যার নাম নিয়ে আপনারা আজকের দিনটা উদযাপন করবেন, সেই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্পর্কে ইতিহাসে যা পাওয়া যায় তা সঠিক হয়ে থাকলে আমরা বলতে পারি, তিনি মূলত ছিলেন একজন ঈসায়ী দরবেশ।
রোমান আমলের গোড়ার দিকে, এন্টিকিটি ও ক্লাসিক্যাল এন্টিকিটি জুড়ে তখনকার ঈসায়ীদের ওপর রোমান এম্পায়ার প্রচণ্ড নির্যাতন চালিয়েছে। এই নির্যাতনের কারন ছিল ধর্মীয়। রোমানরা ঈসায়ীদের কখনোই ভাল চোখে দেখতো না। সমাজে যত প্রকার গণ্ডগোল সবকিছুর জন্য ঈসায়ীদের দায়ী ভাবা হত, মজার ব্যাপার, রোমানরা যখন ক্রিশ্চিয়ান হয় তখন থেকে ক্রিশ্চিয়ানরা আবার ইয়াহুদীদের যাবতীয় দুনিয়াবী ও আসমানী বালা মুসিবতের জন্য দায়ী বলে মনে করতে থাকে, যা কিনা একেবারে এই টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি তক এমনকি এখনো অনেক ক্রিশ্চিয়ানদের মধ্যে পাওয়া যায়।
ভ্যালেন্টাইনের সমসাময়িক রোমান কাইজার ছিলেন ক্লডিয়াস গথিকাস।গথদের বিশাল ক্যাভালরিকে নাইসাসের যুদ্ধে ছাতু করে দেয়ার কারনে তার নামের শেষে গথিকাস শব্দটা যুক্ত হয়েছে। ক্লডিয়াস বীর ছিলেন বটে, তবে লোক খুব একটা সুবিধার ছিলেন না।
তার লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব গথ, ভ্যান্ডাল ও আলামানিদের হারিয়ে, গল এম্পায়ার দখলে নিয়ে রোমান এম্পায়ারকে ট্রাজানের আমলের সেই বিশাল আকার ফিরিয়ে দেয়া, যার পশ্চিমে আটলান্টিক, পূর্বে জাযিরাতুল আরব,উত্তরে মধ্য ইউরোপীয় সমভুমি আর দক্ষিণে মরু সাহারা।
এজন্য তাকে প্রচুর যুদ্ধ করতে হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই বিরামহীন যুদ্ধের জন্য তার প্রয়োজন ছিল প্রচুর সৈনিক। বাড়তি সৈনিকের যোগান দিতে তিনি ঈসায়ীদের মধ্যে বিয়েকে নিষিদ্ধ করে দিলেন।
খেয়াল করে দেখবেন, আমি কোথাও ঈসায়ী আর কোথাও ক্রিশ্চিয়ান ব্যবহার করেছি, কারন ঈসায়ীর বদলে ক্রিশ্চিয়ান ব্যবহার করাটা একটা ভুল, যা আমি আগে একবার করেছি। ঈসায়ী কোন ধর্ম না, ঈসায়ীরা হলেন ইব্রাহীমী দ্বীনের যে ধারা হযরত ইউসুফ(আ) হয়ে হযরত মুসা(আ) পর্যন্ত এসেছে তারই অপেক্ষাকৃত সুসংহত রুপ।
পক্ষান্তরে ক্রিশ্চিয়ানিটি হলো ঈসায়ী রিসালাতের প্যাগানাইজড, অ্যারিয়ানাইজড রুপ, যা মূলত কাউন্সিল অফ নিকাইয়ার মাধ্যমে কাইজার কন্সটানটাইন দ্যা গ্রেট তৈরি করেন।
ঈসায়ীরা মোটের ওপর তাওহীদে বিশ্বাসী ছিলেন, তারা নিজেদের ভেতরে সমাজবদ্ধ হয়ে চলতেন। বিয়েশাদীও করতেন নিজেদের ভেতরে।
ধারনা করা হয়, ক্লডিয়াস বাড়তি সৈন্য যোগাড় করতে গিয়ে প্রথম কোপটা মারেন ঈসায়ীদের এই বিয়ের ওপরে। ঈসায়ীদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করা হয় যাতে যুবকদের সহজে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা সম্ভব হয়।
এখান থেকেই আসলে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথা শুরু।
তিনি গোপনে বিয়ে পড়িয়ে বেড়াতেন। বিশেষভাবে তরুণ তরুণীদের তিনি বিয়ে পড়িয়ে বেড়াতেন। সাম্রাজ্যের আইন ভাঙ্গার অপরাধে তাকে বন্দী করা হয়, তার জেলার তথা বিচাকরের নাম ছিল এস্টেরিয়াস। জেলে থাকা অবস্থায় দরবেশ ভ্যালেন্টাইনের চারিত্রিক পবিত্রতার দিকে লক্ষ্য করে এস্টেরিয়াস তাকে তার বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করেন। ভ্যালেন্টাইন এস্টেরিয়াসকে ঈসায়ী বিশ্বাসের কথা জানিয়ে তাকে এক স্রষ্টার উপাসনার আহবান জানান। এস্টেরিয়াস বলেন তার জন্মান্ধ মেয়েকে যদি ভ্যালেন্টাইন সুস্থ করে তুলতে পারেন তবে ভ্যালেন্টাইন যা বলবেন তিনি তাই করবেন।
এস্টেরিয়াসের মেয়ে জুলিয়েটকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে আনা হলে ভ্যালেন্টাইন স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেন, এর পরপরই জুলিয়েট দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ফলে এস্টেরিয়াস নিজের গোটা পরিবারসহ ঈসায়ী দ্বীনে প্রবেশ করেন। ভ্যালেন্টাইনকে জেল থেকে সসম্মানে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তি পাবার সাথে সাথেই তিনি আবার ঈসায়ী দ্বীন প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিয়ে পড়ানোও অব্যাহত রাখেন, এবং কিছুদিন পরেই রোমান কাইজারের গোয়েন্দাদের হাতে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অভিযোগে গ্রেফতার হন।
গ্রেফতার হওয়ার পরেই প্রথমে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং ঈমান ত্যাগ করতে বলা হয়, কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ঈমান ত্যাগ না করে কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ঈমান ত্যাগ না করে পাল্টা কাইজারকে ঈসায়ী দ্বীন কবুল করার আহবান জানান।পাশাপাশি তিনি ক্লডিয়াসকে তার সাম্রাজ্যের মূর্তিগুলোও ভেঙ্গে ফেলতে বলেন।
এই ঈসায়ী দরবেশকে দমাতে না পেরে ক্লডিয়াস তাকে হত্যার আদেশ দেন। প্রথমে গদা দিয়ে পিটিয়ে এবং তারপর শিরোচ্ছেদ করে তাকে হত্যা করা হয়।
ভ্যালেন্টাইনের যামানায় তিনি ছিলেন একজন একত্ববাদী দরবেশ, যার কাজ ছিল মানুষকে সত্যের পথে ডাকা।
ভ্যালেন্টাইন চেয়েছিলেন রাষ্ট্র যে বিয়েকে কঠিন করেছে সেই বিয়েকে সহজ করতে।
**
ভ্যালেন্টাইন্স ডে কে ক্রিশ্চিয়ানাইজ করেন পোপ জুলিয়াস, ৪৯৪ সালে। ক্রিশ্চিয়ানিটির অনেক কিছুই রোমান প্যাগানিজম দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড, এই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্টটাও লুপারকেলিয়ার সাথে ব্যাপক সাদৃশ্য রাখে। এই ব্যাপারে ভ্যাটিক্যানের স্ট্র্যাটেজি হল যে কোন অঞ্চলে ক্রিশ্চিয়ানিটি প্রচারের জন্য স্থানীয় সাংস্কৃতিক যে উৎস আছে তাকে ইনকর্পোরেট করা। উল্লেখ্য, লুথেরান চার্চ এবং এংলিকান চার্চও সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্ট উদযাপন করে থাকে।
ক্রিশ্চিয়ান ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্টে নোংরামির আঞ্জাম নেই।
এর বিপরীতে ভোগবাদী পশ্চিম যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে নির্মান করেছে সেটা সম্পুর্ন খোদাহীন এক ভ্যালেন্টাইন্স ডে। প্রি রেনেসাঁস ইউরোপের স্বাভাবিক আধ্যাত্মিকতা যে যে আচারে মিশেছিল, মডার্ন ইউরোপ তার প্রতিটা আচারকে ডিস্যাক্রেটেড করেছে।
এভাবে, এককালের ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্ট একালে হয়ে উঠেছে ভোগবাদের মহোৎসব। গ্লোবালাইজেশানের হাত ধরে বাংলাদেশেও তার আগমন সুসম্পন্ন হয়েছে।
**
বাংলাদেশে যারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করেন এবং যারা বিরোধিতা করেন তারা উভয়পক্ষই যথাক্রমে ভ্যালেন্টাইন্স ডের খোদাহীন ভোগবাদী নির্মানকেই গ্রহন ও বিরোধিতা করে থাকেন।
এখন, এই নির্বিচার গ্রহন আর নির্বিচার প্রতিরোধ কি আদৌ কোন ফল বয়ে আনছে??
