পীথাগোরাসের উপপাদ্য জানেন না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। ছেলে বুড়ো সবাই জানে a²+b²=c²। কিন্তু আপনি জানেন কি (1/a²)+(1/b²) এর সাথেও পীথাগোরাসের একটা এক্সটেনশন আছে? আপনি জানেন কি পীথাগোরাস উপপাদ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রমাণটা করেন আমেরিকার এক প্রেসিডেন্ট? আপনি জানেন, বর্গের ক্ষেত্রফল নিয়ে পীথাগোরাস উপপাদ্য কথা বলে। কিন্তু জানেন কি পঞ্চভুজের ক্ষেত্রফল দিয়েও পীথাগোরাস উপপাদ্য বিবৃত করা যায়! পীথাগোরাস উপপাদ্যের পথে পথে লুকিয়ে আছে নানা অজানা কথা, যা অতি সাধারণ হলেও আমাদের জানার বাইরে। আজকের লেখায় তুলে আনার চেষ্টা করব এই বিষয়গুলোই, যা জানতে খুব বড় গণিতবিদ হওয়ার দরকার পড়ে না। সামান্য আগ্রহই আপনাকে এই জানা উপপাদ্যের অজানা দিকগুলো জানাতে সাহায্য করতে পারে!
পীথাগোরাস উপপাদ্য ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতিতে সমকোণী ত্রিভুজের তিন বাহুর সম্পর্কের কথা বলে। এই উপপাদ্য গণিতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উপায়ে প্রমাণিত উপপাদ্য। "The Pythagorean Proposition" নামে একটা মোটাসোটা সাইজের বই আছে, যেখানে ৩৭০টি উপায়ে এই উপপাদ্যের প্রমাণ আছে! গ্রীক দার্শনিক পীথাগোরাসের নামানুসারে এই উপপাদ্যের নামকরণ করা হলেও এই উপপাদ্যের ইতিহাস গণিতবিদদের কাছে এখনো ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে। এই উপপাদ্যকে সাধারণীকৃত করা হয়েছে সমকোণী ত্রিভুজ থেকে যেকোন ত্রিভুজে, ইউক্লিডিয়ান স্পেস থেকে হায়ার ডাইমেনশনাল স্পেসে, এমনকি উচ্চমাত্রিক তলে বিভিন্ন ঘনবস্তুর জন্যেও।
আজকে যে বিষয়গুলো আলোচনার চেষ্টা করবো:-
পীথাগোরাসের উপপাদ্যের ইতিহাস-নানা মুনির নানা প্রমাণ (ভয় পাবেন না, প্রমাণ থাকবে না!)
-Spiral of Pythagoras
-Reciprocal Pythagoras theroem
-পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী
-বর্গ ছাড়া অন্যান্য বহুভুজের জন্য পীথাগোরাস
-পীথাগোরাস থেকে ফার্মাট
-লীলাবতীতে পীথাগোরাস
-Arbitary Triangle ও Non-Euclidian Plane এ পীথাগোরাস উপপাদ্য
একদম শুরুতে কিছু না বললেই না। পীথাগোরাস উপপাদ্যের বিবৃতি বলে, সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি আর লম্বে যদি এদের বাহুর সমান বর্গ আঁকা হয়, তাদের ক্ষেত্রফলের যোগফল অতিভুজে অঙ্কিত বর্গের ক্ষেত্রফলের সমান। সহজ কথায়, যদি a হয় ভূমি, b হয় লম্ব আর c অতিভুজ, তাহলে a²+b²=c²। আরেকটা বিষয় বলে রাখি, সমকোণী ত্রিভুজের তিন বাহুর দৈর্ঘ্যকে একত্রে বলা হয় পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী। সবচেয়ে ছোট ত্রয়ী হল (3, 4, 5)।
আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করি ইতিহাস দিয়ে।
পীথাগোরাস উপপাদ্যের ইতিহাসঃ উপপাদ্যের নাম দেখে মোটেও ভাববেন না এই উপপাদ্য পীথাগোরাস দিয়েছেন, কিংবা তিনি প্রমাণ করেছেন। এই উপপাদ্যের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন প্রয়োগ পরোক্ষভাবে চোখে পড়ে মিশরীয় সভ্যতায়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-১৭৮০ সালের মধ্যে সৃষ্ট এক মিশরীয় প্যাপিরাসে প্রথম দেখা মেলে এক সমস্যার যার সমাধান হল একটি পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী (6, 8, 10)। তবে এখানে ত্রিভুজের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে মহান হাম্বুরাবির শাসনামলের (১৭৯০-১৭৫০ খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক) কয়েকটি মেসোপটেমীয় ট্যাবলেটে উল্লেখ পাওয়া যায় কয়েকটি পীথাগোরিয়ান ত্রয়ীর। স্থাপত্যের বিভিন্ন কাজে মাপজোখের প্রয়োজনে তাদের দরকার পড়ে সমকোণ পরিমাপ করার। আর এই পরিমাপের পদ্ধতিতে চোখে পড়ে সেই সময়ে মেসোপটেমীয় সভ্যতায় কীভাবে পীথাগোরাসের উপপাদ্য প্রয়োগ করা হতো। তারা একটা লম্বা দড়িতে সমান দূরত্বে বেশ কয়েকটি গিঁট দেন। এরপর তিন নম্বর গিঁটে একটা ভাঁজ দেন, এরপর আবার চার নম্বর গিঁটে আরেকটা ভাঁজ দিয়ে আবার পঞ্চম গিঁটে গিয়ে দড়ি কেটে প্রথম গিঁটে জোড়া লাগিয়ে একটা ত্রিভুজ তৈরি করেন। সহজ কথায় একটা ত্রিভুজ বানানো হল, যার তিন বাহুর দৈর্ঘ্য 3, 4, 5 একক। (মনে মনে আরেকবার চিন্তা করে নিন)। এভাবে যে কোণ তৈরি হলো তা সমকোণ (কারণ তিন বাহুর দৈর্ঘ্য ৩, ৪, ৫ একক। 3²+4²=5²)। এভাবে তারা স্থাপত্যবিদ্যায় সমকোণের পরিমাপ করতো। এ থেকে প্রমাণ মেলে পীথাগোরাসের জন্মের প্রায় ১০০০ বছর পূর্বেও মানুষ এই বিষয়টি জানত। ভারতীয় ও চীনা গণিতবিদগণও যে এই উপপাদ্য জানতেন তারও প্রমাণ মেলে। এমনকি অনেকের ধারণা চীনেই প্রথম এই উপপাদ্যের উৎপত্তি। প্রাচীন চীনে এই উপপাদ্য Gougu Theorem নামে পরিচিত ছিল বলেও অনেকে মনে করেন।
এরপর পীথাগোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৯-৪৭৫) গ্রীক সভ্যতায় পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি নির্ণয় করেন মাত্র। তখন গ্রীক দার্শনিকদের বিস্তার এতটাই বেশি ছিল যে, এই উপপাদ্যটি পরবর্তীতে পীথাগোরাসের উপপাদ্য নামে পরিচিতি পায়। তবে Thomas L Heath এর মতে পীথাগোরাস এর সময় থেকে পরবর্তী প্রথম পাঁচ শতকে গ্রীক সভ্যতায় কোন জ্যামিতিক আবিষ্কারেরই উল্লেখ নেই!
সবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ এর দিকে এই উপপাদ্য প্রমাণসহ ইউক্লিডের Elements এ স্থান পায়।
এরপর পীথাগোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৯-৪৭৫) গ্রীক সভ্যতায় পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী নির্ণয়ের একটি পদ্ধতি নির্ণয় করেন মাত্র। তখন গ্রীক দার্শনিকদের বিস্তার এতটাই বেশি ছিল যে, এই উপপাদ্যটি পরবর্তীতে পীথাগোরাসের উপপাদ্য নামে পরিচিতি পায়। তবে Thomas L Heath এর মতে পীথাগোরাস এর সময় থেকে পরবর্তী প্রথম পাঁচ শতকে গ্রীক সভ্যতায় কোন জ্যামিতিক আবিষ্কারেরই উল্লেখ নেই!
সবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ এর দিকে এই উপপাদ্য প্রমাণসহ ইউক্লিডের Elements এ স্থান পায়।
নানা মুনির নানা প্রমাণঃ আমাদের বইতে সবচেয়ে বিদঘুটে যে প্রমাণ দেখা যায়, তিন বাহুতে তিনটি বর্গ এঁকে নানা জটিলতার সাহায্যে যে প্রমাণ, সেটির উল্লেখ পাওয়া যায় Elements এ। সম্ভবত এটি ইউক্লিডের প্রমাণ। তবে এই প্রমাণের আগে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কয়েকটি প্রমাণ প্রচলিত ছিল। তবে আজকাল সদৃশ ত্রিভুজের সাহায্যে মাত্র দুই লাইনের একটি জনপ্রিয় প্রমাণ রয়েছে, তবে মাধ্যমিক স্তরের আগে যেহেতু সদৃশ ত্রিভুজ পড়ানো হয় না, তাই আমাদের বইগুলোতে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না। আপনি জেনে অবাক হতে পারেন, মহামতি আইনস্টাইনও এই উপপাদ্যের একটি প্রমাণ করেছিলেন, সেটি Einstain's Proof by Dissection নামে পরিচিত (আগ্রহীরা গুগল করে বিস্তারিত জানতে পারেন!)। আমাদের বইয়ে সম্ভবত অষ্টম শ্রেণিতে ট্রাপিজিয়াম দিয়ে এই উপপাদ্যের একটা প্রমাণ ছিল (এখনো আছে কিনা জানা নেই), এটা ইউক্লিডের প্রমাণের তুলনায় অনেক সহজ। এই প্রমাণটা দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট James A Garfield। এছাড়াও পুনর্বিন্যাস, জ্যামিতিক, বীজগাণিতিক, ক্যালকুলাস নানা উপায়ে এই উপপাদ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্যালকুলাসের একটা প্রমাণ এতই চমকপ্রদ যে, এটা উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না!
