নিউক্লিয়াস হল পরমাণুর সবচেয়ে সুস্থিত অংশ।
এটি পরমাণুর কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং পরমাণুর প্রায় সমস্ত ভর এখানেই থাকে।
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের নির্দিষ্ট একটা গঠন আছে।
নিউক্লিয়াসে সাধারণত প্রোটন ও নিউট্রন থাকে।
এছাড়াও বিভিন্ন অস্থায়ী কণিকা থাকতে পারে।
পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে প্রোটন ও নিউট্রনগুলি দৃঢ়ভাবে জোটবদ্ধ অবস্থায় থাকে । সমজাতীয় ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটনগুলি পরস্পর বিকর্ষিত না হয়ে এক জায়গায় রয়েছে । কারন নিউক্লিয়াসের প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে প্রতিনিয়ত পারস্পরিক রূপান্তর ঘটছে । এই রুপান্তরের ফলে তাদের মধ্যে স্বল্পপাল্লার এক ধরণের আকর্ষণ জনিত বলের উদ্ভব হয় । যা 1935 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী য়ুকাওয়া [Yukawa] কর্তৃক উদ্ভাবিত নিউক্লীয় বলের প্রকৃতি নির্ধারণে মেসন তত্ত্বের [Meson theory] সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। যাইহোক এটি মূলত সবল নিউক্লীয় বল,যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে রাখতে সাহায্য করে।
*সব পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ঘনত্ব সমান হলেও ব্যাসার্ধ নির্দিষ্ট নয়।ব্যাসার্ধ পারমাণবিক ভর তথা নিউক্লিন সংখ্যার উপর নির্ভর করে।
আমরা জানি, কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ(R) তার পারমাণবিক ভরের(A) ঘনমূলের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ,
R∝A⅓
=>R=R₀A⅓
এখানে R₀ সমানুপাতিক ধ্রুবক। এর মান প্রায় 1.25×10^-15m।
তাহলে কোনো পরমাণুর পারমাণবিক ভর জানা থাকলে সহজেই তার নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ বের করা সম্ভব।
*নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন: পরমাণুর নিউক্লিয়াস সুস্থিত হওয়ার কারনে যে সে কখনো ভেঙ্গে যাবে না এমনটা কিন্তু নয়।
১৯৩২ সালে বিজ্ঞানী চ্যাডউইক কর্তৃক নিউট্রন আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গ নিউক্লিয়াস সম্পর্কে প্রোটন-নিউট্রন অনুকল্প প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, H পরমানু ছাড়া সকল পরমাণুর নিউক্লিয়াসই প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত।যা তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের সাথে সম্পর্কিত। মূলত তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের মাধ্যমেই নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়।
বিজ্ঞানী হাইজেনবার্গপর মতানুসারে, তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউট্রন ভেঙ্গে প্রোটন ও e⁻ এ পরিণত হয়। e⁻ বিটারশ্মি হিসেবে নির্গত হয়।
কিন্তু বিজ্ঞানী W. Pauli -এর মতবাদ অনুসারে, নিউট্রন ভেঙ্গে প্রোটন ও e⁻ এর পাশাপাশি নিউট্রিনো নামক একটি কণিকা বের হয়। গামারশ্মির বর্ণালি থেকে নিউক্লিয়াসে নিউট্রিনোর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।
সুতরাং, নিউট্রন = প্রোটন + e⁻ + নিউট্রিনো।
নিউট্রিনো আবিষ্কারের শুরুতে আধান নিরপেক্ষ ও ভারহীন বলা হলেও সম্প্রতি এর ভর পাওয়া যায়। যা প্রায় 1.78×10^-37kg। নিউট্রিনোর ভর বের করার জন্য ২০১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান জাপানের বিজ্ঞানী তাকাআকি কাজিতা ও কানাডার বিজ্ঞানী আর্থর বি. ম্যাকডোনাল্ড।
* নিউক্লিয়াসের সামান্য পরিমাণ ভর উধাও:
কোনো স্থায়ী নিউক্লিয়াসের ভর নিউক্লিয়াসের উপাদান সমূহের পৃথক পৃথক ভরের সমষ্টি অপেক্ষা কিছুটা কম হতে দেখা যায়। এ বিষয়টাকে ভর ত্রুটি বলে। ধরি এই উধাও হওয়া ভরের পরিমাণ ∆m।
কিন্তু এই ভর কি সতিই উধাও হয়ে যায়‽ না। আমরা জানি নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন দৃঢ়ভাবে থাকে।এদেরকে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য কিছুটা শক্তির দরকার হয়। এই শক্তি তো আর এমনি এমনি পাওয়া যাবে না। এই ∆m পরিমান অদৃশ্য হওয়া ভর E=mc^2 পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে পরস্পরের সাথে আবদ্ধ থাকে। একে বন্ধনশক্তি বলা হয়।
বিপরীত ভাবে কোনো পরমাণুকে ভেঙ্গে ফেলতে চাইলে এই E পরিমাণ শক্তি দিতে হবে। যা পরবর্তীতে ∆m পরিমান ভরে পরিণত হবে।তখন স্থায়ী নিউক্লিয়াসের ভর ও নিউক্লিয়াসের উপাদান সমূহের পৃথক পৃথক ভরের সমষ্টি সমান হবে। ফলে প্রোটন ও নিউট্রন তাদের নিজ নিজ পরিমাণ ভর ফিরে পাবে এবং নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে যাবে।
Writer: Tamjid RaNa
Tags:
পদার্থবিজ্ঞান