বিজ্ঞানী রজার পেনরোজের চক্রাকার বিশ্ব




পদার্থবিজ্ঞানী ব্রায়ান কক্স (Brian Cox) তাঁর বিবিসিতে প্রচারিত একটি ডকুমেন্টারি সিরিজ "Universe" -এ বলেছিলেন, "মহাবিশ্বের শেষ নক্ষত্রটি ধীরে ধীরে শীতল হয়ে বিবর্ণ হয়ে যাবে। তার সাথে মহাবিশ্ব আরও একবার আলো বা জীবন বা কোনো মানে ছাড়াই শূন্য হয়ে যাবে। সেই শেষ নক্ষত্রের বিলুপ্তি কেবল একটি অসীম দীর্ঘ, অন্ধকার যুগের সূচনা করবে। সমস্ত পদার্থকে শেষ পর্যন্ত দানবীয় ব্ল্যাক হোল গ্রাস করে নেবে, যা তাদের পালা শেষে আলোর অস্পষ্টতম ঝলকের মধ্যে উবে যাবে। স্থান বাইরের দিকে প্রসারিত হবে যতক্ষণ না সেই আবছা আলোটিও এতো বেশি ছড়িয়ে পড়বে যে যেকোনো যোগাযোগ সম্পূর্ণ থেমে যাবে। সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।"


কিন্তু সত্যিই কি তাই হবে? কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে আমাদের সুদূর ভবিষ্যতের সেই ঠান্ডা, অন্ধকার, ফাঁকা মহাবিশ্বের মতো জগৎ আমাদের নিজস্ব বিগ ব্যাং এর পূর্ববর্তী উৎস হতে পারে।


🔹প্রথম কিছু –

তবে আমরা সেখানে পৌঁছানোর আগে আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক কীভাবে "বস্তু" বা ভৌত পদার্থ আমাদের জগতে প্রথমবারের মতো এসেছে। আমরা যদি পরমাণু বা অণু দ্বারা তৈরি স্থিতিশীল পদার্থের উৎস ব্যাখ্যা করতে চাই, তবে বিগ ব্যাং-এর সময়ে তার কিছুই ছিল না। জটিল পদার্থ স্থিতিশীল হওয়ার জন্য পরিস্থিতি যথেষ্ট ঠান্ডা হয়ে গেলে কীভাবে সহজ কণা থেকে প্রথম পরমাণুগুলি তৈরি হয়েছিল এবং কীভাবে এই পরমাণুগুলি পরে তারার অভ্যন্তরে ভারী উপাদানগুলিতে মিশ্রিত হয়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের আসলে একটি বিশদ ধারণা রয়েছে। কিন্তু সেই ধারণাটি বস্তু কোথা থেকে কিভাবে এসেছে কিনা সেই প্রশ্নের বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে না।

তাই আরও পিছনে চিন্তা করা যাক। যে কোনো ধরনের প্রথম স্থায়ী পদার্থের কণা ছিল প্রোটন এবং নিউট্রন, যেগুলো একসাথে পারমাণবিক নিউক্লিয়াস তৈরি করে। বিগ ব্যাং-এর পর এক সেকেন্ডের ট্রিলিয়ন ভাগের এক ট্রিলিয়ন ভাগের দশ-হাজার ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি এগুলি অস্তিত্ব লাভ করে। সেই সময়ের আগে, পদার্থের কোনো পরিচিত অর্থে সত্যিই কোনো উপাদান ছিল না। কিন্তু পদার্থবিদ্যা আমাদের টাইমলাইনকে পিছনের দিকে স্থিতিশীল বিষয়ের পূর্ববর্তী ভৌত প্রক্রিয়াগুলিতে নিয়ে যেতে পারে।

পদার্থ বিজ্ঞান আমাদের তথাকথিত "গ্র্যান্ড ইউনিফাইড যুগে" (grand unified epoch) নিয়ে যায়। অবশ্য আমরা এখন যেখানে রয়েছি সেই সময়ে চলা প্রক্রিয়ার খোঁজ করার জন্য বর্তমানে আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পর্যাপ্ত শক্তি উৎপন্ন করতে পারি না। তাই এর প্রায় পূরোটাই যুক্তিসংগত অনুমান নির্ভর। এখানে মহাবিশ্বের ভৌত জগৎটি স্বল্পস্থায়ী কোয়ার্কের একটি "স্যুপ" দিয়ে তৈরি। পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ উভয়ই সমান পরিমাণে ছিল। এই কণাগুলি ক্রমাগত তৈরি এবং ধ্বংস হয়ে চলছিল।

কিন্তু কিভাবে এই কণা প্রথমে এসেছিল? কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব অনুযায়ী ফাঁকা স্থান-কালের সাথে সম্পর্কিত একটি ভ্যাকুয়ামে ক্রমাগত শক্তির ওঠানামা বা ফ্লাকচুয়েশন (fluctuations) ঘটে। এই ফ্লাকচুয়েশন গুলো ভ্যাকুয়ামে একটি কণা-প্রতিকণা জোড়ার জন্ম দেয়। আবার পরের মূহুর্তেই তারা আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু তবুও কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম তার অন্তর্নিহিত শক্তি নিয়ে স্থান-কালের মধ্যে অস্তিত্ত্বশীল একটি বিষয়। সেখানেও কিছু না কিছু আছে।

এরপর যদি প্রশ্ন আসে যে এই স্থান-কাল কোথা থেকে উৎপন্ন হয়েছে? আমরা আরও পিছিয়ে "প্ল্যাঙ্ক যুগ"-এ চলে যেতে পারি। সেটি মহাবিশ্বের ইতিহাসের এত প্রথম দিকে যে আমাদের পদার্থবিদ্যার সেরা তত্ত্বগুলি ভেঙে যায়। এই যুগটি বিগ ব্যাং-এর পর এক সেকেন্ডের ট্রিলিয়ন ভাগের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক ট্রিলিয়ন ভাগের এক দশ মিলিয়ন ভাগের মাত্র এক ভাগ সময়ে ঘটেছে [10^(-43) সেকেন্ড]। এই মুহুর্তে স্থান এবং সময় নিজেই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের বিষয় হয়ে ওঠে। প্ল্যাঙ্ক যুগকে সত্যিকার অর্থে বোঝার জন্য আমাদের একটি সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্ব দরকার। কোয়ান্টাম জগতের সঙ্গে মহাকর্ষকে মেলাতে হবে। আমাদের এখনও কোয়ান্টাম মহাকর্ষ সম্পর্কে একটি নিখুঁত তত্ত্ব নেই, তবে তার প্রচেষ্টা রয়েছে – যেমন স্ট্রিং তত্ত্ব এবং লুপ কোয়ান্টাম মহাকর্ষ। এই তত্ত্বগুলি অতি গভীর, অতি ক্ষুদ্র জগৎকে নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যায়। তবুও এখনো পর্যন্ত আমরা এটা বলতেই পারি পদার্থ বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত কোন কিছুর শূন্য থেকে উদ্ভূত হওয়ার দৃষ্টান্ত খুঁজে পায়নি।


🔹চক্রাকার ঘটনা –

শূন্য থেকে কীভাবে কিছু উৎপন্ন হতে পারে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের প্লাঙ্ক যুগের শুরুতে সমগ্র মহাবিশ্বের কোয়ান্টাম অবস্থা ব্যাখ্যা করতে হবে। তবে এই ধরনের সমস্ত প্রচেষ্টা খুবই অনুমানমূলক হয়।

2020 সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রজার পেনরোজ একটি চক্রাকার মহাবিশ্বের জন্য একটি আকর্ষণীয় কিন্তু বিতর্কিত মডেলের প্রস্তাব করেছেন যাকে "কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি" (conformal cyclic cosmology) বলা হয়। পেনরোজ মহাবিশ্বের একটি খুব উত্তপ্ত, ঘন, অতি ক্ষুদ্র অঞ্চলের সঙ্গে (যেমনটি বিগ ব্যাং-এ ছিল) মহাবিশ্বের একটি অত্যন্ত ঠান্ডা, খালি, প্রসারিত অবস্থা (যেমনটি ভবিষ্যতে হবে) একটি আকর্ষণীয় গাণিতিক সংযোগ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাঁর সেই মৌলিক তত্ত্বের একটি অন্যতম প্রতিপাদ্য হলো এই সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানগুলি তাদের সীমাতে নিয়ে গেলে তারা অন্তত গাণিতিকভাবে অভিন্ন হয়ে ওঠে। যদিও এটা অতি অদ্ভুত মনে হয় তবুও বস্তুর প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি আমাদের মহাবিশ্বে আমাদের চারপাশে যে সমস্ত জিনিষ দেখি তার জন্ম দিতে পারে।

এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, বিগ ব্যাং প্রায় "কিছুই না" থেকে উদ্ভূত হয়। মহাবিশ্ব তার শেষ দিকে সম্ভবত একটি শূন্যতায় হারিয়ে যাবে। তখন তা একদম কিছুই না থাকার অনেক কাছাকাছি একটি অবস্থা। অন্য একটি ভৌত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সমগ্র মহাবিশ্ব এমন কিছু একটা থেকে উদ্ভূত হতে পারে।

একই অবস্থা কীভাবে এক দৃষ্টিকোণ থেকে ঠান্ডা, খালি মহাবিশ্ব এবং অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তপ্ত ঘন মহাবিশ্ব হতে পারে? উত্তরটি "কনফর্মাল রিস্কেলিং" (Conformal Rescaling) নামে একটি জটিল গাণিতিক পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে। এটি একধরনের একটি জ্যামিতিক রূপান্তর যা কার্যত বস্তুর আকার (size) পরিবর্তন করে কিন্তু তার আকৃতি (shape) অপরিবর্তিত রাখে। এই গাণিতিক পদ্ধতি কোণ সম্পর্কে যত্নশীল, কিন্তু দূরত্ব সম্পর্কে উদাসীন।

অতি দূর-ভবিষ্যতে, অন্তত গাণিতিকভাবে অসীমভাবে সম্প্রসারিত মহাবিশ্বের অভিন্ন ঠান্ডা ও খালি স্থান স্কেলের একটি ফ্যাক্টর ছাড়া একটি বিগ ব্যাং ঘটনার অসীম ঘন, শক্তিশালী এককতা (singularity) থেকে আলাদা নয়। যখন এই দুটি ভিন্ন ধরণের অসীমের মধ্যে সীমারেখায় স্থানকালের মেট্রিকে (Friedmann–Lemaître–Robertson–Walker মেট্রিক বা FLRW মেট্রিক) কনফর্মাল স্কেলার সমন্বয় করা হয়, তখন আমাদের বর্তমান মহাবিশ্বের সুদূর-ভবিষ্যতের অসীমটি একটি ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির প্রাথমিক এককতার সাথে সুন্দরভাবে মিলে যেতে পারে।

পেনরোজ দেখিয়েছেন কিভাবে ঠান্ডা খালি অবস্থা এবং গরম ঘন অবস্থা এই ধরনের রিস্কেলিংয়ের মাধ্যমে সম্পর্কিত হতে পারে। এই সম্পর্ক তাদের তাদের স্থানকালের আকৃতির সাথে মেলে, কিন্তু তাদের আয়তনের সাথে মেলে না। এটা স্বীকার করা প্রয়োজন যে কিভাবে দুটি বস্তু এইভাবে তাদের বিভিন্ন আকার থাকা সত্ত্বেও অভিন্ন হতে পারে তা আমাদের সাধারণ বোধের বাইরে। কিন্তু পেনরোজের যুক্তি অনুযায়ী এই ধরনের চরম ফিজিক্যাল পরিবেশে আকারের ধারণাটি একদম অন্যরকম রূপ ধারণ করে।

কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজিতে, তার ব্যাখ্যার অভিমুখটি পুরানো এবং ঠান্ডা থেকে নতুন এবং গরমের অভিমুখে চলে। এখানে ঠান্ডা খালি অবস্থার কারণে গরম ঘন অবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু এই "কারণ" পরিচিত কার্যকারণের (causality) মতো নয়, যার প্রভাব সময়ের সাথে সাথে চলে। এই ধরনের চরম অবস্থায় আকারের সঙ্গে সঙ্গে সময়ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। ঠান্ডা খালি অবস্থা এবং গরম ঘন অবস্থা বিভিন্ন টাইমলাইনে অবস্থিত। ঠাণ্ডা খালি অবস্থাটি তার নিজস্ব সাময়িক জ্যামিতিতে একজন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিকোণ থেকে চিরকাল চলতে থাকবে, তবে এটি যে গরম ঘন অবস্থার জন্ম দেয় তা কার্যত তার নিজস্ব একটি নতুন সময়রেখায় বসবাস করবে। এই ঠান্ডা খালি অবস্থা থেকে গরম ঘন অবস্থার উৎপত্তি হবে non-causal পদ্ধতিতে।

