সিগারেট খেলে ব্রেইনের আয়তন কমে যায়!!



অবাক হচ্ছেন? শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এটা সত্যি!

এই যে এতকাল ধরে শুনে আসছি, সিগারেট ফুসফুস ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের অন্যতম কারণ এটাও সত্যি, আবার সিগারেট ব্রেইন ছোট করে ফেলে এটাও সত্যি।

২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, আপনি যত বেশি স্মোকিং করবেন ব্রেইনের আকার ( কিছু নির্দিষ্ট অংশে) ছোট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ততই বেশি। 

গবেষকরা বলেন, স্মোকিং ব্রেইনের subcortical area গুলোতে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে! 

আসল কথা হচ্ছে, বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে সব মানুষেরই এরকমটা হয় তবে স্মোকারদের এটা অনেক আগে থেকে শুরু হয় এবং নন-স্মোকারদের তুলনায় একটু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে!!

এই কথা শুনে স্মোকাররা একটু আশাবাদী হলেও আরও কিছু দুঃসংবাদ আছে তাদের জন্য।

১. স্মোকিং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। 

ডিমেনশিয়া কী? ডিমেনশিয়া হচ্ছে মস্তিষ্কের একটা রোগ, এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা কোনো কিছু মনে রাখতে পারার, চিন্তা করার এবং ভাষাগত দক্ষতা হারায়। এতে মানুষের পার্সোনালিটি চেইঞ্জ হয়ে যায়। 

বয়স বাড়ার সাথে অনেকেরই ডিমেনশিয়া হয়। তবে স্মোকারদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই ডিমেনশিয়া ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ২০১৫ তে, ৩৭ টি রিসার্চ পেপার রিভিউ করে গবেষকরা দেখতে পান, নন-স্মোকারদের তুলনায় স্মোকারদের ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৩০% বেশি।


২. কগনিটিভ ডিক্লাইনের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। 

কগনিটিভ ডিক্লাইনের সহজ বাংলা হচ্ছে বুদ্ধির ক্ষয়। বয়সের সাথে মানুষের বুদ্ধিমত্তা কমে আসতে শুরু করে তবে সবার না। কিন্তু স্মোকারদের এই সমস্যার হওয়ার সম্ভাবনা নন-স্মোকারদের তুলনায় অনেক বেশি।

এবার একটু রাসায়নিক আলাপে যাই। সিগারেটে প্রধানত কী থাকে? নিকোটিন, রাইট?

এই নিকোটিনই ঝামেলার প্রধান কারণ। এই রাসায়নিক উপাদান ব্রেইনের কিছু নিউরোট্রান্সমিটারকে মিমিক করতে পারে। অর্থাৎ রিপ্লেস করতে পারে বিশেষ করে acetylcholine নামের নিউরোট্রান্সমিটারকে। 

এছাড়া, নিকোটিন ব্রেইনে ডোপামিন রিলিজ স্টিমুলেট করে। দীর্ঘদিন স্মোকিং করলে নিকোটিন আর ডোপামিন একই ধরনের কাজ করা শুরু করে। আপনার ব্রেইন সবসময় নিকোটিন নিকোটিন করে চিল্লাতে থাকে। আপনি চাইলেও আর স্মোকিং ছাড়তে পারেন না, ব্রেইনের মন খারাপ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ আপনার মধ্যে অস্থিরতা, anxiety কিংবা মেজাজ খিটখিটে হওয়ার স্বভাব দেখা যায়।

এত কথা পড়ার পরে আপনি মনে মনে ভাবলেন, না, আর স্মোকিং করব না। আবার ভাবছেন, যদি স্মোকিং ছেড়ে দিই শরীরের সেই ক্ষতি পুষিয়ে আগের মতো হতে পারব তো!

আশার কথা হচ্ছে, জি, শরীর এই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে নিতে পারবে।


কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিই :

১. স্মোকিং ছেড়ে দেওয়ার ২০ মিনিট পরেই আপনার হার্ট বিট কমে আসতে শুরু করবে। 

স্মোকিং হার্টবিট বৃদ্ধি করে, এজন্য স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। 

২. ১২ ঘন্টার মধ্যে রক্তে কার্বন মনোক্সাইড এর মাত্রা কমে যাবে।

৩. ব্লাড সার্কুলেশন এবং ফুসফুসের কার্যাবলী ৩ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

৪. স্মোকিং ছেড়ে দেওয়ার এক বছরের মধ্যে আগের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫০% কমে যাবে।

৫. ৫-১০ বছরের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি নন-স্মোকারদের ঝুঁকির লেভেলে চলে আসবে।

আর অন্যান্য যে ঝুঁকি সমূহ আছে সেগুলোও সময়ের সাথে হ্রাস পাবে।

শেষ কথা হচ্ছে, স্মোকিং শরীরের মোট ২৬টির ও বেশি ক্ষতি করে!! 

সুতরাং প্রিয় ভাই-বোন, ধূমপান পরিহার করুন।

রেফারেন্স। 

https://www.healthline.com/health/smoking/smoking-effects-on-brain#takeaway

ইমামুল হাসান

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form