অণুজীব জিনিসটা কী?
অণুজীব হল সেসমস্ত জীব যাদের খালি চোখে দেখা যায় না- যেমন ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, পানির মধ্যে থাকা অতি পিচ্চি শ্যাওলা, পেটের ভেতরের আণুবীক্ষণিক কৃমি, ইত্যাদি। অণুজীব বিজ্ঞানের প্রথম পাঠে যেকোন ছাত্রকে প্রথম যে জিনিসগুলো জানতে এবং মানতে হয় সেগুলো হল-
১- আমরা অণুজীব সাগরে ডুবে আছি
২- এরা সর্বত্র বিরাজমান
৩- এদের ক্ষমতা প্রায় অসীম
৪- এরা মোটের ওপর আমাদের বন্ধু।
এই তালিকার একটা ব্যাপার আরেকটার সাথে জড়িত- এরা যদি আমাদের বন্ধু না হত, তাহলে এদের সাগরে ডুবে থাকা সম্ভব হত না। পৃথিবীর অণুজীবগুলোর খুব, খুব অল্প কিছু অংশ রোগব্যাধি ছড়ায়। তাও আবার বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে। এমনিতে সেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি করা সহজ কথা নয়। আপনার রুটি করার টোস্টার আপনার বন্ধু। কিন্তু আপনি যদি এটাকে এক গামলা পানির মধ্যে বসিয়ে রুটি টোস্ট করার চেষ্টা করেন, সঙ্গত কারণেই সে একটু বিরক্ত হবে। একইভাবে মাটিতে ধনুষ্টংকারের জীবাণু শান্তিতে আছে, আপনাকে শান্তিতেই রাখবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি দেহের কিছু অংশ কেটে ক্ষত সৃষ্টি করে মাটির সাথে ঘষে ধনুষ্টংকারের জীবাণু রক্তের মধ্যে ঢুকোতে যাচ্ছেন, ততক্ষণ আপনার রোগব্যাধি সৃষ্টি করতে তার বয়েই গেছে। এখনকার দিনে এই ব্যাপারটা আমরা একদম হাড়ে হাড়ে জানি- নতুন করোনাভাইরাস বাদুড় কিংবা বনরুইয়ের পেটে শান্তিতে ছিল, তাদের থাকতে দিলেই আর অত সমস্যা ছিল না। যখনই একদল লোকের মনে হল- এই বনরুইগুলোকে ধরে ধরে এদের আঁশ ছেঁচে কালোবাজারি করা দরকার- তখনই বিপদ বাঁধল।
অন্যদিকে জগতময় জীবাণু যদি না থাকত, তাহলে এ পৃথিবীতে বসবাস করা আমাদের জন্য কঠিন হত। ব্যাপারটা সাধারণ ভাষায় ব্যাখ্যার জন্য আমি এরকম একটা উদাহরণ ব্যবহার করি।
পৃথিবীটা আমাদের, অর্থাৎ প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাসের জন্যই। আমাদের জীবনধারণের যাবতীয় উপাদান পৃথিবীর মধ্যে পুরে দেওয়া আছে। কিন্তু সমস্যা হল- পৃথিবীটা বেশ শক্ত। মানুষের মত আহ্লাদী প্রাণী দূরে থাক, কোন প্রাণী বা উদ্ভিদেরই সাধ্য নেই যে পৃথিবীর গায়ে দাঁত বসিয়ে এর থেকে খাবারদাবার পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করবে। সেভাবে দেখলে পৃথিবীটা একটা নির্জীব নির্মোহ অধাতব গোলক বই কিছু নয়, এর ভেতরে যতই পুষ্টিগুণ থাকুক না কেন।
