দ্যা হন্টেড নাইট (পর্ব ৫)


- তেমন কিছু না, এমনই শরীরটা খারাপ লাগছে। ফারাবী বলল
- আমায় মিথ্যা বলো না, সত্যি করে বলো কি হয়েছে? সাবিহা বলল
কিছু বলল না ফারাবী, মাথা নিচু করে রইল। তার সামনে এসে বসে সাবিহা।
- কি হলো বলবে না? সাবিহা বলল
- বললে হয়তো, রেগে যাবে। ফারাবী বলল
- না রাগবো না, এবার বলো।
- সাবিহা, আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলাম।
- কেন?
- সেটা আমি বলতে পারবো না।
হঠাৎ সাবিহার চোখে পড়লো ফারাবীর কোমরে গুজে রাখা টাইপ ৯২ পিস্তলটি! সাবিহা সেটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল, একি! তোমার সঙ্গে অস্ত্র কেন? কোথায় ছিলে তুমি?
- খ্রিষ্ট পাড়ায়, ড. রজার্স হার্নের বাড়িতে!
- রজার্স হার্ন! কে সে?
- এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর স্রষ্ঠা!
- তার মানে?
মুখ তুলে সাবিহার দিকে তাকায় ফারাবী, সাবিহার মায়াবী চোখের চাহনিতে স্পষ্ট কৌতূহল। উঠে দাঁড়ায় ফারাবী, ধরা গলায় বলে, সে একজন ভ্যাম্পায়ার!
- ভ্যাম্পায়ার!
- হ্যাঁ, গতকাল রাতে হসপিটেল থেকে ফেরার পথে লোকটির সঙ্গে আমার দেখা হয়। তবে যা দেখেছিলাম, উফ!
- কি দেখেছিলে? বলো?
- একটা কুকুরের ঘাড় মটকে সেটাকে দূরে ছুড়ে ফেলেছিল। তখনই টের পেয়েছিলাম, এ বাড়িতে কোনো এক অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে। যা আমায় সে অভিশপ্ত বাড়ির দিকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছিল। আমায় ক্ষমা করে দিও সাবিহা, তোমায় মিথ্যা বলে আজ সকালে সে খ্রিষ্ট পাড়ায় গিয়েছিলাম। আত্মরক্ষার জন্য পিস্তল ও ছুরি নিয়েছিলাম নিজের সঙ্গে। সে বাড়িতে হার্ন আমার উপর আক্রমণ করেছিল, আমি তার হাতে ছুরি বসিয়ে দিয়ে নিচে নামি। তখন দেখি আরেকটি ভ্যাম্পায়ার, তার উপর গুলি চালাতে হয়। ভেবেছিলাম এখানেই আমার জীবনের সমাপ্তি। তবে না, ভাগ্য আবার তোমার কাছেই নিয়ে এসেছে।
কথাগুলো শুনে সাবিহা যেন পাথর হয়ে যায়, হাত থেকে পিস্তল পড়ে যায় তার। ফারাবীর শার্টের কলার চেপে ধরে বলল, ওখানে কেন গিয়েছিলে? তোমার কিছু হলে আমি কি করতাম!
- তুমি বুঝছো না কেন? এই রহস্য সবার সামনে না এলে একের পর এক মানুষ ভ্যাম্পায়ারের শিকার হবে!
- থাকো তুমি তোমার রহস্য নিয়ে, আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা!
