মেন্টালিজম



না, মেন্টালিজম মানে কোনো মানসিক রোগ না। এটা এক ধরনের আর্ট। যিনি পারফর্ম করেন তাকে বলা হয় মেন্টালিস্ট।

মেন্টালিস্টরা হিপনোটিজম, টেলিপ্যাথি, মাইন্ড রিড, মাইন্ড কন্ট্রোল, ভবিষ্যৎবাণী করা, স্পর্শ না করে কারো শারীরিক ক্ষতি করা সহ নানান ধরনের কাজ করে থাকেন। এক সময় মেন্টালিস্টদের জাদুকর বলা হতো কিন্তু মেন্টালিস্টদের আলাদা আর্ট পারফর্মার হিসেবে ধরা হয়। ম্যাজিক এবং মেন্টালিজমে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। 

মেন্টালিস্টদের এসব কাজকর্ম দেখে লোকজন তাদের সুপার ন্যাচারাল ভাবতে পারেন। তবে আসলে তারা স্বাভাবিক মানুষ, তবে তারা অনেক অভিজ্ঞ এবং মেন্টালিজম শেখার জন্য অনেক অনেক চর্চা করতে হয়েছে। 

আমাদের আশেপাশে এরকম অনেক মানুষ আছে যারা মানুষের মনের কথা সহজেই বুঝতে পারে, যাদের ভবিষ্যৎবাণী মাঝেমধ্যে মিলে যায়। এনারা কেউই কিন্তু অলৌকিক ব্যাক্তি না। এরা জাস্ট হিউম্যান সাইকোলজির প্যাটার্ন বুঝতে পারায় দক্ষ এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা ভালো বলে মোটামুটি ভবিষ্যৎবাণী করতে পারে। 

মেন্টালিজম যে অলৌকিক কিছু না এই ব্যাপারে বিখ্যাত অনেক জাদুকর এবং মেন্টালিস্টরা স্বীকারোক্তি করেছেন। যেমন বিখ্যাত মেন্টালিস্ট Joseph Dunninger বলেন, " মেন্টালিজম হচ্ছে এরকম একটি আর্ট যা একটি দশ বছরের বাচ্চাও করতে পারে, তবে তার ৪০ বছর অভিজ্ঞতা থাকা চাই"

অর্থাৎ ব্যাপারটা হচ্ছে লৌকিক কিন্তু অনেক অনেক চর্চার ব্যাপার। 

তবে অধিকাংশ মেন্টালিস্ট এবং তাদের ভক্তরা এসব বিষয়কে অলৌকিক হিসেবে দাবি করেন এবং নিজেদের আধ্যাত্মিক লোক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

মেন্টালিজমের বেশ কয়েকটি আর্টের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা জানার চেষ্টা করি।

১. হিপনোটিজম : নাটক-সিনেমায় যেরকমটা দেখায় বাস্তবে এরকম হিপনোটিজম পসিবল না। 

আপনাকে চাইলেই কেউ হিপনোটাইজ করতে পারবে না যদি আপনার ইচ্ছে না থাকে। 

হিপনোসিস হচ্ছে এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল  থেরাপি। বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কেউ যখন কোনো কিছুর প্রতি গভীরভাবে ফোকাসড থাকে তখন আশেপাশের কোনো কিছুর প্রতি তার খেয়াল থাকে না, এটাই হিপনোটিজম। 

আমরা যখন খুব মনোযোগ দিয়ে মুভি দেখি বা বই পড়ি তখনও কিছুটা হিপনোটাইজড থাকি।

প্রফেশনাল হিপনোটিজম কিছুটা ভিন্ন অবশ্য। 

যাইহোক, আসল কথা হচ্ছে আপনি না চাইলে কেউ জোর করে হিপনোটাইজ করতে পারবে না(১)

২. টেলিপ্যাথি : না, টেলিপ্যাথিরও কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। 

দুজন মানুষ মেন্টালি খুব এটাচড থাকলে তাদের চিন্তার প্যাটার্নে মিল থাকতে পারে, একই চিন্তা করতে পারে। বিপদ হলে টের পেতে পারে কেননা একে অন্যের বিস্তারিত জানে।

মায়েরা ছোট থেকেই আমাদের চিনে, সে হিসেবে মায়েদের অনেক প্রেডিকশন মিলে যেতে পারে।

আপনার কোনো বিপদ হলে মা কি আসলেই বুঝতে পারে? 

