এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে-জীবনানন্দ দাশ



🔴লেখক পরিচিতিঃ

নাম- জীবনানন্দ দাশ
উপাধি- নির্জনতম কবি (বুদ্ধদেব বসু), চিত্ররূপময়(রবীন্দ্রনাথ), রূপসী বাংলার কবি।
জীবনকাল- ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৮৯৯(বরিশাল)– ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ (ট্রাম দুর্ঘটনায়)
পিতা- সত্যানন্দ দাশ
মাতা- কুসুমকুমারী দাশ (সেকালের বিখ্যাত কবি)
★শিক্ষাজীবন-
ম্যাট্রিক (১৯১৫), ব্রজমোহন স্কুল, বরিশাল।
আই এ (১৯১৭) ব্রজমোহন কলেজ
বি এ (১৯১৯) কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ
★সাহিত্যকর্মঃ
কাব্যগ্রন্থ- (বনলতা সেন) এই (মহাপৃথিবী) 'র (সাতটি তারার তিমির) (রূপসী বাংলা) য় বসে (বেলা অবেলা কালবেলা) য় (ঝরা পালক) দিয়ে (ধূসর পান্ডুলিপি) লিখেন।
উপন্যাস- মাল্যবান, সুতীর্থ।
প্রবন্ধগ্রন্থ- কবিতার কথা।

🔴গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ

🔷"সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ;"
🔷"কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিকল জল;"
🔷সবুজ ডাঙা ভরে কোন ঘাস অবিরিল?– মধুকূপী ঘাস।
🔷শঙখচিল কীসের মতো হাওয়ায় চঞ্চল?– পানের বন।
🔷এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কেমন?– সবচেয়ে সুন্দর করুণ।
🔷'বারুণী' কোথায় থাকে?– গঙ্গাসাগরে।
🔷কে কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে অবিরল জল দেয়?– বরুণ।
🔷ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুণ- লক্ষ্মীপেঁচা।
🔷লেবুর শাখা কোথায় নুয়ে থাকে?– অন্ধকারে ঘাসের উপর।
🔷সুদর্শন কোথায় উড়ে যায়?– নিজের ঘরে।
🔷রূপসীর শরীরের পর কোন রঙের শাড়ী লেগে থাকে?– হলুদ।
🔷রূপসীর নাম– শঙখমালা।
🔷কে বর দিয়েছিল বলে শঙখমালা এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিল?– বিশালাক্ষী (যে রমনীর চোখ আয়ত বা টানাটানা, দেবী দুর্গা।)
🔷কবিতায় উল্লেখিতঃ
দেব- দেবী — বরুন, বারুনী, বিশালাক্ষী।
রং- সবুজ, হলুদ, নীল।
গাছপালা- কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল।
নদ- নদী— কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা

🔴গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক লাইনঃ

🖋"এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে– সবচেয়ে সুন্দর করুণ :" – পৃতিবীর সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যে ভরপুর ও মায়ায় পরিপূর্ণ যে এই বাংলা সেটি বোঝানো হয়েছে।
🖋" সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ;"– বাংলার প্রভাতের সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা বোঝাতে গিয়ে মেঘের আড়াল থেকে গাঢ়ো লাল সূর্যের উদয়কে করমচা বা করমচা ফুলের রঙ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
🖋"সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাসাগরের বুকে– সেখানে বরুণ
কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল;" – জলসম্পদ দ্বারা পরিপূর্ণ বাংলার নদীমাতৃক জীবন ব্যবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে।
🖋"সেইখানে শঙখচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল,
সেইখানে লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ;" – প্রকৃতি ও জনজীবন ঐক্য ও সংহতিতে একাকার এই বাংলায় পানের বনের হাওয়া যে দূর আকাশের শঙখচিলকে চঞ্চল এবং ধানের গন্ধের মতো লক্ষ্মীপেঁচাও যেন প্রকৃতির পরিবেষ্টনীতে মিশে যায় সেটি বোঝানো হয়েছে।
🖋"সেখানে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের 'পর–" – বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য (পাকা ধানের রঙ) ও প্রকৃতি এবং জন জীবনের ঐক্যে এক আলাদা পরিবেশ গড়ে উঠে, জন্ম নেয় শঙখমালা নামক রূপসীর। এই বিশাল পৃথিবীর আর কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কবির মতে, বিশালাক্ষী বর দিয়েছিল বলেই শঙখমালা এই বাংলায় জন্মগ্রহণ করেছে।

🔴শব্দার্থঃ

নাটা- লতাকরঞ্চ; গোলাকার ফল বা তার বীজ।
বারুণী- বরুণানী। বরুণের স্ত্রী। জলের দেবী।
বিশালাক্ষী- যে রমনীর চোখ আয়ত বা টানাটানা। আয়তলোচনা সুন্দরী নারী।
সুদর্শন- এক ধরনের পোকা।

🔴ছন্দ ও সংকলনঃ

'এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে' কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত।

🔴মুলভাবঃ

বাংলার অবিরাম সৌন্দর্য ও জনজীবন এবং প্রকৃতির এক অনন্য ঐক্য বাংলাকে এই পৃথিবীর অন্যতম একটি সুন্দর স্থানের মর্যাদা দিয়েছে সেটি কবি আলোচ্য কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে প্রাণীর যে প্রাণের মিল পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে পাওয়া যায় না সেটি তুলে ধরতে এক ফোটাও কৃপণতা করেন নি কবি। নিজ জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাও ফুটে উঠে কবির ভাষায়।
সবার জন্য শুভকামনা। 🖤


মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form