বর্তমানে দেশের প্রায় সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শহর ও গ্রামে স্নাতক পর্যায়ের নতুন-পুরোনো প্রায় সব কলেজেই ইংরেজি বিভাগ আছে। প্রতি বছর এই বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। একটু খুঁজলেই দেশের বড়, মাঝারি, ছোট সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই ইংরেজি পড়া কাউকে না কাউকে কর্মরত পাওয়া যাবে।
ইংরেজি না জেনে কোনো ডিগ্রি বা ভালো চাকরি পাওয়া এখন একেবারেই অসম্ভব। তাই মানুষ ইংরেজি বিভাগগুলোকে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, বেশ সমীহ করে। বিভাগ হিসেবে এক শ বছর ধরে ইংরেজি তার গুরুত্ব, জনপ্রিয়তা ও সামাজিক অবস্থান ধরে রেখেছে। ইংরেজি বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে মূলত ইংরেজি ভাষায় রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও ভাষাবিদ্যা পড়ানো হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এসবের পাশাপাশি সাহিত্যতত্ত্ব ও ইংরেজি ভাষা শেখানোর তত্ত্ব, নীতি ও পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়। হাল আমলে অবশ্য ইংরেজির নিজস্ব জগতের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের পরিচিতি, ইতিহাস, দর্শন, নৃবিজ্ঞান, সংস্কৃতি অধ্যয়ন, লৈঙ্গিক রাজনীতি, মিডিয়া ও চলচ্চিত্রসহ নানান বিচিত্র বিষয় এই বিভাগের সিলেবাসের অংশ।
**কেন ইংরেজীতে অনার্স করবেন?**
যেহেতু ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে পরিচিত, তাই মোটামুটি পৃথিবীর সকল ভাষার সাহিত্যেরই ইংরেজি অনুবাদ সহজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব কাজের মানসম্পন্ন অনুবাদ যদি করা সম্ভব হয়, তবে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্মান অনেক বেড়ে যাবে। এখন কথা হচ্ছে সাহিত্য নিয়েই বা উচ্চশিক্ষা নেবেন কেন।
যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন: বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে ব্যবসা বাণিজ্য গুলো এখন পুরোপুরি বৈশি^ক হয়ে উঠছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষের সাথে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির ফলেও আমরা অনেক বেশি আধুনিক হওয়ার কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করেছে। আর বাণিজ্যিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। আর যোগাযোগ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে আমাদেরকে ইংরেজীতে পারদর্শী হতেই হবে। আর এ জন্য ইংরেজীতে অনার্স করার বিকল্প নেই।
প্রয়াস, বলা ও লেখার শক্তি অর্জনে: চাকুরী ক্ষেত্রে নিয়োগ কর্তারা এমন কাউকে চান যারা পরিষ্কার ও সংক্ষিপ্ত ভাবে বার্তা প্রদান করতে পারেন। সাধারণত যারা ইংরেজীতে অনার্স করেন তারা ক্লাসের আলোচনা ও লিখিত এসাইনমেন্টের মাধ্যমে এই সকল প্রয়াসের সবচেয়ে কার্যকর কৌশল গুলো শিখতে পারেন।
**ইংরেজি অনার্সে কি কি কোর্স পড়ানো হয়**
ইংরেজি অনার্স পর্যায়ে মূলত ইংরেজি ভাষায় রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও ভাষাবিদ্যা পড়ানো হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এসবের পাশাপাশি সাহিত্যতত্ত্ব ও ইংরেজি ভাষা শেখানোর তত্ত্ব, নীতি ও পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়। অবশ্য ইংরেজির নিজস্ব জগতের বাইরেও বাংলা সাহিত্যের পরিচিতি, ইতিহাস, দর্শন, নৃবিজ্ঞান, সংস্কৃতি অধ্যয়ন, লৈঙ্গিক রাজনীতি, মিডিয়া ও চলচ্চিত্রসহ নানান বিচিত্র বিষয় এই বিভাগের সিলেবাসের অংশ।
**কোথায় চাকুরী পেতে পারেন?**
আধুনিকতার এই যুগে ইংরেজীর গুরুত্ব খুব বেশি। বিশেষ করে ভালো কোন চাকুরী পেতে হলে ইংরেজী জানতেই হবে। ইংরেজীতে অনার্স শেষ করে যে কেউ যে কোন স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। পাশাপাশি মাষ্টার্স শেষ করে কলেজের অধ্যাপক হিসেবেও যোগদান করতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানীতে বড় বড় পদে চাকুরীর বহু সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে সরকারী চাকুরীতে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবেও যোগদান করা যেতে পারে।
সেই শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে ‘ইংরেজিতে অনার্স’ বা ‘ইংরেজিতে এমএ’—এই কথাগুলো বেশ সমীহের সঙ্গে উচ্চারণ করা হয়। ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে তাই চাকরির বাজারেও বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এই বিভাগে পড়ে ঠিক কত ধরনের ক্যারিয়ার গঠন করা যায় তার হিসাব কষা মুশকিল।
আপনি ইংরেজিতে অনার্স করার পর অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মগুলোতে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবেও কাজ করতে পারেন। অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মগুলোয় আপনি মার্কেটিং বা পাবলিক রিলেশান্স বিভাগেও সহজেই কাজ পেতে পারেন, যদি আপনার এদিকে কাজ করার আগ্রহ থাকে।
ইংরেজি পড়ে প্রতি বছর একটা বড় সংখ্যার শিক্ষার্থী স্নাতক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রতিবার বিসিএস পরীক্ষার কঠিন ধাপগুলো সফলভাবে পার হয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি পাওয়াদের একটা বড় অংশ আসে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি বিভাগগুলো থেকে। ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগও থাকে প্রচণ্ড। পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা বিপণন প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে ইংরেজি পড়া স্নাতকদের আলাদা কদর। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্স কাজ বা অনুবাদেও আজকাল এই বিষয়ে শিক্ষিতরা সফল পেশাজীবন গড়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।
**যেসব সেক্টরে ইংরেজি অনার্স পড়ে জব পাওয়া সম্ভব তা হলো:**
**১. বি সি এস**
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরকারী চাকরি হলো বিসিএস। ইংরেজি পড়ে আপনি ১৪ সাধারণ, ১টা প্রফেশনাল, ১টি টেকনিক্যাল
ক্যাডার আবেদন করার সুযোগ পাবেন। আপনার যদি প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে তাহলে, প্রথম বর্ষথেকে
বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিন।
**২. বেসরকারি চাকুরি**
ইংরেজিতে অনার্স করার পর চাকুরির আরেকটি সেক্টর হলে বেসরকারি চাকরি। কর্পোরেট থেকে শুরু করে ব্যাংকিং সকল সেক্টরে
ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স করার পর চাকরি করা সম্ভব।
**৩. শিক্ষকতা**
ইংরেজিতে অনার্স করার পর টিচিং প্রফেশন হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। স্কুল বা কলেজের টিচার হিসেবে আপনি আপনার চাকরি জীবন
শুরু করতে পারেন। ইংরেজি পড়ানোর জন্য প্রায় সব স্কুল বা কলেজে এমন টিচার খুঁজে হয়, যারা ইংরেজিতে অনার্স করেছে। কারণ,
তাদের ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা থাকে।
এছাড়া, প্রাইভেট টিউশনি কিংবা কোচিং সেন্টারে ইংরেজি পড়ানোর মাধ্যমেও আপনি আয়-রোজগার করতে পারবেন।
**৩. কনটেন্ট রাইটিং**
কনটেন্ট রাইটিং করার জন্য, ইংরেজি অনার্স করা ছাত্র-ছাত্রীদের খোঁজা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে কনটেন্ট রাইটার এর
প্রয়োজন হয় এবং তারা এমন ব্যক্তি খুঁজে যারা ইংরেজিতে এক্সপার্ট। ইংরেজিতে অনার্স করার পাশাপাশি আপনার যদি রাইটিং স্কিল
ভালো থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে কনটেন্ট রাইটিং চাকরি করতে পারবেন।