মনে করুন, একটা ত্রিভুজের ভূমি a, লম্ব x, অতিভুজ y। x এর সামান্য পরিবর্তন dx এর জন্য y এর পরিবর্তন dy। এখন x, y নিয়ে যে ত্রিভুজ, তার সাথে dx, dy নিয়ে যে ত্রিভুজ তারা সদৃশ। তাহলে, x/y = dy/dx (ত্রিভুজটা আঁকলেই বুঝবেন)
⇒ xdx = ydy
⇒ ∫xdx = ∫ydy
⇒ x² = y² + C
যখন x=0, y=a। এভাবে প্রমাণিত হল a²+x²=y²!
মনে করুন, একটা ত্রিভুজের ভূমি a, লম্ব x, অতিভুজ y। x এর সামান্য পরিবর্তন dx এর জন্য y এর পরিবর্তন dy। এখন x, y নিয়ে যে ত্রিভুজ, তার সাথে dx, dy নিয়ে যে ত্রিভুজ তারা সদৃশ। তাহলে, x/y = dy/dx (ত্রিভুজটা আঁকলেই বুঝবেন)
⇒ xdx = ydy
⇒ ∫xdx = ∫ydy
⇒ x² = y² + C
যখন x=0, y=a। এভাবে প্রমাণিত হল a²+x²=y²!
Spiral Of Pythagoras: অনেকে এটাকে থিওডোরাসের স্পাইরাল নামেও অভিহিত করেছেন। একটা 1 একক ভূমি ও 1 একক লম্ব বিশিষ্ট ত্রিভুজের কথা ভাবুন, এর অতিভুজ √2। এবার ওই অতিভুজকেই ভূমি ধরে এর ওপর আরেকটা 1 একক লম্ব আঁকুন। নতুন ত্রিভুজের অতিভুজ হবে √3। একে ভূমি ধরে আরেকটা লম্ব আঁকুন 1 এককের। এই ত্রিভুজের ভূমি √4। এভাবে আপনি √5 কিংবা √6 সবই আঁকতে পারবেন, অর্থাৎ এখানে আপনি অমূলদ মানের দৈর্ঘ্য আঁকতে পারেন। মজার বিষয় দুয়েকটা আঁকলেই বুঝবেন এটা একটা স্পাইরালের মত হচ্ছে। এখানে সরাসরি ছবি দিতে না পারায় আমি কমেন্টে একটা স্পাইরালের ছবি দিয়ে দিব। আপনারা গুগলে এসম্পর্কে আরও অনেক ছবি দেখতে পাবেন, সেখান থেকে আপনি টিয়াপাখি কিংবা শামুকও আঁকতে পারেন। বাস্তবেও শামুক বা টিয়াপাখির ঘাড়ে এসব অমূলদ মানের অনুপাত থাকে। প্রকৃতিতে পীথাগোরাসের এক অনন্য উদাহরণ! তবে স্পাইরালের কথা বলাটার উদ্দেশ্য কিন্তু এর নান্দনিক ছবি দেখানো না। এর উদ্দেশ্য যে সংখ্যাগুলো আমরা লিখে কখনোই প্রকাশ করতে পারবো না, কী সরলভাবে জ্যামিতিক উপায়ে তাদের আমরা চর্মচক্ষু দিয়ে দেখতে পারছি!
তবে এখানেও পীথাগোরাসের নিজস্ব অবদান সামান্যই! তিনি প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন, সব সংখ্যাকেই পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়, অর্থাৎ তিনি সরাসরি অমূলদ সংখ্যার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। কথিত আছে, পীথাগোরাসের এক অনুসারী Hippapus of Metapontum কে সাগরে ডুবিয়া মারা হয়েছিল, কারণ তিনি অমূলদ সংখ্যার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন!
তবে এখানেও পীথাগোরাসের নিজস্ব অবদান সামান্যই! তিনি প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন, সব সংখ্যাকেই পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়, অর্থাৎ তিনি সরাসরি অমূলদ সংখ্যার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। কথিত আছে, পীথাগোরাসের এক অনুসারী Hippapus of Metapontum কে সাগরে ডুবিয়া মারা হয়েছিল, কারণ তিনি অমূলদ সংখ্যার অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন!
পীথাগোরিয়ান ত্রয়ীঃ আগেই বলেছি, সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলো যদি সবগুলোই পূর্ণসাংখ্যিক হয়, অর্থাৎ a²+b²=c² এই সমীকরণের যে সমাধানগুলো পূর্ণসংখ্যা, তারাই পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী। যেমন (1, 1, √2) সমকোণী ত্রিভুজ গঠন করলেও এদের সব বাহু পূর্ণসংখ্যা নয়, তাই এরা পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী না। কিন্তু (5, 12, 13) পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী। (3, 4, 5) সবচেয়ে ছোট পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী। এবার এই ত্রয়ীকে দুই দিয়ে গুণ করে দেখুন (6, 8, 10)। এটাও ত্রয়ী, কিন্তু এটা অন্য একটা ত্রয়ীর সরল গুণিতক, এটা তো মৌলিক কিছু হল না। তাই যেসব ত্রয়ী সহমৌলিক, তাদের বলে Primitive triples বা প্রিমিটিভ ত্রয়ী। কয়েকটি প্রিমিটিভ ত্রয়ী হল: (3, 4, 5), (5, 12, 13), (7, 24, 25), (8, 15, 17), (9, 40, 41), (11, 60, 61), (12, 35, 37)... এরকম আরও অনেক। ইউক্লিড সাহেব তো প্রমাণ করেই দিয়েছেন এরকম অসীম সংখ্যক প্রিমিটিভ ত্রয়ী আছে! এই ত্রয়ীগুলোর দিকে আরেকবার তাকান। কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাচ্ছেন কি? হয় এরা সবই বিজোড়, না হলে দুটি বিজোড়, একটি জোড়! আপনি কখনোই এমন প্রিমিটিভ ত্রয়ী খুঁজে পাবেন না, যেগুলোর সবগুলোই বিজোড়, বা দুটি জোড়, একটি বিজোড়! (একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন কেন এমন হয়? একটু হিন্ট দিয়ে দিই, দুটি বিজোড়ের যোগফল কিন্তু সবসময় জোড়!) আরও কিছু চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা যাক!
