"স্ট্রোক থামিয়ে দিতে পারে আপনার জীবন। কিন্তু আপনি থামাতে পারেন স্ট্রোক !"
🧠 ভাবুন…
❝ আপনি হয়তো ভাবছেন, "স্ট্রোক হলে কিছু করার নেই।"
কিন্তু সত্যি হলো—স্ট্রোক হওয়ার আগেই কিছু করলেই, হতে দেওয়া যাবে না। আর যদি হয়ে যায়—তাহলে চিকিৎসা ও থেরাপি দিয়েই ফিরিয়ে আনা যায় সেই জীবনটাকে। ❞
তানভীরের বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। দিনের বেশিরভাগ সময় বইপত্র পড়তেন, নাতি-নাতনির সাথে খেলতেন।বয়স ৬২ হলেও খুব সচল ও সজীব মানুষ ছিলেন। একদিন সকালে চা খেতে খেতে হঠাৎ তার মুখের এক পাশে কেমন যেন বেঁকে গেল, তিনি ঠিক করে কথাও বলতে পারলেন না, হাতে চায়ের কাপ পড়ে গেল মেঝেতে। তানভীর তখন বাসায় ছিল না, ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যায়। হাসপাতাল নেওয়ার সময় ৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে।
ডাক্তার বললেন, “স্ট্রোক হয়েছে, বাম পাশে মস্তিষ্কে ব্লক, ডান পাশ পুরো প্যারালাইজড। ৩ ঘণ্টার মধ্যে আসলে আমরা হয়তো তাকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারতাম।”
আজ তিন বছর, বাবা এখনো হুইলচেয়ারে বসে থাকেন, হাসতে পারেন, কিন্তু সেই আগের মতো লিখতে পারেন না, হাঁটতে পারেন না। তানভীরের কষ্ট—“আমি যদি স্ট্রোক সম্পর্কে আগে জানতাম, তাহলে হয়তো আমার বাবা এখনো হাঁটতে পারতেন…”
❓ স্ট্রোক (CVA) কী?
স্ট্রোক (Cerebrovascular Accident) হলো এমন একটি হঠাৎ ও প্রাণঘাতী অবস্থা, যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় (থেকে যায় বা ফেটে যায়)। এর ফলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ অক্সিজেনের অভাবে কাজ বন্ধ করে দেয় এবং শরীরের একাংশ অচল বা দুর্বল হয়ে পড়ে।
⏭️স্ট্রোকের প্রধান প্রকারভেদ:
>> ইস্কেমিক স্ট্রোক রক্তনালীর ব্লকে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় (প্রায় ৮৫% স্ট্রোক)
>> হেমোরেজিক স্ট্রোক মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে যায় এবং রক্তপাত হয়।
>> TIA (Transient Ischemic Attack) “মিনি স্ট্রোক” - সাময়িক কিন্তু ভবিষ্যতের বড় স্ট্রোকের পূর্বাভাস।
⚠️ স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ (F.A.S.T মডেল):
> F- Face Drooping মুখের এক পাশ ঝুলে পড়ে।
> A- Arm Weakness এক হাত দুর্বল বা নাড়াতে না পারা।
> S- Speech Difficulty কথা জড়িয়ে যাওয়া।
> T- Time to call দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে।
>>>>>>> মনে রাখুন – যত দ্রুত চিকিৎসা, তত বেশি জীবন বাঁচানো সম্ভব<<<<<<
🎯 স্ট্রোক হওয়ার কারণসমূহ:
>> অভ্যন্তরীণ কারণ বাহ্যিক/পরিবেশগত কারণ
>> উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
>> ধূমপান
>> ডায়াবেটিস
>> অ্যালকোহল
>> কোলেস্টেরল
>> শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
>> স্থূলতা
>> অতিরিক্ত মানসিক চাপ
>> হার্ট ডিজিজ
>> অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
>> বংশগত ঝুঁকি
>> অতিরিক্ত লবণ বা ফাস্টফুড
🛡️ স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় সমুহ-
১. জীবনধারায় পরিবর্তন-
> প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা
> পরিমিত লবণ, চর্বি ও চিনি খাওয়া
> ফলমূল, শাকসবজি বেশি খাওয়া
> ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
> পর্যাপ্ত ঘুম
> ওজন নিয়ন্ত্রণ
🩺 নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা-
>> রক্তচাপ, সুগার ও কোলেস্টেরল চেক করুন।
>> ECG ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করান।
>> বংশগত ঝুঁকি থাকলে আরো সতর্ক থাকুন।
🧯 স্ট্রোক হলে কী করবেন (Emergency Response)-
>>> লক্ষণ দেখলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতাল নিন
>>> CT/MRI করিয়ে স্ট্রোকের ধরন নির্ধারণ করুন
>>> ৩–৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে ইস্কেমিক স্ট্রোকে TPA ইনজেকশন দিলে ব্লক খুলে যেতে পারে।
>>> হেমোরেজিক স্ট্রোকে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
♿ স্ট্রোকের পরে জীবন—পুনর্বাসন ও রিহ্যাবিলিটেশন-
১. ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy):
>> পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গের পুনরুদ্ধার
>> Muscle Re-education
>> Walking aid (Walker, Stick) ব্যবহার
>> Passive ও Active Movement Exercises
২. স্পিচ থেরাপি (Speech Therapy)-
>> কথা জড়ানো, কথা না বলতে পারা, গিলে খাওয়ার সমস্যা
৩. অকুপেশনাল থেরাপি (OT):
>> দৈনন্দিন কাজ পুনরায় শেখা (খাওয়া, পরা, বসা, দাঁড়ানো)
৪. Counseling ও পরিবারিক সাপোর্ট:
>> হতাশা দূর করতে পরিবার ও চিকিৎসকের সহযোগিতা
>> ধৈর্য ও উৎসাহ রোগীর মনোবল ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
📌 সংক্ষেপে করণীয়:
✅ FAST লক্ষণ চিনুন সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা নিন।
✅ TPA ইনজেকশন ৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে দিলে উপকার।
✅ লাইফস্টাইল পরিবর্তন সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।
✅ রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি নতুন করে হাঁটা ও কাজ শেখানো
পরিবার পাশে থাকুন মানসিক সাপোর্ট অপরিহার্য।
👣 জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই সচেতনতা গড়ে তুলুন।
আজই রক্তচাপ মাপুন, ব্যায়াম শুরু করুন, ধূমপান ছাড়ুন।
আপনি ঠিক থাকলে—আপনার পরিবারও নিরাপদ থাকে।
>>>> স্ট্রোকের পর অনেকেই ভেঙে পড়েন। কিন্তু পুনর্বাসন শুরু করলেই উন্নতি শুরু হয়। আমি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে স্ট্রোক-পরবর্তী থেরাপি, ব্যায়াম, এবং মেন্টাল সাপোর্টে সাহায্য করতে পারি। চাইলে আমি ব্যক্তিগত থেরাপি গাইডলাইন ও মুভমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে দিতেও প্রস্তুত। আসুন, একসাথে ফিরিয়ে আনি জীবনের হারানো ছন্দ <<<<
মো: মাসুম পারভেজ
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
বি.পি.টি.