ভ্যাকসিনেশনের গপ্পো!

"Childhood vaccines are one of the great triumphs of modern medicine. Indeed, parents whose children are vaccinated no longer have to worry about their child's death or disability from whooping cough, polio, diphtheria, hepatitis, or a host of other infections."
------Ezekiel Emanuel

ছোটবেলা থেকে সবাই ই আমরা নিশ্চিতভাবে টিকা বা ভ্যাকসিনের সাথে পরিচিত সাথে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বলছে শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যেই তাকে ছয়টি মারাত্মক রোগের টিকা দিতে হয়-যক্ষ্মা, পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সূত্রে কারোর ই বোধ করি অজানা নয় এর কথা।
কি থাকে এই ভ্যাকসিনে?কেনোই বা নেবো এসব?
এই লেখাতে "চিচিং ফাঁক" করবো সেটারই।

প্রথমে আসা যাক, টিকা বা ভ্যাকসিন জিনিসটা আসলে কী। এক কথায় ভ্যাকসিন হল এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ বা মিশ্রণ যা অ্যান্টিবডি তৈরী হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে দেহে কোন একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা জন্মাতে সাহায্য করে ।কোন রোগের টিকা হল কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট রোগটিরই বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা বর্ধনকারী ক্রিয়া সম্পন্ন জৈব উপাচার যা টিকাকরণ অর্থাৎ ত্বকে সূচ ফুটিয়ে দেওয়া হতে পারে বা অন্য উপায়ে যেমন খাবার ড্রপ হিসেবে দেওয়া হতে পারে।
অনেকগুলো নতুন বিষয় চলে এলো, সেগুলোকে আগে ডিফাইন করা প্রয়োজন। প্রথমে দেওয়া সংজ্ঞাটায় যে অনাক্রম্যতার কথা বলা হয়েছে, সেটা দিয়েই শুরু করি। অনাক্রম্যতা বলতে বোঝানো হচ্ছে ইমিউনিটিকে, অর্থ্যাৎ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে।আমরা দেখি আমাদের শহুরে এপার্টমেন্ট গুলোতে নিরাপত্তার জন্য থাকে দারোয়ান, সিসিটিভি ক্যামেরা ইত্যাদি।সামর্থ্যবান হলে ইলেক্ট্রনিক এলার্ম, লেজার, বায়োমেট্রিক সেন্সর ও ব্যবহার করতে পারেন কেউ কেউ।এসব কিছুর মূলে রয়েছে আমাদের ঘর , ঘরের ভেতরের মূল্যবান জিনিসপত্র এবং প্রিয়জনদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিত উপদ্রব থেকে দূরে রাখা।
আমাদের দেহেরও এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে যা নানান বিপদ আপদ থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়। আমাদের হাড়, চামড়া দেহের ভেতরের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গগুলিকে রক্ষা করে।তবে সবচেয়ে মূল্যবান নিরাপত্তার কাজটি হয়ে থাকে নিঃশব্দে, গোপনে। যা আমরা দেখিনা, অনুভব করি না, কিন্তু যেটা আছে বলেই আমরা সুস্থ আছি এবং অসুস্থ হয়ে পড়লেও আবার সুস্থ হচ্ছি। এটাই হলো আমাদের অনাক্রম্য ব্যবস্থা (Immune System)। আমাদের অনাক্রম্য ব্যবস্থায় বিশেষ বিশেষ ধরনের কিছু কোষ রয়েছে,
যাকে বলা হয় অনাক্রম্য কোষ।আমাদের রক্তের শ্বেতকণিকা(Leukocyte) অনাক্রম্য ব্যবস্থার একটি সক্রিয় সৈনিক।বেশ কয়েকধরণের শ্বেত রক্তকণিকা রয়েছে আমাদের শরীরে।একধরণের শ্বেত রক্তকণিকার নাম হলো লিম্ফোসাইট।লিম্ফোসাইট কণিকা আবার হতে পারে দুই রকমের--টি সেল এবং বি সেল। এদের বিশদ বর্ণনায় না গিয়ে দেহে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ করলে, আমাদের অনাক্রম্য ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, আমি বরং তার একটা সহজ সাধারণ বর্ণনা দিই।

