পরিচিতি: বহেড়া গাছ উচ্চতায় ৫০ -৭০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এই গাছ। গাছের গুড়িও অনেক লম্বা। পেকে গেলে লাল হয়। এরপর শুকিয়ে ক্রমশ বাদামি হয়। ফলের বাইরের আবরণ মসৃণ ও শক্ত এবং ভেতরে একটি মাত্র শক্ত বীজ থাকে। শীত কালে এর ফল পুষ্ট হয়, তারপর নিজ থেকেই গাছ থেকে খসে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে বনাঞ্চল ও গ্রামে এই গাছের দেখা মেলে। প্রতিদিন বহেড়া ফল ভিজানো এক কাপ পানি খেলে দীর্ঘজীবী হওয়া যায়। এর বাকল ধূসর ছাই রঙের। পাতা কাঁঠাল পাতার মতো মোটা।
বহেড়ার উপকারিতাঃ
➢ বহেড়া বীজের শাঁসের তেল বের করে শ্বেতীর উপর লাগালে গায়ের রং অল্প দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়।
➢ বহেড়া বীজের শাঁস অল্প পানিতে মিহি করে বেটে চন্দনের মতো টাকে লাগালে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে , টাক সেরে যায়।
➢ ইন্দ্রিয়-দৌর্বল্য এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে রোজ দুটি কওে বহেড়া বীজের শাঁস খেতে হবে।
➢ আধা চা-চামচ বহেড়া চূর্ণ, ঘি গরম করে তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শেস্মায় উপকার পাওয়া যায়।
➢ কফের সমস্যায় আধা চা চামচ বহেড়া চূর্ণ ও পরিমাণ মতো ভাল ঘি এক সাথে গরম করে তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুত কফের সমস্যা দূর হয়।
➢ হজমশক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষুধামন্দায় প্রতিবার পাঁচ-ছয় গ্রাম বহেড়ার খোসা চূর্ণ আহারের পর দিনে দুই বার সেবন করে গেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষুধামন্দায় বিশেষ উপকার হয়।
➢ বীজ থেকে উৎপাদিতে তৈল মালিশ করলে বাত সেরে যায়। বহেড়ার ফল ত্রিফলার একটি উপাদান। চোখের অসুখ এবং বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড় ইত্যাদিতে বহেড়া ব্যবহার হয়।
➢ ফুলো কমানোর জন্য বহেড়া বীজ বাদ দিয়ে ছাল বেটে একটু গরম করে ফুলোয় প্রলেপ দিলে ফুলো কমে যায়।
➢ সাদা বা রক্ত যে কোন আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে পানির সাথে বহেড়া চূর্ণ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
➢ বহেড়া হৃত্পিণ্ড এবং যকৃত্ রোগের আক্রমণ কমায়। এটা কৃমিনাশক, স্বরনাশক এবং অনিদ্রা দূর করে। এ ছাড়া পাইলস, হাঁজল ও কুষ্ঠরোগে বহেড়ার চিকিত্সা বেশ ফলপ্রসূ।
➢ রক্ত আমাশয় কিংবা পুরাতন আমাশয়ে প্রতিবারে তিন-চার গ্রাম বহেড়া খোসা চূর্ণ প্রত্যহ ২-৩ বার ঠাণ্ডা পানিসহ সেবন করে গেলে বিশেষ ফলপ্রদ হয়। সাদা বা রক্ত যে কোনও আমাশয়ে প্রতিদিন সকালে জলের সাথে বহেড়া চূর্ণ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
➢ কাসি হচ্ছে অথচ বুকে সর্দি নেই এবং কিছু বেরোয় না; চলতি কথায় যাকে পেট গরমের কাসি বলে। এক্ষেত্রে ঘি এ ভেজে নেওয়া বহেড়া চূর্ণ ও মুথোর চূর্ণসম পরিমাণে নিয়ে ৪ গুণ চিনির গাঢ় রসের সঙ্গে পাক করে নামিয়ে পরে যেভাবে মুড়কি পাক করে সেইভাবে পাক করতে হয়। ছোট ছোট গুলি অথবা লজেন্সের মতো কেক করে রাখতে হয়, এগুলির ওজন আন্দাজ ২ গ্রাম করে হবে। এই কেক বা গুলি সকালে ও বিকালে একটি করে চুষে খেতে হবে। এটাতে ঐ বায়ুজনিত কাসি সেরে যাবে।
➢ বহেড়া বীজের শাঁস ২ ঘণ্টা অন্তর চিবিয়ে খেলে হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ পদ্ধতি মেনে চলুন।
➢ অনেকেই আছে যাদের অকালে চুল পেকে যায়। বহেড়া ফলের বিচি বাদ দিয়ে শুধু খোসা নিয়ে পানি দিয়ে ভালো ভাবে মসৃণ করে বাটুন ,এবার বাটা মিশ্রণটি এক কাপ পানিতে গুলে সেই পানি ছেঁকে নিন।এবার সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
➢ বীজ বাদ বহেড়ার শাঁস (উপরের অংশ) আন্দাজ ৫ গ্রাম জল দিয়ে বেটে, ঘন করে জলে গুলে দিনে ২ থেকে ৩ বার হলে ভাল হয় এবং মুখে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বসে থাকতে হবে তাহলে দাঁতের মাড়ির ক্ষত ভালো হয়ে যাবে।
➢ যে চোখ ওঠায় চোখ করকর করছে, জল ঝরছে, সেক্ষেত্রে বহেড়া ঘষে চোখে কাজলের মতো লাগিয়ে দিলে চোখ ওঠা ও চোখের জলপড়া বন্ধ হয়।
➢ বহেড়া ভেজানো জল খেলে পেটে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
➢ কথিত আছে, প্রতিদিন বহেড়া ফল ভিজানো এক কাপ পানি খেলে দীর্ঘজীবী হওয়া যায়। বহেড়া বিশেষভাবে পরিশোধিত হয়ে এর ফল, বীজ ও বাকল মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।