-- (c-a)(c-b)/2 সবসময়ই একটি পূর্ণবর্গ! (এখানে c অতিভুজ) যেমন ধরুন, (৫, ১২, ১৩) এর জন্য (13-12)(13-5)/
-- কোন প্রিমিটিভ ত্রয়ীতে সর্বোচ্চ একটাই পূর্ণবর্গ সংখ্যা আছে। আপনি এমন একটাও ত্রয়ী খুঁজে পাবেন না, যেখানে একাধিক বর্গসংখ্যা আছে, তবে বর্গ ছাড়া ত্রয়ী অনেক পাওয়া যাবে।
-- a, b এর যেকোন একটি 3 এর গুণিতক।
-- a, b এর যেকোন একটি 4 এর গুণিতক।
-- a, b, c এর যেকোন একটি 5 এর গুণিতক।
-- প্রিমিটিভ ত্রয়ীর c কে আপনি অবশ্যই (4n+1) আকারে লিখতে পারবেন।
-- সবচেয়ে চমকপ্রদ যে বৈশিষ্ট্য সেটা হল, কোন সমকোণী ত্রিভুজের বাহুগুলো পূর্ণসাংখ্যিক হলে তাদের দুটি সূক্ষ্মকোণের একটিও ডিগ্রীতে মূলদ হবে না! মানে আপনি যদি (৩, ৪, ৫) বাহু বিশিষ্ট ত্রিভুজের কোণ পরিমাপ করেন, দেখবেন একটা কোণ ৯০ ডিগ্রী, বাকি একটি কোণও মূলদ নয়! Niven's theorem বলে ০-৯০ এর মাঝে কেবল তিনটি মানের জন্যই sine অনুপাত মূলদ আসে, সেগুলো হল, ০, ৩০, ৯০।
ইউক্লিড কিন্তু পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী বের করার জন্য একটি ম্যাজিক ফর্মুলাও বের করেছিলেন! আপনি যেকোন দুটি ধনাত্মক সংখ্যা m, n ভাবুন। যেকোন মানের জন্যই, (m² - n², 2mn, m² + n²) একটি পীথাগোরিয়ান ত্রয়ী আউটপুট দেবে! যেমন ধরুন, m=3, n=1 হলে (8, 6, 10)। ম্যাজিক ফর্মুলাই বটে, না? আরেকবার ওদিকে তাকান, প্রথম দুটি বর্গ করে যোগ করলে সবসময়ই কি আপনি তৃতীয়টির বর্গ পাবেন না?
আপনার m, n যদি সহমৌলিক হয়, এবং উভয়ই বিজোড় না হয়, তাহলে এই ফর্মুলা প্রিমিটিভ ত্রয়ী জেনারেট করবে।
Pythagorean quadraple নামে আরেকটা টার্ম আছে, যেখানে a²+b²+c²=d²।
ফিবোনাচ্চি সিরিজে পীথাগোরিয়ান ত্রয়ীঃ ফিবোনাচ্চি সিরিজ আমাদের কাছে এক বিস্ময়ের নাম! সেখানেও আছে পীথাগোরাসের ত্রয়ী! নিচের ফিবোনাক্কি সিরিজের দিকে তাকান:
1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21, 34, 55, 89....
এখানে F₅=5, F₇=13, F₉=34.... (F₅ মানে পঞ্চম পদ)
এবার দেখুন, 3²+4²=5²=(F₅)²
5²+12²=13²=(F₇)
16²+30²=34²=(F₉
অর্থাৎ, পঞ্চম ফিবোনাচ্চি পদের পর থেকে সব বিজোড় ফিবোনাচ্চি পদই পীথাগোরিয়ান ত্রয়ীর একেকটি অতিভুজ!
লীলাবতীতে পীথাগোরাসঃ দ্বিতীয় ভাস্করের "সিদ্ধান্ত শিরোমণি" র কথা অনেকেই জানেন। এরই এক খণ্ডের নাম লীলাবতী। এই নামকরণের পেছনে একাধিক ইতিহাস আছে। পরবর্তীতে এই বিষয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। তারই একটা ছোটখাট ট্রেইলার দিয়ে দিলে মন্দ হয় না!
