ফ্যামিনিজম-ব্যক্তিস্বাধীনতা


আজকালকার যুগের ছেলেমেয়েগুলোর মধ্যে "ব্যক্তিস্বাধীনতা" চর্চাটা খুব বেশীমাত্রায় লক্ষণীয়। ওয়েস্টার্ন নারীদের মত বাঙ্গালী নারীরা নিজেদের boobs গুলো রাস্তাঘাটে অন্যদের সামনে প্রদর্শন করাকে যেরকম আধুনিকতার পরিচায়ক বলে মনে করে থাকে, ঠিক তেমনি এই "ব্যক্তিস্বাধীনতা" শব্দটা নিয়ে কচলাকচলি করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়ার মাঝেও সেই একই আধুনিকতার ঘ্রাণ পাওয়ার প্রবণতাও এদের মধ্যে বেশ জোড়ালোভাবেই লক্ষণীয়...
আজ একটা কফি শপে বসে কফি খাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর ৬ জন নারীর একটি দল ঢুকলো শপে। আমি যে টেবিলে বসেছি, ঠিক তার পাশের টেবিলেই তারা গোল হয়ে বসলো। কফির (অথবা অন্য কিছু হবে হয়তো) অর্ডার করে এরা যে আলোচনায় লিপ্ত হলো, সেটিও সেই "ব্যক্তিস্বাধীনতা" নিয়েই। আমি খুব ভালকরেই জানি, এই ধরনের আলোচনা শুরু হয় কোথা থেকে, এবং শেষটা গড়ায় কোথায় গিয়ে।
আমার সেই জানাটা আজও নির্ভুল ছিল। এদের আলোচনার শুরুটা হলো তাদের ওই জানালামার্কা পোশাক নিয়ে, যেখানে তাদের বুবসের উপড়িভাগ থেকে শুরু করে পাছার ভাজ পর্যন্ত উঁকি দিয়ে থাকে (এমনকি শীতকালেও) এবং শেষ হলো "হে পুরুষ, তুমি সংযত করো তোমার চোখ" টাইপ আলোচনা দিয়ে...। (মানে যা হয় আরকি সাধারণত, যত দোষ... পুরুষ ঘোষ ) ।
ইদানীং শুনছি নারীসমাজের নাকি ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের সাংসারিক পেজগি লাগানোর মত প্রতিভার বাহিরেও নাকি বুদ্ধিশুদ্ধির অগ্রগতি হচ্ছে। তো ভাবলাম কথাটা একটু মিলাই আজকে এদের কর্থাবার্তা শুনে। এদের আলোচনা বেশ মনযোগ দিয়ে শোনার পেছনে এটিই মূলত একমাত্র কারণ...।
যাই হোক, এদের পুরা সার্কাসময় কথাবার্তা আমি কফি শেষ হবার পরেও বসে বসে শুনলাম। শুনে আমার বেশ পুরনো একটি বিশ্বাস নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। সে আবিষ্কার করা ব্যাপারটি হচ্ছে, পৃথিবীর সবচাইতে সহজ কাজগুলোর মাঝে একটি হচ্ছে নারীদের ব্রেইনওয়াশ করা।
এখন সেটা আপনি একজন নারীকে পটানো বলেন, সূর্য্য দক্ষিণ দিকে উঠে সেটা বিলিভ করানো বলেন, আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছায় ক্ষমতা বিএনপিকে প্রদান করবে সেটা বিলিভ করানো বলেন, আর যাই বলেন না কেন.... আপনি যদি সামান্য পরিমানও ক্রিটিক্যাল ব্রেইনের অধিকারী হন, আপনি সেটা পারবেন।
কেননা ইহা যদি সত্যই না হতো, তাহলে উক্ত ৬ জন নারীদের মধ্যে অন্তত একজন হলেও পাওয়া যেত, যিনি ভোদচোদ সম্প্রদায়ের বাহিরে অবস্থান করে থাকেন...। আর সেজন্যেই ব্যক্তিস্বাধীনতা ব্যাপারটি বলতেই এরা যা বোঝে, সেটি হচ্ছে "আমি আমার ইচ্ছাস্বাধীন যা ইচ্ছে ইচ্ছে তাই করবো। কার বাপের কী?"।
অথচ একটি কথা এরাসহ বর্তমান যুগের সুশীল সমাজকে কোন ক্রমেই বোঝানো সম্ভব নয়। সেটি হচ্ছে, স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি স্বাধীনতা কখনো স্বাধীন নয়, এর সাথে একটি শেকল থাকে। আর সে শেকলটা অবশ্যই কল্যানের স্বার্থে।
যেমন , একটি রেলগাড়ির কথাই ধরা যাক। প্রতিটি রেলগাড়ির জন্যেই তার স্বাধীনভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াবার জন্যে একটি বিশেষভাবে তৈরী রাস্তা থাকে। যাকে রেললাইন বলা হয়ে থাকে। যদি বাংলাদেশের কথাও ধরি, তাহলে মোটামুটি সকল জেলাতেই একটি ট্রেন এই রেললাইনটিকে ব্যবহার করে স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু তার এই স্বাধীনতাটুকু পুরোপুরি স্বাধীন নয়। কেননা তার স্বাধীনতাটুকু রেললাইন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
এখন, একটি ট্রেন যদি চিন্তা করে যে আমি আজ থেকে রেললাইনে থাকবো না, আমি রাস্তা দিয়ে চলবো। তবে অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে?। ঠিক একইভাবে যদি একটি সাবমেরিন উদ্ভট একটি সেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত (স্বাধীন সিদ্ধান্ত নয়) নেয় , যে আজ থেকে আমি পানির নিচ দিয়ে চলবো না। হেলিকপ্টারের মত আকাশে উড়বো। তবে ব্যাপারটি কেমন দেখাবে?
স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারীতার মূল পার্থক্যটি এখানে। স্বাধীনতায় একটি নিয়ম শৃঙ্খলার কল্যানকর শেকল থাকে। আর সেজন্যেই একটি গাড়ি কখনো বাশের সাকোর উপর দিয়ে চলে না, একটি ট্রেন কখনো রেল লাইনের বাহিরে থেকে চলে না, একটি উড়োজাহাজ কখনো গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে চলে না।
আর সেচ্ছাচারীতার কোন প্রকার কোন কল্যাণকর শেকল নেই। এর মূলনীতিই হচ্ছে "নিজের ইচ্ছামত যা ইচ্ছা তাই করো"। আর এই স্বেচ্ছাচারীতাকেই মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা বলে প্রচার করার মাধ্যমে মানুষের ব্রেইনওয়াশ করে সমাজে প্রতিষ্ঠা করছে এই উইমেন চ্যাপ্টার টাইপ কিছু ডাস্টবিনগুলো। এরা তাদের কথাবার্তায় এবং নিজস্ব কিছু সস্তা যুক্তিসমৃদ্ধ লিখালিখির মাধ্যমে এমন একটি ইমেজ সমাজে ক্রিয়েট করেছে , যাতে করে মানুষ ভেবে নেয় যে নিয়মের মধ্যে থাকা মানেই হচ্ছে তুমি পরাধীন। তাদের মূল স্লোগানই হচ্ছে "সকল শেকল ভাঙ্গো। ভেঙ্গে দাও সকল নিয়ম। সমাজকে মিডল ফিঙ্গার দেখিয়ে তুমিও হও স্বাধীন (স্বেচ্ছাচারী আরকি)"।
আর এই পুরো ব্যাপারটির মূল হোতারা হচ্ছে ঘুরেফিরে ঈহুদী আর মডারেট খ্রীষ্টানরাই (কীভাবে তারা মূল হোতা, সেটি অনেক বিশদ আলোচনা) । ধর্মীয় কোন্দল থেকেই এই ব্যাপারটির অনেকাংশে উদ্ভব। তারা বিগত ২০০ বছর ধরেই প্রাণপণে চেষ্টা করেছে মুসলিম কান্ট্রিগুলো থেকে ইসলামের দাপটটাকে কমাতে। সেজন্য একটা সময়ে এরা কোরআনের ভুল ব্যাখ্যা বের করে মুসলিমদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারনা প্রতিষ্ঠা করে বিভাজন সৃষ্টির জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু তাদের সে থিওরী খুব একটা কাজে আসে নি।
প্রথম পরিকল্পনা ব্যর্থ হবার পরই তারা এবার নতুন পরিকল্পনায় এগুলো। আর সেটি হচ্ছে , পরিবারগুলো থেকে ইসলামিক প্রভাবটা দূর করা। আর ইসলামিক প্রভাব দূর করার অন্যতম বুদ্ধি হচ্ছে, পরিবারটাকেই ভেঙ্গে দেয়া। আর পরিবারটাকে ভেঙ্গে দেয়ার অন্যতম বুদ্ধি হচ্ছে নারীদের ব্রেইন ওয়াশ করে রাস্তায় নামিয়ে উদ্ভট উদ্ভট সব কাজকর্ম করানো। অর্থাৎ, একজনের পরিবারই যখন ভাঙ্গা, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে ইসলামটা এস্টাবলিশড করবে কোথায়?
