয়ের? সে কি তার ছেলে মেয়েকে ঠিক মত খুশি রাখতে পারছে না?
মেহনাজ উৎকন্ঠা কন্ঠেই জিগ্যেস করলো,
"কি হয়েছে মা? বল আমায়৷"
মেহনাজ উত্তর পেলো না৷ মেয়েটার শরীর গরম লাগছে মেহনাজ কপালে হাত দিলো শরীরের তাপমাত্রা কিঞ্চিৎ বেশি৷ ভেজার কারণে, সে জানে মেয়ে যখন উত্তর দেয়নি তখন কিছু বলবে না৷ মেয়েটা কেমন অদ্ভুত হয়েছে কথা বের করা সাধ্য নেই কারো৷ ছেলেটা আবার আলাদা অথচ ছেলের হওয়ার কথা ছিলো এমন৷
"আপা এখানে আছিস তুই?"
মামার কন্ঠে ক্ষানিকটা সরে দাঁড়ালো কুয়াশা৷ মেহরাব আকস্মিক এমন কিছু দেখবে ভাবতেই পারেনি মা মেয়ের এমন মন কাড়া দৃশ্য এ বাড়িতে দেখা যায়না কখনোই৷ এ বাড়িতে সব থেকে ভালো বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক হলো মেহনাজ আর তার৷ কুয়াশা হীমের সম্পর্ক আর পাঁচটা ভাই বোনের মত জরতায় ঘেরা৷ কুয়াশা মেয়েটা একদম আলাদা এ মেয়েটা এমন কেন হয়েছে কেউ বুঝে না৷
মেহনাজ এর শাড়িও ভিজে গেছে এ বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে নিয়ে বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকলো মেহনাজ৷ মেহরাব হাসলো খানিকটা রসিকতা কন্ঠে বললো,
"আপা চাঁদ আজ কোন দিকে উঠেছেরে? ও হো আজ তো বৃষ্টি বাদল চাঁদ উঠেনি আমাদের ঘরে আজ চাঁদ ঢুকলো নাকি?নয়তো তোর মেয়ের এমন বদল ঘটলো কি করে?"
ভাইয়ের কথায় বেশ বি'র'ক্ত হলো মেহনাজ মেয়েটাকে একটু বেশি জ্বা'লা'য় তার ভাই৷ নিশ্চয়ই মেয়েটা রেগে যাবে অনেক?
রেগে গিয়ে বলবে, "আমার বদল ঘটেনি আমি একই আছি৷" তারপর শুরু হবে মামা ভাগ্নির ঝ'গ'ড়া৷ কিন্তু না তেমন কিছু হলো না মেয়েটা কিছুক্ষণ নির্বাক রইলো অতঃপর বিছানার এক কোণে বসলো৷ মেহনাজ অবাক হলো৷ কি হয়েছে মেয়েটার? এত নিরাশ কেন আজ? মেহনাজ নিরাশ দৃষ্টিতে তাকালো ভাইয়ের দিকে৷ মেহরাব ও বেশ অবাক মেহরাব কিছু ভাবলো তপ্ত শ্বাস টানলো মেহনাজ এর উদ্দেশ্যে বললো,
"আপা দুই কাপ গরম চা নিয়ে আয় তো৷ মামা ভাগ্নি আজ সুখ দুঃখের গল্প করবো৷"
বলে বোন কে ইশারা করলো যাওয়ার জন্য আশ্বাস দিলো সে দেখছে ব্যপারটা৷
মেহনাজ যেতেই ভাগ্নির পাশ ঘেঁষে বসলো মেহরাব৷ মেয়েটা একটু বেশি কঠিন নিজের অনুভূতি গুলো হেলায় রাখছে অস্বীকার করছে৷ মেহরাব আকস্মিক অদ্ভুত এক প্রশ্ন ছু'ড়'লো মেহরাব যাতে কুয়াশা একটু বেশি বিস্মিত হলো,
"রুদ্র কে মিস করছিস?"
