📒গালিভার'স ট্রাভেলস বাংলা সংক্ষেপ
♦♦♦দ্রুত পড়ে সহজে যেন কাহিনি সংক্ষেপ বুঝতে পারো সেই জন্যই অনুবাদ করে দেয়ার চেষ্টা করি।
But চেষ্টা করবে English Summary পড়ার।
জোনাথন সুইফটের চেয়ে গালিভার আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। আমরা অনেকেই জানি না গালিভার জোনাথন সুইফটের কল্পিত একটি চরিত্র।
বইটি ১৭২৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৭৩৫ সালে বইটির সংস্করণ করা হয়। এই উপন্যাসে সুইফট মানব চরিত্রকে ব্যঙ্গ করেছেন এবং সাহিত্যের প্রচলিত ভ্রমণবৃত্তান্ত ধারাটির প্যারোডি করেছেন। গালিভার'স ট্রাভেলস সুইফটের সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা। এটিকে ইংরেজি সাহিত্যের একটি ধ্রুপদি গ্রন্থ মনে করা হয়। পরবর্তীকালে এই উপন্যাস অবলম্বনে একাধিক নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল।
জোনাথন সুইফট "গালিভারের ভ্রমণকাহিনী" একখানি মজার বই এবং বইটিতে তিনি গালিভারের চারটি ভ্রমণকাহিনী লিপিবদ্ধ করেন।
Part I: A Voyage to Lilliput.
Part II: A Voyage to Brobdingnag.
Part III: A Voyage to Laputa, Balnibarbi, Luggnagg, Glubbdubdrib and Japan.
Part IV: A Voyage to the Land of the Houyhnhnms.(হুইনিমস)
ভ্রমণকাহিনীর প্রথমটি হলো :
★লিলিপুটের দেশেঃএই লিলিপুটের দেশে পড়েই আমরা গালিভারের আশ্চর্য ভ্রমণের কথা জানতে পারি। গোটা বিশ্বের শিশুদের কাছে লিলিপুটের দেশ একটি মজার দেশ। দৈবক্রমে গালিভার সেই দেশে গিয়ে আশ্চর্যজনক নানা ঘটনার সম্মুখীন হন। সেসব ঘটনাই লিলিপুটের আখ্যানে জোনাথন সুইফট লিখেছেন।
গালিভার দ্বিতীয় ভ্রমণ করেন ব্রবডিংনাগ, তৃতীয় ভ্রমণ করেন জাপানসহ চারটি জায়গা এবং চতুর্থ ভ্রমণ করেন হুইনিম রাজ্য। তবে আমাদের কাছে বেশি পরিচিত গালিভারের লিলিপুটের দেশের কাহিনীটি। এ কাহিনী যেমন মজার, তেমনি আশ্চর্যজনক। জোনাথন সুইফট সুন্দর করে সহজ-সরল ভাষায় কাহিনী বর্ণনা করেছেন। লিলিপুটের দেশে উত্তম পুরুষে লেখা। প্রথম পরিচ্ছদে গালিভার নিজের পরিচয় ও পারিবারিক পরিচয় তুলে ধরেন। গালিভার ছিলেন জাহাজের ডাক্তার। এ কারণেই তাকে পূর্ব ও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ করতে হয়। তার চাকরি ছিল এ্যান্টেলপ জাহাজে। জাহাজটি তখন দক্ষিণ সাগরে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ব্রিস্টল থেকে জাহাজটি ছাড়ে।
জাহাজ কিছুদিন চলার পর প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে। গালিভার গাধাবোট নামিয়ে তাতে চড়ে। কিন্তু গাধাবোট ডুবে গেলে গালিভার সাঁতরাতে সাঁতরাতে এক সময় মাটিরতলা খুঁজে পায়। পরে পাড়ে উঠে সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটতে থাকে। শরীর ছিল পরিশ্রান্ত। তাই গালিভার এক সময় গভীর ঘুমে অবচেতন হয়। ঘুম থেকে জেগে উঠে সে বুঝতে পারে তার দেহ সরু সরু বন্ধনীতে আবদ্ধ। তার চারপাশে কোলাহল। কারা যেন কথা বলছে। কথাগুলো দুর্বোধ্য। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখতে পান তার বাম পা ও বুকের উপর দিয়ে মানবসন্তান হাঁটছে, যাদের উচ্চতা ৬ ইঞ্চির বেশি নয়। তাদের হাতে তীর-ধনুক। তারা কেউ কেউ গালিভারের শরীরে বল্লম মারে। কিন্তু শরীরে চামড়ার জামা থাকায় শরীরে বিদ্ধ করতে পারে না। এর পরের ঘটনা আরো অপূর্ব। ঐ ৬ ইঞ্চির মানুষগুলো একটি মঞ্চ তৈরি করে সভা করে। গালিভার সম্পর্কে বক্তৃতা দেয়। এক পর্যায়ে তাকে খাবার হিসেবে অসংখ্য জীবজন্তুর মাংস দেয়া হয়। ওগুলো এতো ছোট যে, গালিভার এক গ্রাসে দু'তিনটে খেয়ে ফেলে। পানি দেয়া হয় দু'টো পিপের। যা গড়িয়ে গড়িয়ে আনা হয়। গালিভারের খাওয়া দেখে ওরা তার বুকের উপর নাচতে থাকে। এ পর্যায়ে গালিভারের খবর সম্রাটের কাছে পৌঁছে। সম্রাট গাড়ি পাঠিয়ে গালিভারকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। জোনাথন সুইফট তাকে আনার ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করেছেন :গাড়িটা যেখানে গিয়ে থামে দেখি সেখানে এক প্রাচীন মন্দির রাজ্যের বৃহত্তম দালান হিসেবে এর খুব নাম। কয়েক বছর আগে এখানে এক অস্বাভাবিক খুন হওয়ায় লোকে কি খেয়ালে একে অভিশপ্ত হিসেবে গণ্য করে আসছে এবং সেই থেকে কেবল সভা-সমিতির কাজেই একে খোলা রাখা হয়েছে। যতো আসবাব-অলঙ্কার ছিল সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই অট্টালিকায় এখন আমার বাসস্থান ঠিক করা হলো। উত্তরমুখী বিশাল ফটকটি প্রায় ৪ ফুট চওড়া। এর মধ্যে আমি অনায়াসে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে যাই। তোরণের দু'পাশে মাটি থেকে ইঞ্চি ছয়েকের মতো উঁচু দু'টো ছোট ছোট জানলা। বাঁদিকের জানলার ভেতর সম্রাটের কর্মকাররা চার কুড়ি এগারোটা শেকল সেঁধিয়ে দিয়েছিল। শেকলগুলো ইউরোপের মহিলাদের হাতঘড়ির চেইনের মতো লম্বা। এখন সেগুলো ছত্রিশটা তালার সাহায্যে আমার বাঁ পায়ের সঙ্গে লাগানো হয়। এই দালানের সামনের বড় রাস্তার ওপারে ফুট বিশেক তফাতে ছিল এক মিনার, তা হবেই তো কম করেও পাঁচ ফুট উঁচু। আমাকে দেখার জন্য সম্রাট তাঁর সভার প্রধান আমাত্যবর্গ নিয়ে এর ওপর আরোহণ করেন। আমি অবশ্য তাদের দেখতে পাইনি, এসব কথা পরে শুনি। বাতাসের আগে খবর রটে গিয়েছিল। হিসেব করে দেখা যায় এক লাখেরও বেশি বাসিন্দা আমাকে দেখতে হাজির হয়েছে এবং কড়া প্রহরার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমার বিশ্বাস, বিভিন্ন সময় মই দিয়ে আমার শরীরে চড়া লোকের সংখ্যা দশ হাজারের কম হবে না। শীঘ্রই এর ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং ঘোষণা করা হয় আদেশ লঙ্ঘনকারীকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। কারিগররা যখন দেখে যে, আমার পক্ষে আর শেকল ছেঁড়া সম্ভব নয়, তখন তারা আমার শরীরের সমস্ত বাঁধন কেটে ফেলে। ফলে এখন আমি উঠে দাঁড়াতে পারি, যদিও মুখে ফুটে উঠে জীবনের চরম বিতৃষ্ণা। আমাকে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে জনগণের যে বিপুল বিস্ময় ও হৈ হৈ রৈ রৈ - সে কথা বলা নিষ্প্রয়োজন। আমার বাঁ পায়ের শেকলটা গজ দুই লম্বা। এর ফলে আমি যে শুধু স্বাধীনভাবে সামনে-পিছে অর্ধবৃত্তের আকারে হাঁটতে পারি তাই নয়, তোরণের চার ইঞ্চি ভেতরে বাঁধা থাকায় দালানের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়েও থাকা যায়।