এটাই হচ্ছে তাদের মূল থিওরী। আয়না বিক্রি যদি বন্ধ করতে চাও, শহরের সকলকে অন্ধ বানিয়ে দাও। কেননা অন্ধের শহরে কেউ আয়না বিক্রি করতে আসবে না... আর এই ব্যাপারগুলো গভীরভাবে কখনোই কোন ভোগচোদমার্কা ব্রেইন ভাববে না...।
আর এই পুরো পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশটাকেও তারা পরকল্পনার বাহিরে রাখবেনা, সেটি খুবই স্বাভাবিক। কেননা, এটি একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আর যেহেতু আমরা টার্গেটে পড়েছিই, সুতরাং কপালে বড় টিপ লাগিয়ে জিন্সের প্যান্ট পড়ে হাতে সিগারেট নিয়ে আনাড়ি স্টাইলে বিড়ি টানতে টানতে আবার দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি নিজের ভালবাসামাখা মার্কা কথাবার্তা বলার মত সার্কাসগুলো তো দেখা যাবেই... ।
যাদের সামনাসামনি এই সার্কাস দেখার ইচ্ছে, তাদের জন্যে বলবো, সামনেই আসছে ফেব্রুয়ারী মাস। টিএসসির আশেপাশেই এই সার্কাসগুলো শুরু হবে সে সময়েই। একটু ঘুরান্টি দিয়ে এসেন, টের পাবেন ।
আমরা বাঙ্গালীরা বড়ই অনুকরণপ্রিয়। চিলের পেছনে দৌড়ানোটা আমাদের জ্বীনগত বৈশিষ্ট্য। আমাদের দাদারাও দৌড়িয়েছেন, দাদাদের জেনারেশনটা পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর আমাদের বাবারাও সারা জীবনভর দৌড়েছেন। আর এখন দৌড়াচ্ছে বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েগুলো। কথা নাই বার্তা নাই, কোন হিসাব নিকাশ কিচ্ছু নাই... খালি আল্লাহর ওয়াস্তে দৌড়!।
আর এই অনুকরণের দৌড়ে এই উপমহাদেশের বাঙ্গালীগুলো অনুকরণ করে তো করেই, আবার পজিটিভ দিকগুলো বাদ দিয়ে নেগেটিভ দিকগুলোই অনুকরণ করে থাকে।
আর সেজন্যেই একজন বৃটিশ সময়ের ব্যাপারে কী পরিমান সচেতন, সেটি একজন বাঙ্গালী কখনো অনুকরণ করবে না। বরং একজন বৃটিশ থার্টি ফার্স্ট নাইটে কীভাবে শ্যাম্পেইনের বোতল ঝাকিয়ে মাতলামি করে, বাঙ্গালী সেটা অনুকরণ করবে।
একজন বৃটিশ যখন কর্পোরেট দুনিয়ায় থাকে, তখন সে কাজের প্রতি কী পরিমান সৎ এবং ডেডিকেটেড থাকে, সেটি একজন বাঙ্গালী কখনো অনুকরণ করবে না। বরং একজন বৃটিশ কীভাবে আট দশজনের সাথে বিছানা শেয়ার করে সন্তান জন্ম দেয়, সেটিকে গোপনে গোপনে লিটনের ফ্লাটে বাস্তবায়ন করে সেটিকে স্বাভাবিক বলে প্রমাণ করার লজিক খুঁজবে ।
একজন বৃটিশ ইন্টেলেকচুয়ালি কতখানি আধুনিক, সেটি নিয়ে বাঙ্গালী কখনোই ভাববে না। তার বদলে একজন বৃটিশ নারী যেভাবে প্রায় নগ্ন হয়েই চলাফেরা করে, অনেকটা ওরকমভাবেই পোশাক আশাক পরিধান করেই বরং বাঙ্গালী নিজেকে "আধুনিক" বলে আখ্যা দিয়ে গর্বে গর্ভবতীও হয়ে যাবে...
মানে মোদ্দাকথা হচ্ছে, বাঙ্গালীরা হচ্ছে এমন এক জাতি, যাদের মূল ধর্মই হচ্ছে বহির্বিশ্বের সমস্থ গার্বেজগুলো হজম করা। ইচ্ছেমতন গার্বেজগুলো হজম করেটরে যে শান্ত থাকবে, তেমনটিও নয়। বরং এই গার্বেজগুলো হজম করা থেকে যে পরিমান সংখ্যালঘু মানুষ নিজেকে বিরত রাখে, এদের দিকে আবার আঙ্গুল তুলে নাকী কন্ঠে মাথা ঘুরান্টি দিতে দিতে "ওয়েষঠাড়ন!" স্টাইলে বলবে "You have to be আধুনিক you know! য়েগূলোই এখোঁনখার ষ্ঠাঈল!!" ।
বালের আধুনিক তোমরা আমার... । বুঝছো? । তোমরা হ্যা*র আধুনিক...। আর তোমাদের পূর্বপুরুষদেরও এই বালমার্কা আধুনিকতা ছিল বলেই ইংরেজরা ২০০ বছর তোমাদের দাদার দাদাদের জেনারেশনকে আচ্ছামতন চু* যেতে পেরেছে...।
তোমাদের আধুনিকতার দৌড় ফ্ল্যাটে গিয়ে বয়ফ্রেন্ডের লিঙ্গ চোষা পর্যন্তই... আধুনিক যা হওয়ার, ওইটুক পর্যন্তই হইছো... নাথিং মোর...

লিখাঃ আশিক সরকার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম