সুখ বলতে আসলে কি বুঝায়? এই যে মানুষ এত সুখী মানুষ অসুখী মানুষ বলে চিল্লায়, এই সুখী মানুষ অসুখী মানুষের মানেটাই বা কি? এদের মধ্যে তফাতই বা কতটুকু?
ধরুন আপনি শুনলেন আপনার এলাকায় একটা দোকান আছে যেখানে আয়ু আপনি আপনার আয়ু বিক্রি করতে পারবেন, শুধু আয়ুই না এর পাশাপাশি বিক্রি করতে পারবেন সময় আর স্বাস্থ্যও। যার বিনিময়্যে পাবেন একটা মোটা অঙ্কের টাকা। তখন আপনি কি বলবেন? হয়ত বলবেন, “আরেহ ভাই আমার সাথে কি আপনি মজা করছেন? কি যাচ্ছে তাই কথা বলছেন?”
এই উত্তর বা এই জাতীয় উত্তরই পাওয়া স্বাভাবিক। এবার পুরো বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে চিন্তা করা যাক।
আপনি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে আসছেন আপনি বড় হয়ে বিশাল কিছু হবেন।সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে দিন রাত খেটে যাচ্ছেন। জীবনও অতিবাহিত করছেন কোনোভাবে। সফল হওয়ার জন্য আপনি আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়কে উপভোগ করার বদলে বিসর্জন দিয়ে দিলেন।
কিন্তু এত কিছু করার পরও একদিন দেখলেন, আপনি যে এতদিন স্বপ্ন দেখে আসছেন তা পুরন তো করতে পারলেনই না তার উপর জুটল অসফল, অসামাজিক, বোঝা হওয়ার তকমা। তখন কেমন লাগবে?
এর উপর যদি মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আপনার কাছে তেমন টাকাও নাই। সেই সময় যদি আমি কারোর কাছ থেকে যদি সেই ঠাট্টার কথা শুনেন তখন কি করবেন? তার কথা বিশ্বাস করবেন নাকি এবারও আগের মতোই মজা হিসেবে উড়িয়ে দিবেন?
আমি শিওর অনেকে (হ্যাঁ অনেকেই) মন থেকে কথাটাকে একবারের জন্য হলেও বিশ্বাস করতে চাইবে। ভাববে নিজের আয়ুর বদলে যদি হাতে কিছু টাকা আসে তাহলে মন্দ কি? কিছু আয়ু বিক্রি করে দিলেই তো ভালো হয়। একটু হলেও জীবনটা সুন্দর করে কাটানো যাবে।
আর এই দিয়েই শুরু হয় “থ্রি ডে'জ অব হ্যাপিনেস” এর কাহিনী। শুধু আপনার সাথে গল্পের নায়ক কুসুনোকির একটাই পার্থক্য সে এ ক্ষেত্রে তার তিন মাস বাদে পুরা আয়ুটাই বিক্রি করে দেয়। কেননা তার জীবনের মূল্য অনেক কম। যেহেতু সে সমাজে এতদিন কোনো প্রকার অবদান রাখে নি আর ভবিষ্যতেও রাখার কোনো সম্ভাবনাও নেই।
হ্যাঁ আমি হয়ত কুসুনাকির জায়গায় থাকলে তাই করতাম। কেননা আমিও একজন কুসুনোকি। কেননা তার মধ্যেই আমি নিজেকে খুঁজে পাই। থাক এসব নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় কথা তাই বাদ দেই তাতেই বরং ভালো হবে।
এখন কথা হচ্ছে এই তিন মাস সে কি করবে যার জীবনের মূল্য নাই বললেই চলে? সে কি পারবে নিজের জীবনের প্রকৃত মূল্য বুঝতে? পারবে কি নিজের জীবনের প্রকৃত অর্থ দাড় করাতে?
এই নিয়ে পুরো গল্পটা।
হ্যাঁ যারা গল্পটা আগে পড়ছেন। তারা বলবে আমি গল্পের সিনোপসিসটাকেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লেখছি। হ্যাঁ কথাটা সত্য। কিন্তু এর পিছনে একটা কারণ আছে। কারনটা অনেক সাধারণ। সেটা হলো আমি লিখতে ভালোবাসি। এটায় আমি সুখ পাই।
ওই যে কিছুক্ষণ আগে বলেছিল না আমি কুসুনোকি। এখন বলব আমি একই সাথে কুসুনোকি আবার কুসুনোকি নাও।
কেননা ওর মতো আমারও এই ১৮ বছরের দীর্ঘ জীবনটা একইভাবে কাটিয়েছি। সবসময় অন্যদের টপকে সামনে যেতে চেয়েছি। আমার থেকে বুদ্ধিমান আর জ্ঞানীদের জীবনে চোখে দেখতে পারিনি। এখনও পারিনা। এমনকি সমাজের জন্য কিছু কখনো করছি বলেও মনে পড়ে না। যদি দিনশেষে আমার অবস্থাও কুসুনোকির মতো হয় তবে মনে হয় না আমিও তার পথে চলতে পিছ পা হব।
কিন্তু আমি কুসুনোকি না। আমি আমি। আমার একটা নিজস্ব সত্তা আগে। যার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসে সুখ খুঁজতে বেশি সময় লাগে না। তা লেখালেখির ক্ষেত্রেই হোক বা গেনসিন খেলার ক্ষেত্রেই হোক বা বাবা মার পিছু লাগার ক্ষেত্রেই হোক। সব কিহু থেকেই আমি সুখ পাই। যে সুখের সন্ধানে কুসুনোকির গোঁটা জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে, মোড়লের গ্রামের পর গ্রাম খুজতে হয়েছে (মমতাজ উদ্দীন আহমদের সুখী মানুষ নাটক দ্রষ্টব্য) তা আমি জীবনের প্রতিটা মূহূর্তেই পেয়ে এসেছি। তাই আমি কুসুনোকি না।
লেখক সুগারু মিয়াকি এই পুরো সুখ নামক ভ্রম নিয়ে এমন এক গল্প ফেঁদেছেন যাতে মিয়াগি, কুসুনোকি, হিমেকো, ওয়াকানার মতো চরিত্রের মধ্যে বুঝিয়েছেন জীবনের প্রকৃত মূল্য কত? সুখ আসলে কি জিনিস? শুধু টাকা থাকলেই, জীবনে সফল হলেই যে সুখ পাওয়া যায় তা নয়। অনেক ছোট ছোট জিনিস থেকেও সুখ পাওয়া যায় তা একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া-
বইটা পড়ার পরে আমার মধ্যে যে কি চলছিল। তা যদি বুঝানো যেত… গল্পের মেইন নায়ক নায়িকা দুই জনকেই আমার গল্পের শুরুতে তেমন ভালো না লাগলেও শেষে এসে পুরো মন জয় করে ফেলছে। বিশেষ করে এন্ডিংটা। পুরাই অস্থির। আমি নিজের রোমেন্টিক জনরা মুভি বলেন বা বই বলেন পড়তে সেরা লাগে। তার উপর যদি যুদ্ধে আমার প্রিয় জুটি যদি জিতে তাহলে তো কথাই নাই। এক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে। সেই শুরু থেকেই একটা আশা ছিল যে এরা শেষমেশ একটা জুটিতে পরিনত হবে। যদি কাহিনী সেই দিকে আগাতে থাকে তখন আর আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি নি। তবে এই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয় নাই। বই পড়া শেষ করে যখন বই পাশে রেখে কিছুক্ষণ বইটা নিয়ে ভাবতে থাকি তখন বুকের প্রচুর ব্যথা অনুভব করি। মনে হতে থাকে জীবনটা আসলেই কত সুন্দর আবার একই সাথে কতই না সংক্ষিপ্ত। এই যে সংক্ষিপ্ত জীবন তাতে কি মানুষ নিজের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে নিজের জীবনকে নতুনভাবে সাজাতে পারে না?
যাইহোক অনেক দার্শনিকতা চটকালাম।
রকমারিসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন বইটা।
হ্যাপি রিডিং
বইয়ের নাম: থ্রি ডে’জ অব হ্যাপিনেস
লেখক: সুগারু মিয়াকি
অনুবাদক- বিমুদ্ধ সরকার রক্তিম