কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগণ এমন একটি প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যা সমুদ্রগর্ভস্থ ভূমিকম্প থেকে সুনামির ঝুঁকি নির্ধারণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির গণিত বিভাগের একটি দল আধুনিক শব্দ-বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় করে টেকটনিক প্লেটের কার্যকলাপ বিশ্লেষণের জন্য ব্যবস্থাটি তৈরি করেছে। তারা এই কাজটি করেছেন মূলত সমুদ্রগর্ভস্থ হাইড্রোফোন (Hydrophone) ব্যবহার করে ধারণকৃত শব্দের ব্যবহার করে, এবং তা দিয়ে ভারত সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরে সংঘটিত ভূমিকম্প সমূহের শব্দ বিকিরণ পরিমাপ করে।
কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিতের একজন সিনিয়র প্রভাষক এবং গবেষণাপ্রবন্ধটির সহ-লেখক ড. উসামা কাদরি বলেছেন, “সুনামির কারণে বিপুল প্রাণহানি এবং উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে, যার ফলে সমগ্র অবকাঠামোর উপর উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ে।“
তিনি আরোও বলেছেন যে, তাদের গবেষণাপ্রবন্ধটি দেখায় যে কীভাবে শাব্দ-মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গগুলি (Acoustic-Gravity Waves) পর্যবেক্ষণ করে সুনামির আকার-আকৃতি সম্পর্কে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়, এটি সুনামি-তরঙ্গগুলির তুলনায় অনেক দ্রুত পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করে, এবং ফলে ভূমিধ্বস হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। কিন্তু শাব্দ-মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ কি? আসলে এই শাব্দ-মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গগুলি (Acoustic-Gravity Waves) হলো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ, যা অনেক দ্রুত গভীর সমুদ্রের মধ্য দিয়ে চলে এবং সমুদ্রের পানির মধ্যে হাজার হাজার কিলোমিটার চলাচল করতে পারে। তিনি আরোও বলেছেন, “এই শাব্দ বিকিরণটি টেকটনিক ঘটনার উৎস সম্পর্কেও তথ্য বহন করে এবং এর ক্ষেত্র অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে ধারণ করা যেতে পারে, এমনকি উৎস থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরেও। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সব সমুদ্রগর্ভস্থ ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি করে না।“
বর্তমান সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় সুনামি সতর্কতা সংকেত ব্যবস্থা সমুদ্রের বয়াতে (Sea Buoys) পৌঁছানো তরঙ্গের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এতে অনেক অসুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে প্রধান হলো যে সবকিছু সরিয়ে নেওয়ার জন্য খুব কম সময় থাকে। পানির নিচের ভূমিকম্প পরিমাপ করার জন্য সিসমিক সেন্সরগুলি এবং সমুদ্রের বয়াগুলো (Sea Buoys) একসাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে সুনামির ফলে সৃষ্ট বিপদের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এটিও সর্বদা সঠিক নয়। বিদ্যমান সতর্কতা ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যবহার করার জন্য, দলটি হাইড্রোফোন রেকর্ডিং ব্যবহার করে টেকটনিক ঘটনার উৎস নির্দেশের একটি কম্পিউটেশনাল মডেল (Computational Model) ব্যবহার করে। তারপর অ্যালগরিদমগুলি ভূমিকম্পকে শ্রেণীবদ্ধ করে ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য যেমন দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ, উত্থান গতি এবং সময়কাল সুনামির আকার প্রকাশ করার জন্য গণনা করা হয়।
সহ-লেখক ডাঃ বার্নাবে গোমেজ, যিনি কার্ডিফে থাকাকালীন গবেষণা করেছিলেন এবং এখন লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন, বলেছেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে স্লিপের (Slip) ধরণ জানা থাকলে তা ভুল সংকেত কমাতে পারে এবং নিরপেক্ষ ক্রস-ভেলিডেশনের মাধ্যমে সতর্কতা ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং উন্নত করতে পারে।“ অর্থাৎ টেকটনিক প্লেটগুলোর ধাক্কা সম্পর্কে আরও তথ্য জানলে এর মাধ্যমে ভুল সংকেত কমতে পারে, এর জন্য পাশাপাশি পুনঃযাচাইও প্রয়োজন। আর এই নতুন প্রযুক্তি দিয়ে মূলত এই কাজটিই করা হচ্ছে।
সুনামির ঝুঁকি ভবিষ্যদ্বাণী করা দলের কাজটি সারা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিপদ সতর্কতা ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের অংশ। তাদের ব্যবহারকারী-বান্ধব সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণ এই বছরের শেষের দিকে জাতীয় সতর্কীকরণ কেন্দ্রগুলিতে আনা হবে।
তথ্যসূত্রঃ
১) (মূল উৎস) Cardiff University, "*Using artificial intelligence to create a tsunami early warning system*," Phys.org, [https://phys.org/news/2023-04-artificial-intelligence-tsunami-early.html](https://phys.org/news/2023-04-artificial-intelligence-tsunami-early.html)
২) (মূল গবেষণাপত্র) B. Gomez and U. Kadri, "*Numerical validation of an effective slender fault source solution for past tsunami scenarios | Physics of Fluids | AIP Publishing*," Physics of Fluids 35, 25 Apr. 2023, doi: 10.1063/5.0144360.
Image Credits: Bing AI Image Generator
Writer: Kamrun Nahar