"রজার্স হার্ন চব্বিশ বছর বয়সে এক রমণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করে, তার নাম ছিল ডোনা গমেজ। তবে ডোনা গমেজ নামক মেয়েটি হার্নের হাতেই মারা যায়"
এটুকু বলে একটু থামলো লোকটি, ফারাবী কৌতূহলি হয়ে বলল,
- থেমে গেলেন কেন? বলুন?
- হার্ন তার প্রেমিকা ডোনার সঙ্গে ভালোই ছিল, তবে ডোনা ছিল ছলনাময়ী। সে হার্নের সঙ্গে প্রতারণা করে। সে থেকেই হার্নের মনে প্রতিশোধের আগুন জন্ম নেয়। একসময় হার্ন তার প্রিয়তমাকে কৌশলে শারিরীক সম্পকের নামে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। তবে আসার পর আটকা পড়ে ডোনা। সে চিৎকার করে বলছিল, তোমার মতো প্রতারক মিথ্যাবাদি আমি কখনো দেখিনি। আমায় সুখ দিবে বলে এনেছিলে! হার্ন তার কথায় খিলখিল করে হেসে উঠে। সে বলে, আমি মিথ্যাবাদি হতে পারি, তবে তোমার মতো নোংরা নই। হার্ন ডোনাকে বেঁধে ফেলে, মুখে কাপড় বসিয়ে দেয় যেন চিৎকার করতে না পারে। তারপর, ছুরি দিয়ে চামড়া কেটে ফেলে। ডোনা শুধু ছটফট করছিল। যত বাঁচতে চাইছিল, হার্ন ততই কষ্ট দিচ্ছিল ডোনাকে। ডোনার শরীরের রক্তে হাত ভরে ছিল হার্নের, মুখ মোছায় উছিলায় মুখের কাছে হাত নিতেই সে রক্তের স্বাদ পায়। আহ, সে কি স্বাদ! রক্তে মজা পেয়ে হাত চাটতে শুরু করে সে। একদম এক ক্ষুধার্ত হায়নার মতো। ছরি নিয়ে ডোনার ঘাড় কেটে সেখান থেকে চু চু করে রক্ত চুষতে থাকে হার্ন। ডোনা নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। এরপর থেকেই হার্ন মানুষের রক্ত খেত, যেন কোনো রক্ত চোষা ড্রাকুলা। এ কথা কেউ জানতো না। যখন সে ডাক্তার হয়, তখন হলপিটেলের মর্গে প্রায়ই ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যেত। যেন কোনো হিংস্র নেকড়ে এসে সেগুলোকে খুবলে খেয়েছে। হার্ন স্বাভাবিক ভাবেই মারা গিয়েছিল। তবে তার মৃত্যুর পর, অন্যান্য মানুষরা অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হতে শুরু করে।
কি বলবে ভেবে পায়না ফারাবী, যেন অশরিরী কিছু তাকে বাধা দিচ্ছে উত্তর দিতে।
- আচ্ছা আপনি এতকিছু জানেন কিভাবে? ডোনাকে কিভাবে মেরেছিল কি করেছিল সব! ফারাবী জিজ্ঞেস করলো
লোকটি তার কথার উত্তর দিল না, বরং ধরা গলায় বলল, তুমি চা খাও, নয়তো ঠান্ডা হয়ে যাবে। লোকটি তার হাতে থাকা একটি গন্ড কয়েন দিয়ে টেবিলে ঠোকা মারছে। ধীরে ধীরে চায়ের কাপে চুমুক দিল ফারাবী, এক চুমুকেই তার চোখ মুখ কুচকে আসে। মূহুর্তেই চায়ের কাপ ছুড়ে ফেলে দিল! কাপটি নিচে পড়ে ভেঙে গিয়ে চায়ের বদলে গরম রক্ত ছড়িয়ে পড়ে কাপ থেকে! থু থু করে মুখ থেকে ফেলে দেয় সব। খিলখিল করে হেসে উঠে লোকটা, ফারাবী তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। লোকটি উঠে দাঁড়ায়, এগিয়ে আসে ফারাবীর দিকে।
- আমিই ড. রজার্স হার্ন! লোকটি বলল
- হোয়াট!
লোকটি আকাশ পানে চেয়ে এক বিকট চিৎকার করে উঠে। সঙ্গেসঙ্গেই তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে দুটো তীক্ষ্ন দাঁত, মুখের চামড়া ফ্যাকাসে হয়ে আসে, চোখ জোড়া লালচে। ফারাবীর বুঝতে বাকি রইল না, এ সেই রজার্স হার্ন। হার্ন এক পা এগুচ্ছে, এবং ফারাবী এক পা পিছু হটছে।
- এই কি করছো! সামনে এগুবে না! আমরা তোমার কি করেছি? পিছু হটতে হটতে ফারাবী বলল
- কিছু করোনি, তবে রক্ত না পেলে এই ড্রাকুলার কি হবে? এবার তুমিও হবে আমাদেরই একজন!
