ভর কী এবং গতিশীল বস্তুর ভর বৃদ্ধি পায় কেনো ?



আপনি চলেছেন টুটুবির পথে । যখন মঙ্গলকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন । আপনার ভাই ট্রয়লেটে দৌড়া দৌড়ি করছে । এই সময় আপনার প্রিয়সী বাড়িড় ছাদে টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে বসে আছে । ছলোছলো চোখে চেয়ে আছে আপনার যাওয়ার পথে । ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে “আবার দেখা হবে…..” । ভাবলেই কান্না এসে যায় ।

যা হোক । আপনি যতো রকেটের বেগ বাড়াচ্ছেন রাস্তা ততো ছোট হয়ে আসছে, সময় ততো কম লাগছে, দ্রুত যাচ্ছেন, প্রতিবার বেগ বাড়াতে আগের থেকে বেশি শক্তি লাগছে । আপনি দেখলেন অল্প সময়ে মঙ্গল পার হয়ে গেলেন । আর কোনো সমস্যা নাই ।

এখন আপনার প্রিয়সী বা ভাই পৃথিবী থেকে দেখছে, আপনি আর আপনার রকেট চিরে চ্যাপটা ! ছোট হয়ে গেছেন, ধিরে ধিরে চলছেন, বেগ বাড়াচ্ছেন কিন্তু ভর বেরে যাচ্ছে আর ততো ছোট হয়ে যাচ্ছেন । যে রাস্তা যেতে আপনার কয়েক ঘন্টা লাগলো এই একই রাস্তায় পৃথিবী থেকে দেখছে আপনার যেতে কয়েক দিন সময় লাগলো ।

এর কারনটা কী ?

কেন হলো এমনটা?

এর কারন হলো স্থানকালের সংকোচন আর প্রসারন । (যা আগের অংশটিতে দেয়া আছে)

আপনার বেগ বৃদ্ধির ফলে আপনার স্থানকাল সংকোচিত হয় পৃথিবীতে থাকা আপনার ভাই এর তুলনায় ।কিন্তু তাদের স্থানকালের কোনো পরিবর্তন হয়নি । তবে আপনার তুলনায় ওখানের স্থানকাল সম্প্রসাররিত । তাই আপনার ১ঘন্টার রাস্তা তাদের সময়ে কয়েক দিন ।

এখন আসি ভরের ব্যাপারে ।

এই যে দুই জন দুই রকম সময় দেখল এই ব্যপারটা ভরবেগের সংরক্ষনশীলতার নীতিতে ফেললে দেখা যায় আপনার রকেটের গতির কারনে এর বেগ স্থির অবস্থার তুলনায় বেশি হয়ে গেছে । এটাও মুলতো স্থান কাল সংকোচন-প্রসারনের ফল । এই যে ভর বাড়লো এটা কিন্তু আসল ভর না । এটা আপেক্ষিক ভর যতক্ষন গতিশীল ততক্ষন এটা থাকবে এবং গতি বাড়া-কমার সাথে বাড়বে কমবে । তবে রকেটের স্থির ভরের কোনো চেঞ্জ হবে না ।

এখন কথা হলো এই ভর আসলো কোথা থেকে ?

আকাশ থেকে পড়েছে না পাতাল থেকে এসেছে ? এই ভর আসে হচ্ছে গতি থেকে । আপনার রকেটটাকে যে গতিশীল করেছেন এর ফলে সেটা গতিশক্তি পেয়েছে । এই শক্তি থেকেই ভরের আমদানি । এখন যদি আপনি বেগ বাড়াতে থাকেন । তবে ভর বারতে থাকবে । যতো বেশি বেগ অর্জন করবেন তখন বেগ বারাতে আরো বেশি পরিমান শক্তি লাগবে । এখন আপনি আলোর বেগ নিতে চান ! তাহলে কী করা লাগবে ? অসীম পরিমান শক্তি দেয়া লাগবে । তাহলে কী হবে ? ভর অসীম পরিমান হয়ে যাবে ! কিন্তু অসীম ভর মানে কত ? আর অসীম পরিমান শক্তি কত ? কই পাবেন ? তাই আলোর বেগ নিতে পারবেন না । 

এখন কথা হলো শক্তি আর ভরতো এক জিনিস না । তাইলে কেমনে কী ?

আসলে শক্তি আর ভর একই জিনিস । ভর শক্তির মাঝে কোনো পার্থক্য নাই । যেখানে ভর সেখানেই শক্তি । কী পরিমান শক্তিতে কতটুকু ভর বা কী পারমান ভরে কতটুকু শক্তি লুকিয়ে আছে তা আসে E=mc^2 এর থেকে ।

এই আপেক্ষিক ভর কী কাজে লাগে ? এটা খায় নাকি মাথায় দেয় ? নাকি গায়ে মাখে ? আসলে আপোক্ষক ভরটাই সব বলা যায় । এইয়ে আপনার ভর ৫০ বা ৬০ কেজি এটা আসলো কোথা থেকে ? এই আপেক্ষিক ভরটাই এর উৎস ! আমাদের ভর কোথা থেকে আসে ? পরমানু থেকে ! পরমানুর বর কোথা থেকে আসে ? ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন থেকে । প্রোটন নিউট্ররেন ভর আসে কোয়ার্ক থেকে । কিন্তু হিসেব থেকে দেখা যায় মৌলিক কনা গুলোর ভর এতোই কম যে প্রটন বা নিউট্রনের স্থির ভর তাদের মোট স্থির ভরের তুলনায় অনেক বেশি । তাহলে বাকি ভর আসে কিভাবে ? এই বাকি ভর আসে কনা দের গতির ফলে । এই বাড়তি ভরই হলো আপেক্ষিক ভর । এটা শুধু কনা ক্ষেত্রে না সব ক্সেত্রে কাজ করে । তাহলে স্থির ভরটা থাকলো কই ? প্রতি টা কনার ভেতরে গেলে এর ভরের আসল রহস্য পাওয়া যায় ।

আর একটু বলে শেষ করি । ফোটনকে আমরা সবাই চিনি । এটা কিন্তু আখের চিনি না । তো ফোটন কি ? ফোটন হলো শক্তির একটা বস্তা । এই শক্তির বস্তার ভর কত মণ উত্তর হলো শূন্য । আসলেই কি ফোটনের ভর শূন্য ? না । ফোটনের স্থির ভর শূন্য কিন্তু এর আপেক্ষিক ভর আছে । যদি একটা পাত্রের ভেতর অনেক গুলা ফোটন রাখা হয় তবে ঐ পাত্রের ভরের সাথে ফোটনের আপেক্ষিক ভরেটাও হিসেবে আসবে ।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে এই কোয়ার্ক বা ইলেকট্রন বা এই জাতীয় কনা গুলোর ভর আসে কোথা থেকে ?

এর উত্তর হলো হিগস ফিল্ড থেকে !

যা হোক সেটা আর এক ইতিহাস । আজ থাক ! 

মোঃ সাবিদ আরিফ রবি

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form