কুয়াশা যেন নিজের ক্ষুন্ন ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো৷ আকস্মিক নিজের কাছেই নিজে প্রশ্নের মুখোমুখি হলো কঠিনত্ব ফুটলো চোখে মুখে৷ মস্তিষ্ক নি'ষ্ঠু'র হলো যেন মস্তিষ্ক কুয়াশাকে শিখিয়ে দিলো বলতে বল 'না' কিন্তু সে নাতে যেন মন বি'ষা'দে ছেয়ে গেলো সত্যি কি না? মন মস্তিষ্কের লড়াই চললো বরাবরের মত৷ বি'ভ্রা'ন্ত হলো কুয়াশা মন মস্তিষ্কের লড়াইয়ে মস্তিষ্ক যে জিতিয়ে দিয়ে কাটকাট উত্তর দিলো,
"না! আমি কেন ওই ছেলেকে মিস করবো?"
মেহরাব জানতো উত্তর এটাই পাবে৷ মেয়েটা মনের কথা লুকাতে পারদর্শী বেশ৷ মুচকি হাসলো মেহরাব বললো,
"সত্যি মিস করছিস না? ছেলেটার চার দিন যাবত খবর নেই৷ অনুভূতি লুকাতে বেশ পারদর্শী তুই৷"
"কিসের অনুভূতি?"
শক্ত কন্ঠের প্রশ্ন কুয়াশার৷ রুদ্রর সত্যি চার দিন যাবত খবর নেই কোন মেহরাব ফোন করেছে রেদোয়ান কে ও ফোন করেছে ফোন বন্ধ ছিলো দুজনেরই৷ হীম ও খবর নিয়েছে খবর পায়নি৷ মেহরাব কিছু ভাবলো অতঃপর একই ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,
"ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা বড়ই কঠিন, নিজে প্রকাশ না করলেও না চাইতেই আচরণ, ভাব ভঙ্গি, চাওনি ঠিকি নিজ দায়িত্বে প্রকাশ হয় সময় অসময়৷"
কুয়াশা যেন থমকালো কিছু ভাবলো উঠে দাঁড়িয়ে পা বাড়ালো বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঠিক তখনি মেহরাব ফের বললো,
"এত মন খারাপের কারণ কি?"
কুয়াশা থামলো ক্ষানিকটা ঘুরলো সত্যি সে তার মন খারাপের কারণ জানে না৷ এবার নিরুত্তর রইলো না মিনমিনিয়ে বললো,
"কিছু মন খারাপ অকারণে হয় তার কারণ হয়তো নিজেরো জানা থাকেনা মামা৷ "
বলে দাঁড়ালো না হনহন করে বেরিয়ে গেলো উদ্দেশ্য নিচে লাইব্রেরি কক্ষ৷ মন তার বিপক্ষে, আজ বই দিয়েই মন ভালো করবে পন করলো কুয়াশা৷ নিচে আসতেই বাড়ির বাইরে হঠাৎ গাড়ির শব্দ পাওয়া গেলো কৌতুহলী হয়ে কান পাতলো সে দিকে গাড়ির দরজা খোলার শব্দ পেলো৷ হঠাৎ মেয়েটার কি হলো কে জানে? এত বৃষ্টির মাঝেই ছুটে বেরিয়ে গেলো বাড়ির মেইন গেটের দিকে আসতে হঠাৎ ধা'ক্কা লাগলো সুঠাম বুকে না এবার প্রতিবারের মত ছি'ট'কে পরেনি হাত আগলে ধরেছে কাঙ্ক্ষিত লোকটি৷ কুয়াশার নজরে সব থেকে বেখেয়ালি পুরুষ৷ রুদ্র আকস্মিক এত রাতে কুয়াশাকে বাইরে দেখে অবাক হলো৷ কিছু বলবে হাত ছেড়ে এর আগে মেয়েটা হড়বড়িয়ে বললো,
"কোথায় ছিলেন আপনি এত দিন?"
হঠাৎ এমন প্রশ্নে থতমত খেলো রুদ্র৷ মেয়েটার চোখ জুরে কৌতুহলতা আর ব্যাকুলতা৷ অদ্ভুত তো ও কি সত্যি দেখছে? নাকি পাষাণ মেয়েটাকে এত দিন না দেখতে পেয়ে তৃষ্ণা টা তীব্র হয়ে ভুল দেখছে? এই ঝ'ড় বৃষ্টির মাঝে মেয়েটা এখানে ছুটে এসেছে কেন? ওর জন্য কি?
