প্রকৃতিতে ঘটা অধিকাংশ আলোকীয় ঘটনা ঘটার কারণ হলো বরফ স্ফটিক (ice crystal)। আইস ক্রিস্টাল একই সাথে প্রতিফলক এবং প্রতিসরক হিসেবে কাজ করতে পারে। আইস ক্রিস্টালে আলোর প্রতিফলনের কারণে যেমন আলোকীয় ঘটনা রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রতিসরনের কারণে।
Ice crystal অনেক উচু স্তরের মেঘ থেকে সৃষ্টি হতে পারে। আবার সৃষ্টি হতে পারে মাঝারি কিংবা নিম্ন স্তরের মেঘ থেকে। যেমন ভাবেই তৈরি হোক না কেন সেটা এখন আলোচনার বিষয় না।
Ice crystal বিভিন্ন আকারের হতে পারে। আলোকীয় ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী যেসব আকার তার মধ্যে ষড়ভুজাকৃতির বরফ স্ফটিক অন্যতম। ষড়ভুজাকৃতির বরফ স্ফটিক প্রিজম আকারের হয়। প্রিজম আকারের বরফ স্ফটিকের মধ্যে রয়েছে কলাম আকৃতির স্ফটিক এবং প্লেট আকৃতির স্ফটিক। এইসব প্লেট এবং কলাম আকৃতির স্ফটিকগুলো যদি ৩০ মাইক্রোমিটার এর চেয়ে বড় হয় তাহলে স্ফটিকগুলো ধীরে ধীরে নিচের দিকে আসতে থাকে।
নিচের দিকে আসার সময় কলাম স্ফটিকগুলো ভূমির সাথে প্রায় সমান্তরালভাবে এবং প্লেট আকৃতির স্ফটিকগুলো ভূমির সাথে উলম্বভাবে অবস্থান করে। এই বিন্যাসের ফলে আলোকীয় ঘটনাবলি সহজেই ঘটতে পারে। নিচের দিকে আসার সময় এসব স্ফটিক অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে, কোন কোনটি আবার লাটিমের মতো ঘুরতে ঘুরতে নিচের দিকে পড়তে থাকে।
সূর্য, চাঁদের চারপাশে বৃহত বৃত্তাকার যে রংধনুর মতো বলয় দেখা যায় তাকে সাধারণভাবে halo বলা হয়। Halo বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন : 9° halo, 18° halo, 22° halo, 44° halo, 46° halo ইত্যাদি। এর মধ্যে আমরা বেশিরভাগ সময় 22° Halo দেখতে পাই। 44° Halo ও মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু বাকি Halo type গুলো সচারাচর দেখা যায়না। 22° এবং 44° Halo এর মূল কারণ হলো ষড়ভুজাকার কলাম আকারের বরফ ক্রিস্টাল।
22° Halo : কলাম আকৃতির বরফ স্ফটিকগুলো ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে বিভিন্ন দিকে বিভিন্নভাবে ঘুরতে পারে। এ এর ফলে আলোকরশ্মি আপতিত হওয়ার একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র ( wide range) তৈরি হয়। আলোকরশ্মির কিছু অংশ সরাসরি পর্যবেক্ষকের চোখে প্রবেশ করে এবং কিছু অংশ কলাম আকৃতির স্ফটিকের Prism face এ আপতিত হয়ে আবার প্রতিসরনের মাধ্যমে Prism face দিয়েই বেরিয়ে আসে। ফলে আপতিত দিকের সাথে আলোর একটি বিচ্যুতি কোণ তৈরি হয়। এই কোণের মান প্রায় ২২°. ২২° হওয়ার ফলে মনে হয় যেন আকাশে সূর্য হতে ২২° কৌণিক দূরত্বে একটি বৃত্তাকার রিং বা বলয় দেখা গেছে। এটাই 22° Halo. এই ধরনের ক্ষেত্রে কোণের মান পুরোপুরি 22° হয়না।কিন্তু প্রায় 22° ধরা যায়!! 22° Halo এর জন্য কেন্দ্র্রের দিকের আলোর রং লাল দেখা যায়
46° Halo : 22° Halo তে আমরা দেখেছিলাম আলো prism face দিয়ে ঢুকে Prism face দিয়েই বেরিয়ে যায় কিন্তু 46° Halo তে আলো Prism face দিয়ে ঢোকে ঠিকই কিন্তু বেরোয় Basal face দিয়ে।46° Halo 22° Halo এর মতো সহজে দেখা যায়না। (কেন ভাবুন তো) আবার 46° halo 22° Halo এর তুলনায় খুবই অনুজ্জ্বল হয়।
22° Halo বোঝার পদ্ধতি: ধরুন কোন একদিন সূর্যের চারপাশে আপনি Halo দেখতে পেলেন। ওটা 22° Halo কিনা তা বোঝার জন্য কোন বস্তু দ্বারা সূর্যকে আড়াল করুন। এরপর ঐ বস্তুটির উপর বৃদ্ধাঙ্গুলি রেখে হাত যথাসম্ভব প্রসারিত করুন। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে হাতের তালু এভাবে প্রসারিত করলে তা প্রায় 22° হয়। এভাবে 22° Halo আলাদাভাবে চেনা যায়।
আরও বিভিন্ন ধরনের Halo হতে পারে।সেগুলোর কারণ হলো পিরামিড আকৃতির বরফ স্ফটিক। সেগুলোর আকৃতি একটু জটিল ধরনের এবং এ ধরনের বরফ স্ফটিক দিয়ে Halo তৈরি হওয়া খুবই দুর্লভ।