ফারাবীর কলার ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে ভেতরে চলে গেল সাবিহা, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফারাবী। হঠাৎ তার মুখে ঝড়ো ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়া লাগলো, মূহুর্তেই যেন শীত ধরে গেল সমস্ত শরীরে। সাবিহা সেদিন রাতে আর কথা বলল না ফারাবীর সঙ্গে, মুখ কালো করে ওপাশ ফিরে শুয়ে ছিল ঘুমানোর সময়।
প্রতিদিনের মতো বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সাথে ঠান্ডা ঝড়ো বাতাস। জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো ফারাবী, ঝড়ো বাতাসে বাহিরের গাছ গাছালিগুলো এলোমেলো ভাবে দুলছে। হঠাৎ লোডসেডিং, সব অন্ধকারে ছেয়ে গেল। হয়তো তীব্র ঝড়ের কারণে। পেছন থেকে সাবিহার কন্ঠ শুনতে পেল ফারাবী। সে বলল, জানালাটি টেনে দাও নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে। সাবিহার কথা শুনে ফারাবী তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, ফারাবীকে তাকাতে দেখেই মুখ ফিরিয়ে শুয়ে রইল সাবিহা। ফারাবী মুচকি হাসলো, সাবিহা অভিমান দেখালেও তার প্রতি সেই আগের মতোই চিন্তা। জানালা আটকে দিয়ে একটি মোমবাতি জ্বালালো ফারাবী, সমস্ত রুম ভরে গেল আভছা লাল আলোয়। মোমবাতিটা টেবিলের উপর রেখে সাবিহার পাশে শুইলো সে। দুজনই সজাগ, অথচ দুজনই নীরব। সাবিহা এখনো শুয়ে আছে ওপাশ ফিরে, তার দিকে পাশ ফিরে তাকালো ফারাবী। কথা না বলেই জড়িয়ে ধরলো সাবিহাকে। সাবিহা বুঝেও না বুঝার ভান করলো, যেন গভীর নিদ্রায় সে। সাবিহাকে ঘুমে ভেবে হাত সরিয়ে নিল ফারাবী, পাশ ফিরে ফারাবীর দিকে তাকালো সাবিহা। এবার সে জড়িয়ে ধরলো ফারাবীকে। ফারাবী মুচকি হেসে সাবিহার হাতে হাত রাখলো। চোখ তুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো সে, রাত ১১টা ৪৫মিনিট। ভালোবাসার সঙ্গে সাবিহার হাত ধরে রাখলো ফারাবী।
এখন রাত প্রায় ১২টা ৩০মিনিট।
গভীর নিদ্রায় মগ্ন সাবিহা। সন্ধ্যা থেকেই আকাশটা মেঘে মেঘে ছেয়ে আছে, বৃষ্টিও পড়ছে অবিরাম। থামার নাম গন্ধও নেই। তবে ফারাবীর চোখ খোলা, তার চোখে ঘুম নেই এক ফোটাও। উঠে ইউনিফোর্মের বোতামে লাগানো স্পাই ক্যামটি নিল সে, বসে পড়লো ল্যাপটপ নিয়ে। স্পাই ক্যামটির রেকর্ড অন করলো, মনিটরে ভেসে উঠে ভ্যাম্পায়ারের অস্থিত্বের প্রমাণ। বিজয়ের হাসি দেয় ফারাবী। এবার কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারবে সেনাবাহিনী থেকে। একবারের জন্য সাবিহার দিকে তাকালো, মেয়েটি এখনো ঘুমোচ্ছে। সামনের কিছু চুল এসে পড়েছে মুখের উপর। ফারাবীর এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো, এ যেন আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো মায়াপরী। ফারাবী সাবিহার চুলগুলো সরিয়ে দিল একপাশে, ঘুমের মাঝেও হালকা নড়ছে সাবিহার বন্ধ চোখ জোড়া। ফারাবী আলতো করে গাল ছুঁয়ে দিতেই খোলে গেল সেই বন্ধ চোখ জোড়া।
- ওহ সরি জাগিয়ে দিলাম। ফারাবী বলল
- তুমি ঘুমাচ্ছো না? সাবিহা বলল
- না, কিছু কাজ আছে।
- ওটা কি?
সাবিহা ল্যাপটপ খেয়াল করতেই ফারাবী পা দিয়ে বন্ধ করে দিল ল্যাপটপটি।
- কি হলো লুকালে কেন? সাবিহা বলল
- তেমন কিছু না। ওই কিছু অফিসিয়াল কাজ পড়েছিল, সেগুলো শেষ করলাম।
- ঠিক আছে, এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট।
সাবিহা চোখ বন্ধ করে নিল, ফারাবী তার চুলে হাত বুলিয়ে নিতেই চোখ খুলে বলল, কি হলো এখনো বসে আছে?
