Mummy (মাম্মি) মমি

Mummy

ফিজিক্সের মজা সবাই উপলব্ধি করতে পারে। কিন্তু কেমিস্ট্রির মজা উপলব্ধি করা অনেক কষ্টকর। আমি নিজেও পারিনা। এজন্য অনেক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আমাদের চারপাশে যা ঘটে প্রায় সবকিছুর মধ্যেই সামান্য হলেও কেমিস্ট্রি খুঁজে পাওয়া যায়। যাকগে, দার্শনিক টাইপের কথাবার্তা আমার পছন্দ না। আমরা মমির মধ্যে একটু কেমিস্ট্রি খোঁজার চেষ্টা করবো।
তার আগে মমি কি? কোথায়? কবে থেকে? কেন তৈরি করা হয়? এই হাবিজাবি একটু জেনে নেই।

মৃত দেহ যা বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করা হয় তাই মমি। মমি শব্দটি এসেছে আরবি মুমিয়া এবং ফার্সি মোম শব্দ থেকে। যার অর্থ বিটুমিন।
আমরা সবাই মমির নাম শুনলেই চোখের সামনে মিশরের পিরামিডের ছবি দেখতে পাই। তারা খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ২৬০০ বছর আগে এই মমি বানানো শুরু করে এবং প্রায় ২০০০ বছর মমি বানায়। তবে জানা যায় তারও এক হাজার বছর আগে উত্তর চিলি এবং দক্ষিণ পেরুতে মমি তৈরি শুরু হয়। মমি করার উদ্দেশ্য তো জানিই, দেহ সংরক্ষণ করা। কিন্তু এই সংরক্ষণ করার কারণ খুবই মজার।

তারা ভাবত মৃত্যুর পর তাদের আবার নতুন জীবন শুরু হবে এবং তখনকার জন্য তাদের দেহ সংরক্ষণ করে রাখা প্রয়োজন। এই তাগিদেই করত আর কি! তবে সবাই কিন্তু করার সুযোগ পেত না। একটা মমি করতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগতো এবং অনেক ব্যয়বহুল ছিল। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ফারাও রাজা এবং উচ্চ বংশের লোকদের মমি করা হতো। তবে সাধারণ মানুষও একেবারে বাদ যেত না।
এই মমি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা ৩-৪ হাজার বছর আগের সেই ব্যক্তির সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারেন। যেমনঃ সে কতবছর বয়সে মারা যায়, কিভাবে মারা যায়, এমনকি একেবারে সঠিক চেহারা সম্বন্ধেও জানা যায়।


এবার তাদের মমি তৈরি করা (মামিফিকেশান) দেখিঃ 
১) প্রথমেই মৃত শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হত।

২) তলপেটের বামপাশে ছিদ্র করে নাড়িভুঁড়ি, যকৃত, কিডনি, ফুসফুস সব বের করে ফেলা হত।

৩) তারা মনে করত মগজ কোনো কাজের জিনিস না। তাই নাকের ভিতর দিয়ে হুক ঢুকিয়ে মগজ বের করে আনত। তবে কাজটি খুবই সাবধাণতার সাথে করা হত। না হলে মৃত ব্যক্তির মুখের ক্ষতি হতে পারে। তারা কিন্তু হৃদপিন্ড খুবই যত্নসহকারে রেখে দিত। সেখানে হাতও লাগাতো না। কারণ তারা ভাবত ইহকাল ও পরকালের সমস্ত শক্তির আধার হলো হৃদপিন্ড।
আসলে এসব জিনিস বেশি পচনশীল হওয়ার কারণে বের করা হতো।

৪) এবার তালের মদ দিয়ে ভেতরে বাইরে ভালোভাবে পরিষ্কার করা হত। আমরা জানি, তালের মদে ইথানল থাকে। এটি একটি অ্যালকোহল এবং সকল অ্যালকোহল ভালো প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে।

৫) ভেতরের দিকে চুপসে আকৃতি যাতে খারাপ হয়ে না যায় সেজন্য পেটের ভেতর ধুপ ও অন্যান্য জিনিস ভরে দিত।

৬) এরপর বেশি করে ন্যাট্রন পাউডার (একধরণের লবণ) দিয়ে ৩৫-৪০ দিন রাখা হত। লবণ শরীরের পানি শোষণ করে নিত। লবণ পানি শোষণ করে এটা আমরা সবাই জানি। এই পানি শোষণ পদ্ধতিকে বলা হয় হাইড্রোলাইসিস। শরীরের তরল অসম্পৃক্ত ফ্যাটে পানির হাইড্রোজেন আয়ন যুক্ত হয়ে কঠিন সম্পৃক্ত ফ্যাটে পরিণত হয়। এতে দুই দিক দিয়ে লাভ। এক, পানি দূর হয়, দুই, তরল ফ্যাট কঠিনে পরিণত হয়। কিন্তু সব বাদ দিয়ে ন্যাট্রন ব্যবহারের কারণ হলো এতে শরীরের রং খুব একটা পরিবর্তন হয় না এবং দেহ শক্ত হয়ে যায় না।
(ন্যাট্রন স্বাভাবিক লবণ। এখনো পাওয়া যায়। আপনিও বানাতে পারেন। এজন্য যা করতে হবেঃ সোডা অ্যাশ (Na2CO3.10H2O), 17% NaHCO3, সামান্য NaCl এবং Na2SO4 মেশাতে হবে। ব্যস, প্রস্তুত ন্যাট্রন পাউডার।)

৭) লবণ সরিয়ে তেলের প্রলেপ দেওয়া হত। (তেলও ভালোমানের প্রিজারভেটিভ।)

৮) এরপর কাঠের গুড়া এবং লিলেন কাপড় দিয়ে সারা শরীর শক্ত করে পেচানো হত। কাটা জায়গাগুলো মোম দিয়ে আটকে দিত। কাঠের গুড়া ব্যবহার করায় কাপড় গায়ের সাথে আটকে যেত না। আর লিলেন কাপড় দিয়ে শক্ত করে পেচানো যায় বলে এটি ব্যবহার করত (দামের কথা বাদ দিলাম)।

৯) লিলেন কাপড় ১৫-২০ দিন ধরে প্রায় ২০ ধাপে পেচানো হয়। এরপর মৃত্যুর মুখোশ, মৃত ব্যক্তির ছবি দিয়ে বড় কাপড়ে মুড়িয়ে পুনরায় লিলেন কাপড় দিয়ে বেঁধে কফিনে রাখত। এতবার বাঁধার কারণ হলো বাইরের আর্দ্রতা এবং পচন ঘটায় এমনকিছু যাতে কিছুতেই ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
ব্যস মমি প্রস্তুত।

এখন প্রশ্ন হলো এই মমি কি শুধু তৈরি করলেই হবে? প্রাকৃতিকভাবে হবে না?
-অবশ্যই হবে এবং হয়ও। এজন্য উষ্ণ, স্যাঁতসেঁতে, এবং বেশি pH যুক্ত পরিবেশ দরকার। জলাভূমি এমনই একটি পরিবেশ। এই পরিবেশে মৃত দেহের বা পরিবেশের ব্যাকটেরিয়া এনজাইম দ্বারা তরল অসম্পৃক্ত ফ্যাটকে কঠিন সম্পৃক্ত ফ্যাটে পরিণত করে। ঐ লবণের মতোই পানি থেকে হাইড্রোজেন আয়ন নিয়ে তরল অসম্পৃক্ত ফ্যাটে স্থাপন করে। এতে মূল কাজটিই প্রায় হয়ে যায়। ফলে মমি তৈরি হয়। কিন্তু কৃত্রিমভাবে তৈরি করা মমির মতো অত ভালো হয় না। মানে কম টেকে।
একটা কিন্তু রহস্য রয়ে গেছে। সেটা হলো মমি, মানে নাম বিটুমিন হলো কেন?
বিটুমিন কি?
-বিটুমিন হলো একটা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ। এটা দাহ্য পদার্থ। খুব ভালো জ্বলে।
-তাহলে কি মমিও.....?
-হ্যা মমিও খুব ভালো জ্বলে। অনেক মমি একটা সময় জ্বলানী হিসেবে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছে।

Writer: Amir
Sirajganj Govt. College

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form