কাউকে সহজে ভুলে যাওয়ার উপায়


প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে কিংবা তার কাছে রিজেক্টেড হয়ে কষ্ট পাননি এরকম মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে নেহায়েতই কম। বিচ্ছেদ বা প্রত্যাখানের পরে ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে প্রচুর।

অথচ কেউ পাশে থেকে সঠিকভাবে গাইড দিলে বা ভুক্তভোগী সঠিক গাইডলাইন পেলে অনেক জীবনই বেঁচে যেত। আমাদের সমাজব্যবস্থায় যেন দুঃখ পাওয়া মস্ত বড়ো অপরাধ। তাই ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলা আত্মহত্যা করতেও রাজি থাকে, তবুও কারও সাথে শেয়ার করে না।

আজকের আলোচনা বিচ্ছেদ কিংবা প্রত্যাখানের যন্ত্রণা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মুভ অন করা যায়।

১. Look to the future। 

 ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে নিরিবিলি কোনো স্থানে আরাম করে বসুন। বেশ কয়েকবার দীর্ঘশ্বাস নিন। এবার ভাবুন :

যার জন্য মন খারাপ সে আপনার জীবনে আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? সে না থাকলে কি আপনার ভবিষ্যতে অপূরণীয় কোন ক্ষতি হতে যাচ্ছে? সাময়িক কষ্ট পাওয়া ছাড়া! যদি তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকে তাহলে প্যারা কিসের বস?

আমরা নিজেরাই নিজেদের রিয়েলিটি সৃষ্টি করি। কতশত স্বপ্ন দেখি। প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে এরকম কোন স্বপ্ন থাকাটা অবান্তর নয়।

তো, এখন ভাবুন, তাঁর সাথে বিচ্ছেদের পরে আপনার জীবনে বেটার কোনো টাইমলাইন ক্রিয়েট করা যায় কি না? সে ছাড়া অন্যান্য বেটার অপশন খুঁজে বের করুন। তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে ড্রিম সেট করুন। দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন।


২. কষ্ট পাওয়াটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিন। 

মানুষের ব্রেইন যেমন জটিল, তেমনি চিন্তাভাবনাও জটিল। মানুষ হিসেবে আমাদের ইমোশন থাকবে, কষ্ট পাব, কান্না করব এটাই স্বাভাবিক। এটাকে অস্বীকার করার কোনো ওয়ে নাই।

বিচ্ছেদের পরে আপনি নিজেকে বুঝাতে হবে " এই যে আমি কষ্ট পাচ্ছি, এটা হিউম্যান ন্যাচার এবং এটা বেশিদিন থাকবে না। আমি ঠিকই মানিয়ে নিতে পারব"

এই জিনিসটা যত বেশি নিজেকে বুঝাতে পারবেন মুভ অন করা তত বেশি দ্রুত হবে।


৩. Accept the truth : সত্যিটা বুঝতে শিখুন।

আমাদের বেশিরভাগ মানুষের সমস্যা কি জানেন? আমরা সত্যিটা মানতে পারি না। অথচ সত্যিটা মেনে নেওয়া জীবনের বড় একটা দক্ষতা। 

আশাবাদী হওয়া ভালো তবে সেটা যেন আকাশ-কুসুম কল্পনা না হয়। ইমোশনাল না হয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন বিচ্ছেদটা হওয়া কেন জরুরী ছিল। আপনার লাইফে কী কী ক্ষতি হচ্ছিল। 

একপাক্ষিক ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশি জরুরী। আপনি যাকে ভালোবাসেন সেও আপনাকে ভালোবাসবে এরকম কোন নিয়ম নেই। 

সেও আপনাকে একদিন ভালোবাসবে এরকম চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে তার সাথে দূরত্ব তৈরী করুন। কেননা যত বেশি মিশবেন, তাঁর প্রতি তত বেশি দুর্বল হয়ে যাবেন। সময় নিয়ে অবজার্ভ করুন, সে আপনাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।

নাটক সিনেমার সাথে বাস্তবতা মিলিয়ে হ্যানত্যান ভাবনা বাদ দিতে হবে।


৪. নিজেকে সময় দিন।

শারীরিক এবং মানসিক নানান কসরতের ভিড়ে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার সময়টুকু আমাদের আসলেই কম। সারাদিনের ব্যাস্ততা শেষে যেটুকু সময় পাই তাও আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যায় করি। অথচ প্রতিদিন নিজেকে একটু সময় দিলে আমাদের জীবন সুন্দর হতো!