**৪. দোভাষী চাকরি**
বিভিন্ন সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ও কন্সট্রাকশন কোম্পানি, দূতাবাস, ফাইভ স্টার হোটেল, এনজিও,
আন্তর্জাতিক সংস্থা, ভ্রমন গাইড ইত্যাদি জায়গাতে দোভাষী হিসাবে চাকরির সুযোগ থাকে।
এই ধরণের চাকরির বেতন: ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
**৫. মার্কেটিং এবং এডভার্টাইজিং**
এখন মার্কেটিং এবং এডভার্টাইজিং সবই ইংরেজিতে করা হয়। কারণ, মানুষ বাংলা ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষাকে সহজ বলে মনে করে।
আপনি যদি ইংরেজিতে এক্সপার্ট হন তাহলে, আপনি মার্কেটিং এন্ড এডভার্টাইজিং খুব ভালো করে করতে পারবেন। মার্কেটিং ও
এডভারটাইজিং করার জন্য আপনার পাবলিক স্পিকিং এন্ড প্রেজেন্টেশন স্কিল ভালো থাকতে হবে।
**৬. পাবলিক রিলেশন ম্যানেজমেন্ট**
বর্তমানে পাবলিক রিলেশন ম্যানেজমেন্ট জবের অনেক ডিমান্ড। আর এই জব করার জন্য ইংরেজিতে যে ব্যক্তি দক্ষ সেই ব্যক্তিকে
নেওয়া হয়। পাবলিক রিলেশন ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আপনাকে ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে। আপনার কথা মানুষকে বুঝিয়ে
বলতে হবে। সে কারণে আপনার ইংরেজি স্পিকিং ভালো হতে হবে।
**৭. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং**
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক মানুষই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসা করে থাকে
এবং এই ব্যবসা ম্যানেজ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার প্রয়োজন হয়।
**▶ সেরা ৫টি ফেসবুক মার্কেটিং ফ্রি কোর্স।**
যারা ইংরেজিতে দক্ষ তাদেরকে এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কাজ দেওয়া হয়। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোডাক্ট ইনফর্মেশন
এবং অন্যান্য বিষয় ইংরেজিতে দেওয়া হয়। সুতরাং, আপনি যদি ইংরেজিতে দক্ষ হন তাহলে, এই কাজটি করতে পারেন।
**৮. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট**
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য সচরাচর এমন ব্যক্তি খোঁজা হয় যারা খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারে। ইভেন্ট ম্যানেজার জন্য অনেক
সময় ক্লায়েন্টদের বুঝাতে হয় বিভিন্ন জিনিসের ব্যাপারে এবং সেই জন্য ইংরেজির প্রয়োজন পড়ে।
যারা ইংরেজিতে দক্ষ তাদেরকে এই কাজে নিয়োগ করা হয়। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আপনার অ্যাডিশনাল স্কিল হিসেবে
প্রেজেন্টেশন স্কিলস থাকতে হবে এবং পাবলিক স্পিকিং স্কিল থাকতে হবে।
চা করি ছা ড়া আর কি কি উপায়ে টা কা ইনকা ম করা যা বে?
ধরুন আপনি ইংরেজিতে অনার্স করলেন। কিন্তু, আপনি চাকরি পাচ্ছেন না, বা করতে চান না। তাহলে, আপনি কি করবেন? চাকরি ছাড়া
আরো অনেক উপায় ইংরেজি অনার্স করার পর টাকা ইনকাম করা সম্ভব। আপনি ঘরে বসে খুব সহজে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
ইংরেজিতে অনার্স পড়ার ভবিষ্যৎ কি? এই প্রশ্নের সবচেয়ে সুন্দর উত্তর হলো, আপনি আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে ঘরে
বসে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
চাকরি ছাড়া যেসব কাজ করে টাকা ইনকাম করা সম্ভব ইংরেজি অনার্স করে,
▶ Freelancing (Freelancer app, Fiverr app, Upward app, etc.)
▶ English home tutor
▶ Online English Course
▶ Blog Writing
▶ Video editing
▶ Part-time content writer
▶ Book Writing (Author)
▶ Language Translation
▶ Online Consultation
▶ YouTube Content Maker
▶ Social Media Marketing
অতএব, চাকরি না করতে চাইলে আপনি খুব সহজে এই কাজ গুলো করতে পারবেন এবং এই কাজগুলো করতে বেশি শ্রম বা সময়ের
প্রয়োজন হয় না।