১৯৩২ সালের দিকে বেতার বা রেডিও হয়ে উঠেছিল বিনোদন এবং যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় এবং অভুতপূর্ব মাধ্যম৷ বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরি আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে বেতার তরঙ্গ আদান প্রদানের কার্যক্রম হাতে নেয়। কিন্তু বেতার তরঙ্গের মাঝে কেমন জানি হিস হিস শব্দের আধিক্য ছিল। কোনভাবেই এই শব্দ কোত্থেকে আসছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না।
এই শব্দের উৎসের সমস্যা সমাধানে তরুন বেতার প্রকৌশলী Karl Guthe Jansky-কে ডাকা হলো। জানস্কি প্রায় ৪ বছর ধরে বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন। সমস্যা সমাধানে Jansky একটি বড় আকারের অ্যান্টেনা তৈরি করলেন। এই অ্যান্টেনাটি ১৪.৫ মিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম ছিল৷
কাজ শুরু করলেন তিনি। মাসের পর মাস ধরে বেতার তরঙ্গের অবাঞ্ছিত শব্দ উৎস জানতে শুনলেন সব ধরনের বেতার শব্দ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই অবাঞ্ছিত শব্দের উৎস হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে হওয়া বজ্রপাতে উৎপন্ন রেডিও তরঙ্গ। তিনি এসব রেডিও তরঙ্গ আলাদা করে শনাক্ত করার পরও একটি দূর্বল হিস হিস শব্দ তখনও শোনা যাচ্ছিল। এই শব্দের তীব্র্রতা আবার ছিল পর্যায়ক্রমিক। প্রায় একদিন পরপর শব্দের তীব্রতা ওঠানামা করছিল।
এবার তিনি ভাবলেন হয়ত এটা সূর্য থেকে আগত রেডিও তরঙ্গের উৎস৷ কিন্তু কিছুদিন পর তিনি দেখলেন এই শব্দ উৎস ২৪ ঘন্টা নয় বরং ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিটের চক্র মেনে চলছে। ২৪ ঘন্টার সাথে এর হয়তল খুব বেশি পার্থক্য নেই কিন্তু যারা জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান রাখেন, তারা জানেন যে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট হলো নাক্ষত্র দিনের সময় এবং ২৪ ঘন্টা হলো সৌরদিন৷
আজ আকাশে একটি তারা যেখানে দেখবেন, আগামীকাল ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট পর তারাটি সেখানে দেখবেন (২৪ ঘন্টা নয়) । কিন্তু সূর্য দিয়ে হিসাব করলে এটি ২৪ ঘন্টা আসবে৷ এখন যেহেতু রেডিও তরঙ্গের শব্দ উৎস ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিটের চক্র মেনে চলছে তাই এটা কিন্তু সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে এই শব্দ আসছে সৌরজগতের বাইরের কোন উৎস থেকে। খুলে গেল মানবজাতির সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
Jansky যখন তার এই আবিষ্কারের কথা বললেন তখন তিনি অনেক জনপ্রিয়তা, প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন৷ এবার তিনি ভাবলেন একটি বড় আকারের রেডিও এন্টেনা বানানো যায় কি না। তিনি তখন ৩০ মিটার ব্যাসের একটি অ্যান্টেনা তৈরি করার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তার অধিকাংশ সহযোগীদের কাছ থেকে তিনি কোন আগ্রহ পেলেন না৷
আবার পরে তিনি অন্য একটি প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার কারণে বিষয়টির আপাতত ইতি ঘটল। এরপর বেতার জ্যোতির্বিদ্যায় Jansky-র নাম শোনা যায়নি। কিন্তু আমরা প্রবেশ করলাম রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে!
*লিখেছে - রাজহাঁস*