Hard disk drive বা HDD হলো সবচেয়ে প্রচলিত এবং পুরোনো মেমরি সিস্টেম যেখানে তড়িৎ চৌম্বকীয় চার্জ সম্পন্ন সারফেসে বিপুল পরিমাণক ডেটা স্টোর করা হয়। বর্তমানের ব্যবহার করা কম্পিউটারের হার্ড ডিক্স বিলিয়ন বিলিয়ন বাইট ধারণ করতে সক্ষম।
একটি হার্ডড্রাইভ হলো এক সেট ডিক্সের সমাহার যা দেখতে ফোনোগ্রাফ রেকর্ডের মতো। ঘূর্ণন অবস্থায় প্রতিটা ডিক্সে তড়িৎ চৌম্বকীয়ভাবে ডেটা স্টোর হয় ট্র্যাক ও সার্কেল অংশে। ফোনোগ্রাফের হাতের মতো একটি হেড আছে, যা তুলনামূলকভাবে স্থির এবং তথ্য রিড বা রাইট করে থাকে ট্র্যাক থেকে। ডিক্স ঘোরার সময় দুই দিকে থাকা দুটো হেড একই সাথে ডেটা রিড ও রাইট করতে পারে। প্রতিটা রিড বা রাইট করার ডেটা লোকেটের দরকার হয় যাকে 'সিক' বলা হয়। আর ডেটা ডিক্স ক্যাশে আগে থেকেই থাকে যা লোকেট আরও দ্রুত করে।
ইতিহাসঃ
১৯৫৭ সালে প্রথম আইবিএম কম্পিউটারে 3.75 MB এর প্রায় ২০ ইঞ্চির এক বিশাল আকৃতির হার্ড ড্রাইভের ব্যবহারের মাধ্যমে এক যাত্রা শুরু হয়। তবে প্রথম পার্সোনাল হার্ড ড্রাইভ ১৯৭৯ সালে বাজারে আসে যার আকৃতি ছিল ৫ MB।
তবে ৩.৫ ইঞ্চি ড্রাইভ Rodime সর্বপ্রথম তৈরী করে ১৯৮৩ সালে। এবং ল্যাপটপের জন্য ২.৫ ইঞ্চি হার্ড ড্রাইভ ১৯৮৮ সালে তৈরী হয়, যার সাইজ ছিল ২০ এমবি।
তবে সেটাগেট প্রথমবারের মতো ডিক্সে প্রতি ইঞ্চিতে ১০০ জিবি ডেটা স্থানান্তর সম্ভব হয়। এবং হিটাচি চার বছর পর ৫০০ জিবি হার্ড ড্রাইভ বের করতে সমর্থ হয়।
২০১৩ সালে সেটাগেট ৫ টিবি এর হার্ড ড্রাইভ বাজারজাত করে। এবং কয়েক বছরের মধ্যে তারা ১০, ১২ এবং ১৬ টিবি ক্যাপাসিটি সম্পন্ন হার্ড ডিক্স আনে।
হার্ড ডিক্স কীভাবে জানতে হলে শুরুতে এসডি কার্ড কীভাবে কাজ করে এর সম্পর্কে কিছুটা জানার দরকার। আর্টিকেলটি পড়লে এই লিখাটা বুঝতে কিছুটা সুবিধা হবে-
তবে স্টোরেজের ক্ষেত্রে মেমরি আর হার্ড ডিস্কের অনেক বড়ো পার্থক্য আছে। আর এই পার্থক্য মূলত আকার, বিশাল স্টোরেজ, ডেটা ট্রান্সফার গতি, সুলভ মূল্যসহ বিষয়গুলো জড়িত।
হার্ড ড্রাইভের মূল অংশগুলো সব কেসিং এর মধ্যে থাকে। এটি হার্ড কেসিং হওয়াই ভিতরের অংশকে বাহিরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। এর ভিতরের অংশগুলো হলো-
প্লেটারসঃ
হার্ড ডিস্কে অনবরত ঘুর্নায়মান একটি ডিস্ক থাকে যেটা প্লেটারস নামে পরিচিত। এটি মূলত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরী। এর উপর নিকেল, কোবাল্ট ও প্লাটিনামের কোটিং করে দেওয়া যায় যাতে চোম্বকীয় ধর্ম প্রকাশ পায়। এবং তার উপর কার্বন এর কোটিং থাকে যা দ্রুত ঘুরতে সাহায্য করে। মোট ছয়টি ডিস্ক থাকতে পারে একটি হার্ড ডিস্কে। এটি মিনিটে ৪৮০০/৫৪০০/৭২০০/ ১৫০০০ বার ঘুরে রিড ও রাইট করতে পারে।
রিড-রাইট হেডঃ
এটি একটি ইলেকট্রোম্যাগনে ট এবং রিট-রাইট আর্মের প্লাটারসের উপর-নিচে থাকে। প্লাটার থেকে দূরত্ব ৫ nm এর মতো হয় একেবারে লাগানো থাকে না। লাগানো থাকলে হার্ড ড্রাইভের ক্ষতি সাধণ করবে। এই হেডের দুটো অংশ থাকে যার একটি ম্যাগনেটাইজ করে রাইট করে আরেকটা ডেটা রিড করে। আর এই দুই অংশ প্লেটারসের ওপরে নিচে থাকে।