সত্যি কথা হচ্ছে মায়েরা আমাদের নিয়ে খুব কনসার্নড থাকে। তাদের থেকে দূরে থাকলে আরও বেশি চিন্তিত থাকে। সুতরাং মায়েদের উৎকন্ঠা এবং আমাদের বিপদ মিলে যেতেই পারে।

৩. মাইন্ড রিড : হিউম্যান সাইকোলজির কিছু প্যাটার্ন আছে। আমরা এগুলো সহজে লুকোতে পারি না। চালাক এবং অভিজ্ঞ লোকেরা এসব প্যাটার্ন ধরে ফেলে। 

আপনার ক্রাশ কিভাবে বুঝতে পারে আপনি তাকে পছন্দ করেন? তার সামনে আপনার আচরণ যেমন : তাকে দেখলে লজ্জা পাওয়া, চেহারা লাল হয়ে যাওয়া, অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখে বুঝতে পারে।

গোয়েন্দারা মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে। দেখেই অনেক সময় অপরাধী শনাক্ত করতে পারে। 

আমরা যা ভাবি সেটা আমাদের কথাবার্তা এবং আচরণে অনেকটাই প্রকাশ পায়।

অনেক কবিরাজরা মানুষের মনের কথা বলে দেন! কিভাবে বলেন? 

আপনার বেশভূষা, আচরণ এবং কথাবার্তা দেখেশুনে তারা আপনি কোন শ্রেণীর লোক তা গেস করে। সমাজে বসবাসরত মানুষদের শ্রেণীভেদে কিছু কমন প্রবলেম থাকে।

তাছাড়া এসব কবিরাজদের অনেক গুপ্তচরও থাকে। আপনি আসার পথে কি আলাপ করেন তা শুনে রাখে।

মাইন্ড রিড পসিবল, তবে তার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দরকার। এই নিয়ে রিসার্চ অনেকটাই সফল।

৪. মাইন্ড কন্ট্রোল : এটা হিপনোটিজমের মাধ্যমে পসিবল কিছুটা। যিনি হিপনোটাইজ করবেন তিনি পারবেন।  এমনিতে পসিবল না।

অবশ্য আপনি কারও প্রতি অনেক বেশি ডিপেন্ডেবল হয়ে গেলে সে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই পারে!

তাছাড়া, কোনো স্টেজে কোনো জাদুকর এমন কোনো ট্রিক দেখালো যে আপনি একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তখন জাদুকর আপনাকে দিয়ে কিছু করিয়ে নিতে পারে।

৫. ফিউচার প্রেডিকশন/ প্রেডিকশন : যে ব্যাক্তি আসলেই ফিউচার প্রেডিক্ট করতে পারে, সে নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে আপনার ভবিষ্যৎ গোণার জন্য কামরা খুলে বসবে কেন?

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারতাম বৃষ্টি আসবে কি না! দেখা যেত আমার প্রেডিকশন সত্যিই মিলে যাচ্ছে। লোকজনও অবাক হতো। অথচ ব্যাপারটা অদ্ভুত কিছু না। আমি বেশিরভাগ একাকী থাকার ফলে পরিবেশকে খুব নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতাম। সে জন্যে আবহাওয়া ধরণ অনেকটা চেনা হয়ে গিয়েছিল। 

যারা নিজেদের আধ্যাত্মিক বলে দাবি করে, বেশিরভাগই একাকী থাকে। মেডিটেশন করে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডিপলি চিন্তা করে। এগুলোকে প্যাটার্নে সাজায়। এবং এই প্যাটার্ন অনুযায়ীই প্রেডিকশন দেয়। যদিও এগুলো মিলে যায় খুব কমই। যত বেশি অভিজ্ঞ, প্রেডিকশন মেলার চান্স ততো বেশি।

৬. Psychokinesis : স্পর্শ না করে কোনো বস্তুকে নাড়িয়ে দেওয়া, বাকা করে ফেলা এগুলো হচ্ছে Psychokinesis। এগুলো ট্রিকস। বহুদিন চর্চার ফল।

টেলিপ্যাথি বা এই Psychokinesis অলৌকিক বা আধ্যাত্মিক কিছু এরকম কোনো প্রমাণ নাই।

মোদ্দা কথা হলো, সবই কৌশল, চর্চা এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফলাফল। বিজ্ঞান একে অলৌকিক এবং অমীমাংসিত মনে করে না।

ইমামুল হাসান

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form