ব্যাপনের ব্যাপকতা



আমরা অনেকেই ভুল করে ব্যাপন (diffusion) নামের ভৌত প্রক্রিয়াটিকে কেবল তরল আর বায়বীয় পদার্থের সাথে রিলেট করি; ক্ষেত্রবিশেষে সংজ্ঞায়িতও করি। কিন্তু—


কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয়। কঠিন পদার্থেও ব্যাপন ঘটে! এমনকি পদার্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজমাতেও কমবেশি ব্যাপন ঘটে থাকে (অবশ্য ব্যকিক্রম আছে এক্ষেত্রে)। 


প্রকৃতপক্ষে তরল ও বায়বীয় পদার্থের ক্ষেত্রে ব্যাপন প্রক্রিয়াটি অনুধাবন করা যতটা সহজ, কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে সেটা ঠিক ততটা সহজ নয়। প্লাজমার ক্ষেত্রে আলোচনা একটু জটিল। আমরা কেবল পদার্থের স্বাভাবিক তিনটি অবস্থা নিয়েই কথা বলব আজ। 


জেনে রাখা ভালো,

ব্যাপন প্রক্রিয়ায় চাপের প্রভাব গৌণ, ঘনমাত্রার (কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে ঘনত্ব) প্রভাব মুখ্য। এ-জায়গায়ও আমরা অনেকেই ভুল করে ফেলি, তাই জানিয়ে রাখলাম। 


যাহোক, এখন আসি ব্যাপনের সংজ্ঞার্থে।


ব্যাপনের সংজ্ঞার্থ : সোজা বাংলায়, ব্যাপন হলো কোনো মাধ্যমে উচ্চ ঘনমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন ঘনমাত্রার স্থানের দিকে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের স্বতঃস্ফূর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া।


ব্যাপন প্রক্রিয়াটি অতি দ্রুত গতিসম্পন্ন প্রক্রিয়া নয়। ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার মতো একটি স্লো গতিতে ব্যাপন ঘটে থাকে।


আচ্ছা, আগেই বলেছি কঠিন পদার্থের ব্যাপন অনুধাবন করা একটু কঠিন। ব্যাপারটা অনুধাবন করার জন্য কমেন্টবক্সে একটি ভিডিয়ো-লিংক দিয়েছি। সেটা দেখে নিতে পারেন। অথবা এই লেখার শেষের দিকে একটা উদাহরণ টানা হবে, সেটার দ্বারাও ব্যাপারটি অনুধাবন করা যথেষ্ট পরিমাণে সম্ভব হবে বলে আশা করি। 


ঠিক আছে। এতক্ষণ গেল কনসেপচুয়াল স্বাভাবিক কথাবার্তা। তাহলে চলুন এবার একটু ব্যাপনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলি। 


ব্যাপনের গুরুত্ব জনজীবনে অপরিসীম! 


এই যে জানালা খুলে বাইরের হাওয়া গায়ে লাগান, এটা ব্যাপনের কারণে সম্ভব হয়। 


এই যে সারাদেহে বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম মূলমন্ত্র অক্সি-কার্বো বিনিময় ঘটে, এটাও ব্যাপনের কারণে সম্ভব হয়।


তারপর রসুই ঘরে যখন চুলার আগুনে খাবার পুড়ে নাসারন্ধ্রে এসে পোড়া খাবারের সু-গন্ধ লাগে আর আপনি বুঝতে পারেন যে সময় থাকতে রসুই ঘরে না-গেলে সম্পূর্ণ খাবারের পোড়াঞ্জলি দিতে হবে—এই বোধটি ওই ব্যাপনের কারণেই আপনার মনঃআকাশে উদিত হয়। 


আর যেদিন ঘরে সত্যিকার অর্থে সুগন্ধে ভরা সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়, সেদিন আপনি ওই ব্যাপনের কারণেই সেটা টের পান। অবশ্য টের পেলেও কি, না পেলেও কি! মা আপনার ঠিকই সেই সুস্বাদু খাবার এনে আপনার সামনে পরিবেশন করেন—আর আপনি আনন্দের সাথে সেই খাবার গ্রহণ করে আপনার মায়ের সারা বদনজুড়ে খুশির ফোয়ারা বইয়ে দিতে থাকেন।


তারপর আরও আছে। আসলে ভেবে দেখলে উদাহরণের শেষ নেই। যেমন, ঘামের সু-গন্ধ আর আতর-স্প্রের খুশবু এসবের কথায় ব্যাপনের ব্যাপারটা আলাদাভাবে উল্লেখযোগ্য। আপনি নিজে নিজে চিন্তা করে আরও এমন বহু ন্যাচারাল অকারেন্স বের করতে পারেন যেখানে ব্যাপনের ব্যাপারটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 


সর্বশেষ কঠিন পদার্থে ব্যাপনের বাস্তব উদাহরণ পেতে চলে যেতে হবে গ্রামীণ সে-সকল ডোবা কিংবা পুকুরের ঘাটে যেগুলো বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ (বিশেষ করে ফেনা, টোপাফানা অথবা কচুরিপানা) দিয়ে সবসময় ভরা থাকে। আপনি যখন সে-সমস্ত ঘাটে গিয়ে মুখ ধোয়া কিংবা গোসলের অভিপ্রায়ে হাত দিয়ে অর্ধবৃত্তাকারে পুুকুর কিংবা ডোবার খানিকটা অংশ থেকে সে-সব ফেনা সরান, অতঃপর দেখেন যে বারবার সেগুলো ফিরে এসে তাদের আদি জায়গা দখল করছে এবং আপনি আবারও সেগুলো সরাচ্ছেন—এই ঘটনাটি কঠিন পদার্থে (মজা করে বললে) ব্যাপনের কঠিন-ভার্শনের ফলস্বরূপ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পুকরে সাধারণত বাঁশ দিয়ে সীমানা রেখে খানিকটা জায়গা তৈরি করে নেওয়া হয়ে থাকে, যেখানে ফেনাজাতীয় জলজ আগাছা প্রবেশ করতে পারে না। ফলে আরামসে বাড়ির মানুষজন থালা-বাসন পরিষ্করণ, হাত-মুখ ধোয়া ও গোসল-গা সারতে পারেন।


ব্যাপন প্রক্রিয়াটিকে গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য খ্যাতনামা রসায়নবিদ থমাস গ্রাহাম একটি চমৎকার সূত্র দাঁড় করিয়েছিলেন। যা ′গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র′ নামে পরিচিত। বিস্তারিত জানতে গুগলে সন্ধান করতে পারেন।


যাহোক, ব্যাপন ব্যাপারটা কী দারুণ! তাই না? তো—


তো আজকের কথাবার্তা এটুকুই। মজা করে আশা করি বলাই যায় যে লেখাটি খু--ব ছোটো হয়েছে। আর পড়ে পড়ে এতদূর পর্যন্ত আসায় আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। আজ আসি তবে। ভালো থাকবেন। শুভ বিদায়।

Writer: Wasimul Islam Rabbi

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form