ভাস্করের মেয়ের নাম ছিল লীলাবতী। জম্মের পর তার পিতা তার কোষ্ঠী বিচার করে জানতে পারেন মেয়ের ভাগ্য বলছে সে অল্পবয়সে বিধবা হতে পারে। এজন্য তিনি বিয়ের সময় শুভলগ্ন নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। পাছে লগ্ন পেরিয়ে না যায়, সে উপলক্ষে করলেন আয়োজন। কথিত আছে, কোন পণ্ডিতের কথামতো একটি কাপের তলায় ছিদ্র করে তা পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে তাতে ধীরে ধীরে পানি উঠে ডুবতে লাগল। যতক্ষণ ডুবতে থাকে, ততক্ষণ শুভলগ্ন বিরাজ করে। তিনি মেয়েকে নিষেধ করেন তার কাছে যেতে। কিন্তু কৌতূহলের বশে সেখানে উপস্থিত হন লীলাবতী। দুর্ভাগ্যক্রমে তার নাকের একটি ছোট্ট মুক্তো খসে সেই ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, ফলে কাপে আর পানি ভরে সেটি নিচে পড়তে পারে না এবং সমস্ত আয়োজন পণ্ড হয়ে যায়। পরে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন লীলাবতী। মেয়ের দুঃখে কাতর ভাস্কর তখন মেয়ের সময় কাটানোর জন্য তাকে গণিত শেখাতে শুরু করেন! এটি মূলত একটি বই যেখানে লীলাবতীর সাথে বিভিন্ন কথোপকথনের মাধ্যমে উঠে এসেছে গণিতের নানা বিষয়।
এরকমই একটি সমস্যা পদ্ম সমস্যা। এখানে আমি সরাসরি এটি উল্লেখ করছি।
"সারস আর হংসপূর্ণ সরোবরে
জলতলের অর্ধহস্ত উপরে
পদ্মকলি এক ঋজু সুঠাম দাঁড়িয়ে।
অপরাহ্নের সমীকরণ
দেহে জাগায় কম্পন
আদি অবস্থানের দুই হস্ত দূরে
পরশে পদ্মকলি জলকে যায় নাড়িয়ে।
শুনলে এই বর্ণনা
করো এবার গণনা
জলের গভীরতা আর পদ্মের উচ্চতা।"
আচ্ছা, সমস্যাটা আগে বুঝিয়ে দিই! আপনারা হয়ত জানেন পদ্মফুল কিন্তু কচুরিপানার মত পানিতে ভেসে বেড়ায় না। এদের মূল জলের গভীরে তলদেশে প্রোথিত থাকে। যেখানে এর মূল, সেটিকে একটি বৃত্তের কেন্দ্র কল্পনা করুন। তাহলে বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে জলের গভীরতা ও পানির উপরিতল থেকে পদ্মের উচ্চতার যোগফলের সমান। বাতাসে যখন এটি সরে যায়, তখন বৃত্ত বরাবর এটি এগিয়ে যায় এবং দুই হাত এগিয়ে গিয়ে জলস্পর্শ করে। পীথাগোরাসের উপপাদ্যের সাহায্যে আপনি খুব সহজে এটি করে ফেলতে পারেন। কিন্তু এটি বলার আসল উদ্দেশ্য হল, ভাস্কর এটিকে সেভাবে সমাধান করেন নি, তিনি বৃত্তের উপপাদ্য ব্যাবহার করে এর সমাধান করেন। আর মজার ব্যাপার হল তিনি যেভাবে এর সমাধান করেছেন সেটি ব্যবহার করে নতুন এক উপায়ে পীথাগোরাস উপপাদ্য প্রমাণ করা যায়! লীলাবতী বইয়ের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পীথাগোরাস উপপাদ্যের এক নতুন প্রমাণ উন্মোচিত হল।
Reciprocal Pythagoras Theorom: কাউকে যদি বলেন পীথাগোরাস উপপাদ্য কী, নিঃসন্দেহে তার কাছে আশা করা যায় a²+b²=c² এই বাক্যটি! কিন্তু কেউ যদি হুট করে বলে বসে (1/a²)+(1/ b²)=(1/d²)! এখানে a, b প্রচলিত অর্থই বহন করে, শুধু d এর পরিচয়টা জানাতে হবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এখানে সমীকরণের বামপক্ষটা কেবল উলটে গেছে, এর গালভরা নাম রেসিপ্রোকাল! এই সমীকরণটাও কিন্তু যেকোন সমকোণী ত্রিভুজের জন্য সত্যি, ঠিক যেমন পীথাগোরাসের সমীকরণ! এটা পীথাগোরাস সমীকরণের এক বিশেষ এক্সটেনশন, যা পীথাগোরাসের রেসিপ্রোকাল থিওরেম নামে পরিচিত।
d হল উচ্চতা, অতিভুজ হতে শীর্ষের উচ্চতা। একটা উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক। সাধারণ একটা সমকোণী ত্রিভুজের কথাই চিন্তা করা যাক, যার বাহুগুলো 3, 4, 5। এর ক্ষেত্রফল 6 বর্গএকক। তাহলে d কত?
