শীতের দিনে মন খারাপ থাকে এরকম মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বেশিরভাগ মানুষের শীতকাল ভালো লাগলেও এই ধরনের লোকেদের কাছে শীত একটা বিভীষিকার নাম।
শীত আসলেই মন জানি কেমন কেমন করে, মনের মধ্যে শূন্যতা অনুভব হয়, প্রাক্তনকে মনে পড়ে অথবা নতুন করে প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।
সত্যি বলতে, আমার নিজেরই এই ধরনের সমস্যা আছে। শীত আসলে ইমোশনাল আপ-ডাউন বেশি হয়।
তো চলুন বিস্তারিত আলাপে :
এই যে ঋতুকেন্দ্রিক ইমোশনাল আপ-ডাউন এটাকে বলে স্যাড (SAD). SAD এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Seasonal Affective Disorder. মনে রাখতে হবে এটা রোগ নয়, সমস্যা ( Disorder)
শুধু কি শীতেই এই সমস্যা হতে পারে?
না, শুধু শীতে না। গ্রীষ্ম এবং বসন্তকালেও হতে পারে। তবে শীতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
গ্রাম্য একটা প্রবাদ আছে " পাগল চ্যাতে ভাদ্র মাসে"। ভাদ্র মাসে শীতের শুরু হয়। এই SAD ও অনেকটা এরকম। সিজনে সিজনে বেড়ে যায়।
__________________
SAD ঋতুভেদে দুই ধরনের হতে পারে।
১. শীতকালীন SAD : এই ক্ষেত্রে শীতের শুরুতে এর সিম্পটম শুরু হয় এবং শীতের শেষে চলে যায়। এটাকে winter depression বলে।
লক্ষণসমূহ :
▪ শুধু ঘুমাইতে মন চাইবে। যত ঘুমাইবেন, ঘুমে আপনার মাথা ভরবে না।
▪ ক্ষুধায় চেঞ্জ আসবে। ভয় পাওয়ার কারণ নেই, কমবে না। ক্ষুধা প্রচন্ড বেড়ে যাবে বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেটের ( ভাত, রুটি) প্রতি।
▪ অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পাবে।
▪ সারাক্ষণ ক্লান্ত অনুভব করা। শরীরে বল না পাওয়া।
▪ আর ডিপ্রেশন তো আছেই। ডিপ্রেশনে পড়লে অতীতের কথা মনে পড়াটা স্বাভাবিক।
২. বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালীন SAD : যদি লক্ষ্য করেন বসন্ত বা গ্রীষ্মের শুরুতে আপনার উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া ডিপ্রেশন বেড়ে যাচ্ছে এবং এটা যদি কয়েকবছর একই সময়ে হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনি বসন্ত বা গ্রীষ্মকালীন SAD এ আক্রান্ত। এটাকে আবার summer depression ও বলে।
লক্ষণসমূহ :
▪ ঘুমাইতে পারবেন না। (শীতকালীন SAD এর বিপরীত)।
▪ ক্ষুধা কমে যাবে।
▪ বেশিরভাগ সময় উদ্বিগ্ন এবং কনফিউজড থাকা।
▪ খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে যাওয়া।
কিছু কমন লক্ষণ :
১. প্রায় প্রতিদিনই মুড অফ থাকা। নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করা এবং শরীর ক্লান্ত থাক।
২. সবসময় ভালো লাগত এরকম কিছুর প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
৩. মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া।
৪. নিজেকে মূল্যহীন কিংবা অপরাধী মনে করা।
৫. বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে সুইসাইডাল হয়ে পড়া।
কারণসমূহ :
__________
১. দেহ ঘড়ি ( বায়োলজিক্যাল ক্লক) : Circadian rhythm এর নাম শুনেছেন?
আধো-অন্ধকারের পার্থক্য বুঝে আমাদের জেগে থাকা, ঘুমানো এবং মুড নিয়ন্ত্রণ সহ অন্যান্য কাজ যে রিদম অনুযায়ী হয় সেটাই Circadian rhythm.
শীত বা বসন্তে দিনের দৈর্ঘ্য এবং সূর্যের আলোর তীব্রতা দুটোই কম হয়। এবং এই ব্যাপারটাই আমাদের মুড খারাপ করে দিতে পারে। কেননা, এই রিদম অনুযায়ী কম আলো মানে এখন শরীরের বিশ্রাম দরকার। ঘুমাতে হবে।
রিদমে পরিবর্তনের কারণে আমাদের মুড নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনেও গন্ডগোল বাধে। ফলে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। রাত হলে সকল দুঃখ মনে উঠার এটা একটা কারণ।
২. সেরোটোনিন লেভেল : সেরোটোনিন হচ্ছে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের মুড নিয়ন্ত্রণ করে। শীত বা বসন্তে সূর্যের কম আলো এই নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন কমে যায় এবং আমাদের মুড খারাপ হয়।
৩. মেলাটোনিন লেভেল : মেলাটোনিন হচ্ছে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি। এর কাজ আমাদের ঘুম পাড়ানো। যখন অন্ধকার হয়ে আসে শরীরে মেলাটোনিন নিঃসরণ শুরু হয়।
গ্রীষ্মে সূর্যের তীব্র আলো এবং দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় সারকেডিয়ান রিদমে পরিবর্তন আসে এবং মেলাটোনিন লেভেলেও সমস্যা দেখ দেয়।
ফলে ঘুমের কোয়ালিটি ভালো হয় না।
আর ঘুমের কোয়ালিটি ভালো না হলে ডিপ্রেশন, মাথাধরা, anxiety, কনফিউশান, মেমোরি লস সহ অনেক সমস্যা হতে পারে।
যাদের SAD হওয়ার ঝুঁকি বেশি :
১. বংশের কারো SAD বা অন্য কোনো ডিপ্রেশন ডিজঅর্ডার থাকলে।
২. বাইপোলার ডিজঅর্ডার কিংবা ম্যাজর ডিপ্রেশন থাকলে।
৩. মেরুতে বসবাসরত লোকেদের। ( মেরুতে সূর্যের আলোর কম-বেশি হওয়ার প্রবণতা বেশি বলে)
৪. শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব থাকা।
__________________
এটা কি আসলে মারাত্মক কোনো সমস্যা?
ঋতু পরিবর্তনের ফলে মুডেও পরিবর্তন আসাটা স্বাভাবিক। তবে সেটা যদি বেশি তীব্র হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসক আপনাকে অবস্থা বুঝে চিকিৎসা দিবেন। এর চিকিৎসা হিসেবে phototherapy, Psychotherapy এবং বিভিন্ন ধরনের ঔষধ প্রচলিত।
সোর্স : "Seasonal affective disorder (SAD) - Symptoms and causes - Mayo Clinic" https://www.mayoclinic.org/diseases-conditions/seasonal-affective-disorder/symptoms-causes/syc-20364651
ইমামুল হাসান