HIV (Human Immune Virus) ভাইরাসের তিনটা বিশেষত্ব আছে, যা HIVকে তুলনামূলক শক্তিশালী অনাক্রম্যতা(Immunity) প্রতিরোধী বানিয়েছে। যেই কারণে HIV সংক্রমণে মৃত্যু নিশ্চিত। ওষুধ দ্বারা মৃত্যুর কাল কিছুটা দেরীতে করা যায়, মাত্র কয়েক বছর বেশি বাঁচতে পারে। কিন্তু এ জীবনকালও অনেক দুর্বিষহ এবং মৃত্যু হয় বহু রোগকষ্টে। কারণ কি?
HIV'র নাম বা এর দ্বারা সংঘটিত রোগের নামেই উত্তর আছে। AIDS এর পূর্ণরূপ Acquired Immunodeficiency Syndrome। অর্থাৎ অর্জিত প্রতিরক্ষার অভাবজনিত লক্ষন। অর্জিত প্রতিরক্ষা কি? তৃতীয় প্রতিরক্ষা স্তর(সর্বশেষ স্তর) দু'ভাগে বিভক্ত। সহজাত ও অর্জিত প্রতিরক্ষা। সহজাত প্রতিরক্ষা জন্ম থেকেই অর্থাৎ প্রাকৃতিক, জিনগত প্রতিরক্ষা তন্ত্রের বিষয়সমূহ ও মাতৃদেহ হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি। অন্যদিকে অর্জিত প্রতিরক্ষা জন্মের পর থেকে জীবাণুর(অ্যান্টিজেন) বিরুদ্ধে অনাক্রম্যতা বা ভ্যাক্সিন গ্রহণের ফলে তৈরি হয়। আর অর্জিত প্রতিরক্ষায় যেসব কোষ ব্যবহৃত হয়, তারই গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকার HIV আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলে অর্জিত প্রতিরক্ষা তন্ত্রের ক্ষতি হয় ও মানবদেহে এর অভাবজনিত লক্ষন প্রকাশ পায়। ফলে একদিকে HIV অর্জিত প্রতিরক্ষা তন্ত্র ধ্বংস করতে থাকে, অন্যদিকে আরো অনেক ধরনের রোগজীবাণু শরীরে আক্রমণ করে, নিজের সংখ্যাবৃদ্ধি করে, আরো আক্রমণ ঘটাতে থাকে। অর্জিত প্রতিরক্ষা তন্ত্র HIV'র আক্রমণে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত, ফলে অর্জিত প্রতিরক্ষার কোষসমূহ একসময় যথাসাধ্য চেষ্টা করেও এ অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারে না। বিষয়টি সন্ত্রাসবাদ বেড়ে গেলে যা হয়, তার মতো। একদিকে এক প্রকার সন্ত্রাসগোষ্ঠী সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা অফিসিয়ালদের মেরে ফেলে, বাকি সন্ত্রাসগোষ্ঠী পুরো দেশ লুঠে খায়। একসময় এভাবে পুলিশ, আর্মির সংখ্যা এতই কমে যাবে বিপর্যয় আটকানো আর সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় ওষুধ অনেকটা বিদেশি সাহায্যের মতো কিন্তু দেশের কাঠামোই ভেঙে পড়লে আর তো কিছু করার থাকে না। Vital Organসমূহের Failure ঘটতে থাকলে রোগীর মৃত্যু ঘটে। অনাক্রম্যতার এই পতন ঘটানো, HIV'র একটা বিশেষত্ব। কিন্তু কেন HIV প্রতিরক্ষা তন্ত্রের কোষসমূহ আক্রমণ করে? এর উত্তর ভাইরাসের জীবনচক্রে আছে। যেকোনো ভাইরাস, তার জীবনের লক্ষন কেবল Host cell অর্থাৎ পোষক কোষে প্রকাশ করে। পোষক কোষ কি হবে তা Receptor site'র উপর নির্ভরশীল। ভাইরাস যেকোনো কোষই আক্রমণ করে না। আমরা জানি, কোষঝিল্লিতে বিভিন্ন প্রোটিন, লিপোপ্রোটিন, ফসফোলিপিড বাইলেয়ার আর গ্লাইকোক্যালিক্স থাকে, আমরা কোষঝিল্লির মৌলিক গঠন হতে তা জানি। বিশেষ প্রোটিন (এক্ষেত্রে CD4 ও CCR5/CXCR4) রিসেপ্টর সাইট হিসেবে কাজ করে, যে কোষঝিল্লির গাত্রে(সব প্রতিরক্ষা কোষ না; Helper T-cell, Macrophage ও Dendritic cell) এ বিশেষ প্রোটিন থাকবে, সেই কোষই ভাইরাস আক্রমণ করবে। Viral Spike Protein, Receptor Site এর সাথে সংযুক্ত হয়। অতঃপর বংশগতীয় বস্তু (DNA/RNA) পোষক কোষে অনুপ্রবেশ করে।
HIV একটা Retroviridae গোত্রের RNA Virus। Retrovirusসমূহ Reverse Transcription-এর(Reverse Transcriptase এনজাইম ব্যবহৃত হয়, যা HIV RNA দ্বারা উৎপাদন করা হয় ট্রান্সলেশন দ্বারা) মাধ্যমে RNA হতে DNA উৎপাদন করে। HIV'র পোষক কোষের ভেতর DNA উৎপন্ন হবার পর তা পোষক কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে ও পোষক কোষের ক্রোমোজমস্থ DNA'র সাথে একীভূত হয়ে যায়। তারপর পোষক কোষের উপাদানসমূহ ব্যবহার করেই পরপর Transcription ও Translation ঘটে। Viral অঙ্গাণুসমূহ উৎপন্ন হয়।(Lysogenic cycle) এভাবে একপর্যায়ে Viral Genome পোষক কোষের DNA হতে পৃথক হয়ে Lytic cycle-এ অংশগ্রহণ করে। পুরো সময়কালটা ভাইরাসের সুপ্তিকাল। ফলে ভাইরাসকে এ সময়কাল শনাক্তকরণ সম্ভব হয় না। HIV'র প্রতি Life cycle-এ এভাবে অনেক ভাইরাস উৎপন্ন হয়। এভাবে প্রতিরক্ষা তন্ত্রকে ফাঁকি দিয়ে প্রচুর সংখ্যাবৃদ্ধি HIV'র আরেকটা বিশেষত্ব।
তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব ভাইরাসটির Mutation speed। HIV খুব দ্রুত Mutate হয়, অর্থাৎ এর RNA'র পরিবর্তন ঘটে খুব দ্রুত। ফলে এর Membrane-Protein সমূহও পরিবর্তিত হয়। বিষয়টি শুধু প্রতিরক্ষা তন্ত্রই না ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রেও অনেক চ্যালেঞ্জিং। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় স্মৃতি কোষের (রূপান্তরিত B-cell ও Cytotoxic T-cell) ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগে সংক্রমিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে Response খুব দ্রুত ও শক্তিশালী হয়, স্মৃতি কোষগুলোর কারণে। এটি Secondary Response নামে পরিচিত। কিন্তু দ্রুত মিউটেশনের ফলে ভাইরাসের মেমব্রেনপ্রোটিন বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর মানে কখনো কখনো সব শুরু থেকেই করতে হয়, অর্থাৎ Primary Response ঘটে। এভাবে প্রতিরক্ষা তন্ত্রের এই গৌণ সাড়াদান, ভ্যাক্সিন অকার্যকর হয়ে ওঠে।
(ছবিটি উইকিপিডিয়া হতে সংগৃহীত)
Writer: Swagata Mazumder