(1/ 2)XঅতিভুজXঅতিভুজ হতে সমকোণের শীর্ষের উচ্চতা (d) = 6 ~~ এখান থেকে d এর মান (12/5)। তাহলে (1/a²)+(1/b²) = (1/3²)+(1/4²) = (5²/12²) = (1/d²)। অন্য যেকোন সমকোণী ত্রিভুজের জন্যও আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন, এটা কিন্তু সবসময়ই সত্য! তাহলে পীথাগোরাসের উপপাদ্যের পাশাপাশি রেসিপ্রোকালটাও আমাদের জানা হয়ে গেল!
বর্গ ছাড়া অন্যান্য বাহুভুজের জন্য পীথাগোরাস উপপাদ্যঃ পীথাগোরাস উপপাদ্যের বিবৃতি আরেকবার ভাবুন। লম্ব ও ভূমিতে অঙ্কিত বর্গের যোগফল অতিভুজে অঙ্কিত বর্গের ক্ষেত্রফলের সমান। এবার আপনার ইচ্ছে হল, বর্গ না এঁকে আপনি আঁকবেন সুষম পঞ্চভুজ। আপনার জন্য সুখবর, এবারও যোগফল একই থাকবে! আপনি যদি সমবাহু ত্রিভুজ আঁকতেন, তাও ক্ষেত্রফলের সম্পর্ক একই থাকত! আসলে যেকোন বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের জন্যই এই সম্পর্ক সত্য।
আরেকটু ভেঙে বলি। ত্রিভুজের তিন বাহু যদি a, b, c হয়; তাহলে a ও b এর সমান বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফলের যোগফল c বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফলের সমান হবে। খুব সহজেই এটি বোঝা যায়। a²+b²=c², এই সমীকরণকে (√3)/4 দিয়ে গুণ করলেই দেখা যায়, বর্গের পাশাপাশি ত্রিভুজের জন্যও এটি সত্যি। আসলে সব সুষম দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রেই (বাহু)² থাকায় এই উপপাদ্যকে বিস্তৃত করা সম্ভব। এমনকি π দিয়ে গুণ করে বৃত্তের ক্ষেত্রফলের জন্যও এই উপপাদ্য বিস্তৃত করা যায়।
পীথাগোরাস ও ফার্মাটঃ অনেকেই ফার্মাটের শেষ উপপাদ্যের গল্পটা জানেন। এই গল্পকেই পীথাগোরাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য এই অংশটুকু লেখা। পীথাগোরাস সমীকরণ আমাদের বলছে a²+b²=c², কিন্তু কখনো শুনেছেন কি, a³+b³=c³ কিংবা আরও উচ্চঘাতের জন্য? আসলে শখের গণিতবিদ ফার্মাটের (মতান্তরে ফার্মা!) একটা উপপাদ্য আছে, যা ফার্মাটের শেষ উপপাদ্য নামে পরিচিত। এই উপপাদ্য বলে aⁿ+bⁿ=cⁿ এখানে a, b, c এর পূর্ণসাংখ্যিক সমাধান থাকলে n এর মান কখনোই 2 এর বেশি হওয়া সম্ভব নয়।
এই উপপাদ্যের পেছনে একটা গল্প আছে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে, তবে প্রসঙ্গক্রমে একটু না বললেই নয়। ফার্মাট ছিলেন শখের গণিতবিদ। তাঁর অভ্যাস ছিল নতুন কিছু পেলে ডায়োফ্যান্টাসের Arithmetica বইয়ের কোণায় লিখে রাখা। তাঁর বই ঘেঁটে পরবর্তীতে সংখ্যাতত্ত্বের বিভিন্ন উপপাদ্য প্রমাণসহ বেরিয়ে এসেছে, যেমন ফার্মা'স লিটল থিওরেম। এভাবে অনেক উপপাদ্যই উঠে এসেছে, কিন্তু একটি উপপাদ্যের প্রমাণ তিনি উল্লেখ করে যাননি। তবে বইয়ের কোণায় ছোট্ট একটি নোট দিয়ে যান তিনি: এই উপপাদ্যের একটা অতি সাধারণ প্রমাণ আমি পেয়েছি, তবে জায়গার অভাবে এখানে সেটা উল্লেখ করছি না! পরবর্তীতে বিভিন্ন গণিতবিদ নানাভাবে চেষ্টা করেও এটি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। বিভিন্ন ধাপে আংশিকভাবে এই কনজেকচারটি প্রমাণিত হলেও ১৯৯৫ সালে Wiles সার্বিকভাবে প্রমাণ করে এই কনজেকচারটি পূর্ণাঙ্গভাবে উপপাদ্য করে তোলেন। পরবর্তী বছর এজন্য তাঁকে গণিতের নোবেল খ্যাত অ্যাবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তবে তিনি প্রমাণের জন্য যে উচ্চতর থিওরি ব্যবহার করেছিলেন, ফার্মাটের সময় সেগুলো ছিলই না! কে জানে, হয়ত আরো সহজতর কোন প্রমাণ আমাদের চোখের আড়ালেই লুকিয়ে আছে!