ঐ ৬ ইঞ্চির কম লম্বা লোকগুলোই লিলিপুট। আর তাদের দেশটির নাম তাই লিলিপুটের দেশ। লিলিপুটের দেশে গালিভারের জীবনে নানা ঘটনা ঘটে। ঘটনাগুলো এতো মজাদার যে, গোটা বিশ্বে লিলিপুটের দেশে গালিভার এক সময় অবশ্য পাঠ্য হয়ে উঠে। পৃথিবীর প্রায় সকল ভাষায় গালিভারের কাহিনী অনূদিত হয়। প্রায় ৪০০ বছর ধরে জোনাথন সুইফটের লেখা গালিভারের ভ্রমণকাহিনী ছোটদের কাছে সমানভাবে আদৃত। লিলিপুটদের দেশ থেকে গালিভার এক সময় ফিরে আসেন নিজ দেশে। দেশে কাহিনীটি জোনাথন সুইফট বর্ণনা করেছেন এভাবে—
মাসখানেকের মধ্যে সব কিছু প্রস্তুত হয়ে গেলে আমি বিদায় নেবার জন্য মহারাজের অনুমতি চেয়ে পাঠাই। সম্রাট স্বয়ং তাঁর পরিবারবর্গসহ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসেন; সম্রাটের হাতে চুমো খাবো বলে আমি শুয়ে পড়ি। তিনি খুবই সৌজন্যের সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেন। একইভাবে মহারানী ও যুবক রাজপুত্ররাও আমাকে কৃতার্থ করেন। মহারাজ পঞ্চাশটা থলের প্রত্যেকটিতে দুইশো টুকরো স্প্রাগ ভরে আমাকে উপহার দেন; সেইসঙ্গে তাঁর প্রমাণসই একখানা ছবি। ছবি যেন কুঁচকে না যায় সেজন্য আমি তত্ক্ষণাত্ তা দস্তানার মধ্যে পুরে রেখে দিই। যাক, আমার বিদায় অনুষ্ঠান এতোই আড়ম্বরপূর্ণ হয় যে, তার খুঁটিনাটি বর্ণনায় এই মুহূর্তে পাঠক শুধু বিরক্তই হবেন।
একশো মরা ষাঁড়, তিনশো ভেড়া, সমপরিমাণ মদ ও রুটি এবং চারশো বাবুর্চি তাড়াহুড়ো করে যতটুকু মাংস রাঁধতে পারে সেই পরিমাণ মাংস আমার নৌকায় ভরা হয়। ছয়টা গাভী এবং দু'টো বলদ ও সেইসঙ্গে যতো পারা যায় জ্যান্ত ভেড়াভেড়ী নৌকোয় তুলে নিই; উদ্দেশ্য- দেশে গিয়ে ওদের বংশ রক্ষা করবো। যথেষ্ট পরিমাণ খড় ও এক ব্যাগ দানাও সঙ্গে নিই, জাহাজে ওদের খেতে দেবো। আর মহাফুর্তিতে একডজন স্থানীয় বাসিন্দাও তুলে নিই; কিন্তু সম্রাট তা কিছুতেই অনুমোদন করেননি। উপরন্তু আমার পকেটগুলোয় বহুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করান এবং আমাকে পাছে অপ্রস্তুত হতে হয় এজন্য মহারাজ এমন নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন যে, কোনো প্রজা স্বেচ্ছায় রাজি হলে কিংবা সঙ্গে যাবার জন্য বায়না ধরলেও আমি তাকে নিতে পারবো না।
লিলিপুটদের সাহায্য নিয়ে জোনাথন সুইফট তৈরি করেন ছোট কিন্তু মজবুদ একটি নৌকা। বিদায়ের সময় সম্রাট,রাজপরিবারের সদস্য এবং নগরবাসি সবাই একসাথে তাকে বিদায় জানাতে আসে। ছোট নৌকাটি নিয়ে জোনাথন সুইফট ভেসে পরেন সাগরে। একটি জাহাজ তকে উদ্ধর করে এবং লেখক বাড়ি পৌছাতে পারেন তাদর সাহায্যে।কিন্তু দুমাসের বেশি বসে থাকতে পারেননি লেখক। কাহিনীর দ্বিতীয় ভাগেও ঝড়ের কবলে পরে জোনাথন সুইফটের জাহাজ। জন-মানবহিন একটি দ্বিপে ফেঁসে যান লেখক। কিন্ত এবারর কাহিনী উল্টো। লেখক নিজে লিলিপুট এই দ্বিপে।
উল্লেখ্য, তার দ্বিতীয় ভ্রমণকাহিনীটির নাম 'ব্রবডিংনাগ'। এই কাহিনীটি প্রথম কাহিনীটির ঠিক উল্টো। অর্থাত্ ঐ দেশে গালিভার নিজে লিলিপুটদের মতো।
ধন্যবাদ