🔴লেখক পরিচিতিঃ
নাম- কাজী নজরুল ইসলাম
জীবনকাল- (১৮৯৯– ১৯৭৬)
শিক্ষাজীবন- ১৩১৬ বঙ্গাব্দে গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারি পাস করেন এবপং সেখানেই ১বছর শিক্ষকতা করেন। বারো বছর বয়সে লেটোর দলে যোগ দেন এবং দলের জন্য পালাগান রচনা করেন।
সাহিত্যজীবনঃ
কাব্যগ্রন্থ- (সর্বহারা) (সন্ধ্যা) য় (চক্রবাক) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে (সাম্যবাদী) (অগ্নি- বীণা) এর কাছে যায়। সেখানে সে তাদের মাঝে হওয়া (বিষের বাঁশি) সম (সিন্ধু হিন্দোল) ও (প্রলয়- শিখা) বর্ণনা করে।
★১৯১৭ সালে ৪৯নম্বর বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন এবং করাচি গিয়ে হাবিলদার পদে উন্নীত হন। ১৯২০ এর শুরুতে বাঙালি পল্টন ভেঙে দিলে কলকাতায় আসেন এবং পরিপূর্ণভাবে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন।
★সাপ্তাহিক 'বিজলী' পত্রিকায় তার 'বিদ্রোহী' কবিতা প্রকাশিত হয়।
★লাঙল, নবযুগ, ধুমকেতু পত্রিকার সম্পাদনার
সাথে যুক্ত ছিলেন।
🔴গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্নঃ
✅কবি কীসের গান গাইছেন?– সাম্যের গান।
✅যেখানে মিশেছে হিন্দু- বৌদ্ধ- মুসলিম ক্রিশ্চান।
✅কে তুমি?— পার্সি? জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভীল, গারো? কনফুসিয়াস? চার্বাক—চেলা? বলে যাও, বল আরও!
✅পেটে- পিঠে, কাঁধে- মগজে কি বওয়ার কথা বলেছেন?– পুঁথি ও কেতাব।
✅মগজে কি হানার কথা বলেছেন?– শূল।
✅তাজা ফুল কোথায় ফুটে?– পথে।
✅সকল শাস্ত্র কোথায় পাবে বলে কবি বলেন?– নিজ প্রাণে।
✅সকল দেবতার দেউল কোথায়?– মানুষের হৃদয়।
✅দেবতা ঠাকুর কোথায় অমৃত হিয়ার হাসেন?– নিভৃত অন্তরালে।
✅বাঁশির কিশোর বলতে– শ্রীকৃষ্ণকে বুঝানো হয়েছে।
✅আরব দুলাল বলতে– আরবের সন্তান হজরত মুহম্মদ (স) কে বোঝানো হয়েছে।
✅হিন্দুধর্মের আবতার শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণীই শ্রীমদভগবদগীতা।
🔴গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক প্রশ্নঃ
🖊"যেখানে মিশেছে হিন্দু- বৌদ্ধ- মুসলিম ক্রিশ্চান।"– সকল ধর্মের প্রতি সম্প্রীতি প্রকাশ।
🖊"কেন এই পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?"– মানবধর্মকে উপলব্ধি না করে শুধুমাত্র বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠের অসারতা প্রকাশ।
🖊" দোকানে কেন এ দর কষাকষি? — পথে ফোটে তাজা ফুল!"– ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে মানবধর্মকে বড় করে দেখার আহ্বান।
🖊"সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুলে দেখ নিজ প্রাণ!"– সকল ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যেই সংকলিত আছে। আর তা হচ্ছে মানবতাবোধ, সমতার দৃষ্টিভঙ্গি।
🖊"তোমার হৃদয় বিশ্ব- দেউল সকলের দেবতার।"– মানবহৃদয়কে সকল সত্য ও পবিত্র সত্তার উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
🖊"হাসিছেন তিনি অমৃত- হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!"– নিজ হৃদয় যেখানে দেবতা ঠাকুর বাস করেন সেখানে না খুঁজে মৃত- পুঁথি- কঙ্কালে খোঁজার যে ভুল যে মানুষ করে তা দেখে মনের অন্তরালে দেবাতা ঠাকুর হাসেন।
🖊" এই হৃদয়ের ধ্যান- গুহা মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি, ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা- বেদনার ডাক শুনি।"– বেদনাহত মানুষের আর্তনাদে ব্যথিত হয়ে শাক্যমুনির সিংহাসন ত্যাগ করে তাদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে।
🖊"এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির- কাবা নাই।" – মানুষের হৃদয়ই যে সবচেয়ে বড় উপাসনালয়, ধর্মীয় আধার এবং পবিত্র স্থান তা বোঝানো হয়েছে।
🔴শব্দার্থঃ
🔸সাম্যবাদ- জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত এই মতবাদ।
🔸পার্সি- পারস্যদেশের বা ইরানের নাগরিক।
🔸জৈন- জিন বা মহাবীর প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতাবলম্বী জাতি।
🔸ইহুদি- প্রাচীন হিব্রু বা জু- জাতি ও ধর্ম- সম্প্রদায়ের মানুষ।
🔸সাঁওতাল, ভীল- ভারতীয় উপমহাদেশের আদিম নৃগোষ্ঠীবিশেষ।
🔸গারো- গারো পর্বত অঞ্চলের অধিবাসী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবিশেষ।
🔸কনফুসিয়াস- চীনা দার্শনিক। এখানে অনুসারীদের বোঝানো হয়েছে।
🔸চার্বাক- একজন ভারতীয় বস্তুবাদী দার্শনিক ও মুনি। তিনি বেদ, আত্মা,পরলোক ইত্যাদিতে আস্থাশীল ছিলেন না।
🔸দেউল- দেবালয়। মন্দির।
🔸নীলাচল- জগন্নাথক্ষেত্র। নীলবর্ণযুক্ত পাহাড়। যে বিশাল পাহাড়ের পরিসীমা নির্ধারণ করা যায় না।
🔸জেরুজালেম- বায়তুল- মোকাদ্দাস। ফিলিস্তিনে অবস্থিত এই স্থানটি মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের নিকট সমভাবে পুণ্যস্থান।
🔸শাক্যমুনি- শাকবংশে জন্ম যার। বুদ্ধদেব।
🔸কন্দরে- পর্বতের গুহা। (হৃদয়ের) গভীর গোপন স্থান।
🔴ছন্দ ও সংকলনঃ
আব্দুল কাদির সম্পাদিত বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত 'নজরুল রচনাবলি'র প্রথম খণ্ড থেকে "সাম্যবাদী" কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত "সাম্যবাদী" কাব্যের অন্তর্ভুক্ত এ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
🔴মুলভাবঃ
কবি সাম্যের গান গেয়ে বৈষম্যবিহীন অসাম্প্রদায়িক মানব সমাজ গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণের নামে পরিচিত হওয়ার চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করাকে উত্তম মনে করেন কবি। ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি এবং দ্বন্দ্বকে দূর করার জন্য কবি মানবধর্ম তথা প্রগাঢ় মানবিকতাবোধের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
সবার জন্য শুভকামনা। 🖤
মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়