সারাদেশে মতো রাজধানীতে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। শীতের কারণে একদিনে যেমন নগরবাসীর দূর্ভোগ বেড়েছে অন্যদিকে বিভিন্ন রকম চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে।
শীতকালে এক বিছানায় চাপাচাপি করে ঘুমানো এবং অপরিস্কার পোষাক পরিধান করার কারণে সংক্রমিত হয়ে পারে। চর্ম রোগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব শিশু স্কুলে যায় তারাই এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শরীরে অসম্ভব রকম চুলকানি হতে দেখা যায় এবং রাতের বেলা চুলকানির তীব্রতা আরো বাড়ে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই একটু দরকার বাড়তি সচেতনতা।
চর্মরোগ কি?
চর্মরোগ ত্বককে প্রভাবিত করে বা ত্বকে না না রকম সমস্যার সৃষ্টি করে ও ছড়িয়ে পরে। সহজ কথায় চর্মরোগ ত্বকের বিভিন্ন রোগগুলিকে বুঝায়। আজ আমরা জানব চর্মরোগ প্রতিরোধের উপায় অর্থাৎ কিভাবে চর্মরোগ প্রতিরোধ করা যায়।
চর্ম রোগের কারন কি?
চর্মরোগের কারন ও ধরন ভিন্ন ভিন্ন হয়। ত্বকে সংক্রমণের কারনে যে চর্মরোগগুলি হয় তাদের ধরন সংক্রামক এজেন্টের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ত্বকে সংক্রমণ ঘটায় এধরণের এজেন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস,প্রোটোজোয়া, ছত্রাক (ফাঙ্গাস) ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস, লুপাস,স্ট্রেস ইত্যাদি রোগ ও গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তাছাড়াও অ্যালার্জি, অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারনেও চর্মরোগ দেখা দেয়।
চর্ম রোগের লক্ষণ কি?
সব ধরনের চর্ম রোগের লক্ষণ এক হয় না। অর্থাৎ চর্ম রোগের ধরন ও কারণ অনুযায়ী লক্ষণ প্রকাশ পায়। সব চর্মরোগে চুলকানি থাকে না।
আবার কিছু ত্বকের সমস্যা রয়েছে যেগুলো চর্ম রোগ নয়। যেমনঃ টাইট বেল্ট পরার কারণে কোমরের ত্বকে সমস্যা, জুতা পরার কারণে পায়ে ফোষ্কা,মোটা কাপড় পরার কারণে শরীরে ফুসকুড়ি হওয়া ইত্যাদি।
সাধারণত বিভিন্ন চর্মরোগর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
*ত্বকে ফুসকুড়ি হওয়া
*ত্বকে ব্যথা বা চুলকানি
*খসখসে বা রুক্ষ ত্বক
*ত্বক থেকে চামড়া ওঠা
*ত্বকে বিবর্ণ দাগ
*অতিরিক্ত ফ্লাশিং
*ত্বকে ক্ষত বা ঘা (একে ত্বকের আলসার বলে)
*ক্ষত থেকে পানি পরা
চর্ম রোগের চিকিৎসা (ক্রিম ও ট্যাবলেট)
বেশির ভাগ চর্মরোগই নিরাময়যোগ্য। তবে জেনেটিক কারনে অর্থাৎ বংশগত কারণে কোন চর্মরোগ হলে সেটিকে নিরাময় করা যায় না।
আবার হরমোনের ভারসাম্য, ডায়াবেটিস, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সহ না না ধরনের শারীরিক সমস্যার কারনে চর্মরোগ হলে সেটিকে নিরাময় করা জটিল হয়।
যাইহোক, চর্মরোগের ওষুধ গুলির মধ্যে রয়েছে –
*অ্যান্টিহিস্টামিন
*স্টরয়েড যুক্ত ক্রিম বা মলম
*অ্যান্টিবায়োটিক
*ভিটামিন (রেগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য)
*লেজার থেরাপি
ডাক্তার নির্দেশিত পেসক্রিপশন ওষুধ।
চর্মরোগ প্রতিরোধঃ
জেনেটিক বা অন্য কোন রোগের অসুস্থতার কারণে যে চর্মরোগ হয় সেগুলোকে প্রতিরোধ করা যায় না। যেতু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা হলো সবচেয়ে ভালো কাজ তাই চর্মরোগ প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চর্মরোগ প্রতিরোধে নিচের পদক্ষেপগুলো মেনে চলতে হবে –
*সাবান ও গরম পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোঁয়ার অভ্যাস করতে হবে।
*নিজের খাবার পাত্র (যেমনঃ প্লেট,গ্লাস,চায়ের কাপ ইত্যাদি) অন্য কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না।
*চর্মরোগে আক্রান্ত এমন ব্যাক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
*পাবলিক স্পেসে কোন কিছু ব্যাবহার করলে জীবানু মুক্ত করে নিতে হবে।
*ব্যক্তিগত জিনিসপত্র,যেমনঃ কম্বল,হেয়ার ব্রাশ,তোয়ালে ইত্যাদি কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না।
*অন্য কারো জিনিসপত্র ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
*প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
*অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ এড়িয়ে চলতে হবে।
*পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
*সংক্রামক চর্মরোগের টিকা নিতে হবে। যেমনঃ চিকেন পক্স এর টিকা।
ইনফেকশন ছাড়া যে সকল চর্ম রোগ হয় যেমনঃ ব্রন,এটোপিক ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি রোগসমুহ প্রতিরোধ করতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে।
*একটি মৃদু ক্লিনজার ও জীবানু মুক্ত পানি দিয়ে প্রতিদিন মুখ ধুতে হবে।
*ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করতে হবে।
*অ্যালার্জিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
*রাসায়নিক দ্রব্যাদি বা ক্ষতিকর প্রসাধনী এড়িয়ে চলতে হবে।
*প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
*স্বাস্থ্যকর খাবার ও প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
*ত্বককে অতিরিক্ত ঠান্ডা,তাপ ও বাতাস থেকে রক্ষা করতে হবে।
*নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বিভিন্ন চর্মরোগ ও এদের *কারণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাহলে চর্মরোগ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
*চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সঠিকভাবে রোগ সনাক্ত না করতে পারলে ওষুধ বা ক্রিম ব্যাবহার ঝুঁকিপূর্ণ হবে। যেমনঃ স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম বা মলম ব্যবহারে কিছু কিছু চর্মরোগে মারাত্নক সমস্যা দেখা দেয়।