টেসারেক্ট
আকিব হাসান শিহাব
১.
প্রতিদিনের চেয়ে এক চুল ও পার্থক্যবিহীন দিন গেল না। যাকে এক কথায় বললে বোধয় বলা হত চরম হতাশার সাথে একটুকরো বিষাদ মিশ্রিত একটা দিন।
"Depression getting heavier on me"
টায়ার্ড লাগছে খুব। ভাত খেয়ে ঘুমানো ছাড়া আর উপায় কি!! কিন্তু সে ঘুমের দেখা যে নাই। উলটো দুশ্চিন্তায় চাপা পড়েছি। দিন দিন পড়ালেখার বাজে অবস্থা হচ্ছে। প্রোকাস্টিনেশন আমার পড়াশোনাকে গিলে খাচ্ছে। আজ থেকেই ভালোভাবে শুরু করবো এখন যায় ঘুমাই। ঘুমানোর জন্য প্রিয় জায়গা ওই যে যেখানে সব সুখ, শান্তি পাওয়া যায় যেখানে কোনো দুশ্চিন্তা আমাi ঘিরে ফেলতে পারে না, সামনে দেখা যায় সেই সোফা। কিন্তু এই আরামের ফলে পিঠের দিকটা ব্যাথা করে উঠে ইদানিং। আম্মু কত করেই না বলে " যে জিনিস যার জন্য বানানো হয়েছে সেই কাজেই ব্যবহার করার জ্ঞান টুকুও আমাকে দিতে হবে, সব কপাল"। নাহ আমার এখানেই ঘুমানো লাগবে। শুয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। অনলাইনে গিয়ে দেখি অনেকেই মেসেজ দিল ধুর আর ভালো লাগে নাহ অনলাইনের এই মিথ্যা অভিনয়।
রিপ্লাই দেওয়ার প্যারাই মেসেজ আর সিন করা হইল নাহ। পছন্দের গান শুনতে শুনতে ঘুমানোর মজাই আলাদা। অরিজিৎ এর প্রথম কম্পোজ করা গান 'Riha' শুনছি -এ যেন আমার জন্যই লেখা। লিরিক্স এক কথায় অসাধারণ। গানে মধ্যে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে দিতে গভীর ঘুমে আটকে পড়ছি। ঘড়িতে বাজে 3.09PM।
চিন্তার ঘুম!!!!
২.
ঘুম থেকে উঠে চারপাশ খেয়াল করে দেখি!! আজকে চারিদিকের আলোর ছড়াছড়ি একটু বেশিই। চোখ কচলানো শেষে চশমাটা পড়লাম। আহ!! দেরি হয়েগেছে। শশব্যস্ত হয়ে নাস্তাটা করে নিয়ে আম্মুকে "আসতেছি" বলে হরিণের মত কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিই। আমার কলেজ যাওয়ার আগে ব্যাগ গোছানোর ঝামেলাই পড়া লাগে না। কারনটা খুব সিম্পল ফিসিক্স প্রেমিকের কাছে এই একটা বই যথেষ্ট। তার উপর আজ ফিসিক্স স্পেশাল ক্লাস। কলেজে ঢুকেই আমার প্রথম কাজ হল তাকে খোজা। কি হলো!! আজ সে নাই। শুরুতেই মনটা খারাপ করতে চাচ্ছি নাহ কিন্তু কেমন জানি শূন্যতা কাজ করছে। সচরাচর সে আমার পাশেই বসত। কয়েকদিন ধরে আমার পাশে আর বসছেনা। কারনটা আন্দাজ করা মোটেই কঠিন কোনো কাজ নয়। তার প্রিয় মানুষের নিশ্চয় নিষেধজ্ঞা আছে। সে অসুস্থ নাকি বিপদে পড়ছে সেটা ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ল " আরে, ওর প্রিয়মানুষের ইউনিভার্সিটিতে আজ গোল্ডেন জুবলী। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিশ্চয় ঘুরতে গেছে।" আমার মলীন সাদামাটা চেহারা দেখে, চয়ন তানভীর তাদের প্রিয় মানুষের সাথে বসা বিসর্জন দিয়ে আমার পাশে বসতে আসছে। হ্যাংলা, হাস্যজ্বল ছেলেটা চয়ন।আর অই ভদ্র ছেলেটা তানভীর। আমার সবচেয়ে কাছের দুইজন বন্ধু। এখনো আমার মন উতালপাতাল করছে। আমি আছি এক অন্য দুনিয়ার ভাবনায় ক্লাস কখন শুরু হলো কি হচ্ছে ক্লাসে সেটার কোনো খবরই নাই।
ক্লাসের পরিবেশ হটাৎ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সবার চেহরা দেখি আমার দিকে। আজাদ স্যার শিহাব বলে উচ্চস্বরে ডাকাতে এমন অবস্থা।
দাঁড়িয়ে দ্রুত রেসপন্স করলাম। এই মূহুর্তে আমার হার্ট বিটের গ্রাফ আঁকলে সেটা হত সব চেয়ে খাড়া।
"কিরে শিহাব, মনোযোগ নাই দেখি আজকের ক্লাসে? আজ যে ফিসিক্স স্পেশাল ক্লাস। তুমি যে নিশ্চুপ হয়ে আছো। তোমার তো হাজারটা প্রশ্ন থাকে।"
আমতা করতে করতে কোনো রকমে মাথা নেড়ে বললাম,"আজ কোনো প্রশ্ন নেই,স্যার।" কোন টপিক নিয়েই বা আলোচনা হচ্ছে সেটার খবরই আমার নেই।
দাঁড়ানো অবস্থায় আমার চোখ গেল ডিজিটাল স্ক্রিনে। দেখলাম সব ফিজিক্স এর ইকুয়েশনে ভরা ।শ্রোডিঙ্গার ইকুয়েশন,আইন্সটাইনের ফিল্ড ইকুয়েশন,জেনেরাল রিলেটিভিটির ফরমুলা,স্টান্ডার্ড এলিমেন্টেরি পার্টিকেল এর চার্ট এক কথায় ফিজিক্স এর সব সুন্দর বিষয়বস্তু স্ক্রিনে ভাসতেছে। স্ক্রিনের নিচের দিকে দেখি ব্ল্যাকহোল,ওয়ার্মহোলের এর মত মহাবিশ্বের কিছু বিষ্ময়কর বস্তুর 3D মডেল। May be,স্যার এগুলার ভিজুয়াল দিবে আমদেরকে। স্ক্রিন দেখে আন্দাজ করার চেষ্টা করি যে স্যার আসলেই কি নিয়ে কুয়েশ্চন করতে পারে। কিন্তু না! স্যার আমাকে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করল। আমি এই মহাবিশ্বকে কিভাবে দেখি মানেহ এত সুন্দর প্যাটার্ন,বিলিয়িন ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সি গ্রহ নক্ষত্র তার উপর গুগুলপ্লেক্স পসিবিলিটিস এইগুলার কারণ কি?এর সম্পর্কে আমার মতামত কি।
যাক প্রানে জল এলো। উনি কেবল মাত্র আমার এই সম্পর্কে ধারনা জিজ্ঞাসা করলেন। আর অন্যদিকে সবাই বোকার মত ডিজিটাল বুক খুলে বসে আছে যাতে স্যার প্রশ্ন করার সাথে সাথেই উত্তর খুজে নিতে পারে। বাহ এটাই আসল শিক্ষা।।
প্রশ্নটা বাস্তবিকই আমার ফেবারে ছিল।। মহাবিশ্ব নিয়ে আমি আমার প্রিয় চিন্তাভাবনা "Theory of Randomness" এর ব্যাখ্যা শুরু করলাম আর সবাই মনোযোগ দিয়ে আমার ব্যাখ্যা শুনছে ইভেন স্যারও ভীষণ মনোযোগ দিয়ে আমার ব্যাখা শুনছে। আমার এক্সপ্লেনেশন শেষে স্যার আমার দিকে হতবাক হইয়ে তাকিয়ে আছে। ক্লাসের বাকি স্টুডেন্টদের দেখে বুঝলাম অনেকেরই এইটা হজম হয়নি। আসলে হজম না হওয়ারই কথা। প্রশ্ন পর্ব এখনো শেষ হই নি।।
ভ্রু কুচকিয়ে আজাদ স্যার জিজ্ঞেস করলেন" দেখি উয়ার্মহোল কি বল?"
মাসুম পিছন থেকে আমাকে হেল্প করার চেষ্টা করল, আমি বললাম,"Cool man প্রশ্ন এখনো আমার ফেবারে।"
"ওয়ার্মহোল হল এমন এক বস্তু যেইটা স্পেস টাইমের চাঁদরকে বাকিয়ে দেই আর লং ডিস্টেন্স কে শর্ট ডিস্টেন্স এ রুপান্তরিত করে।
স্যার ধরুন আপনি একটা কাগজ নিলেন আর সে কাগজের কিছুটা দূরে দুইটা কলম দিয়ে ফুটো করলেন এখন আপনি চাইলে অসীম সংখ্যক উপায়ে একটা ফোটা থেকে আরেকটা ফোটায় যেতো পারবেন।" আমি স্যারকে জিজ্ঞাসা করলাম, " স্যার সব চেয়ে ইজিএস্ট ওয়ে কিহ হবে?" স্যার বলল Just a straight line goes through those points."
সবাই স্যারের সাথে একমত হল। পরে আমি স্যারকে বললাম,"স্যার আপনি যদি কাগজটিকে বাকিয়ে দুইটা পয়েন্টকে একত্রিত করেন তাহলে এইটাইকি সব চেয়ে শর্টেস্ট ওয়ে হবে নাহ? এইটাই ওয়ার্মহোলের কাজ স্পেস টাইমের চাদরকে বাকিয়ে দেওয়া।" স্পেশাল ক্লাস আর হল না বাকি ক্লাস এই আলোচনা করতে করতে শেষ।
ক্লাস শেষে সবাই আমাকে নিয়ে আলোচনা করছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। আর আমি মনে মনে ভাবছি," ইশ আজ ও থাকলে কতই না ইম্প্রেস হত!"
ক্লাস শেষে হেটে হেটেই বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কিন্তু এখনো উদাসীন। তার সাথে তার প্রিয় মানুষকে একসঙ্গে কল্পনা করলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। ব্যাপারটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার পছন্দের মানুষ কে কিছুতেই ও দূরে ঠেলে দিতে পারেনা। তারও নিশ্চয় পছন্দ আছে। আমি জোর করে আমার প্রতি তাকে ইম্প্রেস করাতে পারি না। সত্যি বলতে ওর পছন্দের মানুষের চরিত্র ভালো তার উপর ভীষণ মেধাবী। নিজেকে কনসোল করতে করতে গিয়ে আরো ক্ষেপে গেলাম। রাগের ছুটে রাস্তায় পড়ে থাকা এক পাথরে খুব জোরে পা দিয়ে আঘাত করি। হুচট খেয়ে আমি নিজেই পড়ে গেলাম। রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় একটা ছোট বস্তুর দিকে নজর গেল। বস্তুটি দেখতে রেন্ডম শেইপের। এই রকম পাথর আমি আমার জীবনে দেখি নি। পাথরটা তুলে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য আবার হাটা শুরু করলাম।।
ঘরে এসে মোজা খুলতে গিয়ে দেখি রক্তের দাগ। বৃদ্ধা আঙ্গুল ছিড়ে গেছে হুচট খাওয়াতে। কিন্তু এক ফোটাও ব্যাথাও অনুভুত হল না। ওর খেয়ালে এতটাই নিমজ্জিত ছিলাম যে বিন্দুমাত্র ব্যাথাও অনুভব হইল নাহ। পরিশেষে আরেকটা বাজে দিন।
রিফ্রেশ হয়ে পাথরটির ছবি গুগল লেন্সে সার্চ দি। অবাক ব্যাপার এইরকম পাথরের কোনো ছবিই নাই গুগল ডাটাবেইযে। হঠাৎ মনে পড়লো ৩ দিন আগে নিউজে দেখাচ্ছিল একটা মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীর আঘাত হাতে কিন্তু সেটা পৃথিবীর বায়ুমন্ডল পৌঁছাতেই টুকরো টুকরো হইয়ে উত্তরের সমুদ্র পড়ে। আশ্চর্যজনক হইল বস্তুটি ১২ আলোকবর্ষ দূর থেকে আমাদের গ্রহে খুব অল্প সময়ে আসে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখলেন এটার যে বেগ ছিল সে বেগ দিয়ে এত দ্রুত এই বিশাল দুরত্ব অতিক্রম করা অসম্ভব। তাঁরা ব্যাপারটা উয়ার্মহোল দিয়ে ব্যাখা করার চেষ্টা করছেন। এইজন্য হইত স্যার আমাকে উয়ার্মহোল নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন।
তাইলে পাথরটা কি অই মহাজাগতিক বস্তুর অংশ! যায় হোক এইটা স্পেশাল একটা জিনিস এইভাবে এইটাকে পাথর বলে অপমান না করে নাম দিলাম টেসারেক্ট।।
চয়ন তানভীর এর সাথে এই টেসারেক্ট নিয়ে কিছুক্ষণ চ্যাট হইল। কিন্তু যার জন্য চ্যাটিং এ আসা, যার জন্য এত অপেক্ষা তার কোনো খবরই নাই। She is quite busy for me। ভাত খাওয়া সেরে ঘুমোতে গেলাম বাজে তখন 11:21PM।
আরিজিৎ এর "Tum hi ho" গান বাজিয়ে দিলাম। ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম!!!
৩.
হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়। নতুন অদ্ভুদ এক রুমে নিজেকে আবিষ্কার করি। দেখে মনে হচ্ছে কোনো মেয়ের রুম। পাশে একটি ডেস্ক তার মধ্যে একটি খাতা আর কলম ছিল। কলমটি ভিন্ন রকমের সাধারনের চেয়ে একটু মোটা ও খাটো। তারপাশে একটি ফুলদানি। যতটুক দেখে বুঝলাম ফুলগুলো নকল। রুমটা বেশ পরিপাটি করা আর বিশেষ মোহনীয় একটি ঘ্রান প্রতিনিয়ত আমাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। তারপরই হটাৎ দেখি পাশে একটি ছবি টাঙনো। আরে, এটা তো ওর ছবি। ওর ছবি এখানে কেন? কেমনে সম্ভব। আমি কোথায়?
কিছু বুঝে উঠার আগেই এক ভদ্রমহিলা আমার সামনের দিকে লাঠি দিয়ে খোচা দিতে থাকলো। আমি হতচকিত হয়ে গেলাম। গলার স্বর বড় করে, তীক্ষ্ণ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি।
"কে তুমি? এখানে কেমনে এলে? জেনী!!! জেনী"
"আসলে আমি কোথায়? আপনিই বা কে? আমার বাসায়…..এ আমার রুম! কি হচ্ছে এসব?"
চেচামেচি শুনে দেখি দেখি এক মেয়ে রুমে প্রবেশ করল। আরে ও এখানে কেমনে? আর জেনী টা কে?
খানিকটা অবাক হয়ে মেয়েটি বলল"আপনি!!!আপনি এখানে কেমনে এলেন?"
এইবার ভদ্রমহিলা যেন আরো রেগে গেলেন।
" জেনী তোমার কাজ এটা নিশ্চয়! তাকে তুমিই ঢুকিয়েছ? উত্তর দাও জেনী"
"আআ..আমি! না না ইনি এখানে কিভাবে আসলেন আমি জানিনা। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া মিউসিক এলবামের জনপ্রিয় সিংগার এর মত লাগছে। হ্যাঁ ইনিই তো সেই সিংগার।"
আমার মাথায় কিচ্ছু ডুকছে নাহ।।
ও দেখি একটা অদ্ভুত ভিভাইস ভদ্রমহিলার কাছে নিয়ে গেল। ডিভাইসে কি যেন দেখালো। দেখে মনে হইল ভদ্রমহিলা কিছুটা শান্ত হলেন যিনি সম্পর্কে মেয়েটির মা। এতক্ষনে খেয়াল করলাম আমাকে খোচা দেওয়া লাঠির মত জিনিসটা আসলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। কিন্তু আমার কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে। আমি এখানে কি করে এলাম? আমি তো জেগেই আছি। এইতো হাত পা ঠিকই নড়া চড়া করতে পারছি।
এইটা কি ও নাকি অন্য কেউ!
মেয়েটা আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছিল।
আমি মেয়েটার উদ্দেশ্যে বলি"তুমি এখানে কেমন করে এলে? আমার বাসায়?"
"আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে!! এটা আমার বাসা, মিস্টার প্রত্যয়"
তার মুখে কেমন জানি আনন্দের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেলাম।
"প্রত্যয়? আমি ত শিহাব। আমি প্রত্যয় নামে কেউ নই। আর প্রত্যয়টা বা কে?"
জেনী আমার কাছে নিয়ে এল। ভিডিওতে নিজেকে গান গাইতে দেখা আর পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখা একই কথা। কিভাবে সম্ভব? আমি গান গাইছি। মাথায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমি কি স্বপ্নে আছি? নাহ স্বপ্ন না। নিজেকে শান্ত করলাম। খনিক পরেই ডিভাইস থেকে ঠুং করে একটা শব্দ হল বুঝতে পারলাম নোটিফিকেশন টাইপ কিছু।
"প্রত্যয় ইয়ামির ইজ অন লাইভ" ক্লিক করে দেখি যে প্রত্য্য ইয়ামিরে লাইভ শো হচ্ছে।।
এটা দেখে এইবার জেনী অবাক হয়ে গেল। আমাদের দুজনেরই ভ্যাবাচেকা হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। আমার চোখ কপালে নিজেকে দেখছি অন্য রুপে।।তারপর জেনী শান্ত হয়ে মেনে নিল আমি শিহাব একই চেহারার দুজন মানুষ। "দুঃখিত এতক্ষণ আপনাকে অন্য কেউ ভেবে অযাচিত কথ বলেছি। আমি জেনী ফার্নানডেজ"
জেনীর মা ততক্ষনে সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে নিল। সব যেন ভুতুরে কান্ড। রুমের লাইট ২ সেকেন্ড নিভে গিয়ে হটাৎ আবার ভীষণ আলোকিত হয়ে পরপরই নিভে গেল। তিনি ভীতু ও সাহসী ভাবে এসে আমাকে বলল এক্ষুনি ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নাহলে সিকিউরিটি অফিসে ইনফর্ম করবে। আমি এসব ঝামেলা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ওনাকে রিকুয়েষ্ট করি। "আমাকে কিছুক্ষন সময় দিন। আমি একটু ভেবে দেখি আসলে ব্যাপারটা কি। আমি নিজেই জানি নাহ আপনার বাড়িতে আমি কখন ও কিভাবে আসছি!আমি কিছু মনে করতে পারছি নাহ দয়া করে একটু সবকিছু মনে করার সময় দিন।" খুব কষ্টে উনাকে রাজি করালাম এবং আমাকে গেস্ট রুমের পথ দেখিয়ে দিলেন।
বুঝতে দেরি হলো নাহ যে গেস্ট রুম মানেই জেলখানা কত্ত সিকুরিটি প্রসেস!
তারপর কি হচ্ছে তা মাথা খাটিয়ে বের করার চেষ্টা শুরু করি। আস্তে আস্তে ধুলো জমা ছবির আলব্যাম যেমন ধুলি মুছে দিলে খুব স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠে ঠিক তেমনি কি হয়েছিল সেটাও ফুটে উঠতে থাকে।
ফ্ল্যাশব্যাকের মত মনে পড়তে লাগলো আমি ঘুমের মধ্যে অনেকবার নিজের চোখ খুলছি আর বন্ধ করছি। আর প্রতিবার চোখ খোলার সাথে সাথেই অন্য রিয়েলটিতে চলে যাই। মনে হচ্ছে যেন অনন্তকাল ধরে অসীম জায়গায় ভ্রমণ করছি। ব্যাপারটা নিছক কল্পনার আর হাস্যকর মনে হলেও আমারও খটকা লেগেছে। আমার নিজের উপর ঠিকই কন্ট্রোল আছে। আমি কোনো স্বপ্নও দেখছিনা। ঘুমের মধ্যে আমি প্রতিবার চোখ খোলার সাথে সাথেই নিজেকে অন্য রিয়েলেটি, অন্য পরিবেশ, অন্য রুমে,মাঝে মাঝে খোলা আকাশে নিজেকে অবিষ্কার করি আর শেষ বার চোখ খোলার সময় জেনির রুমে ওর(এই রিয়েলিটিতে জেনী) ছবি দেখি। তার ছবি দেখে আর চোখ বন্ধ করতে পারি নি। ছবিটা দেখে চোখের পাতা একত্রে আর একত্রিত হই নি। কারন যে মনের গভীরে আঁচর কেটে যায় তার উপস্থিতি, তার ঘ্রান, তার ছুয়ে যাওয়া বস্তু, ছবি, তার পোশাক এমনকি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় গুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া যায়না। আমি বুঝতে পারছি আমি অন্য রিয়েলিটিতে। "হইত ঘুমালে আবার আমি আগের রিয়েলিটি ফিরে যাবো।" কিন্তু নাহ! ঘুম আসেনা। আমাকে তো ফিরে যেতেই হবে আমার রিয়েলিটিতে। সেটা করতে এই আকাশকুশুম কল্পনা নামক সত্যকে জেনি আর তার মা'কে বুঝাতে হবে।
নাহ, অনেক বুঝানোর পরও আমার কথার বিন্দু মাত্র তোয়াক্কা করল না। জেনী অবশ্য একটু আস্থা করেছে আমার উপর। কিন্তু তার মা না মানলে কিছু করার নাই। আন্টি আমাকে এবার খুব জোর গলায় বের হয়ে যেতে বললেন।
কি আর করার বাধ্য হয়ে বের হয়ে গেলাম। এ যেন অসীমে হারিয়ে যাওয়ার মত। বের হয়ে নিজের দুনিয়া আর এই দুনিয়ার পার্থক্য গুলো খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করতে থাকি। যেমন নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে! আশে পাশের মানুষ গুলো আমার থেকে উচ্চতায় খাটো। কিন্তু এসবের চেয়ে আমার বড় মাথা ব্যাথা হলো কিভাবে ফিরে যাবো। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। দুচোখ জলে ভরে উঠে। আমি কি হারিয়ে গেলাম? দুচোখ বন্ধ করে রাখি হটাৎ কাঁধে ভার অনুভব করি। পেছন ফিরে দেখি জেনীর হাত।
"চলুন! ভিতরে।বাইরে যে খুব বৃষ্টি সাথে বজ্রপাত। আসুন!"
আমি বিন্দু মাত্র খেয়াল করি নি বাইরে এত ঝর বৃষ্টি। বুঝতে বাকি রইলোনা জেনী আন্টিকে মানিয়ে নিয়েছে। তার মুচকি হাসি দিয়ে তা স্পষ্ট বুঝা গেল। হঠাৎ সবকিছু ভুলে গিয়ে জেনীর হাসির দিকে মনোযোগ গেল এই যে সেই হাসি যার তাড়নায় আমার অসীম যন্ত্রণা। তারপর আবার গায়ে ঝাকুনি লাগে।
"কি হলো? চলুন!"
আমাকে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে আসতে বলল। ডাইনিং টেবিলে কয়েক রকমের ফল দেখলাম। কিন্তু একটা ফলও ঠিক চিনে উঠতে পারলাম না। আমাকে খেতে দিল। আমি কয়েক টুকরো খেলাম, বেশ সুস্বাধু ছিল। খাওয়ার পর আন্টিকে বুঝানোর চেষ্টা করি আমাকে ঘুমাতে হবে। কিন্তু সেটা জেনীর রুমে সেই সোফায়। আন্টি আবারও ভ্রু কুচকালেন। তার একটাই জবাব "না"। যাক আর বারাবারি করি নাই। গেস্ট রুমে চলে গেলাম। রুমে বসে আছি এমন সময় জেনী এল।
"আপনি এত অল্ড ফ্যাশনের কাপড় পড়েছেন কেন? এগুলো বেশ পুরোনো! ধরুন এগুলো পড়ে নিন"
কাপড় গুলো নিয়ে পড়ে ফেলি। কাপড় চেঞ্জ করতে গিয়ে দেখি সেই টেসেরেক্টটা। লক্ষ্য করে দেখেলাম এটা শেইপ পাল্টেছে। একটু ডিসর্ডার মনে হইল। মনের ভুল হইত। নতুন কাপড়ে বোতাম অস্থিত্ব নাই। একটা আস্ত মেগনেটিক স্ট্রিপ আছে শুধু। জেনী আর আন্টি আমাকে বারবার চেক দিয়ে যাচ্ছে। যাক ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে উঠে খুব হতাস হয়ে যাই। এখনো আটকে আছি এই রিয়েলিটিতে। ফ্রেশ হতে না হতেই জেনী নাস্তা নিয়ে হাজির।
" আমি ত ভাবছি আপনি উধাও হয়ে গেছেন!ঘুম হই নি রাতে?নাকি আপনার বলা কথাগুলো শব্দের ছল ছিল?"
আমি তার দিকে তাকিয়ে আর চোখ সরাতে পারছিনা। কিছুক্ষন আগের হতাশা ক্ষনিকের মধ্যেই উধাও হয়ে গেল। Such a beautiful result of randomness।
"কোথায় হারিয়ে গেলেন? ঘুম হয়েছে তো!? "
"শব্দের খেলা আমার অপছন্দের। ঘুম ভালোই হয়েছে। কিন্তু ফিরে যেতে পারলাম না। আর আমাকে আপনি করে না বললে হই নাহ! আমি আপনিতে অভ্যস্ত না"
"অভ্যস্ত না মানে?"
"না কিছু না!"
জেনী চলে গেলে আমিও আবার হতাশায় ডুবে গেলাম। এর মাঝেই আন্টি আমাকে কয়েকবার উঁকি দিয়ে গেলেন। এরপর জেনী উঁকি দিতে আসলে তাকে আমি ডাক দিই।
"আমি এখন কোথায় আছি বলা যেতে পারে? কোন জায়গা এটা বা কোন দেশ?ব্যাপারটা Wired, but আমি বলছি আপনাকে"
হালকা খাওয়া দাওয়া করে
জেনী আমাকে ওর রুমে আমন্ত্রন জানালো। ওর রুমে যায় আর
ওদের ভাষা,সংস্কৃতি,দেশ ইত্যাদি নিয়ে জানতে থাকি।
তার টেবিলের পাশ থেকে একটা ম্যাপ নিল। সাধারন কাগজের ম্যাপ না। একটি ডিজিটাল ইন্টারেক্টিভ ম্যাপ। জুম আউট, জুম ইন করে দেখা যায় যেটাতে সম্পুর্ন গ্যালাক্সির ম্যাপ আছে।
আমি কয়েক মিনিট খেয়াল করে হিসাব কষে দেখলাম আমার রুমের সোফার কোর্ডিনেট আর জেনীর রুমের সোফার কোর্ডিনেট একই জায়গা বরাবর।
জেনী আমাকে বলল-
"আপনার বাংলা বলা অনেক সুন্দর। ভারী মিষ্টি করে কথা বলেন আপনি, আমাকে শেখাতে পারবেন?"
এতক্ষনে খেয়াল করলাম জেনীর বাংলা বলার একসেন্ট ভিন্ন।
" তোমার বাংলায় কথা বলা তো বেশ ভালোই, তোমাদের মাতৃভাষা কি?"
"ইংলিশ। কিন্তু ইন্টারনেশনাল ভাষা বাংলা।"
শুনে একটু গর্ববোধ হল আমার।
এইভাবে জেনী আমাকে তাদের সম্পর্কে কত কিছু বলতে থাকে। কিন্তু আমি ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসা অমনোযোগী ছাত্রের মত কল্পনায় হারিয়ে যাই। জেনীর কথা বলা, তার চোখের পলক ফেলা, তীক্ষ্ণ কন্ঠ আমাকে বিমোহিত করে। আমি বার বার ওর মায়াবী চেহারায় হারিয়ে যাই। খুবই ভালো সময় কেটেছে। আন্টির সাথেও একটু একটু ভাব হতে থাকে। একটু একটু ভালো চোখে দেখতে থাকে আমাকে। তাদের Thanks জানিয়ে ঘুমাতে যাই। যদি আবার আমার রিয়েলিটিতে ফিরে যেতে পারি।
৩য় দিন সকালে ঘুম ভাঙলো সাথে সাথেই পাশ থেকে জেনী গুডমর্নিং বলল। কিন্তু আমি ফিরে যেতে পারলাম না আমার রিয়েলিটিতে। কিন্তু ওই জেনীর মায়াবী চোখ দেখে আমার সকল হতাশা দুমড়ে মুচড়ে যায়। এইবারো কেটে গেলো। নাস্তা করে ভাবতে থাকি কিভাবে আর কখন আই এইখানে এলাম? কেনই বা ফিরে যেতে পারছিনা? কেনই বা এইভাবে এক রিয়েলিটি থেকে অন্য রিয়েলিটিতে ঘুরপাক খাচ্ছি?
পকেট থেকে টেসেরেক্টটা বের করে দেখি টেসারেক্টের শেইপ রেন্ডমলি আরো চেইঞ্জ হচ্ছে। আগের বার চেঞ্জটা লক্ষ্যনীয় ছিল তখন নিছক কল্পনা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
ভাবতে থাকি কোনো এই টেসারেক্টটা এসবের জন্য দায়ী নইত!
ফিজিক্স দিয়ে মিলানোর চেষ্টা করছি এবং কিছুটা আচ করতে পারলাম। জেনিকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম "হয়ত কোনো ভাবে এই পাথরটা স্পেস টাইম কন্টিনিয়াম বা চাঁদরকে বাকিয়ে দিচ্ছে ঠিক ওয়ার্মহোলের মত। টেসারেক্টটা এই মহাবিশ্বের সেই সব জায়গার সাথে কানেক্টেড যেগুলার সাথে আমার সোফার স্পেসের কোর্ডিনেটের সাথে মিল আছে।"
জেনী কিছুটা হলেও ব্যাপারটা ধরতে পারল। এইভাবে ৩য় দিন ও কেটে গেল। রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা করছি আমি এই রিয়েলিটিতে কিছু রেখে যেতে পারব কিনা! এইটা ভেবে নিজের পুরনো সেই পোশাক পরে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।
৪র্থ দিন সকাল বেলা জেনী রুমে ঢুকে হাসিমাখা মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
"নজরুলের সকাল বেলার পাখি নাকি তুমি? এ কাক ভোরে তুমি এখানে এসে হাজির!"
একটু হেসে জেনী "তুমি অদৃশ্য হলে কিনা তা দেখতে।"
কারো হাসিতে প্রেমে পড়া যাকে বলে সেই প্রেমে পড়াকে আজ খুব কাছ থেকে দেখলাম। আমি যে নিজের পরিচয়টা পর্যন্ত হারিয়ে ফেললাম সেটা নিয়ে এখন ডিপ্রেশন না পড়ে বরং জেনীর জন্য এই সময়টুকু উপভোগ করতে ইচ্ছা করছে। একটা আশা কোনো না কোনো রেন্ডম রাতে আবার অদৃশ্য হয়ে যাব শুধু প্রাথর্না করছি সেই রেন্ডম রাত যেন বেশি দিন না হয়। বেশিদিন কাছে থাকলে মায়া বাড়ে, সম্পর্কের রঙ গাঢ় হয় আর সে মায়া কাটানো আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
কিন্তু জেনীর মায়াবী চাহনি থেকে নিজেকে দূরে রাখা যেন অসম্ভব ব্যাপার। তার প্রতি আকর্ষন যেন ব্ল্যাকহোলের চেয়েও তীব্র।
জেনীর সাথে সারাদিন ইঞ্জয় করলাম। আমাকে তাদের কিছু গেইমের সাথেও পরিচয় করিয়ে দে। জেনীর সাথে কয়েকটা গেইমও ট্রাই করছি। গেইমস গুলো এক কথায় অসাধারণ ছিল। গেইমে হারা যে কত আনন্দের তা আজ বুঝলাম। জেনী জিতে গেলে যে চাঞ্চল্যকর, রোমাঞ্চকর অঙ্গভঙ্গি করে তা আমাকে মোহিত করে। বিকেল বেলা আমাকে বাহিরে যাওয়ার কথা বলে। বের হয়ে কথা বলতে বলতে আমরা হাটতে থাকি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাদের এই সভ্যতা জ্ঞান বিজ্ঞানের দিক দিয়ে অনেক উন্নত। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,"মানুষজন কম কেন এখানে?
"এসব জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড প্ল্যান্ট, প্রচুর অক্সিজেন তৈরি করে আর প্রচুর কার্বনডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে সাথে বাতাসের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস সমুহ শোষণ করে নে। আমরা আজ থেকে অনেক বছর আগেই স্পেস জয় করেছি। বিভিন্ন অবাসযোগ্য গ্রহকে বাসযোগ্য করছি মানুষ এখন সম্পুর্ন গ্যালাক্সি জুড়ে থাকে সেজন্যই মানুষজন কম বলে মনে হচ্ছে।" তার কথা শুনে "ইন্টার্সটেল্লার" মুভির ডায়লগ "Mankind was born on earth but it was never meant to die here." মনে পড়ে গেল। সত্যিই অসাধারণ এবং বিষ্ময়কর।
রাস্তার ধারে একটা গাছ দেখতে পাই। অদ্ভুত সুন্দর ফলের গাছ। ফলগুলো দেখে অপরিচিত মনে হচ্ছে তাই জেনীকে জিজ্ঞাসা করলাম "এইটা কিরকম ফল?"
জেনি বললো, "এইটা আমাদের প্লেনেটের সব চেয়ে সুস্বাদু ফল। কিন্তু ফলের দিকে চেয়ে কোনো লাভ নাই ফলগুলোর নাগাল পাওয়া কঠিন। গাছ উঁচু হওয়ায় আমি ফলগুলা পাড়ার চেষ্টা করিনি।"
"Ok jenni, I should give it a try."
সত্যি বলতে আমি এই প্লেনেটের এভারেজ মানুষের উচ্চতা থেকে কয়েকফুট লম্বা। আর আমার নিজের রিয়েলিটিতে ও প্রায় আমার সমান লম্বা। কিন্তু এখানে জেনী আমার চেয়ে ক্ষানিকটা খাট।
গাছের কাছে গেলাম আর ধুপ করে এক লাফেই আমি অনেক উপরে উঠে গেলাম এবং হেচকা টান দিয়ে কয়েকটা ফল জেনীর জন্য আনলাম। ও আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল "তুমি এত উপরে জাম্প কিভাবে করলে? এটা তো সম্ভব না তোমার কিহ কোনো পাওয়ার আছে নাকি! এলিয়েন? "
" হুম,এলিয়েন। আমি অন্য রিয়েলিটির তাই তোমাদের কাছে আমি এলিয়েন আর তোমরা আমার জন্য এলিয়েন। কি মজার নাহ?"
আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি,"আমার কি এক্সট্রা শক্তি আছে নাকি?"
"আচ্ছা তোমাদের অভিকর্ষ ত্বরণের মান কত?"
"৮.৩"
এইবার আমি বুঝতে পেরেছি কেন আমার শরীর এইখানে হালকা মনে হচ্ছিলো। জেনীকে বুঝালাম "আমাদের প্লেনেটে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান ৯.৮ তাই আমি এখানে এত উপরে লাফ দিতে পারলাম।"
ও হেসে বলল,"তাহলে তো তুমি এখানে সুপারম্যান।"
কথাটা শুনে দুজনেই অট্টহাসি দিলাম। জেনী সাত-পাঁচ না ভেবেই বলল,"এইবার তবে আমাকে কোলে নিয়ে লাফ দাও! আমিও ফলগুলো ছুয়ে দেখব"
"কি বললে? পুরোটাই পাগলামি"
"না না, আমি অই ফলগুলা নিজের হাতে নিতে চাই।" এক প্রকার অস্বস্তির সাথে তাকে কোলে তুলে নিয়ে লাফ দিলাম। এইবার ছোট্ট বাচ্চার মত জেনী হাসি দিল। আর আমি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ ধপাস করে গাছের সাথে আমার মাথায় আঘাত পেলাম। "আরে আরে কোথায় দেখতেছ? নামাও এক্ষুনি আমাকে। দেখি তো মাথায় লেগেছে কিনা?" দেখি মাথা ফেটে রক্ত পড়াতেছে, কিন্তু কোনো ব্যাথা অনুভব হল না। ঘরে এসে জেনী ব্যান্ডেজ করিয়ে দিল। জেনীকে বলছি ব্যাথা নাই তবুও সে মিষ্টি ধমক দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে দিল।
রাতের বেলা জেনীকে বললাম "আমি কি তোমার রুমের সোফায় ঘুমাতে পারি? কারণ আমার সোফার স্পেসের কোর্ডিনেটের সাথে তোমার রুমের সোফার স্পেসের মিল রয়েছে।" জেনী সাথে সাথেই এলাও করে দিল কিন্তু বললো
" মা'কে কনভিন্স কর"
আন্টিকে কনভিন্স করা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে কারণ তার আমার প্রতি বিশ্বাস জমেছে যেটা অল্প কয়েকদিনে হওয়া কঠিন। পরিশেষে, ৪র্থ দিনে এক রুমে আমি আর জেনী। জেনী নিজের বিছানায় আর আমি সোফায়। আমি আমার পুরনো কাপড় পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল হলেও আমি এখনো এখানে আটকে। জেনী আমাকে দেখে মহাখুশি। ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমার হার্ট বেড়ে গেছে। ধুপ ধুপ করছে বুক। যা বুঝলাম জেনী সারারাত জেগে ছিল। বুঝলাম জেনী চায়না যে আমি চলে যাই। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না। ৫ম দিনও কাটলো অনেক ভালো। কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। আগে হতাশা থাকতো আমি কেন আমার রিয়েলিটিতে ফিরে যাচ্ছিনা এই নিয়ে। কিন্তু এখন মন চাইছে এখানেই থেকে যায় জেনীর সাথে।
এইবার রাতে আমি ঘুমানোর ভান ধরি,শুধু ভাবতেছি ঘুমের মধ্যে যদি আবার আমি অন্য রিয়েলিটি চলে যায় তাহলে জেনীকে এতটা নিজের কাছে পাব না। পাব না তার মিষ্টি হাসির দেখা,শিশুসুলভ দুষ্টামি। আমি বন্দী তার মায়াতে। তার চাহনীতে তার স্নেহে, তার মমতায়। এই কয়েকদিনের অনুভূতিকে ভালোবাসায় রূপ দিতে চাই আমি।
তাই স্বার্থপর হয়ে সারারাত জেগে থাকি। সোফা থেকে উঠে জেনীর বিছানার পাশে বসলাম আর তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখছি। এক ফালি আলো তার মুখে আড়াআড়ি ভাবে পড়ছে। তার গোলাপী ঠোঁটের আভায় আমাকে পাগল বানাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কাউকে এত সুন্দর লাগে তা আগে জানতাম না। তাকে দেখলেই বোঝা যায় সেই হলো সৌন্দর্যের সত্যিকারের ডেফিনেশন। সারারাত তাকে এইভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে দেখতে সকালের আলো ফুটলেই আমি আমার সোফায় চলে যায়। এইভাবে ৬ষ্ট,৭ম ও ৮ম দিন কাটলো। এইভাবে প্রতি রাতে আমার ঘুমানোর নাম ঘন্ধ নাই। তার অপরূপ নিথর দেহের সোভায় রাত কখন যে কেটে যায় বোঝা মুস্কিল। এ যেন রিলেটিভিটি, মস্ত বড় রাতকে এক ঘন্টার কম অনুভব হওয়া। সারাদিন তার সাথে আড্ডা ঘুরাঘুরি করেই আমার দিন কাটছে। ৯ম দিন সন্ধ্যায় বায়না করে বসলো একটা গান শুনাইতে। আমি বললাম,"আমি তোমার পছন্দের মানুষ প্রত্যেয়ের গান জানি না। আর আমার গান তোমার পছন্দ হবে না।"
"পছন্দের মানুষ কেন হবে? কেবলমাত্র তার ভয়েসটা ভীষন ভালো লাগে। তোমার ভয়েসটাও প্রত্যয়ের মত। আচ্ছা দেখি গান করো আর কোনো কথা হবে না।"
আর কি করার, আরিজিৎ এর " Humdard" গানটা শুরু করি। গানটা তার বেশ ভালো লেগেছে।আমাকে বললো,"তুমি হিন্দিও জানো। বাহ! তুমি দেখি অনেক ভাষায় দক্ষ।"
গানের লিরিক্স লিখে দিলাম সাথে অর্থটাও বুঝালাম। আর বললাম,"আই এম ডেডিকেটিং ইট টু ইউ"।
আর ও এইটা শুনে ব্লাশ করেছে।
৯ম দিন রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা করছি, আমাকে আমার রিয়েলিটিতে ফিরতেই হবে এখানে জেনী ছাড়া আর কেউ নেই আমার। আমার রিয়েলিটিতে সবাই আমার কাছের মানুষ। ক্ষনিকের সুখের জন্য আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না। তাই ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু, মাথায় কুবুদ্ধি এলো,"লিটের্যালি থিংকিং এভাউট নকটার্নাল ইমিশন!"
ব্রেইনের ডোপামিনের তাড়নায় আই ইন্টেন্ডেড টু ডো রং উইথ হার। কিন্তু পারছিলাম না। আমার পক্ষে এইটা সম্ভব না। তার ঘুমন্ত চেহরা দেখে মাথার সব কুচিন্তা চলে গেল। আমি সোফা ছেড়ে ওর বিছানার পাশে বসে তার মুখে আছড়ে পড়া এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিচ্ছি হঠাৎ জেনী আমাকে জোরে টেনে নিল এন্ড শি কিসড মি এন্ড সেইড "আই এম ইন লাভ উইথ ইউ"। আমি বুঝতে পারলাম সেও ঘুমায়নি এতক্ষন। তার শরীর তখন একপ্রকার ব্ল্যাকহোলের মত কাজ করছে,যেখান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া ইনফিনিটলি ডিফিকাল্ট। মনে হচ্ছে যতক্ষণ নাহ তার ব্ল্যাকহোলে পতিত হচ্ছি আমার শরীর ও মন কোনোটাই শান্ত হবে নাহ। রুমের ক্যামেরা নিয়ে ভয়ে ছিলাম যখন জানতে পারি জেনী ওর রুমের ক্যামেরা অনেক আগেই হ্যাক করে রাখছে তখন উত্তেজনা আরো তীব্র হল। তার মৃদু গোঙানি আমার শরীরের এক বিশেষ অঙ্গের সরল ছন্দিক গতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সময়ের সাথে সে সরল ছন্দিক গতি জটিল ছন্দিক গতিতে রুপ নিল। ব্যাক এন্ড ফর্থ!!ব্যাক এন্ড ফর্থ!!
রেস্ট অফ দা নাইট কিসিং গন ভ্যারি ডিপ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে জেনীর বিছানায় আবিষ্কার করি আর তখন ভাবছি আমি স্বপ্ন দেখি নাই স্বপ্ন হলে কালকে রাতের ঘটনায় স্বপ্নভেঙ্গে যেত।
জেনী মুচকি হাসি দিয়ে গুড মর্নিং জানাল।
সকাল থেকে আমি আবার ডিপ্রেসড হিসাব মিলাতে পারছিলাম না যে কি হচ্ছে।
পকেট থেকে টেসারেক্টটা বের করে দেখি যত আমি এই নতুন রিয়েলিটি দিন কাটাচ্ছি তত টেসারেক্টের শেইপের রেন্ডমনেস ত বাড়ছে। আন্দাজ করতে পারছি কিছুই ঠিক হচ্ছে না। জেনী কনফেস করেছে যে ও আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু এটা শুনে আমি খুশি হওয়ার বিপরীতে আরো ডিপ্রেশনে পড়ে গেলাম।।মনে মনে ভাবলাম," আই ডোন্ট বিলং হেয়ার"। জীবনের এত সুন্দর মূহুর্ত কাটাচ্ছি তাও অন্য রিয়েলিটিতে। জেনীকে দেখলে আমার নিজের রিয়েলিটিতে ফেরার টেন্ডেন্সি কমে যাচ্ছে। ইচ্ছা করছে তার সাথে একটা ইটারনাল লাইফ কাটাতে। নাস্তা করে আমরা বাইরে বের হলাম আর জেনী আমাকে বললো,"এই তুমি এখানে থেকে গেলে সমস্যা কি? আমাদের সাথে থাকবা।।তোমার রিয়েলিটিতে তুমি অনেক দিন ধরে নেই। হয়ত সবাই ভেবে নিয়েছে তুমি সব কিছু ছেড়ে চলে গেছ।"
তারপর আমি বললাম,"আরে বোকা আমি এখনো বেচে আছি আর আমার রিয়েলটিতে তুমি ছাড়া আমার সব কাছের মানুষ আছে। আর আমি যদি এখানে থেকে যায় তাহলে আমার মত দেখতে ২ জন মানুষ একই রিয়েলিটিতে থাকতে পারবে নাহ। তার উপর এইটা যদি অন্য কোনো মহাবিশ্ব হই তাহলে Causality কে ব্রেক করবে। আমার মাস্ট চলে যেতে হবে।"
এইটা শোনার পর জেনীর চেহেরা মলীন হয়ে গেল।
"আমি কাছের কেউ নাহ?"
আমি হতচকিত হয়ে আমতা আমতা করছি।
"থাক! তুমি চলে গেলেও তুমি আমার স্মৃতিতে থাকবে।" এ বলে জেনী খুব দ্রুত হেটে চলে গেল।
পরে জেনীকে সব ফ্যাক্ট বুঝালাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় দেখি আমি আমার পুরোনো টি-শার্ট এর একটা বোতাম নেই
"কিরে বোতাম তো ছিল যখন আমি নিজের রিয়েলিটিতে ঘুমাচ্ছিলাম।" সাথে সাথেই বুঝলাম কেন এতদিন ফিরে যেতে পারলাম না। আমি এই রিয়েলিতে যা এনেছি তা আমাকে আবার নিয়ে যেতে হবে। জেনী আর আন্টিকে জানায়। আন্টি বললো," আমি তোমার চেস্টে হিট করেছিলাম যেদিন তুমি এসেছিলে তখন হয়ত বোতাম পড়ে গেছে কিনা দেখ। "সম্পুর্ন ঘর তছনছ করে খোজাখুজির পর সোফার নিচে এক কোণায় বোতামটা পড়ে আছে দেখি। বোতামটা কোনোভাবে লাগালাম। আর এইবার কেন জানি মনে হচ্ছে ঘুমালে আমি আবার অন্য রিয়েলিটিতে ফিরে যাব। জেনী সব বুঝতে পারছে। আন্টিকে সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ জানালাম আন্টিও অনেকটা ইমোশনাল হয়ে গেল। আর অন্য দিকে জেনীর চোখ শীতের শিশিরের মত ঝলঝল করছে। চোখের পানি আটকে রেখেছে কোনোমতে। আন্টি চলে গেল। আমি জেনিকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলাম কিন্তু জেনি কোনো কিছু না বলেই সরে গেল।
সোফায় ঘুমাতে গিয়ে দেখি জেনী কান্না করছে। সেদিকে না তাকিয়ে আমি ঘুমাতে গেলাম আর জেনী হঠাৎ সোফার উপরে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরল ওর শরীরের পুরোটা আমার স্পর্শে দেন উই কিসড ফর এ লং টাইম।
" আই লাভ ইউ"
আমিও কিছুটা ইমোশনাল হইয়ে,
"কল্পনায় তোমাকে রেখে দিব, দিব না কখনো ফেলে।
ভালো থেকো প্রিয়! ভুলে যেওনা এখুনি চলে গেলে।
চাঁদের মতই তোমার হাসি!
রক্তিম মুখের আভা আমাকে পোড়াবে সারাদিন
শীতল বাতাস হয়ে থেকে যাবে তুমি-
চিরদিন।"
এরপর নিজেকে সামাল দিয়ে সোফায় মাথা রাখলাম। আর জেনী পাশে বসে আমাকে দেখছিল। তখনি হঠাৎ আরিজিৎ এর গান "Hamari Adhuri Kahani" এর লিরিক্সগুলা ভাসছে। চোখ বন্ধ করতেই ঘুম!!কান্নার ঘুম!!!
৪.
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। নিজেকে মাটির ঢিবির উপর আবিষ্কার করি। বুঝলাম নাহ আমি এখানে কেন। আমি আগে কোথায় ছিলাম!
মনে হচ্ছে মাথা পুরোটাই ফাকা। আকাশ মেঘলা, দেখে বুঝা যাচ্ছে এখন গোধুলি। খানিকটা দূরে গেলাম। সামনে দেখি নদী আর তার ওপারে ঘর আছে বলে মনে হচ্ছে। নদীটা তেমন গভীর না-পানি খুব স্বচ্ছ। উপর থেকে নিচের মাটি দেখা যায়। অর্ধেক নদী পার হওয়ার সাথে সাথে দেখি চারিদিক থেকে আমাকে কুমির এসে ঘিরে ধরছে। কুমিরের ভয়ে আমি জোরে জোরে নদীর ওপারে পৌছানোর চেষ্টা করি কিন্তু কুমির অনেক দ্রুতগতিতে আমাকে ধরে ফেলছে। আমি ভয়ে বাচাও বাচাও বলে চিৎকার দিতে থাকি।
একটা কুমির আমার পায়ের কাছাকাছি এসে প্রায় পায়ে কামড় বসাবে এমন সময় আচমকা শো করে তীক্ষ্ণ আওয়াজে একটা তীর লাগলো কুমিরের গায়ে। কে যেন একটার পর একটা তীর ছুড়তে লাগলো আর কুমির সব পালিয়ে গেল। আমার পায়ের রক্তে নদীর পানির কিছুটা অংশ লাল হয়ে গেছে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না। নদীর ওপারে হয়ত কেউ একজন আছে। আমি দ্রুত ওপারে ছুটে গেলাম। আর দেখলাম এক মেয়ে পরনে তার সাদা কাপড় হাতে তীর নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বুঝতে দেরি রইলো না মেয়েটা আমাকে কুমিরের হাত থেকে রক্ষা করেছে। সাদা কাপড়ে মনে হচ্ছে , ওর পোশাক থেকে যেন আলো বের হচ্ছে। কাছে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার মুখ দিয়ে একটাই কথা বের হল "এ ডিভাইন বিউটি"। তার চেহরা দেখে হঠাৎ জেনীর কথা মনে পড়ে গেল। এতক্ষণ পর আমার সব মনে পড়ল। আমি আবার অন্য রিয়েলিটিতে চলে আসছি যেখানে যে মেয়ে আমাকে কুমিরের মুখ থেকে বাচালো তার চেহরা জেনীর মত। নদীর ওপারে যেতেই সে আমার দিকে তীর লক্ষ্য করে জিজ্ঞাসা করল,"কে আপনি?কার পক্ষে আপনি?"
আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।
আমি বললাম আমি কারো পক্ষে না। কিন্তু কি যেন ভেবে ও তীর নামিয়ে ফেললো আর আমাকে তীব্র কণ্ঠে বললো,"আপনি তো বাজে ভাবে আহত হয়েছেন। দ্রুত ঔষধ না লাগালে পা আর থাকবে নাহ। চলেন আমার সাথে"
আমি বললাম আমি ঠিক আছি ব্যাথা নাই। "কিন্তু আমার পায়ের দিকে দেখে সে আমাকে তার কাধে সাপোর্ট দিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেল। পথের মধ্যে তার নাম জিজ্ঞাসা করলাম আর জানতে পারলাম নাম তার "নীর্ঝা খাল্লাম"। ভারি অদ্ভুত নাম। নীর্ঝা ঔষধ লাগিয়ে দিল আর বললো, " আপনার সুস্থ হতে কমপক্ষে ১ সাপ্তাহ লাগবে।" অথচ আমি একদম সুস্থ। কোনো ব্যাথা নাই। জানতে পারলাম নীর্ঝা একজন শল্যচিকিৎসক। একা থাকে। এক যুদ্ধে সে তার মা বাবাকে হারিয়েছে। ঘর,পোশাক দেখে মনে হচ্ছে আমি যেন কোনো এক প্রাচীন সভ্যতায় এসেছি। নীর্ঝাকে ডেকে বললাম,"আমি মোটামুটি সুস্থ সকালে রওনা দিব। আমাকে আবার নদীর ওপারে যেতে হবে। কিন্তু নির্ঝা জানালো "কালকে আমাদের প্রদেশের সাথে উত্তরের এক শক্তিশালী প্রদেশের সাথে যুদ্ধ আছে। এই যুদ্ধে ছোট বড় সবাই অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। আমাদের জেতার সম্ভাবনা খুব কম তবুও আমরা আমাদের প্রাণ দিয়ে লড়ব। ওরা আমাদের রাজ্যে দখল করতে চায়। যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যই আমি নদীর ধারে গিয়েছিলাম। কাল যদি আমরা যুদ্ধে বিজয় লাভ করি তাহলে আপনিও বেচে যাবেন নহলে আপনাকেও আমাদের মত বন্দী হতে হবে।" আমি ভেবে বললাম,"আমার এখানে থাকা একদমই উচিত না,আমাকে এখনই আবার সেই মাটির ঢিবিতে ফিরে যেতে হবে।" নীর্ঝাকে জানানোর পর ও বললো,"এখন সব জন্তুজানোয়ার থাকবে সাথে কুমির তো আছেই। আর আমি আপনাকে ওইখানে পৌঁছে দিয়ে আসতে পারব না কারণ অন্ধকারে আমার তীর কাজ করবে না।"
এইদিকে আমার পথ চেনা নাই তার উপর অন্ধকার। তাই ভাবলাম সকাল হলে আমি নিজেই চলে যাব। রাতে নিস্তব্ধ চারিদিকে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধের আগের নীরবতা। কিছু হাহাকারের পূর্বের নিস্তব্ধতা। ঘুম আসছে না খালি জেনীর কথা মনে পড়ছে। খারাপ চিন্তা আসতে শুরু করল আর তা ভেবে অস্থিরতা আরো বাড়ছে। সকাল হলে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি বাইরে ভীষণ শব্দ। বুঝতে দেরি রইলো না যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আর দেখি ঘরে নীর্ঝা নেই। আমার বিছানার পাশে কিছু পুরোনো কাপড় আর একটা তলোয়ার রাখা আছে। আমি সেগুলার দিকে মনোযোগ না দিয়ে চলে গেলাম নদীর কাছে। আর সেখানে গিয়ে দেখলাম ঘোড়া এবং তলোয়ার নিয়ে এক দল সৈন্য নদী পার হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে ওরা উত্তর প্রদেশ থেকে হামলা করতে এসেছে। বুঝায় যাচ্ছে তারা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলছে।
আমি দ্রুত নীর্ঝার বাড়িতে ফিরে আসি আর চিন্তা করি যদি নীর্ঝার কিছু হয়। আমাকে যে করেই হোক নীর্ঝাকে বাচাতে হবে। যতই আমি নীর্ঝা আর জেনীর কথা ভাবছি ততই আমি ওদের প্রতি দূর্বল হচ্ছি। ঘরে রাখা পোশাক আর তলোয়ার নিয়ে বের হয়ে গেলাম নীর্ঝাকে খুজতে। শুরুতেই আশ্চর্য হয়ে গেলাম যখন দেখি সবাই অনেক খাটো। এভেরেজে ২ ফুট বা এর কম হবে। আর আমি যখন দৌড়াচ্ছি তখন মনে হলো যেন আমি অনেক দ্রুত ছুটছি। নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। হয়ত বা এখানেও অভিকর্ষজ ত্বরণের মান অনেক কম! আর আমার শরীর তাদের চেয়ে বড়। নিজেকে ওদের সাথে কম্পেয়ার করে নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। আর এক্সচেপশনালি নীর্ঝা আমার চেয়ে জাস্ট ১/২ ফুট মত খাটো। যুদ্ধের ময়দানে গেলাম চারদিকে তীর আর হাতিয়ারের ছুড়াছুড়ি। নীর্ঝাকে দেখে আমি তার কাছে ছুটে গেলাম। দেখি একটা তীর তার দিকে ছুটছে আর নীর্ঝাকে বাচাতে গিয়ে তীর আমার কাধে গিয়ে লাগে। আমি নীর্ঝাকে এক পাশে নিয়ে গেলাম আর তাকে বললাম," চলো আমার সাথে চলো। এখানে কেউই বাচবে নাহ। এখান থেকে পালাতে হবে আমাদের।" নীর্ঝা বললো,"পালানোর কোনো রাস্তা নেই সবদিক থেকে ওরা আমাদের ঘিরে ফেলছে।"
আমার কাধে তীর আটকে আছে দেখে নীর্ঝা ভ্রু কুচকালো। তাকে দেখে মনে হল তীর আমার গায়ে না, যেন তার গায়ে লেগেছে। কিন্তু আমার ব্যাথার কোনো হদিস নাই। তীরটা টান মেরে নিয়ে নিলাম। নীর্ঝাকে বললাম,"অস্ত্র, জনবল ছাড়া কিভাবে এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব?"
নীর্ঝা জানালো,"কোনো উপায়েই এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব না। সম্ভব শুধু একটা উপায়ে যেটা এই সময়ে অসম্ভব।" আমি জিজ্ঞাসা করলাম,"কি উপায়?অসম্ভব হোক একবার চেষ্টা করে দেখতেই ত পারি।" নীর্ঝা বললো,"আমরা যদি কোনোভাবে উত্তর প্রদেশের রাজাকে বন্দী বানিয়ে ফেলি, তাহলে এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব।কিন্তু এইটা প্রায় অসম্ভব কাজ। এত সৈনিকের ভিড়ে রাজাকে বন্দী করা অসম্ভব।"
আমি চারপাশে মানুষের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ভাবতেছিলাম যুদ্ধ কতটা ভয়ানক হতে পারে। ক্ষমতা অর্জনের জন্য রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে
এইসব দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম এই যুদ্ধ আমি থামাবই। নীর্ঝা আমাকে তাদের সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করিও দিল। আমার বলিষ্ট দেহ, উচ্ছতা ও শক্তি তাদের তুলনায় অনেক বেশি তাই সেনাপ্রধান আমার প্রতি গুরুত্ব দিল। রাজাকে বন্দী করার কথা জানালাম সেনাপ্রধানকে। আমরা সবাই মিলে প্ল্যান করছিলাম কিভাবে রাজার কাছে পৌছানো যেতে পারে। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সবার সামনে গিয়ে প্ল্যান বলা শুরু করলাম,"দেখুন আমরা যদি এলোপাতাড়ি সৈন্য পাঠায় এই যুদ্ধ কোনোভাবেই জেতা সম্ভব নয়। আমাদের দলে ভাগ হয়ে যেতে হবে। আমার প্ল্যান হল- রাজা যেদিকে আছে সেদিকে আমাদের ৩টা দলে ভাগ হওয়া।
দুই দল আগে যাবে এর কিছুক্ষণ পর ৩য় দল। প্রথমে তিনটা দলই একসাথে সামনে অগ্রসর হবে কিন্তু কিছুক্ষণ পর প্রথম দুইদলের প্রথম ৩ সারি বাদে পেছনের সবাই বামে আর ডানে যাওয়া শুরু করবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বামে আর ডানের দিকে দলে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক সৈন্য থাকে। আর ৩য় দল মাঝবরাবর চলে আসবে। এই দলে অন্য দুই দলের চেয়ে কম সৈন্য থাকবে। কিন্তু এই দলে সব চেয়ে শক্তিশালী সৈনিক থাকতে হবে। শত্রুরা কিছুক্ষণের জন্য আমাদের পরিকল্পনা বুঝতে সক্ষম হবে না। পরে যখন আমাদের বাম আর ডান থেকে আসতে দেখবে তখন ওরাও দুইভাগে ভাগ হইয়ে যাবে। তাদের সর্বোচ্চ সৈন্য বামে আর ডানে আমাদের সৈন্যের সাথে লড়ায় করতে চাইবে। আর ঠিক তখনি মাঝখানের অংশ দ্রুত রাজার দিকে এগোতে থাকবে। যেখানে আমি থাকব সবার সামনে। আমার সাথে থাকবে রাজ্যের সব চেয়ে শক্তিশালী সৈনিকরা। বাম আর ডান দিকের চেয়ে মাঝখানের সৈনিকদের অস্ত্র ও আত্মরক্ষার সরঞ্জাম বেশি থাকবে। কারণ মাঝখানের দলের উপর সম্পুর্ন যুদ্ধের ফলাফল নির্ভর করবে। যুদ্ধের প্রথম সারির কাছে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর মাঝখানের সারির সৈন্যের কাছে শক্তিশালী অস্ত্র থাকবে। যদি আমাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় তাহলে কেউ হার মানবেন না। আমরা যদি আগে থেকেই হার মেনেনি তাহলে এই যুদ্ধের জয় অসম্ভব। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়ে যাবেন। মনে করবেন আপনি হেরে গেলে আপনার পরিবার বন্দী হবে। আপনার মা বোন স্ত্রীর সম্মানহানি হবে।" এই বলে আমি কথা শেষ করলাম। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত।
যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। যুদ্ধের শঙ্খ বেজে উঠলো। নীর্ঝা মাঝখানের দলের সাথে আছে। আমরা উত্তর প্রদেশের রাজার দিকে রওনা দিলাম। পরিকল্পনা ঠিকমতো এগোচ্ছে। শত্রুদেরকে আমাদের জালে ফেলতে পেরেছি। মাঝখানের দল প্রায় রাজার কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু এরই মধ্যে শত্রু দল আমাদের পরিকল্পনা বুঝে ফেলেছে। আমরা আমাদের সমগ্র শক্তি নিয়ে আরো দ্রুত অগ্রসর হতে থাকলাম।
আমাদের একেরপর এক সৈন্য শত্রুর আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। আমি উচ্ছ স্বরে বলছি,"সবাই গোল করে রাজার দিকে অগ্রসর হোন। নিজের সমস্ত শক্তি কাজে লাগান।"
বুঝতে দেরি হলো না আমরা রাজার কাছে পৌছানোর আগেই আমাদের কোনো সৈন্যর অঅস্তিত্ব থাকবে নাহ। আমি বার বার নীর্ঝার দিকে তাকাচ্ছি ওর কিছু হলে আমার এই যুদ্ধ অংশ গ্রহণ পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না। আমাকে যে করেই হোক ওকে বাচাতে হবে। তলোয়ার দিয়ে তীরগুলাকে তার গতিপথ থেকে এমনভাবে বিচ্যুত করছিলাম যে মনে হচ্ছিল যেন মাছি মারছি। আমি অন্য রিয়েলিটির হওয়ায় আমার শক্তি ওদের এভেরেজ একজন মানুষ চেয়ে অনেক গুন বেশি। মাথায় বুদ্ধি এল, এইভাবে জয় লাভ সম্ভব না তার উপর আমাদের সৈন্যও অনেক কম। ভাবলাম,"ঘোড়া থেকে নেমে এই রিয়েলিটির সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়ে গিয়ে রাজার কাছে পৌঁছাতে হবে। রাজার গলাই তলয়ার রাখলেই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে আসবে।" কিন্তু এই কথা ভাবতেই আমার বুক ভারি হয়ে গেল। ভয় আমাকে বাধা দিচ্ছে যদিও আমি ব্যাথা পাচ্ছি না কিন্ত তীর-তলোয়ারের সম্মুখীন আমার মস্তিষ্ক যেন অনেক কঠিন কাজ হিসেবে গ্রহণ করছে। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে সিদ্ধান্ত নিলাম এটাই করব! এটা ছাড়া কোনো উপায় নাই। নীর্ঝাকে আমার আত্মপ্রতিরক্ষার সরঞ্জাম দিয়ে উচু স্বরে বললাম,"নীর্ঝাহ নিজেকে প্রতিরক্ষার জন্য এই সরঞ্জাম রাখ। তোমার কিছু হোক আমি চাই নাহ।
আমি সামনে অগ্রসর হচ্ছি। জয় আমাদেরই হবে।"
নীর্ঝা চিৎকার করে করে আমাকে যায়তে নিষেধ করছে। আমি আমার পুরো উদ্যমে মানসিক ও শারীরিক দুই বল নিয়ে দৌড়ানো শুরু করলাম। এত দ্রুত দৌড়ালাম যে শত্রু তীর নিশানা করার সুযোগ পেল না। আমার সামনে যারা আসছে তারা সবাই আমার ছুরি আর শরীরের আঘাতে লুটিয়ে পড়ছে। চলে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আমি উত্তর প্রদেশের রাজার ঘোড়র উপর লাফ দিলাম। তখনি আমার তলোয়ার রাজার গলার নিচে ধরে ফেললাম। রাজাকে বললাম,"এখনই যুদ্ধ বন্ধ করেন। নাহলে যে ক্ষমতার আপনি স্বপ্ন দেখছেন তা কখনো আপনার হবে না।" রাজা সাথে সাথে শঙ্খ বাজিয়ে তার সৈন্যদের যুদ্ধ বন্ধের সংকেত দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ হল। সবার নজর আমার দিকে। যুদ্ধের মাঠে মূহুর্তের জন্য নীরবতা। আমার শরীরের গঠন তার সাথে শরীর তীরের আঘাতে রক্তাক্ত দেখে সবাই হয়ত ভাবছে আমার কোনো অলৌকিক শক্তি আছে তা নাহলে এত জোরে এত উচুতে লাফ দিবে কে! কিন্তু সে মূহুর্তে এসে আমার জয়-পরাজয় ভাবার চেয়ে মাথায় একটা কথায় আসছিল যে কিভাবে শান্তি আনা যায়!এই যুদ্ধ হতে মুক্তি সম্ভব না। এই যুদ্ধ নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মত চেইন রিয়েকশন করে যাবে। একের পর এক যুদ্ধ চলতেই থাকবে। ক্ষমতার লোভ বড় লোভ।