কঠিন মুখ যাই বলুক চোখ কি মিথ্যা হয়? রুদ্র নড়েচড়ে দাঁড়ালো অতঃপর কন্ঠে গম্ভীরতা ফুটিয়ে বললো,
"আপনাকে কেন বলবো?"
রুদ্রের এমন কথায় যেন কুয়াশার হুস ফিরলো এতক্ষণ কি করছিলো বোধগম্য হলো৷ কে'লেং'কারী ঘটিয়ে ফেলেছে কি করলো? ছেলেটা এখন প্রশ্নের জ্বা'লে ফা'সা'বে ওকে৷ কি বলবে?
"আপনি কি আমার জন্য চিন্তিত কুয়াশা?"
কুয়াশা বি'ব্র'ত হলো কেমন না এখানে থাকা যাবে না আজ নিরব থাকতে হবে নিরবতাই আজ বাঁচার পথ, আশে পাশে তীব্র হাওয়ার শব্দ ছাড়া কিছুই পাওয়া গেলো না৷ হঠাৎই কুয়াশাকে বাঁচিয়ে দিয়ে মেহনাজ হাঁক ছেড়ে ডাকলো৷ কুয়াশা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো৷
এর মাঝেই রুদ্র ফের বললো,
"সব সময় আপনার চুপ থাকা বুঝিয়ে দেয় নিরবতা সম্মতির লক্ষন৷ "
কুয়াশা এবার কঠিন হলো থমথমে কন্ঠে বললো,
"আপনার মনে হয় না আপনি একটু বেশি বুঝেন? তেমন কিছুই না৷"
কুয়াশার কথায় হাসলো রুদ্র৷ পূর্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেয়েটির দিকে৷ মেয়েটি ভিজে একাকার হয়ে গেছে৷ কাল নির্ঘাত জ্বর হবে৷
কুয়াশা রুদ্রকে পাশ কা'টি'য়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি ওদের পায়ের সামনে কিছু পরে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো৷ সামনে একটা পি'স্ত'ল পরে আছে৷ তখন হঠাৎ রুদ্রর সাথে ধা'ক্কা খেয়ে কিছু একটা পরেছে ওর হাত থেকে শব্দ পেয়েছিলো তখনি৷ কুয়াশাকে এমন বি'স্মি'ত হতে দেখে কুয়াশার দৃষ্টি স্বরণ করে নিতে তাকাতেই থতমত খেলো রুদ্র৷ হকচকিয়ে নিচে পরা পি'স্ত'ল টা তুললো কুয়াশা বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন ছু'ড়'লো,
"এটা আপনার কাছে কেন?"
রুদ্র উত্তর খুঁজে পেলো না কিছু কথা কা'টা'নোর জন্য কিছু বলবে এর আগে কুয়াশা থমথমে কন্ঠে বললো,
"কে আপনি রুদ্র?"
রুদ্রর চোখ মুখ শক্ত হলো৷ এক তো এত ঝা'মে'লার পর এসেছে এখানে আসার পর মেয়েটা এসব প্রশ্ন করছে৷ আর এ প্রশ্নটা তার একেবারে পছন্দ না৷ একটুও না! মেয়েটা এ প্রশ্নটাই বেশি করে৷
"আমায় নিয়ে আপনার অনূভুতি শূন্য আপনি বলেন তাহলে আমার সম্পর্কে এত কিছু জানার প্রয়োজন কি?আমি যেই হই আপনার জানার প্রয়োজন নেই৷ তাছাড়া আমি নিজেকে নিয়ে বলতে পছন্দ করি না যে মানুষ গুলো আমায় অপছন্দ করে৷ আমার কাজে বুঝিয়ে দেই কে আমি৷
বেরস কন্ঠে উত্তর রুদ্র৷ বলে আর দাঁড়ালো না ভিজে শরীরে উপরে উঠে গেলো৷ এ তীব্র বাতাসের মাঝে থমথকে হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কুয়াশা৷ হাত পা কাঁপছে তার কিছুক্ষণ পর পর এ বাতাসে আর বৃষ্টিতে৷