নন-ইউক্লিডিয়ান তলে পীথাগোরাসের সমীকরণঃ নন ইউক্লিডিয়ান তল বলতে বোঝায় দ্বিমাত্রিক তল। তবে আরও অনেক রকম তল থাকলে পারে, যেমন গোলকাকৃতি, হাইপারবোলা। Elliptical geometry, সহজ করে বললে উপবৃত্তাকার তলে পীথাগোরাসের উপপাদ্য খুব সহজেই রূপান্তরিত করা যায়। দ্বিমাত্রিক তলে পীথাগোরাস সমীকরণের শর্ত সমকোণী ত্রিভুজ, আর উপবৃত্তাকার জ্যামিতিতে ত্রিভুজের দুই কোণের সমষ্টি অন্য কোণের সমান। A+B=C হলে a ও b ব্যাসবিশিষ্ট বৃত্তের ক্ষেত্রফলের যোগফল c ব্যাসবিশিষ্ট বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান।
আর Spherical geometry ও Hyperbolic geometry তে এই সম্পর্ক এতই জটিল যে, লেখক তা বোঝার জন্য এখনো যথেষ্ট বড় হয় নি!
(এবার সমস্যা পর্ব)
সব লেখাতেই আমি চেষ্টা করি কোন সমস্যার মাধ্যমে লেখা শেষ করতে। পীথাগোরাস সম্পর্কিত দুটি সমস্যা দিয়ে লেখা শেষ করব।
১. আপনাকে স্কেল দেয়া হল যেখানে সব দাগ উঠে গেছে, শুধু 1 আর 10 এককের দাগটি দেখা যাচ্ছে। আর একটি কম্পাস দিয়ে আপনাকে বলা হল √10 এর সমান দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে। আপনি কিভাবে করবেন?
২. সমকেন্দ্রিক দুটি বৃত্ত আছে, একটি সরলরেখা আঁকা হল যেটি একইসাথে বড় বৃত্তের জ্যা, ছোট বৃত্তের স্পর্শক। এই জ্যায়ের দৈর্ঘ্য 2 একক হলে উভয় বৃত্তের ক্ষেত্রফলের পার্থক্য কত?
দ্বিতীয় সমস্যাটার সমাধান এতই চমকপ্রদ যে এর সমাধানটা আমি এখানে উল্লেখ করে পাঠকের সমাধানের আনন্দ নষ্ট করতে চাই না, সে দায়িত্ব পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে এটুকু বলে দিই, উত্তর হল π!
আর প্রথম সমস্যাটাও অসাধারণ, তবে এখানে এর সমাধানটা আমি দিয়ে দিলাম। আপনার স্কেল যেহেতু 1 আর 10 একক পরিমাপ করতে পারে, তাহলে আপনি (10+1) ও (10-1) পরিমাপ করতে পারবেন। এবার কম্পাস দিয়ে সমকোণ এঁকে একটা সমকোণী ত্রিভুজ আঁকবেন, যার অতিভুজ (10+1) আর ভূমি (10-1)। তাহলে এর আরেকটা বাহু হবে= √{(10+1)² - (10-1)²} = √(4x10) = 2√10। এবার কম্পাস দিয়ে একে সমদ্বিখণ্ডিত করলেই হল।
ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
লিখাঃ মোহাইমিনুল ইসলাম
সদস্য, ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া (https://en.wikipedia.org/wiki/Pythagorean_theorem)
প্রাণের মাঝে গণিত বাজে (সৌমিত্র চক্রকবর্তী)
The Art and Craft of Problem Solving (Paul, Zeitz)
জ্যামিতির যত কৌশল (দীপু সরকার ও অনুপম পাল)
নিউরনে অনুরণন (মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মোঃ কায়কোবাদ)
d হল উচ্চতা, অতিভুজ হতে শীর্ষের উচ্চতা। একটা উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক। সাধারণ একটা সমকোণী ত্রিভুজের কথাই চিন্তা করা যাক, যার বাহুগুলো 3, 4, 5। এর ক্ষেত্রফল 6 বর্গএকক। তাহলে d কত?