সবাইকে উদ্দেশ্য করে আমি বলিষ্ট স্বরে যুদ্ধের এই ভয়াবহতা সম্পর্কে জানান দিলাম বললাম,"আপনারা যে যেখানে আছেন চারপাশে দেখুন আর এক মূহুর্তের জন্য ভাবুন
আপনারা রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ নাকি কোনো প্রদেশের প্রজা বা সৈনিক? আপনাদের কত সাথী মাটিতে মৃত ও রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। নিজেকে তাদের জায়গায় ভেবে দেখুন। হয়ত একটা ছুরি বা তীর এসে আপনাকে মাটিতে শুয়ে দিতে পারে। যুদ্ধ কখনো শান্তি বয়ে আনে না। যুদ্ধ সব সময় আমাদের মধ্যে থাকা পশুত্বের জাগরণ ঘটায়। আপনি রাজা আপনিই বলুন, আপনি হয়ত এই যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারবেন কিন্তু কোনো না কোনো যুদ্ধে যদি আপনি যদি ঠিকই হারবেন এইটা অনিবার্য।। তখন আপনার স্ত্রী-সন্তানদের যদি বন্দী বানানো হয় তখন আপনার কেমন লাগবে? যুদ্ধ কখনো শেষ হয় ন। যুদ্ধ সবসময় নতুন যুদ্ধের জন্ম দেয়। মানুষকে ভালোবাসুন ক্ষমতাকে না। আজকে যুদ্ধের পর আপনারা যা হারাবেন তার দায়ভার সম্পূর্ণ আপনাদের প্রতিপক্ষের না! লোভ আপনাদের হারিয়ে দিয়েছে। কেউ কারো শত্রু না সবাই আমরা একই স্রষ্টার অপরুপ সৃষ্টি। অহংকার,হিংসা,প্রতিশোধ ক্ষোভের চোখে না দেখে ভালোবাসার চোখে দেখুন সবাইকে। সাধারণ ভাবে বাচুন আর জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত উপভোগ করুন। কারন জীবন একটাই।"
এই কথা বলে আমি রাজার গলা থেকে তলোয়ার সরিয়ে মাটিতে ফেলে দিলাম। কিন্তু বিকল্প প্ল্যান হিসেবে প্যান্টে লুকানোর ছোট তলয়ার ছিল। যুদ্ধের ময়দানে রিভার্স সাইকোলজির কাজে লাগিয়েছি। আমি জানি আমি অস্ত্র ফেলে দিলে অনেকেই আমার বলা কথা গুলার অর্থ বুঝবে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই একের পর এক হাতিয়ার নিচে ফেলে দে আর সবাই আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। যারা হয়ত বা ফেলতে চাইছে না তারা অন্যজনকে দেখে ফেলে দিচ্ছে। তখনই রাজা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্না করে আমার কাছ থেকে ক্ষমা চাচ্ছিলেন। আমি ওনাকে বললাম," ক্ষমা আপনার প্রজা ও প্রতিপক্ষ দলের মানু্ষের কাছে চান, আমার কাছে না।" রাজা তখন নিজের মাথার মুকুট ফেল দিয়ে আহতদের সেবা শুরু করে। যুদ্ধ থেমে গেল। পেছন থেকে নীর্ঝা আমার দিকে দৌড়ে এসে দ্রুত আমার চিকিৎসা শুরু করে ওর চোখ দেখে মনে হচ্ছে এখনি কান্না করে দিবে। আমাকে তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে গিয়ে এল ঔষধ লাগাইতে। আমার সারা শরীরে তলোয়ারের ঘা সাথে তিনটা তীর। একটা পায়ে একটা কাধে আর একটা পিটে। আমার লজ্জাস্থান ছাড়া সারা শরীরে এক টুকরাও কাপড় নাই। আমাকে ঔষধ লাগানোর সময় মনে হচ্ছিলো কোন ব্যাথায় আমি পাচ্ছি না বরং মনে হলো সব ব্যাথা নীর্ঝায় পাচ্ছে। আমি নীর্ঝার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ভাবছি," নীর্ঝা কি! আমাকে পছন্দ করে ফেলছে। আমার এই অবস্থা দেখে সিম্পেথী দেখাচ্ছে।"
"আপনার মত বোকা মানুষ আমার জীবনে দেখি নি। আপনি চাইলে লুকিয়ে থাকতে পারতেন। কি দরকার ছিল যুদ্ধের ময়দানে আসার?এইটা আমাদের লড়াই ছিল আপনার নাহ!"
"আমার ত আর কিচ্ছু হই নি আমি ত সুস্থ।"
ন্যাকামির সুরে,"নাহ নাহ আপনার কিচ্ছু হই নি হইছে ত আমার! শরীরের অবস্থা দেখছেন? রক্তে ত গা ঢাকা আরও বলেন কিচ্ছু হই নি! ওহ আপনি ত বীরপুরুষ আবার।"
আমার ব্যাথার অনুভব হচ্ছিল না কিন্তু ব্যাপার টা অস্বাভাবিক লাগছে তাই আমি ব্যাথার অভিনয় করি। রাতে নীর্ঝা আমাকে খাবারও খাইয়ে দিল। আমি ঘুমানোর ভান ধরি। দেখি নীর্ঝা আমার পাশে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর দেখি, আমার বিছানায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আমি নীর্ঝাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখছি। নীর্ঝাকে দেখে জেনীর কথা মনে পড়ছে। নীর্ঝার একটা বৈশিষ্ট্য হইল টাফ মেয়ে জেনীর মত অত সরল নাহ। দেখতে দেখতেই আমারও ঘুম চলে আসে। সকালে দেখি দুই প্রদেশের সবাই আমাকে দেখতে আসল। সবার কাছে আমি এক বীর ও শান্তির প্রতীক অথচ আমি জানি আমার মত ভীতু মানুষ হয় না।
যে কিনা এখনো হরর মুভি দেখে ভয় পায় সে এখন বীর।এইখানে এই রিয়েলিটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বীরত্ব দেখালাম। নীর্ঝাদের প্রদেশের রাজা আমাকে আমন্ত্রণ জানাল। আমি নীর্ঝাকে সাথে নিয়ে গেলাম সেখানে। সন্মানের সহিত আমাকে বরণ করল। আমার ২১ বছরের এই জীবনে এত সন্মান আমি আগে কখনো পাইনি।
রাজাকে অনুরোধ করে বললাম,"আমি সাধারণ মানুষের মত থাকতে চাই। রাজ্যের সবাইকে আমাকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে নিষেধ করুন। আর আমাকে অযথা বড় করে যাতে না দেখে এতে আমার এখানে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে।" এইটা বলার পর রাজা আমার কথা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দে। এরপর আমাকে নিয়ে ভীড় বাধলো না। নীর্ঝাকে নিয়ে আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম, ও আমাকে জিজ্ঞাসা করল,"আপনি আমাদের সাধারণ মানুষের উচ্চতা থেকে এত লম্বা কেন?আমাদের রাজ্যে এমন বলিষ্ঠ শরীর এর মানুষ অস্তিত্ব নাই। যুদ্ধে আপনাকে এইভাবে আহত দেখে ভাবি নাই যে আমি আপনাকে বাচাত পারব কিনা। আমার এত বছরের চিকিৎসায় কাউকে এতবাজে ভাবে আহত হয়ে বেঁচে ফিরতে দেখি নি আপনি এর মধ্যে ব্যাতিক্রম। আমি ব্যাতিক্রম ভাবে একটু লম্বা। রাজ্যের সবার চেয়ে লম্বা আমি। কিন্তু আপনি আমার চেয়ে আরো লম্বা।"
আমি বল্ললাম,"আগে তুমি করে বল,তারপর উত্তর দিচ্ছি।"
ও বললো"আচ্ছা,তুমি বললাম, এইবার বলেন।" "এখনো আপনি!"
নীর্ঝাকে একটু নীরব থাকতে বললাম। আমি হিসাব কষে দেখি এইখানে অভিকর্ষজ ত্বরণ্বে মান ৬.৯। এই জন্য নিজেকে এত হাল্কা মনে হচ্ছিলো। নীর্ঝা কিছু বুঝল না আমি কি হিসাব করলাম। নীর্ঝাকে সব খুলে বললাম, যে আমি অন্য রিয়েলিটি থেকে এসেছি, সেখানের সব কিছু এখান থেকে ভিন্ন।
"স্কোয়ার কিউব ল এর কারণে আমার এত বড় শরীর। তোমাদের এই গ্রহের ভর আমাদের গ্রহের তুলনায় অনেক কম সেই সাথে এই গ্রহের অভিকর্ষজ অনুযায়ী তোমরা একটা এভারেজ সাইজ পেয়েছ যেইটা স্কোয়ার কিউব ল মেনে চলে।" নীর্ঝা কিছুই বুঝলো না,আমি হুদাই পাগলের মত বুঝাতে গেলাম। আমার কথা শেষ হলো কিন্তু সে এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,"কিরে কি দেখতেছ?"
নীর্ঝা বললো,"কই কিছু না। আমি শুধুই শুনছিলাম।" নীর্ঝা আমাকে দিন রাত সেবা করেই চলেছে। এক সাপ্তাহ পরে আমার ক্ষত সেরে গেল খুব দ্রুততার সাথে। আমি নীর্ঝাকে বললাম যে আমি রাজ্য ঘুরে দেখতে চাই।
ছোট থেকেই একটু ঘরমুখো ছিলাম তাই প্রকৃতি দেখার বা উপভোগ করার সুযোগ হয় নি। আর একারনে নামের প্রথমেই জোড়া লেগে গেল ইন্ট্রোভার্ট শব্দটা। আমি মোটেও ইন্ট্রোভার্ট না। আমি ফেইক আবেগ দেখাতে পারিনা এটাই মূল সমস্যা। মানূষের সান্নিধ্যে থাকতে আমিও চাই। কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা, মুখোশধারী থেকে দূরে থাকতে চাইতাম। মানুষ স্বভাবগত ভাবেই এমন। যারা আমাকে নিচ থেকে উপরে নিতে সাহায্য করবে তারাই আবার আমাকে উঁচু থেকে নিচুতে ফেলে দিবে। রাজ্যে থেকে কাপড় উপাহার দিল সেগুলো পড়ে বের হলাম। নীর্ঝাও রেডি হলো যাওয়ার জন্যে। নীর্ঝা আবারও একটা সাদা কাপড় পড়ল।বুঝতে পারলাম নীর্ঝার সাদা রঙ খুবই পছন্দের। কখনো পরী দেখি নাই বিশ্বাস ও করি না, যদি থাকত তবে তাদের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দরী পরী হত নীর্ঝা। তার সাদা কাপড় থেকে নির্গত হওয়া ফোটন আমাকে পুনঃপুনঃ মুগ্ধ করছে। তার মায়াবী হাসি,মায়াবী চোখ,এলোমেলো চুলের কারণে তার দিক থেকে চোখ ফিরানো আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। বের হলাম আমরা। প্রকৃতি যে এত সুন্দর তা আগে জানতাম না। নীর্ঝা আমাকে সব ঘুরে দেখাল ওদের রাজ্যে,সংস্কৃতি,খাবার পোশাক সব কিছু। চারেপাশে সবুজে ভরপুর। সব চেয়ে সুন্দর মূহুর্ত যখন নীর্ঝা আমাকে ঝর্ণার কাছে নিয়ে যায়। আমরা দুজনেই ঝর্ণায় ভিজি। প্রথম দেখায় নীর্ঝাকে মনে হয়েছিল জেনীর তুলনায় অনেক স্ট্রং, কিন্তু কে-বা জানতো এই স্ট্রং শরীরের আড়ালে, গভীরে ভীষন যত্নে একটা সুন্দর মন লুকিয়ে রেখেছে। সেই মনের অস্তিত্ব আমিই খুজে পেলাম। তার শিশুসূলভ আচরণ আমাকে প্রতিবারই নাড়া দিচ্ছে। তার চাঞ্চল্যের কাছে আমি নিথর পাথর। এই যেন কোনো কবি কবিতা লিখছেন নীর্ঝা আর আমাকে নিয়ে। সেই কবিতায় কবি নিজেকে কল্পনা করছেন আমার মত। আমি চেয়ে থাকি নীর্ঝার প্রতিটা কার্যকলাপ। কবি যেন পঙ্খতি লিখেন -
চাঁদের আলোয় যে সাদা কালো রঙ!
সে রঙে রঙিন চারিপাশ!
ওহে ভুল করো-না কবি
চোখ মেলে, দেখো না একবার
সে আলো চাঁদের নয়!
নীর্ঝার সে দ্যুতি
ঝর্নার কলকল ধ্বনি হার মেনে যায়-
নীর্ঝার পায়ের নপূর নৃত্যে।
কবির বুকে আঁচড় কেটেছে-
নীর্ঝা নামের সে রূপসী
বিদ্যুৎ চমকায় তবু ভয় নাহি পাই!
বিদুৎ ঝলকে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরী জলপরী।
ওহে নীর্ঝা, হয়ে যাও মোর
আর কত? এইবার যাব নাহলে মরি।
রাতে ঘুমাতে গেলাম আর ভাবছি এখানে অনেক দিন থাকা হয়ে গেলো এবার আমাকে আমার রিয়েলিটিতে ফিরে যেতে হবে। এখানে থাকা আর উচিত হবে না। আমার কালকেই রওনা দিতে হবে বেশি দেরি হয়ে গেলে নীর্ঝার অবস্থাও জেনীর মত হবে। সকালে উঠে আমি নীর্জাকে সব জানালাম যে, "আমাকে আমার রিয়েলিটিতে চলে যেতে হবে। এইখানে থাকলে আমার অস্তিত্ব আসল রিয়েলিটিতে মুছে যাবে আর যেইটা কসালিটি(causality) নিয়মকে ভেঙ্গে ফেলবে। প্রকৃতির নিয়ম ভাঙলে ফলাফল অবশ্যই ভয়াবহ হবে। আর আমি এখানে থেকে গেলেও বেশিদিন সার্ভাইব করতে পারব না, কিউব ল অনুযায়ী আমি এই গ্রহে একদমই ফিট না"
ও যদিও বুঝে নাই কিছু কিন্তু এইটা বুঝতে পারল যে আমি এখানে থাকলে আমার ক্ষতি হবে। এটা বলার পর নীর্ঝা অভিমান করে কাজ আছে বলে উঠে গেল। আমি আমার পুরোনো পোশাক গুলা পরে নিলাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখি টেসারেক্টটা নাই। আমার চোখ কপালে উঠলো। টেসারেক্টটা না দেখে আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল। ঘরে অনেক খুজলাম নীর্ঝাকে জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ছোট পাথর দেখছে কিনা। সে জানাল- দেখে নাই এমন কিছু। আমি তাকে জানালাম যে আমার নিজের রিয়েলিটিতে ফিরার এইটাই একমাত্র চাবি। তারপর মনে পড়ল নদীতে আমি দৌড়ানোর সময় হয়ত সেখানে পড়ে গেছিল। নদীতে অনেকক্ষণ খোজাখুজির পরও পেলাম না টেসারাক্টটি। চিন্তা আরো বেড়ে যাচ্ছে আমার। রাজ্যের চারিদিকে খবর দিলাম কোনো ছোট অদ্ভুত পাথর দেখছে কিনা দেখলে রাজ দরবারে জমা দিতে বলেছি। কেউ যাতে সন্দেহ না করে তাই বলেছি এই পাথরটা আমার পূর্বপুরুষের উপাহার। রাজ দরবারে গিয়ে দেখি অনেক পাথর জমা হয়েছে কিন্ত কোনোটাই টেসারেক্ট না। নীর্ঝা আমাকে কনসোল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে কিন্তু আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছি যত দিন যাচ্ছে। সব শেষে ক্লান্ত দিন কাটিয়ে ঘুমাতে গেলাম। কোনোভাবেই ঘুম আসছে না। ক্ষানিক পর পাশের ঘর থেকে নীর্ঝা আমার রুমে এল। তাকে দেখে একটু শান্তি লাগলো মনে। কিন্তু নীর্ঝার শরীর খুব হাল্কা মনে হচ্ছে। শরীরের সব ভাজ যেন স্পষ্ট। ইচ্ছা করছে টাইটানিকের জ্যাক এর মত নীর্জার এই মূহুর্তে একটা ছবি আকি। নীর্ঝার শরীর আমাকে মারাত্মক ভাবে আকর্ষণ করছে। এই অবস্থায় কাউকে এত সুন্দর লাগে কল্পনার বাইরে। নীর্ঝার শরীরে কাপড়ের আচ্ছাদন অনেক কম। দেখে ভাবলাম এখন ঘুমাবে তাই হয়ত শরীর হালকা করে নিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবে ওদের রাজ্যের মেয়েরা ভারী কাপড় পড়ে থাকে। আমি কাপো কাপো সরে জিজ্ঞাসা করলাম "কিছু বলবা?"
ও জবাবে বললো,"না তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছিল।" ও এই অবস্থায় আমার বিছানার দিকে আসছিল। আর আমার হার্টবিট আমি নিজেই অনুভব করতে পারছি। আরো কাছে এসে আমার বিছানার পাশে আমার গায়ে দেওয়া কাথায় নিজেও শুয়ে পড়ল। একই কাথায় আমরা দুইজন। আমি কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম।
"তুমি যদি চলে যাও তাইলে আমাকে কি আর মনে থাকবে?আমাকে কখনো দেখতে ইচ্ছে করবে?"
আমার মুখ দিয়ে কোনো উত্তর বের হচ্ছে নাহ। বুঝতে পারলাম ও আমাকে পছন্দ করে বসছে।
কিছু ভাবার আগেই মূহুর্তের মধ্যে ও আমার বুকের উপর চড়ে উঠল। ওর এলোমেলো চুল আমার মুখে এসে লাগছে। শরীর সমগ্র অঙ্গের ভর আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে মূহুর্তেই আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বললো,"আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।" মাই হরমোনস রেজিং হাই। চুমু আর ঠোঁট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রইল নাহ। আমার হাত যেন চাইছে নীর্ঝার শরীরে থাকা বাকি কাপড় গুলা হেচকা টান দিয়ে তার নগ্ন শরীরের সৌন্দর্য অনুভব করি। আমি নিজেকে রেজিস্ট করতে চেয়েও পারি নি দিলাম হেচকা টান। ওর দেহ এমনভাবে আমার স্পর্শে ছিল যেন ওর সমস্ত শরীরে ঘ্রাণ আমার মনে প্রাণে মিশে গেল। জীবনে প্রথম স্বর্গ অনুভব করলাম।খানিক পরে মাঝরাতে অসীম সুখে একটাই কথা বের হলো "ইটস সাচ এ ডিভাইন নাইট।"বাকি রাত নীর্ঝা আমার বুকের উপর শুয়ে কাটিয়ে দিল। আমি আমার জীবনের সব চেয়ে রোমাঞ্জকর রাত উপভোগ করেছিলাম ওর সাথে। আমার কাছে জেনী নীর্ঝা আর ও(রিয়েল ক্যারেক্টর) কখনো আমার কাছে ভিন্ন ৩জন জন মনে হয়নি আমি ওদের সবাইকে একজন হিসেবেই ট্রিট করছি। ওদের তিন জনের কাছে আমি ভিন্ন। নিজেকে স্বার্থপর মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমি দেহকে ভালোবেসেছি ওদের সোলকে নাহ। সকালে ঘুম থেকে ওঠেই টেসারেক্ট এর সন্ধানে বেরিয়ে গেলাম আমরা দুইজন। আবারও রাজ দরবারে অনেক পাথর জমা হইছে কিন্তু কোনোটাই আসল টেসারেক্ট না। এই দিকে আমার দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। আমি এইটা জানতাম এই পাথরকে ধংশ করা এই রিয়েলিটিতে সম্ভব না। কারণ এইটা অনেক স্ট্রং মে বি ভিন্ন কোনো পরমাণু দ্বারা তৈরি। আমি নিজেও অনেকবার চেষ্টা করেছি এই ভেবে যে এইটাকে ভেঙ্গে ফেললে হয়ত আমি আমার আগের রিয়েলিটিতে ফিরে যাব। কিন্তু সফল হইনি। এইভাবে টেসারেক্টটা খুজতে খুজতে আরো ২-৩ দিন চলে গেল তারপরেও এর কোনো হদিস পাইলাম না। টেসারেক্ট এর চিন্তায় রাতে ঘুম হচ্ছে না যদিও নীর্ঝা আমাকে প্রতিটা মূহুর্ত খুশি রাখার চেষ্টা করছে। পরের দিন সকালে আমরা দুইজনে রাজ দরবারে আবার গেলাম এবার পাথরের সংখ্যা কম। বুঝতে পারলাম সবাই টেসারেক্ট খুজতে খুজতে টায়ার্ড। আশার সময় একটা পাগলকে দেখলাম। খুব অদ্ভুত!! সাইজে অনেক খাটো। আমি নীর্ঝাকে তার বেপারে জিজ্ঞাসা করলাম। নীর্ঝা জানালো,"ওর নাম জীলান। ও গ্রামে আজকে থেকে ২ বছর আগে সঙ্গীদের নিয়ে ডাকাতি করত। রাজ্যের সবাই তার ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারতো না। একরাতে রাজ্যের মানুষ প্ল্যান করে তাকে ধরবে বলে। আর ওইদিন জীলান তার সাথীদের নিয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে কিন্তু জীলানরা পালিয়ে যায়। সবাই তার পেছনে তাড়া করতে করতে দেখে সে এবং তার সব সাথী নিষিদ্ধ গুহায় প্রবেশ করে লুকানোর চেষ্টা করে। সবাই জানত যে এই গুহায় প্রবেশ করা নিষেধ।" আমি নীর্ঝাকে থামিয়ে বললাম," আবার এই নিষিদ্ধ গুহাটা কি! আগে তো বলো নি এটা সম্পর্কে।"
নীর্ঝা বললো,"দাড়াও আমাকে আগে শেষ করতে দাও। তারপর রাজ্যের মানুষ সকাল পর্যন্ত জীলানদের দলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু ওদের কোনো খোজখবর নাই। এরপর থেকে রাজ্যের ডাকাতি বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ ২বছর পর জীলানকে সবাই আবার রাজ্যে দেখতে পাই কিন্তু এইবার তাকে দেখে সবাই অবাক। তাকে আগে যেই অবস্থায় দেখছে ঠিক একই অবস্থা এখনো আছে। অনেকেই তো এইটা আগের জীলান বলে বিশ্বাস করতে চায়নি। সবাই ধারণা করল হয়ত এ মানুষটা জীলানের ছোট ভাই!কিন্তু ফিরে আসা জীলান আপাদমস্তক পাগল। তাছাড়া তার কথা মানুষ ভালো করে বুঝে না। সবাই ভেবে নিল জীলান তার কৃতকর্মের শাস্তি পেল সে গুহায়।"
আমি নীর্ঝার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। কথা শেষে নীর্ঝাকে প্রশ্ন করলাম "জীলানের এই অবস্থা কত বছর ধরে?আর গুহার রহস্যটা বা কি!" তখন নীর্ঝা হঠাৎ কি জানি মনে করে উত্তেজিত হয়ে বললো,"তোমাকে তো জীলানের ব্যাপারে এক অদ্ভুত ঘটনার কথা বলা হয়নি। আসলে জীলানের আশেপাশে যারা থাকে তারা নাকি বুঝতে পারছে জীলান গুহায় সময় যাত্রা করছে আর ভবিষ্যতে জীলান কি জানি দেখছে যার কারণে তার মানসিক অবস্থা বিগড়ে গেছে।" আমি মনে মনে বললাম,"টাইম ট্রাবেল!"
নীর্ঝা বলতে থাকল,"আর হ্যা, গুহাটা আজ থেকে ২০৫ বছর এক অলৌকিক ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছিল। তখন আকাশ থেকে নাকি বিশাল এক দানবীয় বস্তু পড়ে। যেটা অনেক উজ্জ্বল ছিল বিভিন্ন বর্ণের ছোয়া অই বস্তুতে। সবাই মনে করে এটা তারা ভেঙ্গে পড়েছিল। আমাদের রাজ্যের অনেক মানুষ মারা গেছে এই বস্তুর কারণে। পরে সবাই সে জায়গায় একটি গর্ত আবিষ্কার করে। এই পর্যন্ত যারা এই গর্তে প্রবেশ করছে তারা নাকি আর ফিরে আসে নি। এই ঘটনা আদো কতটুক সত্য তা জানি না।কিন্তু রাজ্যের সবাই এইটা বিশ্বাস করে। রাজ্যের সব ছোট বাচ্চাদের এই গুহার নাম দিয়ে অনেক কল্পকাহিনী শুনানো হই আমিও ছোট বেলায় মার কাছ থেকে শুনেছিলাম।
নীর্ঝাকে বললাম,"আমি যতক্ষণ না গুহা দেখছি ততক্ষণ কিছুই বিশ্বাস করছি না।"
নীর্ঝা বললো,"সে গুহায় যাওয়া নিষেধ। শোনা যায়, গুহার সামনে কেউ গেলে, গুহা অদ্ভুত এক শক্তি দিয়ে প্রলোভন দেখায় যাতে মানুষ সে গুহায় প্রবেশ করে।" আমি নীর্ঝাকে বললাম, "সে গুহায় আমি যাব। আমি দেখতে চাই সেখানে এমন কি আছে।" কিন্তু নীর্ঝা জোর গলায় আমাকে নিষেধ করল। আমি নীর্ঝাকে বুঝালাম যদি এই গুহা দিয়ে সময় ভ্রমণ করা যায় তাহলে আমি আমার টেসারেক্ট ফিরে পেতে পারি। নীর্ঝাকে কোনোভাবে রাজি করানো গেল। পরেরদিন নীর্ঝা আমাকে গুহার কাছে নিয়ে এলো। আমি ভেবেছিলাম আমি একাই গুহায় যাব কিন্তু দেখি নীর্ঝাও সাথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। নীর্ঝাকে নিষেধ করলাম কারণ আমি চাই না আমার কারণে নীর্ঝার কোনো ক্ষতি হোক।
কিন্তু নীর্ঝা বললো,"যদি কোনো খারাপ কিছু হয় তাহলে আমাদের দুইজনের এক সাথেই হবে। আর তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে এখানে সামলাতে পারব না।" নীর্ঝার কথা শুনে মনের ভেতরে আলাদা ভয় কাজ করছে কারণ আমি চাই না নীর্ঝার কিছু হোক। একদিকে ভয় অন্য দিকে গুহার রহস্য। এই যেন এক মিশ্র অনুভূতি। আমি নীর্ঝার হাত শক্তভাবে ধরে গুহায় প্রবেশ করলাম। গুহায় প্রবেশ করতেই দেখি উজ্জ্বল আলো। গুহায় বাইরে থেকে দেখলে মনে হচ্ছিল গুহা অনেক গভীর আর অন্ধকার। কিন্তু ভেতরে আলোর ছড়াছড়ি যেন বিভিন্ন শেইপের ফোটনের মেলা। নীর্ঝা আশ্চর্যভাবে এই রঙের খেলা উপভোগ করছে। গুহার আরেকটু গভীরে প্রবেশ করতেই আমার চোখ কপালে উঠে। এখানে দেখি টেসারেক্টের মত বড় বড় শেইপের পাথর যেইগুলা রেন্ডমলি শেইপ চেঞ্জ করছে। আলো এই বড় টেসারেক্ট থেকে আসছে। দেখে মনে হচ্ছে বড় চেম্বার। নীর্ঝাকে জানালাম আমার টেসারেক্টটা দেখতে এমনই জাস্ট সাইজে অনেক ছোট। বড় টেসারেক্টটা দেখতে অসাধারণ লাগছে। আমি কাছে গিয়ে হাত দিলাম দেখি হাত ভেতরে ডুকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন পানিতে হাত ডুবিয়েছি। আমি নীর্ঝাকে আবার বললাম " তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও আমি চাই না আমার কারণে তোমার কিছু হোক।" নীর্ঝা জেদ করে বসলো একসাথে যাওয়ার জন্য। আমি নীর্ঝার হাত শক্ত করে ধরে টেসারেক্টের ভেতরে ডুকে গেলাম। ঢুকে দেখি, গুহার অন্য সাইড দেখতে মনে হচ্ছে অবিকল আগের সাইডের মত। কিছু দূর এলাম দেখি গুহা থেকে বের হওয়ার রাস্তা। গুহা থেকে বের হয়ে দেখি সেই গুহার প্রবেশপথ যেদিকে আমরা গুহায় প্রবেশ করেছিলাম। গুহা থেকে বের হলাম সামনেই রাজ্যের নদী। আমি ভাবলাম আমরা আবার হয়ত রাজ্যে ফিরে আসছি। কিন্তু এরপর যা দেখলাম তা কল্পনার বাইরে। দেখি সামনে আমার এক রুপ(প্রথম রুপ) নদী পার হচ্ছে। বুঝতে দেরি হলো না এই গুহা আমাকে সেই সময়ে নিয়ে এসেছে যে সময়ে আমি এই রিয়েলিটিতে এসেছি। মনে মনে বলতেছি,"হুয়াট!টাইম ট্রাবেল!হাউ?" আরো অবাক হলাম যখন দেখি নীর্ঝা আমার আগের রুপকে দেখতে পাচ্ছেনা। তার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো সব কিছু। আমি তাকে বললাম,"ঐ যে আমি নদী পার হচ্ছি। এইটা সে সময় যখন তুমি আমাকে কুমির থেকে বাচিয়েছিল।" নীর্ঝা কাউকেই দেখল না। আমি নীর্ঝাকে গুহার পাশের ঝোপের পাশে লুকিয়ে থাকতে বলে নদীর দিকের গেলাম। আমার আগের রুপকে লক্ষ্য করছিলাম হঠাৎ দেখি আমার অতীত রূপের(প্রথম রুপ) পকেট থেকে টেসারেক্টটি পড়ে যায়। কিন্তু ও খেয়াল করেনি। আমি ভাবলাম এই সুযোগ টেসারেক্ট পাওয়ার। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তার পেছনে গেলাম সাথে সাথেই টেসারেক্টটা কুড়িয়ে নিলাম। দ্রুত চলে আসি আবার গুহায়। নীর্ঝা জিজ্ঞাসা করল,"কি হচ্ছে?এই পাথরটা কিভাবে পেলে?আমরা বাড়ি না গিয়ে আবার গুহায় যাচ্ছি কেন?"নীর্ঝাকে বুঝালাম,"এই গুহা আসলে সময় ভ্রমণ করে। সে সময়ে নিয়ে এসেছে যখন আমি তোমার রিয়েলিটি এসেছি। গুহাটার সাথে সামহাউ আমার পাথরটা রিলেটেড তাই আমাকে এই সময়েই নিয়ে এসেছে।" আমরা আবার গুহাতে প্রবেশ করে বড় টেসারেক্ট দিয়ে অতিক্রম করি। আবার নীর্ঝাদের রিয়েলিটির গুহায় ফিরে গেলাম। কিন্তু হঠাৎ মাথায় ভারী পড়ল,"আসলেই হচ্ছেটা কি?সময় আসলেই কি?অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ কি একই সুত্রে গাথা, যে একটার উপর একটা প্রভাব ফেলবে? তারমানে পাথরটা প্রথম জায়গা থেকে আমার ভবিষ্যৎ রুপ সরিয়ে ফেলছে?যার কারণে আমি আবার যখন নদীর ধারে গেলাম টেসারেক্টটা তখন ঐখানে ছিল না! তাহলে আমার টেসারেক্ট খোজার ভিত্তি কি?টেসারেক্টটা আমার ভবিষ্যৎ রূপ অতীতের জায়গা থেকে চুরি করে নিয়েছে। তাহলেই সব কিছু কি পূর্বনির্ধারিত? আমরা একই সাথে অতীত বর্তমান ভবিষ্যতে বেঁচে আছি! কিছু বুঝতেছি না। এন্ট্রপির ডেফিনেশন অনুযায়ী এমন হওয়ার কথা না? মহাবিশ্বের এন্ট্রপি দিন দিন বাড়তেছে এনার্জি ধীরে ধীরে অন্য শক্তিতে রুপান্তরিত হচ্ছে। এন্ট্রপি মানেই তো "measurement of how much energy spread out"। যা সরাসরি বুঝাচ্ছে টাইম শুধু সামনের দিকে এগোচ্ছে। তাহলে এমন হল কেন?"। আমাকে এতক্ষণ চুপ থাকতে দেখে নীর্ঝা খানিকটা অভিমানের সুরে বললো,"কিরে! কি ভাবছ?এইবার তো বাড়ি যেতে পারবা। মুখে এত চিন্তার ছাপ কেন?"