- সাবিহা, আইএম সরি। তোমার কথার অবাধ্য হয়েই সেখানে গিয়েছিলাম।
সাবিহা চোখ বন্ধ করে একবার মুচকি হাসলো, ফারাবীর হাত টেনে নিয়ে হাতের উপর মাথা রাখলো।
- ব্যাপার না, তোমার পেশা অনুযায়ী এটাই তোমার কর্তব্য ছিল। তুমি যাবে, আমি বাধা দিব না। তবে আমার একটা অনুরোধ, কখনো একা যাবে না এমন পরিস্থির সম্মুখীন হতে।
- আর কখনো একা যাব না, তোমার সব কথা মেনে চলবো।
- ভালোবাসি বলবে না?
- হুম ভালোবাসি।
- আমিও।
মুচকি হেসে ফারাবীর কোলের উপর মাথা রাখলো সাবিহা। আলতো করে হাত ছুঁইয়ে আদর করে দিল ফারাবী। তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে এক নজরকাড়া পরী, রুমের আভছা আলোতে আরো মায়াবঈ লাগছে এই মায়াপরীকে।
পরদিন সকালে। এক প্রকার দৌড়ে অফিসে প্রবেশ করে ফারাবী। তার হাতে সেই ছোট আকারের স্পাই ক্যাম, অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই সবার সামনে এসে পড়বে ভ্যাম্পায়ারের আসল রূপ।
- কিরে এত তাড়াহুড়ো কিসের? ক্যাপ্টেন দিব্য জিজ্ঞেস করলো
- দিব্য, তুষিত আয় আমার সঙ্গে, ভ্যাম্পায়ারের রহস্য এবার সবার সামনে আসবে। ফারাবী বলল
- মানে? ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- মানে বলছি আগে আয়।
ফারাবী একটি কম্পিউটারের সামনে বসলো, তার পাশে দাঁড়ায় ক্যাপ্টেন দিব্য, তুষিত, সজীব ও মেজর রুমেল। স্পাই কেমটি অন করে ফারাবী। সবাই দেখতে থাকে কোনো ক্লু'য়ের আশায়। এখন অবধি তেমন কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। সমস্ত ভিডিও দেখে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সবাই, মাঝে মাঝে একে অপরের দিকে তাকা তাকি করছে।
- তার মানে, সব মৃত্যুর পেছনে এই রজার্স হার্ন নামে লোক হাত! মেজর রুমেল বলল
- একটা মানুষ মারা গিয়ে পুনরায় জ্যান্ত হয়ে উঠে কিভাবে! ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না, এমন হলে আজ অবধি এর শিকার যতজন হয়েছে সবাই ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হয়েছে। ক্যাপ্টেন দিব্য বলল
- আচ্ছা, হার্ন তোমায় কি যেন অনেকক্ষণ যাবত বলছিল যা পুরোপুরি শোনা যায়নি। কি বলছিল কিছু মনে আছে? ফারাবীর উদ্দেশে মেজর রুমেল বলল
- হার্ন নিজের আত্মকাহিনী বলল স্যার, তার প্রেমিকা ছিল ডোনা নামক এক মেয়ে। তবে সে হার্নের সঙ্গে প্রতারণা করার পরই হার্ন সাইকোপ্যাথিক খুনিতে পরিনত হয়। তখন থেকে সে মানুষের রক্ত খেত। আর যখন সে মারা যায়, তখন অনেকে অস্বাভাবিক ভাবে মারা যেতে শুরু করে। তার কফিন খুলে দেখা যায়, তার লাশ নেই! ফারাবী বলল
- ওহ মাই গড! হাও ডেন্জারাস! মেজর রুমেল বলল
- স্যার, এর কোনো ব্যবস্থা না করলে এই দুনিয়া আর থাকবে না স্যার। ফারাবী বলল
- ইয়েস স্যার, আমিও তাই মনে করি। ক্যাপ্টেন দিব্য বলল
- শুনো সবাই, আমাগীকাল আমি সেখানে অভিযান চালানোর ব্যবস্থা করবো। সবাই একটা বিষয় মাথায় রাখবে, ভ্যাম্পায়ারদের দেখা মাত্র গুলি চালাবে, কোনো প্রকার ঝুঁকি নিবে না। আজকের দিনটায় আমরা সিনিয়রদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো এবং আগামীকাল আমাদের অপারেশন শুরু হবে।
- অকে স্যার!