(1/
বর্গ ছাড়া অন্যান্য বাহুভুজের জন্য পীথাগোরাস উপপাদ্যঃ পীথাগোরাস উপপাদ্যের বিবৃতি আরেকবার ভাবুন। লম্ব ও ভূমিতে অঙ্কিত বর্গের যোগফল অতিভুজে অঙ্কিত বর্গের ক্ষেত্রফলের সমান। এবার আপনার ইচ্ছে হল, বর্গ না এঁকে আপনি আঁকবেন সুষম পঞ্চভুজ। আপনার জন্য সুখবর, এবারও যোগফল একই থাকবে! আপনি যদি সমবাহু ত্রিভুজ আঁকতেন, তাও ক্ষেত্রফলের সম্পর্ক একই থাকত! আসলে যেকোন বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের জন্যই এই সম্পর্ক সত্য।
আরেকটু ভেঙে বলি। ত্রিভুজের তিন বাহু যদি a, b, c হয়; তাহলে a ও b এর সমান বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফলের যোগফল c বাহুবিশিষ্ট সুষম বহুভুজের ক্ষেত্রফলের সমান হবে। খুব সহজেই এটি বোঝা যায়। a²+b²=c², এই সমীকরণকে (√3)/4 দিয়ে গুণ করলেই দেখা যায়, বর্গের পাশাপাশি ত্রিভুজের জন্যও এটি সত্যি। আসলে সব সুষম দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রেই (বাহু)² থাকায় এই উপপাদ্যকে বিস্তৃত করা সম্ভব। এমনকি π দিয়ে গুণ করে বৃত্তের ক্ষেত্রফলের জন্যও এই উপপাদ্য বিস্তৃত করা যায়।
পীথাগোরাস ও ফার্মাটঃ অনেকেই ফার্মাটের শেষ উপপাদ্যের গল্পটা জানেন। এই গল্পকেই পীথাগোরাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য এই অংশটুকু লেখা। পীথাগোরাস সমীকরণ আমাদের বলছে a²+b²=c², কিন্তু কখনো শুনেছেন কি, a³+b³=c³ কিংবা আরও উচ্চঘাতের জন্য? আসলে শখের গণিতবিদ ফার্মাটের (মতান্তরে ফার্মা!) একটা উপপাদ্য আছে, যা ফার্মাটের শেষ উপপাদ্য নামে পরিচিত। এই উপপাদ্য বলে aⁿ+bⁿ=cⁿ এখানে a, b, c এর পূর্ণসাংখ্যিক সমাধান থাকলে n এর মান কখনোই 2 এর বেশি হওয়া সম্ভব নয়।
এই উপপাদ্যের পেছনে একটা গল্প আছে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে, তবে প্রসঙ্গক্রমে একটু না বললেই নয়। ফার্মাট ছিলেন শখের গণিতবিদ। তাঁর অভ্যাস ছিল নতুন কিছু পেলে ডায়োফ্যান্টাসের
নন-ইউক্লিডিয়ান তলে পীথাগোরাসের সমীকরণঃ নন ইউক্লিডিয়ান তল বলতে বোঝায় দ্বিমাত্রিক তল। তবে আরও অনেক রকম তল থাকলে পারে, যেমন গোলকাকৃতি, হাইপারবোলা। Elliptical geometry, সহজ করে বললে উপবৃত্তাকার তলে পীথাগোরাসের উপপাদ্য খুব সহজেই রূপান্তরিত করা যায়। দ্বিমাত্রিক তলে পীথাগোরাস সমীকরণের শর্ত সমকোণী ত্রিভুজ, আর উপবৃত্তাকার জ্যামিতিতে ত্রিভুজের দুই কোণের সমষ্টি অন্য কোণের সমান। A+B=C হলে a ও b ব্যাসবিশিষ্ট বৃত্তের ক্ষেত্রফলের যোগফল c ব্যাসবিশিষ্ট বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সমান।
আর Spherical geometry ও Hyperbolic geometry তে এই সম্পর্ক এতই জটিল যে, লেখক তা বোঝার জন্য এখনো যথেষ্ট বড় হয় নি!
(এবার সমস্যা পর্ব)
সব লেখাতেই আমি চেষ্টা করি কোন সমস্যার মাধ্যমে লেখা শেষ করতে। পীথাগোরাস সম্পর্কিত দুটি সমস্যা দিয়ে লেখা শেষ করব।
১. আপনাকে স্কেল দেয়া হল যেখানে সব দাগ উঠে গেছে, শুধু 1 আর 10 এককের দাগটি দেখা যাচ্ছে। আর একটি কম্পাস দিয়ে আপনাকে বলা হল √10 এর সমান দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে। আপনি কিভাবে করবেন?
২. সমকেন্দ্রিক দুটি বৃত্ত আছে, একটি সরলরেখা আঁকা হল যেটি একইসাথে বড় বৃত্তের জ্যা, ছোট বৃত্তের স্পর্শক। এই জ্যায়ের দৈর্ঘ্য 2 একক হলে উভয় বৃত্তের ক্ষেত্রফলের পার্থক্য কত?
দ্বিতীয় সমস্যাটার সমাধান এতই চমকপ্রদ যে এর সমাধানটা আমি এখানে উল্লেখ করে পাঠকের সমাধানের আনন্দ নষ্ট করতে চাই না, সে দায়িত্ব পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম। তবে এটুকু বলে দিই, উত্তর হল π!
আর প্রথম সমস্যাটাও অসাধারণ, তবে এখানে এর সমাধানটা আমি দিয়ে দিলাম। আপনার স্কেল যেহেতু 1 আর 10 একক পরিমাপ করতে পারে, তাহলে আপনি (10+1) ও (10-1) পরিমাপ করতে পারবেন। এবার কম্পাস দিয়ে সমকোণ এঁকে একটা সমকোণী ত্রিভুজ আঁকবেন, যার অতিভুজ (10+1) আর ভূমি (10-1)। তাহলে এর আরেকটা বাহু হবে= √{(10+1)² - (10-1)²} = √(4x10) = 2√10। এবার কম্পাস দিয়ে একে সমদ্বিখণ্ডিত করলেই হল।
ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
লিখাঃ মোহাইমিনুল ইসলাম
সদস্য, ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া (https://en.wikipedia.org/wiki/Pythagorean_theorem)
প্রাণের মাঝে গণিত বাজে (সৌমিত্র চক্রকবর্তী)
The Art and Craft of Problem Solving (Paul, Zeitz)
জ্যামিতির যত কৌশল (দীপু সরকার ও অনুপম পাল)
নিউরনে অনুরণন (মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মোঃ কায়কোবাদ)
Tags:
Mathematics