রিড-রাইট আর্মঃ
এটি বাহুর মতো যার শেষ প্রান্তে রিড-রাইট হেড থাকে। এটি অত্যন্ত দ্রুত মুভ করতে পারে যার ফলে প্লেটারসে রিড-রাইট করতে সুবিধা হয়।
সেন্ট্রাল স্প্রীংডালঃ
এটি প্লেটারসকে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে সাহায্য করে।
অ্যাক্যুটুয়েটরঃ
এটি রিড রাইট বাহুকে ডিস্কের নির্দিষ্ট অংশে নিতে সহায়তা করে। বর্তমানের এটিতে ভয়েস কয়েল ব্যবহার করা হয় যা ইলেকট্রোম্যাগনে টিক সিস্টেমে অত্যন্ত দ্রুত রিড ও রাইট হেডকে সরাতে সহায়তা করে।
ছোটো স্পিংডলঃ
এটি রিড ও রাইট বাহুকে আটকে রাখে এবং প্লাটারের উপর সঠিক জায়গায় রাখতে সহায়তা করে।
প্লাগ কানেকশনঃ
এটি হার্ড ডিস্কের বাহিরে থাকে যা পিসির সার্কিট বোর্ড এর সাথে সংযুক্ত করে।
ফ্লেক্সিবল কানেকটরঃ
এটি সার্কিট বোর্ড থেকে রিড-রাইট হেডে ডেটা ট্রান্সফারে সহায়তা করে।
হার্ড ডিস্ক কীভাবে কাজ করে?
প্লেটারসে মধ্যে থাকে প্রচুর ধাতব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ। এবং সেই ক্ষুদ্র অংশে ডেটা স্টোর হয় চৌম্বকীয় প্যাটার্নে। প্রতিটা অংশকে বিট বলা হয়। এই অংশগুলো ম্যাগনেটাইজ করা যায় উত্তর বা দক্ষিণ দিকে। এই উত্তর-দক্ষিণ দিক মূলত ০/১ যা কম্পিউটার বুঝতে পারে।
প্লেটারস কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ডেটা প্লাটারসে স্টোর হয় সেক্টর ও ট্রাকসে। ট্রাকস হলো একটি বৃত্তাকৃতির অংশ নিচের ছবির হলুদ অংশটির মতো। আর সেক্টর হলো ট্রাকের ছোট একটি অংশ ছবি নীল মার্ক করা অংশের মতো। আবার অনেকগুলো সেক্টর মিলে তৈরী হয় ক্লাস্টার। এতে সহজেই কোথায় ডেটা রিড করতে হবে বা কোথায় রাইট করতে হবে অথবা ডিলিট করতে হবে তা সহজে পিসি সহজে করতে পারে।
এখন ডেটা রাইট হয় রিড-রাইট আর্মের ওপরে থাকা ছোট্ট তড়িৎচৌম্বক দিয়ে এবং যার চৌম্বকক্ষেত্র ০/১ থেকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিবর্তন হয়। এই ম্যাগনেট নির্গত ফিল্ড ক্ষুদ্র বিটের চৌম্বকীয় দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। এভাবে দিক পরিবর্তন এর মাধ্যমে ডেটা স্টোর করা হয়।
আর ডিস্কের বিপরীতে থাকা রিড হেডের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে প্লেটারসের ইমপাসল বুঝতে পারে এবং প্লেটারসের চৌম্বকীয় দিকগুলোকে পাঠ্যযোগ্য বা ০/১ এ কনভার্ট করে। আর প্লেটারসের নির্দিষ্ট সেক্টরে রাইট হওয়ায় কম্পিউটার বুঝতে পারে নির্দেশিত ফাইলটা কোথাই আছে এবং রিড করা দরকার।
তবে এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে একটি A কে বাইনারী করলে দাঁড়ায় 01000001 বা ৮টা সংখ্যা।
আর ১ এমবির একটা ছবিতে প্রায় ৮০ লক্ষ বিট দরকার হয়।
তবে এত বিশাল পরিমাণ ডেটা কীভাবে স্টোর করা সম্ভব হয়?