অতঃপর দু-দিন ঝড় বৃষ্টি কা'টি'য়ে স্বচ্ছ এক ঝলমলে সকালের সূচনা৷ তবে এমন নয় রৌদ্রজ্বল সকাল৷ রোদ নেই ছিটে ফোটাও৷ সূর্যের দেখাও নেই৷ এমনো নয় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ৷ আজকের সকালটা একটু কুয়াশাচ্ছন্ন রোদের চিহ্ন নেই অথচ সবে অক্টোবর এর শেষ সপ্তাহ চলছে৷
আর দু-দিন বাকি নভেম্বর শুরু হতে মেহরাব এর ঘুম আজকাল হচ্ছেই না অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ভর করছে৷ আয়াশের ফোন বন্ধ দু দিন থানায় গিয়ে পায়নি শুনেছে ঢাকা দৌড় ঝাপ চলছে কেসের সূত্রে আজ থানায় থাকবে শুনেছে কাল৷
পাংশুটে মুখে বসলো চেয়ারে মেহরাব৷ অতঃপর চায়ের কাপের সাথে ছোট্ট পিরিজে রাখা দু টুকরো লেবু থেকে এক টুকরো নিয়ে চিপড়ে রঙ চায়ে দিলো৷ চায়ের রঙ সাদাটে হয়ে গেলো৷ গলা বসে গেছে মেহরাবের হঠাৎ ঋতু পরিবর্তণে বিকট ঠান্ডা লেগে গেছে৷
ঠান্ডার সর্দি হলে আদা আর তুলসি দিয়ে রঙ চায়ের সাথে কয়েকফোটা লেবুর রস গলার জন্য অনেক উপকারি৷
আজকাল এই ছাদে আড্ডা জমে না আর৷ সবাই বলে তার নাকি বদল ঘটেছে৷ সত্যি কি তাই? উহু সে বদলায়নি একই আছে পরিবারের জন্য শুধু প্রেয়সীকে পাওয়ার পাগলামো টা ফের রপ্ত করেছে তাকে৷ এক বুক আশা নিয়ে খুঁজেই চলেছে৷ কে জানে তার অপেক্ষার অবসান ঘটবে কবে?
"যার পিছু ছুটছিস আদৌ সে তোর আছে ভাই?এত বছর তো হলো তোর কি মনে হয় একা আছে মেয়েটা?"
বোনের কথায় কেমন চমকালো মেহরাব
আঠারো বছর হলো পাল্টেছে সব প্রেয়সীয় পাল্টেছে সে জানে৷ পালটে যাক সব প্রেয়সী তার থাকুক অন্য কারো হবে সে মেয়ে তা মেহরাব কখনোই সহ্য করতে পারবে না৷
সময় এগোক আরো প্রেয়সী যেন তারই থাকে৷
মেহরাব তাকালো বোনের দিকে চায়ের কাপে চুমুক বসালো হঠাৎই হাসির রেশ দেখা গেলো তার উষ্ট কোণে তীর্যক সেই চাহনি ও দেখা গেলো৷ অদ্ভুত কন্ঠে বললো,
"কেন থাকবে না আমার? সে আমারই হবে আপা৷ "
এইটুকু বলে থামলো অতঃপর ফের বললো,
"মানুষ কল্পনাতে সুখ খুঁজে জানিস তো? আমি কল্পনায় সুখি হয়ে সন্তুষ্ট নই আমার বাস্তব ও মায়াময় হবে৷ সে আমার না হলে কারো না৷"
এইটুকু বলে হাসলো৷ আরেক চুমুক বসালো বি স্মি ত চাওনিতে তাকিয়ে আছে মেহনাজ৷ মেহরাব বললো,
"যে কল্পনাতে একান্ত আমার বাস্তবে আমার না হলে আমি না হয় সে বাস্তবতা পালটে দিবো? সে কল্পনা এবং বাস্তবে একান্ত আমার, নয়তো কারো না৷ আমি যেমন ভালোবাসতে জানি আমি মারতেও জানি আপা৷"
শেষের কথা টুকু মেহরাব মিনমিনিয়ে বললো৷ মেহনাজ আরেক দফা বিস্মিত হলো৷ সে তার এই ভাই কে চিনে না৷ এ কেমন মানুষ কে সে দেখছে? উম্মাদ হয়ে গেছে ছেলেটা৷
(চলবে...)