কালমেঘ গাছের ঔষধি গুন



পরিচিতি:   কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর ঔষধি গুনের জন্য সংস্কৃতে একে ‘সর্ব রোগ নিবারণী ‘ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এটি একটি বর্ষজীবি উদ্ভিদ। গড় উচ্চতা ১ মিটার। এর শাখা চতুষ্কোণ এবং পাতা বল্লমাকৃতির হয়ে থাকে। এটি একটি বীরুৎ-জাতীয় উদ্ভিদ। ফুল ক্ষুদ্রাকার। অল্প পরিমাণে বিক্ষিপ্ত গুচ্ছে ফুল ফোটে। কালমেঘ বাংলাদেশ, ভারতের আসাম ও হিমাচল প্রদেশ জন্মে থাকে। ১ সে.মি. লম্বা ফুলের রং গোলাপী। দেড় থেকে দু সে.মি. লম্বা ফল অনেকটা চিলগোজার মতন দেখতে। শিকড় ব্যতীত কালমেঘ গাছটির সব অংশই ঔষুধের কাজে লাগে। কালমেঘ অত্যন্ত তেতো এবং পুষ্টিকর। মানব দেহের রোগপ্রতিরোধী শক্তি বৃদ্ধি করে। কালমেঘের পাতা রক্তকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। জ্বর, কৃমি, আমাশয়, সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা এবং বায়ু আধিক্যে কালমেঘ অত্যন্ত উপকারী। 


যেকোনো রকম জ্বর বা ক্রনিক ফিভার বা ভাইরাল ফিভার আমাদের শরীরকে খুব দুর্বল করে দেয়, এছাড়া এই সমস্ত রকম জ্বর আমাদের লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কালমেঘ পাতার রস আমাদের এইসব রকম জ্বর এর ফলে হওয়া শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া জ্বর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকেও ঠিক করতে সাহায্য করে। এছাড়া এই পাতা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।

 কালমেঘের উপকারিতা গুলি হলোঃ

 ➢ ডায়াবেটিস: কালমেঘ পাতা ডায়াবেটিস এর মহাঔষধ। এটি আমাদের শরীরে ব্লাড সুগার এর পরিমানকে কম রাখতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মতোই এক্ষত্রে এর সেবন করা উচিত। 

 ➢ শিশুদের যকৃৎ রোগে এবং হজমের সমস্যায় কালমেঘ খুব উপকারী। কালমেঘের পাতা থেকে তৈরী আলুই পশ্চিম বাংলার ঘরোয়া ঔষুধ যা পেটের অসুখে শিশুদের দেওয়া হয়। টাইফয়েড রোগে এবং জীবানুরোধে কালমেঘ কার্য্করী। সাধারণ একটা বিশ্বাস ছিল যে সাপের কামড়ে কালমেঘ খুব উপকারী। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে কথাটা ভুল। কোথাও কোথাও কালমেঘ গাছ বেটে সরষের তেলে চুবিয়ে নিয়ে চুলকানিতে লাগানো হয়। গাছের পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও লিভার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। 

 ➢ ছোটদের পেট কামড়ানিতে দারুচিনি, বড় এলাচি, লবঙ্গ এবং গোলমরিচ প্রতিটি সমপরিমান নিয়ে তাতে প্রয়োজন মত কালমেঘ পাতার রস মিশিয়ে এক গ্রাম ওজনের বড়ি তৈরি করে রোদে ভালো ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে । এই বড়ি একটি করে খাওয়ালে কেবল পেট কামড়ানি নয়, অগ্নিমান্দ্য পর্যন্ত ভালো হয়ে যায়। 

 ➢ জ্বর, সর্দি, কাশি: এই পাতার রস জ্বর, কৃমি, অজীর্ণ, লিভার প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা শিশুদের বদহজম ও লিভারের সমস্যায় প্রাচীনকাল থেকে এটি ব্যবহার করছে। এ গাছের রস রক্ত পরিষ্কারক, পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তিবর্ধক ও রেচক হিসেবেও কাজ করে। আবার এ গাছের পাতা সিদ্ধ করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলে ঘা-পাঁচড়া জাতীয় রোগ দূর হয় 

 ➢ ক্যান্সার: কালমেঘ ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত্য উপকারী। এর ঔষধি গুন আমাদের শরীরে ক্যান্সার এর কোষগুলিকে সক্রিয় হতে দেয় না বা ক্যান্সারের কোষগুলিকে বাড়তে দেয় না। 

 ➢ লিভার: এটি লিভার টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত মদ্য পান, বা অতিরিক্ত কড়া ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কালোমেঘ পাতা এর নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আজকাল আমাদের খাদ্যাভাস বা ফল ও সবজিতে ব্যবহৃত পেস্টিসাইড আমাদের লিভারকে খারাপ করে দেয়। কালোমেঘের নিয়মিত সেবন এই সমস্যার সবথেকে ভালো সমাধান। শিশুদের লিভার বড় হলে শিশুদের ক্ষেত্রে আধ চামচ কালমেঘ পাতার রস করে খাওয়ালে লিভার আগের অবস্থাতেই ফিরে আসে। 

 ➢ সর্প দংশন বা বিছে বা এই ধরনের বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ের উপশম হিসেবে কালমেঘ পাতার সাথে পুরো গাছ টিকেই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কুষ্ঠ রোগ এবং কলেরার চিকিৎসা করতে কালমেঘপাতা ব্যবহৃত হয়। 

 ➢ কুষ্ঠরোগে কাল মেঘের পাতা বেটে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত জায়গায় প্রলেপ দিলে যথেষ্ট উপকার হয় । 

 ➢ কালমেঘ পাতা রক্তকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফলত আমাদের ত্বকের নানারকম সমস্যার ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতা অত্যন্ত্য কার্যকরী। এছাড়া কালমেঘ পাতা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। 

 ➢ ছোট বাচ্ছাদের ডায়রিয়া, বা গ্যাস, খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা রকম রোগের ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া কৃমি হলেও শিশুদের কালমেঘ পাতার রস খাওয়ানো হয়। এর তিৎকুটে স্বাদ কৃমিগুলিকে মেরে ফেলে পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। 

 ➢ বায়ু, পিত্ত ও কফ বৃদ্ধি হলে কালমেঘ গাছের কচি পাতা ১০ টি এবং শিকড় ৫ গ্রাম এক সাথে বেটে তার রস টা খেলে এ তিন টি দোষ নষ্ট হয়। বয়স্কদের চেয়ে শিশুদের কালমেঘ বিভিন্ন রোগে ভালো কাজ করে । 

 ➢ টাইফয়েডের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জ্বালাভাব দূর করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম