পরিচিতিঃ পুষ্টি গুণে ভরপুর একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ ধনে পাতা। খাবারে স্বাদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধনেপাতার রয়েছে একগুচ্ছ ঔষধি গুণ। প্রায় সর্বত্র ধনের বীজ খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত সুস্বাদু ধনের পাতা এশীয় চাটনি ও মেক্সিকান সালাদে ব্যবহার করা হয়। খাদ্যাভ্যাসের দরুণ আমাদের শরীরে রোজ তিলে তিলে জমা হতে থাকে বেশ কিছু ভারী ধাতু এবং বিষাক্ত দূষণকারী পদার্থ। ধনেপাতার মধ্যে রয়েছে নানা ঔষধি উপাদান যা আমাদের শরীরে বেশ কিছু ভারী ধাতু রক্তপ্রবাহ থেকে এই সমস্ত ক্ষতিকর উপাদান দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এবং বিষাক্ত দূষণকারী পদার্থ, দূরারোগ্য অসুখ যেমন ক্যান্সার, হৃদরোগ, মস্তিষ্কের বিভ্রাট, মানসিক রোগ, কিডনি ও ফুসফুসের অসুখ এবং হাড়ের দুর্বলতা এই সমস্ত দূরারোগ্য দূর করে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ক্যালশিয়াম অ্যান্টাগনিস্টস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ধনেপাতায় থাকে পট্যাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ। এছাড়া ভিটামিন এ , সি ও কে-র জোগান দেয় এই পাতা। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ধনে পাতার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলি হলোঃ
➢ ধনে পাতাকে আমরা সালাদ এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শুধু স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই এর গুণাগুণ শেষ হয়ে যায় না। এই পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি তৃণ জাতীয় খাবার।
➢ অধিকাংশ মানুষ ধনে পাতার উপকারিতা না জেনেই নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করে আসছে। এতে রয়েছে ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল, ৬ ধরণের অ্যাসিড (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড যা ভিটামিন সি নামেই বেশি পরিচিত), ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য উপকারী পদার্থ।
➢ ধনে পাতাতে রয়েছে আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন এ, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি,ফসফরাস, ভিটামিন কে, ক্লোরিন এবং প্রোটিন। তাই এ পাতাকে সাধারণ কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই।
➢ ধনে পাতা রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি রূপচর্চায়ও দারুন কাজ দেয়। প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে ধনে পাতা দারুন কার্যকর। যাদের ঠোঁটে কালো দাগ আছে তারা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধনে পাতার রসের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। এভাবে এক মাস লাগালে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে আর ঠোঁট কোমলও হবে।
➢ ধনে পাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়, ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
➢ হজমে উপকারী, যকৃতকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, পেট পরিষ্কার হয়ে যায় ধনে পাতা খেলে।
➢ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্যে ধনে পাতা বিশেষ উপকারী। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়।
➢ ধনে পাতায় থাকা অ্যান্টি-সেপটিক মুখে আলসার নিরাময়েও উপকারী, চোখের জন্যেও ভাল।
➢ ঋতুস্রাবের সময় রক্তসঞ্চানল ভাল হওয়ার জন্যে ধনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ উপকারী।
➢ ধনে পাতার ফ্যাট স্যলুবল ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
➢ এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথা হাড়সহ এবং জয়েন্টের ব্যথা ও যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
➢ স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিস্কের নার্ভ সচল রাখতে সাহায্য করে ধনে পাতা ৷
➢ ধনে পাতার ভিটামিন কে অ্যালঝেইমার রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
➢ ধনে পাতায় উপস্থিত সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধ্যে অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
➢ ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার বা ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে। তাই ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
➢ ক্যালসিয়াম আয়ন এবং কলিনার্জিক বা অ্যাসেটিকোলিন উপাদান মিলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
➢ অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
➢ খাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ সালমোনেলা টাই ফি প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে অ্যান্টিবায়টিকের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর।
➢ এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং আয়রন গুটিবসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।
➢ কারও মুখে যদি দুর্গন্ধ হয় ও অরুচি লাগে তাহলে ধনে ভাজা করে বোতলে ভরে রাখুন। মাঝে মাঝে চিবিয়ে খান মুখে দুর্গন্ধ থাকবে না।
➢ কারও মাথাব্যথা হলে ধনে পাতা ও গাছের রস কপালে লাগান। মাথাব্যথা কমে যাবে।
➢ ধনে পাতা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি মজবুত হয় এবং দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
➢ সতর্কতাঃ
➢ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ধনে পাতা বেশি খেলে বীর্য সৃষ্টি ও কামউদ্দপিনা কমে যায়। চোখের দৃষ্টি ক্ষতি হতে পারে। শ্বাস রোগের ক্ষতি করে।
➢ অবশ্য আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধনে পাতা সেবন করি তা স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করে না। অতিমাত্রায় রস সেবন করলেই ক্ষতিকর হয়।
➢ রোগের জীবাণু ধ্বংস করে - ধনেপাতাকে ‘রাঁধুনি পাতা’ হিসেবে ধরা হয়৷ এই পাতা হাজারো বছর ধরে ভেষজ উদ্ভিদ বা ওষুধ হিসেবেও কাজে লাগানো হচ্ছে ৷ ধনেপাতা খাবারের বিভিন্ন জীবাণুকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ধনেপাতার তেল পেটে বায়ু হওয়া থেকে রক্ষা করে ৷