রাত ১টা ১৫মিনিট।
গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছে এক ভদ্রলোক। হাঁটতে হাঁটতেই আকাশের দিকে তাকালো। আবহাওয়া ভালো নয়, সেই সকাল থেকে আকাশটি কালো মেঘে ছেয়ে হয়ে আছে। একজনের ঠিকানা খুঁজছে সে, তবে গন্তব্য তার অচেনা। এই খ্রিষ্টান এলাকায় আগে কখনো আসেনি।
প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর এক বাড়ি চোখে পড়লো তার। কেমন যেন নড়বড়ে ভাঙা এক বাড়ি, মন হচ্ছে কিছুদিনের মাঝেই মড়মড় করে ভেঙে পড়বে। তবুও সে ভেতরে ঢুকলো, বাড়ি চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে শুরু করে তাকে। দরজায় কড়ানাড়লো, তবে কারো সাড়া পেল না। হয়তো বাড়িতে কেউ নেই। ফিরে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরতেই চমকে উঠলো সে! তার সামনে দাঁড়িয়ে কালো অভার কোট পড়া এক লোক, অর্থাৎ রজার্স হার্ন। কিছুটা ভয় পেল সে। হার্ন এক প্রকার বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এখানে কেন এসেছেন?
- জ্বি, ওই একটা ঠিকানা খুঁজছিলাম। ব্যবসায়ী এ্যান্ড্রো পলের বাড়িটা কোন দিকে বলতে পারবেন?
- এ্যান্ড্রো পল! হুম, এলাকার একদম শেষ মাথায়। গাড়ি মিলবে না।
- তাই ভাবছি, কি যে করি!
কথাটি শেষ করা মাত্র আকাশ কাঁপিয়ে এক বজ্রপাত হয়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তীব্র বৃষ্টি। হার্ন হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বলল, আসুন ভেতরে আসুন, বৃষ্টি থামলে নাহয় রওনা দিবেন! ভদ্রলোক ভাবলো, রাত অনেক হয়েছে, গাড়িও নেই। এছাড়াও এই বৃষ্টিতে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ভদ্রলোক রাজি হয়ে গেল। হার্ন তাকে ভেতরে ঢুকতে বলল, দরজা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো লোকটা। লোকটা ভেতরে ঢুকতেই চোখ দুটো লালচে হয়ে আসে হার্নের, মুখের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে তীক্ষ্ন দাঁত! অনেকদিন টাকটা রক্তের স্বাদ পায়নি, আজ শিকার নিজে ধরা দিয়েছে। প্রচন্ড পিপাসা নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো হার্ন। মূহুর্তেই বজ্রপাত হলো, এবং বাড়ি জুড়ে শোনা গেল কারো তীব্র আর্তনাদ!
পরদিন সকালে
হার্ন বাড়ির সামনে এসে নামে দুটো মিলিটারি জীপ। সেখান থেকে নেমে আসে বারোজন সেনাবাহিনীর সদস্য। হ্যালমেট ও রাইফেল সহ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে এসেছে সবাই। মূহুর্তের মধ্যেই বাড়িটির দরজা ঘিরে ফেলে তারা। ক্যাপ্টেন ফারাবীর ইশারায় এক লাথিতে দরজা ভেঙে দেয় ক্যাপ্টেন তুষিত। ভেতরে ঢুকে আশপাশে রাইফেল তাক করে। বাড়িতে কেউ নেই, দুতলা উঠে সবাই। সেখানেও কেউ নেই। দুপাশে দুটো সিড়ি আছে, ফারাবী নির্দেশ দিল, দু দলে ভাগ হয়ে যাও সবাই। একটা কথা মাথায় রাখবে, বাড়িতে ভয়ানক কিচু দেখা মাত্র ফায়ার করবে। কোমো প্রকার ঝুঁকি নিবে না।
- ইয়েস স্যার!