সময়ের বিশাল স্কেলে (10^100 বছরেরও বেশি সময় পরে) মহাবিশ্বের সমস্ত ভর অত্যাধিক রেড-শিফট হওয়া ফোটন শক্তিতে ভেঙ্গে যায়। সেখানে দূরত্ব ও সময় দুটোই অর্থহীন হয়ে পড়ে। মহাবিশ্ব ঘটনা কোনো ছাড়াই অসীম থেকে অসীমে (→∞) প্রসারিত হতে থাকে। বিগ ব্যাং থেকে অসীম সম্প্রসারণের এই সময়কালকে বিজ্ঞানী পেনরোজ একটি যুগ বা aeon হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন। পূর্ববর্তী ইয়নের মসৃণ অসীম বিস্মৃতি পরবর্তী ইয়ন চক্রের নিম্ন-এনট্রপি বিগ ব্যাং অবস্থায় পরিণত হয়। এর কনফর্মাল জ্যামিতি কোণগুলিকে সংরক্ষণ করে কিন্তু পূর্ববর্তী ইয়নের দূরত্বগুলিকে নয়। এর পর্যায় স্থান নতুনভাবে শুরু হওয়ার জন্য নতুন ইয়ন মহাবিশ্বকে তার সূচনাকালে বেশ ছোট হিসেবে দেখায়।

একটি অসামান্য দীর্ঘ সময়ের পরে মহাবিশ্বের সমস্ত ভর ফোটনের মতো শক্তিশালী, শক্তি বহনকারী কণাতে রূপান্তরিত হবে। আর কোন ভর তৈরী হবে না। যদি আমরা আইনস্টাইনের শক্তি-ভর সমতুল্যতা এবং প্ল্যাঙ্কের শক্তি-ফ্রিকোয়েন্সি সমতা বিচার করি তাহলে আমরা ভর এবং কম্পাঙ্কের মধ্যে একটি সমতা পাই। কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি অনুসারে একটি স্থানকালে যেখানে কোন ভর অবশিষ্ট নেই, সেখানে "কোন ঘড়ি নেই"। দূরত্ব এবং সময়ের পরিমাপ এই ধরনের অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব এবং অর্থহীন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যদি ফোটনের মতো ভরহীন কণা বিশুদ্ধ বিকিরণ আলোর গতিতে অভিন্নভাবে ভ্রমণ করে। ভারসাম্যের এই অবস্থাটি বর্তমান পর্বের সমাপ্তি চিহ্নিত করবে, একই সাথে পরবর্তী যুগের প্রাথমিক সীমানা অবস্থা বা বিগ ব্যাং-এর প্রতিনিধিত্ব করবে।

মজার বিষয় হল, যেহেতু বিকিরণ নিয়ন্ত্রণকারী ক্ষেত্রগুলি (উদাহরণস্বরূপ, ম্যাক্সওয়েল) স্কেল-অপরিবর্তনশীল (scale-invariant), তাই এমন কোনও কারণ নেই যে এক ইয়ন থেকে বিকিরণ পরবর্তী সীমারেখা অতিক্রম করতে পারে না। ভরহীন, সময়হীন বোসন কণাদের কাছে পরবর্তী ইয়নের মধ্যে ধারাবাহিকতার একটি সূত্র বজায় থাকবে। দুটি ইয়নের মধ্যে সীমানাটি যেকোনো ফোটন 'পাসপোর্ট না দেখিয়েই' অতিক্রম করতে পারে।

আমাদের বিগ ব্যাং কোথা থেকে এসেছে কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি সেই প্রশ্নের কিছু বিশদ, অনুমানমূলক উত্তর দেয়। কিন্তু যদি পেনরোজের দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতে অগ্রগতির দ্বারা প্রমাণিত হয়, তবুও বেশ কয়েকটি গভীর প্রশ্ন থেকেই যায়। তা হলো আমাদের ফিজিক্যাল বাস্তবতা কোথা থেকে এসেছে? চক্রের পুরো সিস্টেমটি কীভাবে এসেছিল? একটিই চক্র বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটে নাকি একাধিক চক্র রয়েছে?

পেনরোজ কোয়ান্টাম তত্ত্বের একটি ইন্টারপ্রিটেশন বা ব্যাখ্যার সাথে যুক্ত অবিরাম নতুন চক্রের একটি ক্রম কল্পনা করেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটি ভৌত ​​সিস্টেম একই সময়ে অনেকগুলি ভিন্ন অবস্থার একটি সুপারপজিশনে বিদ্যমান থাকে। আমরা যখন তাকে পরিমাপ করি তখন শুধুমাত্র একটি দশাতে কোলাপ্স করে যায়। পেনরোজের মডেলে প্রতিটি ইয়ন র‍্যান্ডম কোয়ান্টাম ঘটনাগুলিকে এক একটি ভিন্ন জগতে পরিণত করে। সেই কারণে প্রতিটি ইয়ন এর আগে এবং পরের থেকে আলাদা হবে।

পেনরোজের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অন্তহীন ভাবে চক্রাকারে চলা নতুন নতুন মহাবিশ্বের ধারণাতেও আসা যায়। এটি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেকটি ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা হলো বহু-বিশ্বের ব্যাখ্যা বা many-worlds interpretation. বহু-বিশ্বের ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্রতিবার আমরা সুপারপজিশনে থাকা একটি সিস্টেমকে যখন পরিমাপ করি, সেই পরিমাপটি র‍্যান্ডমভাবে যেকোনো একটি অবস্থা নির্বাচন করে না। আমাদের নিজস্ব মহাবিশ্বে আমরা কেবল অনেকগুলো বাস্তবতার একটিকেই দেখতে পাই। অন্যান্য পরিমাপের ফলাফলগুলি অন্যান্য মহাবিশ্বে চলে, সেগুলো কার্যকরভাবে আমাদের নিজস্ব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। 


🔹পরীক্ষামূলক প্রমাণ? –

পেনরোজ এবং তার সহযোগীরা (Yerevan Physics Institute এর বিজ্ঞানী Vahe Gurzadyan এবং অন্যান্যরা) বিশ্বাস করেন যে তারা এই চিহ্নগুলি ইতিমধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন। Wilkinson Microwave Anisotropy Probe (WMAP) দ্বারা কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের (CMB) পর্যবেক্ষণ এবং BOOMERang পরীক্ষায় কসমোলজির প্রচলিত Lambda-CDM মডেলের উপর ভিত্তি করে সিমুলেশনের তুলনায় অতিরিক্ত সমকেন্দ্রিক বৃত্ত (concentric circles) রয়েছে। অবশ্য তাঁদের দাবি করা পর্যবেক্ষণগুলি অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীগণ নস্যাৎ করেছেন। এর সাথে সুদূর-ভবিষ্যত সম্প্রসারিত মহাবিশ্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে সমস্ত ভর কীভাবে ক্ষয় হবে তা সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। 

বিজ্ঞানের জগতে পেনরোজ এর দৃষ্টিভঙ্গি একটি আকর্ষণীয় অভিমুখ খুলে দিয়েছে। এটি বিগ ব্যাংকে ব্যাখ্যা করার জন্য আমাদের সাধারণ কারণ এবং প্রভাবের বাইরে নিয়ে যেতে সক্ষম। একমাত্র ভবিষ্যতই এর সত্যতা নিয়ে আমাদের নিশ্চিত করতে পারে।


লিখাঃ সরোজ নাগ।

তথ্যসূত্র - 1) Cycles of Time: An Extraordinary New View of the Universe, Roger Penrose.

2) Daniel An, Krzysztof A Meissner, Paweł Nurowski, Roger Penrose, Apparent evidence for Hawking points in the CMB Sky, Monthly Notices of the Royal Astronomical Society, Volume 495, Issue 3, July 2020, Pages 3403–3408


রেখাচিত্রগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। প্রথম চিত্রটি ফার্মিল্যাবের সৌজন্যে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম