ইংরেজি শিখতে হলে বুঝে পড়ার চিন্তা বাদ দিন

 


(মর্টিমার অ্যাডলার আর চার্লস ভন ডরেনের বিখ্যাত বই How to Read a Book বইয়ের এক অংশের ভাবানুবাদ। অনুবাদের পর আমার নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা আর মন্তব্য আছে)

ইংরেজি শিখতে হলে একটু কঠিন ম্যাগাজিন-বইপত্র পড়ার অভ্যেস করতে হবে, এরকম কথা বড় ভাইয়াদের কাছ থেকে গ্যাঁদাকাল থেকে শুনে এসেছি। এজন্য আইএল্টস-টোফেল-জিয়ারির আগে দিয়ে অনেকে নিউ ইয়র্ক টাইমস বা ইকোনমিস্টের প্রবন্ধগুলো নিয়ে নাড়াচাড়ার চেষ্টা করেন।

সমস্যা হল, অনেক ক্ষেত্রে আগের অভ্যেস না থাকলে এসব লেখায় দাঁতই ফোটানো যায় না। ভালমত বুঝে পড়তে গেলে কঠিন ইংরেজির কাছে রীতিমত নাকাল হতে হয় - প্রত্যেক প্যারায় চৌদ্দবার করে ডিকশনারি দেখতে হয়। এভাবে কিছুদিন ধুঁকে ধুঁকে কষ্টের পর অবশেষে আমরা "ধ্যাত্তেরি" বলে বাদ দেই। এটা শুধু এ ধরণের ম্যাগাজিনের জন্য না, দেশী বা ভারতীয় লেখকদের কিছু বই বাদ দিয়ে যেকোন নতুন ভাষার ম্যাটেরিয়ালের জন্যই প্রযোজ্য।

এখানে একটা সমস্যা আছে বটে, কিন্তু সেই সমস্যাটা আসলে আপনি যেখানে ভাবছেন সেখানে নয়। ইকোনমিস্ট বা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম পড়তে গিয়ে আপনি ভুল করেননি। ভুলটা করেছেন পুরো লেখাটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে।

যেকোন কঠিন লেখা পড়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম আছে। সেটা হল - প্রথমবার কঠিন কিছু পড়ার সময় থামবেন না। পড়তে থাকবেন। সেরকম কিছু না বুঝলেও। লেখার পেছনের অর্থ নিয়ে গভীর চিন্তা করা বা ডিকশনারি দেখার সময় এখন নয়। এখন আপনার কাজ একধার থেকে পুরো জিনিসটা কোনমতে পড়ে ফেলা।

এর ফলে আপনার অভিজ্ঞতাটা কীরকম হবে বলি। একবার শুরু করলে দেখবেন, লেখার কিছু অংশ পাওয়া যাচ্ছে মোটামুটি বোধগম্য। অনুচ্ছেদের সবক'টা বাক্য হয়ত বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু মোটামুটি পয়েন্টটা ধরে ফেলা যাচ্ছে। কিন্তু তারপর আবার কিছু জায়গা পাবেন একেবারেই দুর্বোধ্য। এগুলো অত চিন্তাভাবনা না করে যদি স্রেফ টান দিয়ে পড়ে যান, তারপর আবার কিছুদূর পর মরুভূমির মধ্যে ছায়ার মত একটা বোধগম্য অংশ পাবেন। এই করে করে পুরো লেখাটাকে একটান দিয়ে শেষ করে ফেলুন। মাঝখানে এটাসেটা বুঝতে না পারলে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেবেন না। একবার যদি ঐ কঠিন অংশগুলোর ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন, চৌদ্দবার ডিকশনারি দেখা আর বারবার পড়ে বোঝার ধান্ধা করেন, তার মানে সে দফায় আপনি হেরে গেলেন।

তাহলে লেখার কঠিন অংশগুলো কি আদৌ বোঝার চেষ্টা করব না? অবশ্যই করব, কিন্তু সেটা প্রথম পড়ায় নয়। প্রথম পড়ায় আপনার কর্তব্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টান দেওয়া। এসময় কঠিন জিনিস বোঝার চেষ্টা করলে অত লাভ হবে না। একবার পুরো লেখাটা শেষ করে মূল পয়েন্টটা যদি ধরে ফেলতে পারেন, তারপর দেখবেন দ্বিতীয়বার পড়তে গিয়ে কঠিন জায়গাগুলোও খানিকটা যেন বোঝা যাচ্ছে। আর যদি বোঝা নাও যায়, তারপরেও লেখাটার কিছু অংশ যে বুঝেছেন - ওটুকুই আপনার লাভ। একটা লেখা পড়তে গিয়ে হাল ছেড়ে দেওয়ার চেয়ে আংশিক বুঝতে পারা তাও অনেক ভাল।

আসলে ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবসময় শেখানো হয় কঠিন, দুর্বোধ্য জিনিসের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে। এজন্যই আমাদের একটা টেন্ডেন্সি হল কথায় কথায় ডিকশনারি আর বিশ্বকোষের দিকে দৌড় দেওয়া। এই জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এরকম দৌড়োদৌড়ি-চিন্তাভাবনার একটা সময় আছে। সময়ের আগে করে ফেললে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।