ধরুন,আপনার দেহে মোটামুটি গোবেচারা ধরণের একটা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলো। ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করার সাথে সাথেই দেহের অনাক্রম্য তন্ত্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। ম্যাক্রোফাজ(Macrophage, গ্রীক ভাষায় এর অর্থ বড় খাদক, আদতেও এরা তাই'ই! ) নামের কিছু খাদক কোষ সক্রিয় হয়ে উঠে ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ভক্ষণ করে ফেলে। এতেই কি কাজ শেষ? না। ব্যাকটেরিয়ার কোষপর্দায় কিছু বিশেষ রকমের পদার্থ থাকে, যাদের বলা হয় অ্যান্টিজেন।এগুলো একপ্রকার প্রোটিন। এগুলো অনেকটা পোশাকের মতো--স্যুট-বুট পরা যে কাউকে দেখলেই আপনি বুঝবেন যে, ইনি বনেদি-সম্ভ্রান্ত ঘরের কেউ--তেমনি এই অ্যান্টিজেন গুলোও ব্যাকটেরিয়াকে চিনিয়ে দেয়(ব্যাকটেরিয়া তোমার নামে কি,অ্যান্টিজেনে পরিচয়-টাইপের ব্যাপার!)। তো, ম্যাক্রোফাজ এই অ্যান্টিজেনগুলোকে টি সেলের কাছে হ্যান্ডোভার করে। টি সেল তখন তার বড় কর্তা বি সেলের কাছে এই অ্যান্টিজেনটা রিপোর্ট হিসেবে জমা দিয়ে তাকে সক্রিয় করে তোলে। বি সেলগুলো তখন প্লাজমা সেল(Plasma cell) এ পরিণত হয়, এই কোষগুলো একধরণের "পুলিশ" শ্রেণীর পদার্থ ছেড়ে দেয়, যেগুলোকে বলা হয় অ্যান্টিবডি।এগুলোই মূলত আগন্তুক জীবাণুকে নিধন করে।এখানে একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে, সবগুলো বি সেল আসলে প্লাজমা সেলে পরিণত হয় না। কিছু কিছু বি সেল "ভবিষ্যতের জন্য" রয়ে যায়।এরা অ্যান্টিজেনটা চিনে রাখে,তবে এখনি "মাথা গরম" করে না,শান্ত থাকে।আবার বি সেল সক্রিয় হবার পর অনেকক্ষেত্রেই নিজের অনেক ক্লোন তৈরি করে। যেই ক্লোনগুলো আবার এমন ভাবে পরিবর্তীত,যেন তারা অনেকদিন টিকে থাকে এবং স্বাভাবিক বি সেলের চেয়ে অনেক দ্রুত সাড়া দিয়ে ভুরভুর করে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। এরাই হলো মেমোরি বি সেল (Memory B cell),'মেমরি' কেন ? কারণ এরা জীবাণুর চেহারাটা চিনে রাখে।ভবিষ্যতে সেই একই চেহারার জীবাণু দেহে প্রবেশ করা মাত্রই B-cell গুলো ম্যাক্রোফাজের মতো কিছু খাদক কোষ বা রোগ প্রতিরোধী কোষ ডেকে নিয়ে এসে জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়।

ভালো করে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে ,এই চিনে ফেলা এবং জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করার বিষয়টা কিন্তু অনাক্রম্য ব্যবস্থার একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য! আপনি কোন জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার পরও অনাক্রম্য ব্যবস্থা তাকে মনে রাখতে পারে। যার ফলে পরে আবার ওই জীবাণু বা ওর কাছাকাছি চেহারার কোনো জীবাণুর দেখা পেলেই ক্যাচ কট কট! সে আর রোগ সৃষ্টি করতে পারেনা।একে একটা সুন্দর গালভরা নামে ডাকা হয়, সেটা হলো-অনাক্রম্যতা সংক্রান্ত স্মৃতি (Immunological memory)। যদিও এই স্মৃতি আপনাকে একই জীবাণুর বার বার আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে, কিন্তু নতুন জীবাণুর সময় সে আর সাহায্য করতে পারবেনা ।প্রতিটা নতুন জীবাণুর আক্রমণে অনাক্রম্য ব্যবস্থা যেন নতুন জীবাণুটিকে মনে রাখতে পারে,সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে বারবার যেতে হয়। প্রতিদিনই আমাদের শরীরে হাজার হাজার জীবাণু প্রবেশ করে। এভাবে আমরা বড় হয়ে গেলে আমাদের অনাক্রম্য ব্যবস্থা কোটি কোটি জীবাণুকে মুখস্থ করে ফেলে।এখানেই আসলে টিকা বা ভ্যাকসিনের মাহাত্ম্য !
টিকা আসলে কিছুই না, যে রোগের টিকা সেই রোগেরই মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু অথবা জীবাণু-সদৃশ কিছু উপাদান,যাদের তেমন কোনো সক্রিয়তা থাকে না, তবে দেহের অনাক্রম্যতন্ত্রকে ঐ রোগটাকে চিনিয়ে দেয়।একটা রোগের জীবাণুকে আসলে অনেকভাবেই চিনিয়ে দেয়া যায়।মনে করুন,একটা কৌটায় বিষ আছে।এই কথাটা আপনি জানেন। এখন, আপনি এটা মুখে বলে দিতে পারেন,অথবা কৌটার গায়ে "বিষ" লিখে দিতে পারেন,কিংবা বিষাক্ত চিহ্ন লাগিয়ে দিতে পারেন।বিষ বোঝার জন্য আপনাকে খেয়ে বলতে হবে না। তাই কেউ যদি ঐ কৌটার বস্তুটা চেখে দেখতে চায়, তাহলে সে আগেই সতর্ক হয়ে যাবে।তেমনি,একটা জীবাণু চিনিয়ে দেয়ার জন্য জীবাণুর যে অংশটি সাধারণত পরিবর্তিত হয় না বা যে অংশটি সংক্রামক বা যে অংশ ধ্বংস হলে জীবাণু দুর্বল হবে কিংবা ধ্বংস হবে বা জীবাণুর যে অংশ আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন তাকেই মূলত চিনিয়ে দেয়া হয়(এই একেকটা কৌশলই আসলে একেকরকম ভ্যাকসিনেশনের ম্যাকানিজম, কাজ অনুসারে এদের সুন্দর সুন্দর নামও আছে, যেমন:টক্সোয়েড,সাব ইউনিট,অ্যাটেনুয়েটেড ইত্যাদি ইত্যাদি !)। এর ফলে একটা দারুণ ঘটনা ঘটে-একদিকে যেমন কোনো রোগ সৃষ্টি হয়না,তেমনি দেহের অনাক্রম্য কোষগুলোও এতে সক্রিয় হয়ে যায় এবং যেকোনো ধরণের জীবাণু আক্রমণকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়ে যায় !


"Universal vaccination may well be the greatest success story in medical history."
--Michael Specter

এতক্ষণ আলোচনা করলাম ভ্যাকসিন আর এর কাজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে।এখন বলবো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ইতিহাসটা,যেটা না বললেই না। গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং।আঠারোশ' শতকের ইংল্যান্ডের কথা। "বৃটেন কখোনো সূর্যাস্ত দেখে না"-সেই যুগ তখন। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই তখন আকাশে-বাতাসে "গড সেভ দা কুইন"।এধরণের একটা প্রতাপশালী অবস্থাতেও বৃটিশদের মনে ভয়ের সঞ্চার ঘটিয়ে ছিলো গুটিবসন্ত- এ রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু তখন প্রায় অবধারিত- আর শুধু তাই নয়, রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় এর ভয়াবহতা ছিলো আরো বেশি। তদানীন্তন সময়ে ভ্যারিওলেশন নামক একটি থেরাপি পদ্ধতির প্রচলন ছিলো। গুটিবসন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে শুকিয়ে যাওয়া মৃত চামড়া একজন সুস্থ ব্যক্তির গায়ে সামান্য পরিমাণে ঘষে দেয়া হতো। এতে সুস্থ ব্যক্তি অল্পমাত্রায় গুটিবসন্তে আক্রান্ত হতো, যা তার শরীর সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারতো। তবে, সমস্যা টা হলো যেহেতু এখানে গুটিবসন্তের জীবাণুটিকেই শরীরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে, তাই অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যেতো কাঙ্খিত ফল তো আসতোই না, বরং বড়সড় গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে পড়তো তারা(এজন্য এই ব্যবস্থা কেমন নিরাপদ,তা দেখার জন্য বন্দী/এতিম বাচ্চাতে প্রথম দিকে ট্রায়াল দেয়া হতো!)। সেসময় গ্লস্টারশায়ারে বাস করতেন একজন ইংরেজ চিকিৎসক।নাম তার এডওয়ার্ড জেনার।তিনি দেখলেন যে সেসময় গবাদিপশুর দেহে অনুরূপ একটি বসন্ত রোগ দেখা দিতো, যার নাম cow pox. সেই কাউপক্সের জীবাণু যদি কোনো মানুষের শরীরে কোনোভাবে চলে আসতো, তবে খুব সামান্য একধরণের বসন্ত রোগ হতো ঐ ব্যক্তির, যা থেকে খুব দ্রুতই আরোগ্য লাভ করা যেতো। গরুর যদি এই পক্স থাকে, তাহলে কোন মানুষদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ থাকতে পারে ? অবশ্যই খামারিদের, বা দুধওয়ালাদের। জেনার সাহেব দেখেছিলেন যেসকল যেসকল দুধওয়ালা ইতিমধ্যেই কাউপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের আর গুটিবসন্ত হয় না। কোনো একভাবে নিশ্চয়ই তাদের শরীরে গুটিবসন্ত সৃষ্টিকারী ভ্যারিওলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা তৈরি হয়েছে।তিনি ধারণা করেছিলেন এই দুটি রোগের জীবাণু হয়তো খুব কাছাকাছি ধরণের। একটি হয়তো সামান্য জ্বর সৃষ্টিকারী,কিন্তু অপরটি প্রাণঘাতী।জেনার সাহেব তার হাইপোথিসিস নিয়ে অগ্রসর হলেন তারই শিক্ষক তৎকালীন বিখ্যাত চিকিৎসক জন হান্টারের অনুপ্রেরণায়,চালালেন এক মারাত্মক পরীক্ষা। তার বাড়িতে যিনি দুধ দিতে আসতেন, তার নাম ছিলো সারা(Sara nelms)---তিনি(সারা) ছিলেন কাউপক্সে আক্রান্ত। জেনার সারার শরীর থেকে খানিকটা কাউপক্সের পুঁজ নিয়ে তার মালীর সুস্থ আট বছরের ছেলে জেমস ফিলিপের ত্বকে ঘষে দিলেন।তারিখটা ছিলো ১৪ মে, ১৭৯৬।