সমাজ কেবল বিভক্তই হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরেট ভোগবাদী অংশটা যা পাবে উদযাপন করেই যাচ্ছে আর কোনরকমে টিকে থাকা শুদ্ধতাবাদী অংশ চাচ্ছে সর্বাত্মক বর্জন। এই বিভক্তির শেষ করতে না পারলে বিকৃত এই ভ্যালেন্টাইন কালচারকে রোধ করা অসম্ভব।
শুধু বিরোধিতা আর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসলে কোন কালচারাল ট্রেন্ডকে রোধ করা যায় না।
কালচারকে রিপ্লেস করতে হয়।
যারা চান এই বিকৃত কনজুমারিস্ট ভ্যালেন্টাইন কালচার বন্ধ হোক, তাদের উচিত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের সেই ঈসায়ী দরবেশের সরল শিক্ষাটাকে ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে শুধু নয়, বছরব্যাপী প্রমোট করা।
খোদায়ী দ্বীন একটাই, সেই দ্বীনের শিক্ষা যেই যুগেই আসুক না কেন, তাতে সাদৃশ্য থাকে।
সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের এপ্রোচ ছিল তাওহীদ আর জালিম রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সহজ বিয়ের মাধ্যমে হালাল প্রজনন।
ইসলামের প্রস্তাবনার সাথে এখানে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের কোন বিরোধিতা নেই, কারন তিনি না মডার্ন কনজুমারিস্ট, আর না ক্রিশ্চিয়ান, তিনি ছিলেন ঈসায়ী।
বাংলাদেশে যদি আসলেই কেউ বিকৃত ভ্যালেন্টাইন ফিভার বন্ধ করতে চায়, তাকে প্রকৃত ভ্যালেন্টাইন ট্রেন্ড বিয়েকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
বিয়েকে সামাজিকভাবে সহজ করে দেয়া হোক।
প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে জেলায় জেলায় সাদামাটা আয়োজনে স্বল্প মোহরানায় তরুণ তরুণীদের মধ্যে গণবিবাহ আয়োজন করা হোক।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে যে সমস্যার সৃষ্টি করে, তার এরচেয়ে সহজ সমাধান আর নেই।
-
(মুহাম্মাদ সজল)
রোমান আমলের গোড়ার দিকে, এন্টিকিটি ও ক্লাসিক্যাল এন্টিকিটি জুড়ে তখনকার ঈসায়ীদের ওপর রোমান এম্পায়ার প্রচণ্ড নির্যাতন চালিয়েছে। এই নির্যাতনের কারন ছিল ধর্মীয়। রোমানরা ঈসায়ীদের কখনোই ভাল চোখে দেখতো না। সমাজে যত প্রকার গণ্ডগোল সবকিছুর জন্য ঈসায়ীদের দায়ী ভাবা হত, মজার ব্যাপার, রোমানরা যখন ক্রিশ্চিয়ান হয় তখন থেকে ক্রিশ্চিয়ানরা আবার ইয়াহুদীদের যাবতীয় দুনিয়াবী ও আসমানী বালা মুসিবতের জন্য দায়ী বলে মনে করতে থাকে, যা কিনা একেবারে এই টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি তক এমনকি এখনো অনেক ক্রিশ্চিয়ানদের মধ্যে পাওয়া যায়।
ভ্যালেন্টাইনের সমসাময়িক রোমান কাইজার ছিলেন ক্লডিয়াস গথিকাস।গথদের বিশাল ক্যাভালরিকে নাইসাসের যুদ্ধে ছাতু করে দেয়ার কারনে তার নামের শেষে গথিকাস শব্দটা যুক্ত হয়েছে। ক্লডিয়াস বীর ছিলেন বটে, তবে লোক খুব একটা সুবিধার ছিলেন না।
তার লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব গথ, ভ্যান্ডাল ও আলামানিদের হারিয়ে, গল এম্পায়ার দখলে নিয়ে রোমান এম্পায়ারকে ট্রাজানের আমলের সেই বিশাল আকার ফিরিয়ে দেয়া, যার পশ্চিমে আটলান্টিক, পূর্বে জাযিরাতুল আরব,উত্তরে মধ্য ইউরোপীয় সমভুমি আর দক্ষিণে মরু সাহারা।
এজন্য তাকে প্রচুর যুদ্ধ করতে হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই বিরামহীন যুদ্ধের জন্য তার প্রয়োজন ছিল প্রচুর সৈনিক। বাড়তি সৈনিকের যোগান দিতে তিনি ঈসায়ীদের মধ্যে বিয়েকে নিষিদ্ধ করে দিলেন।
খেয়াল করে দেখবেন, আমি কোথাও ঈসায়ী আর কোথাও ক্রিশ্চিয়ান ব্যবহার করেছি, কারন ঈসায়ীর বদলে ক্রিশ্চিয়ান ব্যবহার করাটা একটা ভুল, যা আমি আগে একবার করেছি। ঈসায়ী কোন ধর্ম না, ঈসায়ীরা হলেন ইব্রাহীমী দ্বীনের যে ধারা হযরত ইউসুফ(আ) হয়ে হযরত মুসা(আ) পর্যন্ত এসেছে তারই অপেক্ষাকৃত সুসংহত রুপ।
পক্ষান্তরে ক্রিশ্চিয়ানিটি হলো ঈসায়ী রিসালাতের প্যাগানাইজড, অ্যারিয়ানাইজড রুপ, যা মূলত কাউন্সিল অফ নিকাইয়ার মাধ্যমে কাইজার কন্সটানটাইন দ্যা গ্রেট তৈরি করেন।
ঈসায়ীরা মোটের ওপর তাওহীদে বিশ্বাসী ছিলেন, তারা নিজেদের ভেতরে সমাজবদ্ধ হয়ে চলতেন। বিয়েশাদীও করতেন নিজেদের ভেতরে।
ধারনা করা হয়, ক্লডিয়াস বাড়তি সৈন্য যোগাড় করতে গিয়ে প্রথম কোপটা মারেন ঈসায়ীদের এই বিয়ের ওপরে। ঈসায়ীদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করা হয় যাতে যুবকদের সহজে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা সম্ভব হয়।
এখান থেকেই আসলে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথা শুরু।
তিনি গোপনে বিয়ে পড়িয়ে বেড়াতেন। বিশেষভাবে তরুণ তরুণীদের তিনি বিয়ে পড়িয়ে বেড়াতেন। সাম্রাজ্যের আইন ভাঙ্গার অপরাধে তাকে বন্দী করা হয়, তার জেলার তথা বিচাকরের নাম ছিল এস্টেরিয়াস। জেলে থাকা অবস্থায় দরবেশ ভ্যালেন্টাইনের চারিত্রিক পবিত্রতার দিকে লক্ষ্য করে এস্টেরিয়াস তাকে তার বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করেন। ভ্যালেন্টাইন এস্টেরিয়াসকে ঈসায়ী বিশ্বাসের কথা জানিয়ে তাকে এক স্রষ্টার উপাসনার আহবান জানান। এস্টেরিয়াস বলেন তার জন্মান্ধ মেয়েকে যদি ভ্যালেন্টাইন সুস্থ করে তুলতে পারেন তবে ভ্যালেন্টাইন যা বলবেন তিনি তাই করবেন।
এস্টেরিয়াসের মেয়ে জুলিয়েটকে ভ্যালেন্টাইনের কাছে আনা হলে ভ্যালেন্টাইন স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেন, এর পরপরই জুলিয়েট দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ফলে এস্টেরিয়াস নিজের গোটা পরিবারসহ ঈসায়ী দ্বীনে প্রবেশ করেন। ভ্যালেন্টাইনকে জেল থেকে সসম্মানে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তি পাবার সাথে সাথেই তিনি আবার ঈসায়ী দ্বীন প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিয়ে পড়ানোও অব্যাহত রাখেন, এবং কিছুদিন পরেই রোমান কাইজারের গোয়েন্দাদের হাতে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অভিযোগে গ্রেফতার হন।
গ্রেফতার হওয়ার পরেই প্রথমে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং ঈমান ত্যাগ করতে বলা হয়, কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ঈমান ত্যাগ না করে কিন্তু ভ্যালেন্টাইন ঈমান ত্যাগ না করে পাল্টা কাইজারকে ঈসায়ী দ্বীন কবুল করার আহবান জানান।পাশাপাশি তিনি ক্লডিয়াসকে তার সাম্রাজ্যের মূর্তিগুলোও ভেঙ্গে ফেলতে বলেন।
এই ঈসায়ী দরবেশকে দমাতে না পেরে ক্লডিয়াস তাকে হত্যার আদেশ দেন। প্রথমে গদা দিয়ে পিটিয়ে এবং তারপর শিরোচ্ছেদ করে তাকে হত্যা করা হয়।
ভ্যালেন্টাইনের যামানায় তিনি ছিলেন একজন একত্ববাদী দরবেশ, যার কাজ ছিল মানুষকে সত্যের পথে ডাকা।
ভ্যালেন্টাইন চেয়েছিলেন রাষ্ট্র যে বিয়েকে কঠিন করেছে সেই বিয়েকে সহজ করতে।