দুপাশে ছড়িয়ে পড়লো তারা, প্রতিটি রুম সার্চ করা হচ্ছে। তবে কোথাও কেউ নেই। সমস্ত বাড়ি ছেড়া কাগজ ও মাকড়শার জালে ভরপুর। হঠাৎ কেউ আতঙ্কিত কন্ঠে ডাকলো ফারাবীকে, স্যার এদিকে আসুন! ডাক অনুসরণ করে সৈন্যদের নিয়ে সেখানে যায় ফারাবী। রুমটি ছিল দুতলার হল রুমের ঠিক পাশে।
- সাব্বির কি হয়েছে ডেকেছো কেন? ফারাবী বলল
- ফারাবী দেখ, পুরো রুমে শুকনো রক্ত। ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
তুষিতের কথা শুনে টর্চ দিয়ে রুমটি দেখার চেষ্টা করে ফারাবী। সমস্ত রুম রক্তে ভরা, দূরে একটি ভাঙা চেয়ার ও তারপর উপর রক্ত মাখা কিছু দড়ি পড়ে আছে।
- হার্ন সত্যিই বলছিল, ডোনাকে এখানেই খুন করা হয়েছে। ফারাবী বলল
- কিন্তু স্যার, বাড়িতে তো কেউ নেই। সৈনিক পলাশ বলল
- কিছুই বুঝতে পারছি না, আমাদের আসার খবর পেয়ে পাখি পালালো নাকি! ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- পালিয়ে যাবে কোথায়? আকাশ মেঘলা হলেও, বাহিরে অনেক আলো। আর এরা আলোতে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। ফারাবী বলল
হঠাৎ কিছু একটার ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পায় তারা, ভয়ে আতঙ্কে আশেপাশের তাকায়। কোথাও কেউ নেই।
- কিসের শব্দ এটা? ফারাবী বলল
- পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ মনে হচ্ছে! ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- সবাই একসাথে থাকবেন স্যার। সৈনিক রাকিব বলল
- আহহ!!
ঘাড় চেপে ধরে নিচে বসে পড়ে ফারাবী, হাত থেকে টর্চ পড়ে যায়। কি যেন কামড় বসিয়েছে তার ঘাড়ে!
- ফারাবী! কি হয়েছে! ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- কি যেন কামড় দিয়েছে! ফারাবী বলল
ডানা ঝাপটানোর শব্দ আরো বেড়েছে, সাথে শতশত লাল চোখ দেখা যাচ্ছে দেয়ালে। ফারাবী টর্চ নিয়ে দাঁড়িয়ে আশেপাশের দেয়ালে আলো ফেলল, দেয়ালে আলো পড়তেই যেন পাথর হয়ে যায় তারা! তাদের ঘিরে দেয়ালে ঝুলে আছে শতশত বাদুর! বাদুরগুলোর কিচির মিচিরে ভরে আছে রুমটি! চারপাশে রক্ত চোষা বাদুর, তার মাঝে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা। বাদুরগুলো তেড়ে আসে তাদ্র দিকে, এমন সময় রাইফেল তাক করে গুলি চালিয়ে দেয় ক্যাপ্টেন তুষিত! গুলির বিকট শব্দের সাথে লুটিয়ে পড়ে কয়েকটা বাদুর।
- সবাই রুম থেকে বেরিয়ে পড়ো!
ফারাবীর নির্দেশে গুলি করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে আসে সবাই, ফারাবী ও তুষিত গুলি করে বেরিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
রুম থেকে বেরিয়ে হাপাতে থাকে সবাই, কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি কেউ। মাথা থেকে হ্যালমেট খুলে হাচ্ছে ফারাবী, এমন সময় সৈনিক সাব্বিরের চোখ পড়ে ফারাবীর ঘাড়ের দিকে। ঘাড়ের পাশে ছোট দুটো ছিদ্র হয়ে সেখান থেকে রক্তপাত হচ্ছে।
- স্যার আপনার ঘাড়ে রক্ত! সৈনিক সাব্বির বলল
- রক্ত!
আশ্চর্য হয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে হাত সামনে এনে দেখে ফারাবী, তার আঙুলে রক্ত লেগে আছে।
- হয়তো বাদুরের কামড়ে এমনটা হয়েছে, ব্যাপার না রক্ত বন্ধের ব্যবস্থা করে নিব। ফারাবী বলল
- এখন কি করবি? সমস্ত বাড়ি খুঁজলাম অথচ এই বাদুর ছাড়া আর কিছুই পেলাম না। ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
- নিচে চলো সবাই। ফারাবী বলল
- স্যার, আমরা কি ফিরে যাচ্ছি? সৈনিক সাব্বির বলল
থমকে গিয়ে সাব্বিরের দিকে চেয়ে ফারাবী বলল, হ্যাঁ! ফারাবীর চোখ দেখে ঘাবড়ে গেল সৈনিক সাব্বির, চোখ পুরোপুরি লাল হয়ে এসেছে! আগুনের ফুলকির মতো জ্বলজ্বল করছে সেই চোখ দুটো।
- স্যার আপনার কি হয়েছে! ভয়ে চিৎকার করে উঠলো সৈনিক সাব্বির
- কি হয়েছে সাব্বির? ফিরে আসলো ক্যাপ্টেন তুষিত
- স্যার, ফারাবী স্যারের কি হয়েছে দেখুন। সৈনিক সাব্বির বলল
- আমার কি হবে? ফারাবী বলল
সৈনিক সাব্বিরের কথা শুনে ফারাবীর দিকে তাকায় ক্যাপ্টেন তুষিত। তবে ফারাবী আগের মতোই স্বাভাবিক। তুষিত ভাবলো সাব্বিরের দেখার ভুল, তাকে অভয় দিল সে,
- সাব্বির শান্ত হও, ফারাবীর কিছু হয়নি। তোমার দেখায় ভুল হয়েছে। এবার ওসব বাদ দাও আমাদের যেতে হবে। ক্যাপ্টেন তুষিত বলল
ক্যাপ্টেন তুষিতের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে ফারাবীর দিকে তাকায় সৈনিক সাব্বির, তবে এখন সেই লালচে ভাবটা নেই ফারাবীর চোখে। হঠাৎই বদলে গিয়েছিল, যেমন ভ্যাম্পায়ারদের ক্ষেত্রে হয়!
রাত ১০টা ৩০মিনিট।
সন্ধ্যা থেকে আবারো বৃষ্টি শুরু, এখনো তীব্র বৃষ্টিতে ছেয়ে আছে শহরটি। বৃষ্টিতে গাছের পাতা থেকে বিন্দু বিন্দু ফোটা পড়ছে, খাল বিল ভরে এসেছে অনেকটা। ড্রইং রুমে বসে ফারাবীর জন্য অপেক্ষা করছে সাবিহা। প্রতিদিনই এভাবে অপেক্ষা করে সময় কাটে। মাথা তুলে ঘড়ির দিকে তাকায়, ফারাবী আসার সময় হয়েছে। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজার দিকে ঘুরে তাকালো সাবিহা, নিশ্চয় ফারাবী হবে। উঠে দরজা খুলে দিল, দরজা খোলা মাত্র এক প্রকার দৌড়েই ভেতরের রুমে চলে গেল ফারাবী। যেন সে লাইটের আলো সহ্য করতে পারছে না। তার পিছু পিছু ভেতরের রুমে গেল সাবিহা। গিয়ে দেখে ফারাবী চুপ করে সোফায় বসে আছে।
- ফারাবী? কি হয়েছে? এভাবে লাইট অফ করে অন্ধকারে কি করছো? সাবিহা বলল
- খবরদার লাইট জ্বালাবে না! ধমকের স্বরে বলল ফারাবী
- কেন? কি হলো তোমার?
- আমি আলো সহ্য করতে পারিনা।
- মানে?
কোনো উত্তর এলো না ফারাবীর মুখ থেকে, চুপ করে সোফায় বসে রইল। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফার পাশের টেবিল ল্যাম্পটি জ্বালিয়ে তার সামনে বসলো সাবিহা।
- কি হয়েছে বলবে? এই অন্ধকারে কেন থাকতে চাচ্ছো? সাবিহা বলল
- সাবিহা, একটা গল্প শুনবে? ফারাবী বলল
- গল্প! মাথা ঠিক আছে তোমার?
- আহা শুনো না।
- আচ্ছা বলো।
ফারাবী এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর বলল
'১৭২৫ সালে লগস সেলবিয়া নামক গ্রামে এক চাষি ছিলেন, তার নাম ছিল পিটার। এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর কিছুদিন পর যা ঘটে, তাতে সবার লোম খাড়া হয়ে যায়! নিজের মৃত্যুর তিনদিন পর পিটার তার ছেলের কাছে আসে এবং কিছু খাবার চায়। এবং তার ছেলে পিটারকে খাবার দেয়, তাতে পিটার চলে যায়। কিন্তু পরেরদিন, পিটার আবার আসে, ছেলের কাছে, খাবার চাইতে। কিন্তু এবার তার ছেলে পিটারকে খাবার দিতে, অস্বিকার করে। পরেরদিন পিটারের ছেলেকে মৃত অবস্থায় তার ঘরে পাওয়া যায়! তার মৃতদেহটিকে দেখে জানা গেল যে, এই ছেলেটির শরীরে রক্তের এক বিন্দুও নেই! কারণ পুরো শরীর সাদা হয়ে গিয়েছিল, এবং চোখ খোলা অবস্থায় ছিল। ওই ছেলেটির ঘাড়ের অংশটি খুবই বিচিত্র ছিল। তার ঘাড়ের ডান ভাগ, পুরোপুরি ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ছিল। তার ওই অংশ দেখে মনে হচ্ছিল কেউ যেন তার ঘাড়, কামড়ে খেয়েছে! এই মৃত্যুর পর, পরপর নদিন ধরে মৃত্যুর ঘটনা চলতে থাকে। এবং ওই গ্রামের মানুষের ভ্যাম্পায়ারের প্রতি এত ভয় বেড়ে যায় যে, তারা ভ্যাম্পায়ার হান্টার্সের কাছে যেতে বাধ্য হয়। ভ্যাম্পায়ার হান্টার্স ওই দশটি ডেড বডি দেখে এবং পরীক্ষা করে জানতে পারে যে, এদের মৃত্যুর পেছনে আছে কোন পিচাশ অথবা ভ্যাম্পায়ারের হাত! তার পরের দিন যখন পিটারের কবর খুড়ে দেখে, তখন সবাই অবাক হয়ে যায়। তার শরীর এখনো তাজা অবস্থায় আছে, এবং তার কাপড়ে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে! তার বুকে একটি লাঠি ছিল এবং তার মুখে একটি পাখির ডানা ছিল! পিটারের দেহটিকে কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর সব ছাই, পাশের চার্চের সামনে গর্ত করে চাপা দিয়ে দেওয়া হয়। যাতে করে পিটারের দেহটি আর জাগতে না পারে, এরপর আর কখনো ওই গ্রামে এমন মৃত্যুর খবর শোনা যায়নি।
এই বলেই মুখের দুপাশ দিয়ে দুটো তীক্ষ্ন দাঁত বের করে ফারাবী, চিৎকার করে বসা থেকে বিছানার মাঝে পড়ে সাবিহা! সঙ্গেসঙ্গে বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়, এবং লোডসেডিং! সমস্ত ঘর অন্ধকারে ছেয়ে যায়, এমন সময় বিদ্যুৎ চমকানোর আলো সরাসরি এসে পড়ে ফারাবীর মুখে!
(চলবে...)


ফারহান আহমেদ ফারাবী 

দ্যা হন্টেড নাইট (পর্ব ৬)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম