পরিচিতিঃ আকন্দ এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছটির বিষাক্ত অংশ হলো পাতা ও গাছের কষ। ডালপালা সহ ১ থেকে ২ মি. পর্যন্ত উঁচু হয়। গাছের ছাল ধুসর বর্ণের এবং কান্ড শক্ত ও কচি ডাল লোমযুক্ত। পাতা ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা উপরিভাগ মসৃণ এবং নীচের দিক তুলোর ন্যায়। ক্ষুদ্র বৃন্ত এবং বৃন্তদেশ হৃদপিন্ডাকৃত। গাছের পাতা বা শাখা ভাঙলে দুধের মত সাদা আঠা বের হয়। সাদা বা বেগুনি বর্ণের ফুল হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকন্দ জম্নে। ৩ থেকে ৪ ফুট দুরুত্বে আগন্দ গাছ লাগাতে হয়। তবে মে- জুন মাসে ফল পাকলে ফেটে বীজ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এ সময় এটি চাষ করা ভালো। এছাড়াও কাটিং পদ্ধতিতেও এটি চাষ করা যায়। প্রতি কেজিতে বীজের পরিমাণ: ১লক্ষ ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজারটি। বীজ থেকে বংশ বিস্তর সম্ভব হলেও সাধারণ এর মোথা ও সাকার অংশ থেকে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। আকন্দ ব্যবহার্য হলো ফুল, পাতা, শিকড় ও আঠা। আয়ুর্বেদার্য শিবকালি ভট্ট্রাচার্যের মতে, ১৪টি আকন্দ ফুলের মাঝখানে চৌকো অংশটি নিতে হবে। তারসঙ্গে ২১টি গুল মরিচ দিয়ে একসঙ্গে বেটে ২১টি বড়ি বানাতে হবে। প্রতিদিন সকালে পানি দিয়ে ১টি বড়ি খেলে হাঁপানি রোগের উপশম হয়।
আকন্দের উপকারিতা গুলি হলো :
➢ আকন্দ চুলের রোগ, ব্যাথা এবং বিষনাশে বিশেষ কার্যকরী। দাদ ও টাকপড়া নিবারক। আকন্দের কষ তুলায় ভিজিয়ে লাগালে দাত ব্যথা দুর হয় এবং যোনিতে ধারণ করলে গর্ভপাত ঘটায়। আকন্দ বাদ বেদনা নিবারক ও ফোলা অপসারক। আকন্দ পাতা ও হলুদের তৈরি বড়ি শোথ/ ফোলা/পান্ডু রোগ নাশখ এবং রস কৃমি নাশক।
➢ ক্ষত স্থানে: শরীরের কোনো স্থানে ক্ষত হলে সেই দুষিত স্থানটিতে আকন্দ পাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হয়। এতে পুঁজ হয় না।
➢ বিছে কামড়ালে জ্বালা-পোড়া কমাতে আকন্দ পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
➢ অম্বল-এসিডিটি দেখা দিলে - ৫0 গ্রাম পরিমাণ আকন্দ পোড়া ছাই পানিসহ পান করলে সঙ্গে সঙ্গে উপকার পাওয়া যায়।
➢ পেট ব্যাথায়: আকন্দ পাতার সোজা দিকে সরিষার তেল মাখিয়ে অল্প গরম করে পেটের উপর রাখলে বা সেঁক দিলে পেট জ্বালা বন্ধ হয়।
➢ শোথ/ফোলা রোগে: আকন্দ বিশেষ উপকারী। ফোলাজনিত কারনে কোন স্থান ফুলে উঠলে আকনদ পাতা বেঁধে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
➢ পা মোচকে গেলে প্রচণ্ড ব্যথায় এই আকন্দ পাতা দিয়ে গরম সেঁক দিলে ব্যথা উপশম হয়।আকন্দ ফোলা রোগে বিশেষ উপকারী।
➢ শ্বাস কষ্টে: আকন্দের শিকড়ের ছাল প্রথমে গুড়া করে তারপর আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে রেখে পরে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর তা চুরুট বানিয়ে ধুমপান করলে শ্বাস কষ্ট ভাল হয়।
➢ নিউমোনিয়ায়: আকন্দ পাতার সোজা দিক ঘি মেখে ব্যথার জায়গায় বসিয়ে লবনের পুটলি দিয়ে সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায় , বুকে সর্দি বসে গেলে ভালো করে পুরনো ঘি বুকে লাগাতে হয়। ঘি মাখানো বুকে আকন্দের পাতা গরম করে সেঁক দিলে সর্দি ভালো হয়।
➢ দাঁতের ব্যথা: আকন্দের কষ তুলায় ভিজিয়ে লাগালে দাঁত ব্যথা দুর করে ।
➢ খোস-পাচড়া বা একজিমার ক্ষেত্রে আকন্দের আঠার সঙ্গে চার গুণ সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করতে হয়।
➢ হজম শক্তি কমে গেলে: ২ গ্রাম পরিমাণ শুকনো আকন্দ মুল গুড়া করে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
➢ ব্রন ফাটাতে: আকন্দ পাতা ওষুধ হিসেবে ব্রণ ফাটাতে সাহায্য করে। আকন্দ পাতা দিয়ে ব্রণ চেপে বেঁধে রাখলে ব্রণ ফেটে যায়।