দেখা গেলো, বসন্তের কিছু উপসর্গের পর সে আবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে ।প্রথম ডোজের কিছুদিন পরে আবার কিছু কাউপক্সের ক্ষত জেমসের দেহে দেয়া হলো। এবার তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই হলো না,এবং গুটি বসন্তের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলো !তিনি আরো পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে তিনি যা করেছেন তা ভ্যারিওলেশন থেকে আলাদা কিছু এবং যা করে ভ্যারিওলেশন থেকেও আরো নিরাপদে মানুষকে বাঁচানো যাবে। তিনি নতুন এই পদ্ধতির নাম দিলেন ভ্যাকসিনেশন(vaccination)।আমরা জেনে আসলাম যে, তার এক্সপেরিমেন্টগুলোতে গরু থেকে সংগৃহীত উপাদান ব্যবহার হতো।গরুর ল্যাটিন নাম হচ্ছে Vacca, সেখান থেকেই এসেছে Vaccination!অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে মিস্টার জেনারের vaccination কে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮০২ সালে স্বীকৃতি দেয় এবং উনি যেন গবেষনা চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য অনুদানও দেয়া হয়।১৮৪০ সালে ব্রিটিশ সরকার ভ্যারিওলেশন নিষিদ্ধ করে এবং বিনামূল্যে ভ্যাকসিনেশন পদ্ধতির সুচনা করে ।
এখন আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি ঠিক কি ঘটেছে এখানে। কাউপক্সের জীবাণু জেমসের শরীরে প্রবেশ করলে, সেখানকার রোগ প্রতিরোধী কোষগুলো অ্যান্টিবডি তৈরী করে তাকে ধ্বংস করে দেয়। এই কোষগুলোই যখন দ্বিতীয়বার গুটিবসন্তের জীবাণুর অনুপ্রবেশ বুঝতে পারে, তখন অনতি বিলম্বে নিধন করে সেগুলোকে!এটাই ছিলো আধুনিক ভ্যাকসিনেশনের মূল আইডিয়া-- কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা!


তার এই আবিষ্কারের জন্য এডওয়ার্ড জেনার বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।১৯৭৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুটি বসন্তকে বিলুপ্ত রোগ হিসেবে ঘোষণা করে। এটি ব্যাপক জনসচেনতার কারণে হলেও, ভ্যাকসিন ছিল এর অন্যতম কারণ।জেনার সাহেবের নাম মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে প্রতিষেধক বিজ্ঞানের জনক হিসাবে।এটিও বলা হয় তিনি অন্য যে কারো থেকে বেশি মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছেন। জেনারের জীবনের একটা অসাধারণ ঘটনা দিয়েই শেষ করবো লেখাটা। বৃটেন আর ফ্রান্সের মধ্যে তখন চলছিলো তুমুল রেষারেষি। ফ্রান্সের অধিপতি তখন মহামতি নেপোলিয়ন বোনাপোর্ট।তিনি এই আবিষ্কারের পর তার সেনাবাহিনীকে গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন প্রদান করেন। সেই ভ্যাকসিনের আবিষ্কারক জেনার সাহেবের পাঠানো একটি চিঠির প্রতি সম্মান দেখিয়ে নেপোলিয়ন তার কারাগার থেকে দুজন বৃটিশ কয়েদিকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করে বলেন, "বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী আবিষ্কারকের কথা ফেলে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। "
হ্যাঁ, এটাই বিজ্ঞান-দি গ্রেটেস্ট ভিক্টর অফ অল টাইম,যা কিনা মহামতি নেপোলিয়নকেও অবনত করে!
বিজ্ঞানের জয় হোক!

Anirban Maitra
সদস্য, ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান    

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form