এই রুক্ষ পৃথিবীকে চিবিয়ে নরম করার জন্যই পৃথিবীর ওপর একসাগর অণুজীবের প্রলেপ পড়েছে। প্রাণরসায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এদের ক্ষমতা প্রায় অসীম- পৃথিবীর ওপর হেন জিনিস নেই যা তারা হজম করতে পারে না (এক হাল আমলের প্লাস্টিক ছাড়া, কিন্তু সেখানেও ব্যাতিক্রম আছে)। এদের সংখ্যাও প্রায় অসীমের মতই, কাজেই পুরো পৃথিবীটাকেই তারা বিপুল বিক্রমে ক্রমাগত কামড়ে ছিঁড়ে নরম বানিয়ে যাচ্ছে। তাদের নরম করা এই জিনিসগুলোই বাকি জীবজগত বাচ্চা পাখির মত খেয়ে বেঁচে থাকে।
যেমন ধরুন নাইট্রোজেন। বাতাসের সত্তরভাগই নাইট্রোজেন, কিন্তু কোন উদ্ভিদের সাধ্যি নেই যে বাতাসের মধ্যে একটা স্ট্র লাগিয়ে সুৎসুৎ করে সুপের মত নাইট্রোজেন খাবে। এখানেই অণুজীবদের জয়জয়কার- তারা বাতাসের নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে, একরকম রান্না করে সেটা উদ্ভিদের পাতে তুলে দেয়। মাটিতে থাকা ফসফরাস, সালফার আর বিভিন্ন ধাতুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
পৃথিবীটা যদি একটা কলা হয়, তাহলে অণুজীবদের কাজ হচ্ছে বাকি জীবজগতের জন্য এই কলার খোসা ছাড়ানো। এটাই পৃথিবীতে তাদের প্রধান কাজ। রোগব্যাধি ছড়ানো তাদের নিয়ম নয়, বরং নিয়মের ব্যাতিক্রম।
এটাই হচ্ছে অণুজীববিজ্ঞানের প্রথম পাঠ।
নিচের ছবি- এই লিপস্টিকের মত জিনিসগুলো একরকম প্রাণী, এদের নাম টিউবওয়ার্ম। এরা সমুদ্রের তলায় থাকে, আর এদের মুখ-অন্ত্র-পায়ু কিছুই নেই। এদের ভেতরে বিশেষ জাতের কিছু অণুজীব থাকে, তারাই সমুদ্রের তলার মাটি কামড়ে ছিঁড়ে খাবার তৈরি করে। সেই অণুজীব-রেঁস্তোর ার খাবার খেয়েই এই লিপস্টিকেরা বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকে।
অণুজীব হল সেসমস্ত জীব যাদের খালি চোখে দেখা যায় না- যেমন ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, পানির মধ্যে থাকা অতি পিচ্চি শ্যাওলা, পেটের ভেতরের আণুবীক্ষণিক কৃমি, ইত্যাদি। অণুজীব বিজ্ঞানের প্রথম পাঠে যেকোন ছাত্রকে প্রথম যে জিনিসগুলো জানতে এবং মানতে হয় সেগুলো হল-
১- আমরা অণুজীব সাগরে ডুবে আছি
২- এরা সর্বত্র বিরাজমান
৩- এদের ক্ষমতা প্রায় অসীম
৪- এরা মোটের ওপর আমাদের বন্ধু।
এই তালিকার একটা ব্যাপার আরেকটার সাথে জড়িত- এরা যদি আমাদের বন্ধু না হত, তাহলে এদের সাগরে ডুবে থাকা সম্ভব হত না। পৃথিবীর অণুজীবগুলোর খুব, খুব অল্প কিছু অংশ রোগব্যাধি ছড়ায়। তাও আবার বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে। এমনিতে সেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি করা সহজ কথা নয়। আপনার রুটি করার টোস্টার আপনার বন্ধু। কিন্তু আপনি যদি এটাকে এক গামলা পানির মধ্যে বসিয়ে রুটি টোস্ট করার চেষ্টা করেন, সঙ্গত কারণেই সে একটু বিরক্ত হবে। একইভাবে মাটিতে ধনুষ্টংকারের জীবাণু শান্তিতে আছে, আপনাকে শান্তিতেই রাখবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি দেহের কিছু অংশ কেটে ক্ষত সৃষ্টি করে মাটির সাথে ঘষে ধনুষ্টংকারের জীবাণু রক্তের মধ্যে ঢুকোতে যাচ্ছেন, ততক্ষণ আপনার রোগব্যাধি সৃষ্টি করতে তার বয়েই গেছে। এখনকার দিনে এই ব্যাপারটা আমরা একদম হাড়ে হাড়ে জানি- নতুন করোনাভাইরাস বাদুড় কিংবা বনরুইয়ের পেটে শান্তিতে ছিল, তাদের থাকতে দিলেই আর অত সমস্যা ছিল না। যখনই একদল লোকের মনে হল- এই বনরুইগুলোকে ধরে ধরে এদের আঁশ ছেঁচে কালোবাজারি করা দরকার- তখনই বিপদ বাঁধল।
অন্যদিকে জগতময় জীবাণু যদি না থাকত, তাহলে এ পৃথিবীতে বসবাস করা আমাদের জন্য কঠিন হত। ব্যাপারটা সাধারণ ভাষায় ব্যাখ্যার জন্য আমি এরকম একটা উদাহরণ ব্যবহার করি।
পৃথিবীটা আমাদের, অর্থাৎ প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাসের জন্যই। আমাদের জীবনধারণের যাবতীয় উপাদান পৃথিবীর মধ্যে পুরে দেওয়া আছে। কিন্তু সমস্যা হল- পৃথিবীটা বেশ শক্ত। মানুষের মত আহ্লাদী প্রাণী দূরে থাক, কোন প্রাণী বা উদ্ভিদেরই সাধ্য নেই যে পৃথিবীর গায়ে দাঁত বসিয়ে এর থেকে খাবারদাবার পুষ্টিগুণ সংগ্রহ করবে। সেভাবে দেখলে পৃথিবীটা একটা নির্জীব নির্মোহ অধাতব গোলক বই কিছু নয়, এর ভেতরে যতই পুষ্টিগুণ থাকুক না কেন।
এই রুক্ষ পৃথিবীকে চিবিয়ে নরম করার জন্যই পৃথিবীর ওপর একসাগর অণুজীবের প্রলেপ পড়েছে। প্রাণরসায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এদের ক্ষমতা প্রায় অসীম- পৃথিবীর ওপর হেন জিনিস নেই যা তারা হজম করতে পারে না (এক হাল আমলের প্লাস্টিক ছাড়া, কিন্তু সেখানেও ব্যাতিক্রম আছে)। এদের সংখ্যাও প্রায় অসীমের মতই, কাজেই পুরো পৃথিবীটাকেই তারা বিপুল বিক্রমে ক্রমাগত কামড়ে ছিঁড়ে নরম বানিয়ে যাচ্ছে। তাদের নরম করা এই জিনিসগুলোই বাকি জীবজগত বাচ্চা পাখির মত খেয়ে বেঁচে থাকে।
যেমন ধরুন নাইট্রোজেন। বাতাসের সত্তরভাগই নাইট্রোজেন, কিন্তু কোন উদ্ভিদের সাধ্যি নেই যে বাতাসের মধ্যে একটা স্ট্র লাগিয়ে সুৎসুৎ করে সুপের মত নাইট্রোজেন খাবে। এখানেই অণুজীবদের জয়জয়কার- তারা বাতাসের নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে, একরকম রান্না করে সেটা উদ্ভিদের পাতে তুলে দেয়। মাটিতে থাকা ফসফরাস, সালফার আর বিভিন্ন ধাতুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
পৃথিবীটা যদি একটা কলা হয়, তাহলে অণুজীবদের কাজ হচ্ছে বাকি জীবজগতের জন্য এই কলার খোসা ছাড়ানো। এটাই পৃথিবীতে তাদের প্রধান কাজ। রোগব্যাধি ছড়ানো তাদের নিয়ম নয়, বরং নিয়মের ব্যাতিক্রম।
এটাই হচ্ছে অণুজীববিজ্ঞানের
নিচের ছবি- এই লিপস্টিকের মত জিনিসগুলো একরকম প্রাণী, এদের নাম টিউবওয়ার্ম। এরা সমুদ্রের তলায় থাকে, আর এদের মুখ-অন্ত্র-পায়ু
Writer: Hassan Uz Zaman Shamol
Tags:
Biology