পিছু হটতে হটতে দেয়ালের সঙ্গে পিঠ লেগে যায় তার, যত সময় যাচ্ছে হার্ন ততই এগিয়ে আসছে। হার্ন রাক্ষসের মতো দাঁত বের করে ফারাবীর উপর ঝাপিয়ে পড়তেই তার কাঁধ চেপে দূরে ঠেলে দিল ফারাবী! হার্ন পাগলের মতো আক্রমণ করতে চাইছে, তার মুখের লালার ছিটা এসে পড়ছে ফারাবীর মুখের উপর। ফারাবী তার সর্ব শক্তি দিকে হার্নকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে হার্ন। ঘাড় ঘুরিয়ে গভির দৃষ্টিপাত করে ফারাবীর দিকে, সে চোখে হিংস্রতা ও ক্ষুধার্ততার জানান দিচ্ছে। ফারাবী তার পকেট থেকে মিলিটারি নাইফ বের করতেই পুনরায় তার উপর আক্রমন করে হার্ন! ফারাবী সরে হার্ন দেয়ালের উপর পড়ে, এই সুযোগেই তার হাতে থাকা মিলিটারি নাইফটি হার্নের হাতে গেথে দেয় ফারাবী! বিকট আওয়াজে চিৎকার করে উঠে হার্ন, যেন কোনো হিংস্র দৈত্য গর্জে উঠেছে! ছুরিটি হাত পার করে দেয়ালের সঙ্গে পুরোপুরি গেথে যায়, টপটপ করে রক্তের ফোটা পড়তে শুরু করে সেখান থেকে। দ্রুত রুমটি পলায়ন করলো ফারাবী, নড়বড়ে সিড়ি বেয়ে দ্রুত নামতে থাকে। মনে হচ্ছে কিছু একটা এখনো পেছন থেকে তাকে ধাওয়া করছে। নিচের হল রুমের দরজার সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ায় সে, সামনে হসপিটেলের সেই সিকিউরিটি গার্ড। শুধু চোখ লালচে, মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়ছে এবং সেই ড্রাকুলার মতো তীক্ষ্ন দাঁত!
এদিকে হার্ন হেচকা টানে ছুরি বের করে জানালার উপর ছুড়ে মারে, জানালার কাঁচ ভেঙে ছুরিটি বেরিয়ে যায়। হাত বেয়ে তীব্র রক্তপাত হচ্ছে, হাত চেপে ধরে এদিক ওদিক চেয়ে নিচে নামতে শুরু করে হার্ন।
গার্ড রূপী ভ্যাম্পায়ারটি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে শুরু করে ফারাবীর দিকে। পিঠু হটতে শুরু করে ফারাবী। সিড়ির কাছে আসতেই হছট খেয়ে সিড়ির উপর পড়ে যায় সে, উপড়ে তাকিয়ে সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে ড. হার্ন। এদিকে সামনে এগিয়ে আসছে একজন। কোনো পথ খোলা নেই। গার্ডটি আক্রমণ করতেই ফারাবী তার পিস্তল বের করে গুলি চালিয়ে দেয় গার্ডটির উপর, মূহুর্তেই থমকে যায় গার্ডটি। পরপর কয়েকটা গুলি করতেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সিড়ি থেকে উঠেই দ্রুত পলায়ন করে ফারাবী, একবারের জন্যও তাকালো না পেছন ফিরে। গেটের পাশে পার্ক করা তার পার্সনাল গাড়িটি নিয়ে সোজা রওনা দেয় সাভারের উদ্দেশে। দুপুর ৩টা ৫৭মিনিট বাজছে, কিভাবে এত সময় গেল টেরও পেল না। কোয়ার্টারে ফিরতে কমপক্ষে দু ঘন্টা লেগে যাবে। অর্থাৎ সন্ধ্যা ছটা অথবা সাতটা। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে গাড়ির জানালা দিয়ে সেই অভিশপ্ত বাড়িটির দিকে তাকালো ফারাবী।
রাত ৭টা ৩৫মিনিট।
কলিংবেল বাজছে, অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকালো সাবিহা। সাবিহা জানে ফারাবী অফিসে, এবং তার ডিউটি শেষ হতে এখনো অনেক দেরি। মাথা তুলে দেয়ালে বসানো ঘড়িটির দিকে তাকালো সে, মাত্র সন্ধ্যা ৭টা ৩৬মিনিট। পুনরায় কড়ানাড়ার শব্দ শুনে উঠে গিয়ে দরজা খুলল সাবিহা।
- কি ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি? সাবিহা জিজ্ঞেস করলো
- কিছু না, পরে বলবো।
উত্তর না দিয়েই সাবিহাকে পাশ কাটিয়ে সোজা সোফায় বসে পড়লো ফারাবী। তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে সাবিহা চেয়ে আছে, ফারাবীকে বেশ চিন্তিত লাগছে আজ। দরজা লাগিয়ে ফারাবীর কাছে যায় সাবিহা, তার কাধে হাত রেখে বলে, কি হয়েছে? আমাকেও বলবে না? সাহিবার কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিক তাকালো ফারাবী।
(চলবে..)
ফারহান আহমেদ ফারাবী
দ্যা হন্টেড নাইট (পর্ব ৫)
Tags:
ভৌতিক গল্প