প্রাপ্য হিসাবসমূহের হিসাবরক্ষণ

 প্রাপ্য হিসাব বলতে আমরা সহজ ভাষায় বুঝি, যেকোন পক্ষ যার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান অর্থ বা সেবা পাওনা আছে। মানে যে আমাকে দিবে। আবার দেখা যায় অনেক প্রতিষ্ঠান বিক্রয় বাড়ানোর জন্য ধারে বিক্রয় করে। এর ফলে যে পাওনা সৃষ্টি হয় তাকে একত্রে প্রাপ্য হিসাব বলে।

প্রাপ্য হিসাব — ব্যবসায় ঋণ, খোলা হিসাব, ট্রেড ডেটর, ভোক্তা থেকে প্রাপ্য ইত্যাদি নামেও পরিচিত

ব্যবসায়ী প্রাপ্যসমূহকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়,

১. প্রাপ্য হিসাবঃ ধারে পন্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের ফলে ক্রেতা যখন বিক্রেতাকে টাকা পরিশোধের মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয় তাই প্রাপ্য হিসাব। প্রাপ্য হিসাবের থেকে টাকা আদায়ের জন্য সাধারণত ৩০-৬০ দিন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়।

২. প্রাপ্য নোটঃ মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩০-৬০ দিনের মধ্যে ক্রেতা/দেনাদার টাকা পরিশোধ না করলে, লিখিত দলিলের মাধ্যমে ৬০-৯০ দিন বা তার বেশি সময়ের জন্য যে চুক্তি হয় তাই প্রাপ্য নোট। এই সময়ের মধ্যের ক্রেতাকে অবশ্যই টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং মূল টাকার সাথে সুদও দিতে হয়।

অনাদায়ী পাওনাঃ
প্রাপ্য হিসাবের যে অংশ আদায় হবে না বলে নিশ্চিত সে অংশকে অনাদায়ী পাওনা বা কু-ঋণ বলে। কু-ঋণ বা অনাদায়ী পাওনা প্রতিষ্ঠানের জন্য নিশ্চিত ক্ষতি। এটি আয় বিবরণীতে খরচ হিসেবে দেখানো হয়।

অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতিঃ
প্রাপ্য হিসাবের একটি অংশ ভবিষ্যতে আদায় হবে না এমন সন্দেহ বা অনুমানের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ ক্ষতির বিপরীতে যে সঞ্চিতির ব্যবস্থা রাখা হয় তাকে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি বা সন্দেহজনক পাওনা সঞ্চিতি বলে। এটি কোন নিশ্চিত ক্ষতি নয় বরং ক্ষতির বিপরীতে ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা মাত্র। ভবিষ্যতে প্রাপ্য হিসাব অনাদায়ী হলে এ সঞ্চিতি থেকেই তার ক্ষতিপূরণ করা হয়।

প্রাপ্য হিসাব



অনাদায়ী পাওনা ও অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতির হিসাবরক্ষণঃ
অনাদায়ী পাওনা অবলোপনের ২টি পদ্ধতি বিদ্যমান,

১. সরাসরি বা প্রত্যক্ষ অবলোপন পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে কোন সঞ্চিতি রাখা হয় না। সরাসরি প্রাপ্য হিসাব থেকে অনাদায়ী পাওনাকে বিয়োগ করে দেখানো হয়। এক্ষেত্রে, অনাদায়ী পাওনা অবলোপনের জাবেদা হবে,

অনাদায়ী পাওনা হিসাব (ক্ষতি) — ডেবিট
প্রাপ্য হিসাব (সম্পদ) — ক্রেডিট

২. ভাতা/সঞ্চিতি পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে অনুমান করা হয় একটি অংশ প্রাপ্য হিসাব থেকে আদায় করা যাবে না। আর তার বিপরীতে ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা হিসেবে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি রাখা হয়।এক্ষেত্রে জাবেদা হবে,

ক. অনাদায়ী পাওনা অবলোপন করার জন্য,

অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি হিসাব—ডেবিট
প্রাপ্য হিসাব—ক্রেডিট

খ. অনাদায়ী পাওনা সৃষ্টির জন্য,

অনাদায়ী পাওনা হিসাব—ডেবিট
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি হিসাব—ক্রেডিট

গ. অনাদায়ী পাওনা বিশদ আয় বিবরণীতে স্থানান্তরের জন্য বা বন্ধ করার জন্য,

আয় সারাংশ হিসাব—ডেবিট
অনাদায়ী পাওনা হিসাব—ক্রেডিট

বিঃদ্রঃ অনাদায়ী পাওনা হিসাবের ক্রেডিট জের হলে,

অনাদায়ী পাওনা হিসাব—ডেবিট
আয় সারাংশ হিসাব—ক্রেডিট

[এ অধ্যায় থেকে জাবেদা আসে এবং হিসাব রাখা হয় সাধারণত "সঞ্চিতি পদ্ধতি" র মাধ্যমেই]

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
🔹ব্যবসায়ের কার্যকরী মূলধন হিসেবে গন্য হয়— প্রাপ্য হিসাব

🔹প্রাপ্য হিসাবের পাওনা আদায়ের লিখিত দলিলকে বলে— প্রাপ্য নোট

🔹ব্যবসায়ের স্বল্পমেয়াদী তরল সম্পদ হলো—প্রাপ্য হিসাব

🔹নীট প্রাপ্য হিসাব= প্রাপ্য হিসাব—অলিখিত কু-ঋণ — নতুন কু-ঋণ সঞ্চিতি।

🔹সম্ভাব্য অনাদায়ী পাওনা দেখানো যায় না — সরাসরি/প্রত্যক্ষ অবলোপন পদ্ধতিতে।

🔹প্রত্যক্ষ অবলোপন পদ্ধতিতে হিসাব রাখলে লঙ্ঘিত হয়— মিলকরণ নীতি ও রক্ষনশীলতার নীতি।

🔹প্রাপ্য হিসাবের অর্থ আদায়ের সময় — ৩০-৬০ দিনের মধ্যে

🔹প্রাপ্য নোটের অর্থ আদায়ের সময় — ৬০-৯০ দিনের মধ্যে

🔹অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি একটি— বিপরীত সম্পদ হিসাব।

🔹অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি রাখা হয় — রক্ষনশীলতার নীতি অনুযায়ী

🔹প্রাপ্য নোটের প্রস্তুতকারীর কাছ থেকে আদায় করা হয় — নোটিং চার্জ

এই ছিল এ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। এডমিশনের জন্য সুন্দর করে পড়ে নাও। তোমার এইচএসসি তেও দারুণ কাজে দিবে। 
কোনকিছু বুঝতে সমস্যা হলে বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দাও..

"সবার জন্য শুভকামনা রইলো,

Maruf Hossain Munna
Instructor of Accounting
Executive of SILSWA

Department of Marketing
University of Dhaka

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form