আসলে আমরা যা রাইট করি প্লেটারসের মধ্যে করি। আর প্লেটারসের এরিয়াকে বড়ো না আরও ঘন করা হচ্ছে বা প্রতি ইঞ্চিতে কতোটা বেশি বিট ঢুকানো সম্ভব হবে সেটা নিয়ে গবেষণা চলছে।
বর্তমানের হার্ড ড্রাইভে প্রতি ইঞ্চিতে ৬০০ গিগাবিট পর্যন্ত স্টোরেজ করা সম্ভব। এটা প্রথম আইবিএম হার্ড ড্রাইভের চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি গুণ বেশি। আর এর সাথে আরও কিছু কারণ আছে যেমনঃ রিড-রাইট হেডে থাকা ম্যাগনেটটি প্লাটারসের যত কাছে থাকবে এই ম্যাগনেটের আকার তত ছোটো হবে। আর এর আকার যত ছোটো হবে স্টোরেজের পরিমাণ তত বড়ো বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য বর্তমানে বাজারে ১, ২ থেকে ১৮ টেরাবাইট পর্যন্ত হার্ড ড্রাইভ পাওয়া যায়।
আর হার্ড ডিস্কের পারফরম্যান্স বোঝা যায় দুইভাবে-
ডেটা রেটঃ
প্রতি সেকেন্ডে সার্কিট বোর্ডে কত বাইট ডেটা পাঠাতে সক্ষম তা বোঝায়। সাধারণ গতি সেকেন্ডে ৫-৩০ এমবি হওয়াটা কমন।
সিক টাইমঃ
সিক টাইম হলো সার্কিট বোর্ড এ কমান্ড দেওয়ার কত সময় পর হার্ড ডিস্ক ফাইলের প্রথম বিট পাঠাতে পারে সেটা। ১০-৩০ মিলিসেকেন্ড এখানে কমন একটা বিষয়।
হার্ডডিস্কের সমস্যাঃ
হার্ডডিক্সে অনেক কারণে সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যাগুলোকে ছয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
Electrical failure:
এমনটা হয় যখন, অতিরিক্ত ভোক্টেজ হার্ড ডিক্সের সার্কিটকে ড্যামেজ করে। এবং রিড রাইট হেড বা সার্কিট বোর্ড ফেইল করে।
যদি হার্ড ডিক্সকে পুনরায় অন করা হয়, এটি ডেটা রিড রাইট বা বুট করতে পারে না।
Mechanical failure:
এমনটা হতে পারে হার্ড ডিক্সে জোরে আঘাত লাগলে, বা পড়ে গেলে এবং একে খোলা বা জোড়া দেওয়ার সময়। এমনটা হলে রিড রাইট হেড প্লেটারে আঘাত করে এবং প্লেটারে ড্যামেজ করে।
Logical failure:
এমনটা হয় যখন হার্ড ড্রাইভের সফটওয়্যার যখন ঠিকমতো রান করতে না পারে। ম্যালওয়ার বা ভাইরাস, অ্যাপ্লিকেশন ঠিক মতো বন্ধ না করলে বা ঠিক মতো পিসি বন্ধ না করলে, মানুষের ভুল বা ভুলে হার্ড ড্রাইভ ফাংশম করার ফাইল ডিলিট করলে এমন সমস্যা হতে পারে।
Bad sector failure:
যদি প্লেটারের কোনো সমস্যা হয় তবে সেই নির্দিষ্ট এরিয়ার ডেটা এক্সেস করা সম্ভব হয় না। এঔ সমস্যা খুব কমই হয়ে থাকে তবে সময় অতিবাহিত হতে হতে এমন ক্রুটি বেড়েই যায়। যার ফলে ক্রাস, ফাইল এক্সেস না থাকা, বা হ্যাং ও ল্যাগ করা যখম হার্ডডিক্সের কিছু করা হয়।
Firmware failure:
কোনো ড্রাইভে সফটওয়্যার মেইনটেইন্সের টাস্ক সম্পাদনা করছে এবং হার্ড ডিক্সকে সেই সময় অন্য কম্পিউটারে কানেক্ট করা হয় তবে সেটা করাপ্টেড বা ঠিক মতো কাজ করে না। এই রকমের সমস্যা বুটআপে প্রবলেম বা কম্পিউটার হার্ড ড্রাউভ আডেন্টিফাই করতে পারে না।
Multiple unknown failures:
সময়ের সাথে এমন সমস্যা হতে পারে। যেমন, বিদ্যুৎ এ সমস্যা থাকলে ম্যাকানিক্যাল ফেইলিউর হতে পারে যা রিড রাইটে সমস্যা করে। আবার এর জন্য লজিক্যাল ফেইলিউরও হতে পারে যা প্লেটারে ব্যাড সেক্টেরের কারণ হয়।
সোর্সঃ
Writer: Rownok Shahriar
Tags:
Technology