বেশ তো আছেন! কাজকর্ম, খেলাধুলা , ছোটাছুটি সব চলছে !
কিন্তু, হঠাৎ একদিন গা গরম, মাথাটাও একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে। বাড়ির লোক বলল, জ্বর হয়েছে ! থার্মোমিটার দিয়ে দেখলেন একদম তাই অর্থাৎ, আপনার দেহের তাপমাত্রা যেখানে থাকা উচিত ৯৯.৫ থেকে ১০০.৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট (৩৭.৫ থেকে ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ) সেখানে অনেকটা বেড়ে গেছে।
মানে আপনার জ্বর । এখন প্রশ্ন হল, এই জ্বর কেন হয়?
জ্বর (fever বা pyrexia) মানে হল, দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া।আর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানে হল, দেহে পাইরোজেন (Pyrogens) উৎপন্ন হয়েছে।
আবার প্রশ্ন, পাইরোজেন কি?
পাইরোজেনকে বলা হয় Thermostavle Microbial Toxin মানে তাপজীবাণুঘটিত বিষ। এই বিষ শরীরের যেসব যন্ত্রপাতিগুলো যা (প্রধানত মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালমাস ) তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে (আমরা হোমিওস্টেসিস মানে উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট প্রাণী ,তাই দেহের তাপমাত্রার নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখা খুবই জরুরি ) তাদের বিকল করে দেয়, আর অমনি আমাদের জ্বর হয় । রোগ নির্ণয় হওয়ার আগে পর্যন্ত জ্বরকে ডাক্তারী ভাষায় বলা হয় Pyrexia বা পাইরেক্সিয়া ।
পাইরোজেনের প্রধান কাজ হল বাইরে থেকে বড় যে আক্রমণ অন্য জীবাণুরা করেছে, তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। পাইরোজেন যখন এই চেষ্টা করে তখন শরীরের হরমোন, এনজাইম ও রক্তকণিকাদের (মূলত শ্বেত রক্ত কণিকার ) খুব দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে যাতে করে বাইরের শত্রুদের ঠেকানো সম্ভব হয়।
শত্রুরা (মানে জীবাণুরা) আমাদের দেহে আক্রমণ করলে আমাদের দেহ থেকে প্রচুর পাইরোজেন নিসৃত হতে থাকে। পাইরোজেন আমাদের দেহের সব জায়গা থেকে খুঁজে খুঁজে জীবাণুদের মারতে শুরু করে। এখন দেহের সব জায়গায় যদি পাইরোজেন হানা দিয়ে জীবাণুদের মেরে ফেলতে চায়, সে কিভাবে সব জায়গায় যাবে? যাবার পথ একটাই হতে পারে, রক্ত। পাইরোজেন রক্তের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই রক্তের মাধ্যমে কিছু কিছু পাইরোজেন আবার পৌছে যায়, আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অঞ্চলে। হাইপোথ্যালামাস পাইরোজেনের সংস্পর্শে এলেই মস্তিষ্কের ভেতরের দিকের আর একটা অঞ্চল, ভেসোমোটর অঞ্চলে সংকেত পাঠায় যে, দেহে শত্রুরা আক্রমণ করেছে। ভেসোমোটর করে কি, দেহের বেশিরভাগ রোমকূপ দেয় বন্ধ করে, যেন আর বাড়তি কোন জীবাণু মানে শত্রু ঢুকতে না পারে। সেইসাথে আমাদের রক্তনালীগুলোকেও সংকুচিত করে দেয়, যেন পাইরোজেন সহজেই জীবাণুদের ধরে ধরে মারতে পারে।
রক্তনালী সংকুচিত হলে রক্ত প্রবাহের গতি যায় বেড়ে, তাপ উৎপন্ন হয়।এই তাপ বাড়াতে হাইপোথ্যালামাসের তাপ উতপাদন কেন্দ্র ভূমিকা নেয়।আর সেই সাথে আমাদের দেহে ক্রমাগত কিছু তাপ তো উৎপন্ন হচ্ছেই।
রোমকূপ বন্ধ থাকার ফলে আমাদের দেহের ভেতরে যে তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, তা আর বের হতে পারে না। আমাদের দেহের তাপমাত্রা যায় বেড়ে।সেটাই জ্বর।
এটা খুব গুরুত্বপুর্ণ যে, শুধু জ্বর বলে কোনো রোগ হয় না!!এটা যে কোন রোগের লক্ষণ ।সর্দি -কাশি হলে জ্বর হতে পারে, ম্যালেরিয়া হলেও হতে পারে,ভাইরাস আক্রমণে বা অন্য যেকোনো রোগে জ্বর হতে পারে । আবার পড়ে গিয়ে হাত-পা কেটে গেলেও হতে জ্বর হতে পারে। টাইফয়েড, যক্ষ্মার সবার সাথেই জ্বর আসে !খুব ভয় পেলেও জ্বর আসতে পারে। আবার কোনো কোনো রোগের পূর্ব বা পরবর্তী লক্ষণ হল জ্বর। তাই বলা হয় জ্বর রোগ লক্ষণ নিজে কোনো রোগ নয়।
জ্বর হলে শরীরের জলের ভাগ কমে যায়, তাই খালি তেষ্টা পায়। রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয় বলেই এমনটা ঘটে। শরীরে যে প্রোটিন মজুত থাকে তাতেও ঘাটতি দেখা দেয়।
এইজন্যে, জ্বর হলে সেটাকে অগ্রাহ্য না করে বা মুঠো মুঠো প্যারাসিটামল না খেয়ে ডাক্তার দেখানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ। জ্বরটা যে কেন হল, সেটা দেখে বা পরীক্ষা করে ডাক্তার বাবুই বলবেন কি করতে হবে। জ্বর সবসময় যে সহজ ব্যাপার, তা কিন্তু নয়! তাই জ্বর হলে ডাক্তার দেখান। চিকিৎসা করান। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনে চলুন।