নিজেকে সময় দেওয়া মানে সবকিছু রেখে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করা। আমি বর্তমানে যা করছি তা ঠিক কি না, আমার আসলে কী করা উচিত, নিজের ঠিকঠাক যত্ম নিচ্ছি কি না, আমাকে আসলে কোন ড্রেসে ভালো মানায়, আমার কিভাবে কথা বলা উচিত, চারপাশের মানুষদের সাথে আমার কমিউনিকেশন প্রোপারলি হচ্ছে কি না, কি কারণে বিচ্ছেদ হলো, এখানে আমার ফল্ট কী, ফিউচারে এসব এভয়েড করা উচিত কি না ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবতে হবে। যত গুছিয়ে চিন্তা  করবেন তত সুফল পাবেন। নোট করে নিয়ে ধাপে ধাপে চিন্তা করুন। 


৫. দূরত্ব বাড়িয়ে নিজেকে একা করুন। 

না, সবার থেকে দূরে থাকার দরকার বলছি না। যাদের সাথে কথা বললে ভালোবাসার মানুষটাকে মনে পড়বে, যেসব জিনিস তার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় সেসব থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে থাকুন। কোনো প্রকার আলসেমি করা যাবে না এক্ষেত্রে। 

যদি মানুষটা এরকম কেউ হয় তাঁর সাথে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল বা প্রতিনিয়ত দেখা হবে তাহলে আপাতত কয়েকদিনের জন্য হলেও তাঁর সামনে যাওয়া বাদ দিন। যতদিন না পর্যন্ত তার প্রতি ইমোশন একেবারে লো হয়ে আসছে ততদিন পর্যন্ত।

এজন্য আপনি নতুন কোনো জায়গায় যেতে পারেন, নতুন বন্ধু বানাতে পারেন এবং নিজের শখের কাজগুলো করুন।

আবারও বলছি, কোনভাবেই তার স্মৃতি মনে করায় এরকম ব্যাক্তি ও বস্তুর আশেপাশেও যাবেন না। 

"আরে আমরা ফ্রেন্ডই থাকব, প্যারা নাই" বলে তাঁর সাথে পিরিত বাদ দিতে হবে। নাহয় এতে দুঃখ পাওয়া ছাড়া অন্য কিছু হবে না।


৬. নতুন কোনো সম্পর্কে জড়ানো। 

এটা অনেকটা কাটা দিয়ে কাটা তোলার মতো ব্যাপার। একজনকে ভুলতে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রেমের সম্পর্ক হতে হবে এরকমই নয়, ভালো বন্ধুত্বও তৈরী করতে পারেন।

বেটার হয়, বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে সম্পর্ক গ্রো করা। তবে এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে যদি না ভেবেচিন্তে অগ্রসর হোন। আপনাকে আগে থেকেই প্রায়োরিটি দিত এরকম কাউকে বেছে নিন।

এগুলো সাধারণ পরামর্শ। সবগুলো আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। পৃথিবী বৈচিত্র্যময়, সেই সাথে আপনার আমার সমস্যাও। 

আসল কথা হচ্ছে, নিজেকেই বুঝতে হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী কিভাবে মুভ অন করবেন, আমার আর্টিকেল আপনাকে কিছু দিক নির্দেশনা দিবে মাত্র।

ভালোবাসা টিকে থাকুক, প্রেমিকরা সুখী হোক।

ধন্যবাদ। 

রেফারেন্স। 

https://www.healthline.com/health/how-to-stop-loving-someone

ইমামুল হাসান

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form