অণুজীবরাও অংক কষে

মনে করুন আপনি একটা অনুজীব।
একদিন আপনি চিন্তা করলেন আপনি বিশ্বে একটা নতুন মহামারি বাধাবেন।

সুতরাং তখনি আপনি কাজে লেগে গেলেন।প্রথমেই সূচকীয় ভাবে বংশ বৃদ্ধি করে আপনার পোষকের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতঙ্গের বারোটা বাজিয়ে তাকে পটল তুলতে বাধ্য করলেন।

এটা করে থাকলে অণুজীব হিসেবে আপনি একটা হেরো।কারণ আপনার পোষক মারা গেলেও আপনিও তার সাথে চলে গেলেন।
কারণ আপনার পোষক মৃত হলে সে তার পরিবার পরিজনের ভেতর আপনার বংশধরদের ছড়িয়ে দিতে পারবে না। আর এটা না করতে পারলে আপনার মহামারী বাঁধানোর স্বপ্ন মাঠে মারা যাবে।
অনুজীব


মহামারী বাঁধাতে হলে আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি কি উপায়ে আপনি ছড়াবেন।
আপনি কি করোনা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো বায়ু বাহিত হয়ে হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়াবেন না কলেরার মতো পানি পানিবাহিত হয়ে ছড়াবেন ? কিংবা ম্যালেরিয়ার, ডেঙ্গু,ইয়োলো ফিবারের মতো কোন পতঙ্গের সাহায্য নিবেন?

যেভাবেই ছড়ান না কেন চেষ্টা করবেন যেন আপনার পোষক মৃত্যুর আগে ( মৃত্যুর পরও কিছু কিছু অণুজীব পরিবেশে অনেক বছর থেকে যেতে পারে এবং রোগ ছড়ায় যেমনঃAnthrax) আপনাকে পরিবার পরিজনের মাধ্যামে আপনাকে ছড়িয়ে দিতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে জনসংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ।জনসংখ্যা খুব বেশি হলে আপনার পোষক তাড়াতাড়ি মরলেও আপনি ছড়িয়ে দেবার মতো যথেষ্ট পোষক পেয়ে যাবেন।

যেমনটা vibrio cholerae করে থাকে । যেখানে জনসংখ্যা খুব বেশি এবং পারিষ্কার পানির অভাব সেখানে কলেরার মারাত্মক রূপে হাজির হয়।কারণ আপনার পোষক তাড়াতাড়ি মারা গেলেও আশপাশের পানিদূষিত করে আপনার ছাড়ানোর ব্যাবস্থা করে যাবেন যেহেতু জনসংখ্যা বেশি সেহেতু পরবর্তী পোষক খুঁজে পাতেও আপনাকে বেগ পেতে হবে না।

কিন্তু যেখানে জনসংখ্যা কম আপাকে বাধ্য হয়েই তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে কারণ আপনার পোষকদের সব মেরে ফললে আপনিও কয়েক ঘন্টার ভেতর মারা যাবেন।

এজন্যই যেখানে জনসংখ্যা বেশি সেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই সংক্রমক রোগ মারাত্মক আকারে দেখা দেয় এবং যেখানে জনসংখ্যা কম সেখানে রোগটা মৃদু আকার ধারণ করে।

পৃথিবীর বেশির অণুজীবই একাধিক পোষকের সাহায্য নিয়ে থাকে।যেমন ইয়োলো ফিবার ভাইরাস।
প্রাচীন কাল থেকেই রোগটা অাফ্রিকার মানুষেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে কিন্তু ১৮ শতাব্দীর শেষ দিকে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় রোগটা ব্যাপক ভাবে আক্রমণ করে।

রোগটার সফলতার কারণ হলো রোগটা শুধু মানুষ থেকে মানুষই ছড়াই না। রোগটা বানদেরও অাক্রমণ করে এবং মশার মাধ্যমে বানর থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে।
সুতরাং ভাইরাটাকে মজা দেখাতে হলে শুধু মানুষ থেকো মানুষের মাঝে ছড়ানো থামালেই চলবে না সব এমন সব মশাকে মেরে ফেলতে হবে যারা রোগটা বানর থেকে মানুষে ছড়াতে পারে।

কোন একটা সংক্রমক রোগ একটা এলাকা থেকে উধাও হয়েছে বলে মনে করা যাবে না ওটা সারাজীবনের মতো দূর হয়েছে কারণ রোগটা মানুষ ছাড়াও কোন বাদূড়, বানর বা কোন পাখির দেহেও লুকিয়ে থাকতে পারে। এবং আবার নতুন করে মানুষেকে অাক্রমণ করতে পারে।
আমরা গুটি বসন্ত( small pox) ভাইরাসকে নির্মুল করতে পেরিছি কারণ এটা শুধু মানুষকেই আক্রমণ করে।অন্যকোন পোষকের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকতে পারে না।
অণুজীবরা অনেক সময় কোন পোষকের ভিতর লুকিয়ে থাকতে পারে কোন বড়ধরণের ক্ষতি না করে বা অল্প রোগ প্রকাশ করে এবং টার্গেট পোষকের জন্য অপেক্ষা করে এধরণের পোষকে reservoir host বলা হয়ে থাকে।

আচ্ছা অনেক পোষক নিয়ে আলোচনা হলো এবার আপনি চিন্তা করুন আপনি আপনার পোষক বা হোস্টের বাচ্চাকাচ্চা দের ভেতর ছড়াবেন নাকি নিজে তাড়াতাড়ি বংশবিস্তার করে তাকে মরে ফেলে নতুন পোষকের খোঁজ করবেন?

প্রথমটা পছন্দ হলে আপনি vertical transmission করছেন। এভাবে আপনাকে যথেষ্ট খাটতে হবে এবং আপনার পোষকে বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু আপানি ছড়িয়ে যাবার প্রায় নিশ্চিত সুযোগ পাচ্ছেন।
এভাবে সাধারণত HIV বা হেপাটাইটিস - বি
- এর মতো DNA ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

Horizontal transmission - এর বেলায় পোষকে বাচ্চাকাচ্চাদের ভিতর ছড়ানোর চিন্তা না করে অন্য সম্ভব্য পোষকের উপর নজর দিতে।তাই পোষকের বংশবৃদ্ধি কারার জন্য অপেক্ষা করা সমীচীন না। কিন্তু আপনার ছড়িয়ে পড়া নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা রয়েছে । প্রকৃতিতে বেশির ভাগ অনুজীব এই উপায়ে ছড়িয়ে পড়ে।

যা হোক একটা সফল অণুজীবের ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেক বিষয়ের দিকে নজর রাখত হয়।

Source: 1.Spillover by David Quammen
2.The Ghost Map by Steven Johnson
3.https://www.wikipedia.org/
ছবিঃ Google

Writer: Sabrina Shamme

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form