আমি বললাম,"আসলে,আমি ব্যাপারটা ফিজিক্স দিয়ে মিলাতে পারছি না। কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারগুলা। আমাকে আবার গুহার ভেতরে যেতে হবে, দেখতে হবে আমি যদি পাথরটা না নিতাম তাহলে কি হত! আমি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত একই সুত্রে গাথা এই predestination paradox এর মত পাগলামি বিশ্বাস করতে চাই না। জানি আমি আবার গুহায় গিয়ে সময় ভ্রমণ করলে আমার এই টাইমলাইনে বড় ক্ষতি হতে পারে। আমি যদি পাথরটা না নিই তাহলে আমার অতীত রুপ(প্রথম রুপ) যখন পাথরটা খুজতে আসবে তখন ওই পাথর নিয়ে সে নিজের রিয়েলিটিতে ফিরতে চাইবে। কিন্তু এই রকম হলে তোমার সাথে কাটানো আমার অনেক স্মৃতি মুছে যাবে হয়ত আমাদের এই টাইমলাইনের অস্তিত্বও থাকবে না। আমার বিশ্বাস প্রকৃতি এইভাবে কাজ করে না। রিস্ক নিতেই হবে।"
নীর্ঝা বললো,"আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না মানে? আমরা কি একজন আরেকজনকে ভুলে যাব?তোমার কথা সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।"আমি নীর্ঝাকে এইবার জোর করলাম নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে কিন্তু নীর্ঝা খুব জেদি মেয়ে। আবারও আমার সাথে যেতে চাইলো। আমরা আবারও টেসারেক্ট পার করি। পুনরায় সেই সময়ে ফিরে গেলাম। আমি নীর্ঝাকে জানালাম,"তুমি গুহার ভেতরে থাকো। আমি চাই না তুমি আমার সাথে এসে এই টাইমলাইনে বাটারফ্লাই এফেক্ট এর মত বড় কিছু যেন বাধিয়ে না দাও আবার। একটা ক্ষুদ্র পরিবর্তন আমাদের টাইমলাইনে মারাত্মক এফেক্ট ফেলতে পারে।"
আমি আবার নদীর ধারে গেলাম এবার আরো শিহরণ জাগানো কিছু দেখলাম। এইবার দেখি আমার দুইটা রূপ, আমার অতীত এর টাইমলাইনে উপস্থিত যেখানে একজন আরেকজনের টেসারেক্ট চুরি করতে যাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছি এই জিনিস আগে ভাবি নাই কেন!! ব্যাপারগুলা জটিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু না আমাকে কোনোভাবে আমার ২য় রুপকে টেসারেক্ট চুরি থেকে বাধা দিতে হবে। সময়ের আসল রহস্য জানা লাগবে আমার তার জন্য আমি আমার টাইমলাইনের রিস্ক নিতে প্রস্তুত। আমি ওদের দুইজনকে ফলো করলাম আমি আমার ২য় রুপের পেছনে ধীরে ধীরে গেলাম। আমি আমার ২য় যে রূপটি টেসারেক্টটা নিতে যাচ্ছিল তাকে বললাম,"ওই মিয়া এটা ধরিস না । যেখানে আছে সেখানে থাকতে দে" ও আমার দিকে দ্রুত তাকালো এবং ভারী সুরে বললো "তুমি কে!!?" সাথে সাথে ও সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল আমাদের প্রথম রুপ নদী পার হচ্ছে। ও কনফিউজড সুরে বলছে,"আমার প্রথম রুপ তো নদী পার হচ্ছে তাইলে তুমি কে?"
আমি ওরে বললাম,"আমার কথা শুন ভালো করে। টেসারেক্টটা ধরিস না যেখানে আছে সেখানে থাকতে দে। আমি যা করতেছি তুই হলেও তা করতি।" আমার ২য় রুপ ক্ষুদ্ধ সুরে জানালো,"আমার বাড়ি যাওয়া লাগবেই আমি এই টেসারেক্ট ছাড়া আমি বাড়ি যেতে পারব না।"আমি বললাম,"ধুর!আস্তে বল। আমাদের প্রথম রুপ আমাদের দেখলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।"কিন্তু আমার ২য় রূপ আমার কথা শুনল না ও দ্রুত টেসারেক্ট নিতে গেলে আমি জোরে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলাম ওকে। ভাগ্যিস,ততক্ষনে আমাদের প্রথম রূপ অর্ধেক নদী পার করে ফেললো। আমি আমার ২য় রুপের মুখ চেপে ধরে তার কানে সব বুঝিয়ে বললাম। বললাম,"এইবার শান্ত হ। দেখ এইটা ফিজিক্সের ব্যাপার সেপার। আর আমরা দুইজনই ফিজিক্সকে ভালোবাসি।আমার কথা শুন।"
নদীর এক পাশে কিছুক্ষণ দাড়ালাম। নিজের সাথে নিজে সরাসরি কথা বলার ফিলিংস্টাই অদ্ভুত। বললাম,"কিরে ব্যাটা, তোর গলার স্বর এত খারাপ ক্যান!মানুষজন কিভাবে সহ্য করে তোর আওয়াজ?"
হেসে বললাম,"তার উপরে সিঙ্গার হওয়ার স্বপ্ন দেখস তাই নাহ!"
আমার ২য় রুপ আরো হেসে বললো,"আমার আর তুর মধ্য পার্থক্য কি?পাগল হইছস!" কিছুক্ষণ পর জোরে একটা ঢেউ এসে টেয়ারেক্টকে সাথে নিয়ে যায়। ঢেউ এতই প্রবল ছিল যে আমরা দুইজন দেখার সুযোগ পাই নাই টেসারেক্ট কোনদিকে গড়িয়ে গেল। মনে মনে সন্তুষ্ট হলাম আর আমার ২য় রুপকে বললাম,"ব্রুহ, টাইম ইস লিনিয়ার। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ একই সুত্রে গাথা এইগুলা পাগলামি।" আমার ২য় রুপ উঁচু স্বরে বললো,"কি বাল ছিড়লি এইটা দেখে?এখন আমার কি হবে?"
আমি বললাম,"এই বাল সম্মান দিয়ে কথা বল। আমি তুর থেকে এক-টাইমলাইনের বড়!চিন্তা করিস নাহ টেসারেক্ট আমার কাছে আছে আমি তুর আগে এইটা চুরি করেছি।"
২য় রুপ বললো, "যদি আমি টেসারেক্টটাই চুরি না করি তাহলে তুর কাছে টেসারেক্ট কিভাবে থাকবে? প্যারাডক্স হয়ে গেল না?" আমি সাথে সাথে পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার পকেটে টেসারেক্ট নাই। সাথে সাথে মাথায় হাত দিয়ে বলি,"কি করলাম আমি!কত্ত বড় নির্বোধ আমি! এই সামান্য জিনিস মাথায় এলো নাহ!" আমার হার্ট বিট আর অস্থিরতা দুটোই প্রচন্ড বেড়ে চলছে। নিজেকে শান্ত করলাম কিন্তু নাহ আমার ২য় রুপ আমাকে সমান তালে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় কিছু ভাবার চেষ্টা করলাম হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া এলো। আমি আমার ২য় রুপকে বললাম,"তুই আবার গুহার ভেতর যা এখন। আমি যা করেছি তুই তা অতীতের টাইম লাইনের তুর ২য় রূপের(যেইটা আমার ৩য় রুপ হবে) সাথে করবি। সেও টেসারেক্ট চুরি করতে চাইবে। আমিও এক সাথে গুহার ভেতরে গিয়ে আবার অতীতের টাইমলাইনে ফিরব। তুই শুধু আমি যা বলছি তা কর।"
২য় রূপ বললো,"এটা পুরাই পাগলামি!"
২য় রূপ আমার কথায় রাজি হয়ে তার নীর্ঝাকে গুহার পাশের ঝোপ থেকে নিয়ে গুহার দিকের রওনা দিল। কিন্তু আমি ২য় রূপের নীর্ঝাকে দেখলাম না। বুঝলাম, আমার ২য় রূপের নীর্ঝাকে দেখা সম্ভব না কারণ ও অন্য টাইমলাইনের হয়ত আমরা একই রূপকে দেখতে পারব কিন্তু অন্যকে টাইমট্রাবেল করলে তাকে দেখতে পারব না। আমি আমার ২য় রুপকে ২য় নীর্ঝার চোখ বন্ধ করে গুহায় নিতে বললাম আর আমি দ্রুত নীর্ঝার কাছে গেলাম আর বললাম,"এতক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।"
নীর্ঝা বললো,"কই? তুমি ত গেলা আর সাথে সাথেই চলে আসলা।" "গুহার ভেতরে g এর মান অনেক বেশি তাই হয়ত সময় এর তারতম্য ঘটল। এক কথায় আইন্সটাইনের রিলেটিভিটি কাজে দিচ্ছে, g যত বেশি সময় তত ধীর।"
দুই নীর্ঝার চোখ বন্ধ করে আমরা আবার গুহার টেসারেক্টটা অতিক্রম করলাম।
আমি আবার নীর্ঝাদের রিয়েলিটির গুহায় এসে নীর্ঝাকে জানালাম, "আমাকে আবার গুহার মধ্যে যেতে হবে। যা করার এই বারেই করতে হবে। এইবার না হয় সব ঠিক হবে না হয় সব ধ্বংস হবে। তুমি শুধু গুহার ওপাশে আমার আসার অপেক্ষা করিও।"
নীর্ঝা বললো,"হচ্ছেটা কি!এইসব তুমি তো টেসারেক্ট পেয়ে গেছ তাহলে ব্যাপারটাকে এত জঠিল করছো কেন?"
নীর্ঝাকে বললাম,"টেসারেক্ট আমার কাছে নাই। তুমি জাস্ট আমার কথা শুন।"
আমরা আবার টেসারেক্ট অতিক্রম করে অতীত এর টাইমলাইনে আসলাম। এইবার আমি সব আনস্পেক্টেড ঘটনার জন্য প্রস্তুত। গেলাম নদীর ধারে এবার আমার তিনটা অতীতের রূপ উপস্থিত। কিভাবে কি করব বুঝে আসছি না। আমার আগের ২য় রূপ ৩য় রূপ হিসেবে ঠিকি আমার কথা অনুযায়ী তার ১ম(আমার ২য়) রূপকে টেসারেক্ট চুরি করতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু সব উল্টে গেল যখন দেখি আগের ২য় রুপ(এইবারের ৩য় রুপ) টেসারেক্টটা চুরিতে বাধা না দিয়ে উল্টো সে নিজেই সেটা নিতে চাইছে। এত বুঝানোর পরও আমার কথা শুনে নাই। ওরা দুইজন মারামারি শুরু করেছে। সব আবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমি দ্রুত গেলাম আমি ওদেরকে বললাম,"হেই আবালরা তুরা থাম। নাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।" আমাকে দেখে যে প্রথম বার টাইম ট্রাবেল করছে সে শকড। কিন্তু ৩য় জন(আগের টাইম ট্রাভেল এর ২য় জন) আমাকে দেখে বললো,"এই শালার কারণে সব হচ্ছে।"
আমার ৩য় রূপ ২য় রূপকে বললো আমাকে আটকাতে, আমি নাকি কাউকে আসল রিয়েলিটিতে যেতে দিব না। কিন্তু পরিশেষে যার ভয় পেয়েছিলাম তাই হল আমাদের চেচামেচিতে আমাদের সবার প্রথম রূপ আমাদের দেখে ফেললো। ও আমাদের দিকে আসছে আমরা এখন তাকে এড়াতে পারি না, যা হওয়ার হবে। সে আমাদের দেখে শকড তার চোখ কপালে উঠছে। সে দেখতে পেল টেসারেক্ট নদীর মাটিতে পড়ে আছে। সে সাথে সাথে তার পকেটে হাত দিল কিন্তু পকেটে টেসারেক্ট নাই। দ্রুত টেসারেক্ট নিতে চাইল কিন্তু আমরা ৩জন যারা টাইম ট্রাবেল করছি তাকে সেটা নিতে দিলাম না। তবুও সে সমস্ত শক্তি দিয়ে জোর করে নিতে চাইলো। পরিশেষে আমরা ৩ জনে মিলে তাকে মেরে ইঞ্জুরড করে দিলাম। ইঞ্জুর করলাম প্রথম রূপকে কিন্তু তার এফেক্ট আমাদের সবার উপরও পড়ল। আমাদের ৩জনেরও নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। কেউ কাউকে মেরে ক্লান্ত হচ্ছে না। আমি সবাইকে থামালাম আর বুঝানোর চেষ্টা করলাম,"আমরা এমন করলে আমরা কেউ বাড়ি ফিরতে পারব না।"এখন প্রশ্ন টেসারেক্ট কে নিবে?
আমি আমার ৩য় ও ২য় রূপকে বুঝালাম টেসারেক্ট আমিই নিয়ে যাব আমি নিয়ে গেলে সব ঠিক থাকবে। আর আমার ৩য় ও ২য় রূপকে বললাম তোমরা আবার গুহার ভেতরে গিয়ে এইসব রিপিট করবে তাহলেই আমাদের রিয়েলিটিতে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমাদের প্রথম রূপ কিছুই বুঝলো না। সে মনে মনে ভাবছে,"আমি এখানে কেন?আমি তো জেনীদের বাসায় ছিলাম!তার মানে আমি কি অন্য রিয়েলিটিতে চলে এসেছি?"
তার মনের কথা পড়ে আমি বললাম,"হ্যা! এইটা অন্য রিয়েলিটি।"
ও বললো,"তাহলে আমাকে টেসারেক্টটা দে আমি অইটা নিয়ে আবার অন্য রিয়েলিটিতে চলে যায়।" তার কথা শুনে আমরা তিনজন ক্ষেপে গেলাম কারণ সে যদি টেসারেক্টটা নিয়ে আবার ঘুমিয়ে যায় তাহলে আমাদের টাইমলাইনের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। না থাকবে নীর্ঝার স্মৃতি না, থাকবে আমাদের টইমলাইন।
তাকে আমরা তিনজনে মিলে বুঝালাম। জাস্ট বললাম,"গো উইথ দা ফ্লো। তুই জীবনের সব চেয়ে সুন্দর মূহুর্ত উপভোগ করতে যাচ্ছিস।"
প্রথম রূপ বললো,"আমাকে কি প্যারার মধ্যে যেতে হবে?এইসব রিপিট করতে হবে?"
আমি ওকে বললাম,"কি হবে তুই দেখবি সামনে। শুধু টেসারেক্ট হেরে যাওয়ার অভিনয় করিস আর সারা রাজ্যে টেসারেক্টের খোজ নি। হয়েছে এখন যা নদী পার হ।"
এর মধ্যে হঠাৎ করে নীর্ঝা এসে পড়ল আমরা তিনজন ঘাবড়ে গেছি। মাথায় আসল যে নীর্ঝা আমাদের তিনজনকে দেখবে না ও শুধু আমাদের প্রথম রূপকে দেখবে। এর মধ্যেই কুমির এসে পড়ল। আমি ১ম রূপকে বললাম,"যা,আমরা চলে যাচ্ছি। তুই বাচাও বাচাও বলে নদী পার হ। আর তোর পেছনে কুমির তাড়া করবে যা দৌড়া।" পেছন থেকে আবার বললাম,"যা জোরে দৌড়া।জলদি ভাগ!"
আমাদের তিনজনের বুঝতে দেরী হলো না যে আমাদের টাইমলাইন গুলা জাস্ট টেম্পোরারি। মেইন টাইমলাইন হচ্ছে যখন আমি প্রথম নীর্ঝার রিয়েলিটিতে আসি। সব কিছু নির্ভর করছে আমাদের প্রথম রূপের উপর আমরা জাস্ট পসিবিলিটিস মাত্র। বাকি ২জনকে এইসব আবার রিপিট করতে বলে আমি টেসারেক্ট নিয়ে গুহায় ফিরে গেলাম। নীর্ঝাকে দেখে শান্তির নিশ্বাস ফেললাম। নীর্ঝাকে বললাম,"পেয়ে গেছি টেসারেক্ট। এখন আর যাওয়া লাগবে না গুহায়।" নীর্ঝা বললো,"আর যাওয়া লাগবে না মানে?কি বলতেছ বুঝতেছি না।"
আমি বললাম,"আরে, গুহায় তিনবার গেলাম না।"নীর্ঝা বললো,"কি তোমার মাথা খারাপ হইছে? আমরা তো গুহায় একবার আসলাম মাত্র।" হঠাৎ আমার মাথার নতুন স্মৃতি আসতে শুরু করে। এক প্রশান্তির হাসি দিয়ে ভাবতেছি,"শালা, বহুত চালাক সব বুঝতে পারছি কি হতে পারে তাই প্রথমবার টেসারেক্ট চুরি করে আবার গুহায় ফিরে যায়নি, প্যারাডক্স হচ্ছে কিনা চেক করতে। আই এম প্রাউড অফ মাইসেল্ফ।"
ধীরে ধীরে অনেক নতুন স্মৃতি আশা শুরু করছে আমি তৃপ্তির হাসি দিয়ে তা গ্রহণ করছিলাম। বুঝতে পারলাম যে আমার চেয়ে ও বেশি উপভোগ করছে নীর্ঝার সাথে কাটানো মূহুর্ত।
হটাৎ মাথায় এলো, " কিরে আমি যদি নীর্ঝার সাপেক্ষে গুহা থেকে প্রথমবারই ফিরি তাহলে আমার প্রথম রূপটাই আবার আমিই! তারমানে আমার সব টাইমলাইন সুপারপজিশন হল।"
নিজেই আশ্চর্য হয়ে গুহা থেকে বের হলাম। বের হয়ে রাজ্যে গিয়ে দেখি প্রায় ৩মাস অতিক্রম হয়ে গেছে। নীর্ঝার বিশ্বাস হচ্ছে না এসব, নীর্ঝা বলতেছে,"আমরা সব মিলে অল্প কিছু সময় গুহায় ছিলাম না?"আমি বললাম ওসব আর ভাবিও না, বাদ দাও। রাজ্যের সবাই আমাদের দেখে খুব অবাক হলো। কৌতুহুলের চোখে দেখছে। এতদিন কোথায় ছিলাম? কি করছি? রাজাও নিমন্ত্রণ জানাল রাজাপ্রসাদে। সব শেষে
রাতে ঘুমাতে গেলাম আর ভাবছিলাম,"নীর্ঝাকে কি বলে তার কাছ থেকে বিদায় নিব?আমাকে আমার রিয়েলিটিতে ফিরতেই হবে। হঠাৎ নীর্ঝা আমার রুমে এলো ঠিক আগের পোশাকে। তাকে আগের পোশাকে দেখে শরীরে কেমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি হল। হঠাৎ মাথায় এল,"সেইদিনের আমার নিয়ন্ত্রণহীন কাজের জন্য যদি নীর্ঝা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়!"এইটা ভাবতেই আবার একটা নতুন স্মৃতি এল মাথায়। স্মৃতিটা যেমন রাগের ছিল তেমনই আবার আমার অস্থিরতা দূর করল। মনেমনে বলতেছি,"শালা! তুই পুরো একটা ডিভাইন রাত মিস করছিস!" যাক আমার সে রাতের স্মৃতি মনে আছে সেটাই এনাফ। আজকের রাতে আসলে নীর্ঝা ও আমি বাড়ির পাশে আকাশ উপভোগ করছি। নীর্ঝা আমাকে তার মনের কথা জানিয়েছে যে সে আমাকে ভালোবেসে ফেলছে এন্ড উই জাস্ট কিসড দেট নাইট। যদিও আমি এই মেমোরি স্পেন্ড করি নাই কিন্তু আমি এইগুলা ফিল করতে পারতেছি কারণ আমার রূপ গুলো আলাদা না। আমরা একই স্বত্তা একই রূপ। নীর্ঝা ডেকে তার সাথে বাইরে নিয়ে গেল। নীর্ঝা আকাশ দেখে আশ্চর্য হয়ে বলছে,"এত সুন্দর সৃষ্টির মালিক কে?কে বানিয়েছে এই জঠিল সবকিছু?"
আর আমি নীর্ঝাকে দেখছিলাম পুরোটা সময়। এই মহাবিশ্বের কোনো কিছুই আমাকে ততটা মুগ্ধ করছে না যতটা তার মায়াবী চেহরা মুগ্ধ করছিল।
বুঝতে পারলাম নীর্ঝা আগের বারের মত এত খুশি না। সে নিশ্চয়ই আমার চলে যাওয়া নিয়ে ভাবছে। কিছুক্ষণ পর নীরব থেকে কান্নার সুরে জিজ্ঞাসা করলো,"তুমি কি কালকেই চলে যাবে?আমি কি তোমার সাথে যেতে পারব?আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও আমার এখানে কেউ নেই।" তার কান্না আমার সহ্য হচ্ছিলো না আর আমি বললাম,"যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি অন্য রিয়েলিটির অংশ। আমি এখানে থাকলে ভালো হবে না। এই টেসারেক্টটা দিয়ে শুধু আমি নিজেই আমার রিয়েলিটিতে যেতে পারব। আমার রিয়েলিটিএ জিনিস এখানকার মত না, অনেক ভিন্ন। তুমি কি চাও আমি এখানে থেকে যায়?"
আবারও কান্নার সুরে জানাল,"আমি চাইলাম আর তুমি থেকে গেলে তা তো না।" এই বলে ঘরে চলে গেল। আমি সারারাত তার কথা, তার সাথে কাটানো মূহুর্তের কথা ভাবতে ভাবতে আর ঘুমায়নি। সকালে রাজ্যের সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। নীর্ঝা আমাকে নিয়ে গেল যেখানে আমি প্রথম ঘুম থেকে উঠেছিলাম। বিদায়ের মূহুর্তে নীর্ঝাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে নিজেকে স্ট্রং করার চেষ্টা করছে। চেহরায় মলিনতা, চোখের পানি চেপে ধরে আছে। আমি বললাম,"তুমি একজন ভালো শল্যচিকিৎসক। তুমি সেদিকে মনোযোগ দাও। আমাকে নিয়ে আর ভাবিও না । ভালোবাসা জাস্ট আমাদের ব্রেইনের কিছু হরমোনের খেলা মাত্র। হরমোনগুলা বারবার খেলতে চাই। আর সেই খেলায় সৃষ্টি হয় নতুন ভালোবাসা,নতুন সম্পর্ক ও নতুন মানুষ। আমি নিজের রিয়েলিটিতে ফিরলে হয়ত নতুন সম্পর্কের ভিড়ে তোমাকে মনে করার কিংবা মনে রাখার সময়ও পাব না। আমাদের মস্তিষ্ক নতুন জিনিস দ্রুত গ্রহণ করে।"এসব বলতে আমার নিজেরই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল। বিচ্ছেদ এতটা কষ্টের তা আগে বুঝিনি। এতক্ষণ নীর্ঝা চোখের পানি ধরে রেখেছিল কিন্তু তার এইভাবে ভেঙ্গে পড়া আর চোখের বন্যাস্রোত আমাকে ভিতর থেকে ছারখার করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন তার চোখের প্রতিটা পানির ফোটা আমার শরীরে সুই ফোটার মত গেঁথে যাচ্ছে। শেষবারের মত নীর্ঝাকে জোরে জড়ায় ধরি।
প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়েই জীবন। প্রাপ্তির সুখ অপ্রাপ্তিকে কিছুতেই আচ্ছাদিত করতে পারেনা। অনেক কষ্টে তার কাছ থেকে নিজের শরীরকে আলাদা করলাম। তার দিকে আর তাকালাম না। হঠাৎ ফ্ল্যাশব্যাকের মত নীর্ঝার সাথে কাটানো মূহুর্তগুলোর কথা মাথায় ভাসছে তারই সাথে সাথে আরিজিৎ এর গান "Jwalamukhi"'র মাথায় স্পষ্ট লিরিক্স ভাসছে । ইয়ারসওর্ম(earworms) হচ্ছে।
চলে গেলাম মাটির ঢিবির উপর যেখানে আমার আগমন ঘটছিল। আমি আগের পোশাকে। পকেট থেকে টেসারেক্ট হাতে নিয়ে দেখি এইটার রেন্ডমনেস প্রচন্ড বেড়ে গেছে। বুঝতেছিলাম না কেন হচ্ছে। আর কিছু না ভেবেই সাথে সাথে মাটির ঢিবির উপরে শুয়ে পড়লাম।চোখ বন্ধ করি আর ঘুম।প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ঘুমমম!!!
৫.
চোখ খুললাম দেখি খুব চেনা জায়গা। দেওয়ালে ঐ যে নীর্ঝার ছবি টাঙানো। বুঝতে দেরি হলো নাহ এইটা জেনীদের ঘর। মনে মনে ভাবছি,"তার মানে আমি এখনো আগের রিয়েলিটিতে ফিরি নি!এখানে আর আটকে থাকার কোনো মানে নাই আমাকে আবার চোখ বন্ধ করতে হবে।।"চোখ বন্ধ করতেই দেখি জেনী রুমে প্রবেশ করল। জেনীকে দেখে আর চোখ বন্ধই করা হই নি। জেনীকে সুস্থ দেখে আমার খুশির মাত্রা অসীম। আমি সাথে সাথে সোফা থেকে উঠে গেলাম। জেনী আমাকে দেখে খুব অবাক হয়ে বলছে,"কিরে তুমি ত এই মাত্র কনসার্টের জন্য বের হইছিলে আবার ঘরে কিভাবে আসলে?আর তোমার পোশাকের এই অবস্থা কেন?কোনো সারপ্রাইজ প্ল্যান করছ নাকি?"আমি অবাক হয়ে বললাম,"আমি শিহাব। আমাকে চেনো নাহ তুমি!?" জেনী বললো,"এই সব কিহ মজা করছ?কোনো সারপ্রাইজ থাকলে জলদি বলো।আমি কলেজ যাব।"আমি দ্রুত আমার টেসারেক্ট বের করে দেখি এইটার রেন্ডমনেস কমছে। এতক্ষণ পরে বুঝলাম কেন টেসারেক্ট রেন্ডম শেইপ হচ্ছিল। কোনো রিয়েলিটিতে আমি যেই পরিমাণ এন্ট্রপির বৃদ্ধি ঘটাচ্ছি অর্থাৎ পজিটিভ কাজ করছি অই সবের জন্য টেসারেক্ট নেগেটিভ এনার্জি তৈরি করছে যার কারণে টেসারেক্টের রেন্ডমনেস বাড়তে থাকে।।আর যখন আমি অন্য রিয়েলিটি জাম্প করি তখন অই টেসারেক্ট নেগেটিভ এনার্জিগুলো মুক্ত করে দিয়ে এন্ট্রপি রিভার্স করে দে। অর্থাৎ আমার করা কোনো কাজেরই অস্তিত্ব ও আমার কোনো প্রভাব আগের রিয়েলিটিতেই থাকবে নাহ।।সেইম ভাবে কাজ করছিল অই গুহাটা এন্ট্রপিকে রিভার্স করে দিয়ে টাইম ট্রাবেল করতে সাহায্য করছিল। একটা অস্থিরতা কাজ করতেছিল ভাবছি,"তার মানে নীর্ঝাও আমাকে চেনে নাহ!"। আবার মনের মধ্যে প্রশান্তি পেলাম এইটা ভেবে যে নীর্ঝা বা জেনী কাউকে আমার জন্য কষ্ট পেতে হলো নাহ।।সব কষ্ট আমি বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জেনীকে আর কিছু বলার আগেই সোফায় লাফ দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।।
ঘুম।।প্রকৃতির শাস্তির ঘুমমম!!!
৬.
চোখ খুললাম। মনে হলো যেন আমি মিলিয়ন রিয়েলিটিতে চোখ খুলেছি আর অফ করেছি। ভালো করে চোখ খুলে দেখি আমি আমার রুমের সোফায় শুয়ে আছি। খুশিতে আমার চোখে পানি চলে এলো। কতদিন যে আম্মু,আব্বু ভাইদের দেখা পাইনি। নিজের রিয়েলিটিই সব কিছু।
রুমের বাহিরে গিয়ে দেখি আমার বড় ভাই শাওন আর ছোট ভাই পড়ার রুমে পড়তেছে। দেখে আমি শকড, মনে মনে ভাবছি,"শাওন পড়ার টেবিলে!!কিভাবে?"
আমি গত ২-৩ মাস ধরে শাওনকে বই ধরতেও দেখি নাই। ঠিক একই অবস্থা আমার ছোট ভাই আদরেরও। হঠাৎ সন্দেহ হইল,"আমি কি আসলেই আমার রিয়েলিটিতে ফিরেছি?"
শাওন আমাকে দেখে বললো,"কিরে তুই কিছুক্ষণ আগে অন্য পোশাকে ছিলি এখন এই পোশাক কেন?"
এটা শুনে আমি আরো হতবাক এইটাও আমার আসল রিয়েলিটি না। নিজের রিয়েলিটিতে না ফিরতে পারার কারণে নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। কান্নার সুরে,"কি হচ্ছে এই সব। কবে আমি আমার রিয়েলিটিতে ফিরব!"
জলদি গিয়ে আবার সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম।কান্নার ঘুমমম!!!
৭.
ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে দেখি আমি আমার রুমে।উঠে ফ্রেশ হলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে গিয়ে দেখি শাওন আর আদর একসাথে টিভি দেখতেছে। আর আম্মু নাস্তা বানাচ্ছে। আম্মুকে রান্না ঘরে দেখে মাথা সিরিয়াস খারাপ হয়ে গেছে সারাদিন খালি রান্নাঘরে। রেগে গিয়ে বললাম,"তোমাকে বারবার বলি রেস্ট নিতে, তুমি তাও রান্না ঘরে সারাদিন। নাস্তা বানাইতে কে বলেছে? ডাক্তার বলছে যত রেস্ট নিতে পারবা তত ভালো থাকবে শরীর।"
আম্মু হতবাক হয়ে বললো,"কিসের রেস্ট? কিসের ডাক্তার? কি বলতেছিস তুই?আমি পুরোপুরি সুস্থ। আর তুই না টিউশনিতে গিয়েছিলি, কবে এলি?"আমার মাথায় আবার আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত অবস্থা হল। মনে পড়ল আমি স্পেস-টাইমের ট্রেপে আটকে আছি। আম্মুকে আমি লাস্ট ৪-৫ বছর কখনো সুস্থ দেখিনি। আম্মুকে এই রিয়েলিটিতে পুরোপুরি সুস্থ দেখে চোখ দিয়ে পানি চলে এলো। প্রার্থনা করছিলাম শুধু আম্মুর এই চেহরায় যে হাসি সে হাসি যেন চিরকালই।থাকে। কখনো তা যেন মলিন না হয়ে যায়। কিন্তু আমি জানি আমার রিয়েলিটিতে ব্যাপারগুলা অন্যরকম নিজের মেসড আপ লাইফ,আম্মুর অসুখ,আব্বুর স্ট্রাগল সব ভাবতে আবার সোফায় শুয়ে গেলাম।
তারপর ঘুম।ক্লান্তির ঘুমম!!!
৮.
ঘুম ভাঙলো। মাথায় প্রছন্ড ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে যেন অনেক চাপ, অনেক দখল গেছে। ঘড়িতে দেখি 3:49AM। ঘড়ি দেখে আবার ঘুম।
চিন্তার ঘুমমম!!!
*LOVE CAN MAKE THE SPACE-TIME BEND*
ইডিটরঃচয়ন।।💖
*গল্পে লেখা সব কবিতা আর কিছু বিশেষ সংলাপ চয়নের লেখা*
বিঃদ্রঃ- ফিজিক্সপ্রেমী এক নির্বোধ বালকের অপ্রাপ্তি নিয়েই যত আকাশকুশুম ভাবনা। আমরা সবাই ছুটি, ছুটতেই থাকি, বহুদূরে, বহু শহর পেরিয়ে, বহু নদী পেরিয়ে, বহু মানুষের ভালোবাসা ডিঙ্গিয়ে, তবুও ছুটি তবুও চলে যাই, শুধু সেই ভীষন ভালোবাসার অপ্রাপ্তির কাছে যেখানে পূর্বের প্রাপ্ত সকল সুখ বৃথা।