**
ভ্যালেন্টাইন্স ডে কে ক্রিশ্চিয়ানাইজ করেন পোপ জুলিয়াস, ৪৯৪ সালে। ক্রিশ্চিয়ানিটির অনেক কিছুই রোমান প্যাগানিজম দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড, এই সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্টটাও লুপারকেলিয়ার সাথে ব্যাপক সাদৃশ্য রাখে। এই ব্যাপারে ভ্যাটিক্যানের স্ট্র্যাটেজি হল যে কোন অঞ্চলে ক্রিশ্চিয়ানিটি প্রচারের জন্য স্থানীয় সাংস্কৃতিক যে উৎস আছে তাকে ইনকর্পোরেট করা। উল্লেখ্য, লুথেরান চার্চ এবং এংলিকান চার্চও সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্ট উদযাপন করে থাকে।
ক্রিশ্চিয়ান ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্টে নোংরামির আঞ্জাম নেই।
এর বিপরীতে ভোগবাদী পশ্চিম যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে নির্মান করেছে সেটা সম্পুর্ন খোদাহীন এক ভ্যালেন্টাইন্স ডে। প্রি রেনেসাঁস ইউরোপের স্বাভাবিক আধ্যাত্মিকতা যে যে আচারে মিশেছিল, মডার্ন ইউরোপ তার প্রতিটা আচারকে ডিস্যাক্রেটেড করেছে।
এভাবে, এককালের ভ্যালেন্টাইন্স ফিস্ট একালে হয়ে উঠেছে ভোগবাদের মহোৎসব। গ্লোবালাইজেশানের হাত ধরে বাংলাদেশেও তার আগমন সুসম্পন্ন হয়েছে।
**
বাংলাদেশে যারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করেন এবং যারা বিরোধিতা করেন তারা উভয়পক্ষই যথাক্রমে ভ্যালেন্টাইন্স ডের খোদাহীন ভোগবাদী নির্মানকেই গ্রহন ও বিরোধিতা করে থাকেন।
এখন, এই নির্বিচার গ্রহন আর নির্বিচার প্রতিরোধ কি আদৌ কোন ফল বয়ে আনছে??
সমাজ কেবল বিভক্তই হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরেট ভোগবাদী অংশটা যা পাবে উদযাপন করেই যাচ্ছে আর কোনরকমে টিকে থাকা শুদ্ধতাবাদী অংশ চাচ্ছে সর্বাত্মক বর্জন। এই বিভক্তির শেষ করতে না পারলে বিকৃত এই ভ্যালেন্টাইন কালচারকে রোধ করা অসম্ভব।
শুধু বিরোধিতা আর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসলে কোন কালচারাল ট্রেন্ডকে রোধ করা যায় না।
কালচারকে রিপ্লেস করতে হয়।
যারা চান এই বিকৃত কনজুমারিস্ট ভ্যালেন্টাইন কালচার বন্ধ হোক, তাদের উচিত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের সেই ঈসায়ী দরবেশের সরল শিক্ষাটাকে ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে শুধু নয়, বছরব্যাপী প্রমোট করা।
খোদায়ী দ্বীন একটাই, সেই দ্বীনের শিক্ষা যেই যুগেই আসুক না কেন, তাতে সাদৃশ্য থাকে।
সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের এপ্রোচ ছিল তাওহীদ আর জালিম রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সহজ বিয়ের মাধ্যমে হালাল প্রজনন।
ইসলামের প্রস্তাবনার সাথে এখানে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের কোন বিরোধিতা নেই, কারন তিনি না মডার্ন কনজুমারিস্ট, আর না ক্রিশ্চিয়ান, তিনি ছিলেন ঈসায়ী।
বাংলাদেশে যদি আসলেই কেউ বিকৃত ভ্যালেন্টাইন ফিভার বন্ধ করতে চায়, তাকে প্রকৃত ভ্যালেন্টাইন ট্রেন্ড বিয়েকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
বিয়েকে সামাজিকভাবে সহজ করে দেয়া হোক।
প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে জেলায় জেলায় সাদামাটা আয়োজনে স্বল্প মোহরানায় তরুণ তরুণীদের মধ্যে গণবিবাহ আয়োজন করা হোক।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে যে সমস্যার সৃষ্টি করে, তার এরচেয়ে সহজ সমাধান আর নেই।
-
(মুহাম্মাদ সজল)