ইহুদীরা কেন এত মেধাবী?



ইহুদীরা কেন এত মেধাবী?

ইহুদীর মধ্যে অনেক মেধাবী মানুষ জন্মগ্রহণ করেছে। আইনস্টান, সিগমুড ফ্রয়েড, কার্ল মার্ক্স থেকে শুরু করে হাল আমলের মার্ক জাকারবার্গ পর্যন্ত  জন্মগতভাবে ইহুদী।  ইহুদী জাতির মধ্য থেকে যত  নোবলজয়ী মানুষ জন্মেছে আর কোনো জাতির মধ্যেই কিন্তু এমন হয় নি। নোবেলজয়ের পেছনে ইহুদী জাতির অবদান দেখুন : 

১) ফিজিক্সএ ৫১ টি নোবেল পুরস্কার (ফিজিক্স নোবেলের ২৬%)

২) কেমিস্ট্রি তে ৩৬ টি নোবেল পুরস্কার (কেমিস্ট্রি নোবেলের ২০%)

৩) মেডিসিন বা ফিজিওলজি তে ৫৫ টি নোবেল পুরস্কার (মেডিসিন নোবেলের ২৬%)

৪) অর্থনীতি তে ২৯ টি নোবেল পুরস্কার (অর্থনীতি নোবেলের ৩৮%)

৫) শান্তিতে (পিস) ৯ টি নোবেল পুরস্কার( পিস্ নোবেলের ৯%)

৬) সাহিত্যে ১৪ টি নোবেল পুরস্কার ( সাহিত্য নোবেলের ১৩%)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_Jewish_Nobel_laureates

অথচ সারা পৃথিবীতে ইহুদি জনসংখ্যা মাত্র ১.৫ কোটির কিছু বেশী

সাইন্স ডাইরেক্টে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী আমেরিকান ইহুদীদের গড় IQ  আমেরিকার অ-ইহুদী জনগোষ্ঠীর গড় IQ এর চেয়ে বেশি। 

https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0191886903000795

বিশেষ করে আশকেনাজি ইহুদিদের গড় IQ এমন পরিসরে থাকে যা পৃথিবীর অন্যান্য যেকোন নৃগোষ্ঠীর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। দ্যা জার্নাল অব বায়োসোশাল সাইন্স নামক এক সাইন্টিফিক জার্নালে  প্রকাশিত এক গবেষণায়  কিছু বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে  বিবর্তনগতভাবে ইহুদীদের জিনে এমন কিছু পরিবর্তন হয়েছিলো যা তাদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সাহায্য করেছে। 

প্রায় ৮০০ থেকে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আশকেনাজি ইহুদিরা ইউরোপে বিচ্ছিন্ন জিনগত গোষ্ঠী হিসেবে বাস করেছে, যেখানে কোন আশকেনাজি ইহুদি অ-ইহুদি কাউকে বিয়ে করলে তাকে ইহুদি সম্প্রদায় থেকে বিচ্যুত হতে হতো এবং খুবই কম অ-ইহুদি ব্যক্তি ইহুদি সম্প্রদায়ে বিয়ে করতেন। ফলে ইহুদীরা জননগতভাবে অন্য জাতিগোষ্ঠীর থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিলো যার কারণে ইহুদীদের জিনে যেসব পরিবর্তন হতো তা বংশানুক্রমিকভাবে শুধু ইহুদীদের মধ্যেই সংরক্ষিত হতো। 

একই সময়ে, আইনগত বাঁধার কারণে আশকেনাজি ইহুদিরা কৃষি ও হস্তশিল্পের কাজ সহ বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। এরফলে তারা হিসাব ও ব্যবস্থাপনা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সম্পদশালী ইহুদিগণের সন্তান সংখ্যা দরিদ্র ইহুদিদের তুলনায় অধিক ছিল। সুতরাং, ইহুদিরা যে সামান্য কিছু অঙ্গনে কাজ করেন সেইসব অঙ্গনে সফল হবার জন্য   বাচনিক ও গাণিতিক বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রয়োজন হতো। এর ফলে বুদ্ধিমত্তার সাথে সম্পর্কিত জিনগুলো টিকে থাকার জন্য  অনুকূল পরিবেশ পায় এবং পরবর্তী প্রজন্মে চলে যায় । অর্থাৎ টিকে থাকার জন্যই ইহুদীদেরকে বুদ্ধির চর্চা বেশি করতে হতো। এভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমেই ইহুদীদের বুদ্ধিমত্তার বিবর্তন ও বিকাশ ঘটেছিলো। 

এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে আশকেনাজি ইহুদিরা  বিভিন্ন ধরনের জন্মগত রোগ এবং মিউটশনে  ভোগে যা অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় আশকেনাজি ইহুদিদের বেলাতেই অধিক। এই রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে টে-সাকস ডিজিস, গশেরস ডিজিস, ব্লুমস সিনড্রোম এবং ফানকোনি এনিমিয়া রোগ, এবং BRCA1 ও BRCA2 মিউটেশন। এই মিউটেশন বা পরিব্যক্তিগুলো কেবল অল্প কিছু শ্বসনিক পথ এর গুচ্ছকেই প্রভাবিত করে  যা নির্দেশ করে যে এগুলোর উদ্ভব কোন জিনগত চ্যুতি নয়, বরং প্রাকৃতিক নির্বাচনগত চাপের কারণেই হয়েছে। টরশন ডিসটোনিয়া নামক এই রোগগুলোর অন্তত একটি গুচ্ছের সাথে উচ্চ আইকিউ এর  সম্পর্ক পাওয়া গেছে।  গবেষণাপত্রটির লেখকগণ অনুমান করেন, এই পরিব্যক্তিগুলো স্নায়বিক বিকাশের বাঁধাকে কমিয়ে দিয়ে ইহুদীদেরকে  অধিক বুদ্ধিমান হওয়ার  সুবিধা দান করে।  অর্থাৎ এগুলোর কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তৈরি হলেও  এরফলে প্রাপ্ত অধিক বুদ্ধিমত্তা আশকেনাজি ইহুদীদের  বিশেষ সুবিধা দেয়, সেই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পরিবাহিত হবে, যা আশকেনাজি ইহুদিদের বেলায় ঘটেছিল। তবে এই গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক বিতর্কেরও জন্ম নিয়েছে । অনেক বিজ্ঞানীদের মতে এ ধরনের গবেষণা  বৈজ্ঞানিক বর্ণবাদ ও ইউজেনিক্সকে উসকে দেয়। মনোবিজ্ঞানী স্টিফেন পিংকার সহ অনেক বিজ্ঞানীই এই গবেষণাকে ব্যাড সাইন্স তথা খারাপ বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে বুদ্ধিমত্তার পেছনে জেনেটিক কারণ নয় বরং পরিবেশের ভূমিকাই মুখ্য।  আমরা নিয়মিত বিভিন্ন জটিল ও গাণিতিক সমস্যা সলভ করলে IQ বৃদ্ধি পায়। তাই মূলত ইহুদীরা অধিক জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করে বলেই তাদের IQ তুলনামূলকভাবে বেশি। 

আশকেনাজি ইহুদিদের অধিক বুদ্ধিমত্তার পেছনে আরেকটি ব্যাখ্যা হচ্ছে অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে আশকেনাজি ইহুদি সংস্কৃতির পার্থক্য  যেখানে আশকেনাজি ইহুদি সংস্কৃতিতে জ্ঞানচর্চাকে অধিক মর্যাদা দেওয়া হতো এবং এখনো হয়। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ৭০ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংসের পর ইহুদি সংস্কৃতি এমন সংস্কৃতির সূচনা ঘটায় যেখানে ধর্মীয় অনুশাসনের বদলে অধ্যয়ন এবং পাণ্ডিত্যেই জোর দেয়া হত।  আশেপাশের অন্যান্য সংস্কৃতির লোকদের তুলনায়, ইহুদিদেরকে  এমনকি ইহুদি কৃষকদেরকেও  ছোটবেলা থেকেই লিখতে-পড়তে শিখতে হতো। 

ইহুদিদের কৃষিভিত্তিক পেশা থেকে নগরকেন্দ্রিক পেশায় গমন করতে শুরু করারও আগে ইহুদি সংস্কৃতিতে পাণ্ডিত্যে বিশেষ জোড় দেয়া হতো    

আশকেনাজি ইহুদিরা (অন্যান্য ইহুদি গোষ্ঠীদের মতই) বিভিন্ন  বৈষম্যের শিকার হয় আর তাই তাদেরকে বেঁচে থাকার জন্য এবং অধিক বুদ্ধিমান হবার জন্য অধিক পরিশ্রম করতে হয়। অর্থাৎ মূলত কোনো বিবর্তনগত কারণ নয় বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণেই ইহুদীরা এত বুদ্ধিমান। যাই হোক এই টপিকে আরো বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা বিজ্ঞানী রিচার্ড লিনের দ্যা চোজেন পিপল বইটা পড়তে পারেন। তবে বইটির লেখক সম্পর্কে আমি কিছু কথা বলে আপনাদের সতর্ক করে দিতে চাই যে রিচার্ড লিন একজন বর্ণবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের চেয়ে জেনেটিক্যালি শ্রেষ্ঠ। তাই শ্বেতাঙ্গদের উচিত আলাদা দেশ গঠন করা এবং সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের ঢুকতে না দেওয়া। তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে বর্ণবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন এবং এর কারণে অন্যান্য অনেক বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে তাকে খুব সমলোচিত ও হতে হয়েছে। 

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3190562/

https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/17052383/

https://www.scientificamerican.com/article/a-jewish-gene-for-intelligence/

Rafi Choudhury

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form