স্কুলে সহপাঠ হিসেবে আমরা বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কিছু উপন্যাস পড়েছি, কিন্তু পড়ে আসলে লাভের মধ্যে লাভ অতটা হয়নি। কারণ এই উপন্যাসগুলো যেভাবে পড়তে হয়, সেভাবে আমাদেরকে পড়ানো হয়নি। প্রত্যেক পৃষ্ঠায় আমাদের পড়া থামিয়ে ফেলতে হয়েছে, সেখানকার কঠিন শব্দ-অর্থ-ভাব নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে হয়েছে, এভাবে মুড়ির টিন বাসের মত ধুঁকে ধুঁকে পুরো জিনিসটা কোনমতে শেষ হয়েছে। এই করতে গিয়ে আমরা উপন্যাসের শেষে এসে শুরুর কথা ভুলে গেছি। আজ পর্যন্ত জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাসের বেশ কিছু ছোটখাট ডিটেইল, চরিত্রের পরিচয় আমার মনে আছে, কিন্তু মূল কাহিনীটা সেরকম মনে নেই। এর জায়গায় যদি প্রথম দফায় এক্সারসাইজ হিসেবে আমাদের পুরো উপন্যাসটা টান দিয়ে পড়ে ফেলানো হত, তাহলে উপন্যাসের মজাটা তো পেতামই, আবার দ্বিতীয় ধাক্কায় ভেতরের কঠিন জিনিসগুলো আমরা আরেকটু ভালমত বুঝতে পারতাম।

সাধারণ্যের জন্য লেখা যেকোন বই বা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ফলানোর চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বিখ্যাত নামীদামী কোন বই নিন - সেটা হতে পারে জ্যারেড ডায়মন্ডের গান্স, জার্মস অ্যাণ্ড স্টিল (নতুন) অথবা অ্যান্ড্রু ল্যাং-এর দ্যা মেকিং অফ রিলিজিওন (পুরোনো) - তারপর গোড়া থেকে পড়ার চেষ্টা করে দেখুন। যদি এই পণ করেন যে প্রত্যেক পাতায় কী বলা আছে সম্পূর্ণ না বুঝে পরের পাতায় যাবেন না, তাহলে প্রথমত সেরকম আগাতে তো পারবেনই না, যেটুকু আগাবেন ওর মধ্যেও ছোট ছোট জটিল ব্যাপারেই আটকে থাকবেন। অন্যদিকে লেখক যে একটা বড় পরিধির জিনিস আপনাকে বোঝাতে চাইছেন সেটাই ফস করে মিস হয়ে যাবে। একেই ইংরেজিতে বলে গাছ দেখতে গিয়ে জঙ্গলটা না দেখা।

==========

ব্যক্তিগত মন্তব্য

==========

আজ থেকে আট-ন'বছর আগে আমি একটা বই পড়া শুরু করেছিলাম, দার্শনিক এবং গণিতবিদ অ্যালেক্সান্ডার প্রুসের বই প্রিন্সিপল অফ সাফিশিয়েন্ট রিজন। বইটার বিষয় হল অধিবিদ্যা আর মোডাল লজিক। এটা ছিল এই বিষয়ে আমার পড়া দ্বিতীয় বই, এবং আজ পর্যন্ত এরকম জটিল বই আমি অত পড়েছি বলে মনে হয় না। এমনকি বইটা যে শুধু ইংরেজিতেই লেখা ছিল তাই নয়, মাঝখানে সিম্বলিক লজিক এবং সেট থিওরির নোটেশান ব্যবহার করে বেশ কিছু ইকুয়েশনও ছিল। বইটা আদৌ সাধারণ পাঠকের জন্য নয়, দর্শনে ডিগ্রিধারী বা অন্তত ছাত্রদের জন্য। বইটা পড়ার প্রবল ইচ্ছা থাকায় আমি দাঁতে দাঁত চেপে পুরোটা পড়ে গেলাম। পরে দেখলাম ঠিকই দ্বিতীয় পাঠে অনেক কিছুই বোঝা যাচ্ছে, যা প্রথমবার হয়ত অত স্পষ্ট ছিল না। এমনকি ইকুয়েশানগুলো কীভাবে এল, তারও বেশ কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। তার কাছাকাছি সময় থেকেই যেকোন বই পড়ার ক্ষেত্রে আমি এই পন্থায় চলি।

আজ থেকে কিছুদিন আগে ইংরেজিতে কীভাবে বিজ্ঞান বই পড়া যেতে পারে, সেটা নিয়ে একজনের সাথে কথা বলছিলাম। তিনি ইংরেজি বই পড়ার মূল অসুবিধা হিসেবে বললেন, বারবার ডিকশনারী দেখতে অসহ্য লাগে। মানে উনি পড়ার সময় প্রত্যেক পাতা, অনুচ্ছেদ এমনকি বাক্যেও থেমে থেমে ডিকশনারী ঘাঁটছেন। আমার সন্দেহ হয়, এটা ইংরেজি পড়ার - এবং ইংরেজি ভাষা শেখার - পথে মূল বাঁধাগুলোর একটা।

তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম হয়ত আছে। কারো ইংরেজির দক্ষতা যদি এত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে যে একদম কোন বাক্যেরই অর্থ তিনি বুঝছেন না, তাহলে হয়ত তার ক্ষেত্রে এই উপদেশ প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় যারা ইংরেজি শিখতে চান বা শুরু করে খানিকটা স্ট্রাগল করছেন, তারা এই পদ্ধতি একবার বাজিয়ে দেখতে পারেন।

Writer: Hassan Uz Zaman Shamol

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form