পরিচিতি: ঔষধি গাছ নিশিন্দা এক প্রকার ছোট পর্নমোচী (প্রতি বছর পাতা ঝরে যায়) উদ্ভিদ। যার শাখার ডগায় এক গোছা খুব ছোট আকারের ফুল। মূলত এটি ছোট আকারের বৃক্ষ অথবা একটি বড় ধরনের গুল্ম। ৫ - ৭ মিটার লম্বা। গাছটির পাতা উজ্জ্বল সবুজ, অগ্রভাগ সুচালু। বর্শাফলাকৃতি, আর এই পাতায় রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। নিশিন্দা তিন থেকে পাঁচ ফলক বিশিষ্ট হয়ে থাকে। একেকটি পাতা দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। ফুল হয় নীলচে বেগুনী। সারা দেশেই জন্মায়। এই গাছের পাতা, শিকড়, ফুল এবং ফল সব কিছু কাজে লাগে। গরম পানিতে পাতার নির্যাস ক্রনিক ব্যথা, বাত, মাথাব্যাথার উপশম হয়। এটা হাপানি , ঠান্ডা জনিত রোগেও বিশেষ কার্যকরী। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই নিশিন্দা চোখে পড়ে। গাছ খুবই কষ্টসহিষ্ণু এবং প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে থাকতে পারে। রাস্তার ধার, জমির লাইন, বাঁধের ধার, পতিত জমি, বন-জঙ্গল ও পাহাড়ের ঢালে নিশিন্দা গাছ জন্মাতে দেখা যায়।
নিশিন্দার গুণাগুণ
➢ নিশিন্দা গাছের পাতা, ফুল, বীজ ও মূল ভেষজ ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। সব ধরনের চর্মরোগ, সর্দি, হাঁপানিসহ গলগণ্ড রোগে নিশিন্দা ব্যবহারে রোগ উপশম হতে দেখা যায়। তাছাড়া জ্বর, বাতজ্বর, মাথায় টাকপড়া, আমাশয়, শরীরের মেদ, ঋতুস্রাব, মুখের ঘা, যকৃৎ এবং প্লীহার বৃদ্ধিতে নিশিন্দার ফুল, বীজ ও শিকড়ের বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুর কান্না থামানোর জন্য নিশিন্দার পাতা বেঁটে শরীর মালিশ করা হয়, কোথাও কোথাও পাতা সেদ্ধ করে সে পাতার পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করানো হয়
➢ নিশিন্দা হাঁপানি ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে বিশেষ কার্যকরী।
➢ দেহের যে কোনো স্থানের টিউমার হলে, নিশিন্দা পাতা বেটে গরম করে প্রতিদিন লাগালে কয়েকদিনের মধ্যে টিউমার অদৃশ্য হয়ে যাবে।
➢ নিশিন্দা গেঁটে বাত সারায় , গেঁটে বাত (Gout) রোগে নিশিনাদার পাঁচন মোক্ষম ঔষুধ। সঙ্গে যদি জ্বর থাকে, তবুও এতে সুফল পাওয়া যায়। ৫ গ্রাম পরিমাণ পাতা সিদ্ধ করে ছেঁকে সে পানি খেতে হয়। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে খাওয়া ঠিক নয়।
➢ নিশিন্দার পাতা পরজীবী নাশক এবং এটা যক্ষা ও ক্যান্সার প্রতিরোধক।
➢ পা মচকে গেলে বা ফুলে গেলে নিশিন্দার পাতা গরম করে আক্রান্ত স্থানে রেখে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিন। দেড়/দুই ঘণ্টা পর পর নতুন করে লাগান। দুএকদিনের মধ্যে আরাম পাবেন।
➢ বাতের ব্যথায় নিশিন্দা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
➢ কানের যেকোনো ধরনের ব্যথায় নিশিন্দা মহৌষধ হিসিবে কাজ করে। পাতার রস বা পাতা বেটে সরিষার তেলে পাক করে সে তেল ২/১ ফোঁটা কানে দিলে কানের রোগ আরোগ্য হয়। কানের সব ধরনের ব্যথার ক্ষতেও এটি ব্যবহার করা যায়।
➢ নিশিন্দা পাতা গুঁড়া সিকি গ্রাম পরিমাণ খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যায়। তবে শিশুদের খাওয়াবেন না। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে।
➢ নিশিন্দার মূল মায়েদের বুকের দুধ বাড়াতে হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়।
➢ বৃদ্ধ বয়সে রাতে প্রস্রাবের পরিমাণ বেশি হয়। অনেকের ২/৩ বার প্রস্রাব করতে হয় তখন নিশিন্দার পাতা চুর্ণ পানিসহ বিকালের দিকে একবার খেলে কয়েকদিনেই উপকার পাবেন।
➢ হঠাৎ কোনো কারণে মস্তিস্কের স্মৃতিকেন্দ্রটির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে বা স্মৃতিভ্রম হলে রোজ ২টি নিশিন্দা পাতা ঘিয়ে ভেজে খেলে স্মৃতিশক্তি ফিরে আসবে।
➢ অনিয়মিত ও স্বল্প ঋতুস্রাবে ফলের নির্যাস ব্যবহার করা হয়।